🕌 হানাফী মাযহাব অনুযায়ী নামাজ শিক্ষা
এই পৃষ্ঠায় হানাফী ফিকহ অনুযায়ী নামাজের ধাপে ধাপে শিক্ষা, দোয়া, উচ্চারণ ও অর্থ সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। 🌿
১) নামাজের নিয়ত
✦ নামাজ শুরুর আগে অন্তরে দৃঢ়ভাবে নিয়ত করবে কোন নামাজ পড়ছে (যেমন, ফজরের ২ রাকাআত ফরজ)।
✦ মুখে নিয়ত বলা জরুরি নয়; অন্তরের সংকল্পই যথেষ্ট।
✦ পবিত্রতা ও কিবলামুখী হওয়া আবশ্যক।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “সমস্ত আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।”
সহিহ বুখারী, হাদীস: ১
🌸🌿🌸
২) তাকবীরে তাহরীমা
✦ “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করতে হবে।
✦ পুরুষ: দুই হাত কান পর্যন্ত উঠাবে; মহিলা: কাঁধ পর্যন্ত।
✦ আঙ্গুল ফাঁকা থাকবে এবং তালু কিবলামুখী হবে।
📚 সুনান আবু দাউদ, হা/৭৪৯ ; সহিহ বুখারী, হা/৭৩৫; সহিহ মুসলিম, হা/৩৯০
اللّٰهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ মহান।
🌸🌿🌸
৩) হাত বাঁধা ও দু‘আ সানা
✦ পুরুষ: নাভির নিচে হাত বাঁধবে (ডান হাত বাম হাতের উপর)।
✦ মহিলা: বুকে রাখবে।
✦ এরপর “দু‘আ সানা” পাঠ করবে।
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلٰهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলা-হা গাইরুক।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র, আপনার প্রশংসা ও বরকতপূর্ণ নাম, আপনার মাহাত্ম্য মহান, এবং আপনার ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
🌸🌿🌸
৪) সূরা আল-ফাতিহা
✦ দু‘আ সানা শেষে “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম” ও “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাঠ করবে।
✦ এরপর সম্পূর্ণ সূরা আল-ফাতিহা পড়বে।
✦ প্রতিটি আয়াতে থেমে অর্থ ভাবা উত্তম।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।
আররাহমানির রাহিম।
মালিকি ইয়াউমিদ্দীন।
ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তাঈন।
ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম।
সিরাতাল্লাযীনা আন'আমতা আলাইহিম।
গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালা দ্দাল্লীন। আমীন।
অর্থ:শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক।
যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
যিনি বিচার দিবসের মালিক।
আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য চাই।
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।
তাদের পথ, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ।
যারা ক্রোধের পাত্র হয়েছে তাদের পথ নয়— এবং পথভ্রষ্টদের পথও নয়। (আমীন)।
✦ ফাতিহার পর কমপক্ষে তিন আয়াত সম্বলিত একটি সূরা পড়তে হবে।
✦ এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে রুকুতে যাবে।
🌸🌿🌸
৫) রুকু
✦ রুকু করার সময় কোমর সোজা থাকবে।
✦ হাত দুই হাঁটুতে রেখে আঙ্গুল খোলা থাকবে।
✦ তিনবার বা তার বেশি “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” বলবে।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম।
অর্থ: আমার মহান প্রতিপালক পবিত্র।
🌸🌿🌸
৬) সিজদা
✦ রুকু থেকে উঠার পর “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবে এবং দাঁড়িয়ে “রব্বানা লাকাল হামদ” বলবে।
✦ এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যাবে।
✦ সিজদায় সাত অঙ্গ (কপাল, নাক, দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পা) মাটিতে লাগাতে হবে।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা।
অর্থ: আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালক পবিত্র।
🌸🌿🌸
৭) দুই সিজদার মাঝে দো‘আ
✦ প্রথম সিজদা শেষে বসে “রাব্বিগফির লি” দুইবার বলবে।
✦ বসার ভঙ্গি হবে বাঁ পায়ের উপর বসা এবং ডান পা খাড়া রাখা।
✦ তারপর দ্বিতীয় সিজদা করবে।
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণ: রাব্বিগফির লি, রাব্বিগফির লি।
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন।
🌸🌿🌸
৮) তাশাহহুদ
✦ দুই রাকাআতের পর বসে তাশাহহুদ পাঠ করবে।
✦ তাশাহহুদের সময় “আশহাদু” বলার সময় শাহাদতের আঙ্গুল উঠাবে।
✦ যদি চার রাকাআতের নামাজ হয়, দ্বিতীয় রাকাআতের পর উঠতে হবে।
ٱلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَٱلصَّلَوَاتُ وَٱلطَّيِّبَاتُ
ٱلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ وَرَحْمَةُ ٱللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
ٱلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَىٰ عِبَادِ ٱللَّهِ ٱلصَّالِحِينَ
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ
وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্সালাওয়াতু ওয়াত্তাইয়িবাত।
আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্সালিহীন।
আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ।
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহ।
অর্থ: সমস্ত সম্মান, দোয়া এবং সকল পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য।
হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
আমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
🌸🌿🌸
৯) দরূদে ইবরাহিম
✦ শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরূদে ইবরাহিম পাঠ করতে হবে।
✦ এটি ফরজ নয়, তবে সুন্নাতে মু’আক্কাদা।
✦ মনোযোগ সহকারে দরূদ পাঠ করা উত্তম।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ
وَعَلَىٰ آلِ مُحَمَّدٍ
كَمَا صَلَّيْتَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
وَعَلَىٰ آلِ إِبْرَاهِيمَ
إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ
وَعَلَىٰ آلِ مُحَمَّدٍ
كَمَا بَارَكْتَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
وَعَلَىٰ آلِ إِبْرَاهِيمَ
إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি 'আলা মুহাম্মাদিন
ওয়া 'আলা আালি মুহাম্মাদ্
কামা সাল্লাইতা 'আলা ইবরাহিমা
ওয়া 'আলা আালি ইবরাহিমা
ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক 'আলা মুহাম্মাদিন
ওয়া 'আলা আালি মুহাম্মাদ্
কামা বারাক্তা 'আলা ইবরাহিমা
ওয়া 'আলা আালি ইবরাহিমা
ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।
অর্থ: হে আল্লাহ!
আপনি মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন,
যেমন আপনি ইবরাহিম এবং ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষণ করেছেন।
নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য, মহিমান্বিত।
হে আল্লাহ!
আপনি মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি বরকত দান করুন,
যেমন আপনি ইবরাহিম এবং ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের প্রতি বরকত দান করেছেন।
নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য, মহিমান্বিত।
🌸🌿🌸
১০) সালামের আগে দো‘আ
✦ দরূদের পর বিভিন্ন মাকবুল দো‘আ পড়া যায়।
✦ যেমন: ক্ষমা প্রার্থনা, রহমতের দোয়া ইত্যাদি।
✦ মনোযোগসহ দোয়া করা উত্তম।
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا
وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ
وَارْحَمْنِي
إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসী যুলমান কাথীরًا,
ওয়ালা ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা,
ফাগ্ফির্ লী মাগফিরাতাম্ মিন্ ‘ইন্দিক,
ওয়ারহামনী,
ইন্নাকা আনতাল্ গফূরুর্ রাহীম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি।
আপনার ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।
অতএব, আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন।
নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
🌸🌿🌸
১১) সালাম
✦ প্রথমে ডান দিকে মাথা ফিরিয়ে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবে।
✦ এরপর বাঁ দিকে একইভাবে বলবে।
✦ এভাবে নামাজ সমাপ্ত হবে।
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ
উচ্চারণ: আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর শান্তি ও রহমত আপনার উপর বর্ষিত হোক।