ঈমান কী?
ঈমান (إيمان) শব্দের অর্থ — বিশ্বাস, নিশ্চিতভাবে স্বীকার করা ও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা। ইসলামী পরিভাষায় ঈমান মানে — “যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ আমাদের জানিয়েছেন, তা হৃদয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা, এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা তার প্রমাণ দেওয়া।” (আল-ফিকহুল আকবর)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, আখিরাতের প্রতি, এবং তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস করা।” (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান — হাদীস নং 8 [Darussalam]; Hadith Foundation: 27)
ঈমানের ছয়টি স্তম্ভ (আরকানুল ঈমান)
🌸 ১️ আল্লাহর প্রতি ঈমান 🌸
আল্লাহর প্রতি ঈমান মানে হলো — দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ তাআলাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও বিশ্বজগতের একচ্ছত্র শাসক। তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি জন্ম দেননি, তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। 🌿
আল্লাহ তাআলা সবকিছুর মালিক — জীবন ও মৃত্যু, রিজিক ও মর্যাদা, বৃষ্টি ও ভূমি, সুখ ও দুঃখ — সবই তাঁর হাতে। তিনি অদৃশ্য, তাঁর সত্তা মানুষ বুঝতে পারে না, কিন্তু তাঁর নিদর্শন পৃথিবীর সর্বত্র। যেমন সূর্য, চাঁদ, পাহাড়, সাগর, বৃষ্টি — প্রতিটিই আল্লাহর ক্ষমতার পরিচয় বহন করে। 🌺
আল্লাহ বলেন:
“তোমার ইলাহ একমাত্র আল্লাহ; তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,
তিনি পরম দয়ালু, পরম করুণাময়।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৬৩)
এই আয়াতের অর্থ হলো — সৃষ্টিজগতের সবকিছুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। তাই কোনো ব্যক্তি, নবী, ফেরেশতা, বা পীর-আওলিয়া — কেউই আল্লাহর সমান নয়। আল্লাহই একমাত্র যিনি আমাদের দো‘আ শোনেন, বিপদ দূর করেন, এবং আমাদের জীবন পরিচালনা করেন। 🌷
তাই একজন মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো — আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রাখা, তাঁর আদেশ মেনে চলা, এবং তাঁর ইচ্ছার উপর সন্তুষ্ট থাকা। কোনো বিপদে পড়লে মানুষ বা জিনের কাছে নয়, বরং আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে। 🌼
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যখন তুমি কিছু চাও, আল্লাহর কাছেই চাও;
আর যখন সাহায্য প্রার্থনা কর, আল্লাহর কাছেই কর।”
(সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং 2516 [Darussalam]; Hadith Foundation: 2709)
সুতরাং, আল্লাহর প্রতি ঈমান শুধু মুখে “আল্লাহ আছেন” বলা নয়, বরং হৃদয়ে তাঁর একত্বে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, তাঁর আদেশ মানা, এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর ইবাদত করা — এটাই প্রকৃত ঈমান। 🌸
- আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। 🌿
- তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা ও পরিচালনাকারী। 🌸
- দো‘আ, ভয়, আশা ও ভালোবাসা কেবল তাঁরই জন্য হতে হবে। 🌼
- আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা রাখাই প্রকৃত ঈমান। 🌺
🌸 ২️ ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান 🌸
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান মানে হলো — দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যে, ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি, তাঁরা নূর (আলো) থেকে সৃষ্টি, এবং আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত কিছুই করেন না। 🌿
ফেরেশতাদের সংখ্যা অসংখ্য, শুধু কিছু নাম আমাদের জানা আছে —
যেমন
জিবরাইল (আঃ) — ওহি পৌঁছে দেন নবীদের কাছে,
মীকাইল (আঃ) — বৃষ্টি ও রিজিকের দায়িত্বে,
ইসরাফিল (আঃ) — কিয়ামতের দিনে শিঙ্গা ফুঁকবেন,
আজরাইল (আঃ) — আত্মা গ্রহণের দায়িত্বে। 🌺
আল্লাহ বলেন:
“তারা (ফেরেশতারা) আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না,
যা আদেশ করা হয় তাই করে।”
(সূরা আত-তাহরীম ৬৬:৬)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ফেরেশতারা পাপ করেন না, তাঁরা কখনো আল্লাহর নির্দেশের বাইরে যান না। তাঁরা দিন-রাত আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং আল্লাহর বান্দাদের কাজে নিয়োজিত থাকেন। 🌼
প্রতিটি মানুষের সঙ্গে দুইজন ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন — একজন ডান পাশে, যিনি ভালো কাজ লিপিবদ্ধ করেন, এবং অন্যজন বাম পাশে, যিনি মন্দ কাজ লিখে রাখেন। 🌿
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তি সালাম দেয়, ফেরেশতারা তার জন্য দো‘আ করে।
আর যে আল্লাহর স্মরণে থাকে, ফেরেশতারা তার পাশে উপস্থিত থাকে।”
(সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যিকর — হাদীস নং 2689 [Darussalam]; Hadith Foundation: 4827)
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান মানে — তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা, তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট বান্দা হিসেবে সম্মান করা, কিন্তু তাদের কাছে দো‘আ বা সাহায্য চাওয়া হারাম। ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশে কাজ করেন; তাঁরা নিজে থেকে কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারেন না। 🌺
এই আয়াত থেকে জানা যায়, ফেরেশতারা একধরনের অদৃশ্য সৃষ্টি, আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান, সেভাবেই তাঁদের রূপ দেন। যেমন, জিবরাইল (আঃ) একবার নবী ﷺ-এর সামনে ছয়শো ডানাওয়ালা রূপে উপস্থিত হয়েছিলেন। 🌿
তাই একজন মুসলমানের জন্য জরুরি হলো — ফেরেশতাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখা, তাদের প্রতি সম্মান দেখানো, এবং আল্লাহর আদেশ পালন করার ক্ষেত্রে তাদের মতোই আনুগত্যশীল হওয়া। 🌷
- ফেরেশতারা আল্লাহর সৃষ্টি, নূর থেকে সৃষ্টি। 🌿
- তাঁরা আল্লাহর আদেশ ব্যতীত কিছুই করেন না। 🌼
- প্রত্যেক মানুষের জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত আছে। 🌺
- তাঁদের সম্মান করা ঈমানের অংশ, কিন্তু ইবাদত করা হারাম। 🌸
🌸 ৩️ আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান 🌸
আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান মানে হলো — আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে তাঁর বাণী পাঠিয়েছেন, যা বিভিন্ন নবী-রাসূলের প্রতি ওহির মাধ্যমে নাযিল করা হয়েছে। 🌿
এই কিতাবগুলো মানুষের সঠিক পথ নির্দেশনা, হালাল–হারাম নির্ধারণ, দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার শিক্ষা দেওয়ার জন্য নাযিল হয়েছে। আল্লাহর পাঠানো সব কিতাব সত্য, কিন্তু সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ কিতাব হলো — কুরআনুল কারীম, যা কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য দিশারী। 🌼
আল্লাহ বলেন:
“তিনি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন,
যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা প্রমাণ করে।”
(সূরা আলে ইমরান ৩:৩)
এই আয়াত থেকে জানা যায় — কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা নিশ্চিতকারী। পূর্বেকার কিতাবগুলো নিজেদের যুগের জন্য ছিল এবং মানুষের মাধ্যমে বিকৃত হয়েছে, কিন্তু কুরআন চূড়ান্ত, সংরক্ষিত ও পরিবর্তন-অযোগ্য। 🌺
আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনকে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব নিয়েছেন — এই কারণেই আজ পর্যন্ত এর একটি হরফও পরিবর্তন করা যায়নি। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ কুরআন মুখস্থ জানে, যা অন্য কোনো কিতাবে দেখা যায় না। 🌿
- 📘 তাওরাত — মুসা (আঃ)-এর প্রতি
- 📗 যবুর — দাউদ (আঃ)-এর প্রতি
- 📙 ইনজিল — ঈসা (আঃ)-এর প্রতি
- 📕 কুরআনুল কারীম — মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি (চূড়ান্ত গ্রন্থ)
একজন মুসলমানের জন্য প্রয়োজন — আল্লাহর সকল নাযিলকৃত কিতাবে ঈমান রাখা, তবে বাস্তব জীবনে শারীয়াহ হিসেবে অনুসরণ করতে হবে শুধু কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে। কারণ পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ মানুষের হাতে বিকৃত হয়েছে, আর কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সংরক্ষিত। 🌸
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি,
যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5027 [Darussalam]; Hadith Foundation: 6689)
এই হাদীস থেকে বোঝা যায় — কুরআন শুধু পড়ার জন্য নয়, বরং শেখা ও অন্যকে শেখানোই প্রকৃত ইমানদারের বৈশিষ্ট্য। 🌺
সুতরাং আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান মানে — এগুলোকে সম্মান করা, বিশ্বাস করা, এবং জীবনের আইন হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করা। এটাই প্রকৃত ঈমানের দাবি। 🌸
- আল্লাহ যুগে যুগে তাঁর কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন। 🌿
- পূর্ববর্তী কিতাবগুলো সত্য ছিল, কিন্তু বিকৃত হয়েছে। 🌺
- কুরআন হলো সর্বশেষ, পরিপূর্ণ ও সংরক্ষিত গ্রন্থ। 🌼
- মুসলমানের শারীয়াহ হলো — কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। 🌸
🌸 ৪️⃣ নবী ও রাসূলদের প্রতি ঈমান 🌸
নবী ও রাসূলদের প্রতি ঈমান মানে হলো — আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে পথ দেখানোর জন্য যে সকল নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন, তাদের সকলের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখা। 🌿
প্রতিটি নবী মানুষদের আল্লাহর দিকে ডাকতেন, তাওহীদের দাওয়াত দিতেন, এবং মানুষকে শির্ক ও অন্যায় থেকে দূরে রাখতেন। তাদের কেউই আল্লাহ নন, বরং তাঁরা আল্লাহর বিশেষ বান্দা। 🌺
আল্লাহ বলেন:
“আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি —
‘আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাকো।’”
(সূরা আন-নাহল ১৬:৩৬)
এই আয়াত জানিয়ে দেয় — সব নবী একই মিশন নিয়ে এসেছেন: মানুষকে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করানো ও তাগুত/অন্যায় থেকে বিরত রাখা। 🌸
পৃথিবীতে কতজন নবী এসেছেন তা শুধু আল্লাহই জানেন। তবে কুরআনে ২৫ জন নবীর নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে — যেমন আদম (আঃ), নূহ (আঃ), ইবরাহিম (আঃ), মূসা (আঃ), ঈসা (আঃ), এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ। 🌼
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“আমি ও আমার আগের নবীরা হলাম সমান ঈমানের অংশ।”
(সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান — হাদীস নং 236 [Darussalam]; Hadith Foundation: 250)
এই হাদীসের অর্থ হলো — কোনো মুসলমান এক নবীকে মানবে আর অন্য নবীকে অস্বীকার করবে — এমন করা যায় না। সব নবী-রাসূল সত্য, সবই আল্লাহর পাঠানো। 🌿
একজন মুসলমান বিশ্বাস করে — মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর চূড়ান্ত রাসূল, তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবে না। এটি ইসলামি আকিদার মৌলিক অংশ। 🌺
নবী ও রাসূলদের প্রতি ঈমান রাখার অর্থ হলো — তাদের প্রতি সম্মান দেখানো, তাদের শিক্ষা মেনে চলা, এবং তাদেরকে অতিরঞ্জন করে দেবত্ব আরোপ না করা। তারা আল্লাহর বান্দা, আল্লাহর আদেশে কাজ করেন। 🌿
- সব নবী আল্লাহর পাঠানো সত্য বার্তাবাহক। 🌸
- তারা তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন, শির্ক থেকে সতর্ক করেছেন। 🌼
- মুহাম্মাদ ﷺ শেষ নবী — তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই। 🌺
- নবীদের মানা ঈমানের অংশ, অমান্য করা কুফরি। 🌿
🌸 ৫️ আখিরাতের প্রতি ঈমান 🌸
আখিরাতের প্রতি ঈমান মানে হলো—মৃত্যুর পরের জীবন, কবরের প্রশ্ন ও অবস্থা, পুনরুত্থান, কিয়ামতের কঠিন দিন, হিসাব-নিকাশ, আমল নামা, মীযান (আমল পরিমাপ), সেরাতের সেতু, জান্নাত-জাহান্নাম—এই সবকিছু যে সত্য এবং নিশ্চিত হবে—এতে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। 🌿
একজন মুমিন জানে—দুনিয়া সাময়িক; প্রকৃত, স্থায়ী এবং চিরদিনের জীবন হলো আখিরাতের জীবন। সেখানে আল্লাহ তাআলা কারো প্রতি সামান্যতম জুলুম করবেন না। 🌸
আল্লাহ বলেন:
“অতএব, যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ সৎকর্ম করবে, সে তা দেখতে পাবে।
আর যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করবে, সে তা দেখতে পাবে।”
(সূরা যিলযাল ৯৯:৭–৮)
এই আয়াত দেখায়—আখিরাতে মানুষ তার ছোট-বড় প্রতিটি কাজই দেখতে পাবে। তাই প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত। 🌼
আখিরাতে ঈমান মানুষের আচরণ সুন্দর করে, তাকে সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, দায়িত্বশীল ও নেক বানায়। 🌿
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে হিসাবের জন্য প্রস্তুত রাখে
এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কাজ করে।”
(সুনান আত-তিরমিযী — হাদীস নং 2459 [Darussalam]; Hadith Foundation: 2572)
আখিরাতে বিশ্বাস থাকা মানে— প্রতিটি কাজে আল্লাহর হুকুম মানা, পাপ থেকে দূরে থাকা এবং নেক কাজ করার দৃঢ় সংকল্প রাখা। 🌺
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা জান্নাতের বাস্তবতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন— এটি চিরস্থায়ী, এর সুখ-সম্ভার অপরিসীম, এবং এটি শুধু ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের জন্য। 🌸
“আমরা বিশ্বাস করি—কবরের প্রশ্ন, কবরের আজাব ও নেয়ামত, কিয়ামতের পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ, জান্নাত ও জাহান্নাম—সকলই সত্য।” 🌿
আখিরাতের দৃঢ় বিশ্বাস মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে এবং নেক আমলের দিকে উদ্বুদ্ধ করে। 🌼
- আখিরাত সত্য, চিরস্থায়ী ও বাস্তব। 🌿
- প্রত্যেক মানুষ তার কর্মের হিসাব দেবে। 🌼
- নেক আমলের পুরস্কার ও পাপের শাস্তি নিশ্চিত। 🌸
- আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে নেক বান্দা বানায়। 🌺
🌸 ৬️ তাকদীর (ভালো–মন্দ নির্ধারণ) এর প্রতি ঈমান 🌸
তাকদীর মানে হলো—আল্লাহ তাআলা সবকিছু পূর্ব থেকেই জানেন, তাঁর জ্ঞানে, লেখায়, ইচ্ছায় ও সৃষ্টিতে প্রতিটি ঘটনা সংঘটিত হয়। যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে—সবই আল্লাহর নির্ধারণ অনুযায়ী ঘটে। 🌿
একজন মুসলমান বিশ্বাস করে— কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়ই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। তবে মানুষের হাতে রয়েছে—চেষ্টা করা, দো‘আ করা এবং ভালো–মন্দের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। 🌸
আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আমি সবকিছু নির্দিষ্ট পরিমাণে সৃষ্টি করেছি।”
(সূরা আল-কামার ৫৪:৪৯)
এই আয়াত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়— দুনিয়ার প্রতিটি ঘটনা নির্দিষ্ট পরিমাণ, হিসাব ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘটে। এতে কোনো বিশৃঙ্খলা বা আকস্মিকতা নেই—সবই আল্লাহর সম্পূর্ণ জ্ঞান ও পরিকল্পনার অংশ। 🌼
অর্থাৎ—আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটে, জন্ম, মৃত্যু, রিজিক, দুঃখ–কষ্ট, সফলতা—সবকিছুই আল্লাহর নির্ধারিত। এতে একজন মুমিনের মন শান্ত থাকে এবং হতাশা দূর হয়। 🌿
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যদি তোমার কাছে কোনো ঘটনা ঘটে, তুমি বলো না—
‘যদি এমন করতাম, তাহলে এমন হতো।’
বরং বলো— ‘আল্লাহ তা নির্ধারণ করেছেন,
এবং তিনি যা চান তাই করেন।’”
(সহীহ মুসলিম — হাদীস নং 2664 [Darussalam]; Hadith Foundation: 4815)
এই হাদীস মুমিনের হৃদয়ে দৃঢ় বিশ্বাস গঠন করে— কোনো বিপদ বা ক্ষতি হলে “যদি-তবে” না বলে আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা উচিত। 🌺
“আমরা বিশ্বাস করি—তাকদীরের ভালো-মন্দ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে। যা আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন—তা অবশ্যই ঘটবে। কেউ তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারে না।” 🌿
তাকদীর মানে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করা নয়— বরং চেষ্টা করা, দো‘আ করা ও আল্লাহর উপর ভরসা করা। সফলতা–ব্যর্থতা যা-ই হোক—আল্লাহর নির্ধারণে খুশি থাকা। 🌸
এই আয়াত মুমিনের জীবনে তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরতা) প্রতিষ্ঠা করে— যার উপর আল্লাহর সহায়তা থাকে, তাকে কেউ ক্ষতি করতে পারে না। 🌼
- সবকিছু আল্লাহর জ্ঞান, লেখনি ও নির্ধারণ অনুযায়ী ঘটে। 🌿
- কল্যাণ–অকল্যাণ উভয়ই তাঁর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। 🌸
- মুমিন চেষ্টা করে, দো‘আ করে এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকে। 🌺
- তাওয়াক্কুল ও ধৈর্য তাকদীরের প্রতি ঈমানের অংশ। 🌼
📜 সারসংক্ষেপ
- ঈমানের ছয়টি স্তম্ভই ইসলামি আকিদার ভিত্তি।
- প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এই ছয়টি বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা ফরজ।
- যে ব্যক্তি এর কোনো একটিতে সন্দেহ করে, তার ঈমান অসম্পূর্ণ থাকে।
📘 আকিদা গ্রন্থ: আল-ফিকহুল আকবর, আকিদাতুত তাহাবিয়্যাহ, শরহুস সুন্নাহ
📖 হাদীস রেফারেন্স: Darussalam ও বাংলাদেশ হাদীস ফাউন্ডেশন সংস্করণ অনুযায়ী।