সূরা আ্লে-ইমরান
আয়াত সংখ্যা: ২০০, রুকু সংখ্যা: ২০
সূরা আলে ইমরান অর্থ “ইমরানের পরিবার”। এটি কুরআনের তৃতীয় সূরা এবং এতে মোট ২০০টি আয়াত রয়েছে। এটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ এটি একটি মাদানী সূরা। এতে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে ঈমান, ধৈর্য, ঐক্য এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের শিক্ষা দিয়েছেন। এ সূরায় খ্রিস্টান, ইহুদি এবং মুনাফিকদের সাথে তর্ক-বিতর্কের ঘটনাগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরাটির নাম এসেছে ইমরানের পরিবার থেকে — অর্থাৎ হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর পরিবার, যিনি নবী ঈসা (আঃ)-এর মা। এতে তাদের পবিত্র বংশের কাহিনি ও আল্লাহর নেয়ামতের বর্ণনা এসেছে। এ সূরা পূর্ববর্তী আহলে কিতাব ও মুসলমানদের মধ্যে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট করেছে।
🌿 সূরা আলে ইমরান-এর মূল বিষয়সমূহ:
- আল্লাহর একত্ব, তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কুরআনের সত্যতা।
- মারইয়াম (আঃ)-এর পরিবার ও ঈসা (আঃ)-এর জন্মের অলৌকিক কাহিনি।
- উহুদ যুদ্ধের ঘটনা ও মুসলমানদের জন্য শিক্ষা।
- ঈমান, ধৈর্য, ও আল্লাহর পথে স্থিরতার আহ্বান।
- মুনাফিকদের কপটতা ও আল্লাহর আদেশ অমান্যের পরিণতি।
- মুসলমানদের ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মত্যাগের গুরুত্ব।
- সত্য ধর্ম ইসলামকে গ্রহণ করার আহ্বান এবং আল্লাহর পথে জিহাদের নির্দেশ।
🌸 সূরা আলে ইমরান-এর বৈশিষ্ট্য:
- এ সূরাটি সূরা আল-বাকারার পর কুরআনের দ্বিতীয় দীর্ঘ সূরা।
- এতে “আয়াতুল মুহকামাত” ও “আয়াতুল মুতাশাবিহাত” সম্পর্কে ব্যাখ্যা এসেছে — অর্থাৎ স্পষ্ট ও রূপক অর্থের আয়াতের পার্থক্য।
- এতে আল্লাহর পথে ধৈর্য, সহনশীলতা এবং সত্যের জন্য ত্যাগ স্বীকারের গুরুত্ব বর্ণিত।
- নবী ﷺ বলেছেন: “সূরা আল-বাকারা ও সূরা আলে ইমরানকে পাঠ কর, কারণ এ দুটি কিয়ামতের দিন দু’টি মেঘের ছায়া হয়ে আসবে।” (📖 সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮০৪)
💫 সূরা আলে ইমরান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা:
- আল্লাহর রাস্তায় ধৈর্যশীল থাকা ও বিপদের মুখেও ঈমান দৃঢ় রাখা।
- সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।
- দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে বিভ্রান্ত না হয়ে পরকালের মুক্তির জন্য চেষ্টা করা।
- উহুদ যুদ্ধের পর মুসলমানদের ভুল থেকে শিক্ষা — অবাধ্যতা করলে আল্লাহর সাহায্য হারিয়ে যায়।
- আল্লাহর প্রতি ভরসা ও তাওয়াক্কুলই মুমিনের শক্তি।
🌿 শিক্ষণীয় বিষয়:
- সত্য ও মিথ্যার সংঘর্ষে সবসময় সত্যের পক্ষে দৃঢ় থাকতে হবে।
- ঈমান, ধৈর্য ও ঐক্যই মুসলিম জাতির প্রকৃত শক্তি।
- আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করাই মুমিনের সর্বোচ্চ মর্যাদা।
- সূরা আল-বাকারা ও আলে ইমরান পাঠকারী কিয়ামতের দিনে বিশেষ নূর লাভ করবে।
- মুকাত্তা‘আত: সূরার শুরুতে যে সংক্ষিপ্ত অক্ষরসমষ্টি (যেমন: আলিফ্-লাম্-মীম্)। কুরআনে কয়েকটি সূরায় এই ধরনের অক্ষর আছে।
- অর্থ সম্পর্কে বৈচিত্র্য: মকরসম্মত আলেমরা একমত নয়—কারো মতে এগুলো কেবল আল্লাহর নামে ইঙ্গিত, কারো মতে এগুলো মুস্তফিদের (রহ.) শ্রোতাদের চোখে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, আবার কারো মতে এগুলোর গোপন তত্ত্ব বা বোধগম্যতা রয়েছে যা আল্লাহই জানেন।
- উপদেশ: মুকাত্তা‘আত আমাদের স্মরণ করায়—কুরআন অলৌকিক ও রহস্যময়; এর পুরো ব্যাখ্যা আল্লাহর কাছে। এটি পাঠককে কুরআন শুনে ভাববার, অধ্যয়ন ও তদবীর করার উদ্দেশ্যে প্ররোচিত করে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ / প্রাসঙ্গিকতা:
- যেমন কোনো কঠিন ধাঁধা বা সংকেত প্রথমেই দিলে মনোযোগ বাড়ে—মুকাত্তা‘আতও পাঠককে মনোযোগী করে এবং কুরআনের আধ্যাত্মিকতা নিয়ে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।
- অধিকাংশ মুমিন কুরআন পড়ার সময় মুকাত্তা‘আতের অর্থ সন্ধানে গবেষণা করে; এটি ইসলামিক ভাষ্য ও রিসার্চের একটি অংশ হয়ে থাকে।
মূল শিক্ষা:
- কিছু কথা বা নিদর্শন দ্ব্যর্থহীনভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না — এরকম বিষয়েও নম্রতা ও অনুসন্ধিৎসা বজায় রাখতে হবে।
- কুরআন রহস্যময় ও গভীর; প্রতিটি অংশের বিন্দুমাত্রই গভীর শিক্ষা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুকাত্তা‘আত নিয়ে অধ্যয়ন করলে আলেমদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পড়ুন এবং কুরআন-সুম্নাহের আলোকে বোঝার চেষ্টা করুন।
- অজানা অংশকে আল্লাহর জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করার মনোভাব সুদৃঢ় করুন—এতে সঠিক তায়্যু (ইলম-প্রেম) ও বিনয় গড়ে ওঠে।
এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার একত্ব ও সিফাত (গুণাবলী) বর্ণনা করা হয়েছে।
- তাওহীদ: আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। সকল উপাসনা শুধু তাঁরই প্রাপ্য।
- আল-হাইয়্য (চিরঞ্জীব): তিনি এমন চিরঞ্জীব, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করেন না।
- আল-ক্বাইয়্যুম (ধারক-সংরক্ষক): আসমান-জমিনের সবকিছু তাঁরই উপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে ছাড়া থাকেন, কিন্তু সবাই তাঁর উপর নির্ভরশীল।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- মানুষের জীবন, প্রযুক্তি, অর্থনীতি—সবই নির্ভরশীল। কেবল আল্লাহই স্বয়ংসম্পূর্ণ।
- আজকের দুনিয়ায় মানুষ বহু দেবতা বা বস্তু পূজা করে, অথচ প্রকৃত ইলাহ কেবল আল্লাহ।
- যেমন: বিদ্যুৎ গেলে আলো নিভে যায়, খাদ্য না পেলে জীবন থাকে না। কিন্তু আল্লাহর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই।
মূল শিক্ষা:
- তাওহীদ—আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরীক নেই।
- আল্লাহই চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক-সংরক্ষক।
- মুমিন সর্বদা আল্লাহর উপর নির্ভর করে, অন্য কারো উপর নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- তাওহীদের আক্বিদা দৃঢ়ভাবে অন্তরে স্থাপন করা জরুরি।
- আল্লাহর চিরঞ্জীব ও ক্বাইয়্যুম সিফাত নিয়ে চিন্তা করলে অন্তরে ঈমান বৃদ্ধি পায়।
- সবকিছু আল্লাহর হাতে—তাঁর উপর ভরসা করলে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা আসে।
এই আয়াতে কুরআনের সত্যতা এবং পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের প্রতি আল্লাহর অবতীর্ণ শিক্ষার আলোচনা হয়েছে।
- কুরআন: কুরআন হক (সত্য) সহকারে নাযিল হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
- পূর্ববর্তী কিতাব: কুরআন তাওরাত ও ইঞ্জীলসহ পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করে।
- তাওরাত ও ইঞ্জীল: আল্লাহ মুসা (আ.)-এর উপর তাওরাত এবং ঈসা (আ.)-এর উপর ইঞ্জীল নাযিল করেছিলেন, যা মানুষের হিদায়াতের জন্য ছিল।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও খ্রিষ্টান ও ইহুদীরা নিজেদের কিতাব অনুসরণ করে, তবে সেগুলো পরিবর্তিত হয়েছে।
- কুরআনই একমাত্র সংরক্ষিত কিতাব, যা পূর্ববর্তী কিতাবের আসল বার্তা নিশ্চিত করে।
- যেমন একজন আইন পরিবর্তন হলে পুরনো আইন বাতিল হয়—তেমনি কুরআন চূড়ান্ত কিতাব হিসেবে আগের কিতাবকে পরিপূর্ণ করেছে।
মূল শিক্ষা:
- কুরআন আল্লাহর চূড়ান্ত ও সংরক্ষিত কিতাব।
- পূর্ববর্তী কিতাবগুলো সত্য ছিল, তবে সেগুলো পরিবর্তিত হয়েছে।
- কুরআন সব কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করে এবং চূড়ান্ত আইন প্রণয়ন করে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কুরআনকে জীবনের চূড়ান্ত আইন ও হিদায়াত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
- তাওরাত, ইঞ্জীলসহ পূর্ববর্তী কিতাবের প্রতি সম্মান রাখতে হবে, তবে কুরআনকেই সর্বোচ্চ মানতে হবে।
- মুমিনের উচিত কুরআনের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা এবং তার শিক্ষাকে জীবনে বাস্তবায়ন করা।
এখানে কুরআনের মর্যাদা, পূর্ববর্তী কিতাবের উদ্দেশ্য, এবং কাফেরদের পরিণতির বর্ণনা করা হয়েছে।
- হিদায়াত: তাওরাত ও ইঞ্জীল মানুষের পথনির্দেশের জন্য নাযিল হয়েছিল।
- ফুরকান: কুরআনকে বলা হয়েছে "ফুরকান" — যা হক ও বাতিল, সত্য ও মিথ্যা, হালাল ও হারামের মধ্যে পার্থক্য করে।
- কাফেরদের শাস্তি: যারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব।
- আল্লাহর সিফাত: তিনি "আযীয" (পরাক্রমশালী) ও "যুন্তিক্বাম" (প্রতিশোধ গ্রহণকারী)। অর্থাৎ আল্লাহর আযাব থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও কুরআনই একমাত্র মানদণ্ড, যা সঠিক-ভুলের পার্থক্য নির্ধারণ করে।
- যেমন: আধুনিক দুনিয়ায় নৈতিকতা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও, কুরআন স্পষ্ট করে দেয় কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম।
- যারা কুরআন অস্বীকার করে, তারা নিজেদেরই ধ্বংস ডেকে আনে।
মূল শিক্ষা:
- তাওরাত, ইঞ্জীল মানুষের হিদায়াতের জন্য নাযিল হয়েছিল।
- কুরআন হলো ফুরকান—সত্য-মিথ্যার চূড়ান্ত মানদণ্ড।
- আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করলে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআনকে মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করা জরুরি।
- আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকারকারীদের পরিণতি ভয়াবহ।
- আল্লাহর পরাক্রম ও প্রতিশোধ থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না, তাই তাঁর দিকে ফিরে আসাই মুক্তি।
এই আয়াতে আল্লাহর সর্বজ্ঞানী সিফাত বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি আসমান-জমিনের ক্ষুদ্রতম বিষয়ও জানেন।
- আল্লাহ সর্বজ্ঞ: ক্ষুদ্রতম বালুকণা, পাতার পতন, অন্তরের চিন্তা—সবই আল্লাহর জ্ঞানে রয়েছে।
- কোনো কিছু গোপন নয়: আসমান-জমিনে যত গোপন রহস্য, আল্লাহর কাছে সবই প্রকাশ্য।
- বান্দার জন্য শিক্ষা: মানুষ গোপনে বা প্রকাশ্যে যাই করুক, আল্লাহর কাছে তা জানা আছে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজকের আধুনিক প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট বা সিসিটিভি অনেক কিছু ধরতে পারে, কিন্তু আল্লাহর জ্ঞান তারও ঊর্ধ্বে।
- মানুষ গোপনে অন্যায় কাজ করলে ভাবে কেউ জানে না, অথচ আল্লাহ তা দেখছেন।
- আল্লাহর জ্ঞান বিশ্বাস করলে মুমিন প্রতিটি কাজে সতর্ক থাকে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ সর্বজ্ঞ—আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই তাঁর অগোচর নয়।
- মানুষ আল্লাহকে ফাঁকি দিতে পারবে না।
- মুমিনের জীবন সব সময় আল্লাহর নজরদারির মধ্যে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- গোপন পাপ থেকেও বিরত থাকতে হবে, কারণ আল্লাহ সব জানেন।
- অন্তরের নিয়তও আল্লাহ জানেন—তাই নিয়ত খাঁটি রাখতে হবে।
- আল্লাহর সর্বজ্ঞ সিফাত নিয়ে চিন্তা করলে অন্তরে তাকওয়া ও সতর্কতা বাড়ে।
আল্লাহ তাআলা মানুষের সৃষ্টির প্রাথমিক স্তর তথা মাতৃগর্ভে আকৃতি প্রদানের কথা এখানে উল্লেখ করেছেন।
- আকৃতি দান: মানুষ সৃষ্ট হয় মাতৃগর্ভে বিভিন্ন ধাপে—আল্লাহ ইচ্ছানুযায়ী আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দান করেন।
- তাওহীদ: এই সৃষ্টিশক্তির কারণে প্রমাণ হয়—আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।
- আযীয ও হাকীম: আল্লাহ শক্তিশালী (আযীয) ও সবকিছু হিকমতের সাথে করেন (হাকীম)।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ বিজ্ঞানীরা আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ভ্রূণের গঠন দেখতে পায়, কিন্তু কে ছেলে, কে মেয়ে, কেমন হবে আকৃতি—সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
- ডিএনএ, জিন, বর্ণ, আকৃতি—সবই আল্লাহর হিকমতের নিদর্শন।
- মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কিন্তু মূল সৃষ্টিশক্তি আল্লাহর হাতে।
মূল শিক্ষা:
- মানুষের সৃষ্টির প্রতিটি ধাপ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।
- আল্লাহই একমাত্র উপাস্য—তাঁর মতো সৃষ্টিশক্তি কারো নেই।
- তিনি পরাক্রমশালী ও হিকমতের অধিকারী।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- নিজের সৃষ্টির সূচনা স্মরণ করলে বান্দার অন্তরে বিনয় জন্মায়।
- আল্লাহর সৃষ্টিশক্তি উপলব্ধি করলে তাওহীদের আক্বিদা আরও দৃঢ় হয়।
- মুমিনকে সর্বদা আল্লাহর হিকমতের উপর আস্থা রাখতে হবে।
এ আয়াতে কুরআনের দুটি ধরণের আয়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে—**মুহকাম** (সুস্পষ্ট) এবং **মুতাশাবিহাত** (অস্পষ্ট)।
- মুহকাম আয়াত: সুস্পষ্ট অর্থবোধক, যেমন হালাল-হারাম, ফরজ-হুকুম ইত্যাদি। এগুলোই কুরআনের মূলভিত্তি।
- মুতাশাবিহাত আয়াত: যেগুলোর প্রকৃত অর্থ আল্লাহ জানেন, যেমন: কিছু অদৃশ্য বিষয়, কিয়ামতের সময়, মুকাত্তা‘আত (আলিফ লাম মীম ইত্যাদি)।
- কুটিল হৃদয়ের লোক: তারা এসব আয়াতকে নিজেদের স্বার্থে ঘুরিয়ে ব্যাখ্যা করে, ফলে ফিতনা সৃষ্টি হয়।
- জ্ঞানে দৃঢ় আলেমরা: তারা বিনম্রভাবে বলে—“আমরা সবকিছুর উপর ঈমান রাখি, সবই আল্লাহর কাছ থেকে।”
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও কিছু লোক কুরআনের মুতাশাবিহ আয়াত ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
- যেমন: কেউ কিয়ামতের সময় নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে (কবে হবে বলার চেষ্টা করে), অথচ তা শুধু আল্লাহই জানেন।
- কেউ কেউ আল্লাহর সিফাত (যেমন—আরশে অবস্থান) নিয়ে সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষকে ভুল পথে নেয়।
মূল শিক্ষা:
- কুরআনের সুস্পষ্ট (মুহকাম) আয়াতকে ভিত্তি ধরে চলতে হবে।
- অস্পষ্ট আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ফিতনার কারণ।
- প্রকৃত ঈমান হলো—সব আয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে বলে বিশ্বাস রাখা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুতাশাবিহ আয়াত নিয়ে অতি বিশ্লেষণ ও ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- জ্ঞানে দৃঢ় মুমিন সবকিছুর উপর ঈমান রাখে, অহংকার করে না।
- আল্লাহ যা গোপন রেখেছেন, তা গোপন জেনেই গ্রহণ করা বিনয়ের লক্ষণ।
এ আয়াতটি একটি দোয়া, যা জ্ঞানে দৃঢ় মুমিনরা আল্লাহর কাছে করত। এতে হিদায়াতের স্থায়িত্ব, অন্তরের সঠিকতা এবং আল্লাহর দয়ার প্রার্থনা রয়েছে।
- হিদায়াতের পর ভ্রষ্ট না হওয়া: অনেক সময় মানুষ হিদায়াত পাওয়ার পর শয়তানের প্ররোচনায় পথ হারিয়ে ফেলে। এজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
- দয়া প্রার্থনা: আল্লাহর রহমত ছাড়া বান্দা টিকে থাকতে পারে না।
- আল-ওয়াহ্হাব: আল্লাহই পরম দাতা। তিনি চাইলে অসীম দয়া ও অনুগ্রহ দান করেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- অনেক মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জেনে ও আমল শুরু করলেও পরে নানা প্রলোভনে ভ্রষ্ট হয়ে যায়। এজন্য দোয়া জরুরি।
- জীবনের সমস্যায় কেউ হতাশ হয়ে পথ হারাতে পারে। এই আয়াতের দোয়া অন্তরকে দৃঢ় রাখে।
- আজকের যুগে নানান ফিতনা (ভুল আক্বিদা, ভোগবাদ, নাস্তিক্যবাদ) আছে—এ থেকে বাঁচতে এ দোয়া প্রয়োজন।
মূল শিক্ষা:
- হিদায়াত পাওয়ার পর স্থির থাকা আল্লাহর দয়ার উপর নির্ভরশীল।
- মানুষকে সর্বদা অন্তরের সঠিকতা নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে।
- আল্লাহই একমাত্র দাতা, অন্য কেউ প্রকৃত সাহায্য করতে পারে না।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- হিদায়াতের পর ভ্রষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
- জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহর দয়ার প্রয়োজন।
- “রাব্বানা লা তুযিঘ্ কুলূবানার…” দোয়া নিয়মিত পড়া মুমিনের অন্তরকে স্থির রাখে।
এটি আল্লাহর কাছে আরেকটি দোয়া, যেখানে কিয়ামতের দিন, হিসাব-নিকাশ এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে ঈমানের প্রকাশ রয়েছে।
- কিয়ামতের দিন: সেই দিন মানুষকে একত্রিত করা হবে বিচার ও প্রতিদান দেওয়ার জন্য।
- সন্দেহহীন: এ দিন অবশ্যই আসবে—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি: আল্লাহর প্রতিশ্রুতি চূড়ান্ত, তিনি কখনো ভঙ্গ করেন না।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ মানুষ দুনিয়ার কাজকর্মে এত ব্যস্ত যে আখিরাত ভুলে যায়, অথচ কিয়ামতের দিন নিশ্চিত।
- অনেকে বলে—“আখিরাত নেই, কিয়ামত নেই”—এটি কাফেরদের ভ্রান্ত ধারণা।
- বিশ্বাসীরা প্রতিদিন মনে করে—একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে, তাই সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে।
মূল শিক্ষা:
- কিয়ামতের দিন সম্পর্কে কোনো সন্দেহ রাখা যাবে না।
- আল্লাহ মানুষকে একত্রিত করবেন হিসাব-নিকাশের জন্য।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সর্বদা সত্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনকে সর্বদা আখিরাত স্মরণে রেখে দুনিয়ার কাজ করতে হবে।
- কিয়ামতের দিন নিশ্চিত—এ বিশ্বাস অন্তরে দৃঢ় রাখতে হবে।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য—তাই দুনিয়ায় আমল ঠিক রাখা জরুরি।
এই আয়াতে কাফেরদের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। তারা দুনিয়ায় সম্পদ ও সন্তান নিয়ে অহংকার করে, কিন্তু আখিরাতে এগুলো তাদের কোনো উপকারে আসবে না।
- সম্পদ: দুনিয়ায় কাফেররা সম্পদ সঞ্চয় করে মনে করে এগুলো তাদের রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারবে না।
- সন্তান: সন্তান সংখ্যা বা বংশগৌরব আখিরাতে কোনো কাজে লাগবে না।
- জাহান্নামের জ্বালানি: কাফেররা নিজেরাই জাহান্নামের আগুনের জ্বালানি হবে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ অনেকেই ভাবে—“আমার টাকা আছে, প্রভাব আছে, বংশ আছে—কিছু হবে না।” অথচ আখিরাতে এগুলো মূল্যহীন।
- রাজনৈতিক ক্ষমতা বা পারিবারিক মর্যাদা দুনিয়ায় কাজ করতে পারে, কিন্তু কবর ও আখিরাতে কিছুই কাজে লাগবে না।
- আল্লাহর দিকে ফিরতে না চাইলে মানুষ যত ধনী বা শক্তিশালী হোক, শেষ পরিণতি জাহান্নাম।
মূল শিক্ষা:
- কুফরি করলে সম্পদ ও সন্তান কাউকে রক্ষা করতে পারবে না।
- আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি কেবল ঈমান ও সৎকর্মে।
- কাফেরদের পরিণতি জাহান্নামের জ্বালানি হওয়া।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সম্পদ ও সন্তানকে দুনিয়ার পরীক্ষার অংশ মনে করতে হবে, আখিরাতের মুক্তির নিশ্চয়তা নয়।
- আল্লাহর পথে ফিরতে হবে, না হলে সবকিছু বৃথা।
- মুমিনের উচিত সর্বদা আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
এই আয়াতে কাফেরদের শাস্তির জন্য পূর্ববর্তী উম্মতদের দৃষ্টান্ত আনা হয়েছে।
- ফিরআউন ও তার জাতি: তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছিল এবং অহংকারে ডুবে গিয়েছিল।
- পূর্ববর্তী জাতি: নূহ (আ.), আদ, সামুদ, লূতের জাতি—সবাই গুনাহের কারণে ধ্বংস হয়েছিল।
- শাস্তি: আল্লাহ তাদেরকে তাদের অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছিলেন। আল্লাহর শাস্তি কঠিন ও নিশ্চিত।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও যারা আল্লাহর আইন অমান্য করে এবং কুরআনকে অস্বীকার করে, তারা একই পরিণতির দিকে যাচ্ছে।
- বড় বড় সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে অন্যায় ও গোনাহের কারণে—এটাই কুরআনের ইতিহাসের শিক্ষা।
- আধুনিক দুনিয়ায় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোও যদি আল্লাহর অবাধ্য হয়, তারাও ধ্বংস হবে।
মূল শিক্ষা:
- কাফেররা পূর্ববর্তী উম্মতদের মতো একই ভুল করে।
- আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।
- ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া ঈমানের অংশ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করলে ধ্বংস অনিবার্য।
- পূর্ববর্তী জাতির ইতিহাস অধ্যয়ন করা উচিত, যাতে একই ভুল না করি।
- আল্লাহর শাস্তি খুবই কঠিন—এ ভয় মুমিনকে গোনাহ থেকে দূরে রাখে।
এ আয়াতে কাফেরদের জন্য কঠিন সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে।
- পরাজিত হওয়া: দুনিয়ায় আল্লাহর সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ে কাফেররা শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে।
- জাহান্নামে সমবেত হওয়া: আখিরাতে তারা সবাই একত্রিত হবে জাহান্নামের দিকে।
- নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল: জাহান্নাম হলো চিরস্থায়ী শাস্তির জায়গা, যেখানে কারো মুক্তি নেই।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- ইসলামের বিরোধীরা আজ দুনিয়ায় কিছু সময়ের জন্য শক্তিশালী মনে হলেও শেষ পরিণতি তাদেরই পরাজয়।
- অনেক বড় বড় সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে ইসলামের বিরোধিতা করতে গিয়ে।
- আখিরাতে যারা কুফরি করে, তাদের জন্য চূড়ান্ত স্থান জাহান্নাম।
মূল শিক্ষা:
- কাফেররা শেষ পর্যন্ত দুনিয়ায়ও হেরে যাবে।
- আখিরাতে তাদের গন্তব্য জাহান্নাম।
- মুমিনের জন্য বিজয় নিশ্চিত, যদি সে আল্লাহর পথে থাকে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কাফেরদের সাময়িক শক্তি দেখে হতাশ হওয়া যাবে না।
- আল্লাহর পথে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে।
- জাহান্নামের ভয় মানুষকে আল্লাহর পথে দৃঢ় রাখে।
এখানে বদর যুদ্ধের ঘটনা ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেখানে মুসলিম ও কাফের বাহিনী মুখোমুখি হয়েছিল।
- বদরের যুদ্ধ: মুসলমান ছিল প্রায় ৩১৩ জন, আর কাফের ছিল প্রায় ১০০০ জন। তবুও আল্লাহর সাহায্যে মুসলমানরা বিজয় লাভ করে।
- কাফেরদের বিভ্রম: তারা মুসলমানদের সংখ্যা দ্বিগুণ দেখছিল, ফলে ভয় ও বিভ্রান্তিতে পড়ে।
- আল্লাহর সাহায্য: আল্লাহ যাকে চান তাকেই সাহায্য করেন, সংখ্যা নয় বরং আল্লাহর nusrah-ই আসল শক্তি।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও মুসলমানরা দুনিয়ার দৃষ্টিতে দুর্বল মনে হলেও আল্লাহর সাহায্য থাকলে বিজয় তাদেরই।
- যেমন অনেক সময় ছোট একটি গোষ্ঠী বড় শক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে আল্লাহর উপর ভরসা করে।
- দুনিয়ার ইতিহাসে অনেক সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়েছে, অথচ ঈমানদারদের সামান্য শক্তি টিকে গেছে আল্লাহর nusrah-এর কারণে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর পথে সংগ্রামকারীদের সাহায্য আল্লাহ নিজে করেন।
- সংখ্যা ও শক্তি নয়, বরং আল্লাহর সাহয্ই বিজয়ের আসল মাধ্যম।
- ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ মুমিনদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের উচিত সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।
- সংখ্যায় ছোট হলেও ঈমান ও আল্লাহর সাহায্যে বিজয় সম্ভব।
- ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান ফিতনার যুগেও আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকতে হবে।
আল্লাহ এখানে দুনিয়ার আকর্ষণীয় জিনিসগুলো বর্ণনা করেছেন, যেগুলোর প্রতি মানুষের স্বাভাবিক ঝোঁক রয়েছে।
- নারী ও সন্তান: পরিবার, দাম্পত্য ও বংশধারা মানুষের কাছে প্রিয়।
- সম্পদ: স্বর্ণ, রৌপ্য, ধন-সম্পদ মানুষের লোভ ও ভালোবাসার কারণ।
- অশ্ব: সে সময়ে যুদ্ধের শক্তি ও মর্যাদার প্রতীক ছিল ঘোড়া। আজকের দিনে গাড়ি, প্রযুক্তি, সামরিক শক্তি এর সমান।
- চতুষ্পদ জন্তু ও শস্য: জীবিকার প্রধান উপায়; আধুনিক কালে এর মধ্যে ব্যবসা, কৃষি, জমি, ইন্ডাস্ট্রি অন্তর্ভুক্ত।
- বাস্তবতা: এগুলো দুনিয়ার ভোগসামগ্রী, চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। আসল সাফল্য আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তনে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ মানুষ নারীর প্রতি আসক্তি, সন্তান নিয়ে অহংকার, সম্পদ ও বিলাসিতায় ডুবে যায়।
- গাড়ি, বাড়ি, প্রযুক্তি, চাকরি, ব্যবসা—সবকিছু মানুষকে ব্যস্ত রাখে, কিন্তু এগুলো সাময়িক।
- যদি এগুলো আল্লাহর পথে ব্যবহার হয় তবে উপকারি; অন্যথায় এগুলো কেবল ধ্বংসের কারণ।
মূল শিক্ষা:
- দুনিয়ার সবকিছু সাময়িক ভোগসামগ্রী মাত্র।
- আল্লাহর কাছে রয়েছে চিরস্থায়ী পুরস্কার।
- দুনিয়ার আকর্ষণে বিভ্রান্ত না হয়ে আখিরাতকে লক্ষ্য বানাতে হবে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- নারী, সন্তান, সম্পদ—এসব ভালোবাসা সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
- আখিরাতকে ভুলে গিয়ে দুনিয়ার ভোগে ডুবে যাওয়া মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
- মুমিনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের পুরস্কার।
এখানে আল্লাহ দুনিয়ার সাময়িক ভোগসামগ্রীর পরিবর্তে আখিরাতের উত্তম প্রতিদান বর্ণনা করেছেন।
- জান্নাত: তাকওয়াবানদের জন্য স্থায়ী জান্নাত, যেখানে নদী প্রবাহিত হবে।
- পবিত্র সঙ্গিনী: জান্নাতে স্ত্রীগণ থাকবে সম্পূর্ণ পবিত্র, কোনো অপবিত্রতা থাকবে না।
- আল্লাহর সন্তুষ্টি: জান্নাতের চেয়েও বড় পুরস্কার হলো আল্লাহর রিদওয়ান (সন্তুষ্টি ও দয়া)।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- মানুষ দুনিয়ায় সম্পদ, পরিবার, মর্যাদা নিয়ে গর্ব করে—কিন্তু এগুলো সাময়িক।
- একজন মুমিনের লক্ষ্য হওয়া উচিত জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
- আধুনিক ভোগবাদী সমাজ মানুষকে দুনিয়ার দিকে টেনে নিয়ে যায়, অথচ প্রকৃত পুরস্কার আখিরাতে।
মূল শিক্ষা:
- তাকওয়াবানদের জন্য জান্নাত, পবিত্র সঙ্গিনী ও আল্লাহর রিদওয়ান অপেক্ষা করছে।
- দুনিয়ার ভোগসামগ্রী আখিরাতের তুলনায় কিছুই নয়।
- আল্লাহ বান্দাদের সব কাজ দেখেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিদান দেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- তাকওয়া ছাড়া জান্নাতের মর্যাদা পাওয়া যায় না।
- আল্লাহর সন্তুষ্টি আখিরাতের সর্বোচ্চ পুরস্কার।
- মুমিনকে সর্বদা আখিরাতকে লক্ষ্য রেখে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
এ আয়াতে মুমিনদের একটি সুন্দর দোয়া বর্ণনা করা হয়েছে। তারা ঈমান আনার পর আল্লাহর কাছে তিনটি জিনিস চায়—
- ঈমান: প্রথমে স্বীকার করে—“আমরা ঈমান এনেছি।”
- গুনাহ মাফ: তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
- আগুন থেকে বাঁচা: সবচেয়ে বড় অনুরোধ হলো—জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ আমরা নামায, রোজা, হজ করি—তবুও ভুল-ত্রুটি থেকে বাঁচি না। তাই সবসময় ক্ষমা চাইতে হবে।
- আজকের সমাজে নানা ফিতনা আছে; মুমিনের সবচেয়ে বড় দোয়া হওয়া উচিত—“হে আল্লাহ, আমাদের আখিরাত রক্ষা করো।”
- দুনিয়ার সব কষ্ট সহ্য করা যায়, কিন্তু জাহান্নামের আগুন সহ্য করা সম্ভব নয়।
মূল শিক্ষা:
- ঈমানের পর সবচেয়ে জরুরি হলো গুনাহ মাফ চাওয়া।
- মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
- আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ঈমানের নিদর্শন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সর্বদা এই দোয়া মুখে রাখা উচিত।
- ঈমানের দাবি হলো—নামায-ইবাদতের পাশাপাশি ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচতে দোয়া ও সৎকর্ম উভয়ই জরুরি।
এ আয়াতে তাকওয়াবানদের কিছু বিশেষ গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে।
- ধৈর্যশীল (সাবিরীন): বিপদ, কষ্ট ও ইবাদতে ধৈর্যধারণ করা।
- সত্যবাদী (সাদিকীন): কথায়, কাজে ও প্রতিশ্রুতিতে সৎ থাকা।
- আনুগত্যশীল (কানিতীন): আল্লাহর ইবাদতে অবিচল থাকা।
- দানকারী (মুনফিকীন): সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা।
- ক্ষমা প্রার্থনাকারী (মুস্তাগফিরীন): বিশেষ করে সাহারীর সময় (ফজরের আগে) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ ধৈর্য রাখা কঠিন, তবুও মুসলমানের আসল শক্তি হলো ধৈর্য।
- সত্যবাদিতা মানুষের মাঝে কমে যাচ্ছে, অথচ ইসলাম সত্যবাদিতাকে মূল ভিত্তি করেছে।
- রাতে তাহাজ্জুদ ও সাহারীর সময় ইস্তেগফার করা মুমিনের জন্য বিশেষ বরকতের কাজ।
মূল শিক্ষা:
- তাকওয়াবানদের গুণাবলি হলো ধৈর্য, সত্যবাদিতা, আনুগত্য, দান ও ইস্তেগফার।
- বিশেষ করে সাহারীর সময় ইস্তেগফার আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
- এ গুণগুলো অর্জন করলে মুমিন আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যায়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- নিজেকে সত্যবাদী ও ধৈর্যশীল বানানো জরুরি।
- সম্পদ কেবল নিজের জন্য নয়, আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে।
- প্রতিদিন রাতে বা সাহারীর সময় ইস্তেগফার করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
এ আয়াতটি তাওহীদের এক মহা ঘোষণা। এখানে তিন শ্রেণি সাক্ষ্য দিচ্ছে—আল্লাহ নিজে, ফেরেশতারা এবং জ্ঞানীগণ।
- আল্লাহর সাক্ষ্য: তিনিই ঘোষণা করেছেন—“আমিই একমাত্র উপাস্য।”
- ফেরেশতাদের সাক্ষ্য: তারা আল্লাহর আনুগত্যে সর্বদা নিয়োজিত এবং তাওহীদের সাক্ষ্য বহন করে।
- জ্ঞানীগণের সাক্ষ্য: সত্যিকার আলেমরা, যারা কুরআন ও হিকমত জানেন, তারাও তাওহীদের সাক্ষ্য দেয়।
- আল্লাহর গুণ: তিনি ‘আযীয (পরাক্রমশালী) ও হাকীম (প্রজ্ঞাময়)।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজকের বিজ্ঞান ও গবেষণা যত অগ্রসর হচ্ছে, প্রকৃত সত্যের দিকে ইঙ্গিত করছে—আল্লাহই স্রষ্টা।
- সত্যিকারের জ্ঞানীরা (আলেমরা) সর্বদা তাওহীদ প্রচার করে।
- শিরক ও ভ্রান্ত মতবাদ কেবল অজ্ঞতার ফল, কিন্তু যারা জ্ঞান রাখে তারা তাওহীদে দৃঢ়।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।
- তাওহীদ প্রমাণিত সত্য—এ বিষয়ে আল্লাহ, ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণ সাক্ষ্য দিয়েছেন।
- আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়—তাঁর প্রতিটি কাজ হিকমতের উপর ভিত্তি করে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- তাওহীদ বিশ্বাস করা ঈমানের মূল ভিত্তি।
- আলেমদের উচিত সর্বদা তাওহীদ প্রচার করা।
- মুমিনের উচিত সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদকে আঁকড়ে ধরা।
এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—আল্লাহর কাছে কেবল ইসলামই গ্রহণযোগ্য ধর্ম।
- ইসলাম: ইসলাম মানে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য। আদম (আ.) থেকে মুহাম্মদ ﷺ পর্যন্ত সব নবী এ দীনই প্রচার করেছেন।
- বিভক্তির কারণ: কিতাবপ্রাপ্তরা (ইহুদি-খ্রিস্টানরা) হিংসা-বিদ্বেষ ও অহংকারের কারণে সত্যকে অস্বীকার করেছে।
- আল্লাহর হিসাব: যারা আয়াত অস্বীকার করে, আল্লাহ তাদের দ্রুত হিসাব নেবেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও অনেক মানুষ ইসলামকে না মেনে বিভিন্ন মতবাদ অনুসরণ করছে, অথচ আল্লাহর কাছে ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য।
- ধর্মীয় বিভক্তি অনেক সময় হিংসা, ক্ষমতার লোভ ও স্বার্থের কারণে হয়, সত্যের কারণে নয়।
- দুনিয়ায় সুযোগ পেলেও আখিরাতে দ্রুত হিসাব হবে, তখন কেউ বাঁচতে পারবে না।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়।
- ধর্মীয় বিভেদ অহংকার ও বিদ্বেষ থেকে আসে।
- আল্লাহর হিসাব অত্যন্ত দ্রুত—এটা সবসময় স্মরণ রাখতে হবে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সত্যিকারের ইসলাম আঁকড়ে ধরতে হবে।
- ধর্ম নিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ করা যাবে না।
- আখিরাতের হিসাব থেকে বাঁচতে হলে ঈমান ও সৎকর্ম অপরিহার্য।
এই আয়াতে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিরোধীদের জবাব কিভাবে দিতে হবে।
- ইসলামে আত্মসমর্পণ: মূল শিক্ষা হলো আল্লাহর কাছে নিজের জীবন ও ইচ্ছা সমর্পণ করা।
- দাওয়াত: মুমিনদের কাজ হলো সত্য কথা পৌঁছে দেওয়া; মানুষ মানবে কি মানবে না, তা আল্লাহর হাতে।
- সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ: আল্লাহ বান্দাদের অন্তর ও কাজ সবই দেখেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ ইসলামের বিরুদ্ধে নানা মতবাদ আছে। আমাদের করণীয় হলো—শান্তভাবে ইসলাম পৌঁছে দেওয়া।
- অনেক মানুষ ইসলামকে অস্বীকার করে; আমাদের দায়িত্ব কেবল দাওয়াত দেওয়া, হিদায়াত আল্লাহর হাতে।
- কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে সে পথ পায়, আর মুখ ফিরিয়ে নিলে তার জবাবদিহি আল্লাহর কাছে।
মূল শিক্ষা:
- ইসলাম মানে আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ।
- নবী ﷺ-এর দায়িত্ব ছিল পৌঁছে দেওয়া, মানুষকে জোর করা নয়।
- আল্লাহ বান্দাদের সব কাজ অবগত আছেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- বিতর্কের সময় শান্তভাবে তাওহীদ ও ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে।
- মানুষকে হিদায়াত দেওয়া আমাদের কাজ নয়, আল্লাহর কাজ।
- আমাদের দায়িত্ব কেবল সত্য পৌঁছে দেওয়া এবং নিজের আমল ঠিক রাখা।
এই আয়াতে আল্লাহ তিনটি বড় অপরাধ উল্লেখ করেছেন, যা কাফের জাতিগুলো করেছে।
- আয়াত অস্বীকার: আল্লাহর নিদর্শন ও কিতাব মিথ্যা বলা।
- নবী হত্যা: বহু নবীকে তাদের জাতি হত্যা করেছে, যেমন—ইসরাইলীরা অনেক নবীকে হত্যা করেছে।
- ন্যায়পরায়ণদের হত্যা: যারা মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আহ্বান করেছিল, তাদেরও হত্যা করেছে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও যারা ইসলামি দাওয়াত দেয় বা সত্য কথা বলে, তাদেরকে হত্যা বা নির্যাতন করা হয়।
- আল্লাহর কিতাব ও নিদর্শন অস্বীকার এখনো চলমান।
- ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করা মানুষদের অনেক সময় দুনিয়াতে নিপীড়নের শিকার হতে হয়।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর আয়াত অস্বীকার, নবী হত্যা ও ন্যায়পরায়ণদের হত্যা—এগুলো গুরুতর অপরাধ।
- এ অপরাধীদের জন্য আখিরাতে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।
- সত্য প্রচারকারীরা দুনিয়াতে কষ্ট পেলেও আল্লাহর কাছে সম্মানিত।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর আয়াতকে মেনে চলা মুমিনের কর্তব্য।
- সত্য প্রচার করতে ভয় পাওয়া যাবে না, যদিও কষ্ট আসুক।
- অপরাধীদের দুনিয়ার সাময়িক শক্তি দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না—তাদের জন্য আখিরাতের কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর আয়াত অস্বীকারকারীরা এবং নবীদের শত্রু যারা, তাদের দুনিয়ার সব কাজই মূল্যহীন হয়ে গেছে এবং আখিরাতেও কোনো ফল পাবে না।
- আমল ব্যর্থ: কুফর ও বিদ্রোহের কারণে তাদের সব আমল আল্লাহর কাছে বাতিল হয়েছে।
- দুনিয়া ও আখিরাতে ব্যর্থতা: দুনিয়ায় তারা শান্তি পায় না, আখিরাতে কোনো পুরস্কার নেই।
- কোনো সাহায্যকারী নেই: আখিরাতে তাদেরকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও অনেকেই ভালো কাজ করে, দান করে—কিন্তু ঈমান ছাড়া এগুলো আখিরাতে কোনো কাজে আসবে না।
- অবিশ্বাসীরা দুনিয়ায় সাময়িকভাবে সফল মনে হলেও আখিরাতে তাদের সব ব্যর্থ হবে।
- আল্লাহ ছাড়া কোনো রক্ষাকারী নেই, তাই ঈমানই আসল ভরসা।
মূল শিক্ষা:
- কুফর করলে দুনিয়া ও আখিরাতের সব আমল নষ্ট হয়ে যায়।
- আল্লাহর অবাধ্যদের জন্য আখিরাতে কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।
- মুমিনের আসল সফলতা হলো ঈমানসহ আমল।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কোনো কাজই ঈমান ছাড়া আখিরাতে গ্রহণযোগ্য নয়।
- মানুষের প্রশংসা নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে হবে।
- মুমিনকে সর্বদা আল্লাহর সাহায্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে।
এ আয়াতে কিতাবপ্রাপ্তদের এক বড় অন্যায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
- কিতাবপ্রাপ্ত: ইহুদি-খ্রিস্টানদের ইঙ্গিত করা হয়েছে, যাদের কাছে আল্লাহর কিতাব ছিল।
- আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান: তাদের বলা হতো আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করতে।
- অবস্থা: তবুও তারা অহংকার, স্বার্থ ও জেদ ধরে কিতাবের বিধান মানতে অস্বীকার করত।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ মুসলিম সমাজেও কুরআন সামনে থাকা সত্ত্বেও অনেকে ফয়সালার জন্য অন্য আইন বা মতবাদে ভরসা করে।
- বিচার, শিক্ষা, সমাজনীতি—এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব উপেক্ষা করা আজকের বাস্তবতা।
- যারা কুরআনকে অবহেলা করে, তারা আসলে কিতাবপ্রাপ্তদের মতোই ভুল করছে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর কিতাবই চূড়ান্ত বিচারক।
- কিতাব সামনে থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করা গুরুতর অপরাধ।
- যারা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা আসলে সত্য থেকে দূরে সরে যায়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- প্রতিটি বিষয়ে ফয়সালার জন্য কুরআনের দিকে ফিরে আসতে হবে।
- কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানে আল্লাহর আইন অমান্য করা।
- মুমিনের দায়িত্ব হলো কুরআনকে সর্বোচ্চ মান্যতা দেওয়া।
এ আয়াতে কিতাবপ্রাপ্তদের (ইহুদিদের) একটি ভ্রান্ত বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে।
- ভুল ধারণা: তারা মনে করত জাহান্নামের আগুন তাদের কেবল অল্প কিছু দিনের জন্য স্পর্শ করবে।
- কারণ: নিজেদের মনগড়া ধারণা ও মিথ্যা উদ্ভাবন দ্বারা তারা এ বিশ্বাস তৈরি করেছিল।
- বাস্তবতা: আল্লাহর শাস্তি কারও মনগড়া কথায় নির্ধারিত হয় না। বরং তা নির্ভর করে ঈমান ও আমলের উপর।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও অনেক মানুষ ভাবে—“আমরা মুসলমান, তাই জাহান্নামে যাব না,” অথচ তারা পাপ করে যায় নির্লজ্জভাবে।
- কেউ ভাবে—“কিছুদিন কষ্ট হলেই মুক্তি,” অথচ এটি কিতাবপ্রাপ্তদের মতোই ভুল ধারণা।
- আল্লাহর আইন মেনে না চললে কারও বংশ, পরিচয় বা মনগড়া আশা তাকে রক্ষা করবে না।
মূল শিক্ষা:
- জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি শুধুমাত্র ঈমান ও সৎ আমলের মাধ্যমে সম্ভব।
- মিথ্যা আশা ও মনগড়া বিশ্বাস ধ্বংসের কারণ।
- আল্লাহর শাস্তি কখনোই সাময়িক বা নিরর্থক নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনের উচিত জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করা, মনগড়া বিশ্বাস নয়।
- ঈমান ও আমল ছাড়া কেবল “আমরা মুসলমান” বললেই মুক্তি মিলবে না।
- নিজেকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে সবসময় কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন চালাতে হবে।
এ আয়াতে কিয়ামতের দিনের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
- সমবেত করা: আল্লাহ মানুষকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে, যা অবশ্যম্ভাবী।
- কোনো সন্দেহ নেই: কিয়ামতের আগমন সম্পর্কে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
- প্রতিদান: প্রত্যেকেই তার আমল অনুযায়ী পূর্ণ প্রতিদান পাবে।
- ন্যায়বিচার: কাউকে কোনোভাবে অবিচার করা হবে না।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজকের দুনিয়ায় অনেক অপরাধী পার পেয়ে যায়, কিন্তু আখিরাতে কারও আমল লুকানো সম্ভব নয়।
- কেউ গোপনে ভালো কাজ করলে, মানুষ না জানলেও আল্লাহ তা নষ্ট করবেন না।
- মানব-অধিকার বা ন্যায়বিচার দুনিয়াতে সম্পূর্ণ হয় না, কিন্তু আখিরাতে আল্লাহর ন্যায়বিচার হবে পরিপূর্ণ।
মূল শিক্ষা:
- কিয়ামতের দিন নিশ্চিতভাবে আসবে।
- প্রত্যেকে তার আমলের সম্পূর্ণ প্রতিদান পাবে।
- আল্লাহর বিচারে কোনো অবিচার নেই।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কিয়ামতের দিনের কথা স্মরণ রেখে আমল করতে হবে।
- ভালো আমল যত ছোটই হোক, আল্লাহ তা প্রতিদান দেবেন।
- পাপ থেকে বাঁচতে হবে, কারণ আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন নয়।
এই আয়াতটি একটি মহা দোয়া, যেখানে আল্লাহর পূর্ণ ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্ব প্রকাশ করা হয়েছে।
- রাজত্ব: পৃথিবীর সব শাসন, সাম্রাজ্য ও ক্ষমতা আল্লাহর হাতে।
- ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া: আল্লাহ যাকে চান ক্ষমতা দেন, আবার যাকে চান তা কেড়ে নেন।
- সম্মান ও অপমান: সম্মান ও অপমান আল্লাহর ইচ্ছাধীন, মানুষ বা সমাজ নয়।
- কল্যাণ: সব ভালো আল্লাহর হাতেই, তিনিই কল্যাণের উৎস।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ আমরা দেখি, শাসকরা আসেন ও যান—এ সব আল্লাহর ইচ্ছায় হয়।
- মানুষ অনেক সময় ক্ষমতার অহংকার করে, কিন্তু আল্লাহ চাইলে মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারেন।
- সম্মান অর্জন হয় আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে, শুধু পদমর্যাদা বা অর্থ দিয়ে নয়।
মূল শিক্ষা:
- রাজত্ব, সম্মান, অপমান—সবকিছু আল্লাহর হাতে।
- মুমিনকে সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে, মানুষের উপর নয়।
- আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ক্ষমতা বা সম্মান পেলে অহংকার করা যাবে না, কারণ তা আল্লাহর দান।
- মুমিনের উচিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা—“হে আল্লাহ, আমাকে সম্মানিত করুন ও কল্যাণ দান করুন।”
- দুনিয়ার রাজত্ব সাময়িক, কিন্তু আল্লাহর রাজত্ব চিরস্থায়ী।
এ আয়াতে আল্লাহ তাঁর শক্তি ও মহিমার পরিচয় দিচ্ছেন, যাতে মানুষ বুঝতে পারে সবকিছু আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।
- দিন-রাতের পরিবর্তন: আল্লাহ দিনকে রাতের মধ্যে ও রাতকে দিনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
- জীবিত ও মৃত: আল্লাহ মৃত থেকে জীবিত বের করেন (যেমন—বীজ থেকে গাছ, ডিম থেকে বাচ্চা) এবং জীবিত থেকে মৃত বের করেন (যেমন—মানুষ থেকে শুক্রাণু, ডিম ইত্যাদি)।
- রিযিক: আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রিযিক দেন, কারও কাছে হিসাবও চান না।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- বিজ্ঞান রাত-দিনের পরিবর্তন ব্যাখ্যা করে, কিন্তু এর প্রকৃত নিয়ন্ত্রক আল্লাহ।
- আজ মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করে, কিন্তু আসল রিযিকের উৎস আল্লাহ।
- কেউ দরিদ্র থাকে, আবার কেউ সীমাহীন সম্পদ পায়—সবই আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী।
মূল শিক্ষা:
- প্রকৃতির প্রতিটি পরিবর্তন আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন।
- রিযিকের মালিক কেবল আল্লাহ।
- জীবন-মৃত্যু, আলো-অন্ধকার—সবকিছু আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- রিযিক পাওয়ার জন্য কেবল পরিশ্রম নয়, আল্লাহর উপর নির্ভর করতে হবে।
- প্রকৃতির নিয়মগুলো দেখে আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করা উচিত।
- মুমিনের অন্তর শান্ত হবে এই জেনে যে সবকিছু আল্লাহর হাতে।
এই আয়াতে আল্লাহ মুমিনদেরকে সতর্ক করেছেন—কাফেরদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু বানানো যাবে না।
- বন্ধুত্ব: সাধারণ আচরণ ও সদাচার অনুমোদিত, কিন্তু অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ও আনুগত্য শুধু মুমিনদের সাথেই হওয়া উচিত।
- আল্লাহর সম্পর্ক: যদি কেউ কাফেরদেরকে মুমিনদের ছেড়ে অন্তরঙ্গ করে নেয়, তবে সে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে।
- ব্যতিক্রম: যদি জীবন রক্ষার জন্য বা বড় কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কৌশল অবলম্বন করতে হয়, তবে তা অনুমোদিত।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজকের বিশ্বে মুসলমানরা প্রায়ই দুনিয়াবি স্বার্থে কাফেরদের অনুসরণ করে—এটা আয়াতের সতর্কবার্তার অন্তর্ভুক্ত।
- সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক চাপে অনেক মুসলমান ঈমানের ক্ষতি করে কাফেরদের আনুগত্য করে।
- তবে জীবন ও নিরাপত্তার জন্য কৌশল নেওয়া ইসলামে অনুমোদিত।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব শুধু মুমিনদের সাথেই হওয়া উচিত।
- আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে কাফেরদের আনুগত্য করা যাবে না।
- আল্লাহ সবসময় বান্দাদের সতর্ক করছেন—চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তন তাঁর কাছেই।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের উচিত ঈমান রক্ষার জন্য বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা।
- দুনিয়াবি স্বার্থে ঈমানকে বিসর্জন দেওয়া বড় ভুল।
- সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে।
এ আয়াতে আল্লাহর জ্ঞানের পরিপূর্ণতা ও শক্তি বর্ণনা করা হয়েছে।
- অন্তরের খবর: মানুষ যা অন্তরে লুকিয়ে রাখে, আল্লাহ তা জানেন।
- প্রকাশিত কাজ: প্রকাশ্যে যা করা হয়, তাও আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
- আসমান-যমীনের খবর: আল্লাহর জ্ঞান সৃষ্টির প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তৃত।
- আল্লাহর ক্ষমতা: তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান, তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত কিছুই ঘটে না।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- মানুষ আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কিছু গোপনে করে, কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে কিছুই গোপন নয়।
- মানুষের অন্তরের চিন্তাভাবনাও আল্লাহর জ্ঞানে আছে।
- আসমান-যমীন নিয়ে বিজ্ঞান যত গবেষণা করুক, আল্লাহর জ্ঞান তার অনেক ঊর্ধ্বে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর জ্ঞান সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছে।
- মুমিনের উচিত অন্তর ও বাহির উভয়কেই পরিশুদ্ধ রাখা।
- আল্লাহর ক্ষমতা সীমাহীন—সবকিছু তাঁর নিয়ন্ত্রণে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- অন্তরে মন্দ চিন্তাও লুকানো যায় না, তাই আত্মাকে পরিশুদ্ধ রাখা জরুরি।
- সৎকর্ম প্রকাশ্যে ও গোপনে উভয়ভাবেই করতে হবে।
- আল্লাহর সর্বশক্তিমান সত্তা স্মরণ রেখে পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।
এ আয়াতে কিয়ামতের দিনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
- সৎকর্ম: প্রত্যেকে তার সৎকর্মকে উপস্থিত দেখতে পাবে—এগুলো আল্লাহর কাছে নষ্ট হবে না।
- অসৎকর্ম: মন্দকর্মও হাজির থাকবে, এবং তখন মানুষ চাইবে এগুলো যেন তার থেকে দূরে থাকে।
- সতর্কবার্তা: আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন—পাপ থেকে বাঁচতে হবে।
- আল্লাহর দয়া: আল্লাহ দয়ালু, তাই তিনি বারবার আমাদের সতর্ক করেন যেন আমরা ধ্বংসের পথে না যাই।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ মানুষ অনেক কাজ করে, মনে করে কেউ দেখছে না—কিন্তু আখিরাতে সবকিছু হাজির করা হবে।
- অনেকেই মৃত্যুর পর পাপের কথা ভেবে আফসোস করবে, কিন্তু তখন আর সুযোগ থাকবে না।
- আল্লাহ এখনই আমাদের সতর্ক করছেন—যেন আমরা কিয়ামতের আগে নিজেদের ঠিক করি।
মূল শিক্ষা:
- প্রত্যেক কাজ কিয়ামতের দিন হাজির করা হবে।
- মানুষ তার পাপ থেকে দূরে থাকতে চাইবে, কিন্তু তখন আর সময় থাকবে না।
- আল্লাহর সতর্কবাণী ও দয়া দুনিয়াতেই কাজে লাগাতে হবে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- প্রত্যেক আমলকে গুরুত্ব দিতে হবে, ছোট পাপকেও এড়াতে হবে।
- কিয়ামতের আগে তাওবা করে পাপ থেকে ফিরে আসতে হবে।
- আল্লাহর সতর্কবার্তাকে হালকাভাবে নেয়া যাবে না।
এ আয়াতকে বলা হয় “আয়াতুল-মাহাব্বাহ” বা ভালোবাসার আয়াত। এখানে আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন—আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি সত্য হয় কেবল রাসূল ﷺ এর অনুসরণের মাধ্যমে।
- আল্লাহকে ভালোবাসা: শুধু মুখে বলা নয়, বাস্তবে প্রমাণ করতে হবে।
- রাসূল ﷺ এর অনুসরণ: আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের একমাত্র পথ হলো নবী ﷺ এর অনুসরণ।
- পুরস্কার: আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং গুনাহ ক্ষমা করবেন।
- আল্লাহর গুণ: তিনি গাফূর (ক্ষমাশীল) ও রহীম (দয়ালু)।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- অনেকে বলে “আমি আল্লাহকে ভালোবাসি”—কিন্তু সুন্নাহ মানে না। এটি আসলে মিথ্যা দাবি।
- রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ অনুসরণ ছাড়া ইসলামের সত্য ভালোবাসা সম্ভব নয়।
- আজকের মুসলমানদের উচিত নিজেদের জীবন নবী ﷺ এর শিক্ষা অনুযায়ী সাজানো।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পথ হলো রাসূল ﷺ এর অনুসরণ।
- সুন্নাহ অনুসরণ করলে আল্লাহ গুনাহ ক্ষমা করেন।
- আল্লাহ গাফূর (ক্ষমাশীল) ও রহীম (দয়ালু)।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সুন্নাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে।
- আল্লাহর ভালোবাসা মুখের দাবি নয়, আমলের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।
- আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের চাবিকাঠি হলো নবী ﷺ এর আনুগত্য।
এই আয়াতে নবী ﷺ-এর আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
- আনুগত্য: আল্লাহ ও রাসূল ﷺ উভয়ের আনুগত্য করা ঈমানের অপরিহার্য শর্ত।
- অস্বীকারকারীর অবস্থা: যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা আসলে কাফেরদের দলভুক্ত।
- আল্লাহর ভালোবাসা: কাফেররা আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ অনেকে আল্লাহকে মানার দাবি করে, কিন্তু রাসূল ﷺ এর সুন্নাহকে অমান্য করে—এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
- আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অমান্যকারীরা দুনিয়ায় বড়াই করতে পারে, কিন্তু আখিরাতে ধ্বংস হবে।
- মুসলিম নামধারী হলেও যদি কেউ রাসূল ﷺ এর নির্দেশ অমান্য করে, তার ঈমান ঝুঁকির মুখে পড়ে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একমাত্র পথ।
- মুখ ফিরিয়ে নিলে মানুষ কাফেরদের দলে চলে যায়।
- আল্লাহ কাফেরদের ভালোবাসেন না।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ সমানভাবে মানা জরুরি।
- মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানে আল্লাহর ভালোবাসা হারানো।
- মুমিনের কর্তব্য হলো সর্বদা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যে জীবন কাটানো।
এ আয়াতে আল্লাহ তাঁর নির্বাচিত বান্দাদের উল্লেখ করেছেন।
- আদম (আঃ): প্রথম মানব ও নবী।
- নূহ (আঃ): প্রথম রাসূল, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে কওমকে সত্যের পথে আহ্বান করেছেন।
- ইবরাহীমের পরিবার: ইবরাহীম (আঃ), ইসমাইল (আঃ), ইসহাক (আঃ), ইয়াকুব (আঃ) প্রমুখ।
- ইমরানের পরিবার: মরিয়ম (আঃ) ও তাঁর পুত্র ঈসা (আঃ) সহ তাঁদের বংশধর।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আল্লাহ যাকে চান তাকেই তাঁর দ্বীনের জন্য বেছে নেন।
- আজও দ্বীনের কাজ করার জন্য আল্লাহ মানুষকে বেছে নেন—যেমন দাঈ, আলেম, সৎ কর্মীরা।
- বংশ, জাতি বা পদবী নয়; বরং আল্লাহর মনোনীত হওয়াই প্রকৃত সম্মান।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে বিশেষ কিছু মানুষকে নির্বাচন করেন।
- নবুওয়াত ও বিশেষ সম্মান আল্লাহর পক্ষ থেকে দান।
- আল্লাহর মনোনীত হওয়াই প্রকৃত মর্যাদা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মানুষকে মর্যাদা দেয় আল্লাহ, বংশ বা সম্পদ নয়।
- আমাদের উচিত আল্লাহর মনোনীত বান্দা হওয়ার চেষ্টা করা।
- সত্যিকারের সম্মান হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
এখানে পূর্ববর্তী আয়াতে উল্লিখিত আদম, নূহ, ইবরাহীমের পরিবার ও ইমরানের পরিবার এর পারিবারিক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।
- একই বংশধারা: তারা সবাই ছিলেন একই আধ্যাত্মিক বংশের অন্তর্ভুক্ত—একটি ধারার নবী ও সৎ মানুষ।
- সম্পর্ক: নবীদের মাঝে রক্তের সম্পর্ক যেমন ছিল, তেমনি ছিল আধ্যাত্মিক সম্পর্ক।
- আল্লাহর গুণ: আল্লাহ সব শোনেন এবং সব জানেন। তিনি জানেন কারা যোগ্য এবং কাকে মনোনীত করতে হবে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও আল্লাহর পথে চলা পরিবার ও বংশকে আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দেন।
- সৎ মা-বাবার দোয়া ও ধার্মিকতার প্রভাব সন্তানের জীবনেও প্রতিফলিত হয়।
- মুমিন পরিবার থেকে পরবর্তী প্রজন্মেও দ্বীনের আলো প্রবাহিত হয়।
মূল শিক্ষা:
- নবীরা একই বংশধারা ও আধ্যাত্মিক সম্পর্কের মাধ্যমে সংযুক্ত।
- আল্লাহ সব শোনেন এবং জানেন।
- দ্বীনী পরিবার প্রজন্মের জন্য বরকতস্বরূপ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সৎ পরিবার গড়া মুমিনের দায়িত্ব, কারণ এর প্রভাব প্রজন্মেও পড়ে।
- আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্যতা আসে ঈমান ও সৎ আমলের মাধ্যমে।
- আমাদের উচিত আল্লাহর জ্ঞানের উপর ভরসা করে জীবন সাজানো।
এই আয়াতে মরিয়মের (আলাইহাস্ সালাম) মায়ের দোয়া ও প্রতিজ্ঞা বর্ণনা করা হয়েছে।
- নজর: তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তার সন্তানকে আল্লাহর ইবাদত ও সেবার কাজে উৎসর্গ করবেন।
- মুহারররান: অর্থাৎ সন্তানকে দুনিয়ার সব দায়িত্ব থেকে মুক্ত রেখে কেবল আল্লাহর কাজে নিয়োজিত করবেন।
- আল্লাহর কাছে প্রার্থনা: তিনি বিনম্রভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন যেন আল্লাহ তার মানত কবুল করেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও অনেক মা-বাবা সন্তানকে দ্বীনের সেবায় নিয়োজিত করার জন্য দোয়া করে।
- সন্তানের জন্য দোয়া করা মায়ের অন্যতম দায়িত্ব ও কল্যাণকর কাজ।
- যে সন্তান দ্বীনের জন্য উৎসর্গিত হয়, সে সমাজের জন্য বরকতময় হয়।
মূল শিক্ষা:
- সন্তান আল্লাহর আমানত, তাই তার জন্য সৎ নিয়ত করা জরুরি।
- আল্লাহর জন্য সন্তানকে দ্বীনের কাজে উৎসর্গ করা মহৎ কাজ।
- আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ—তাঁর কাছে দোয়া করলে তিনি তা জানেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মা-বাবার উচিত সন্তানকে দ্বীনের জন্য গড়ে তোলার নিয়ত করা।
- আল্লাহর কাছে আন্তরিক দোয়া করলে তিনি কবুল করেন।
- সন্তানের জন্য সঠিক নিয়ত ও সৎ দোয়া পরবর্তী প্রজন্মের কল্যাণ বয়ে আনে।
এ আয়াতে মরিয়ম (আঃ)-এর জন্ম ও তার মায়ের দোয়া বর্ণনা করা হয়েছে।
- কন্যা সন্তান: ইমরানের স্ত্রী আশা করেছিলেন ছেলে সন্তান হবে, কিন্তু কন্যা জন্ম নিল।
- আল্লাহর জ্ঞান: আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি জানতেন মরিয়ম বিশেষ মর্যাদার অধিকারিণী হবেন।
- নামকরণ: তার নাম রাখা হলো মরিয়ম, যার অর্থ "ইবাদতে নিবেদিত নারী"।
- শয়তান থেকে আশ্রয়: তিনি দোয়া করলেন, মরিয়ম ও তার বংশধররা যেন শয়তানের কবল থেকে নিরাপদ থাকে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও অনেকে ছেলে সন্তানকে বেশি মর্যাদা দেয়, কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে কন্যাও বরকত ও সম্মানের উৎস।
- সন্তানের জন্মের পর তার জন্য দোয়া করা ও সৎ নামকরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- শিশুকে ছোট থেকেই শয়তান ও পাপ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত।
মূল শিক্ষা:
- সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে—আল্লাহর পক্ষ থেকে দান।
- আল্লাহ সব জানেন, তাই মানুষের হতাশ হওয়া উচিত নয়।
- সন্তানের জন্য ভালো নামকরণ ও দোয়া করা জরুরি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কন্যা সন্তানকেও আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা যায় এবং তা বরকতময়।
- সন্তান জন্মের সাথে সাথেই তাকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা একটি মহৎ দোয়া।
- শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবসময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে।
এ আয়াতে মরিয়ম (আলাইহাস্ সালাম)-এর প্রতিপালন ও আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ বর্ণিত হয়েছে।
- আল্লাহর কবুল: মরিয়মের মায়ের মানত আল্লাহ কবুল করেছিলেন।
- সুন্দর প্রতিপালন: মরিয়ম ছিলেন ইবাদতে নিবেদিত; আল্লাহ তাকে সঠিক পথে প্রতিপালন করলেন।
- যাকারিয়ার অভিভাবকত্ব: নবী যাকারিয়া (আঃ) তাকে অভিভাবক হিসেবে লালন করতেন।
- অলৌকিক রিযিক: মরিয়মের কাছে এমন রিযিক পাওয়া যেত যা দুনিয়ার প্রচলিত উপায়ে আসত না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে ছিল।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আল্লাহর পথে সন্তানকে দিলে তিনি তার জন্য উত্তম ব্যবস্থা করেন।
- রিযিক আল্লাহর হাতে, মানুষ শুধু বাহ্যিক চেষ্টা করে—প্রকৃত দান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়।
- আজও অনেক সময় অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে আল্লাহ রিযিক দান করেন—এটি মুমিনের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহের নিদর্শন।
মূল শিক্ষা:
- সন্তানের মানত ও দোয়া আল্লাহ কবুল করতে পারেন।
- রিযিক আল্লাহর হাতে—তিনি যাকে চান সীমাহীন দেন।
- আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাদের জন্য বিশেষ বরকত থাকে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
- রিযিক নিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না, কারণ আল্লাহ অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকেও দেন।
- আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া রিযিকই আসল বরকতময় রিযিক।
মরিয়ম (আলাইহাস্ সালাম)-এর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ দেখে নবী যাকারিয়া (আঃ) নিজের জন্যও একটি নেক সন্তান চাইলেন।
- অনুপ্রেরণা: মরিয়মের প্রতিপালন দেখে যাকারিয়া উপলব্ধি করলেন, আল্লাহ চাইলে অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারেন।
- প্রার্থনা: তিনি আল্লাহর কাছে একটি “ত্বইয়্যিবাহ” (পবিত্র ও নেক) সন্তান চাইলেন।
- আল্লাহর গুণ: আল্লাহ দোয়া শোনেন এবং কবুল করেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও সন্তান চাওয়ার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে, চিকিৎসা বা অন্য কিছু কেবল বাহ্যিক মাধ্যম।
- নেক সন্তান চাওয়া উচিত—শুধু সন্তান নয়, বরং এমন সন্তান যে দ্বীনের সেবক হবে।
- যারা সন্তান লাভে অক্ষম, তারা হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া অব্যাহত রাখা উচিত।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারেন।
- সন্তান চাওয়ার সময় নেক সন্তান চাওয়া জরুরি।
- আল্লাহ দোয়া শোনেন ও কবুল করেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সন্তানের জন্য দোয়া করা ইবাদতের অংশ।
- কেবল দুনিয়াবি স্বার্থে নয়, বরং দ্বীনের খেদমতের জন্য নেক সন্তান চাওয়া উচিত।
- মুমিনের আশা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত, হতাশ হওয়া নয়।
এখানে নবী যাকারিয়া (আঃ)-এর দোয়ার কবুল হওয়ার খবর বর্ণিত হয়েছে।
- ফেরেশতাদের সুসংবাদ: যখন যাকারিয়া (আঃ) নামাজে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাকে ইয়াহইয়া (আঃ)-এর জন্মের সুসংবাদ দিলেন।
- ইয়াহইয়া (আঃ): তিনি হবেন এক নেক নবী, যিনি আল্লাহর কালিমা ঈসা (আঃ)-এর সত্যতার সাক্ষ্য দেবেন।
- সাইয়্যিদ: নেতা, মর্যাদাবান।
- হাসূর: কামনা থেকে বিরত, আল্লাহর ইবাদতে সম্পূর্ণ নিবেদিত।
- নবী: তিনি নেককারদের অন্তর্ভুক্ত একজন নবী হিসেবে প্রেরিত হবেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আল্লাহর কাছে আন্তরিক দোয়া করলে তিনি অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারেন।
- আল্লাহ নেক সন্তান দান করলে, সে সমাজে আল্লাহর দীন প্রচার করে।
- সন্তান শুধু বংশ রক্ষার জন্য নয়, বরং দ্বীনের সেবার জন্যও আল্লাহ দান করেন।
মূল শিক্ষা:
- দোয়া কবুল করা আল্লাহর হাতে, তিনি তাঁর বান্দাকে সর্বোত্তম উপহার দেন।
- ইয়াহইয়া (আঃ)-এর জন্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি অলৌকিক অনুগ্রহ।
- সন্তান আল্লাহর দান এবং দ্বীনের জন্য এক বড় দায়িত্ব।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সন্তানের জন্য নেক নিয়ত করা জরুরি।
- আল্লাহ যাকে চান, তাকে সম্মান ও মর্যাদা দেন।
- সন্তানকে আল্লাহর পথে গড়ে তোলা প্রতিটি পিতামাতার দায়িত্ব।
নবী যাকারিয়া (আঃ) আশ্চর্য হলেন যে, বৃদ্ধ বয়সে এবং বন্ধ্যা স্ত্রীর মাধ্যমে কীভাবে সন্তান হবে। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিলেন—আল্লাহ যা চান তাই করতে সক্ষম।
- মানবীয় দৃষ্টিকোণ: বৃদ্ধ বয়সে সন্তান লাভ অসম্ভব মনে হয়।
- আল্লাহর ক্ষমতা: আল্লাহর ইচ্ছায় অসম্ভবও সম্ভব হয়ে যায়।
- দোয়ার প্রভাব: যাকারিয়ার আন্তরিক দোয়ার ফলেই এই অলৌকিক সন্তান ইয়াহইয়া (আঃ)-এর জন্ম হবে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- চিকিৎসা বিজ্ঞান যেখানে অক্ষম, আল্লাহ চাইলে সেখানে সন্তান দান করতে পারেন।
- আজও অনেক দম্পতি হতাশ হয়, কিন্তু দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে সন্তান দান করেন।
- মানুষ সীমিত ক্ষমতার অধিকারী, কিন্তু আল্লাহ সীমাহীন ক্ষমতাশালী।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ যা চান তাই করেন, তাঁর জন্য কিছুই কঠিন নয়।
- সন্তান দান বা বঞ্চনা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
- আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন এবং অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- হতাশ হওয়া মুমিনের কাজ নয়, আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।
- দোয়া করার সময় আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতা বিশ্বাস করতে হবে।
- আল্লাহ চান বলেই অসম্ভব সম্ভব হয়—এ বিশ্বাস মুমিনের অন্তরে স্থির থাকা জরুরি।
নবী যাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর কাছে একটি নিদর্শন চাইলেন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন দোয়া কবুল হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে একটি বিশেষ আলামত দিলেন।
- নিদর্শন: তিনি তিন দিন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে পারবেন না, শুধু ইশারায়।
- দোয়ার কবুল: এটি ছিল প্রমাণ যে, তাঁর দোয়া কবুল হয়েছে এবং তিনি পুত্রসন্তান পাবেন।
- আল্লাহর স্মরণ: এই সময়ে তাঁকে অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির ও তাসবিহ করতে বলা হলো।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আল্লাহ দোয়া কবুল হলে তিনি বান্দাকে নিদর্শন দেখান—কখনো অন্তরে শান্তি, কখনো কাজে সহজতা।
- কঠিন পরিস্থিতিতেও যিকির ও নামাজ মুমিনকে শক্তি জোগায়।
- ইশারায় হলেও আল্লাহর যিকির কখনো বন্ধ করা উচিত নয়।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ দোয়া কবুল হলে বান্দাকে নিদর্শন দেন।
- আল্লাহর যিকির সকাল-সন্ধ্যা সর্বদা করা উচিত।
- মুমিনের শক্তি হলো যিকির ও ইবাদত।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- দোয়া কবুলের বিশ্বাস অন্তরে দৃঢ় করতে হবে।
- যিকিরে অবহেলা করা যাবে না—সকাল-সন্ধ্যা বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
- কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর স্মরণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না।
এখানে মরিয়ম (আলাইহাস্ সালাম)-এর বিশেষ মর্যাদা উল্লেখ করা হয়েছে।
- আল্লাহর নির্বাচন: আল্লাহ তাঁকে বিশেষভাবে বেছে নিয়েছেন।
- পরিশুদ্ধি: আল্লাহ তাঁকে পাপ থেকে মুক্ত ও পরিশুদ্ধ রেখেছেন।
- শ্রেষ্ঠত্ব: তিনি বিশ্বের নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আল্লাহ যাকে চান তাকেই সম্মান দেন, এটি বংশ, সম্পদ বা অবস্থার উপর নির্ভর করে না।
- মরিয়ম (আঃ) নারীদের জন্য আদর্শ—পবিত্রতা, ইবাদত ও আল্লাহর আনুগত্যে।
- আজও মুসলিম নারীদের উচিত তাঁর মতো পরিশুদ্ধ জীবন গড়ে তোলা।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান তাঁকে বেছে নেন।
- পরিশুদ্ধ জীবন আল্লাহর নিকট মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
- মরিয়ম (আঃ) নারীদের মধ্যে এক বিশেষ আদর্শ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিন নারী-পুরুষ উভয়েরই উচিত আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা হওয়ার চেষ্টা করা।
- পরিশুদ্ধ থাকা, ইবাদত ও আনুগত্য নারীর শ্রেষ্ঠত্ব আনে।
- আল্লাহর দানকৃত মর্যাদাই আসল সম্মান, দুনিয়ার নয়।
এখানে মরিয়ম (আলাইহাস্ সালাম)-কে আল্লাহর ইবাদতে দৃঢ় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
- একনিষ্ঠতা: আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও বিনম্রতা বজায় রাখা।
- সিজদা: আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম উপায়।
- রুকূ: জামাতে নামাজ পড়া ও অন্য ইবাদতকারীদের সাথে একত্র হওয়া।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- মহিলাদেরও ইবাদতে মনোযোগী হওয়া জরুরি।
- আজকের নারীদের উচিত মরিয়ম (আঃ)-এর মতো পরিশুদ্ধ ও ইবাদতময় জীবন যাপন করা।
- জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্বও এখানে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর আনুগত্যে স্থির থাকা মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব।
- সিজদা ও রুকূ আল্লাহর নৈকট্যের চাবিকাঠি।
- আল্লাহর ইবাদত সর্বদা একনিষ্ঠভাবে করতে হবে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের ইবাদত আল্লাহর নিকট সমান মর্যাদাপূর্ণ।
- জামাতে নামাজের গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না।
- ইবাদতে বিনয় ও আনুগত্য থাকা জরুরি।
এ আয়াতে আল্লাহ নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে জানাচ্ছেন যে, মরিয়ম (আলাইহাস্ সালাম)-এর জন্ম ও অভিভাবকত্বের খবর তিনি শুধু ওহীর মাধ্যমে জেনেছেন, স্বচক্ষে নয়।
- গায়েবের খবর: এই কাহিনী নবী ﷺ-এর জ্ঞানের মাধ্যমে নয়, বরং আল্লাহর ওহীর মাধ্যমে জানা।
- অভিভাবকত্বের বিরোধ: মরিয়মের অভিভাবকত্বের জন্য আলেম ও ধার্মিকরা লটারির মতো কলম নিক্ষেপ করেছিলেন।
- ওহীর প্রমাণ: নবী ﷺ সেই সময়ে উপস্থিত ছিলেন না, তাই এসব খবর আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- কুরআনের কাহিনীগুলো আল্লাহর ওহীর সত্যতার প্রমাণ।
- নবী ﷺ-এর অক্ষরজ্ঞানহীন অবস্থাতেও এসব বিস্তারিত খবর পাওয়া প্রমাণ করে যে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে।
- মুমিনদের জন্য শিক্ষা হলো, আল্লাহর ওহী ছাড়া গায়েবের খবর কেউ দিতে পারে না।
মূল শিক্ষা:
- কুরআনের বর্ণনা আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য ও নিশ্চিত।
- গায়েবের খবর কেবল আল্লাহ জানেন এবং যাকে চান তাকেই জানান।
- নবী ﷺ-এর সত্য নবুওয়াতের বড় প্রমাণ এই আয়াত।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কুরআনের কাহিনী শুধু গল্প নয়, বরং ঈমান দৃঢ় করার উপায়।
- মুমিনদের উচিত এসব কাহিনী থেকে শিক্ষা নেওয়া ও আল্লাহর হিকমত বোঝা।
- নবী ﷺ-এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করা মানে আল্লাহর ওহী অস্বীকার করা।
এখানে আল্লাহ তাআলা ঈসা (আলাইহিস্ সালাম)-এর জন্ম ও মর্যাদার সুসংবাদ দিচ্ছেন।
- কালিমাহ: ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর "কালিমাহ" বলা হয়েছে, কারণ তিনি আল্লাহর আদেশ "হও" (কুন) এর মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করবেন।
- মসীহ: ঈসা (আঃ)-এর উপাধি, যার অর্থ বরকতময়।
- দুনিয়া ও আখিরাতের মর্যাদা: তিনি দুনিয়ায় নবী হিসেবে সম্মানিত হবেন, আখিরাতে হবে আল্লাহর নিকটবর্তী।
- নিকটবর্তী বান্দা: তিনি আল্লাহর বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হবেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আল্লাহ যাকে চান তাকেই বিশেষ মর্যাদা দেন—বংশ বা পরিস্থিতি এর কারণ নয়।
- ঈসা (আঃ)-এর জন্ম ছিল আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ, যা আজও মুসলিমদের ঈমান দৃঢ় করে।
- মানুষ আল্লাহর নিকট মর্যাদা পায় ঈমান ও সৎ আমলের মাধ্যমে, পদ বা সম্পদ দ্বারা নয়।
মূল শিক্ষা:
- ঈসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর এক মহান নবী, তাঁর আদেশের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
- তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং আল্লাহর নিকটবর্তী ছিলেন।
- আল্লাহর বেছে নেয়াই আসল মর্যাদা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মর্যাদা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, দুনিয়ার মানদণ্ডে নয়।
- ঈসা (আঃ)-এর জন্ম আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন।
- আল্লাহর নিকটবর্তী হতে চাইলে ঈমান ও সৎ আমল করতে হবে।
এখানে ঈসা (আলাইহিস্ সালাম)-এর অলৌকিক বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে।
- দোলনায় কথা বলা: শিশু অবস্থায়ই ঈসা (আঃ) কথা বলেছিলেন—এটি ছিল তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণ।
- প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় দাওয়াত: তিনি বড় হয়েও মানুষের সাথে কথা বলবেন এবং আল্লাহর দাওয়াত প্রচার করবেন।
- নেককারদের অন্তর্ভুক্ত: তিনি আল্লাহর নির্বাচিত নবী ও নেক বান্দাদের একজন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- মানুষ অনেক অলৌকিক ঘটনা অস্বীকার করে, কিন্তু আল্লাহ চাইলে শিশু অবস্থায়ও বান্দাকে বাকশক্তি দিতে পারেন।
- ঈসা (আঃ)-এর কাহিনী আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন, যা মুসলিমদের ঈমান দৃঢ় করে।
- দাওয়াতের কাজ আজও প্রয়োজন, যেমন ঈসা (আঃ) প্রাপ্তবয়সে করেছিলেন।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর কুদরতে অসম্ভবও সম্ভব।
- ঈসা (আঃ)-এর জন্ম ও অলৌকিক বৈশিষ্ট্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ।
- তিনি ছিলেন একজন নেককার নবী।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনের উচিত আল্লাহর কুদরতের উপর পূর্ণ ঈমান রাখা।
- নবীদের কাহিনী শুধু ইতিহাস নয়, বরং শিক্ষার উৎস।
- ঈসা (আঃ)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে—শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত আল্লাহর দাওয়াত প্রচার।
এ আয়াতে মরিয়ম (আলাইহাস্ সালাম)-এর বিস্ময় এবং আল্লাহর উত্তর বর্ণিত হয়েছে।
- মরিয়মের প্রশ্ন: তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে সন্তান হবে যখন কোনো পুরুষ তাকে স্পর্শ করেনি।
- আল্লাহর জবাব: আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করেন—মানুষের প্রচলিত নিয়মে নয়, বরং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী।
- “কুন ফাইয়াকুন”: আল্লাহর শক্তির নিদর্শন—তিনি যখন বলেন “হও”, তখন তা সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায়।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- বিজ্ঞান অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কুদরতের সীমা অতিক্রম করতে পারে না।
- যেমন তিনি আদম (আঃ)-কে পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন, তেমনি ঈসা (আঃ)-কে পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন।
- আল্লাহর ইচ্ছা মানুষের যুক্তির ঊর্ধ্বে—মুমিনের কর্তব্য হলো তাতে ঈমান রাখা।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর ইচ্ছাই সবকিছুর মূল, তিনি যা চান তাই হয়।
- ঈসা (আঃ)-এর জন্ম আল্লাহর অলৌকিক কুদরতের নিদর্শন।
- “কুন ফাইয়াকুন” আল্লাহর অপরিসীম ক্ষমতার প্রতীক।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর কুদরতে বিশ্বাস রাখা প্রতিটি মুমিনের জন্য জরুরি।
- মানুষের বোধগম্য না হলেও আল্লাহ যা করেন তা সত্য ও যথাযথ।
- মুমিনের উচিত আল্লাহর শক্তি ও ইচ্ছার উপর পূর্ণ আস্থা রাখা।
এখানে আল্লাহ ঈসা (আলাইহিস্ সালাম)-এর শিক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন।
- কিতাব: সাধারণভাবে লিখন-পড়া ও জ্ঞান শিক্ষা।
- হিকমাহ: প্রজ্ঞা, অর্থাৎ গভীর জ্ঞান, হিকমত ও আল্লাহর হিদায়াত।
- তাওরাত: মূসা (আঃ)-এর উপর নাযিলকৃত কিতাব, যা ঈসা (আঃ)-কে শিক্ষা দেয়া হবে।
- ইঞ্জিল: ঈসা (আঃ)-এর উপর নাযিলকৃত কিতাব, যা তিনি প্রচার করবেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- সত্যিকারের জ্ঞান হলো আল্লাহর কিতাব ও প্রজ্ঞা থেকে আসা জ্ঞান।
- মানুষ যত আধুনিক জ্ঞানই অর্জন করুক, আল্লাহর ওহীর জ্ঞানই সর্বোচ্চ।
- আজকের মুসলিমদের উচিত কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রজ্ঞা অর্জন করা।
মূল শিক্ষা:
- ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ বিশেষভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন।
- আল্লাহর প্রদত্ত জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান।
- নবীরা আল্লাহর কিতাব ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে মানুষকে পথ দেখিয়েছেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনের উচিত জ্ঞানার্জনে কুরআন ও সুন্নাহকে সর্বাগ্রে রাখা।
- আল্লাহর প্রজ্ঞা ছাড়া দুনিয়ার জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথে রাখতে পারে না।
- সন্তানকে দুনিয়াবি শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এখানে ঈসা (আলাইহিস্ সালাম)-এর মু‘জিযা ও তাঁর রাসূলত্বের প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।
- রাসূল: তিনি বিশেষভাবে বনী ইসরাঈলের দিকে প্রেরিত হয়েছিলেন।
- মু‘জিযা:
- মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানিয়ে আল্লাহর অনুমতিতে তাকে জীবিত করা।
- জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান।
- মৃতকে জীবিত করা আল্লাহর অনুমতিতে।
- অলৌকিক জ্ঞান: তিনি মানুষের ঘরের গোপন খবর জানাতে পারতেন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষা ছিল।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- বিজ্ঞান আজ চিকিৎসা ও গবেষণায় অনেক অগ্রসর হয়েছে, কিন্তু মৃতকে জীবিত করা এখনো অসম্ভব।
- ঈসা (আঃ)-এর মু‘জিযা প্রমাণ করে যে, এগুলো আল্লাহর অনুমতিতে হয়েছিল, নিজ ক্ষমতায় নয়।
- মুমিনদের উচিত আল্লাহর কুদরতের উপর বিশ্বাস রাখা—বিজ্ঞান যতই অগ্রসর হোক, আল্লাহর কুদরতের তুলনা হয় না।
মূল শিক্ষা:
- ঈসা (আঃ)-এর মু‘জিযা তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণ।
- সব অলৌকিক কাজ আল্লাহর অনুমতিতে সংঘটিত হয়।
- আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান মানুষকে সীমার বাইরে বিশেষ খবর দিতে পারে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- নবীদের মু‘জিযা আল্লাহর সত্য বার্তার প্রমাণ।
- ঈসা (আঃ)-এর মু‘জিযা থেকে শিক্ষা হলো—আল্লাহ চাইলে অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারেন।
- ঈমানদারদের জন্য এসব মু‘জিযায় স্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে।
এ আয়াতে ঈসা (আলাইহিস্ সালাম)-এর মিশন ও দাওয়াত স্পষ্ট করা হয়েছে।
- তাওরাতের সত্যতা: তিনি পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতের সত্যতা নিশ্চিত করলেন।
- হালাল-হারাম: কিছু বিধান পূর্ববর্তী কওমের উপর হারাম করা হয়েছিল, ঈসা (আঃ)-এর মাধ্যমে তা শিথিল করা হয়।
- নিদর্শন: তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট মু‘জিযা নিয়ে আসেন।
- আনুগত্যের আহ্বান: তিনি মানুষকে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন ও তাঁর দাওয়াত মেনে চলতে আহ্বান করেছেন।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও অনেক মানুষ সত্য দ্বীন পরিবর্তন করে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো হালাল-হারাম নির্ধারণ করে।
- কুরআন ও সুন্নাহই একমাত্র মানদণ্ড—যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা নিশ্চিত করে।
- মুমিনের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং নবীদের শিক্ষা মেনে চলা।
মূল শিক্ষা:
- ঈসা (আঃ)-এর আগমনের উদ্দেশ্য ছিল তাওরাতের সত্যতা প্রমাণ করা।
- আল্লাহর অনুমতিতে কিছু বিধান শিথিল করা হয়েছিল।
- আল্লাহকে ভয় করা এবং রাসূলের আনুগত্য করা অপরিহার্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর হালাল-হারাম বিধানই চূড়ান্ত সত্য।
- রাসূলদের আনুগত্য না করলে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্যতা নেই।
- মুমিনের প্রথম কাজ হলো তাকওয়া অর্জন ও রাসূলদের পথ অনুসরণ করা।
এ আয়াতে ঈসা (আলাইহিস্ সালাম)-এর মূল দাওয়াত উল্লেখ করা হয়েছে।
- আল্লাহ একমাত্র রব: তিনি বললেন, আল্লাহই আমারও প্রতিপালক, তোমাদেরও প্রতিপালক।
- ইবাদত: আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করা যাবে না।
- সরাসরি পথ: আল্লাহর একত্ববাদই হলো সরল ও সঠিক পথ।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজ অনেকেই ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র মনে করে, অথচ তিনি নিজেই বলেছিলেন: “আল্লাহই আমার ও তোমাদের রব।”
- মুমিনদের জন্য শিক্ষা হলো, কোনো নবী ইবাদতের দাবিদার নন, কেবল আল্লাহই ইবাদতের যোগ্য।
- সরাসরি পথ কেবল আল্লাহর একত্ববাদে।
মূল শিক্ষা:
- ঈসা (আঃ)-এর দাওয়াত ছিল তাওহীদ বা একত্ববাদ।
- আল্লাহই সকলের প্রতিপালক।
- আল্লাহর ইবাদতই সরল পথ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- নবীদের অনুসরণ মানে তাওহীদের অনুসরণ।
- আল্লাহর সাথে শরিক করা সরল পথ থেকে বিচ্যুতি।
- মুমিনের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর একক ইবাদত।
এখানে ঈসা (আলাইহিস্ সালাম)-এর দাওয়াত ও তাঁর সাহাবীদের প্রতিক্রিয়া বর্ণিত হয়েছে।
- কুফর: বনী ইসরাঈলের অনেকেই ঈসার দাওয়াত অস্বীকার করেছিল।
- সাহায্য প্রার্থনা: ঈসা (আঃ) আল্লাহর পথে সহায়তা করার জন্য সাথী খুঁজলেন।
- হাওয়ারিয়্যূন: তাঁর নিকটতম অনুসারীরা বললেন, “আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী”—তারা ঈসার সাথে দ্বীনের পথে ছিলেন।
- মুসলিম পরিচয়: তারা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দিল, অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দা।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- আজও সত্য দাওয়াত দিলে অনেকে বিরোধিতা করে, কিন্তু কিছু মানুষ আল্লাহর পথে দাঁড়ায়।
- দাওয়াত ও দ্বীনের কাজের জন্য আল্লাহর সাহায্যকারী হওয়া প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব।
- সত্যিকার মুসলিমরা সবসময় নবীদের মিশনের সহায়ক হয়েছে, আজও হতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- সত্য দাওয়াতের শত্রু থাকে, তাই সাহসের সাথে সহায়ক খুঁজতে হয়।
- আল্লাহর পথে সহায়তা করা মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব।
- মুসলিম মানে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর পথে সাহায্য করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
- দাওয়াতের কাজে নবীদের অনুসারীরা যেমন সহযোগী ছিলেন, আমরাও সেই ভূমিকা রাখতে পারি।
- মুসলিম পরিচয় মানে শুধু নাম নয়, বরং আল্লাহর আনুগত্যে জীবন কাটানো।
এখানে হাওয়ারিয়্যূনদের (ঈসা আঃ-এর অনুসারী) দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে।
- ঈমান: তারা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব ও হিদায়াতে ঈমান আনল।
- অনুসরণ: তারা রাসূল ঈসা (আঃ)-এর পূর্ণ অনুসারী হলো।
- সাক্ষীদের সাথে থাকার দোয়া: তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল যেন সত্যের সাক্ষ্যদানকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
বর্তমান যুগের উদাহরণ:
- মুমিনদেরও উচিত এ দোয়া করা—যাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত কিতাবে ঈমান আনা যায়।
- আজ কুরআন নাযিল হয়েছে, তাই আমাদের কাজ হলো রাসূল ﷺ-এর অনুসরণ করা।
- সত্যের সাক্ষ্য বহন করা আজকের যুগে যেমন প্রয়োজন, তেমনি তা আখিরাতেও বড় মর্যাদা।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের অনুসরণই মুমিনের পথ।
- সত্যের সাক্ষ্যদানকারীদের সাথে থাকার জন্য দোয়া করা জরুরি।
- ঈমান শুধু মুখে নয়, বরং কর্মে প্রমাণ করতে হয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কুরআনে ঈমান আনা ও রাসূল ﷺ-এর অনুসরণ অপরিহার্য।
- মুমিনদের সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে যেন তারা সত্যের সাক্ষী হতে পারে।
- সত্যের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া মুমিনের বড় সৌভাগ্য।
এখানে বলা হচ্ছে যে শত্রুরা যেভাবে চতুরতা ও ষড়যন্ত্র করেছে, আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্রকে পরাস্ত করে দিয়েছেন—অন্তত তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সফল হতে দেননি। আল্লাহর পরিকল্পনা মানুষের সব কৌশলের সর্বোচ্চ ও শ্রেষ্ঠ।
- মাকর (চতুরতা/পরিকল্পনা): মানুষের পরিকল্পনা আর আল্লাহর পরিকল্পনার তুলনা করা হয়েছে—মানুষ চতুর হতেই পারে, কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বোত্তম।
- ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ: আয়াতে সূচক যে ঈসা (আঃ)-কে কষ্ট দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল; আল্লাহ তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়ে নিজ পরিকল্পনা কার্যকর করলেন।
- আল্লাহর কর্তৃত্ব: কোনো ষড়যন্ত্র আল্লাহর ইচ্ছে ছাড়া সফল হবে না; তিনি যাকে চান, তাকে সুরক্ষা দেন এবং শত্রুদের খলিফা করেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- যখন কোন মুমিনকে সামাজিক, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগতভাবে কু-ষ্পষ্টভাবে প্রতিহিংসা করা হয়, তখনও আল্লাহর পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সঠিক পথে কার্যকর হয়।
- উদাহরণ: কেয়ামত পর্যন্ত যারা সৎ কাজ করে—তারা আখেরাতে আল্লাহর নিকট সুফল পাবে, কারণ আল্লাহ নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করেন।
মূল শিক্ষা:
- শত্রুদের ষড়যন্ত্র দেখে হতাশ না হওয়া; কারণ আল্লাহ প্রতীক্ষায় আছেন এবং তাঁর পরিকল্পনাই সর্বশ্রেষ্ঠ।
- মুমিনকে ধৈর্য ও আপোষহীন প্রতিক্ষার শিক্ষা — আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।
- কোনো কুঠিন্তা বা অন্যায় পরিকল্পনা দীর্ঘস্থায়ী হবে না, আল্লাহ তা প্রহসন করে দেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- পরিকল্পনা করলে সততা ও নৈতিকতা মেনে করা উচিৎ — কুঠিন্তা ও অন্যায় চতুরতা কখনো আল্লাহর বরকত আনে না।
- বিশ্বাসীরা আল্লাহর মাকরের দিকে ভরসা করবে, কারণ তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী।
- শত্রুতা বা ষড়যন্ত্রে পড়লে ধৈর্য ধারণ ও দোয়া করা মুমিনের দায়িত্ব।
এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-এর প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছেন।
- মৃত্যু ও উত্তোলন: আল্লাহ তাঁকে পূর্ণ জীবন দিয়ে তাঁর দিকে উঠিয়ে নিলেন। এখানে ‘মুতাওয়াফীকা’ শব্দটি নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে—অর্থাৎ “সম্পূর্ণ করা” বা “তোমাকে উঠিয়ে নেওয়া”।
- শত্রু থেকে রক্ষা: আল্লাহ তাঁকে কাফিরদের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত ও পবিত্র করেছেন।
- অনুসারীদের মর্যাদা: ঈসা (আঃ)-এর প্রকৃত অনুসারীরা কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের ওপর সম্মান ও মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
- চূড়ান্ত বিচার: কিয়ামতের দিন আল্লাহই সকল বিরোধ নিষ্পত্তি করবেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- ঈসা (আঃ)-এর প্রকৃত অনুসারীরা ছিলেন তাওহীদের দাওয়াত বহনকারীগণ। আজ মুসলমানদের ওপরও সেই দায়িত্ব বর্তায়।
- মিথ্যা, কুফর ও ষড়যন্ত্র সাময়িকভাবে সফল মনে হলেও আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বশ্রেষ্ঠ।
- কিয়ামতের দিন প্রত্যেকেরই আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সর্বদা শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেন।
- প্রকৃত অনুসারীরা সর্বদা মর্যাদা লাভ করে, যদিও সাময়িকভাবে দুনিয়াতে কষ্টে থাকে।
- চূড়ান্ত বিচারক কেবল আল্লাহ, তাই মতভেদের সমাধান তিনি-ই করবেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈসা (আঃ)-এর ঘটনা থেকে শিক্ষা—সত্যের অনুসারীদের আল্লাহ কখনো পরিত্যাগ করেন না।
- কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখা এবং চূড়ান্ত বিচারের প্রতি আস্থা রাখা জরুরি।
- কাফিরদের ষড়যন্ত্র কখনোই আল্লাহর পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করতে পারে না।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের পরিণতি স্পষ্ট করেছেন।
- কাফিরদের শাস্তি: তারা শুধু আখিরাতে নয়, দুনিয়াতেও নানা ধরনের কষ্ট, লাঞ্ছনা ও পরাজয়ে পতিত হবে।
- দুনিয়ার শাস্তি: লাঞ্ছনা, ভীতি, যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা।
- আখিরাতের শাস্তি: জাহান্নামের কঠিন শাস্তি, যেখান থেকে মুক্তি নেই।
- সহায়তাহীনতা: কোনো সাহায্যকারী, সুপারিশকারী বা রক্ষাকারী তাদের থাকবে না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে না, তারা দুনিয়াতে মানসিক শান্তি থেকে বঞ্চিত হয় এবং আখিরাতে শাস্তি পাবে।
- অন্যায়, জুলুম, ও কুফরী শক্তি যতই প্রভাবশালী মনে হোক—আল্লাহর শাস্তি থেকে তারা রক্ষা পাবে না।
মূল শিক্ষা:
- কুফর ও অবাধ্যতা অবশেষে কঠোর শাস্তির কারণ হয়।
- দুনিয়া ও আখিরাতে মুমিনদের মর্যাদা আর কাফিরদের লাঞ্ছনা—এটাই আল্লাহর সুন্নাহ।
- কোনো কুফরী শক্তি আল্লাহর শাস্তি ঠেকাতে পারবে না।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কাফিরদের পরিণতি স্মরণ করে মুমিনদের আরও বেশি ঈমান শক্ত করা উচিত।
- দুনিয়ার সাময়িক সফলতা দেখে হতাশ হওয়া যাবে না—কারণ আখিরাতে আল্লাহর কঠোর শাস্তি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
- সত্যের পথে থেকে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা মুমিনের কর্তব্য।
এ আয়াতে মুমিনদের জন্য সুসংবাদ এবং যালিমদের জন্য সতর্কবার্তা প্রদান করা হয়েছে।
- মুমিনদের প্রতিফল: যারা ঈমান এনেছে এবং আমল-এ-সালেহ (সৎকাজ) করেছে, আল্লাহ তাদেরকে সম্পূর্ণ প্রতিদান দিবেন।
- পূর্ণ প্রতিফল: আল্লাহ মুমিনদের সামান্য নেক কাজকেও বৃথা যেতে দেন না, বরং দ্বিগুণ, বহুগুণ প্রতিদান দেন।
- যালিমদের বঞ্চনা: যারা কুফর, শির্ক, অবিচার ও অন্যায় করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- যারা সত্যের পথে অটল থেকে সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান ও পুরস্কার দেবেন।
- যালিম শাসক, অন্যায়কারী ব্যবসায়ী কিংবা দুর্নীতিপরায়ণ লোকেরা শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় থাকবে।
মূল শিক্ষা:
- ঈমান ও সৎকাজ মুমিনের সফলতার মূল চাবি।
- আল্লাহ কাউকে যুলুম করেন না, বরং প্রত্যেককে তার প্রাপ্য অনুযায়ী প্রতিফল দেন।
- যালিমদের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক নেই—তারা তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সৎকাজের প্রতি উৎসাহিত হতে হবে, কারণ আল্লাহ প্রতিটি নেক কাজের প্রতিদান রাখেন।
- অন্যায়, যুলুম, ও অধিকার হরণ থেকে বাঁচা আবশ্যক—কারণ আল্লাহ যালিমদের ভালোবাসেন না।
- মুমিনের জীবন হবে ঈমান ও সৎকাজের সমন্বয়ে গঠিত।
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর উদ্দেশ্যে বলছেন যে, পূর্বে বর্ণিত কাহিনীগুলো (ঈসা আঃ-এর ঘটনা ইত্যাদি) কেবল কাহিনী নয়, বরং আল্লাহর নিদর্শন ও হিকমতপূর্ণ উপদেশ।
- আয়াত (নিদর্শন): কুরআনের প্রতিটি কাহিনী আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষা ও প্রমাণ বহন করে।
- যিক্র হাকীম (প্রজ্ঞাময় উপদেশ): কুরআন শুধু ইতিহাস নয়, বরং মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা, হিদায়াত ও উপদেশ।
- উদ্দেশ্য: এসব কাহিনী থেকে শিক্ষা নিয়ে ঈমান দৃঢ় করা ও জীবনে তা প্রয়োগ করা।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- কুরআনের কাহিনী কেবল গল্প নয়—এগুলো মুসলমানদের জন্য বাস্তব জীবনের শিক্ষা।
- আজও মুমিনদের উচিত এসব আয়াত থেকে শিক্ষা নিয়ে ঈমান ও আমলকে শুদ্ধ করা।
মূল শিক্ষা:
- কুরআনের প্রতিটি কাহিনী শিক্ষা ও নিদর্শনস্বরূপ।
- রাসূল ﷺ–এর প্রতি অবতীর্ণ কুরআন বিশ্বমানবতার জন্য হিকমতপূর্ণ উপদেশ।
- কাহিনীগুলো হিদায়াত প্রদানের জন্য, বিনোদনের জন্য নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কুরআনের কাহিনী থেকে শিক্ষা নেওয়া ও জীবনে তা প্রয়োগ করা জরুরি।
- কুরআনের প্রতি সম্মান ও মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করা উচিত।
- মুমিনের উচিত কুরআনকে হিদায়াত ও প্রজ্ঞাময় উপদেশ হিসেবে গ্রহণ করা।
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নাসারাদের ভুল ধারণা দূর করেছেন। তারা মনে করত ঈসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র। অথচ তাঁর জন্ম একটি নিদর্শনমাত্র।
- ঈসা ও আদমের দৃষ্টান্ত: আদম (আঃ) পিতা-মাতা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছেন, আর ঈসা (আঃ) সৃষ্টি হয়েছেন পিতা ছাড়া। উভয়েই আল্লাহর সৃষ্টি।
- আল্লাহর আদেশ: আল্লাহ যখন বলেন "হও", তখনই সৃষ্টি হয়ে যায়।
- অলৌকিক জন্ম: ঈসা (আঃ)-এর জন্ম আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন, তাঁর কোনো ঈশ্বরত্বের প্রমাণ নয়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- কুরআন স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—ঈসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর একজন নবী, আল্লাহর পুত্র নন।
- আজও অনেক মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে সৃষ্টিকে পূজা করে, অথচ সৃষ্টির সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই সৃষ্টি হয়।
মূল শিক্ষা:
- ঈসা (আঃ)-এর জন্ম এক নিদর্শন, ঈশ্বরত্ব নয়।
- আল্লাহর "কুন ফাইয়াকূন" (হও—আর হয়ে যায়) ক্ষমতার তুলনা নেই।
- মানুষকে স্রষ্টার ইবাদত করতে হবে, সৃষ্টির নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা—তাঁর আদেশেই সৃষ্টি সম্পন্ন হয়।
- ঈসা (আঃ)-এর ঘটনায় তাওহীদের শিক্ষা বিদ্যমান।
- মুমিনদের উচিত সঠিক আকীদা রক্ষা করা এবং শির্ক থেকে দূরে থাকা।
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ ﷺ–কে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে, ঈসা (আঃ)-এর জন্ম ও অবস্থান সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, সেটাই সত্য। এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
- সত্য: ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও নবী, আল্লাহর পুত্র নন।
- সন্দেহমুক্ত বিশ্বাস: আল্লাহর কিতাবে যা বর্ণিত হয়েছে, সেটিই চূড়ান্ত সত্য।
- রাসূল ﷺ–এর প্রতি নির্দেশ: সত্যকে প্রচার করতে হবে, কোনো সন্দেহ বা দ্বিধা রাখার সুযোগ নেই।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- মানুষ আজও সত্যকে অস্বীকার করে এবং সন্দেহে বিভ্রান্ত হয়, কিন্তু কুরআনের বাণীই একমাত্র সত্য।
- মুসলমানদের উচিত কুরআনের আলোকে সঠিক বিশ্বাস রাখা এবং ভুল ধারণা থেকে দূরে থাকা।
মূল শিক্ষা:
- সত্য আসে একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে।
- ঈমানদারকে সন্দেহমুক্ত থাকতে হবে।
- ধর্মীয় বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে কুরআনকে আঁকড়ে ধরা জরুরি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সত্যকে গ্রহণ করা এবং সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের কর্তব্য।
- ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে আল্লাহর কথা চূড়ান্ত সত্য।
- মুসলমানদের উচিত কুরআনের প্রতি দৃঢ় আস্থা রাখা।
এ আয়াতটি **মুবাহালা**-এর ঘটনা নির্দেশ করছে। যখন খ্রিস্টান নাজরানের লোকেরা ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহ তাঁকে এই চূড়ান্ত যুক্তি দিতে নির্দেশ দিলেন।
- মুবাহালা: উভয় পক্ষ নিজেদের পরিবারকে নিয়ে এসে দোয়া করবে—আল্লাহ যেন মিথ্যাবাদীদের ওপর তাঁর লা‘নত পাঠান।
- রাসূল ﷺ–এর আত্মবিশ্বাস: তিনি সত্যের ওপর ছিলেন, তাই এই আহ্বান করতে দ্বিধা করেননি।
- খ্রিস্টানদের ভয়: তারা জানত যে রাসূল ﷺ সত্যবাদী, তাই মুবাহালা করতে সাহস করেনি এবং সমঝোতা করে ফিরে যায়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে দৃঢ় যুক্তি ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা জরুরি।
- অসত্যবাদীরা শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভয় ও দুর্বলতার কারণে সত্যের সামনে মাথা নত করে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর পাঠানো সত্যের সামনে কোনো মিথ্যা টিকতে পারে না।
- দ্বীনের ব্যাপারে বিতর্ক হলে কুরআন ও হিকমতের আলোকে জবাব দিতে হবে।
- আল্লাহর লা‘নত সবসময় মিথ্যাবাদীদের উপর পড়ে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সত্যের ওপর দৃঢ় থাকতে হবে, যদিও বিরোধীরা অনেক থাকে।
- মুমিনের উচিত সবসময় সত্য বলা ও প্রচার করা।
- আল্লাহর অভিশাপ থেকে বাঁচতে হলে মিথ্যা পরিত্যাগ করা জরুরি।
এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-এর জন্ম ও অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। খ্রিস্টানদের কাহিনী ও ধারণা ভ্রান্ত, কেবল কুরআনের বর্ণনাই সত্য।
- সত্য কাহিনী: ঈসা (আঃ)-এর জন্ম ও অবস্থার সঠিক কাহিনী আল্লাহই বর্ণনা করেছেন।
- তাওহীদের ঘোষণা: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই—এ সত্য এখানে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
- আল্লাহর গুণ: তিনি ‘আযীয (পরাক্রমশালী), তাই তাঁর সিদ্ধান্ত কেউ বদলাতে পারে না; তিনি হাকীম (প্রজ্ঞাময়), তাই সবকিছু জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাথে করেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেক ধর্মীয় বিভ্রান্তি আছে, কিন্তু কুরআনের বাণীই একমাত্র সত্য।
- মুমিনদের উচিত মানুষকে তাওহীদ ও সঠিক আকীদার দিকে দাওয়াত দেয়া।
মূল শিক্ষা:
- কুরআনের কাহিনী সবসময় সত্য ও নির্ভুল।
- আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই—এটাই ইসলামের মূল ভিত্তি।
- আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়, তাই তাঁর বিধানই সর্বোত্তম।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈসা (আঃ)-এর ঘটনা থেকে বুঝতে হবে—সত্য শুধু কুরআনেই আছে।
- তাওহীদে দৃঢ় থাকা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য।
- আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান রাখা ঈমান শক্তিশালী করে।
এখানে বলা হচ্ছে, যদি আহ্বানের পরও খ্রিস্টানরা সত্যকে অস্বীকার করে এবং বিরোধিতা চালিয়ে যায়, তবে তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে ফাসাদকর (অশান্তি সৃষ্টিকারী) হিসেবে গণ্য হবে।
- মুখ ফিরিয়ে নেওয়া: সত্য পরিষ্কারভাবে পৌঁছানোর পরও তা অস্বীকার করা বড় অন্যায়।
- আল্লাহর জ্ঞান: আল্লাহ সব জানেন—অবিশ্বাসী ও ফাসাদকররা কোনোদিন তাঁর নজরদারি থেকে বাঁচতে পারবে না।
- ফাসাদকরদের অবস্থান: যারা সত্য অস্বীকার করে ও মিথ্যা প্রচার করে, তারা সমাজে অশান্তি ছড়ায়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও যারা কুরআনের সত্য শিক্ষা অস্বীকার করে, তারা সমাজে বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টি করছে।
- মুমিনদের উচিত তাদের পথ অনুসরণ না করে আল্লাহর সত্য বাণীতে অটল থাকা।
মূল শিক্ষা:
- সত্যকে অস্বীকার করা মানে ফাসাদ সৃষ্টি করা।
- আল্লাহ ফাসাদকরদের ব্যাপারে পূর্ণ অবগত।
- সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারীরা আল্লাহর গজবের যোগ্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সত্য আহ্বান প্রত্যাখ্যানকারীরা আসলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত।
- আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই—তাই মুমিনদের সতর্ক থাকতে হবে।
- ফাসাদ ও বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে হলে কুরআনের দাওয়াত গ্রহণ করা জরুরি।
এ আয়াতে আহলে-কিতাবকে (ইহুদি ও খ্রিস্টান) এক তাওহীদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে, যাতে সবাই আল্লাহর একত্ববাদে একত্র হয়।
- সর্বজনীন দাওয়াত: আল্লাহ ছাড়া কাউকে ইবাদত না করা—এটা সকল নবীর দাওয়াতের মূল শিক্ষা।
- শির্কের নিষেধ: আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা সম্পূর্ণ হারাম।
- মানুষকে প্রভু না বানানো: আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানবসৃষ্ট আইনকে মানা হলো মানুষকে প্রভু বানানো।
- মুসলমানদের ঘোষণা: যদি তারা অস্বীকার করে, তবে স্পষ্ট বলে দিতে হবে—আমরা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী মুসলিম।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মুসলমানদের উচিত সব ধর্মের মানুষকে তাওহীদের দিকে আহ্বান জানানো।
- মানবসৃষ্ট আইন ও প্রভুত্বকে মেনে নেয়া আসলে শির্কের একটি রূপ।
- মুসলমানদের সবসময় নিজের পরিচয় পরিষ্কার রাখতে হবে—আমরা মুসলিম।
মূল শিক্ষা:
- সকল নবীর দাওয়াত এক—আল্লাহর একত্ববাদ।
- আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করা যাবে না।
- মানুষকে আল্লাহর পরিবর্তে প্রভু বানানো শির্ক।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- তাওহীদের দাওয়াত সবার কাছে পৌঁছানো মুসলমানের দায়িত্ব।
- যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদেরকে বল—আমরা মুসলিম, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার।
- শির্ক থেকে বাঁচা এবং আল্লাহকে একমাত্র রব হিসেবে মানা ঈমানের মূল ভিত্তি।
আহলে-কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টানরা) নিজেদের ধর্মকে ইবরাহীম (আঃ)-এর সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করত। অথচ বাস্তবে ইবরাহীম (আঃ) তাওরাত ও ইঞ্জিলের বহু আগে ছিলেন।
- বিতর্কের অযৌক্তিকতা: ইবরাহীম (আঃ)-এর যুগে তাওরাত বা ইঞ্জিল নাযিলই হয়নি। তাই তাঁকে ইহুদি বা খ্রিস্টান বলা ভিত্তিহীন।
- ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রকৃত ধর্ম: তিনি ছিলেন খাঁটি তাওহীদপন্থী মুসলিম।
- আহলে-কিতাবের ভ্রান্ত ধারণা: নিজেদের কিতাবকে সত্য প্রমাণের জন্য তারা ইবরাহীম (আঃ)-কে যুক্ত করত।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- অনেকে সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে নিজেদের স্বার্থে ইতিহাস বিকৃত করে।
- ইসলামের শিক্ষা হলো সত্যকে বিকৃত না করে যেমন আছে তেমনই গ্রহণ করা।
মূল শিক্ষা:
- ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্ম ছিল তাওহীদ—আল্লাহর একত্ববাদ।
- যে কিছুর সাথে তার সম্পর্ক নেই, সেখানে তাঁর নাম যুক্ত করা ভুল।
- আল্লাহ সত্যকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ইসলামই ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রকৃত ধর্মের ধারাবাহিকতা।
- ভ্রান্ত যুক্তি ও মিথ্যা দাবী এড়ানো উচিত।
- আল্লাহর কিতাব ও সত্য ইতিহাসের প্রতি সম্মান থাকা আবশ্যক।
এ আয়াতে আল্লাহ আহলে-কিতাবদের ভ্রান্ত যুক্তির সমালোচনা করেছেন। তারা নিজেদের কিতাব সম্পর্কেও অনেক ক্ষেত্রে বিতর্ক করত, অথচ সেখানে কিছুটা হলেও তাদের জ্ঞান ছিল। কিন্তু ইবরাহীম (আঃ)-এর ব্যাপারে তারা বিতর্ক করছিল, যার বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না।
- সীমা লঙ্ঘন: তারা এমন বিষয়ে কথা বলত, যা তাদের কিতাবে নেই এবং ইতিহাসেও নেই।
- অজ্ঞতায় বিতর্ক: জ্ঞানহীন অবস্থায় বিতর্ক করা সত্য থেকে বিচ্যুত করে।
- আল্লাহর জ্ঞান: আল্লাহ সব জানেন, মানুষের জ্ঞান সীমিত।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেকেই অল্প জ্ঞান নিয়ে বড় বড় বিতর্কে নামে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
- ইসলাম শিখিয়েছে—যা জানা নেই, সে বিষয়ে কথা না বলা; বরং আল্লাহর জ্ঞানকে স্বীকার করা।
মূল শিক্ষা:
- অজ্ঞতায় বিতর্ক করা গোমরাহির কারণ।
- আল্লাহর জ্ঞান সীমাহীন, আর মানুষের জ্ঞান সীমিত।
- ইবরাহীম (আঃ)-এর ব্যাপারে আহলে-কিতাবদের দাবি ছিল ভিত্তিহীন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- শুধু জানা বিষয়েই আলোচনা করা উচিত।
- অজ্ঞতায় কথা বলা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়।
- মুমিনকে সর্বদা জ্ঞান আহরণে সচেষ্ট হতে হবে এবং অজ্ঞতার বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে হবে।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট করে দিলেন যে ইবরাহীম (আঃ)-এর সাথে ইহুদি বা খ্রিস্টান ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম, খাঁটি তাওহীদপন্থী।
- ইবরাহীম (আঃ)-এর আকীদা: তিনি আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন।
- ভ্রান্ত ধারণার খণ্ডন: ইহুদি ও খ্রিস্টানরা নিজেদের ধর্মের সাথে তাঁকে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছিল।
- শির্ক থেকে মুক্তি: তিনি কখনো মুশরিক ছিলেন না, বরং আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিলেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে নবীদের ধর্মকে নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে।
- ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রকৃত অনুসারী হতে হলে আল্লাহর একত্ববাদ মেনে মুসলিম হতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন তাওহীদের অনুসারী, কোনো নির্দিষ্ট পরবর্তী ধর্মের নন।
- মুশরিকরা কখনোই নবীদের পথের অংশ হতে পারে না।
- সকল নবীর ধর্মই ছিল ইসলাম—আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রকৃত অনুসারী মুসলমানরাই।
- তাওহীদ থেকে বিচ্যুতি মানেই শির্ক ও বিভ্রান্তি।
- মুমিনের উচিত খাঁটি মুসলিম পরিচয়ে অটল থাকা।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন—ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রকৃত অনুসারী কারা।
- প্রকৃত অনুসারী: যারা ইবরাহীম (আঃ)-এর তাওহীদের দাওয়াত অনুসরণ করেছে, তারাই তাঁর আসল অনুসারী।
- নবী ﷺ: মুহাম্মাদ ﷺ ইবরাহীম (আঃ)-এর দাওয়াতের ধারাবাহিকতার পূর্ণতা।
- মুমিনগণ: যারা রাসূল ﷺ-এ ঈমান এনেছে, তারাও ইবরাহীম (আঃ)-এর অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত।
- আল্লাহর অভিভাবকত্ব: আল্লাহ মুমিনদের রক্ষক, সহায়ক ও অভিভাবক।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মুসলমানরাই ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রকৃত অনুসারী, কারণ তারা তাওহীদে অটল।
- অন্যান্য ধর্মে বিকৃতি ঘটেছে, তাই তারা আর প্রকৃত ইবরাহীমি ধর্মের অনুসারী নয়।
মূল শিক্ষা:
- ইবরাহীম (আঃ)-এর অনুসরণ মানে তাওহীদ ও ইসলামকে আঁকড়ে ধরা।
- মুহাম্মাদ ﷺ–এর প্রতি ঈমান আনা ছাড়া প্রকৃত মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়।
- আল্লাহই মুমিনদের অভিভাবক ও রক্ষক।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের উচিত নিজেদের পরিচয় ইবরাহীমি ঐতিহ্যের ধারাবাহিক মুসলিম হিসেবে জানা।
- তাওহীদকে আঁকড়ে ধরা—এটাই ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রকৃত পথ।
- আল্লাহর অভিভাবকত্ব লাভের জন্য ঈমান ও সৎকাজ অপরিহার্য।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আহলে-কিতাবদের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করেছেন। তারা মুসলমানদের বিপথে নেয়ার চেষ্টা করত, কিন্তু বাস্তবে নিজেদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করত।
- ষড়যন্ত্র: আহলে-কিতাবের একদল মুসলমানদের ঈমান থেকে ফেরাতে ষড়যন্ত্র করত।
- আত্মপ্রবঞ্চনা: তারা মনে করত, অন্যদের ক্ষতি করছে; অথচ প্রকৃত ক্ষতি নিজেদের জন্যই জমা করছে।
- অজ্ঞতা: তারা বুঝতেই পারত না যে, আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বোত্তম।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেক গোষ্ঠী মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
- মুমিনদের উচিত দৃঢ় ঈমান নিয়ে আল্লাহর দিকনির্দেশনা আঁকড়ে ধরা।
মূল শিক্ষা:
- শত্রুর ষড়যন্ত্র মুসলমানের ক্ষতি করতে পারে না, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া।
- যারা অন্যকে বিভ্রান্ত করতে চায়, তারা আসলে নিজেরাই ক্ষতির দিকে যায়।
- মুমিনদের সতর্ক থাকা ও ঈমান রক্ষা করা জরুরি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- শত্রুর পরিকল্পনা নিয়ে ভয় না পেয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।
- অন্যকে ক্ষতি করতে চাইলে তা শেষ পর্যন্ত নিজের ক্ষতির কারণ হয়।
- মুমিনকে সর্বদা সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।
এ আয়াতে আহলে-কিতাবকে তিরস্কার করা হয়েছে। তারা জানত রাসূলুল্লাহ ﷺ সত্য নবী, তবুও জেনে-শুনে কুফরি করত।
- আল্লাহর আয়াত অস্বীকার: তাওরাত ও ইঞ্জিলে রাসূল ﷺ-এর আগমনের খবর স্পষ্ট ছিল, তবুও তারা অস্বীকার করত।
- সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও কুফরি: তাদের কিতাবই প্রমাণ দিত যে নবী সত্য, অথচ তারা হিংসা ও জেদের কারণে অস্বীকার করে।
- অন্যায় প্রবণতা: তাদের উদ্দেশ্য ছিল সত্য গ্রহণ নয়, বরং তা লুকানো।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেকে সত্য প্রমাণ পাওয়ার পরও তা অস্বীকার করে, শুধু অহংকার ও স্বার্থের কারণে।
- মুমিনদের উচিত সত্য প্রমাণ সামনে আসলে তা বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করা।
মূল শিক্ষা:
- সত্য জানা সত্ত্বেও অস্বীকার করা বড় অপরাধ।
- আল্লাহর আয়াত অস্বীকারকারীরা আসলে নিজেদের ক্ষতি করে।
- অহংকার ও হিংসা মানুষকে সত্য থেকে বঞ্চিত করে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সত্য স্বীকার করার জন্য বিনয়ী হওয়া জরুরি।
- প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সত্য অস্বীকার করা কুফরির অন্যতম কারণ।
- মুমিনকে সর্বদা সত্যের সাক্ষী হতে হবে।
এ আয়াতে আল্লাহ আহলে-কিতাবদের প্রতারণামূলক আচরণ তুলে ধরেছেন। তারা নিজেদের কিতাবের সত্য অংশ লুকিয়ে রাখত এবং মিথ্যার সাথে মিশিয়ে বিভ্রান্ত করত।
- সত্যকে মিথ্যার সাথে মেশানো: তারা আল্লাহর বাণী বিকৃত করত, সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ ঘটাত।
- সত্য গোপন: রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী তারা ইচ্ছাকৃতভাবে লুকাত।
- জেনে শুনে প্রতারণা: তারা জানত আসল সত্য কী, তবুও মানুষের স্বার্থে তা গোপন করত।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেকেই ইসলামের সত্য শিক্ষা লুকিয়ে ফেলে, আর মিথ্যার সাথে মিশিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
- মুমিনদের উচিত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিশুদ্ধ সত্যকে গ্রহণ করা।
মূল শিক্ষা:
- সত্যকে বিকৃত করা বড় পাপ।
- জেনে শুনে মিথ্যা বলা কুফরির অন্যতম রূপ।
- মানুষকে বিভ্রান্ত করা আল্লাহর কাছে কঠিন অপরাধ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের সর্বদা সত্যের সাথে থাকতে হবে।
- সত্যকে গোপন না করে প্রকাশ করা ঈমানের দাবি।
- সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা থেকে বাঁচা জরুরি।
এই আয়াতে আহলে-কিতাবের এক চক্রান্ত প্রকাশ করা হয়েছে। তারা পরিকল্পনা করত মুমিনদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
- চক্রান্ত: দিনের শুরুতে ইসলাম গ্রহণের ভান করা এবং দিনের শেষে তা অস্বীকার করা—যাতে মুসলমানরা সন্দেহে পড়ে।
- উদ্দেশ্য: মুমিনদের দুর্বল করে আবার কুফরির দিকে ফিরিয়ে আনা।
- আল্লাহর ফাশ করা: আল্লাহ তাদের এই ষড়যন্ত্র উন্মোচন করেছেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেকে ইসলামের ভেতরে ঢুকে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়।
- কিছু লোক ইসলামের নাম ব্যবহার করে ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে, যেন মুসলমানরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের বিভ্রান্ত করতে শত্রুরা নানা কৌশল ব্যবহার করে।
- আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এসব ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেন।
- সত্য ধর্ম অটল থাকে, মিথ্যা টিকতে পারে না।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, যেন কারো প্রতারণায় বিভ্রান্ত না হয়।
- ইসলামের সত্যতা প্রমাণিত, তাই ভান করা ঈমানের কোনো মূল্য নেই।
- শত্রুর পরিকল্পনা জানলেও মুমিনকে দৃঢ়ভাবে ঈমান ধরে রাখতে হবে।
এ আয়াতে আহলে-কিতাবদের ষড়যন্ত্রের আরেকটি দিক প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলত, মুসলমান ছাড়া অন্য কারো কাছে সত্য স্বীকার করবে না। কিন্তু আল্লাহ জানিয়ে দিলেন, প্রকৃত হিদায়াত কেবল আল্লাহর হাতে।
- সীমাবদ্ধ বিশ্বাস: তারা বলত, কেবল নিজেদের অনুসারীকেই সত্য মানবে।
- আল্লাহর হিদায়াত: আসল হিদায়াত আল্লাহর কাছ থেকে আসে, কারো নিজস্ব সম্পত্তি নয়।
- আল্লাহর অনুগ্রহ: তিনি যাকে চান, তাঁর ফযল ও দয়া দান করেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কিছু লোক মনে করে কেবল তাদের দল বা গোষ্ঠীর কাছেই সত্য আছে।
- বাস্তবে সত্য কেবল কুরআন ও রাসূল ﷺ-এর সুন্নাহতে আছে।
মূল শিক্ষা:
- হিদায়াত আল্লাহর দান, মানুষের নিয়ন্ত্রণে নয়।
- কোনো জাতি বা গোষ্ঠী একচেটিয়াভাবে সত্যের দাবিদার হতে পারে না।
- আল্লাহ যাকে চান, তাকেই তাঁর ফযল দান করেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সত্যকে সীমাবদ্ধ না করে আল্লাহর দান হিসেবে মেনে নিতে হবে।
- আল্লাহর অনুগ্রহ ও হিদায়াতের জন্য দোয়া করতে হবে।
- অহংকার ও সংকীর্ণতা মানুষকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
এ আয়াতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার সার্বভৌমত্ব বর্ণিত হয়েছে। তিনি যাকে চান, তাঁকে হিদায়াত ও বিশেষ করুণা দান করেন।
- আল্লাহর দয়া: দয়া ও হিদায়াত আল্লাহর হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন।
- বিশেষ অনুগ্রহ: কেউ নিজের শক্তি বা বংশের কারণে নয়, কেবল আল্লাহর ফযলেই মর্যাদা পায়।
- মহান অনুগ্রহশীল: আল্লাহর অনুগ্রহ সীমাহীন, তা মানুষের কল্পনার বাইরে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মানুষ ভাবে জ্ঞান, সম্পদ বা বংশ মর্যাদার উৎস। কিন্তু আসল মর্যাদা আল্লাহর দানের ওপর নির্ভরশীল।
- হিদায়াত ও ঈমান কেবল আল্লাহর দান, তাই সবসময় তা চাইতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর অনুগ্রহই সর্বশ্রেষ্ঠ দান।
- হিদায়াত মানুষের হাতে নয়, কেবল আল্লাহর হাতে।
- মানুষের উচিত আল্লাহর করুণা কামনা করা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনের উচিত অহংকার না করে আল্লাহর দয়া কামনা করা।
- আল্লাহর ফযল সীমাহীন—তিনি যাকে চান, তাঁকে মর্যাদা দেন।
- সত্যিকারের সৌভাগ্যবান সেই, যে আল্লাহর রহমত লাভ করে।
আল্লাহ আহলে-কিতাবদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন—তাদের মধ্যে কেউ আমানতদার, আবার কেউ প্রতারক।
- অমানতদার: তাদের মধ্যে এমন লোক ছিল যারা অঢেল ধনও ফেরত দিত।
- প্রতারক: আবার কেউ একটি দিনারও ফেরত দিত না, যতক্ষণ না জোর করে আদায় করা হয়।
- ভ্রান্ত ধারণা: তারা বলত, ‘উম্মী’ (আরব, মুসলিম) লোকদের সাথে অন্যায় করলে কোনো পাপ নেই।
- আল্লাহর নামে মিথ্যা: তারা নিজেদের স্বার্থে আল্লাহর নামে মিথ্যা প্রচার করত।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কেউ কেউ বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়, আবার কেউ প্রতারণা করে।
- অনেকে ব্যবসায়ে বলে—‘অমুকের সাথে প্রতারণা করলে সমস্যা নেই’, অথচ ইসলাম এ ধরনের বৈষম্যকে হারাম করেছে।
মূল শিক্ষা:
- অমানত রক্ষা করা ঈমানের অংশ।
- ধর্ম বা জাতির ভেদাভেদ করে প্রতারণা করা কঠোর অপরাধ।
- আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা বড় গুনাহ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- প্রত্যেক মানুষের সাথে আমানতদারি করতে হবে, সে যে-ই হোক।
- অন্যায়কে বৈধ দেখানো মারাত্মক অপরাধ।
- মুমিনকে সর্বদা বিশ্বস্ত ও সৎ হতে হবে।
আগের আয়াতে আহলে-কিতাবদের প্রতারণার কথা উল্লেখ করা হলেও, এখানে ন্যায়পরায়ণ ও মুত্তাকীদের গুণাবলী তুলে ধরা হয়েছে।
- অঙ্গীকার পূর্ণ করা: আল্লাহর সাথে করা প্রতিশ্রুতি, মানুষের সাথে করা চুক্তি—সবই পূর্ণ করতে হবে।
- তাকওয়া: আল্লাহর ভয় ও সচেতনতা দ্বারা জীবন পরিচালনা করা।
- আল্লাহর ভালোবাসা: যারা মুত্তাকী, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজকের সমাজে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে, কিন্তু ইসলামে এটা বড় গুনাহ।
- ব্যবসা, পরিবার, রাজনীতি—সব জায়গায় চুক্তি পূর্ণ করা জরুরি।
- তাকওয়া ছাড়া ঈমান পূর্ণ হয় না।
মূল শিক্ষা:
- অঙ্গীকার পূর্ণ করা মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্য।
- তাকওয়া অর্জন আল্লাহর ভালোবাসার মাধ্যম।
- আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে সততা ও আল্লাহভীতি জরুরি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনকে সব সময় কথা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।
- আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে।
- সত্যনিষ্ঠ ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিই প্রকৃত সফল।
এখানে আল্লাহ তা‘আলা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের ভয়াবহ পরিণতি বর্ণনা করেছেন।
- অঙ্গীকার ভঙ্গ: যারা আল্লাহর চুক্তি ও শপথকে দুনিয়ার সামান্য স্বার্থে বিক্রি করে।
- আখিরাতের বঞ্চনা: তাদের জন্য আখিরাতে কোনো মর্যাদা বা প্রতিদান নেই।
- আল্লাহর অসন্তোষ: কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, দয়া ভরা দৃষ্টিতেও তাকাবেন না।
- কঠিন শাস্তি: তাদের জন্য আছে জাহান্নামের বেদনাদায়ক শাস্তি।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেকে দুনিয়ার স্বার্থে মিথ্যা শপথ করে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং মানুষের অধিকার হরণ করে।
- ইসলামে শপথ ভঙ্গ ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বড় গুনাহ।
মূল শিক্ষা:
- অঙ্গীকার পূর্ণ করা ঈমানের শর্ত।
- দুনিয়ার লোভে সত্যকে বিক্রি করা আখিরাতের সর্বনাশ ডেকে আনে।
- আল্লাহর অসন্তোষই সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কোনো অবস্থাতেই শপথ ভঙ্গ বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা যাবে না।
- মুমিনের কথা ও কাজের মধ্যে সততা থাকতে হবে।
- আল্লাহর অসন্তোষ থেকে বাঁচতে হলে আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে।
আল্লাহ আহলে-কিতাবদের প্রতারণার আরেকটি দিক প্রকাশ করেছেন। তারা কিতাব বিকৃত করত, ভুল উচ্চারণ করত এবং মানুষের সামনে মিথ্যা প্রচার করত।
- ভুল পাঠ: তারা জিহ্বা ঘুরিয়ে এমনভাবে পাঠ করত, যাতে সাধারণ মানুষ মনে করে এটা আল্লাহর কিতাবের অংশ।
- মিথ্যা আরোপ: তারা বলত—‘এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে’, অথচ তা নয়।
- ইচ্ছাকৃত প্রতারণা: তারা জেনেশুনে এ কাজ করত, কেবল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কেউ কেউ কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
- অনেকে ধর্মীয় গ্রন্থে নিজের মতামত ঢুকিয়ে আল্লাহর বাণী হিসেবে প্রচার করে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর বাণী বিকৃত করা সবচেয়ে বড় অপরাধ।
- মিথ্যা কথা আল্লাহর নামে চালানো গুনাহে আজীম।
- ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা মানুষকে গোমরাহ করে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কুরআন বিশুদ্ধভাবে শিখতে হবে এবং সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।
- সত্য ও মিথ্যা মিশিয়ে প্রচার করা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
- আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা ঈমানের দাবি।
আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে স্পষ্ট করে দিলেন যে, কোনো নবী বা আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞানপ্রাপ্ত মানুষ কখনোই আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদতের আহ্বান জানাতে পারে না।
- নবীদের দাওয়াত: প্রত্যেক নবী মানুষকে শুধু আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিয়েছেন, নিজের দাস বানাতে নয়।
- রাব্বানিয়্যূন হওয়া: প্রকৃত আলেম ও শিক্ষকের কাজ হলো মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা এবং জ্ঞান দান করা।
- ভ্রান্ত দাবি: আহলে-কিতাবরা নবীদেরকে ইলাহ বা আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে ফেলেছিল—আল্লাহ এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেক মানুষ আল্লাহর দাওয়াত বাদ দিয়ে নিজেদেরকে বড় করে তুলে ধরে।
- মুমিনদের উচিত আলেমদের সম্মান করা, কিন্তু তাদেরকে ইলাহ বানানো নয়।
মূল শিক্ষা:
- নবীদের দাওয়াত সর্বদা তাওহীদের দিকে।
- জ্ঞানবানদের উচিত মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকানো।
- মানুষকে নিজেদের দাস বানানো ইসলামবিরোধী।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না।
- শিক্ষা ও জ্ঞান মানুষকে আল্লাহর দিকে নিয়ে যেতে হবে।
- সত্যিকারের আলেম ও শিক্ষক আল্লাহভীরু হন এবং মানুষকেও আল্লাহভীরু বানান।
আল্লাহ এ আয়াতে আরো স্পষ্ট করেছেন যে, কোনো নবীর পক্ষেই সম্ভব নয় মানুষকে ফেরেশতা বা নবীদের উপাসনা করার নির্দেশ দেয়া।
- তাওহীদের ঘোষণা: ইবাদতের অধিকার কেবল আল্লাহর।
- ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন: আহলে-কিতাবরা নবী ও ফেরেশতাদেরকে উপাস্য বানিয়েছিল, আল্লাহ এই ধারণা বাতিল করেছেন।
- কুফরির নির্দেশ অসম্ভব: একজন নবী কখনো মানুষকে কুফরির দিকে ডাকতে পারেন না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কেউ কেউ আলেম বা আউলিয়াদের ইলাহ বানিয়ে ফেলে, যা শির্ক।
- মুসলমানদের উচিত কেবল আল্লাহর ইবাদতে অটল থাকা।
মূল শিক্ষা:
- নবীরা কেবল আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দেন।
- মানুষ বা ফেরেশতা উপাস্য নয়।
- মুসলিম হয়ে কুফরির পথে যাওয়া আত্মবিরোধিতা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনকে শির্ক থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে হবে।
- আল্লাহ ছাড়া কারো উপাসনা করা যাবে না।
- নবী ও ফেরেশতারা কেবল আল্লাহর বান্দা ও দাস।
আল্লাহ সব নবীর কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ আসলে তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে।
- নবীদের অঙ্গীকার: আল্লাহ নবীদের কিতাব ও জ্ঞান দানের সাথে এই শর্তও দিয়েছিলেন—পরবর্তী রাসূল আসলে তাঁকে মানতে হবে।
- শেষ নবী ﷺ: এই অঙ্গীকার আসলে মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তাঁর সাহায্যের জন্যই ছিল।
- নবীদের সম্মতি: সব নবী এই অঙ্গীকারে সম্মত হয়েছিলেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- এ আয়াত প্রমাণ করে যে, সব নবী একে অপরের প্রতি সাক্ষ্য দিতেন এবং ইসলামই সব নবীর ধর্ম।
- আজ মুসলমানদের কর্তব্য মুহাম্মাদ ﷺ-এর আনুগত্য করা, যেমন নবীরা অঙ্গীকার করেছিলেন।
মূল শিক্ষা:
- সব নবী ছিলেন এক দ্বীনের অনুসারী—তাওহীদ ও ইসলাম।
- মুহাম্মাদ ﷺ-এর আগমনের সাক্ষ্য পূর্ববর্তী নবীরা দিয়েছেন।
- আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করা প্রত্যেকের জন্য জরুরি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- নবীদের পারস্পরিক সম্পর্ক আল্লাহর একত্ববাদ ও একই দ্বীনের ওপর ভিত্তি করে।
- মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি ঈমান আনা সব নবীর মিশনের অংশ।
- মুমিনদেরও উচিত সব নবী ও সব কিতাবে ঈমান রাখা।
পূর্ববর্তী আয়াতে নবীদের অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছিল। এ আয়াতে বলা হচ্ছে—যদি কেউ সেই অঙ্গীকারের পরও মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে ফাসিক।
- অঙ্গীকার ভঙ্গ: নবীদের থেকে নেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা ফিসক বা অবাধ্যতা।
- ফাসিকদের অবস্থা: তারা আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যায় এবং শাস্তির উপযুক্ত হয়।
- সত্য থেকে মুখ ফিরানো: হেদায়াত পাওয়ার পরও অস্বীকার করা কঠিন অপরাধ।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কেউ ইসলামের সত্যতা জানার পর মুখ ফিরিয়ে নিলে, সে ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা মারাত্মক অপরাধ।
মূল শিক্ষা:
- সত্যকে অস্বীকার করা মানেই ফিসক ও অবাধ্যতা।
- আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করা আল্লাহর গজবকে ডেকে আনে।
- ফাসিকরা আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সত্য জানার পর তা গ্রহণ করা আবশ্যক।
- আল্লাহর সাথে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ঈমানের অংশ।
- ফাসিকদের পথ থেকে বাঁচতে হলে কুরআন ও রাসূল ﷺ-এর আনুগত্য জরুরি।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁর দ্বীন ছাড়া আর কোনো দ্বীন গ্রহণযোগ্য নয়। সৃষ্টিজগতের সবকিছুই আল্লাহর অধীন।
- আল্লাহর দ্বীন: ইসলামই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত একমাত্র সত্য দ্বীন।
- সর্বজনীন আত্মসমর্পণ: সৃষ্টিজগত আল্লাহর আদেশে চলছে—চাই স্বেচ্ছায়, চাই অনিচ্ছায়।
- ফেরত: সবাই একদিন আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে এবং তাঁর কাছে হিসাব দিবে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ অনেকেই আল্লাহর দ্বীন বাদ দিয়ে মানুষের বানানো পথ অনুসরণ করে।
- তবে আসমান-জমিনের প্রতিটি জিনিস প্রমাণ করে যে, আল্লাহই একমাত্র রব।
- মুমিনদের উচিত স্বেচ্ছায় আল্লাহর দ্বীন মেনে নেওয়া, না হলে কিয়ামতে অনিচ্ছায় আত্মসমর্পণ করতেই হবে।
মূল শিক্ষা:
- ইসলামই আল্লাহর একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন।
- আল্লাহর সৃষ্টিজগত তাঁর ইবাদত করে চলছে।
- সকলকে আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর দ্বীন বাদ দিয়ে অন্য পথ বেছে নেওয়া ব্যর্থতা।
- মুমিনদের উচিত স্বেচ্ছায় আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করা।
- কিয়ামতের দিন সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তাই দুনিয়াতেই তাঁর আনুগত্য জরুরি।
এ আয়াতে মুমিনদের ঈমানের মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে—সব নবী ও সব কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন করা।
- ঈমানের পূর্ণতা: কেবল মুহাম্মাদ ﷺ-এ নয়, পূর্ববর্তী সব নবী ও কিতাবে ঈমান আনতে হবে।
- নবীদের ঐক্য: সব নবীর মিশন এক—তাওহীদ ও ইসলাম।
- কোনো পার্থক্য নয়: কোনো নবীকে মানা আর অন্যকে অস্বীকার করা কুফরি।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কেউ কেউ বলে—‘আমরা অমুক নবীকে মানি, কিন্তু অন্যকে মানি না।’ ইসলাম এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
- মুসলমানরা সব নবীকে সম্মান করে এবং কেবল আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে।
মূল শিক্ষা:
- সব নবী ও সব কিতাবে ঈমান রাখা ফরজ।
- ইসলাম হলো সকল নবীর একক দাওয়াতের ধারাবাহিকতা।
- আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণই প্রকৃত ইসলাম।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনরা সব নবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
- কোনো নবী বা কিতাবকে অস্বীকার করা ঈমান নষ্ট করে দেয়।
- ইসলামের মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর একত্ববাদ ও পূর্ণ আত্মসমর্পণ।
এ আয়াতে স্পষ্ট ঘোষণা এসেছে—ইসলামের বাইরে অন্য কোনো দ্বীন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
- ইসলামই একমাত্র দ্বীন: আল্লাহর কাছে শুধু ইসলামই গ্রহণযোগ্য, অন্য কোনো ধর্ম নয়।
- অস্বীকৃত ধর্ম: ইসলাম বাদ দিয়ে অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করা মানে আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যান করা।
- আখিরাতের পরিণতি: যারা ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীন বেছে নেবে, তারা আখিরাতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ অনেকেই মনে করে সব ধর্ম সমান, কিন্তু কুরআন স্পষ্ট করেছে—শুধু ইসলামই গ্রহণযোগ্য।
- মানুষ দুনিয়ার জন্য অন্য ধর্ম বা মতবাদ বেছে নিলেও আখিরাতে তা কোনো কাজে আসবে না।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো ইসলাম।
- ইসলামের বাইরে অন্য কিছু গ্রহণ করলে তা বাতিল।
- আখিরাতের সাফল্য শুধু ইসলাম অনুসারীদের জন্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনের উচিত ইসলামে দৃঢ় থাকা এবং অন্য কোনো দ্বীনের দিকে না ঝোঁকা।
- ইসলামই মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ।
- আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের জন্য ইসলামই যথেষ্ট।
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা এমন লোকদের কথা বলেছেন যারা প্রথমে ঈমান এনেছিল, কিন্তু পরে কুফরিতে ফিরে গিয়েছিল।
- ঈমানের পর কুফরি: সত্য জেনে ও গ্রহণ করার পর তা অস্বীকার করা সবচেয়ে বড় অপরাধ।
- রাসূলের সত্যতার সাক্ষ্য: তারা নিজেরাই সাক্ষ্য দিয়েছিল যে নবী ﷺ সত্য।
- স্পষ্ট প্রমাণ: তাদের কাছে আল্লাহর নিদর্শন ও কিতাবের দলিল এসেছিল।
- হিদায়াত থেকে বঞ্চিত: যারা জালিম (সত্যকে অস্বীকারকারী), আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দেন না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কেউ ইসলাম গ্রহণ করার পর দুনিয়ার লোভে বা ভয়ের কারণে তা ত্যাগ করে।
- এমন কাজ আল্লাহর কাছে কঠিন অপরাধ এবং হিদায়াত থেকে বঞ্চনার কারণ।
মূল শিক্ষা:
- ঈমান আনার পর কুফরিতে ফিরে যাওয়া বড় গুনাহ।
- আল্লাহ জালিম ও কুফরি চর্চাকারীদের হিদায়াত দেন না।
- সত্য জানার পরও অস্বীকার করা চরম ধ্বংসের কারণ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈমানকে অটল রাখতে হবে, তা হারিয়ে ফেলা যাবে না।
- আল্লাহর হিদায়াত পেতে হলে সত্যকে আঁকড়ে থাকতে হবে।
- অন্যায় ও জালিমদের পরিণতি সর্বদা ভয়াবহ।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের পর কুফরিতে ফিরে যাওয়া লোকদের ভয়াবহ পরিণতি বর্ণনা করেছেন।
- আল্লাহর লা‘নত: আল্লাহর রহমত থেকে চিরতরে বঞ্চিত হওয়া।
- ফেরেশতাদের লা‘নত: আল্লাহর আনুগত্যকারী ফেরেশতারা তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করবে।
- মানুষের লা‘নত: পৃথিবীর সব সৎ মানুষ তাদের প্রতি ঘৃণা ও অভিশাপ দেবে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কেউ ঈমান আনার পর ইসলাম ত্যাগ করলে, সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।
- মানুষ তাকে বিশ্বাসঘাতক মনে করে এবং তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।
মূল শিক্ষা:
- ঈমানের পর কুফরি করলে আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তি আছে।
- আল্লাহর লা‘নত মানেই রহমত ও জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া।
- মুমিনদের ভালোবাসা শুধু ঈমানদারদের জন্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈমানকে রক্ষা করা সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
- কুফরির পথে গেলে আল্লাহ, ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ নেমে আসে।
- মুমিনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর রহমত লাভ করা, লা‘নত থেকে বাঁচা।
এ আয়াতে সেইসব লোকদের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে, যারা ঈমানের পর কুফরিতে ফিরে গিয়েছিল এবং আল্লাহর লা‘নত অর্জন করেছিল।
- চিরস্থায়ী শাস্তি: তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।
- লাঘব নেই: শাস্তি কখনো হালকা করা হবে না।
- অবকাশ নেই: তাদেরকে কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না যে তারা মুক্তি পেতে পারে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ যারা ইসলাম জেনে শুনে অস্বীকার করে, তারা আখিরাতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে।
- আল্লাহর লা‘নত মানে রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করা।
মূল শিক্ষা:
- জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি নেই, যদি কেউ ঈমান ত্যাগ করে কুফরিতে ফিরে যায়।
- আল্লাহর রহমত ছাড়া কারো মুক্তি নেই।
- কুফরি ও জালিমের পথ আখিরাতে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈমান ধরে রাখা আখিরাতের মুক্তির জন্য অপরিহার্য।
- কুফরি করলে জাহান্নামের চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে হবে।
- আল্লাহর লা‘নত ও শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহর আনুগত্যে দৃঢ় থাকতে হবে।
এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন সেইসব লোকদের জন্য, যারা কুফরির পর তাওবা করে আবার ঈমানের পথে ফিরে আসে।
- তাওবা: আন্তরিক অনুতাপ এবং গুনাহ থেকে ফিরে আসা।
- সংশোধন: শুধু মুখে নয়, বরং কাজের মাধ্যমে নিজের জীবনকে সঠিক করা।
- আল্লাহর দয়া: আল্লাহ গাফুর (ক্ষমাশীল) ও রহীম (দয়ালু), তাই তিনি তাওবা গ্রহণ করেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ কেউ যদি ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়, তার জন্যও তাওবার দরজা খোলা আছে।
- পাপ যত বড়ই হোক, যদি মানুষ আন্তরিকভাবে তাওবা করে, আল্লাহ ক্ষমা করেন।
মূল শিক্ষা:
- তাওবা আল্লাহর রহমত পাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
- সংশোধন ছাড়া তাওবা পূর্ণ হয় না।
- আল্লাহর দয়া অসীম, তিনি বান্দাকে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- পাপের পরও হতাশ হওয়া যাবে না, তাওবা করতে হবে।
- তাওবার সাথে সাথে জীবনকে ঠিক করতে হবে।
- আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের আশা রাখা ঈমানের দাবি।
আল্লাহ এ আয়াতে সেইসব লোকদের কথা বলেছেন, যারা একবার কুফরিতে ফিরে যাওয়ার পর ক্রমশ কুফরিতে গভীরতর হয়েছে।
- ঈমানের পর কুফরি: যারা সত্য জানার পরও অস্বীকার করে।
- কুফরিতে বৃদ্ধি: শুধু কুফরিই নয়, বরং ক্রমে অস্বীকারে দৃঢ়তা আনে।
- তাওবা অগ্রহণযোগ্য: তাদের তাওবা কবুল হয় না, কারণ তারা আন্তরিকভাবে ফিরতে চায় না।
- চরম পথভ্রষ্টতা: তাদের জন্য আখিরাতে মুক্তির কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ অনেকেই ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে কুফরিতে অটল থাকে, তাদের জন্য তাওবার সুযোগ আল্লাহ দেন না।
- যারা একের পর এক পাপে লিপ্ত হয় এবং ফিরে আসতে অস্বীকার করে, তাদের অবস্থাও একই রকম।
মূল শিক্ষা:
- ঈমান হারানোর পর ক্রমাগত কুফরিতে লিপ্ত থাকা ভয়াবহ অপরাধ।
- তাওবা কবুল হওয়ার জন্য আন্তরিক অনুতাপ ও সংশোধন জরুরি।
- পথভ্রষ্টরা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈমান রক্ষা করা সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
- কুফরিতে অটল থাকলে আখিরাতে মুক্তি নেই।
- মুমিনদের উচিত কুফরি ও গোমরাহির সব পথ থেকে দূরে থাকা।
এ আয়াতে কুফরির পরিণতি স্পষ্ট করা হয়েছে। দুনিয়ার ধন-সম্পদ দিয়ে আখিরাতের শাস্তি থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না।
- কুফরির অবস্থায় মৃত্যু: যারা ইসলাম ছাড়া অন্য অবস্থায় মারা যাবে, তাদের মুক্তি নেই।
- ফিদিয়া অগ্রহণযোগ্য: পুরো পৃথিবী পরিমাণ সোনা দিলেও তা মুক্তির মূল্য হবে না।
- কঠিন শাস্তি: তাদের জন্য জাহান্নামের বেদনাদায়ক শাস্তি নির্ধারিত।
- কোনো সাহায্যকারী নেই: কিয়ামতের দিন তাদের সাহায্য করার মতো কেউ থাকবে না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- দুনিয়ায় সম্পদ দিয়ে অনেক কিছু কেনা যায়, কিন্তু আখিরাতের মুক্তি কেনা যায় না।
- মুমিনদের উচিত ঈমান অটুট রাখা, কারণ কুফরির অবস্থায় মৃত্যু মানে চিরকালীন ধ্বংস।
মূল শিক্ষা:
- আখিরাতের মুক্তি সম্পদ দিয়ে সম্ভব নয়, কেবল ঈমান ও সৎকর্ম দিয়েই সম্ভব।
- কুফরির মধ্যে মৃত্যু আখিরাতের চরম ক্ষতি।
- আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈমান ছাড়া মৃত্যুবরণ করা যাবে না—এটাই মুমিনের সবচেয়ে বড় দোয়া।
- দুনিয়ার লোভে কুফরির পথে গেলে আখিরাতে ধ্বংস নিশ্চিত।
- সত্যিকার সফলতা কেবল ঈমান ও আল্লাহর আনুগত্যে।
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত নেকির মানদণ্ড শিখিয়েছেন—যা মানুষ সবচেয়ে ভালোবাসে, তা আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে।
- নেকির মানদণ্ড: কেবল কথা নয়, বরং প্রিয় সম্পদ ও বস্তু আল্লাহর জন্য কোরবানি করা।
- সত্যিকারের ত্যাগ: মানুষ যা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে (ধন, সময়, শক্তি), তা আল্লাহর জন্য ব্যয় করাই প্রকৃত নেকি।
- আল্লাহর জ্ঞান: মানুষ যতটুকুই দান করে, আল্লাহ তা জানেন এবং প্রতিদান দেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজকের দিনে মানুষ ধন-সম্পদ, সময় ও প্রতিভাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে—এগুলো আল্লাহর পথে ব্যবহার করাই প্রকৃত নেকি।
- দরিদ্রকে দান করা, জ্ঞান দিয়ে মানুষকে উপকার করা, ইসলামের জন্য সময় দেওয়া—সবই এই আয়াতের শিক্ষা।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করতে হবে প্রিয় জিনিসগুলো।
- নেকি অর্জনের শর্ত হলো প্রকৃত ত্যাগ।
- আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং প্রতিদান দেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- দান-খয়রাতের মাধ্যমে ঈমান পূর্ণতা লাভ করে।
- মুমিনকে তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসও আল্লাহর জন্য ত্যাগ করতে হবে।
- আল্লাহর পথে ব্যয় কখনো বৃথা যায় না, বরং আখিরাতে তার মহা প্রতিদান মেলে।
এ আয়াতে বনী ইসরাঈলের একটি ভ্রান্ত ধারণার জবাব দেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করত, কিছু খাবার শুরু থেকেই হারাম ছিল। আল্লাহ তা স্পষ্ট করেছেন।
- প্রকৃত সত্য: প্রথমে সব খাবার হালাল ছিল, পরে আল্লাহর আদেশে কিছু হারাম হয়।
- ইয়াকুব আঃ: তিনি কোনো অসুস্থতার কারণে নিজের ওপর কিছু খাবার হারাম করেছিলেন।
- তাওরাতের প্রমাণ: আল্লাহ বললেন—তাওরাত নিয়ে এসো, যদি সত্যি বলো।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- মানুষ প্রায়ই নিজের ইচ্ছায় কোনো কিছু হারাম-হালাল বলে বসে, অথচ প্রকৃত হালাল-হারামের বিধান আল্লাহর।
- আল্লাহর কিতাবই একমাত্র সত্যের প্রমাণ।
মূল শিক্ষা:
- হালাল-হারামের বিধান আল্লাহর হাতে, মানুষের নয়।
- কোনো দাবির প্রমাণ কিতাবুল্লাহ থেকেই দিতে হবে।
- সত্য গোপন করলে আল্লাহ তা ফাঁস করে দেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনের উচিত হালাল-হারামের ব্যাপারে কেবল কুরআন ও হাদিসের অনুসরণ করা।
- মিথ্যা দাবি করলে আল্লাহর কিতাব দ্বারা তা প্রমাণ করতে হবে।
- আল্লাহর কিতাবই সর্বশেষ ও চূড়ান্ত প্রমাণ।
বনী ইসরাঈলের ভ্রান্ত দাবির জবাব দেওয়ার পর আল্লাহ সতর্ক করেছেন—যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে, তারাই প্রকৃত জালিম।
- মিথ্যা আরোপ: আল্লাহ যা বলেননি, তা তাঁর নামে চালানো মারাত্মক অপরাধ।
- সত্য অস্বীকার: প্রমাণ আসার পরও মিথ্যা দাবি করা জালিমদের বৈশিষ্ট্য।
- জালিমদের অবস্থা: তারা নিজেদের ও অন্যদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কেউ কেউ আল্লাহর বাণীতে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা ঢুকিয়ে দেয় বা নিজের মতকে আল্লাহর আদেশ বলে চালিয়ে দেয়।
- এমন কাজ মানুষকে গোমরাহ করে এবং আল্লাহর কাছে বড় অপরাধ।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা সবচেয়ে বড় জুলুম।
- সত্য প্রমাণ হওয়ার পরও অস্বীকার করা ধ্বংসের পথ।
- জালিমদের কখনো সফলতা নেই।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কুরআন ও সুন্নাহর বাইরে কিছু আল্লাহর নামে চালানো যাবে না।
- মিথ্যা কথা আল্লাহর ওপর চাপালে তা চরম অপরাধ।
- মুমিনকে সর্বদা সত্যের সাথে থাকতে হবে।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নবী ইবরাহীম (আঃ)-এর দ্বীনের প্রতি মানুষকে আহ্বান করেছেন, যা ছিল তাওহীদের দ্বীন।
- আল্লাহর সত্যবাদিতা: আল্লাহর বাণীই একমাত্র সত্য, মানুষের কথায় সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ থাকে।
- ইবরাহীমের দ্বীন: তাঁর দ্বীন ছিল খাঁটি তাওহীদ, আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদত।
- শির্ক থেকে মুক্ত: ইবরাহীম (আঃ) কখনো শির্ক করেননি এবং মুশরিকদের দলে ছিলেন না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেকেই মুশরিকদের পথ অনুসরণ করে, অথচ সত্যিকারের মুক্তি কেবল তাওহীদে।
- মুমিনদের উচিত ইবরাহীম (আঃ)-এর মতো একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করা।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর বাণী সর্বদা সত্য।
- ইসলামের মূল ভিত্তি হলো তাওহীদ, যা ইবরাহীম (আঃ)-এর দ্বীনের শিক্ষা।
- শির্ক থেকে বাঁচা মুমিনের প্রথম শর্ত।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনকে সর্বদা আল্লাহর কথাকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
- ইবরাহীম (আঃ)-এর মিল্লাত অনুসরণ করা ইসলামের দাবি।
- শির্ক থেকে দূরে থাকা ঈমান রক্ষার অপরিহার্য অংশ।
এ আয়াতে কাবা শরীফের মর্যাদা ও গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
- প্রথম গৃহ: আল্লাহর ইবাদতের জন্য পৃথিবীতে প্রথম নির্মিত ঘর হলো কাবা।
- বক্কা: মক্কার আরেক নাম “বক্কা”, যেখানে কাবা অবস্থিত।
- বরকতময়: কাবা শরীফ ও এর চারপাশের এলাকা আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় করা হয়েছে।
- হিদায়াত: কাবা হলো মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা, কারণ এটি তাওহীদের প্রতীক।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মুসলমানরা কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে, যা তাদের ঐক্যের প্রতীক।
- কাবা হলো আল্লাহর ইবাদতের কেন্দ্রবিন্দু, মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের কেন্দ্র।
মূল শিক্ষা:
- কাবা পৃথিবীর প্রথম ইবাদতখানা।
- এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও হিদায়াতের উৎস।
- মুমিনদের ঐক্যের প্রতীক হলো কাবা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ঈমানের অংশ।
- নামাজে কাবার দিকে মুখ করা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রকাশ করে।
- আল্লাহর নির্ধারিত ইবাদতের কেন্দ্রকেই অনুসরণ করতে হবে।
কাবা শরীফ শুধু ইবাদতের কেন্দ্রই নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে অনেক নিদর্শন। আল্লাহ মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ করেছেন।
- স্পষ্ট নিদর্শন: যেমন মাকামে ইবরাহীম, যেখানে ইবরাহীম (আঃ) দাঁড়িয়ে কাবা নির্মাণ করেছিলেন।
- নিরাপত্তা: কাবা এমন স্থান যেখানে প্রবেশ করলে মানুষ নিরাপদ হয়।
- হজ ফরজ: সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ, এটি আল্লাহর হক।
- অস্বীকারের পরিণতি: হজের ফরজ হওয়া অস্বীকার করা কুফরি।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও হজ মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ঐক্যের প্রতীক।
- যারা সামর্থ্য থাকার পরও হজ করে না, তারা বড় গুনাহে লিপ্ত হয়।
মূল শিক্ষা:
- হজ ফরজ ইবাদত, সামর্থ্যবান মুসলিমদের তা পালন করতেই হবে।
- কাবার ভেতরে ও চারপাশে রয়েছে অনেক নিদর্শন, যা ঈমান বাড়ায়।
- আল্লাহর দ্বীন পালনে অবহেলা করলে ক্ষতি মানুষেরই।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কাবা শরীফ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও নিরাপত্তার প্রতীক।
- হজ অবহেলা করা মারাত্মক অপরাধ।
- আল্লাহ কারো প্রয়োজনীয় নন, বরং আমাদেরই আল্লাহর প্রয়োজন।
এ আয়াতে আহলে কিতাবদের (ইহুদি-নাসারা) উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা হয়েছে, যারা আল্লাহর কিতাব ও নিদর্শন অস্বীকার করত।
- অহেতুক অস্বীকার: তারা আল্লাহর আয়াত জেনে শুনেও তা মানত না।
- আল্লাহর সাক্ষী: আল্লাহ তাদের সব কাজ দেখেন এবং কিয়ামতে হিসাব নেবেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেকেই কুরআনের সত্যতা জানার পরও অহেতুক অস্বীকার করে।
- তারা বুঝতে পারে না, আল্লাহ সবকিছু দেখছেন এবং তারা দায়মুক্ত নয়।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করা সবচেয়ে বড় গুনাহ।
- আল্লাহ সবকিছুর সাক্ষী, তাই কোনো কাজ গোপন নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনকে সবসময় আল্লাহর আয়াত মেনে চলতে হবে।
- অস্বীকারকারীরা শেষ পর্যন্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
- আল্লাহ সর্বদা মানুষের কাজকর্ম দেখছেন—এ সচেতনতা নিয়ে জীবনযাপন করতে হবে।
আল্লাহ আহলে কিতাবদের ধমক দিয়ে বলেছেন, তারা সত্য জানার পরও মানুষকে ইসলামের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা করত।
- আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখা: তারা মানুষকে কুরআন ও ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করতে দিত না।
- পথকে বেঁকানো: সত্যকে বিকৃত করত, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
- তাদের সাক্ষ্য: তারা কিতাবে সত্য জানত, তবুও অস্বীকার করত।
- আল্লাহর জ্ঞান: তাদের প্রতিটি কাজ আল্লাহ জানেন, গাফিল নন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেকে মানুষকে ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত রাখে, মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে বিভ্রান্ত করে।
- আল্লাহর দীনকে বিকৃত করার চেষ্টা করলে তা চিরকাল ব্যর্থ হবে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর দীন থেকে বিরত রাখা বড় অপরাধ।
- সত্য বিকৃত করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, তবে আল্লাহ তা জানেন।
- আল্লাহ গাফিল নন, সবকিছুর হিসাব তিনি নেবেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনের উচিত কাউকে আল্লাহর দীন থেকে বাধা না দেওয়া।
- আহলে কিতাবদের মতো মিথ্যা প্রমাণ করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
- আল্লাহ সবকিছু দেখেন, তাই সৎপথে অবিচল থাকতে হবে।
এই আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের সতর্ক করেছেন, যাতে তারা আহলে কিতাবদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হয়।
- সতর্কবার্তা: মুসলমানরা যদি তাদের অনুসরণ করে, তাহলে তারা ঈমান হারিয়ে ফেলবে।
- আহলে কিতাবদের ষড়যন্ত্র: তারা মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করত।
- ঈমানের গুরুত্ব: ঈমান হারালে মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও অনেক প্রভাবশালী গোষ্ঠী মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
- তাদের কথায় প্রভাবিত হলে মুসলমানরা দ্বীন থেকে সরে যাবে।
মূল শিক্ষা:
- ঈমান রক্ষা করা সর্বোচ্চ দায়িত্ব।
- আহলে কিতাব বা অন্য কারও কুমন্ত্রণা শোনা ঈমান নষ্ট করতে পারে।
- ঈমান হারালে দুনিয়া-আখিরাতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের কাউকে অনুসরণ করার আগে দেখতে হবে, তা কুরআন-সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।
- অন্যের প্রলোভনে ঈমান হারানো থেকে বাঁচতে হবে।
- ঈমানই মুসলিমের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
এ আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের বুঝিয়ে দিয়েছেন—তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত ও রাসূল ﷺ থাকা সত্ত্বেও কুফরি করার কোনো অজুহাত নেই।
- কুফরির অযৌক্তিকতা: সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর কুফরি করা নির্বুদ্ধিতা।
- রাসূলের উপস্থিতি: নবী ﷺ তাদের মধ্যে ছিলেন, তাই তাদের আরও সচেতন থাকা উচিত।
- আল্লাহকে আঁকড়ে ধরা: যে আল্লাহর দিকেই ফিরে যায়, সে সোজা পথে চলে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ আমাদের কাছে কুরআন ও হাদিস রয়েছে, তাই কুফরির কোনো অজুহাত নেই।
- যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে, সে বিভ্রান্ত হয় না।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের শিক্ষা উপেক্ষা করে কুফরিতে যাওয়া মারাত্মক অপরাধ।
- সোজা পথের হিদায়াত আল্লাহকেই আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনকে সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে।
- আল্লাহকে আঁকড়ে ধরাই মুক্তির একমাত্র উপায়।
- সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর তা অস্বীকার করা চরম গোমরাহী।
এ আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের তাকওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার তাগিদ দিয়েছেন।
- তাকওয়া: আল্লাহর ভয় মনে রেখে তাঁর আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকা।
- হাক্কুল তাকওয়া: আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করা, যাতে জীবন পুরোপুরি তাঁর আনুগত্যে থাকে।
- মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু: ঈমান রক্ষা করে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষের মনোযোগ দুনিয়ার দিকে বেশি, ফলে তাকওয়া দুর্বল হয়ে পড়ে।
- প্রতিদিনের জীবনে আল্লাহকে ভয় করলে গুনাহ থেকে বাঁচা সম্ভব।
- মুমিনকে সবসময় দোয়া করতে হবে—“হে আল্লাহ! মুসলিম অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দাও।”
মূল শিক্ষা:
- তাকওয়া মুমিনের আসল শক্তি।
- আল্লাহর ভয়েই গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু লাভ করা সফলতার চাবিকাঠি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহকে ভয় করার অধিকার অনুযায়ী তাকওয়া অর্জন করতে হবে।
- প্রতিদিনের আমল এমন হতে হবে যাতে মৃত্যু মুসলিম অবস্থায় আসে।
- ঈমান রক্ষা করাই মুমিনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
এই আয়াতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিভক্তি থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
- আল্লাহর রজ্জু: কুরআন ও দ্বীনুল ইসলামকেই আল্লাহর রজ্জু বলা হয়েছে।
- ঐক্যের গুরুত্ব: মুসলমানরা বিভক্ত থাকলে দুর্বল হয়, আর ঐক্য থাকলে শক্তিশালী হয়।
- অতীত স্মরণ: মদিনার আনসাররা আগে একে অপরের শত্রু ছিল, ইসলাম তাদেরকে ভাই বানিয়েছে।
- আগুন থেকে রক্ষা: কুফরি ও শত্রুতার কারণে তারা যেন আগুনে পতিত হচ্ছিল, ইসলাম তাদের রক্ষা করেছে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি ও মতভেদ প্রবল, অথচ কুরআন ঐক্যের দিকে আহ্বান করে।
- মুমিনরা যদি কুরআনকে আঁকড়ে ধরে, তবে তারা শক্তিশালী ও সফল হবে।
মূল শিক্ষা:
- মুসলিমদের জন্য ঐক্য অপরিহার্য।
- কুরআনই প্রকৃত ঐক্যের উৎস।
- শত্রুতার পরিবর্তে ভাইচারা ইসলামের বড় নিয়ামত।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের উচিত বিভক্তি এড়িয়ে চলা।
- কুরআনকে আঁকড়ে ধরলে হিদায়াত মেলে।
- ঐক্য ইসলামের শক্তি, বিভক্তি শত্রুর সুবিধা।
এই আয়াতে মুসলিম উম্মাহকে দাওয়াতের দায়িত্ব সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- দাওয়াতের গুরুত্ব: উম্মাহর একটি অংশকে অবশ্যই আল্লাহর পথে আহ্বান করতে হবে।
- সৎকাজের নির্দেশ: সমাজে নেক কাজ ছড়িয়ে দিতে হবে।
- অসৎকাজ থেকে বিরত রাখা: অন্যায়, জুলুম ও গুনাহ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
- সফলতার দল: যারা এই কাজ করবে, তারাই প্রকৃত সফল।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ সমাজে মন্দ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই দাওয়াতের প্রয়োজন আরও বেশি।
- ইসলাম প্রচার ও দাওয়াতের কাজ মুমিনদের প্রধান দায়িত্ব।
মূল শিক্ষা:
- দাওয়াত, আমর বিল-মা‘রূফ (সৎকাজের আদেশ) ও নাহি আনিল-মুনকার (অসৎকাজ নিষেধ) উম্মাহর ফরজ কাজ।
- সফলতা কেবল এই দায়িত্ব পালনকারীদের জন্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব—সামর্থ্য অনুযায়ী দাওয়াতের কাজে অংশ নেওয়া।
- সৎকাজ প্রচার ও অসৎকাজ দমন ইসলামের প্রাণ।
- দাওয়াত ছাড়া উম্মাহর সফলতা অসম্ভব।
আল্লাহ মুমিনদেরকে সতর্ক করছেন, যাতে তারা আহলে কিতাবদের মতো বিভক্তি ও মতভেদে না জড়ায়।
- ঐক্যের গুরুত্ব: ইসলাম ঐক্যের দিকে আহ্বান করে, বিভক্তি ধ্বংস ডেকে আনে।
- আহলে কিতাবের ভুল: তারা কিতাব পাওয়ার পরও দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।
- শাস্তি: বিভক্তি ও মতভেদকারীদের জন্য আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলমানরা মাযহাব, দল ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, অথচ কুরআন ঐক্যের নির্দেশ দিয়েছে।
- এ বিভক্তি মুসলমানদের দুর্বল করে, শত্রুরা সুযোগ নেয়।
মূল শিক্ষা:
- ঐক্য ইসলামি সমাজের শক্তি।
- মতভেদ ও বিভক্তি আল্লাহর গজব ডেকে আনে।
- কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরলেই ঐক্য রক্ষা হয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের বিভক্তি এড়িয়ে চলা অপরিহার্য।
- স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও ভিন্ন পথে যাওয়া ধ্বংসের কারণ।
- ঐক্যবদ্ধ থাকলেই মুসলমানরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হবে।
এ আয়াতে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহ দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে মানুষের মুখমণ্ডল তাদের পরিণতি প্রকাশ করবে।
- উজ্জ্বল মুখ: মুমিনদের মুখ সেদিন উজ্জ্বল, দীপ্তিময় হবে।
- কালো মুখ: কাফের ও মুনাফিকদের মুখ অন্ধকার ও লাঞ্ছিত হবে।
- প্রশ্ন ও জবাব: আল্লাহ তাদের প্রশ্ন করবেন—ঈমান আনার পর কুফরিতে ফিরেছিলে? এ কারণে শাস্তি ভোগ কর।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষ মুখের হাসি দিয়ে মর্যাদা পায়, কিন্তু আখিরাতে মুখের দীপ্তি নির্ভর করবে ঈমান ও আমলের ওপর।
- যারা ঈমানের পর কুফরিতে ফিরে যায়, তাদের জন্য এ আয়াত সতর্কবার্তা।
মূল শিক্ষা:
- কিয়ামতের দিন মুমিন ও কাফেরের পার্থক্য মুখমণ্ডলে স্পষ্ট হবে।
- ঈমানের পর কুফরিতে ফেরা বড় ধ্বংস।
- শাস্তি অবশ্যম্ভাবী, যদি কেউ সত্য অস্বীকার করে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈমান অটল রাখা অপরিহার্য।
- আল্লাহর আনুগত্যে থাকলে মুখ উজ্জ্বল হবে, অন্যথায় লাঞ্ছনা নেমে আসবে।
- কিয়ামতের দিন সফলতা কেবল ঈমানদারদের জন্য।
এই আয়াতে কিয়ামতের দিন মুমিনদের মর্যাদা ও পুরস্কার বর্ণনা করা হয়েছে।
- উজ্জ্বল মুখ: মুমিনদের মুখ দীপ্তিময় হবে, যা তাদের ঈমান ও আমলের প্রমাণ।
- আল্লাহর রহমত: তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, যা আল্লাহর রহমতের ফসল।
- চিরস্থায়ী সুখ: জান্নাতে তাদের বসবাস হবে চিরকাল।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- দুনিয়ার কষ্ট, অভাব, অপমান সবই আখিরাতে মুমিনের জন্য জান্নাতের সুখে রূপ নেবে।
- আল্লাহর রহমত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ সম্ভব নয়।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের চূড়ান্ত পুরস্কার হলো আল্লাহর রহমত ও জান্নাত।
- জান্নাতের সুখ চিরস্থায়ী, তা কখনো শেষ হবে না।
- কিয়ামতের দিন মুখ উজ্জ্বল হওয়া ঈমানের নিদর্শন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর রহমত অর্জনের জন্য তাকওয়া ও সৎকর্ম জরুরি।
- মুমিনের লক্ষ্য হওয়া উচিত জান্নাত লাভ করা।
- জান্নাতে স্থায়ী সুখের জন্য দুনিয়ার সাময়িক কষ্ট সহ্য করতে হবে।
আল্লাহ এ আয়াতে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, কুরআনের প্রতিটি আয়াত সত্য এবং মানবজাতির কল্যাণের জন্য।
- আল্লাহর আয়াত: কুরআনের প্রতিটি আয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য প্রমাণ।
- সত্যের সাথে অবতীর্ণ: এগুলো কল্পনা নয়, বরং সত্যের ওপর ভিত্তি করে নাযিল হয়েছে।
- আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা: আল্লাহ কারো ওপর জুলুম করেন না, বরং মানুষ নিজের কাজের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কুরআনের প্রতিটি আয়াত মানবতার জন্য হিদায়াতের আলো।
- মানুষের অন্যায় কাজই ধ্বংস ডেকে আনে, আল্লাহর বিধান নয়।
মূল শিক্ষা:
- কুরআনের প্রতিটি আয়াত সত্য।
- আল্লাহ কখনো অন্যায় করেন না।
- মানুষই নিজের গুনাহের কারণে ক্ষতি ডেকে আনে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কুরআনের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে।
- আল্লাহর প্রতি ভুল ধারণা রাখা যাবে না।
- ন্যায়বিচারের মালিক আল্লাহ, তিনি কারো প্রতি জুলুম করেন না।
এ আয়াতে আল্লাহর মালিকানা ও সার্বভৌমত্বের ঘোষণা এসেছে।
- আকাশ ও পৃথিবীর মালিক: সবকিছু আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
- ফেরত আল্লাহর কাছে: দুনিয়ার সব কাজ ও ফলাফল আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে।
- মানুষের অসহায়ত্ব: আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে চূড়ান্ত ক্ষমতা নেই।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষ প্রযুক্তি ও ক্ষমতার দম্ভ করে, অথচ সবকিছু আল্লাহর নিয়ন্ত্রণেই।
- প্রতিটি কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে যাবে, তাই দায়িত্বশীল হতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহই আসমান-জমিনের একমাত্র মালিক।
- সব কাজের চূড়ান্ত বিচার আল্লাহ করবেন।
- মানুষকে সর্বদা আল্লাহর আনুগত্যে থাকতে হবে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহ ছাড়া কারো ওপর নির্ভর করা বৃথা।
- প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে—এ সচেতনতা থাকা জরুরি।
- মুমিনকে সর্বদা আল্লাহর মালিকানা স্বীকার করে চলতে হবে।
আল্লাহ মুসলমানদের মর্যাদা ঘোষণা করেছেন যে, তারা মানবতার কল্যাণের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহ।
- সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহ: কারণ তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে।
- ঈমানের শর্ত: আল্লাহতে ঈমান রাখা এই মর্যাদার মূল ভিত্তি।
- আহলে কিতাব: যদি তারা ঈমান আনত, তবে তারাও উপকৃত হতো।
- অধিকাংশ ফাসিক: আহলে কিতাবের অল্প কিছু ঈমানদার ছিল, কিন্তু বেশিরভাগই ছিল অবাধ্য।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব হলো মানবতার কল্যাণের জন্য ইসলাম প্রচার করা।
- মুমিনদের কাজ হলো সমাজে সৎকাজ ছড়িয়ে দেওয়া এবং মন্দ কাজ দূর করা।
মূল শিক্ষা:
- মুসলমানরা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহ, তবে শর্ত হলো সৎকাজ প্রচার, অসৎকাজ দমন ও ঈমান।
- আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে এই মর্যাদা হারাতে হবে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের সর্বদা দ্বীনের দাওয়াত, সৎকাজের প্রচার ও অসৎকাজ দমন করতে হবে।
- ঈমানই উম্মাহর শ্রেষ্ঠত্বের আসল মূলধন।
- আল্লাহর কাছে মর্যাদা অর্জন করতে চাইলে দ্বীনের এই দায়িত্ব পালন করা জরুরি।
আল্লাহ মুসলমানদের আশ্বস্ত করেছেন যে, শত্রুরা মুসলিমদের বড় কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
- সামান্য ক্ষতি: কাফেররা শুধু অল্প কিছু যন্ত্রণা দিতে পারে।
- যুদ্ধে পরিণতি: তারা যদি যুদ্ধ করে, তবে পরাজিত হয়ে পালাবে।
- সাহায্য বঞ্চিত: আল্লাহর সাহায্য তাদের জন্য নেই, তাই তারা কখনো সফল হবে না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও শত্রুরা মুসলমানদের দুর্বল করতে চায়, কিন্তু আল্লাহর সাহায্য থাকলে তারা সফল হতে পারবে না।
- মুমিনদের শুধু ঈমান ও তাকওয়া শক্তিশালী রাখতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া শত্রুরা সফল হতে পারে না।
- মুমিনদের জন্য ভয় করার কিছু নেই, তারা আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে।
- শত্রুদের পরিণতি সবসময় পরাজয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের উচিত সবসময় আল্লাহর ওপর ভরসা করা।
- শত্রুরা যতই চেষ্টা করুক, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তারা ক্ষতি করতে পারবে না।
- আল্লাহর সাহায্যই প্রকৃত শক্তি।
এই আয়াতে বনী ইসরাঈলের পরিণতির বর্ণনা করা হয়েছে।
- লাঞ্ছনা: তারা যেখানেই থাকুক, সর্বত্র লাঞ্ছনা তাদের ঘিরে ধরে।
- চুক্তি ব্যতীত নিরাপত্তা নেই: আল্লাহ বা মানুষের সাথে চুক্তি থাকলেই সাময়িক নিরাপত্তা পায়।
- আল্লাহর গজব: তাদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ নাযিল হয়েছে।
- কারণ: তারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করেছে এবং নবীদেরকে হত্যা করেছে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও যারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে, তারা লাঞ্ছনার শিকার হয়।
- দুনিয়ার ক্ষমতা বা সম্পদ থাকলেও প্রকৃত নিরাপত্তা আল্লাহর কাছেই।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর দ্বীন অস্বীকার করলে লাঞ্ছনা অবধারিত।
- নবীদের অবমাননা ও হত্যা চরম অপরাধ।
- আল্লাহর গজব মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান আনা অপরিহার্য।
- নবীদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা ঈমানের অংশ।
- অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন মানুষের পতনের কারণ।
এখানে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে আহলে কিতাবদের সবাই একই রকম নয়। তাদের মধ্যেও কিছু লোক সত্যের অনুসারী ছিল।
- ভেদাভেদ: সবাই গোমরাহ নয়; কিছু লোক ঈমান ও ইবাদতে নিয়োজিত।
- কুরআন তিলাওয়াত: তারা আল্লাহর আয়াত পাঠ করে।
- রাতের ইবাদত: তারা রাতের বেলা নামাজ ও সিজদায় নিয়োজিত থাকে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও কিছু মানুষ সত্যকে আঁকড়ে ধরে, যদিও তাদের সমাজে সংখ্যায় কম।
- রাতের ইবাদত মুমিনের ঈমান দৃঢ় করার বড় মাধ্যম।
মূল শিক্ষা:
- সবাইকে এক কাতারে ফেলা যায় না; নেককার ও গোমরাহ আলাদা।
- রাতের ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম উপায়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের উচিত আল্লাহর আয়াতের তিলাওয়াত ও রাতের ইবাদতে নিয়োজিত হওয়া।
- সত্য অনুসারীদের আল্লাহ সর্বদা মর্যাদা দেন।
- সমাজে ভালো মানুষ সবসময় থাকে, তাদের অনুসরণ করা জরুরি।
আল্লাহ আহলে কিতাবদের মধ্যকার নেককারদের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, যারা সত্যের অনুসারী ছিল।
- ঈমান: তারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখত।
- সৎকাজের নির্দেশ: তারা মানুষকে নেক কাজ করতে উৎসাহিত করত।
- অসৎকাজ থেকে বিরত রাখা: তারা অন্যায় ও পাপকাজ থেকে বিরত করত।
- কল্যাণে দ্রুততা: তারা প্রতিযোগিতা করত সৎকাজে অগ্রসর হতে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজকের মুসলমানদেরও এ গুণাবলী অর্জন করা উচিত—ঈমান, দাওয়াত ও কল্যাণে অগ্রসর হওয়া।
- সমাজে ভালো পরিবর্তন আনতে হলে সৎকাজ প্রচার এবং মন্দ কাজ দমন করতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- সত্যিকার নেককাররা কেবল নামমাত্র নয়, বরং কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ করে।
- সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎকাজ দমন উম্মাহর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
- কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতা করা মুমিনের গুণ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ঈমান শুধু মুখে নয়, আমলে প্রকাশ করতে হবে।
- মুমিনকে সর্বদা সৎকাজে অগ্রণী হতে হবে।
- যারা এ গুণাবলী অর্জন করে, তারাই আল্লাহর কাছে সৎকর্মশীল।
আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে তাঁর পথে করা কোনো সৎকাজই বৃথা যায় না। বিশেষত মুত্তাকীরা এর পূর্ণ প্রতিদান পাবে।
- সৎকাজ বৃথা নয়: যে-ই সৎকাজ করবে, আল্লাহ তা নষ্ট হতে দেবেন না।
- মুত্তাকীদের মর্যাদা: তাকওয়াবানদের প্রতিটি কাজ আল্লাহর কাছে মূল্যবান।
- আল্লাহর সর্বজ্ঞতা: তিনি সবকিছু জানেন—মানুষের অন্তর ও নিয়তও।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজকের দিনে অনেকেই ভাবে ছোটখাটো কাজের মূল্য নেই, অথচ আল্লাহর কাছে প্রতিটি সৎকাজের মূল্য আছে।
- সৎকাজ কখনো মানুষ বুঝুক বা না বুঝুক, আল্লাহ অবশ্যই জানেন ও পুরস্কৃত করবেন।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর পথে করা কোনো সৎকাজই বৃথা যায় না।
- তাকওয়া সৎকাজ গ্রহণের শর্ত।
- আল্লাহ সবকিছু দেখেন, তাই গোপন কাজও পুরস্কৃত হবে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- প্রত্যেক সৎকাজ করার অভ্যাস গড়তে হবে।
- তাকওয়াই সৎকাজের আসল মূল্য।
- আল্লাহ সর্বজ্ঞ, তাই নিয়ত খাঁটি রাখতে হবে।
আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেন যে কুফরির কারণে দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও সন্তান আখিরাতে কোনো উপকারে আসবে না।
- সম্পদের অসারতা: দুনিয়ার ধন-সম্পদ কুফরি থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
- সন্তানের অসহায়তা: সন্তান-সন্ততি আখিরাতে কাউকে মুক্তি দিতে পারবে না।
- চিরন্তন শাস্তি: কাফেররা জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা হবে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষ সম্পদ ও পরিবার নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু এগুলো ঈমান ছাড়া আখিরাতে কোনো মূল্য রাখবে না।
- কেবল ঈমানই মানুষকে আখিরাতের শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে।
মূল শিক্ষা:
- কুফরির পরিণতি হলো জাহান্নাম।
- দুনিয়ার সম্পদ ও সন্তান আখিরাতে কোনো কাজে আসবে না।
- আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে ঈমান অপরিহার্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সম্পদ ও পরিবারে নয়, বরং ঈমানেই মুক্তি।
- কুফরি থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য।
- আল্লাহর কাছে ঈমানই প্রকৃত মূলধন।
এ আয়াতে আল্লাহ কাফেরদের দুনিয়ার ব্যয়ের অসারতা বর্ণনা করেছেন।
- ব্যয়ের উদাহরণ: তাদের দান-খয়রাত শীতল বাতাসে ক্ষেত ধ্বংস হওয়ার মতো নিস্ফল।
- নিজেদের জুলুম: তারা ঈমানহীনতার মাধ্যমে নিজেদের সর্বনাশ করেছে।
- আল্লাহর ন্যায়বিচার: আল্লাহ কখনো জুলুম করেন না, মানুষ নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ অনেকে ভালো কাজ করলেও ঈমান ছাড়া তা আখিরাতে কোনো উপকার দেবে না।
- সৎকাজ গ্রহণযোগ্য হতে হলে ঈমান ও সঠিক নিয়ত থাকা জরুরি।
মূল শিক্ষা:
- কুফরির সঙ্গে কোনো সৎকাজই কবুল হয় না।
- আল্লাহ কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেন না।
- নিজেদের কাজের কারণেই মানুষ ধ্বংস হয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সৎকাজের জন্য ঈমান অপরিহার্য।
- মানুষকে নিজের অন্যায় থেকে বাঁচতে হবে।
- আল্লাহর ন্যায়বিচার সর্বদা প্রতিষ্ঠিত।
আল্লাহ মুমিনদের সতর্ক করছেন যাতে তারা শত্রুকে অন্তরঙ্গ বন্ধু না বানায়।
- অন্তরঙ্গ বন্ধু: মুমিনদের বাইরে কাউকে অন্তরের সঙ্গী করা যাবে না।
- শত্রুর মনোভাব: তারা সর্বদা মুসলমানদের ক্ষতি চায়।
- অন্তরের বিদ্বেষ: মুখে যা বলে তার চেয়েও বড় বিদ্বেষ তাদের অন্তরে লুকিয়ে আছে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলমানরা প্রায়ই শত্রুকে বন্ধু বানিয়ে নেয়, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- শত্রুর প্রকৃত উদ্দেশ্য বোঝা জরুরি।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের কেবল মুমিনদের সাথেই অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করা উচিত।
- শত্রুর অন্তরের বিদ্বেষ মুখোশের আড়ালে লুকানো থাকে।
- আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে সবকিছু স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।
- শত্রুকে বন্ধু বানালে ক্ষতি অনিবার্য।
- আল্লাহর আয়াতের হিদায়াত অনুসরণ করলে প্রতারণা থেকে বাঁচা যায়।
এই আয়াতে মুমিনদের প্রতি মুনাফিক ও শত্রুর প্রকৃত মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে।
- একতরফা ভালোবাসা: মুসলমানরা তাদের প্রতি সদ্ভাব পোষণ করলেও তারা মুসলমানদের ভালোবাসে না।
- মুখে ঈমান: সামনে এসে তারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি।’
- অন্তরের ঘৃণা: একান্তে তারা মুসলমানদের প্রতি প্রবল ঘৃণা পোষণ করে।
- আল্লাহর জ্ঞান: আল্লাহ অন্তরের গোপন ঘৃণাও জানেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মুসলমানরা অনেক সময় শত্রুর প্রতি অকারণে ভালোবাসা দেখায়।
- শত্রুরা মুখে বন্ধুত্বের ভান করে, কিন্তু অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করে।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের শত্রুর অন্তরের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
- আল্লাহই অন্তরের খবর জানেন।
- শত্রুর ক্রোধ ও বিদ্বেষ মুমিনদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, যদি তারা ঈমানদার হয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- শত্রুর মুখোশে প্রতারিত হওয়া যাবে না।
- মুমিনদের ভালোবাসা শুধু মুমিনদের জন্যই হওয়া উচিত।
- আল্লাহ অন্তরের গোপনীয়তা অবগত, তাই আন্তরিক ঈমান রাখতে হবে।
এ আয়াতে মুসলিমদের শত্রুর মানসিকতা ও মোকাবিলার পথ দেখানো হয়েছে।
- শত্রুর হিংসা: মুসলমানদের ভালো হলে তারা কষ্ট পায়।
- আনন্দ: মুসলমানদের বিপদে পড়লে তারা আনন্দিত হয়।
- মুমিনের অস্ত্র: ধৈর্য ও তাকওয়া—এ দুটি থাকলে শত্রুর ষড়যন্ত্র কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
- আল্লাহর জ্ঞান: আল্লাহ তাদের সব কাজ সম্পর্কে অবগত।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মুসলমানদের উন্নতি হলে শত্রুরা হিংসা করে।
- কোনো বিপদ এলে তারা আনন্দিত হয়।
- তবে ধৈর্য ও তাকওয়া থাকলে মুসলিম উম্মাহ অক্ষত থাকবে।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের ধৈর্য ও তাকওয়া শত্রুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী ঢাল।
- শত্রুর ষড়যন্ত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কার্যকর হয় না।
- আল্লাহ সর্বদা সবকিছু ঘিরে রেখেছেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ধৈর্য ও তাকওয়া অর্জন করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
- শত্রুর ষড়যন্ত্রে ভীত হওয়ার কিছু নেই।
- আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হলেই নিরাপত্তা নিশ্চিত।
এই আয়াতে উহুদ যুদ্ধের সূচনা প্রসঙ্গ বর্ণনা করা হয়েছে।
- রাসূল ﷺ এর পরিকল্পনা: তিনি মুমিনদের যুদ্ধের জন্য বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করাচ্ছিলেন।
- সুশৃঙ্খল প্রস্তুতি: যুদ্ধের আগে সঠিক পরিকল্পনা করা ইসলামি কৌশলের অংশ।
- আল্লাহর জ্ঞান: আল্লাহ সব শুনেন ও জানেন—রাসূল ﷺ এবং সাহাবাদের প্রচেষ্টা ও নিয়ত।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- যেকোনো সংগ্রামে সুশৃঙ্খল প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা অপরিহার্য।
- আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য আন্তরিক নিয়ত ও সঠিক পদক্ষেপ জরুরি।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের কাজ হলো পরিকল্পনা ও চেষ্টা করা, বিজয় আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।
- আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ, তাই নিয়ত ও কর্ম উভয়ই হতে হবে খাঁটি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- যেকোনো কাজের আগে সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা করতে হবে।
- আল্লাহ সবকিছু জানেন—অতএব আন্তরিক হতে হবে।
- বিজয়ের জন্য শুধু বাহ্যিক শক্তি নয়, আল্লাহর ওপর নির্ভর করাও জরুরি।
এই আয়াত উহুদ যুদ্ধের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, যেখানে মুসলমানদের দুইটি দল দুর্বল হয়ে পড়তে চেয়েছিল।
- দুই দল: আওস ও খাজরাজ গোত্রের কিছু মানুষ ভয় পেয়ে সরে যেতে চেয়েছিল।
- আল্লাহর সহায়তা: আল্লাহ তাদেরকে স্থির রেখেছিলেন।
- মুমিনের ভরসা: সত্যিকার মুমিনের জন্য একমাত্র ভরসার স্থান আল্লাহ।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- যে কোনো পরীক্ষার সময় ভয় ও দুর্বলতা দেখা দেয়, কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলে স্থির থাকা যায়।
- মুমিনদের সব কাজে আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- দুর্বলতা মুমিনের স্বভাব নয়, বরং ভরসা হলো আল্লাহ।
- আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সহায় হলে তারা কখনো হারবে না।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ভয় পেলেও আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে।
- ঈমান দুর্বল হলেও আল্লাহর সাহায্য মুমিনকে শক্তিশালী করে।
- আল্লাহর ওপর ভরসা করা মুমিনের আসল বৈশিষ্ট্য।
এখানে বদরের যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে মুসলমানদের সাহস জোগানো হয়েছে।
- বদরের সাহায্য: মুসলমানরা অল্পসংখ্যক ও দুর্বল ছিল, তবুও আল্লাহর সাহায্যে তারা বিজয়ী হয়।
- আল্লাহর শক্তি: বাহ্যিক শক্তি নয়, আল্লাহর সাহায্যই আসল বিজয়ের কারণ।
- তাকওয়া ও কৃতজ্ঞতা: মুমিনদের তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে এবং আল্লাহর সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞ হতে হবে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলমানরা দুর্বল মনে হলেও আল্লাহর সাহায্য পেলে বিজয়ী হতে পারে।
- শক্তি নয়, তাকওয়া ও আল্লাহর সাহায্যই আসল সম্বল।
মূল শিক্ষা:
- বিজয় আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।
- দুর্বল অবস্থাতেও আল্লাহর সাহায্যে মুমিনরা শক্তিশালী হয়।
- তাকওয়া ও কৃতজ্ঞতা মুমিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর সাহায্যের ওপর পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
- প্রত্যেক পরিস্থিতিতে তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে।
- আল্লাহর নিয়ামতের জন্য সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।
বদরের যুদ্ধের সময় রাসূল ﷺ সাহাবীদেরকে আল্লাহর সাহায্যের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।
- সাহায্যের প্রতিশ্রুতি: আল্লাহ তিন হাজার ফেরেশতা নাযিল করে মুমিনদের সাহায্য করবেন বলে সুসংবাদ দেন।
- মুমিনদের সাহস বৃদ্ধি: দুর্বল অবস্থায় এই খবর সাহাবীদের অন্তরে সাহস জাগায়।
- আল্লাহর সাহায্য: বিজয় বাহিনীর সংখ্যা নয়, বরং আল্লাহর সাহায্যের ফল।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলমানরা দুর্বল হলেও আল্লাহর সাহায্য পেলে বিজয়ী হতে পারে।
- আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য তাকওয়া ও ঈমান অপরিহার্য।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর সাহায্যই মুমিনদের প্রকৃত শক্তি।
- দুর্বলতা সত্ত্বেও মুমিনরা সাহসী হয় আল্লাহর ওপর ভরসা করলে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- বিজয়ের জন্য আল্লাহর সাহায্য অপরিহার্য।
- মুমিনদের সবসময় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।
- সংখ্যা ও শক্তি নয়, ঈমানই আসল শক্তি।
বদরের যুদ্ধে আল্লাহ মুসলমানদের প্রতিশ্রুতি দেন যে ধৈর্য ও তাকওয়ার মাধ্যমে তারা ফেরেশতাদের সাহায্য পাবে।
- ধৈর্য ও তাকওয়া: আল্লাহর সাহায্য লাভের শর্ত।
- ফেরেশতার সাহায্য: পাঁচ হাজার ফেরেশতা বিশেষ চিহ্ন নিয়ে মুসলমানদের সহযোগিতা করেন।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি: এটি ছিল মুমিনদের জন্য বড় সুসংবাদ ও সাহসের উৎস।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মুমিনরা ধৈর্য ও তাকওয়া অবলম্বন করলে আল্লাহর সাহায্য লাভ করতে পারে।
- শত্রু সংখ্যা ও শক্তিতে বড় হলেও আল্লাহর সাহায্যই মুমিনদের বিজয়ী করে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে ধৈর্য ও তাকওয়া অপরিহার্য।
- ফেরেশতাদের সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য ছিল।
- সংখ্যা নয়, ঈমান ও আল্লাহর সাহায্যই বিজয়ের মূল চাবিকাঠি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- ধৈর্য ও তাকওয়া ছাড়া মুমিন সফল হতে পারে না।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতিতে পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
- কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহর সাহায্য অবধারিত।
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে ফেরেশতাদের আগমন ছিল মূলত মুসলমানদের সাহস জাগানোর জন্য।
- সুসংবাদ: ফেরেশতাদের সাহায্যের ঘোষণা ছিল মুসলমানদের অন্তরে স্বস্তি দেওয়ার জন্য।
- আসল সাহায্য: বিজয় আসে কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে।
- আল্লাহর গুণ: তিনি পরাক্রমশালী এবং সর্বজ্ঞ, তাই তাঁর সাহায্যই সর্বশ্রেষ্ঠ।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও মুমিনদের সাহস ও অন্তরের শান্তি আল্লাহর প্রতিশ্রুতিতেই নিহিত।
- যে কোনো বিজয় বা সফলতা কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।
মূল শিক্ষা:
- ফেরেশতাদের আগমন মূলত মনোবল বাড়ানোর জন্য ছিল।
- বিজয় আল্লাহর কাছ থেকেই আসে, বাহ্যিক শক্তি থেকে নয়।
- আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সাহায্যের জন্য আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
- বাহ্যিক উপকরণ কেবল মাধ্যম, আসল শক্তি আল্লাহর সাহায্য।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি আনে।
আল্লাহর সাহায্যের উদ্দেশ্য এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে—কাফেরদের শক্তি ভেঙে দেওয়া।
- ধ্বংস: শত্রুদের এক অংশ ধ্বংস হবে।
- অপমান: অন্য অংশকে অপমানিত করা হবে।
- ব্যর্থতা: তারা উদ্দেশ্যে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও আল্লাহর সাহায্যে শত্রুরা অপমানিত ও ব্যর্থ হয়।
- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মুসলিমরা দুর্বল, কিন্তু তাঁর সাহায্যে শত্রুরা পরাজিত হয়।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ শত্রুকে ধ্বংস ও অপমানিত করতে সক্ষম।
- মুমিনদের বিজয় শত্রুর ব্যর্থতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের সবসময় আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
- শত্রুর ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
- বিজয় কেবল আল্লাহর ইচ্ছায় আসে।
এ আয়াত উহুদ যুদ্ধের প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে, যখন নবী ﷺ কিছু শত্রুর জন্য অভিশাপ করতে চেয়েছিলেন।
- আল্লাহর এখতিয়ার: কারো হিদায়াত বা শাস্তির ক্ষমতা কেবল আল্লাহর হাতে।
- তওবা: আল্লাহ চাইলে কাফেরদেরও তওবা কবুল করতে পারেন।
- শাস্তি: আবার চাইলে তাদের শাস্তি দেবেন, কারণ তারা জালিম।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- মানুষ কারো পরিণতি নির্ধারণ করতে পারে না, এটি আল্লাহর এখতিয়ার।
- আজও অনেক জালিম মানুষ তওবা করলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করতে পারেন।
মূল শিক্ষা:
- কারো হিদায়াত বা আজাব দেওয়া সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে।
- আল্লাহর দয়া ও গজব উভয়ই রয়েছে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মানুষকে কখনো হতাশ করা যাবে না, কারণ আল্লাহ চাইলে তাকে হিদায়াত দিতে পারেন।
- আল্লাহ জালিমদেরকে চাইলে শাস্তি দেবেন, চাইলে ক্ষমা করবেন।
- সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
এখানে আল্লাহর সর্বময় মালিকানা ও ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে।
- মালিকানা: আসমান-জমিনের সবকিছু আল্লাহর।
- ক্ষমা: তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।
- শাস্তি: যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন, কারণ সবকিছু তাঁর অধীনে।
- গুণাবলী: আল্লাহ গফুর (ক্ষমাশীল) ও রহীম (দয়ালু)।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- মানুষ যতোই শক্তিশালী হোক, সবকিছু আল্লাহর হাতে।
- আল্লাহর রহমতের দরজা সর্বদা খোলা, তাই তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
মূল শিক্ষা:
- আসমান-জমিনের সব কিছুর মালিক আল্লাহ।
- ক্ষমা ও শাস্তি দেওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর।
- আল্লাহর গুণাবলী হলো ক্ষমা ও দয়া।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- তওবা করে আল্লাহর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
- আল্লাহর দয়া ও গজব উভয়কেই মনে রাখতে হবে।
- মানুষের পরিণতি কেবল আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
এ আয়াতে সুদ ভক্ষণের কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
- সুদ: সুদকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে খাওয়া ছিল জাহেলিয়াত যুগের প্রচলিত রীতি।
- নিষেধাজ্ঞা: ইসলাম একে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছে।
- তাকওয়া: সুদ থেকে বাঁচা ও আল্লাহকে ভয় করাই মুক্তির পথ।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সুদ বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- মুসলমানদের উচিত এ থেকে বাঁচার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
মূল শিক্ষা:
- সুদ খাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
- তাকওয়া অবলম্বন করলে সফলতা অর্জিত হয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সুদ থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য।
- সফলতার জন্য আল্লাহভীতি জরুরি।
- আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে ক্ষতি অনিবার্য।
এখানে মুমিনদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যেন তারা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের রক্ষা করে।
- আল্লাহভীতি: তাকওয়া অবলম্বন করলে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- আগুন: এটি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত, তবে মুমিনরা গুনাহ করলে তারাও শাস্তি পেতে পারে।
- সতর্কতা: ঈমান ও সৎকর্মই জাহান্নাম থেকে রক্ষার একমাত্র উপায়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষ দুনিয়ার আগুনকে ভয় করে, অথচ আখিরাতের আগুনকে ভুলে যায়।
- মুমিনদের উচিত সর্বদা গুনাহ থেকে বাঁচা এবং তাকওয়ায় জীবন যাপন করা।
মূল শিক্ষা:
- জাহান্নামের আগুন বাস্তব এবং তা ভয় করা আবশ্যক।
- তাকওয়া অবলম্বনই মুক্তির পথ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে।
- মুমিনকে আল্লাহভীতির মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হবে।
- সত্যিকার মুক্তি হলো আখিরাতের আগুন থেকে মুক্তি।
এখানে মুক্তি ও রহমত লাভের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে।
- আল্লাহর আনুগত্য: তাঁর সকল আদেশ পালন করা।
- রাসূলের আনুগত্য: নবী ﷺ এর নির্দেশ অনুসরণ করা।
- ফলাফল: এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও সফলতা লাভ করতে হলে আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর আনুগত্য জরুরি।
- আল্লাহর দয়া পেতে হলে জীবনকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সাজাতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর আনুগত্য ছাড়া রহমত পাওয়া যায় না।
- মুমিনদের জন্য আনুগত্যই মুক্তির পথ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর আদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- রাসূল ﷺ এর জীবন ও আদর্শ অনুসরণ করা আবশ্যক।
- রহমত ও সফলতার মূল শর্ত আনুগত্য।
আল্লাহ মুমিনদেরকে দ্রুত তাঁর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।
- ক্ষমার দিকে দৌড়ানো: গুনাহ থেকে বাঁচা ও তওবা করার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা অর্জন।
- জান্নাত: যার বিশালতা আসমান ও জমিনের সমান।
- মুত্তাকীদের জন্য: তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষ দুনিয়ার দৌড়ে ব্যস্ত, অথচ আখিরাতের দৌড়ের দিকে মনোযোগ দেয় না।
- মুমিনের জীবনের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত অর্জন।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর ক্ষমা লাভে তাড়াহুড়ো করা উচিত।
- জান্নাতের বিশালতা আসমান-জমিনের মতো।
- জান্নাত কেবল তাকওয়াবানদের জন্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- তওবা ও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা চাওয়া জরুরি।
- জান্নাতের জন্য দুনিয়ার দৌড়কে আখিরাতমুখী করতে হবে।
- তাকওয়া জান্নাতের চাবিকাঠি।
এখানে মুত্তাকীদের কয়েকটি মহান গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
- ব্যয়: তারা সুখে-দুঃখে আল্লাহর পথে দান করে।
- রাগ দমন: নিজের রাগকে সংযত রাখে।
- ক্ষমাশীলতা: মানুষকে ক্ষমা করে দেয়।
- আল্লাহর ভালোবাসা: এ ধরনের সৎকর্মশীলদের আল্লাহ ভালোবাসেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ দান-সদকা প্রায়শই স্বার্থের কারণে হয়, অথচ আসল দান হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
- রাগ দমন না করার কারণে অনেক ঝগড়া ও অন্যায় ঘটে।
- মানুষকে ক্ষমা করা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।
মূল শিক্ষা:
- সুখ-দুঃখ নির্বিশেষে আল্লাহর পথে ব্যয় করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
- রাগ দমন করা বড় গুণ।
- ক্ষমাশীল হওয়া আল্লাহর প্রিয় কাজ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- দান-সদকা সর্বাবস্থায় করা উচিত।
- রাগ নিয়ন্ত্রণ করা মুমিনের শক্তি।
- মানুষকে ক্ষমা করা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পথ।
এ আয়াতে সত্যিকার মুত্তাকীদের আরেকটি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে।
- পাপ সংঘটন: তারা মাঝে মাঝে গুনাহ করে ফেললেও।
- আল্লাহকে স্মরণ: সাথে সাথে আল্লাহকে মনে করে তওবা করে।
- ক্ষমা প্রার্থনা: আল্লাহর কাছেই পাপের ক্ষমা চায়।
- অবিচল না থাকা: জেনে-বুঝে পাপের ওপর স্থির থাকে না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষ প্রায়ই গুনাহ করে, তবে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা হলো আসল বৈশিষ্ট্য।
- সত্যিকার মুমিন গুনাহ করলে হতাশ হয় না, বরং সাথে সাথে তওবা করে।
মূল শিক্ষা:
- মুমিন পাপমুক্ত নয়, তবে তারা দ্রুত তওবা করে।
- আল্লাহ ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।
- জেনে-বুঝে গুনাহের ওপর অবিচল থাকা মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্য নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- গুনাহ করলে দ্রুত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
- আল্লাহর রহমতে কখনো হতাশ হওয়া যাবে না।
- পাপের ওপর স্থায়ী হওয়া বড় গুনাহ।
এখানে সেই মুত্তাকীদের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে, যারা গুনাহ করলে দ্রুত তওবা করে।
- ক্ষমা: আল্লাহ তাদের পাপ ক্ষমা করবেন।
- জান্নাত: নদী প্রবাহিত হবে তাদের বাগানে, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
- অতুলনীয় প্রতিদান: এটাই সৎকর্মশীলদের জন্য সর্বোত্তম প্রতিদান।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজকের মুমিনদের জন্য আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতই সর্বোচ্চ লক্ষ্য।
- তওবা ও সৎকাজের মাধ্যমে এ পুরস্কার অর্জন করা সম্ভব।
মূল শিক্ষা:
- তওবা ও সৎকাজ মুত্তাকীদের জান্নাতের যোগ্য করে।
- আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতই সৎকর্মশীলদের সর্বোত্তম প্রতিদান।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- পাপ করলে দ্রুত তওবা করতে হবে।
- সৎকাজের প্রতি অটল থাকতে হবে।
- জান্নাত হলো প্রকৃত সফলতা, যার নিচে নদী প্রবাহিত।
এখানে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
- পূর্বের জাতি: অনেক জাতি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে ধ্বংস হয়েছে।
- ভ্রমণ: দুনিয়ার ভ্রমণে এসব নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।
- পরিণতি: যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে, তাদের শেষ পরিণতি ধ্বংস।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজও ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির নিদর্শন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়।
- মানুষকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বাঁচা উচিত।
মূল শিক্ষা:
- ইতিহাস মুমিনদের জন্য শিক্ষণীয়।
- অবাধ্য জাতির পরিণতি সর্বদা ধ্বংস।
- আল্লাহর নিয়ম কখনো পরিবর্তিত হয় না।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- পৃথিবীতে ভ্রমণ করে শিক্ষা নিতে হবে।
- অবাধ্যদের পরিণতি দেখে ঈমান শক্ত করতে হবে।
- আল্লাহর নির্দেশ মানাই মুক্তির পথ।
এই আয়াতে কুরআনের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে।
- বায়ান: এটি মানুষের জন্য স্পষ্ট বাণী, যাতে তারা সঠিক পথ বুঝতে পারে।
- হেদায়াত: মুত্তাকীদের জন্য এটি পথনির্দেশ।
- উপদেশ: আল্লাহকে ভয় করা ব্যক্তিদের জন্য কুরআন হচ্ছে উপদেশ ও শিক্ষার উৎস।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষ বিভ্রান্তির মাঝে রয়েছে, কুরআনই তাদের জন্য স্পষ্ট দিকনির্দেশ।
- যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য কুরআন প্রতিটি পদক্ষেপে আলো।
মূল শিক্ষা:
- কুরআন মানুষের জন্য স্পষ্ট শিক্ষা।
- তাকওয়াবানদের জন্য এটি হেদায়াত ও উপদেশ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কুরআনের আলোকে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
- তাকওয়া অবলম্বনকারীরা কুরআনের প্রকৃত উপকারিতা লাভ করে।
- কুরআন শুধু পাঠ নয়, বরং বোঝা ও আমল করা জরুরি।
এ আয়াতে মুসলমানদের মনোবল শক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- দুর্বল না হওয়া: ঈমানদারদের দুর্বল হওয়া উচিত নয়।
- দুঃখ না করা: বিপদ-আপদে হতাশ হওয়া যাবে না।
- উচ্চ মর্যাদা: ঈমানদাররাই প্রকৃত বিজয়ী ও শ্রেষ্ঠ।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলিম উম্মাহ নানা সংকটে আছে, তবুও হতাশ হওয়া যাবে না।
- ঈমান থাকলে মুসলমানরাই শেষ পর্যন্ত মর্যাদাবান।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের দুর্বলতা ও হতাশা মানায় না।
- ঈমানই প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- বিপদে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।
- হতাশা ও দুর্বলতা ঈমানদারদের জন্য নয়।
- ঈমানই প্রকৃত শক্তি ও মর্যাদার উৎস।
এ আয়াত উহুদ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে, যেখানে মুসলমানরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল।
- ক্ষত-বিক্ষত হওয়া: মুসলমানরা যেমন কষ্ট পেয়েছে, তেমনি কাফেরেরাও কষ্ট পেয়েছে।
- দিনের পালাবদল: বিজয়-পরাজয় পালাক্রমে হয়, যাতে মানুষ শিক্ষা নেয়।
- শহীদ: আল্লাহ মুমিনদের মধ্য থেকে শহীদ নির্বাচন করেন।
- জালিমদের প্রতি অসন্তোষ: আল্লাহ জালিমদের ভালোবাসেন না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলমানরা বিপদে পড়লেও এটি শিক্ষা ও পরীক্ষার অংশ।
- আল্লাহর পথে প্রাণ বিসর্জন শহীদের মর্যাদা এনে দেয়।
মূল শিক্ষা:
- বিজয়-পরাজয় আল্লাহর পরীক্ষা।
- মুমিনদের ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।
- শহীদ হওয়া মুমিনদের জন্য সর্বোচ্চ মর্যাদা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কষ্টে হতাশ হওয়া যাবে না।
- আল্লাহর পরীক্ষার মাধ্যমে সত্যিকার ঈমানদাররা চিহ্নিত হয়।
- আল্লাহ জালিমদের ভালোবাসেন না, তাই অন্যায় থেকে দূরে থাকতে হবে।
এ আয়াতে মুমিনদের বিপদ-আপদ ও পরীক্ষার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে।
- পরিশুদ্ধকরণ: মুমিনরা কষ্টের মাধ্যমে গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ হয়।
- কাফেরদের ধ্বংস: আল্লাহ তাদেরকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যান।
- পরীক্ষার হিকমত: পরীক্ষার মাধ্যমে মুমিন ও কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলমানরা বিপদে পড়লেও এসব বিপদ তাদের জন্য গুনাহ মাফের কারণ হতে পারে।
- কাফেরদের দুনিয়ার শক্তি শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের কষ্ট তাদের গুনাহ মাফের উপায়।
- কাফেরদের পরিণতি ধ্বংস।
- আল্লাহ মুমিনদের পরিশুদ্ধ করে থাকেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কষ্টে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
- আল্লাহর পরীক্ষা মুমিনদের জন্য কল্যাণকর।
- কাফেরদের পরিণতি ধ্বংস, তাই ঈমানের ওপর দৃঢ় থাকতে হবে।
এ আয়াতে জান্নাত লাভের শর্ত ও পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে।
- জান্নাত: শুধু দাবি করলেই জান্নাত পাওয়া যায় না।
- জিহাদ: আল্লাহর পথে সংগ্রামকারীরা প্রকৃত জান্নাতের যোগ্য।
- ধৈর্য: মুমিনদের ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহ পরীক্ষা নেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পথে সংগ্রাম হলো দ্বীনের জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা।
- কঠিন সময়ে ধৈর্যশীল থাকাই জান্নাতের উপযুক্ততার নিদর্শন।
মূল শিক্ষা:
- জান্নাত লাভ সহজ নয়; পরীক্ষা ও সংগ্রামের মাধ্যমে এটি অর্জন করতে হয়।
- আল্লাহ প্রকৃত মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদের জান্নাত দান করবেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- কষ্ট ও সংগ্রামে ধৈর্যশীল থাকা অপরিহার্য।
- জান্নাতের আশায় শুধু কথার দাবি যথেষ্ট নয়, আমল প্রয়োজন।
- আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করে প্রকৃত ঈমানদারদের আলাদা করেন।
এই আয়াতে উহুদ যুদ্ধের প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে। মুসলমানরা শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিল, কিন্তু বাস্তবে যখন যুদ্ধ ও মৃত্যু সামনে এলো তখন তাদের ভয় দেখা দিল।
- মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা: মুমিনরা পূর্বে শহীদির আকাঙ্ক্ষা করেছিল।
- বাস্তব সম্মুখীন হওয়া: যখন তা সামনে এলো, তখন তারা চোখে দেখল।
- পরীক্ষা: আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য আল্লাহ প্রকাশ করলেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- মানুষ প্রায়ই বড় কাজের আশা করে, কিন্তু বাস্তবে তা করলে কষ্ট ও ভয় আসে।
- আল্লাহর পথে কাজ করার জন্য শুধু আকাঙ্ক্ষা নয়, বাস্তবে ধৈর্যও জরুরি।
মূল শিক্ষা:
- শহীদির আকাঙ্ক্ষা মহৎ, কিন্তু বাস্তব পরীক্ষাই আসল।
- আল্লাহ মানুষকে বাস্তবতার মাধ্যমে পরীক্ষা করেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- শুধু ইচ্ছা নয়, কর্মই ঈমানের প্রমাণ।
- মৃত্যু ও পরীক্ষা বাস্তব সত্য, তা থেকে পলায়ন করা যায় না।
- আল্লাহর পথে ধৈর্যশীল হতে হবে।
এই আয়াত মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশাল শিক্ষা। এটি নাযিল হয়েছিল উহুদ যুদ্ধ-এর সময়, যখন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে রাসূলুল্লাহ ﷺ শহীদ হয়েছেন। এতে অনেক সাহাবী দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করে বুঝিয়ে দেন যে ইসলামের ভিত্তি শুধুমাত্র কোনো নবী বা রাসুলদের (আঃ) জীবিত থাকার ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং এটি আল্লাহর দীন, যা কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।
- রাসূল ﷺ মানুষ: তিনি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হলেও মানুষ। পূর্ববর্তী নবীদের মতো তাকেও মৃত্যুবরণ করতে হবে।
- আসল পরীক্ষা: রাসূল ﷺ মৃত্যুবরণ করলে বা শহীদ হলে, মুসলমানদের ঈমান অবিচল থাকতে হবে।
- আল্লাহ চিরঞ্জীব: রাসূল ﷺ ইন্তেকাল করবেন, কিন্তু আল্লাহ কখনো মরবেন না।
- কৃতজ্ঞদের পুরস্কার: যারা আল্লাহর দীন আঁকড়ে ধরে থাকবে, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হবে।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
রাসূল ﷺ ইন্তেকাল করার পর অনেক সাহাবী স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। উমর ইবনুল খাত্তাব রা. তলোয়ার হাতে বলছিলেন: “যে বলবে নবী ﷺ ইন্তেকাল করেছেন, আমি তাকে হত্যা করব। তিনি মারা যাননি।”
তখন আবু বকর সিদ্দীক রা. সাহসিকতার সাথে দাঁড়ালেন এবং এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। এতে সাহাবীগণ বাস্তবতায় ফিরে আসেন এবং বুঝলেন যে ইসলাম কোনো নবী বা রাসুলদের (আঃ) জীবিত থাকার সাথে সীমাবদ্ধ নয়।
হাদিস রেফারেন্স:
📖 সাহিহ আল-বুখারি (হাদিস: 1241, কিতাবুল জানায়িজ) হযরত আয়িশা রা. বলেন: > আবু বকর রা. নবী ﷺ–এর ইন্তেকালের পর তাঁর কাছে প্রবেশ করেন, তাঁকে চুম্বন করেন এবং বলেন: > *“হে আল্লাহর নবী ﷺ, আমার বাবা-মা আপনার জন্য কুরবান হোক। আল্লাহ আমাদের ওপর দুটি মৃত্যু একসাথে করবেন না। > আল্লাহ আপনার জন্য যে মৃত্যু নির্ধারণ করেছিলেন, আপনি তা ভোগ করেছেন।”*
তারপর তিনি বাইরে এসে মানুষের উদ্দেশ্যে বললেন: > *“হে মানুষ! যে মুহাম্মাদ ﷺ–কে উপাসনা করত, সে জেনে রাখুক মুহাম্মাদ ﷺ ইন্তেকাল করেছেন। > আর যে আল্লাহকে উপাসনা করে, সে জেনে রাখুক আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মরবেন না।”*
এরপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন: “وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ...”
বর্তমান যুগের শিক্ষা:
- কোনো আলেম, নেতা বা প্রিয় ব্যক্তিত্ব মারা গেলে দ্বীনের কাজ বন্ধ করা যাবে না।
- ইসলাম কোনো ব্যক্তির সাথে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আল্লাহর দীন, যা কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে।
- মুমিনদের উচিত আল্লাহর দীন আঁকড়ে ধরা এবং শোকরগুজার থাকা।
মূল শিক্ষনীয় বিষয়:
- রাসূল ﷺ সর্বশ্রেষ্ঠ হলেও মানুষ, তাঁকেও মৃত্যু স্পর্শ করেছে।
- মুসলিম উম্মাহর ঈমান কখনো কারো জীবন-মৃত্যুর ওপর নির্ভরশীল নয়।
- আল্লাহর দীনকে আঁকড়ে ধরা এবং শোকর করা মুমিনের কর্তব্য।
এখানে মানুষের জীবন-মৃত্যু ও উদ্দেশ্যের কথা স্পষ্ট করা হয়েছে।
- জীবন-মৃত্যু: কোনো প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় নির্ধারিত ও লিখিত।
- দুনিয়ার প্রতিদান: কেউ যদি শুধু দুনিয়ার ফল চায়, আল্লাহ তাকে তা দেন।
- আখিরাতের প্রতিদান: যে আখিরাতকে লক্ষ্য করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন।
- শোকরগুজার: আল্লাহ সর্বদা কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:
- আজ মানুষ দুনিয়ার সাফল্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, অথচ আখিরাতই প্রকৃত পুরস্কারের স্থান।
- আল্লাহর পথে কাজ করলে আখিরাতের বিশাল প্রতিদান মেলে।
মূল শিক্ষা:
- মৃত্যু আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ঘটতে পারে না।
- দুনিয়ার পুরস্কার ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতের পুরস্কার চিরস্থায়ী।
- আল্লাহ শোকরগুজারদের বিশেষ মর্যাদা দেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মৃত্যুর ভয় না করে আল্লাহর পথে কাজ করতে হবে।
- আখিরাতের প্রতিদানকে প্রাধান্য দিতে হবে।
- আল্লাহর নিয়ামতের জন্য সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।
এ আয়াতে মুসলমানদের সাহস জোগানো হয়েছে এবং পূর্ববর্তী নবী ও তাদের অনুসারীদের ধৈর্য ও দৃঢ়তার উদাহরণ দেয়া হয়েছে।
- নবী ও সাহাবীরা: অনেক নবী ও তাদের অনুসারীরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছেন।
- দুর্বল না হওয়া: তারা কষ্ট পেলেও দুর্বল হননি।
- নত না হওয়া: আল্লাহর দ্বীনের জন্য তারা কখনো আত্মসমর্পণ করেননি।
- ধৈর্য: ধৈর্যই ছিল তাদের প্রধান শক্তি।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- মুসলমানদের জন্য দ্বীনের পথে কষ্ট পাওয়া নতুন কিছু নয়।
- পূর্ববর্তী নবী ও তাদের অনুসারীদের মতো আমাদেরও ধৈর্যশীল হতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর পথে দুর্বল হওয়া চলবে না।
- মুমিনদের শক্তি হলো ধৈর্য।
- আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- দ্বীনের জন্য সংগ্রামে ভেঙে পড়া যাবে না।
- সব পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।
- আল্লাহর ভালোবাসা পেতে ধৈর্য অপরিহার্য।
পূর্ববর্তী নবী ও ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তারা বিপদে পড়ে দুর্বল না হয়ে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করতেন।
- ক্ষমা প্রার্থনা: তারা সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে নিজেদের গুনাহ ক্ষমা চাইতেন।
- অতিরিক্ততা ক্ষমা: দ্বীনের কাজে কোথাও ভুল বা গাফেলতি হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন।
- দৃঢ়তা: আল্লাহর দ্বীনের পথে স্থির থাকার দোয়া করতেন।
- সাহায্য প্রার্থনা: কাফেরদের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- মুমিনের প্রথম কাজ হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
- সংগ্রামে সফল হতে হলে দৃঢ়তা ও ধৈর্য জরুরি।
- শত্রুর মোকাবেলায় আল্লাহর সাহায্যই আসল শক্তি।
মূল শিক্ষা:
- গুনাহ ও ভুলের ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি।
- আল্লাহর দ্বীনের পথে দৃঢ়তার জন্য দোয়া করতে হবে।
- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া বিজয় সম্ভব নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- দোয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
- কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
- পাপমুক্তি, দৃঢ়তা ও বিজয়—সবই আল্লাহর দান।
পূর্ববর্তী আয়াতে মুমিনদের দোয়া ও দৃঢ়তার কথা বর্ণিত হয়েছিল। এখানে আল্লাহ জানাচ্ছেন, তাদের সেই ধৈর্য ও দোয়ার প্রতিদান তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে দিয়েছেন।
- দুনিয়ার প্রতিদান: বিজয়, সম্মান, ও কল্যাণ।
- আখিরাতের প্রতিদান: জান্নাত ও চিরস্থায়ী সুখ।
- আল্লাহর ভালোবাসা: সৎকর্মশীল (মুহসিনীন) মানুষরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- মুমিন যদি ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে দ্বীনের পথে থাকে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত করেন।
- সৎকর্মশীলদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা সবচেয়ে বড় মর্যাদা।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর পথে দৃঢ়তার প্রতিদান দুনিয়া ও আখিরাত উভয়েই পাওয়া যায়।
- আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনই প্রকৃত সফলতা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- সৎকর্ম ও তাকওয়াই আল্লাহর ভালোবাসার মাধ্যম।
- দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের কল্যাণ আল্লাহর হাতে।
- মুমিনকে সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে হবে।
এ আয়াতে মুমিনদের সতর্ক করা হয়েছে যাতে তারা কাফেরদের কথায় না চলে।
- কাফেরদের আনুগত্য: তাদের নির্দেশ মানলে ঈমান থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গোড়ালিতে ফেরা: মানে ঈমান ত্যাগ করে পুরনো জাহেলিয়াতের দিকে ফিরে যাওয়া।
- ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া: ঈমান হারানোই সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- আজও মুমিনরা কাফেরদের মতাদর্শে ভেসে গেলে ঈমান হারাতে পারে।
- দ্বীনের পথে স্থির থাকতে হলে কেবল আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর আনুগত্য করতে হবে।
মূল শিক্ষা:
- কাফেরদের আনুগত্য করা মুমিনদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে।
- ঈমান রক্ষা করা সবচেয়ে বড় সাফল্য।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
- দ্বীনের ব্যাপারে অন্যের অনুসরণ না করে কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে।
- ঈমান হারানোই সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
এ আয়াত মুমিনদের মনে শক্তি ও আশার আলো জাগায়। মানুষ বা কাফেরদের সাহায্যের ওপর নির্ভর না করে মুমিনদের আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।
- আল্লাহ অভিভাবক: তিনি মুমিনদের রক্ষক, সহায়ক ও পথপ্রদর্শক।
- শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী: মানুষের সাহায্য সীমিত, কিন্তু আল্লাহর সাহায্য অসীম।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- আজ মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় রয়েছে, কিন্তু আল্লাহর সাহায্যই আসল শক্তি।
- মানুষের ওপর নয়, বরং আল্লাহর ওপর ভরসা করলে প্রকৃত সফলতা আসে।
মূল শিক্ষা:
- মুমিনদের আসল অভিভাবক শুধু আল্লাহ।
- আল্লাহর সাহায্যই চূড়ান্ত শক্তি।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর ওপর ভরসা করা ঈমানের মৌলিক অংশ।
- মানুষের সাহায্য ক্ষণস্থায়ী, আল্লাহর সাহায্য চিরস্থায়ী।
- সকল বিপদে আল্লাহকেই একমাত্র সহায় মানতে হবে।
এখানে আল্লাহ ঘোষণা করছেন যে, শিরক ও কুফরের কারণে কাফেরদের অন্তরে ভয় ও আতঙ্ক নিক্ষেপ করা হবে।
- ভয় নিক্ষেপ: কাফেররা বাহ্যত শক্তিশালী মনে হলেও, আল্লাহ তাদের অন্তরে ভয় বসিয়ে দেন।
- শিরকের পরিণতি: আল্লাহ যেসবের প্রমাণ দেননি, তারা সেগুলোকে উপাস্য বানিয়েছিল।
- জাহান্নাম: এটাই তাদের শেষ আশ্রয়।
- নিকৃষ্ট আবাস: জালিমদের আবাসস্থল হিসেবে জাহান্নাম খুবই নিন্দনীয়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- আজও মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফেরদের বাহ্যিক শক্তি থাকলেও, তাদের অন্তরে ভয় কাজ করে।
- আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাওহিদ মুমিনদের অন্তরে শক্তি আনে।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করা সবচেয়ে বড় অন্যায়।
- কাফেরদের অন্তরে আল্লাহ আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।
- শিরক ও কুফরের পরিণতি হলো জাহান্নাম।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- শিরক থেকে বাঁচা মুমিনের প্রথম কর্তব্য।
- আল্লাহর তাওহিদে দৃঢ় থাকলে ভয় দূর হয়।
- জালিমদের পরিণতি সর্বদা নিকৃষ্ট—তা দুনিয়াতে হোক বা আখিরাতে।
এই আয়াত উহুদ যুদ্ধের ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। প্রথমে মুসলমানরা বিজয় লাভ করছিল, কিন্তু রাসূল ﷺ–এর নির্দেশ অমান্য করার কারণে তারা বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।
- প্রতিশ্রুতি পূর্ণ: আল্লাহ মুসলমানদের প্রথমে বিজয় দান করেছিলেন।
- নির্দেশ অমান্য: কিছু সাহাবী যুদ্ধলব্ধ সম্পদের দিকে আগ্রহী হয়ে স্থান ত্যাগ করেন।
- পরীক্ষা: এই ঘটনা মুমিনদের জন্য আল্লাহর পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়।
- ক্ষমা: আল্লাহ তাঁদের ভুল ক্ষমা করেছেন এবং করুণা করেছেন।
হাদিসের ঘটনা (উহুদ যুদ্ধ):
রাসূলুল্লাহ ﷺ উহুদের যুদ্ধে ৫০ জন সাহাবীকে পাহাড়ের নিচে তীরন্দাজ হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং কঠোরভাবে বলেছিলেন:
“তোমরা এই জায়গা কোনো অবস্থাতেই ত্যাগ করবে না—even যদি তোমরা দেখো আমাদের লাশের উপর পাখিরা ঠোকর মারছে।” (📖 সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩০৩৯, ৩৯৮৬, , ৪০৬৭, ৪৫৬১,৪০৪৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭৭১)
কিন্তু মুসলমানরা যখন প্রাথমিকভাবে বিজয়ী হলো, তখন কিছু তীরন্দাজ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সংগ্রহ করতে স্থান ত্যাগ করল। এর ফলে শত্রুরা পিছন থেকে আক্রমণ চালিয়ে মুসলমানদের বড় ক্ষতি করল। এই ঘটনা আল্লাহ তাআলার পরীক্ষা হিসেবে ঘটেছিল।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর নির্দেশ মানা বিজয়ের চাবিকাঠি।
- দুনিয়ার লোভ মুমিনকে দুর্বল করে দেয়।
- ঐক্য ভেঙে গেলে মুসলমানদের ক্ষতি হয়।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর আনুগত্য না করলে ক্ষতি অনিবার্য।
- দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- আল্লাহ ক্ষমাশীল—ভুলের পরেও তওবার সুযোগ দেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর নির্দেশ পালন করা সর্বপ্রথম কর্তব্য।
- পরীক্ষা মুমিনের জীবনের অংশ, কিন্তু তাতে ধৈর্য ধরতে হবে।
- ঐক্য ও আনুগত্যের মাধ্যমেই মুসলমানদের শক্তি।
এই আয়াত উহুদ যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করছে। কাফেরদের আকস্মিক আক্রমণে মুসলমানরা পালিয়ে যাচ্ছিল এবং পিছনে তাকাচ্ছিল না। রাসূল ﷺ তাঁদের ডাকছিলেন, কিন্তু অনেকে ভয়ে ফিরে আসেনি। আল্লাহ তাঁদেরকে দুঃখের পর দুঃখ দিলেন—যাতে তাঁরা শিক্ষা গ্রহণ করে।
- শিক্ষা: নবীর আদেশ অমান্য করলে ক্ষতি অনিবার্য।
- আল্লাহর পরীক্ষা: কষ্ট ও দুঃখ আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- রাসূল ﷺ–এর সুন্নাহর অনুসরণ ছাড়া মুক্তি নেই।
- মুমিনদের জন্য বিপদ ও ক্ষতি আসলে পরীক্ষা ও সংশোধনের মাধ্যম।
মূল শিক্ষা:
- ঐক্য হারানো ও অবাধ্যতা মুসলমানদের দুর্বল করে।
- আল্লাহ সবকিছু জানেন, তাই তাঁর আদেশের বাইরে কিছুই গোপন নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহ ও রাসূল ﷺ–এর আনুগত্যই বিজয়ের চাবিকাঠি।
- পরাজয়ও মুমিনের জন্য শিক্ষা, হতাশার নয়।
- নবী ﷺ আমাদের সতর্ক করেছেন:
“আমার পরে তোমরা মারাত্মক মতভেদ লক্ষ্য করবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাতকে অবশ্যই অনুসরণ করবে, শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। আর নতুন উদ্ভাবিত (বিদআত) কাজ থেকে বেঁচে থাকবে, কারণ প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা।” (📖 সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪২)
উহুদ যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজয়ের পর হতাশায় পড়েছিল। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর এক ধরনের শান্তি ও প্রশান্তি নাযিল করলেন, যা তন্দ্রার মতো ছিল।
কিন্তু মুনাফিকদের একটি দল আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ করতে থাকে এবং বলে: “যদি আমাদের ইচ্ছা চলত আমরা নিহত হতাম না।” আল্লাহ স্পষ্ট করে দিলেন—মৃত্যু নির্ধারিত, তা যেখানে লেখা আছে সেখানে ঘটবেই।
- প্রশান্তি: মুমিনদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাযিল হয়েছিল।
- মুনাফিকদের মনোভাব: তারা আল্লাহর ফয়সালায় সন্দেহ করেছিল।
- পরীক্ষা: আল্লাহ এই সব ঘটনার মাধ্যমে মুমিনদের অন্তর পরীক্ষা করেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- পরিস্থিতি যত কঠিন হোক, আল্লাহর ফয়সালায় বিশ্বাস রাখতে হবে।
- মৃত্যু, জীবন ও রিজিক—সবকিছু আল্লাহর হাতে নির্ধারিত।
- আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা ছাড়া প্রশান্তি আসে না।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর প্রতি ভুল ধারণা রাখা ঈমানের জন্য বিপজ্জনক।
- মুমিনদের পরীক্ষা নেওয়া আল্লাহর এক নীতি।
- আল্লাহ অন্তরের খবর জানেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- যুদ্ধ বা সংকটের সময় মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা।
- পরীক্ষার সময় দ্বীনের প্রতি দৃঢ় থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
- রাসূল ﷺ আমাদের সতর্ক করেছেন মতভেদে পড়ে সুন্নাহ ছেড়ে দিলে ধ্বংস হবে;
“আমার পরে তোমরা মারাত্মক মতভেদ লক্ষ্য করবে। তখন আমার সুন্নাত ও হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাত অবলম্বন করবে, শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। নতুন উদ্ভাবিত (বিদআত) কাজ থেকে দূরে থাকবে। প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা।” (📖 সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪২)
উহুদ যুদ্ধে কিছু সাহাবী ভীত হয়ে পিছু হটেছিল। এটি তাদের ঈমানের দুর্বলতা ও শয়তানের প্ররোচনার কারণে হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমা করেছেন।
- শয়তানের প্ররোচনা: সাহাবীদের পূর্বের কিছু গাফেলতি বা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শয়তান তাদের পিছলে দিয়েছিল।
- আল্লাহর ক্ষমা: তাঁদের এ ভুলের জন্য আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
- আল্লাহর গুণ: তিনি গাফুর (অত্যন্ত ক্ষমাশীল) এবং হালিম (সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল)।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- মুমিন ভুল করলে শয়তান তাকে আরও পিছলে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহর দিকে ফিরে আসলে ক্ষমা পান।
- কঠিন পরিস্থিতিতে ভয় বা দুর্বলতা আসতেই পারে, তবে তা কাটিয়ে উঠতে হবে আল্লাহর জিকির ও তাওবার মাধ্যমে।
- আল্লাহ ক্ষমাশীল—তাই হতাশ হওয়া যাবে না।
মূল শিক্ষা:
- শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে হলে ঈমান শক্ত করতে হবে।
- আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন।
- আল্লাহর সহনশীলতা বান্দার প্রতি অনুগ্রহ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- যুদ্ধ বা সংকটে ভয় পাওয়া মানুষের দুর্বলতা, তবে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
- আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর প্রতি আনুগত্যে দুর্বল হলে শয়তান সুযোগ নেয়।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“প্রত্যেক আদম সন্তানই ভুল করে, আর ভুলকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম তারা, যারা তওবা করে।” (📖 সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯৯; হাসান) - তাই ভুল করলে হতাশ না হয়ে তাওবা ও ইস্তিগফার করতে হবে।
এ আয়াতে আল্লাহ শহীদ ও তাঁর পথে মৃত্যুবরণকারীদের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন।
- শহীদ হওয়া: আল্লাহর পথে নিহত হওয়া সর্বোচ্চ মর্যাদার মৃত্যু।
- আল্লাহর ক্ষমা: শহীদরা আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ণ ক্ষমা পেয়ে যায়।
- আল্লাহর রহমত: তাঁর রহমত ও জান্নাত তাদের জন্য নির্ধারিত।
- দুনিয়ার সম্পদ: দুনিয়ার সঞ্চিত সম্পদ আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের তুলনায় কিছুই নয়।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করা মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হওয়া উচিত।
- দুনিয়ার ধন-সম্পদ ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর রহমত চিরস্থায়ী।
- শহীদ হওয়া মানে আল্লাহর কাছে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা লাভ।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর পথে মৃত্যু দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের চেয়ে উত্তম।
- আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতই মুমিনের আসল কামনা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিন দুনিয়ার সম্পদে নয়, আখিরাতের পুরস্কারে আগ্রহী হয়।
- শহীদরা জীবিত থাকে এবং আল্লাহর নিকটে রিজিক পায়।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“শহীদ আল্লাহর কাছে ছয়টি জিনিস লাভ করে: (১) প্রথম রক্তের ফোঁটা ঝরার সাথে সাথে তার গুনাহ ক্ষমা করা হয়, (২) জান্নাতে তার স্থান দেখানো হয়, (৩) কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা পায়, (৪) কিয়ামতের ভয় থেকে নিরাপদ থাকে, (৫) তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হয়, (৬) তার পরিবারের সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করতে পারবে।” (📖 সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস: ১৬৬৩; হাসান)
এ আয়াত মুমিনদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন-মৃত্যু যেভাবেই হোক, শেষ পরিণতি আল্লাহর কাছেই।
- মৃত্যু: স্বাভাবিক মৃত্যু হোক বা শাহাদাত—শেষে প্রত্যেককেই আল্লাহর কাছে ফিরতে হবে।
- হাশর: কিয়ামতের দিন সব মানুষ আল্লাহর সামনে একত্রিত হবে।
- মূল শিক্ষা: মৃত্যু ভয়ের কিছু নয়, কারণ প্রকৃত হিসাব ও পুরস্কার আল্লাহর কাছে।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- মৃত্যুর ভয়ে দ্বীনের কাজ ফেলে রাখা যাবে না, কারণ মৃত্যু যেভাবেই আসুক শেষ ঠিকানা আল্লাহর কাছে।
- শাহাদাত মুমিনের জন্য সম্মানের মৃত্যু, আর সাধারণ মৃত্যু হলেও আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে।
- মুমিন সবসময় আখিরাতের জন্য প্রস্তুত থাকে।
মূল শিক্ষা:
- মৃত্যু থেকে পলায়ন সম্ভব নয়।
- আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তনই মানুষের প্রকৃত গন্তব্য।
- মৃত্যু মুমিনের জন্য আখিরাতের দরজা।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মৃত্যুর ভয় দূর করে আখিরাতের জন্য প্রস্তুত হওয়া জরুরি।
- আল্লাহর পথে মৃত্যু মুমিনের জন্য সর্বোত্তম পুরস্কারের মাধ্যম।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“দুনিয়া হলো মুমিনের কারাগার আর কাফেরের জান্নাত।” (📖 সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৫৬) - তাই মুমিন দুনিয়াকে লক্ষ্য না করে আখিরাতের জন্য কাজ করে।
উহুদ যুদ্ধের পর সাহাবীরা ভুল করেছিল, কিন্তু নবী ﷺ তাঁদের প্রতি কঠোর হননি। আল্লাহর রহমতের কারণে নবী ﷺ ছিলেন দয়ালু ও সহনশীল।
- কোমলতা: নবী ﷺ এর চরিত্র ছিল নম্র ও দয়ালু, যা সাহাবীদেরকে আকৃষ্ট করেছিল।
- ক্ষমা: তিনি তাঁদের ভুল ক্ষমা করে দিলেন।
- ইস্তিগফার: তাঁদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।
- শূরা: মুসলমানদের সাথে পরামর্শ করতেন, যাতে সবাইকে দায়িত্বশীল করা যায়।
- তাওয়াক্কুল: চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আল্লাহর উপর ভরসা করা জরুরি।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- নেতৃত্বের আসল সৌন্দর্য হলো কোমলতা, ক্ষমাশীলতা ও পরামর্শ।
- ভুল হলে গালি নয়, বরং ক্ষমা ও সংশোধন করা উচিত।
- দল ও সমাজ চালাতে শূরা (পরামর্শ) অপরিহার্য।
- সবকিছুর শেষে আল্লাহর উপর ভরসা করাই মুমিনের শক্তি।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর রহমতই মানুষের হৃদয়ে কোমলতা আনে।
- ক্ষমা, দোয়া ও পরামর্শ মুমিনদের ঐক্য শক্তিশালী করে।
- তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা) ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিনদের মধ্যে কোমলতা ও ক্ষমা অপরিহার্য।
- শূরা ইসলামি নেতৃত্বের মূলনীতি।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি পরামর্শ করে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে, সে কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।” (📖 সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস: ২১৬৭; হাসান) - মুমিন সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা করে।
এই আয়াত মুসলমানদের শেখায়—আসল সাহায্য আল্লাহর কাছ থেকে আসে, মানুষের কাছ থেকে নয়।
- আল্লাহর সাহায্য: যদি আল্লাহ সাহায্য করেন, পুরো পৃথিবী মিলে মুমিনকে হারাতে পারবে না।
- আল্লাহর পরিত্যাগ: যদি আল্লাহ সাহায্য না করেন, তবে কোনো শক্তিই মুমিনকে রক্ষা করতে পারবে না।
- তাওয়াক্কুল: আসল ভরসা আল্লাহর উপর হওয়া উচিত।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- দুনিয়ার শক্তি, সম্পদ বা অস্ত্র কিছুই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কার্যকর নয়।
- মুমিনদের জয় আসে আল্লাহর উপর ভরসা ও আনুগত্যের মাধ্যমে।
- আমাদের ঈমান ও ঐক্য আল্লাহর সাহায্যের প্রধান শর্ত।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর সাহায্যই প্রকৃত শক্তি।
- মুমিন সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আল্লাহর আনুগত্য করলে তাঁর সাহায্য পাওয়া যায়।
- মানুষের ওপর নির্ভরশীলতা ব্যর্থ, আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা সফলতা।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“হে যুবক! আল্লাহকে স্মরণ রেখো, তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহকে স্মরণ রেখো, তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে। আর জানো, যদি সমস্ত মানুষ একত্রিত হয়ে তোমাকে উপকার করতে চায়, তবে তারা কেবল সেই উপকারই করতে পারবে, যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি তারা ক্ষতি করতে চায়, তবে কেবল সেই ক্ষতিই করতে পারবে, যা আল্লাহ তোমার জন্য নির্ধারণ করেছেন।” (📖 জামি আত-তিরমিজি, হাদিস: ২৫১৬; সহিহ)
এ আয়াত যুদ্ধলব্ধ সম্পদে خیانت (চুরি/গোপন রাখা) করার বিরুদ্ধে। কেউ কেউ মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিল—নবী ﷺ নাকি গনিমাহ থেকে কিছু নিজের জন্য রেখেছেন। আল্লাহ স্পষ্ট করে দিলেন—**নবীদের পক্ষে خیانت করা সম্ভব নয়।**
- নবীর মর্যাদা: নবী সর্বদা নিষ্পাপ ও خیانتমুক্ত।
- خیانت: যে কোনো প্রকার আত্মসাৎ বা চুরি কিয়ামতের দিন প্রকাশ পাবে।
- আখিরাতের বিচার: প্রত্যেককে তার কাজ অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে, আল্লাহ কাউকে অযথা কষ্ট দেবেন না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- যেকোনো আমানত বা সম্পদে خیانت করা কঠোর গুনাহ।
- গোপন পাপ আখিরাতে প্রকাশ পাবে।
- আমানত রক্ষা করা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মূল শিক্ষা:
- নবীদের মর্যাদা ও নিষ্পাপিত্ব অক্ষুণ্ণ।
- خیانت আখিরাতে অপমানজনক শাস্তির কারণ।
- আল্লাহ ন্যায়বিচার করবেন, কাউকে অবিচার করবেন না।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আমানতের প্রতি خیانت করা মুমিনের চরিত্র নয়।
- গোপনে যা করবে, কিয়ামতে তা প্রকাশিত হবে।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই। আর যার মধ্যে কথা রাখার সততা নেই, তার মধ্যে দ্বীন নেই।” (📖 সুনান আহমদ, হাদিস: ১২৫৬৫; সহিহ) - তাই মুমিনের কর্তব্য সবসময় সততা বজায় রাখা।
এ আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে মুমিন ও কাফেরদের পরিণতির তুলনা করেছেন।
- মুমিন: যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, তারা জান্নাতের অধিকারী।
- কাফের/অবাধ্য: যারা আল্লাহর গজব ও ক্রোধের পাত্র, তাদের আবাস জাহান্নাম।
- তুলনা: আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আল্লাহর গজব কখনো সমান হতে পারে না।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- মানুষকে সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ বেছে নিতে হবে।
- আল্লাহর আদেশ অমান্য করলে পরিণতি হবে তাঁর ক্রোধ ও জাহান্নাম।
- দুনিয়ার সাময়িক সুখের জন্য আখিরাতকে বিসর্জন দেওয়া মুমিনের কাজ নয়।
মূল শিক্ষা:
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই প্রকৃত সাফল্য।
- আল্লাহর গজবের পাত্র হওয়া মানে জাহান্নামের অধিবাসী হওয়া।
- মুমিন ও কাফেরের পথ কখনো সমান নয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুমিন সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে চলবে।
- জাহান্নাম ভয়ঙ্কর পরিণতি—এটি এড়াতে আল্লাহর আনুগত্য জরুরি।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (📖 সহিহ আল-বুখারি, হাদিস: ২৯৫৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮৩৫)
মুমিন ও কাফেরের পরিণতি এক নয়। আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে তার আমল অনুযায়ী মর্যাদা দান করবেন।
- স্তরভেদ: জান্নাতের মর্যাদা ভিন্ন ভিন্ন স্তরে হবে—কারও জন্য সর্বোচ্চ, কারও জন্য নিম্নতর।
- আমলের ভিত্তি: মর্যাদা নির্ধারিত হবে ঈমান, ইখলাস ও সৎকর্মের ভিত্তিতে।
- আল্লাহর জ্ঞান: আল্লাহ মানুষের প্রতিটি কাজ ভালোভাবে দেখেন ও জানেন।
বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিক শিক্ষা:
- আমাদের প্রতিটি কাজের মূল্যায়ন হবে আখিরাতে।
- কোনো ছোট সৎকর্মকেও তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়।
- আল্লাহ আমাদের আমল অনুসারে জান্নাতে মর্যাদা দান করবেন।
মূল শিক্ষা:
- জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থান আলাদা স্তরে নির্ধারিত।
- সৎ আমল ও আল্লাহর আনুগত্য মর্যাদা বাড়ায়।
- আল্লাহ সবকিছু দেখেন ও জানেন।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদা অর্জন করা।
- মর্যাদা নির্ভর করবে শুধুই আমল ও নেক কাজের উপর।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“জান্নাতে একশ স্তর আছে, যা আল্লাহ তাঁর পথে জিহাদের লোকদের জন্য প্রস্তুত করেছেন। প্রতিটি স্তরের মধ্যে দূরত্ব হলো আকাশ ও পৃথিবীর দূরত্বের সমান।” (📖 সহিহ আল-বুখারি, হাদিস: ২৭৯০)
এই আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী ﷺ প্রেরণকে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
- আল্লাহর অনুগ্রহ: নবী পাঠানো মানবজাতির জন্য সর্বোচ্চ রহমত।
- রাসূল ﷺ এর কাজ: কুরআনের তিলাওয়াত, আত্মশুদ্ধি, কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান।
- আগের অবস্থা: মানুষ ছিল জাহেলিয়াতের আঁধারে, স্পষ্ট ভ্রান্তিতে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- নবী ﷺ–এর প্রতি আনুগত্য আল্লাহর অনুগ্রহকে মূল্যায়ন করা।
- আত্মশুদ্ধি ও জ্ঞান অর্জন মুমিনের মূল বৈশিষ্ট্য।
- রাসূল ﷺ বলেছেন: “আমি পাঠানো হয়েছি মানুষকে উত্তম চরিত্রে পৌঁছানোর জন্য।” (📖 মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ১৬১৪)
এই আয়াত উহুদ যুদ্ধের ঘটনার প্রসঙ্গে অবতীর্ণ। মুসলমানরা উহুদের যুদ্ধে ক্ষতির সম্মুখীন হলে অবাক হয়েছিল, অথচ বদরের যুদ্ধে তারা শত্রুর দ্বিগুণ ক্ষতি করেছিল।
- বিপদ কেন: মুসলমানরা নবীর আদেশ অমান্য করেছিল, তাই বিপদ এসেছিল।
- নিজেদের দোষ: আল্লাহ স্পষ্ট করে দিলেন—এ ক্ষতি তাদের নিজেদের কাজের ফল।
- আল্লাহর কুদরত: সমস্ত ঘটনা আল্লাহর কুদরতের অধীনে ঘটে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- বিপদ-আপদ হলে নিজের দোষ ও গুনাহের দিকেও তাকাতে হবে।
- আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাশালী—তাঁর ফয়সালা অস্বীকার করা যাবে না।
- রাসূল ﷺ বলেছেন: “বান্দার উপর যে বিপদ আসে, তা তার গুনাহ মাফের কারণ হয়।” (📖 সহিহ আল-বুখারি, হাদিস: ৫৬৪১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৭৩)
উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের ক্ষতি হওয়া কোনো দুর্ঘটনা ছিল না; বরং আল্লাহর অনুমতিক্রমে ঘটেছিল। এর মাধ্যমে প্রকৃত মুমিনরা আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
- বিপদ: আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কিছুই ঘটে না।
- পরীক্ষা: বিপদের মাধ্যমে মুমিন ও মুনাফিকদের পার্থক্য স্পষ্ট হয়।
উহুদ যুদ্ধে মুনাফিকরা মুসলমানদের সাথে যেতে অস্বীকার করেছিল। তারা বাহ্যিকভাবে অজুহাত দেখালেও অন্তরে কুফর লুকিয়ে রেখেছিল। আল্লাহ এ আয়াতে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।
- মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য: মুখে ঈমান, অন্তরে কুফর।
- অজুহাত: তারা বলত—“যদি যুদ্ধ হবে জানতাম, আমরা অংশ নিতাম।”
- আসল অবস্থা: তারা ঈমানের চেয়ে কুফরের কাছাকাছি ছিল।
বর্তমান যুগে উদাহরণ:
- আজও অনেকেই ইসলামকে মুখে স্বীকার করে, কিন্তু ইসলামের বিধান মানতে চায় না।
- কেউ কেউ দাওয়াহ, নামাজ, জিহাদ বা দ্বীনের কাজকে অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে চলে।
- অনেকে ইসলামের কথা বলে, কিন্তু অন্তরে দুনিয়ার লোভ ও কাফেরদের অনুসরণকে প্রাধান্য দেয়।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মুনাফিকদের চিহ্ন: মুখে ঈমান, অন্তরে কুফর।
- অজুহাত দিয়ে দ্বীনের কাজ থেকে পালানো মুনাফিকির লক্ষণ।
- রাসূল ﷺ বলেছেন: “তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে হবে মুনাফিক: (১) কথা বললে মিথ্যা বলে, (২) প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে, (৩) আমানত পেলে خیانت করে।” (📖 সহিহ আল-বুখারি, হাদিস: ৩৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৯)
এই আয়াত উহুদ যুদ্ধে অংশ না নেওয়া মুনাফিকদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছে। তারা শহীদদের নিয়ে কটূক্তি করেছিল—“যদি তারা আমাদের মতো যুদ্ধ থেকে বিরত থাকত, তবে মরত না।” আল্লাহ তাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন—“তাহলে তোমরা যদি সত্যবাদী হও, মৃত্যুকে নিজেদের থেকে সরিয়ে দাও।”
- মুনাফিকদের কথা: তারা শহীদদের নিয়ে কটূক্তি করত।
- আল্লাহর চ্যালেঞ্জ: মৃত্যু আল্লাহর হাতে, কেউ তা ঠেকাতে পারবে না।
- মূল শিক্ষা: মৃত্যু অনিবার্য, পালিয়ে বাঁচা যায় না।
বর্তমান যুগে উদাহরণ:
- আজও অনেকেই দ্বীনের পথে শহীদ বা দাওয়াতের কর্মীদের নিয়ে উপহাস করে।
- কেউ বলে: “যদি ইসলামি কাজ না করত, বিপদে পড়ত না।”
- তারা আসলে আল্লাহর তাকদীর অস্বীকার করছে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- মৃত্যু থেকে পালানো যায় না, আল্লাহর ফয়সালা পরিবর্তন হয় না।
- মুমিন শহীদদের নিয়ে কটূক্তি করে না, বরং তাদের সম্মান করে।
- রাসূল ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হয়, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (📖 সহিহ আল-বুখারি, হাদিস: ২৮১৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮৭৬)
এই আয়াতে আল্লাহ শহীদদের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন।
- মৃত নয়: শহীদরা মৃত নয়, বরং জীবিত।
- আল্লাহর কাছে জীবিত: তারা আল্লাহর কাছে বিশেষ রিজিক ও অনুগ্রহ পায়।
- আসল জীবন: শহীদদের প্রকৃত জীবন আখিরাতের উচ্চ মর্যাদার জীবন।
বর্তমান যুগে উদাহরণ:
- আজও যারা ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করে, তারা আল্লাহর নিকট জীবিত।
- তাদের সম্মান করা মুমিনদের কর্তব্য।
- শত্রুরা মনে করে তারা মরে গেছে, কিন্তু বাস্তবে তারা জান্নাতের রিজিক উপভোগ করছে।
শিক্ষনীয় বিষয়:
- শাহাদাতই সর্বোচ্চ মর্যাদার মৃত্যু।
- আল্লাহ শহীদদের জন্য জান্নাত ও বিশেষ রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন।
- রাসূল ﷺ বলেছেন:
“কেউ যদি আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার আন্তরিক আশা করে, তবে সে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছে যাবে, যদিও তার মৃত্যু নিজের বিছানায় হয়।” (📖 সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯০৯)
শহীদরা আল্লাহর নিকটে শুধু জীবিতই নয়, বরং তাঁরা আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়ে আনন্দিত হন। তাঁরা দুনিয়ার মুমিন ভাইদের জন্যও সুসংবাদ প্রাপ্ত হন— যাতে তারা চিন্তিত বা দুঃখিত না হয়।
- আনন্দ: আল্লাহর ফযল ও রিজিক পেয়ে তারা খুশি থাকে।
- সুসংবাদ: যারা এখনও শহীদ হয়নি, তাদের জন্যও ভয়-দুঃখহীন ভবিষ্যতের খবর দেয়া হয়।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭০):
- আল্লাহর পথে আত্মত্যাগ দুনিয়ার কষ্ট নয়, বরং আখিরাতের সুখের কারণ।
- শহীদরা দুনিয়ার মুমিনদের জন্যও সুসংবাদ পেয়ে থাকে।
- আল্লাহর অনুগ্রহ পেলে ভয় ও দুঃখের কোনো স্থান থাকে না।
শহীদরা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে সুখী থাকে। আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ পায় যে— মুমিনদের কোনো আমল বৃথা যাবে না, বরং আল্লাহ প্রতিদান দিবেন পূর্ণাঙ্গভাবে।
- আনন্দের কারণ: শহীদরা আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ ভোগ করে।
- বিশ্বাস: আল্লাহর প্রতিশ্রুতি—মুমিনদের সৎকর্ম বৃথা যাবে না।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭১):
- মুমিনদের প্রতিটি সৎকর্ম আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত থাকে।
- আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ মুমিনের প্রকৃত সম্পদ।
- শাহাদাত সর্বোচ্চ মর্যাদা, তবে সাধারণ মুমিনদের আমলও আল্লাহ নষ্ট হতে দেন না।
উহুদের যুদ্ধে সাহাবীরা আহত হয়েও নবী ﷺ–এর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। তাঁরা আবার জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেন (হামরা-উল আসাদ অভিযানে)। আল্লাহ তাদের জন্য বিশাল পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
- সাহস: আহত অবস্থাতেও তাঁরা দ্বীনের কাজ ছাড়েননি।
- তাকওয়া: আল্লাহর ভয় ও আনুগত্য তাদের আমলকে মর্যাদাবান করেছে।
- পুরস্কার: মহান জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭২):
- দ্বীনের কাজে শারীরিক কষ্ট বা আঘাত কোনো অজুহাত হতে পারে না।
- আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
- কষ্টের পরও সৎকর্ম করলে আল্লাহ দ্বিগুণ পুরস্কার দেন।
মুনাফিকরা সাহাবীদের ভয় দেখাতে চেয়েছিল—“শত্রুরা তোমাদের আক্রমণের জন্য জড়ো হয়েছে।” কিন্তু মুমিনরা ভীত না হয়ে বলেছিল—“আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট।”
- ভয় নয়: শত্রুর ভয় তাদের ঈমান বাড়িয়েছিল।
- তাওয়াক্কুল: তাঁরা বলেছিলেন—“হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল।”
- শক্তি: ঈমান ও আল্লাহর উপর ভরসাই মুসলমানের প্রকৃত শক্তি।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭৩):
- শত্রুর ভয় নয়, আল্লাহর উপর ভরসা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
- “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল” হলো বিপদে মুমিনের শক্তিশালী দোয়া।
- ভয় দেখানো কথা মুমিনকে ভীত করে না, বরং ঈমান বাড়ায়।
সাহাবীগণ শত্রুর ভয় না পেয়ে আল্লাহর পথে বের হয়েছিলেন। আল্লাহ তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে দিলেন—কোনো অনিষ্ট তাদের স্পর্শ করেনি। বরং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করলেন।
- নিরাপদ প্রত্যাবর্তন: আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছেন।
- আল্লাহর সন্তুষ্টি: তাদের লক্ষ্য ছিল কেবল আল্লাহর খুশি।
- ফযল: আল্লাহর রহমত সীমাহীন।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭৪):
- আল্লাহর উপর ভরসাকারীরা নিরাপদ থাকে।
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসরণ করাই মুমিনের সাফল্য।
- আল্লাহর অনুগ্রহ সবসময় মুমিনদের সাথে থাকে।
মুনাফিকরা সাহাবীদের শত্রুর ভয় দেখিয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ জানালেন—এ শয়তানের কাজ। মুমিনদের উচিত শয়তান ও শত্রুকে নয়, আল্লাহকেই ভয় করা।
- শয়তানের কৌশল: মুমিনদের ভয় দেখানো।
- আল্লাহর নির্দেশ: আল্লাহকেই ভয় করতে হবে।
- মুমিনের বৈশিষ্ট্য: মুমিন কেবল আল্লাহকে ভয় করে।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭৫):
- শত্রুর ভয় শয়তানের কৌশল—তাতে প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।
- মুমিন কেবল আল্লাহকেই ভয় করে।
- আল্লাহর ভয় ঈমানের প্রকৃত চিহ্ন।
মক্কার কাফেররা দ্রুত কুফরে ছুটে যাচ্ছিল। আল্লাহ নবী ﷺ–কে সান্ত্বনা দিলেন—এতে তাঁর দুঃখিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা আল্লাহর কিছু ক্ষতি করতে পারবে না। বরং আখিরাতে তাদের জন্য কোনো সওয়াব থাকবে না, থাকবে ভয়াবহ শাস্তি।
- নবীর সান্ত্বনা: কাফেরদের কুফর দেখে দুঃখ করার কিছু নেই।
- আল্লাহর কুদরত: কেউ আল্লাহর ক্ষতি করতে পারে না।
- কাফেরের পরিণতি: আখিরাতে তাদের জন্য কোনো নেয়ামত নেই।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭৬):
- কাফেরদের কুফর দেখে মুমিনরা হতাশ হবে না।
- আল্লাহর দীন কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
- আখিরাতের প্রকৃত ক্ষতি হলো আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া।
যারা দুনিয়ার সাময়িক স্বার্থের জন্য ঈমান বিক্রি করেছে, তারা আসলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আল্লাহর কোনো ক্ষতি হয়নি।
- ঈমান বিক্রি: দুনিয়ার লাভের জন্য কুফর বেছে নেওয়া।
- আল্লাহর অক্ষত শক্তি: তাদের কুফর আল্লাহর উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।
- পরিণতি: তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭৭):
- দুনিয়ার স্বার্থে ঈমান বিক্রি করা সর্বনাশ ডেকে আনে।
- আল্লাহর দীন কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাফেররাই।
- আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করেছেন।
আল্লাহ কখনো কাফেরদেরকে অবকাশ দেন। তারা মনে করে এটাই তাদের কল্যাণ, কিন্তু আসলে তা নয়। বরং তাদের এই দুনিয়ার অবকাশ তাদেরকে আরও বেশি পাপের মধ্যে ফেলে দেয়।
- অবকাশ: আল্লাহ দেরি করেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।
- পাপ বৃদ্ধি: তারা আরও গুনাহ করতে থাকে।
- শেষ পরিণতি: লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭৮):
- দুনিয়াতে সময় পাওয়া মানেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়।
- পাপে অবকাশ আল্লাহর কঠিন শাস্তির ভূমিকা তৈরি করে।
- আল্লাহ কাফেরদের ধৈর্য সহকারে পরীক্ষা করেন, তারপর শাস্তি দেন।
আল্লাহ মুমিনদের পরীক্ষা করেন, যাতে খাঁটি মুমিন ও মুনাফিক আলাদা হয়। আল্লাহ কাউকেই অদৃশ্য জ্ঞান দেন না, শুধু নবীদের ওহির মাধ্যমে জানানো হয়। সুতরাং মানুষের কাজ হলো—আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি পূর্ণ ঈমান আনা।
- পরীক্ষা: বিপদের মাধ্যমে খাঁটি মুমিন আলাদা হয়।
- গায়েব: অদৃশ্য জ্ঞান আল্লাহর হাতে, শুধু নবীদের ওহির মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
- পুরস্কার: ঈমান ও তাকওয়া আখিরাতে মহা পুরস্কারের কারণ।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৭৯):
- বিপদ ও পরীক্ষাই মুমিন ও মুনাফিকদের আলাদা করে।
- অদৃশ্য জ্ঞানের মালিক শুধু আল্লাহ; মানুষের জন্য তা নয়।
- ঈমান ও তাকওয়াই মহান পুরস্কারের আসল চাবিকাঠি।
আল্লাহর দেওয়া সম্পদে কৃপণতা করা মানুষের জন্য কল্যাণ নয়, বরং বড় শাস্তির কারণ। কিয়ামতে সেই সম্পদই গলায় বেড়ি হয়ে যাবে। আল্লাহরই হাতে সবকিছু, তাই দুনিয়ায় কার্পণ্য করার সুযোগ নেই।
- কৃপণতা: জাকাত বা আল্লাহর হক আদায় না করা।
- কিয়ামতের শাস্তি: সম্পদ গলায় বেড়ি হবে।
- আল্লাহর মালিকানা: আসমান-জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহর।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮০):
- আল্লাহর হক আদায় না করলে সম্পদ আখিরাতে শাস্তির কারণ হবে।
- দুনিয়ার সম্পদ অস্থায়ী, আসল মালিক আল্লাহ।
- মুমিনের কর্তব্য হলো দানশীলতা ও জাকাত আদায়।
ইহুদিরা ব্যঙ্গ করে বলেছিল—“আল্লাহ দরিদ্র, আর আমরা ধনী।” তারা জাকাত ও দান থেকে বিরত থাকার জন্য এই অজুহাত দিত। তারা নবীদেরকেও হত্যা করেছিল। আল্লাহ ঘোষণা করলেন—তাদের সব কথা ও কাজ লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তারা ভয়ঙ্কর আগুনের শাস্তি পাবে।
- অহংকার: নিজেদের ধনী মনে করে আল্লাহকে (নাউযুবিল্লাহ) দরিদ্র বলেছিল।
- নবী হত্যা: তারা নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল।
- শাস্তি: দহনকর আগুন তাদের পরিণতি।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮১):
- আল্লাহর সম্পর্কে কটূক্তি করা ভয়ঙ্কর গুনাহ।
- অহংকার ও কৃপণতা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
- আল্লাহ সবকিছু শোনেন, তাই মুখের কথা ও কাজের জন্য দায়ী হতে হবে।
আল্লাহ স্পষ্ট করে দিলেন—শাস্তি কোনো অবিচারের কারণে নয়; বরং বান্দাদের নিজেদের গুনাহের ফলেই শাস্তি আসে। আল্লাহ কখনো কাউকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেন না।
- কারণ: মানুষের নিজের কাজই আখিরাতের পরিণতি নির্ধারণ করে।
- আল্লাহর ন্যায়বিচার: আল্লাহ কখনো কারও প্রতি জুলুম করেন না।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮২):
- মানুষ যা করে, তার ফল সে নিজেই ভোগ করবে।
- আল্লাহর শাস্তি সর্বদা ন্যায়সঙ্গত, এতে কোনো অবিচার নেই।
- গুনাহ থেকে বাঁচাই হলো আখিরাতের মুক্তির পথ।
ইহুদিরা নবী ﷺ–এর রিসালত অস্বীকার করে অযৌক্তিক শর্ত রাখত— তারা বলত: “রাসূল প্রমাণ দিবে কুরবানীর আগুনে ভস্ম হওয়া।” অথচ পূর্বের নবীরা তা এনেছিলেন, তবুও তারা তাদের মেনে নেয়নি বরং হত্যা করেছিল। আল্লাহ নবী ﷺ–কে আদেশ দিলেন তাদের কটূক্তির জবাব দিতে।
- ইহুদিদের অজুহাত: অযৌক্তিক প্রমাণ দাবী।
- বাস্তবতা: পূর্ববর্তী নবীগণ প্রমাণ এনেছিলেন, তবুও তারা কুফর করেছিল।
- অপরাধ: নবীদের অমান্য করা ও হত্যা করা।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮৩):
- কুফরীরা অজুহাত সৃষ্টি করে ঈমান আনার দায় এড়াতে চায়।
- অলৌকিক প্রমাণ পেলেও অবিশ্বাসীরা অস্বীকার করবেই—কারণ তাদের অন্তরে জিদ।
- মুমিনের কর্তব্য—অযৌক্তিক দাবি নয়, বরং স্পষ্ট সত্যে ঈমান আনা।
এই আয়াতে নবী ﷺ–কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে— তিনি যদি অবিশ্বাসীদের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যাত হন, তবে এতে নতুন কিছু নেই। পূর্ববর্তী নবীরাও তাদের জাতির কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। তবুও তারা সত্য পৌঁছে দিয়েছিলেন।
- প্রত্যাখ্যান: অবিশ্বাসীরা নবীদের মিথ্যাবাদী বলেছে।
- প্রমাণ: নবীরা স্পষ্ট মুজিজা ও কিতাব নিয়ে এসেছিলেন।
- সান্ত্বনা: নবী ﷺ যেন এতে দুঃখিত না হন।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮৪):
- সত্যের পথে বাধা আসবে, এটি নবীদের সুন্নাহ।
- মুমিনদের ধৈর্য ধরতে হবে, কারণ পূর্ববর্তী রাসূলরাও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন।
- আল্লাহর বার্তা স্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছে, তবুও অবিশ্বাসীরা অস্বীকার করেছে।
আল্লাহ জানিয়ে দিলেন—মৃত্যু অনিবার্য, এ থেকে কারো রক্ষা নেই। প্রকৃত প্রতিদান কিয়ামতের দিন দেওয়া হবে। তখন সফল সেই হবে যে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়ার জীবন প্রতারণাময়, এর মোহে মগ্ন হওয়া ক্ষতির কারণ।
- মৃত্যু: প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ পাবে।
- প্রতিদান: প্রকৃত প্রতিদান আখিরাতে মিলবে।
- সাফল্য: জান্নাতে প্রবেশই আসল সাফল্য।
- দুনিয়া: প্রতারণাময় ভোগবিলাস।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮৫):
- মৃত্যু সবার জন্য নিশ্চিত, এতে কোনো ব্যতিক্রম নেই।
- আখিরাতেই প্রকৃত প্রতিদান ও বিচার হবে।
- জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাই চূড়ান্ত সাফল্য।
- দুনিয়ার মোহে পড়া প্রতারণা; মুমিনের লক্ষ্য আখিরাত।
আল্লাহ মুমিনদের জানিয়ে দিচ্ছেন—দুনিয়াতে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে ধন-সম্পদ ও প্রাণের দ্বারা। তারা অমুসলিমদের কাছ থেকে কষ্ট ও কটূক্তিও শুনবে। তবে ধৈর্য ও তাকওয়াই এ পরীক্ষার মূল উপায়।
- পরীক্ষা: ধন-সম্পদ, জান-মাল, বিপদ—সবকিছু দিয়েই পরীক্ষা হবে।
- অসহিষ্ণুতা: কাফের ও কিতাবীদের কটূক্তি সহ্য করতে হবে।
- সমাধান: ধৈর্য ও তাকওয়া।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮৬):
- মুমিনের জীবনে পরীক্ষা অনিবার্য।
- কাফের ও মুশরিকদের কটূক্তিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
- সফলতা ধৈর্য ও তাকওয়ার মাধ্যমে আসে।
আল্লাহ কিতাবধারীদের সাথে অঙ্গীকার করেছিলেন—তারা কিতাবের শিক্ষা গোপন করবে না বরং মানুষের সামনে তা প্রকাশ করবে। কিন্তু তারা কিতাব গোপন করেছিল এবং সামান্য দুনিয়ার স্বার্থে বিক্রি করেছিল।
- অঙ্গীকার: আল্লাহর কিতাব প্রকাশ করার দায়িত্ব।
- অপরাধ: কিতাব গোপন করা ও দুনিয়ার স্বার্থে বিক্রি করা।
- ফলাফল: এটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যবসা।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮৭):
- আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান গোপন করা মহাপাপ।
- দুনিয়ার সামান্য স্বার্থে দ্বীনের শিক্ষা বিক্রি করা নিকৃষ্ট কাজ।
- মুমিনদের কর্তব্য—আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।
ইহুদী আলেমরা কিতাব গোপন করত, অথচ দাবি করত তারা সত্য প্রকাশ করেছে এবং এর জন্য প্রশংসা পেতে চাইত। আল্লাহ জানিয়ে দিলেন—এরা শাস্তি থেকে মুক্ত হবে না।
- অহংকার: নিজেদের কাজের জন্য গর্ব করা।
- মিথ্যা প্রশংসা: কাজ না করেও প্রশংসা চাইত।
- ফলাফল: আখিরাতে তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮৮):
- যে কাজ করা হয়নি তার জন্য প্রশংসা চাওয়া গুনাহ।
- মিথ্যা প্রশংসা ও অহংকার মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
- আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না, যদি না সত্যবাদী হয়।
আল্লাহ মনে করিয়ে দিলেন—আসমান ও জমিনের মালিকানা কেবল তাঁরই। তাই প্রশংসা, সম্মান ও রাজত্বের দাবিদার আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয়। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান, তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত কিছুই ঘটে না।
- মালিকানা: পুরো মহাবিশ্ব আল্লাহর।
- ক্ষমতা: সব কিছুর উপর আল্লাহর পূর্ণ ক্ষমতা আছে।
- অর্থ: মানুষ অহংকার করলে কিছুই লাভ হবে না।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৮৯):
- আসমান-জমিন ও সব কিছুর মালিক আল্লাহ।
- আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
- প্রশংসা ও রাজত্ব মানুষের জন্য নয়, কেবল আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ আসমান-জমিনের সৃষ্টি ও রাত-দিনের পরিবর্তনের দিকে তাকাতে বলেছেন। এগুলো কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা নয়; বরং আল্লাহর অস্তিত্ব, ক্ষমতা ও জ্ঞানের নিদর্শন। প্রকৃত জ্ঞানীরা এসব দেখে আল্লাহর মহত্ত্ব অনুধাবন করে।
- সৃষ্টি: আসমান-জমিনের সুবিন্যস্ত সৃষ্টি।
- সময়: রাত-দিনের নিয়মিত পরিবর্তন।
- উপসংহার: এগুলো আল্লাহর শক্তি ও জ্ঞানের স্পষ্ট প্রমাণ।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯০):
- প্রকৃতির প্রতিটি পরিবর্তনে আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে।
- জ্ঞানবানরা প্রাকৃতিক ঘটনা থেকে আল্লাহর অস্তিত্ব চিনতে পারে।
- আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ইবাদতের অংশ।
প্রকৃত জ্ঞানীরা কেবল জগতের সৌন্দর্য দেখেই থেমে যায় না, বরং তারা আল্লাহকে সর্বাবস্থায় স্মরণ করে—দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে। তাঁরা চিন্তা করে আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে এবং দোয়া করে আখিরাতের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য।
- যিকির: আল্লাহর স্মরণ প্রতিটি অবস্থায়।
- চিন্তা: সৃষ্টিজগত নিয়ে গভীরভাবে ভাবা।
- দোয়া: জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯১):
- আল্লাহর স্মরণ শুধু নামাজে সীমাবদ্ধ নয়, প্রতিটি অবস্থায় হতে হবে।
- সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তা করা ঈমান বৃদ্ধির উপায়।
- আল্লাহর নিদর্শন দেখে আখিরাতের কথা স্মরণ করা ও দোয়া করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
মুমিনরা দোয়া করে বলেছে—আল্লাহর শাস্তি সবচেয়ে বড় অপমান। যে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, সে প্রকৃত অপমানিত। আর জালিমদের জন্য কিয়ামতের দিন কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।
- অপমান: জাহান্নামের শাস্তি সর্বোচ্চ অপমান।
- জালিমদের অবস্থা: তাদের সাহায্য করার কেউ থাকবে না।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯২):
- জাহান্নামে প্রবেশই আসল অপমান।
- জালিমরা আখিরাতে সাহায্যহীন হবে।
- মুমিনের দোয়া—জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।
এখানে মুমিনদের দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে— তারা আহ্বানকারীর (রাসূল ﷺ) ডাকে সাড়া দিয়ে ঈমান এনেছে। তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা, গুনাহ মাফ এবং সৎকর্মশীলদের সাথে মৃত্যুবরণ কামনা করেছে।
- আহ্বানকারী: রাসূল ﷺ যিনি ঈমানের দিকে আহ্বান করেছিলেন।
- দোয়া: ক্ষমা, গুনাহ মাফ, অপরাধ থেকে মুক্তি।
- আকাঙ্ক্ষা: সৎকর্মশীলদের সাথে জান্নাতি মৃত্যু।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯৩):
- রাসূল ﷺ–এর আহ্বান শোনে ঈমান আনা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
- গুনাহ মাফের জন্য নিয়মিত দোয়া করতে হবে।
- সৎকর্মশীলদের সাথে মৃত্যু পাওয়াই মুমিনের কামনা।
মুমিনরা দোয়া করে বলছে—আল্লাহ আমাদেরকে সেই পুরস্কার দিন যা তিনি নবীদের মাধ্যমে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন আমাদের অপমান করবেন না। আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী নন।
- প্রতিশ্রুতি: জান্নাত ও আখিরাতের পুরস্কার।
- দোয়া: কিয়ামতের দিনে অপমান থেকে মুক্তি।
- আল্লাহর বৈশিষ্ট্য: তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯৪):
- আল্লাহর দেওয়া প্রতিশ্রুতি সত্য, তা পূর্ণ হবেই।
- কিয়ামতের দিনে অপমান থেকে রক্ষা পাওয়া মুমিনের কামনা।
- আল্লাহ কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
মুমিনদের দোয়ার জবাব আল্লাহ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করলেন—পুরুষ বা নারী যেই হোক, আল্লাহ কারো আমল বৃথা যেতে দেবেন না। যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, কষ্ট সহ্য করেছে, যুদ্ধ করেছে ও শাহাদাত লাভ করেছে, আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করবেন এবং জান্নাত দান করবেন।
- সমতা: পুরুষ ও নারী উভয়ের আমল আল্লাহ কবুল করেন।
- মুজাহিদদের মর্যাদা: যারা হিজরত, কষ্ট ও যুদ্ধ করেছে তাদের বিশেষ পুরস্কার।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি: জান্নাত ও গুনাহ মাফ।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯৫):
- পুরুষ ও নারীর সৎ আমল আল্লাহ সমানভাবে গ্রহণ করেন।
- আল্লাহর পথে কষ্ট, হিজরত ও যুদ্ধ জান্নাতের পথ তৈরি করে।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুত পুরস্কারই সর্বোত্তম পুরস্কার।
কাফেরদের দুনিয়ার সমৃদ্ধি ও ভ্রমণ দেখে মুমিনরা যেন বিভ্রান্ত না হয়। এগুলো সাময়িক, আসল সফলতা আখিরাতে।
- কাফেরদের অবস্থা: দুনিয়ার সমৃদ্ধি তাদের জন্য প্রতারণা।
- সতর্কতা: মুমিন যেন ভোগবিলাস দেখে ধোঁকায় না পড়ে।
- বাস্তবতা: কাফেরদের দুনিয়ার জীবন অল্পকালীন।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯৬):
- কাফেরদের দুনিয়ার ভোগবিলাসে প্রতারিত হওয়া উচিত নয়।
- আখিরাতের সফলতা দুনিয়ার সাফল্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
- মুমিনের লক্ষ্য হওয়া উচিত জান্নাত, দুনিয়ার বিলাসিতা নয়।
কাফেরদের দুনিয়ার ভোগবিলাস আসলে খুব অল্প ও ক্ষণস্থায়ী। তাদের চূড়ান্ত আশ্রয় হবে জাহান্নাম, যা ভয়াবহ ও নিকৃষ্ট আবাসস্থল।
- দুনিয়ার বাস্তবতা: সামান্য ও অল্পকালীন সুখ।
- আখিরাতের শাস্তি: কাফেরদের চূড়ান্ত গন্তব্য জাহান্নাম।
- উপমা: জাহান্নামকে বলা হয়েছে নিকৃষ্ট শয্যা।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯৭):
- দুনিয়ার সুখ সাময়িক, আখিরাতই চিরস্থায়ী।
- কাফেরদের জন্য জান্নাত নয়, বরং জাহান্নামই চূড়ান্ত আশ্রয়।
- জাহান্নাম নিকৃষ্ট আবাস, তাই মুমিনদের তা থেকে বাঁচতে হবে।
কাফেরদের জাহান্নামের বিপরীতে মুমিনদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার ও সম্মান।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯৮):
- তাকওয়াই জান্নাত লাভের প্রধান উপায়।
- জান্নাত আল্লাহর পক্ষ থেকে আতিথেয়তা ও স্থায়ী আবাস।
- আল্লাহর পুরস্কার দুনিয়ার যেকোনো ভোগবিলাসের চেয়ে উত্তম।
সব আহলে কিতাব একরকম নয়। তাদের মধ্যে অনেকে আল্লাহতে ঈমান এনেছে এবং কুরআন ও পূর্ববর্তী কিতাব দুটোতেই বিশ্বাস করে। তারা আল্লাহর সামনে বিনয়ী এবং দ্বীনের বদলে দুনিয়ার স্বার্থ বিক্রি করে না। আল্লাহ তাদের জন্য আখিরাতে পুরস্কার রেখেছেন।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ১৯৯):
- সব আহলে কিতাব কাফের নয়; অনেকেই প্রকৃত মুমিন ছিল।
- আল্লাহর কিতাব বিক্রি করা মহাপাপ।
- আল্লাহর কাছে প্রতিটি সৎকর্মের পূর্ণ প্রতিদান রয়েছে।
আল্লাহ মুমিনদের প্রতি নির্দেশ দিলেন— ধৈর্য ধরো, শত্রুর সাথে ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো, সীমান্তে প্রহরী দাও ও সতর্ক থাকো, এবং সর্বোপরি তাকওয়া অবলম্বন করো। সফলতা কেবল এই চারটি গুণ অর্জনের মাধ্যমেই আসবে।
শিক্ষনীয় বিষয় (আয়াত ২০০):
- মুমিনদের জন্য ধৈর্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
- শত্রুর মোকাবেলায় ধৈর্যে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
- সবসময় সতর্ক থাকা ও তাকওয়া অবলম্বন করা সফলতার চাবিকাঠি।