সূরা আল-আ’রাফ

আয়াত সংখ্যা: ২০৬, রুকু সংখ্যা: ২৪
আয়াত সংখ্যাঃ-, ২০৬ রুকু সংখ্যাঃ-২৪

সূরা আল-আ’রাফ অর্থ “উচ্চ প্রাচীর” বা “উচ্চ স্থানসমূহ”। এটি কুরআনের ৭ম সূরা এবং এতে মোট ২০৬টি আয়াত রয়েছে। এটি একটি মাক্কী সূরা, অর্থাৎ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে মূলত ঈমান, নবুওয়াত, আখিরাত ও মানব ইতিহাসের শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। সূরাটির নাম এসেছে আয়াত ৪৬ থেকে, যেখানে “আ’রাফ” (উচ্চ প্রাচীর)-এর উল্লেখ রয়েছে — যা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝামাঝি স্থানে থাকবে।

সূরা আল-আ’রাফ একটি গভীর ও হৃদয়স্পর্শী সূরা। এতে অতীত নবীদের ঘটনা, মানবজাতির প্রথম ইতিহাস এবং আল্লাহর বিধান অমান্যের পরিণতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আল্লাহর রহমত, দয়া এবং ক্ষমার দরজাও উন্মুক্ত করে দেখানো হয়েছে।

সূরাটির শুরু ও শেষাংশে আল্লাহর একত্ব, কুরআনের সত্যতা, নবী ﷺ এর প্রতি বিশ্বাস এবং আখিরাতের জবাবদিহিতা সম্পর্কে জোরালো আহ্বান রয়েছে। এটি মানুষের ঈমান জাগ্রত করার সূরা — যেখানে যুক্তি, ইতিহাস, উপদেশ ও উদাহরণ মিলিত হয়েছে।

🌿 সূরা আল-আ’রাফ-এর মূল বিষয়সমূহ:

  • আল্লাহর একত্ব, নবুওয়াত ও আখিরাতের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা।
  • আদম (আঃ) ও ইবলিসের কাহিনি — অহংকার ও অবাধ্যতার পরিণতি।
  • নূহ (আঃ), হুদ (আঃ), সালিহ (আঃ), লুত (আঃ), শুয়াইব (আঃ) ও মূসা (আঃ)-এর ইতিহাস।
  • আল্লাহর রাসূলদের অমান্যকারীদের ধ্বংসের চিত্র।
  • “আ’রাফের মানুষ” — যারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থাকবে।
  • কিয়ামতের বর্ণনা এবং জান্নাত-জাহান্নামের চিত্রায়ণ।
  • কুরআনের প্রতি আনুগত্য ও অহংকার থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ।

🌸 সূরা আল-আ’রাফ-এর বৈশিষ্ট্য:

  • এ সূরায় ইতিহাস, উপদেশ ও দর্শনের সমন্বয়ে মানবজাতির জন্য নৈতিক পাঠ তুলে ধরা হয়েছে।
  • এতে মানুষের সৃষ্টি, পরীক্ষার উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর নির্দেশের সার্বজনীনতা আলোচনা করা হয়েছে।
  • ইবলিসের অহংকার, হিংসা ও প্রতারণার মূল কারণ হিসেবে আত্মগরিমা উল্লেখ করা হয়েছে।
  • নবী ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি সূরা আল-আ’রাফ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাঁর ও শয়তানের মাঝে একটি আড়াল সৃষ্টি করবেন।” (📖 তাফসীর আল-কুরতুবী)
  • এ সূরায় আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্তকারী শয়তানের কৌশল ও তার বিরুদ্ধে সতর্কতার নির্দেশ রয়েছে।

💫 সূরা আল-আ’রাফ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা:

  • আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে যেমন ইবলিস ধ্বংস হয়েছে, তেমনি মানুষও ধ্বংস হয়।
  • অহংকার, হিংসা ও মিথ্যাচার মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে।
  • প্রত্যেক নবীর দাওয়াত ছিল এক — “আল্লাহর ইবাদত করো, শিরক থেকে দূরে থাকো।”
  • আল্লাহর নির্দেশে জীবন পরিচালনা করলে সফলতা ও শান্তি অর্জিত হয়।
  • মানুষকে পরকালের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে — দুনিয়া শুধু পরীক্ষা ক্ষেত্র।

🌿 শিক্ষণীয় বিষয়:

  • তাওহীদের ভিত্তিতে জীবন গঠন করতে হবে।
  • অহংকার, অবাধ্যতা ও প্রতারণা মানবতার শত্রু।
  • আল্লাহর রাসূলদের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে ঈমান দৃঢ় হয়।
  • আখিরাতের জবাবদিহিতা মনে রাখলে অন্যায় থেকে বিরত থাকা যায়।
  • সূরা আল-আ’রাফ আমাদের শেখায় — সত্য প্রত্যাখ্যান করলে মানুষ নিজেরই ক্ষতি করে।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু।
আয়াত ১
المصٓ
আলিফ-লা-মীম-সাদ্‌।
“আলিফ, লাম, মীম, সাদ।” — (এগুলি হরফে মুকাত্তাআত — যার প্রকৃত অর্থ আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।)
তাফসীর:
এই সূরার সূচনা হয়েছে রহস্যময় বর্ণমালা দ্বারা — **“আলিফ, লাম, মীম, সাদ।”** 🌿 এগুলোকে বলা হয় **হুরুফে মুকাত্তাআত** (বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ)।

১️⃣ “المصٓ” —
এই হরফগুলোর প্রকৃত অর্থ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তবে ইসলামি আলেমরা বলেন, এই অক্ষরগুলোর মধ্যে গভীর বার্তা নিহিত আছে। 🌿 এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন — কুরআনের এই অলৌকিক বাণীও তোমাদের পরিচিত বর্ণমালার অক্ষর দিয়েই গঠিত। অথচ তোমরা এই অক্ষরগুলো ব্যবহার করেও এর মতো একটি সূরা সৃষ্টি করতে পারো না। 🌸 অর্থাৎ, **এটি কুরআনের মু‘জিযা (অলৌকিকতা)** প্রদর্শনের এক ভিন্ন ধারা।

🌿 কিছু মুফাসসির (যেমন ইবন কাসির, কুরতুবি, ফখরুদ্দিন রাজি) বলেন — এই হরফগুলোর দ্বারা আল্লাহ নবী ﷺ ও মুমিনদের উদ্দেশ্যে মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, যেন তাঁরা পরবর্তী আয়াতগুলো আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেন।

🌸 **গভীর ভাবনা:** এই হরফগুলো আমাদের শেখায় — কুরআনের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষরই আল্লাহর ওহি। এমনকি যেগুলোর অর্থ আমাদের কাছে অজানা, সেগুলোর মধ্যেও হিকমত (প্রজ্ঞা) লুকানো আছে। 🌿 এটি আমাদের তাওহীদ ও বিনয় শেখায় — আমরা সব কিছু জানতে পারি না, কিন্তু বিশ্বাস করি — **আল্লাহ যা বলেছেন, সেটিই সত্য।**

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো বিজ্ঞানী যখন একটি জটিল সূত্র লিখে, সাধারণ মানুষ সেটি পুরো বুঝতে না পারলেও বিশ্বাস করে — এর পেছনে জ্ঞান ও যুক্তি আছে 🌿 তেমনি মুমিনও বিশ্বাস করে — এই হরফগুলো অর্থপূর্ণ, যদিও তার জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই।

🌸 **এই আয়াতের বার্তা:** - কুরআন আল্লাহর সরাসরি বাণী, যার উৎস অদ্বিতীয়। - মানুষ জ্ঞানে সীমিত; আল্লাহ সর্বজ্ঞ। - কুরআনের প্রতিটি আয়াতই হিকমত ও নির্দেশনায় পরিপূর্ণ।

🌸 শিক্ষনীয় বিষয়:
  • মানুষের জ্ঞান সীমিত, আল্লাহর জ্ঞান সীমাহীন।
  • কুরআনের প্রতিটি অক্ষরই আল্লাহর ওহি — এমনকি অজানা হরফগুলোও।
  • কুরআন মানুষের চিন্তা-ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে — “এর মতো কিছু আনো, যদি পারো।”
  • এই হরফগুলো আমাদের মনে বিনয় ও শ্রদ্ধার অনুভূতি জাগায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**“المصٓ”** — এক রহস্যময় সূচনা 🌸 এটি কুরআনের ঐশী অলৌকিকতার নিদর্শন, যা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় — কুরআন কোনো মানবীয় রচনা নয়, এটি একমাত্র আল্লাহর বাণী। 🌿 তাই প্রতিটি অক্ষরের প্রতি শ্রদ্ধা, মনোযোগ ও ঈমানের দৃষ্টিতে তাকাও — কেননা এই অক্ষরগুলোতেই লুকানো আছে আল্লাহর বাণীর মহিমা 🤍
আয়াত ২
كِتَـٰبٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُن فِى صَدْرِكَ حَرَجٌۭ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِۦ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
কিতাবুন উনযিলা ইলাইকা, ফালা ইয়াকুন ফি সদরিকা হারাজুম মিনহু, লিতুন্জিরা বিহি, ওয়া যিকরা লিল মুমিনীন।
“এটি একটি কিতাব, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে; সুতরাং যেন তোমার বক্ষে এ সম্পর্কে কোনো সংকীর্ণতা না থাকে — যাতে তুমি এর মাধ্যমে সতর্ক করতে পারো, এবং এটি মুমিনদের জন্য উপদেশস্বরূপ।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী ﷺ-কে সরাসরি সম্বোধন করে বলেছেন 🌿 — “এই কিতাব (কুরআন) তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে।” অর্থাৎ, এটি কোনো মানবরচিত পুস্তক নয়, বরং আসমান থেকে প্রেরিত এক ঐশী ওহি।

১️⃣ “كِتَـٰبٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ” —
“এটি একটি কিতাব, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে।”
🌿 এই ঘোষণা নবী ﷺ-এর রিসালতের প্রমাণ। কুরআন এসেছে সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে, তাই এতে কোনো সন্দেহ বা দ্বিধার স্থান নেই। 🌸 এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী ﷺ-এর প্রতি দায়িত্বের সূচনা — তাঁর হাতে অর্পিত হয়েছে মানবতার দিকনির্দেশনার চাবি। 🌿 কুরআন কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয় — এটি মানুষের জন্য **জীবনের নির্দেশিকা**।

২️⃣ “فَلَا يَكُن فِى صَدْرِكَ حَرَجٌۭ مِّنْهُ” —
“সুতরাং যেন তোমার বক্ষে এ সম্পর্কে কোনো সংকীর্ণতা না থাকে।”
🌿 আল্লাহ নবী ﷺ-কে বললেন — কুরআনের দাওয়াত প্রচারে যেন কোনো ভয়, সংকোচ বা দ্বিধা তোমার অন্তরে না থাকে। 🌸 কারণ এই বাণী সত্য, যদিও অনেক মানুষ তা অস্বীকার করবে। 🌿 নবী ﷺ-কে দুঃখিত হতে নিষেধ করা হয়েছে — যদি মানুষ না শোনে, বা কষ্ট দেয়, তবে তাও যেন তাঁর সাহস ও আত্মবিশ্বাস কমিয়ে না দেয়। 🌸 এটি নবীজির জন্য সান্ত্বনা, এবং সকল দাঈদের (দাওয়াত প্রদানকারীর) জন্য অনুপ্রেরণা 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন শিক্ষক যখন কঠিন সত্য বলেন, ছাত্ররা প্রথমে বুঝতে না পারলেও, তিনি জানেন — সত্যই শেষ পর্যন্ত আলোকিত করবে 🌿 তেমনি নবী ﷺ-ও জানতেন — এই কিতাবই সত্যের আলো, যদিও অনেকেই অস্বীকার করবে।

৩️⃣ “لِتُنذِرَ بِهِۦ” —
“যাতে তুমি এর মাধ্যমে সতর্ক করতে পারো।”
🌿 কুরআনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো **“ইনযার” — সতর্কবার্তা প্রদান।** এটি মানুষকে গাফেলতায় ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে, আখিরাতের ভয়, হিসাবের দিন ও শাস্তির পরিণতি স্মরণ করায়। 🌸 নবী ﷺ-এর কাজ ছিল — মানুষকে সতর্ক করা, যেন তারা আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচে। 🌿 তাই দাওয়াত মানে শুধু “শুভ সংবাদ” নয়, বরং “সতর্কতা”ও।

৪️⃣ “وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ” —
“এবং এটি মুমিনদের জন্য উপদেশস্বরূপ।”
🌿 কুরআন কেবল অবিশ্বাসীদের জন্য সতর্কবার্তা নয়, বরং মুমিনদের জন্য **দৈনন্দিন স্মরণ ও হৃদয় প্রশান্তির উৎস।** 🌸 মুমিনরা কুরআন থেকে শিক্ষা, সান্ত্বনা, সাহস ও দিকনির্দেশনা পায় 🌿 এটি তাদের ঈমান নবায়ন করে, মনকে আলোকিত করে। 🌿 তাই কুরআন কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের জন্য জীবন্ত হিদায়াত।

🌿 গভীর উপলব্ধি:
এই আয়াতের চারটি অংশে কুরআনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ফুটে উঠেছে 🌸 ১️⃣ এটি আল্লাহর পাঠানো ঐশী কিতাব। ২️⃣ নবী ﷺ-এর অন্তরে সাহস ও আত্মবিশ্বাস জাগায়। ৩️⃣ এটি মানুষকে সতর্ক করে শিরক ও অবাধ্যতা থেকে। ৪️⃣ এটি মুমিনদের জন্য আলো, শিক্ষা ও সান্ত্বনা। 🌸 কুরআন যেন নবী ﷺ-এর অন্তরে দৃঢ়তা সৃষ্টি করে, আর মুমিনদের অন্তরে নূর জ্বেলে দেয় 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি বাতি অন্ধকারে মানুষকে পথ দেখায়, তেমনি কুরআনও মানুষের জীবনের অন্ধকার দূর করে 🌿 যারা ঈমান আনে, তাদের জন্য এটি আলো, দিকনির্দেশনা ও আশ্রয়।

🌸 শিক্ষনীয় বিষয়:
  • কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি প্রেরিত ঐশী কিতাব।
  • কুরআন প্রচারে কখনো দ্বিধা বা ভয় দেখানো যাবে না।
  • এটি অবিশ্বাসীদের জন্য সতর্কবার্তা, মুমিনদের জন্য উপদেশ।
  • দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে হিদায়াত ও সতর্কবার্তা পৌঁছানো।
  • কুরআন জীবনের প্রতিটি দিকনির্দেশনার কেন্দ্রবিন্দু।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“كِتَـٰبٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُن فِى صَدْرِكَ حَرَجٌۭ مِّنْهُ...”** 🤍 — “এই কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে; এতে যেন কোনো সংকোচ না থাকে; এটি সতর্কবার্তা ও মুমিনদের জন্য উপদেশ।” 🌸 এই আয়াত নবী ﷺ-কে সাহস ও প্রশান্তির বার্তা দেয়, আর মুমিনদের শেখায় — কুরআন শুধু পড়ার নয়, হৃদয়ে ধারণ করার এবং জীবনে বাস্তবায়নের জন্য অবতীর্ণ 🌿
আয়াত ৩
ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ ۗ قَلِيلًۭا مَّا تَذَكَّرُونَ
ইত্তাবিঊ মা উনযিলা ইলাইকুম মিন রব্বিকুম, ওয়ালা তাত্তাবিঊ মিন দুনিহি আওলিয়া’; কালীলান মা তাযাক্কারূন।
“তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তা অনুসরণ করো, এবং তাঁর বাইরে অন্য কোনো অভিভাবক (অধিনায়ক) অনুসরণ করো না। তোমরা খুবই অল্প চিন্তা-ভাবনা করো।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন — **কুরআনের পথ অনুসরণ করো এবং অন্য কারো অন্ধ অনুসরণ করো না।** 🌿 এটি সেই আহ্বান যা প্রতিটি যুগের মুমিনের জন্য এক চিরন্তন দাওয়াত।

১️⃣ “ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ” —
“তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা অনুসরণ করো।”
🌿 এখানে “ইত্তাবিঊ” অর্থাৎ অনুসরণ করো — এটি শুধু পড়া বা মুখস্থ করার আহ্বান নয়, বরং কুরআনের প্রতিটি আদেশ ও বিধান **জীবনে বাস্তবায়নের** নির্দেশ। 🌸 আল্লাহর কিতাব শুধু পাঠের জন্য নয়, এটি জীবনের **আইন, পথ ও আলো।** 🌿 অর্থাৎ, “তোমরা তোমাদের সিদ্ধান্ত, সংস্কৃতি, রীতি — সবকিছু কুরআনের আলোয় নির্ধারণ করো।”

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন পথিক অন্ধকার রাতে মানচিত্র অনুযায়ী চলে, তেমনি একজন মুমিন কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে 🌿 🌿 এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মনে করিয়ে দেন — “তোমাদের রব্বই তোমাদের পথ নির্ধারণ করেছেন, তাই অন্য কোনো উৎস থেকে জীবনদিশা নিও না।”

২️⃣ “وَلَا تَتَّبِعُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ” —
“এবং তাঁর বাইরে অন্য কোনো অভিভাবক অনুসরণ করো না।”
🌿 অর্থাৎ, আল্লাহর হুকুম ছেড়ে অন্যদের নির্দেশ বা রায় অনুসরণ করো না। কেউ হোক নেতা, সমাজ, সংস্কৃতি বা শয়তানের প্ররোচনা — যদি তা আল্লাহর আদেশের বিপরীতে যায়, তবে তা অনুসরণ করা হারাম। 🌸 কারণ আল্লাহই একমাত্র “ওয়ালী” (অভিভাবক, পথপ্রদর্শক)। তাঁর বাইরে কেউ আমাদের প্রকৃত মঙ্গল চায় না। 🌿 “অওলিয়া” অর্থ এমন ব্যক্তিবর্গ বা ব্যবস্থা, যাদের অনুসরণে মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** মানুষ প্রায়ই নিজের ইচ্ছা, সমাজের প্রভাব বা নেতার কথায় চলে, কিন্তু আল্লাহ বলেন — **“আমার নাযিলকৃত ওহি অনুসরণ করো, তবেই নিরাপদ থাকবে।”** 🌿

৩️⃣ “قَلِيلًۭا مَّا تَذَكَّرُونَ” —
“তোমরা খুবই অল্প চিন্তা-ভাবনা করো।”
🌿 আল্লাহ দুঃখ প্রকাশ করে বলছেন — মানুষ এত নিদর্শন, এত উপদেশ পাওয়ার পরও সামান্যই চিন্তা করে। 🌸 কুরআন শুধু পাঠ নয়, এটি চিন্তা করার আহ্বান: **“أَفَلَا تَعْقِلُونَ — তোমরা কি বুদ্ধি খাটাও না?”** 🌿 মুমিন সেই ব্যক্তি, যে শুধু শুনে নয়, চিন্তা করে, বুঝে, তারপর তা জীবনে বাস্তবায়ন করে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন রোগী ওষুধ কিনে তাকেই রেখে দেয়, তাহলে রোগ সারবে না 🌿 তেমনি কুরআন শুধু পড়লে নয়, এর শিক্ষা গ্রহণ করলে তবেই আত্মা সুস্থ হবে।

🌿 গভীর উপলব্ধি:
এই আয়াত কুরআনের মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেয় 🌸 এটি কোনো গল্পের বই নয়, বরং **জীবনের দিকনির্দেশনা।** আল্লাহর বাণী অনুসরণ করলেই প্রকৃত শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। 🌸 যারা কুরআনের বাইরে অন্যদের অনুসরণ করে, তারা নিজেরাই বিভ্রান্তি বেছে নেয়। 🌿 তাই আল্লাহ আহ্বান জানালেন — “তোমাদের রব তোমাদের জন্য যা পাঠিয়েছেন, তাই অনুসরণ করো।” এটাই মুক্তির একমাত্র পথ।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • কুরআনই একমাত্র নির্ভুল পথনির্দেশনা।
  • আল্লাহর বাইরে অন্য কাউকে অনুসরণ করা শিরকের দিকে নিয়ে যায়।
  • মুমিনের জীবন কুরআনের বিধান অনুযায়ী গঠিত হওয়া উচিত।
  • চিন্তাশীল হওয়া ঈমানের একটি অঙ্গ।
  • আল্লাহর বাণী অনুসরণে নিরাপত্তা, অন্য পথে বিভ্রান্তি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ...”** 🤍 — “তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা অনুসরণ করো; অন্য কাউকে অনুসরণ করো না।” 🌸 এটি প্রতিটি যুগের মুসলমানের জন্য এক অনন্ত দাওয়াত 🌿 কুরআনই পথ, কুরআনই আলো, কুরআনই মুক্তি। তাই একে হৃদয়ে ধারণ করো, জীবনে বাস্তবায়ন করো — কারণ এটাই আল্লাহর দিকে যাবার একমাত্র সোজা পথ 🤍
আয়াত ৪
وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـٰهَا فَجَآءَهَا بَأْسُنَا بَيَـٰتًا أَوْ هُمْ قَآئِلُونَ
ওয়া কাম্‌ মিন ক্বারইয়াতিন আহলাক্‌না-হা, ফা জা-আ-হা বা’সুনা বায়া-তান আও হুম কা-ইলূন।
“আর কত যে জনপদ আমরা ধ্বংস করেছি! আমাদের শাস্তি তাদের উপর নেমে এসেছে — কখনো রাত্রিবেলা, আবার কখনো দুপুরে যখন তারা বিশ্রামে ছিল।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা অতীত জাতিগুলোর ইতিহাসের মাধ্যমে সতর্ক করেছেন 🌿 তিনি বলছেন — “দেখো, কত জাতিকে আমি ধ্বংস করেছি, যখন তারা অহংকারে ডুবে আমার বার্তা অস্বীকার করেছিল।” এটি আল্লাহর **ন্যায়বিচার ও সতর্কতার শিক্ষা**, যাতে মানুষ বুঝে — দুনিয়ার সাময়িক শক্তি কখনো আল্লাহর শাস্তি ঠেকাতে পারে না।

১️⃣ “وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـٰهَا” —
“আর কত যে জনপদ আমরা ধ্বংস করেছি।”
🌿 এখানে “কাম্‌” শব্দটি বহুবচন নির্দেশ করছে — অর্থাৎ, অসংখ্য জনপদ ও জাতি, যারা আল্লাহর নবীদের অস্বীকার করেছিল। 🌸 আল্লাহর রাসূলদের অবমাননা, অবাধ্যতা ও অন্যায়ের কারণে তারা ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে — যেমন নূহ (আঃ)-এর জাতি, আদ, সামুদ, লুত, মদইয়ান প্রভৃতি জাতি। 🌿 আল্লাহর শাস্তি যখন আসে, তখন কোনো জাতি, রাজ্য বা সেনাবাহিনী তা প্রতিহত করতে পারে না।

২️⃣ “فَجَآءَهَا بَأْسُنَا” —
“আমাদের শাস্তি তাদের উপর নেমে এসেছে।”
🌿 আল্লাহর “বা’স” মানে তাঁর কঠোর শাস্তি ও প্রতিশোধ। এটি কখনো বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প, বজ্রপাত বা যুদ্ধের আকারে আসে। 🌸 এতে বোঝা যায়, আল্লাহর ধৈর্য সীমাহীন হলেও অবশেষে যখন মানুষ সীমা অতিক্রম করে, তখন বিচার অনিবার্য হয়ে পড়ে। 🌿 এ শাস্তি আসে হঠাৎ, যখন মানুষ সবচেয়ে নিশ্চিন্ত থাকে।

৩️⃣ “بَيَـٰتًا أَوْ هُمْ قَآئِلُونَ” —
“কখনো রাত্রিবেলা, আবার কখনো দুপুরে যখন তারা বিশ্রামে ছিল।”
🌿 অর্থাৎ, আল্লাহর শাস্তি কখনো রাতে তাদের ঘুমের সময়, আবার কখনো দিনের বিশ্রামের সময় নেমে আসে — যখন তারা একদম অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকে। 🌸 এটি ইঙ্গিত দেয় — আল্লাহর শাস্তি হঠাৎ আসে, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই, যেন মানুষ তাঁর শক্তি উপলব্ধি করে। 🌿 দুনিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রাচীর বা ক্ষমতা — কিছুই তখন তাদের বাঁচাতে পারে না।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে দেয় — আল্লাহর অবাধ্যতা কখনো হালকা অপরাধ নয়। তাঁর দয়া যেমন অসীম, তেমনি তাঁর বিচারও নির্ভুল। 🌸 মানুষ যখন অন্যায়কে স্বাভাবিক মনে করে, সত্যকে অবজ্ঞা করে এবং অহংকারে গর্ব করে, তখনই ধ্বংসের পথ শুরু হয়। 🌿 আল্লাহ তাদের উদাহরণ দিচ্ছেন যেন আমরা সেই পথ অনুসরণ না করি।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো নগরীতে মানুষ অন্যায়ে মত্ত থাকে, আর একদিন হঠাৎ একটি ভূমিকম্প বা দুর্যোগ এসে সবকিছু উল্টে দেয় 🌿 এটি কেবল প্রকৃতির কাজ নয় — বরং আল্লাহর বিচার প্রকাশ পায়।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর শাস্তি কখনো হঠাৎ এসে যায়, যখন মানুষ অচেতন থাকে।
  • পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধ্বংস ইতিহাস আমাদের জন্য সতর্কবার্তা।
  • অহংকার, শিরক ও অবাধ্যতা সমাজের পতনের মূল কারণ।
  • আল্লাহর আদেশ থেকে দূরে গেলে, তাঁর ন্যায়বিচার অনিবার্য হয়ে পড়ে।
  • মুমিনের উচিত সর্বদা তাওবা ও আল্লাহর প্রতি বিনয়ী থাকা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـٰهَا...”** 🤍 — “আর কত যে জনপদ আমরা ধ্বংস করেছি; যখন তারা অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল, তখন আমাদের শাস্তি নেমে এসেছিল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — অহংকার, অন্যায় ও অবিশ্বাসের ফল কখনো শুভ নয় 🌿 তাই মুমিনের কর্তব্য — আল্লাহর বাণী অনুসরণ করা, যেন আমরা অতীত জাতিগুলোর মতো ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত না হই 🤍
আয়াত ৫
فَمَا كَانَ دَعْوَىٰهُمْ إِذْ جَآءَهُم بَأْسُنَآ إِلَّآ أَن قَالُوٓا۟ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِينَ
ফা মা কা-না দা‘ওয়া-হুম ইয্‌ জা-আহুম বা’সুনা, ইল্লা আন্‌ ক্বা-লূ ইন্না কুন্না য্বা-লিমীন।
“তাদের উপর যখন আমার শাস্তি আপতিত হলো, তখন তাদের আহ্বান (চিৎকার) ছাড়া আর কিছুই ছিল না — শুধু এই কথা বলা: ‘নিশ্চয়ই আমরা ছিলাম অন্যায়কারী।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা অতীতের সেই জাতিগুলোর **পরিণতি ও অনুতাপের দৃশ্য** তুলে ধরেছেন 🌿 যখন তাঁর শাস্তি তাদের ঘিরে ধরল, তখন তারা কিছুই বলতে পারল না, শুধু চিৎকার করে স্বীকার করল — “আমরা সত্যিই অন্যায়কারী ছিলাম!” কিন্তু তখন সেই স্বীকারোক্তি আর কোনো কাজে এল না 💔

১️⃣ “فَمَا كَانَ دَعْوَىٰهُمْ” —
“তাদের আহ্বান (দোয়া, চিৎকার, আবেদন) কিছুই কাজে আসেনি।”
🌿 আল্লাহ বলছেন — যখন শাস্তি এসে গেল, তখন তাদের আর কোনো সুযোগ ছিল না। তারা তখন কেবল সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল, কিন্তু সেই চিৎকার আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। 🌸 কারণ তারা দীর্ঘদিন দাওয়াত শুনেও তা উপেক্ষা করেছিল। আল্লাহর সতর্কতা, নবীদের আহ্বান — সবকিছুই তারা অবজ্ঞা করেছিল। 🌿 তাই যখন বাস্তবতা সামনে এলো, তখন চিৎকারে আর লাভ ছিল না।

২️⃣ “إِذْ جَآءَهُم بَأْسُنَا” —
“যখন তাদের উপর আমাদের শাস্তি আপতিত হলো।”
🌿 আল্লাহর “বা’স” মানে কঠোর প্রতিশোধ ও ন্যায়বিচার। এটি হঠাৎ করে আসে, এবং কোনো জাতি তা রোধ করতে পারে না। 🌸 যখন সেই শাস্তি আসে, তখন মানুষ বুঝে যায় — আল্লাহর ক্ষমতা সীমাহীন এবং তাঁর বিচার অনিবার্য। 🌿 কিন্তু তখন অনুতাপের সময় ফুরিয়ে যায়।

৩️⃣ “إِلَّآ أَن قَالُوٓا۟ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِينَ” —
“তারা শুধু বলল — নিশ্চয়ই আমরা ছিলাম অন্যায়কারী।”
🌿 অবশেষে যখন তারা বাস্তব শাস্তি দেখল, তখন নিজেরাই স্বীকার করল — “আমরা জালিম ছিলাম, অন্যায় করেছি।” 🌸 কিন্তু তখন সেই স্বীকারোক্তি মূল্যহীন হয়ে যায়, কারণ তা **ভয় ও হতাশা থেকে আসা দেরি করা তাওবা।** 🌿 তাওবা তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন তা **হৃদয় থেকে আসে শাস্তি আসার আগে।**

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো ছাত্র পরীক্ষার ফলাফল দেখে কাঁদে — কিন্তু পড়াশোনার সময় সে চেষ্টা করেনি 🌿 তেমনি মানুষ যখন মৃত্যুর সময় বা শাস্তির মুহূর্তে অনুতপ্ত হয়, তখন সেই অনুশোচনা আর গ্রহণযোগ্য হয় না।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত মানুষকে তাওবার গুরুত্ব শেখায় 🌸 আল্লাহ দেরি করেন, কিন্তু ভুলে যান না। তিনি সুযোগ দেন, সতর্ক করেন, বারবার দাওয়াত পাঠান। কিন্তু যদি কেউ অহংকারে অন্ধ থাকে, তবে একসময় এমন বাস্তবতা আসে, যখন বলারও শক্তি থাকে না। 🌿 তখন মুখে শুধু উচ্চারিত হয় — **“إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِينَ” — আমরা সত্যিই অন্যায়কারী ছিলাম।”**

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর সতর্কবার্তা উপেক্ষা করলে একসময় অনুতাপের সুযোগ শেষ হয়ে যায়।
  • শাস্তি আসার পর তাওবা গ্রহণযোগ্য হয় না।
  • তাওবা করতে হবে আন্তরিকভাবে, শাস্তির ভয় থেকে নয় — আল্লাহর ভয়ে।
  • অতীতের জাতিগুলোর স্বীকারোক্তি আমাদের জন্য সতর্কতা।
  • আল্লাহ ন্যায়বিচারকারী, দেরি করেন কিন্তু অবহেলা করেন না।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَمَا كَانَ دَعْوَىٰهُمْ إِذْ جَآءَهُم بَأْسُنَآ إِلَّآ أَن قَالُوٓا۟ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِينَ”** 🤍 — “আমাদের শাস্তি যখন তাদের উপর নেমে এলো, তখন তারা শুধু বলল — আমরা তো অন্যায়কারী ছিলাম।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শিক্ষা দেয় — মৃত্যুর আগে তাওবা করো, বিপদের আগেই ফিরে এসো 🌿 কারণ যখন শাস্তি নেমে আসে, তখন অনুতাপও নিরর্থক হয়ে যায়। আল্লাহর কাছে ফিরে আসাই একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় 🤍
আয়াত ৬
فَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلْمُرْسَلِينَ
ফা লানাস’আলান্নাল্লাযীনা উরসিলা ইলাইহিম, ওয়া লানাস’আলান্নাল মুরসালীন।
“অতএব, যাদের প্রতি রসূল পাঠানো হয়েছিল, অবশ্যই তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসা করব; এবং অবশ্যই আমরা রসূলদেরও জিজ্ঞাসা করব।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা **কিয়ামতের দিনের বিচার ও জবাবদিহিতা** সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন 🌿 তিনি বলছেন — “আমরা প্রশ্ন করব — উভয় পক্ষকে: যাদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছিল (মানুষ), এবং যারা বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল (নবী-রাসূল)।” 🌸 অর্থাৎ, কেউই জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত নয়।

১️⃣ “فَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ” —
“যাদের প্রতি রসূল পাঠানো হয়েছিল, অবশ্যই তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসা করব।”
🌿 অর্থাৎ, আল্লাহ মানবজাতিকে প্রশ্ন করবেন — “তোমাদের কাছে যখন আমার রাসূলরা এসেছিল, তখন তোমরা কী করেছিলে?” 🌸 তারা দাওয়াতকে গ্রহণ করেছিল নাকি অস্বীকার করেছিল — সেটিই হবে তাদের জবাবদিহিতার বিষয়। 🌿 এটি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রতিটি জাতি, প্রতিটি ব্যক্তি আল্লাহর বার্তার সামনে দায়বদ্ধ। কেউ বলতে পারবে না — “আমরা জানতাম না।”

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো রাজা তার দূত পাঠান কোনো আইন জানাতে, তারপর বলেন — “আমি তোমাকে জানিয়েছিলাম, এখন বলো, তুমি কী করেছ?” 🌿 তেমনি আল্লাহও প্রশ্ন করবেন — “আমার রাসূল তোমাদের কাছে এসেছিল, তোমরা কী করেছিলে?”

২️⃣ “وَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلْمُرْسَلِينَ” —
“এবং অবশ্যই আমরা রসূলদেরও জিজ্ঞাসা করব।”
🌿 আল্লাহ নবী-রাসূলদেরকেও প্রশ্ন করবেন — “তোমরা কি আমার বার্তা যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছিলে?” 🌸 এটি কোনো সন্দেহ বা অভিযোগের প্রশ্ন নয়, বরং ন্যায়বিচার সম্পূর্ণ করার এক অংশ। 🌿 নবীরা তখন সাক্ষ্য দেবেন যে — “হে আল্লাহ, আমরা পৌঁছে দিয়েছিলাম, কিন্তু অনেকে শুনেও অমান্য করেছিল।” 🌸 যেমন কুরআনে আছে — **“لِتَكُونُوا۟ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ”** — “যাতে তোমরা (নবীগণ) মানুষের উপর সাক্ষী হতে পারো।” (সূরা আল-বাকারা ২:১৪৩)

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত প্রমাণ করে যে — কিয়ামতের দিন শুধু দুনিয়ার কাজ নয়, **দাওয়াত ও সত্য প্রচারের দায়িত্বেরও হিসাব নেওয়া হবে।** 🌸 নবীদের প্রশ্ন করা মানে — তাদের মাধ্যমে মানবজাতির অবস্থান প্রকাশ করা। 🌿 যেমন একজন শিক্ষককে প্রশ্ন করা হয় — “তুমি পড়িয়েছো তো?” তিনি বলেন — “হ্যাঁ, কিন্তু অনেকেই পড়েনি।” এতে ছাত্রদের দোষ স্পষ্ট হয়ে যায়।

🌸 **এই আয়াতের বার্তা:** - আল্লাহর সামনে সবাই সমানভাবে দায়বদ্ধ — রাসূল ও উম্মত উভয়েই। - নবীদের দায়িত্ব ছিল পৌঁছে দেওয়া, আর মানুষের দায়িত্ব ছিল তা গ্রহণ করা ও অনুসরণ করা।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার দায়িত্বের জবাব দিতে হবে।
  • নবীরা বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন — এখন দায়িত্ব আমাদের অনুসরণের।
  • মানুষকে প্রশ্ন করা হবে — “তুমি আল্লাহর বাণীর প্রতি কী মনোভাব নিয়েছিলে?”
  • কেউই জবাবদিহিতা থেকে রেহাই পাবে না।
  • দাওয়াত ও সত্য প্রচার একটি গুরুতর আমানত — তারও হিসাব হবে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلْمُرْسَلِينَ”** 🤍 — “আমরা প্রশ্ন করব যাদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে, এবং প্রশ্ন করব বার্তাবাহকদেরকেও।” 🌸 এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের শেখান — দাওয়াত শুধু শোনার নয়, তা মানার দায়িত্বও আমাদের। কারণ একদিন প্রত্যেকেই দাঁড়াবে আল্লাহর সামনে, আর তখন জবাবদিহিতার পালা শুরু হবে 🌿 তাই এখনই নিজেকে প্রশ্ন করো — “আমি আল্লাহর বার্তার প্রতি কী অবস্থান নিয়েছি?” 🤍
আয়াত ৭
فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍۢ وَمَا كُنَّا غَآئِبِينَ
ফা লানাকুসসান্না ‘আলাইহিম বি‘ইল্‌মিন, ওয়া মা কুন্না গা-ইবীন।
“অতএব, আমরা তাদেরকে জ্ঞানসহকারে সব কিছু বর্ণনা করব, আর আমরা কখনোই অনুপস্থিত ছিলাম না।”
তাফসীর:
এই আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াতের ধারাবাহিকতায় কিয়ামতের দিনের জবাবদিহিতা দৃশ্যটি আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে 🌿 আল্লাহ বলেন — “আমরা তাদের কাজসমূহ জ্ঞানসহকারে তুলে ধরব।” অর্থাৎ, মানুষের প্রতিটি কাজ, কথা, উদ্দেশ্য এবং চিন্তা আল্লাহর নিকট সংরক্ষিত আছে।

১️⃣ “فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍۢ” —
“অতএব, আমরা তাদেরকে জ্ঞানসহকারে সব কিছু বর্ণনা করব।”
🌿 “নাকুসসান্না” মানে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা, অর্থাৎ হিসাবের দিন আল্লাহ তাদের কাজ একে একে প্রকাশ করবেন। 🌸 আল্লাহর বর্ণনা কোনো ধারণা বা অনুমানের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং পরিপূর্ণ ও নিখুঁত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। 🌿 তাঁর জ্ঞানের বাইরে কিছুই ঘটে না — তিনি জানেন কে কী করেছে, কখন করেছে এবং কেন করেছে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন শিক্ষক পুরো বছরের কাজ নথিবদ্ধ রাখেন, পরীক্ষার দিনে প্রতিটি ছাত্রের কাজ অনুযায়ী ফলাফল দেখান 🌿 তেমনি আল্লাহও প্রত্যেক বান্দার কাজের সঠিক হিসাব দিবেন — কোনো কিছুই ভুল হবে না।

🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — আল্লাহর নিকটে প্রতিটি কাজের রেকর্ড অক্ষরে অক্ষরে সংরক্ষিত। মানুষের কাজ হোক গোপনে বা প্রকাশ্যে, আল্লাহর কাছে সবই স্পষ্ট। 🌸 তাই একজন মুমিন সবসময় সচেতন থাকে — “আমার প্রতিটি কাজই একদিন আল্লাহর সামনে উন্মোচিত হবে।”

২️⃣ “وَمَا كُنَّا غَآئِبِينَ” —
“আর আমরা কখনোই অনুপস্থিত ছিলাম না।”
🌿 অর্থাৎ, আল্লাহ কখনোই অজ্ঞ বা দূরে ছিলেন না। তিনি সর্বদা উপস্থিত, সর্বজ্ঞ, এবং সবকিছু অবলোকনকারী। 🌸 আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের কাজ থেকে এক মুহূর্তের জন্যও অজানা ছিলেন না — কারণ তিনি সর্বত্র উপস্থিত তাঁর জ্ঞান দ্বারা। 🌿 এটি আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞানের ও উপস্থিতির ঘোষণা — যা মানুষের অন্তরের অনুভূতিও জানে।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত আমাদের শেখায়, আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন নয় 🌿 আমাদের প্রতিটি দৃষ্টি, চিন্তা, উদ্দেশ্য ও কর্ম — সবই তাঁর কাছে স্পষ্ট। 🌿 তাই মুমিন যখন আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করে, তখন সে অন্যায় করতে পারে না; কারণ তার অন্তর বলে — “আমার রব আমাকে দেখছেন।”

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন কর্মচারী মালিকের সামনেই কাজ করছে — তখন সে কখনো অবহেলা করে না 🌿 তেমনি একজন ঈমানদার ব্যক্তি জানে — আল্লাহ সর্বদা আমাকে দেখছেন, তাই সে গোপনে যেমন, প্রকাশেও তেমনই সৎ থাকে।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রতিটি মানুষের কাজ বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করবেন।
  • আল্লাহর জ্ঞান সর্বব্যাপী — কিছুই তাঁর কাছ থেকে গোপন নয়।
  • আল্লাহর উপস্থিতির অনুভূতি ঈমানকে দৃঢ় করে।
  • প্রত্যেক কাজ একদিন প্রকাশ পাবে — তাই দুনিয়াতেই হিসাব নাও।
  • মুমিনের জীবন আল্লাহর দৃষ্টির প্রতি সচেতনতার ওপর ভিত্তি করে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍۢ وَمَا كُنَّا غَآئِبِينَ”** 🤍 — “আমরা তাদের কাজ জ্ঞানসহকারে বর্ণনা করব, এবং আমরা কখনোই অনুপস্থিত ছিলাম না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — আল্লাহ সর্বদা উপস্থিত, সর্বজ্ঞ 🌿 তিনি দেখছেন, শুনছেন এবং জানেন — তাই প্রতিটি কাজ যেন হয় তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। 🤍
আয়াত ৮
وَٱلْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ ٱلْحَقُّ ۚ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
ওয়াল-ওয়াজনু ইয়াওমা’ইযিনিল হক্কু, ফামান সাকুলাত মাওয়াজীনুহু, ফা উলায়িকা হুমুল মুফলিহূন।
“সেদিন ওজন (হিসাব) হবে ন্যায়ের সঙ্গে। যার পাল্লা ভারী হবে (সৎকর্মে), তারাই হবে সফলকাম।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনের **ন্যায়বিচারের দৃশ্য** বর্ণনা করেছেন 🌿 যখন প্রতিটি মানুষের আমল (কর্ম) ওজন করা হবে ন্যায়ের সঙ্গে, কোনো বাড়তি বা ঘাটতি ছাড়া।

১️⃣ “وَٱلْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ ٱلْحَقُّ” —
“সেদিন ওজন (হিসাব) হবে ন্যায়ের সঙ্গে।”
🌿 “ওয়াজন” মানে ওজন করা বা বিচার করা। অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন প্রতিটি মানুষের কাজ ন্যায়নিষ্ঠভাবে পরিমাপ করা হবে। 🌸 এখানে “হক্ক” শব্দটি বোঝায় — সেই ওজন **পুরোপুরি সত্য ও নিরপেক্ষ** হবে। 🌿 সেখানে কোনো প্রতারণা, পক্ষপাত বা লুকোচুরি থাকবে না। আল্লাহর বিচার হবে সম্পূর্ণ ন্যায়ের ভিত্তিতে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন দুনিয়ায় মানুষ ওজন মাপে পরিমাপে ভুল করতে পারে, কিন্তু আল্লাহর ওজনের দাঁড়িপাল্লা কখনো ভুল হয় না 🌿 সেখানে প্রতিটি আমল, এমনকি এক ফোঁটা সদকা বা এক বিন্দু গুনাহও মাপা হবে নির্ভুলভাবে।

🌿 আল্লাহর বিচার ব্যবস্থা এত সূক্ষ্ম যে — মানুষ এমনকি নিজের চিন্তা, উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়েরও ফল ভোগ করবে।

২️⃣ “فَمَن ثَقُلَتْ مَوَٰزِينُهُۥ” —
“যার পাল্লা ভারী হবে (সৎকর্মে)।”
🌿 অর্থাৎ, যার সৎকর্ম, ঈমান, তাওহীদ, নেক আমল ও আল্লাহভীতি বেশি হবে, তার পাল্লা ভারী হবে। 🌸 এই ভারী পাল্লা ঈমান ও নেক কাজের প্রতীক। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে, তার প্রতিটি আমল ওজন পায় — এমনকি এক হাসিও সদকা হিসেবে গণ্য হয় 🌿 🌿 যেমন রাসূল ﷺ বলেছেন — **“তাকওয়া ও ভালো চরিত্রের চেয়ে ভারী কিছুই মিজানে থাকবে না।”** (তিরমিযি)

৩️⃣ “فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ” —
“তারাই হবে সফলকাম।”
🌿 “মুফলিহূন” মানে সফল মানুষ — যারা মুক্তি পাবে, জান্নাতে প্রবেশ করবে। 🌸 সফলতা এখানে কেবল দুনিয়ার অর্থে নয়, বরং চূড়ান্ত মুক্তি — আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ। 🌿 যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ত, সত্যবাদী ও সৎকর্মপরায়ণ ছিল, তারা হবে প্রকৃত সফলকাম।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতের প্রতিটি শব্দ আমাদের দৃষ্টি আল্লাহর ন্যায়বিচারের দিকে নিয়ে যায় 🌸 কিয়ামতের দিনে কেউ অবিচার ভোগ করবে না, এবং প্রতিটি ভালো কাজের ফল বহু গুণে বৃদ্ধি পাবে। 🌿 দুনিয়ার বিচারক ভুল করতে পারেন, কিন্তু আল্লাহর বিচারক কখনো ভুল করেন না। 🌸 এই আয়াত আমাদের প্রেরণা দেয় — “তোমার কাজ যত ছোটই হোক, যদি তা আল্লাহর জন্য হয়, তবে সেটি মিজানে ভারী হবে।” 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি দানবাক্সে একটিমাত্র কয়েন ছোট মনে হলেও, প্রতিদিন যদি একজন তা রাখে, একদিন সেই বাক্স পূর্ণ হয়ে যায় 🌿 তেমনি একজন মুমিনের প্রতিটি ছোট আমল — নামাজ, দান, দোয়া, ভালোবাসা — সব মিলেই তার জান্নাতের পাল্লা ভারী করে দেয় 🤍

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • কিয়ামতের দিন আল্লাহর বিচার সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত ও নির্ভুল হবে।
  • প্রত্যেক নেক আমল মিজানে ওজন পাবে, যত ছোটই হোক।
  • তাকওয়া, ঈমান ও সৎকর্মই মুক্তির আসল উপায়।
  • সত্যিকার সফলতা দুনিয়ায় নয় — আখিরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে।
  • আল্লাহ কখনো কারো আমল নষ্ট করেন না; প্রতিটি প্রচেষ্টা তিনি লিপিবদ্ধ রাখেন।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَٱلْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ ٱلْحَقُّ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ”** 🤍 — “সেদিন ওজন হবে ন্যায়ের সঙ্গে; যার আমল ভারী হবে, তারাই হবে সফল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — ছোট ছোট আমল জমিয়ে রাখো, কারণ কিয়ামতের দিনে তার প্রতিটি দানা তোমার মুক্তির কারণ হতে পারে 🌿 আল্লাহর দরবারে সফলতা তাদেরই জন্য — যাদের হৃদয় ছিল ঈমান, হাত ছিল নেক কাজে ব্যস্ত, আর জিহ্বা ছিল আল্লাহর স্মরণে ভিজে 🤍
আয়াত ৯
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا يَظْلِمُونَ
ওয়া মান্‌ খাফ্‌ফাত্‌ মাওয়াজীনুহু, ফা উলায়িকা আল্লাযীনা খাসিরু আনফুসাহুম, বিমা কা-নূ বি-আয়া-তিনা ইয়াজলিমূন।
“আর যার পাল্লা হালকা হবে (অসৎকর্মে), তারাই নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কারণ তারা আমাদের নিদর্শনসমূহের প্রতি অন্যায় করত।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিদের পরিণতি বর্ণনা করেছেন, যাদের আমলের পাল্লা **হালকা** হয়ে যাবে কিয়ামতের দিনে 🌿 অর্থাৎ, যাদের নেক আমল ছিল অল্প, আর গুনাহ ও অবিশ্বাসে ভারী ছিল তাদের জীবন।

১️⃣ “وَمَنْ خَفَّتْ مَوَٰزِينُهُۥ” —
“আর যার পাল্লা হালকা হবে।”
🌿 এখানে “খাফফাত” মানে হালকা হওয়া — অর্থাৎ যার সৎকর্ম কম। এটি তাদের অবস্থা বোঝায় যারা দুনিয়ায় ঈমানহীন ছিল, অথবা ঈমান ছিল কিন্তু আমলহীন জীবন কাটিয়েছিল। 🌸 কিয়ামতের দিনে তাদের পাল্লা এতটাই হালকা হবে যে তারা নিজেরাই নিজের ক্ষতির সাক্ষী হবে 💔 🌿 এ হালকা পাল্লা আল্লাহর কাছে তাদের জীবনের ফাঁকা নেকির প্রতিচ্ছবি — যেখানে ভালো কাজের ওজন প্রায় নেই বললেই চলে।

২️⃣ “فَأُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُم” —
“তারাই নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
🌿 আল্লাহ বলেন — তারা অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই ক্ষতি করেছে। কারণ তারা নিজেরাই এমন কাজ করেছে যার ফল ক্ষতি ছাড়া আর কিছু নয়। 🌸 পৃথিবীতে তারা মনে করত, তারা সফল, কিন্তু আখিরাতে বুঝবে — তারা নিজের আত্মাকে হারিয়ে ফেলেছে। 🌿 কুরআনের ভাষায়, **“সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো — নিজের আত্মাকে হারানো।”**

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ পুরো জীবন অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু একদিন জানল — সে যা অর্জন করেছে, তা তার নয় 🌿 তেমনি দুনিয়ার জীবনে যিনি আল্লাহকে ভুলে যান, কিয়ামতের দিনে তিনি বুঝবেন — সবই বৃথা গেছে।

৩️⃣ “بِمَا كَانُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا يَظْلِمُونَ” —
“কারণ তারা আমাদের নিদর্শনসমূহের প্রতি অন্যায় করত।”
🌿 আল্লাহ বলেন — এই ক্ষতির আসল কারণ হলো, তারা কুরআনের নির্দেশ ও আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করেছে। 🌸 “ইয়াজলিমূন” অর্থাৎ অন্যায় করেছে — তারা কেবল অন্যায় কাজই করেনি, বরং সত্যকে অস্বীকার করা ছিল তাদের সবচেয়ে বড় জুলুম। 🌿 তারা নবীদের কথা, কুরআনের আহ্বান ও আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করেছে, তাই আখিরাতে তাদের আত্মা হারাবে।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত আমাদের শেখায় — আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার করা কেবল অবিশ্বাস নয়, এটি নিজের আত্মার উপর জুলুম। 🌿 মানুষ যখন সত্য জানার পরও মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন সে নিজের মুক্তির পথ বন্ধ করে দেয়। 🌸 নেক কাজ কেবল বাহ্যিক নয়; এটি ঈমান, বিনয়, ও আনুগত্যের সমন্বয়। যার জীবনে তা অনুপস্থিত, তার মিজান হালকা হয়ে যায়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন ব্যবসায়ী যদি সারাজীবন হিসাব না রাখে, শেষে বুঝবে — সে সম্পূর্ণ ক্ষতির মধ্যে পড়েছে 🌿 তেমনি যে আল্লাহর নির্দেশ ভুলে গিয়ে দুনিয়ার পিছে ছুটে চলে, সে আখিরাতে বুঝবে — “আমি আমার আত্মাকেই হারিয়ে ফেলেছি।”

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • যার আমলের পাল্লা হালকা, সে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।
  • আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার করা নিজের আত্মার উপর অন্যায়।
  • সফলতা কেবল ঈমান ও নেক কাজের মাধ্যমেই আসে।
  • দুনিয়ার গর্ব আখিরাতে কোনো মূল্য রাখে না।
  • নেক কাজের গুরুত্ব ছোট করে দেখা উচিত নয় — প্রতিটি আমল ওজন পায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَمَنْ خَفَّتْ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُم...”** 🤍 — “যার পাল্লা হালকা হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে; কারণ সে আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি অন্যায় করেছে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের জাগিয়ে দেয় — আজ আমরা আমাদের কাজের ওজন বাড়াতে পারি 🌿 এক সৎকথা, এক নামাজ, এক সাহায্য — সবই হতে পারে সেই ভারী আমল, যা কিয়ামতের দিনে আমাদের মুক্তির কারণ হবে 🤍
আয়াত ১০
وَلَقَدْ مَكَّنَّـٰكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَـٰيِشَ ۗ قَلِيلًۭا مَّا تَشْكُرُونَ
ওয়া লাকদ্‌ মাক্কান্‌নাকুম ফিল আরদি, ওয়া জা‘আলনা লাকুম ফীহা মা‘য়িশা, কালীলান মা তাশকুরূন।
“আর নিশ্চয়ই আমরা তোমাদেরকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তাতে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থা করেছি, তবুও তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে **তাঁর অনুগ্রহ ও দানসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন** 🌿 আল্লাহ বলেন — “আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে স্থান দিয়েছি, তোমাদের জন্য রিযিক, জীবিকা ও সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছি, কিন্তু তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না।”

১️⃣ “وَلَقَدْ مَكَّنَّـٰكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ” —
“আর নিশ্চয়ই আমরা তোমাদেরকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি।”
🌿 “মাক্কান্নাকুম” শব্দটি এসেছে “তমকীন” থেকে, যার অর্থ — দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা, কর্তৃত্ব ও স্থায়িত্ব দান করা। 🌸 আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে সে এখানে বসবাস করতে পারে, চিন্তা করতে পারে, ফল ফলাতে পারে, নির্মাণ করতে পারে, এবং শাসন করতে পারে। 🌿 অর্থাৎ, মানুষকে পৃথিবীর **খিলাফত (প্রতিনিধিত্ব)** দান করা হয়েছে। তিনি জমিনে স্বাধীনভাবে কাজ করার শক্তি ও জ্ঞান দিয়েছেন।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন রাজা তার প্রতিনিধি পাঠান এবং বলেন — “তুমি আমার জমিনে শাসন করো,” কিন্তু শর্ত হলো — “আমার নির্দেশে।” 🌿 তেমনি আল্লাহ মানুষকে জমিনে প্রতিনিধি করেছেন, কিন্তু শর্ত দিয়েছেন — “আমার নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করো।”

২️⃣ “وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَـٰيِشَ” —
“এবং তাতে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থা করেছি।”
🌿 আল্লাহ বলেন — “আমি তোমাদের জন্য জমিনে জীবিকার সব উপায় রেখেছি।” 🌸 “মা‘য়িশ” মানে জীবিকার উপকরণ — খাদ্য, পানি, বায়ু, ফল, পশু, রোদ, বৃষ্টি, মাটি, এমনকি তোমাদের বুদ্ধি ও দক্ষতাও আমারই দান 🌿 🌿 পৃথিবী এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, প্রতিটি প্রাণী তার প্রয়োজনীয় রিযিক পায়। 🌸 আল্লাহর রিজিক ব্যবস্থা এত সূক্ষ্ম যে — কোনো এক বীজ মাটির নিচে পড়ে অঙ্কুরিত হয়, কারণ আল্লাহ তার জন্যও পথ খুলে দেন 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো অতিথি আসলে মালিক আগে থেকেই তার জন্য খাবার প্রস্তুত রাখেন, তেমনি আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর আগে তার জীবনের প্রতিটি প্রয়োজন মাটির বুকে প্রস্তুত রেখেছেন 🤍

৩️⃣ “قَلِيلًۭا مَّا تَشْكُرُونَ” —
“তবুও তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”
🌿 আল্লাহর এই বাক্য যেন দুঃখময় অভিযোগ — “আমি তোমাদের এত কিছু দিলাম, তবুও তোমরা কৃতজ্ঞ হলে না!” 💔 🌸 মানুষ পৃথিবীর প্রতিটি নেয়ামত ভোগ করে, অথচ অনেকেই কখনো ভাবে না — এই বায়ু, এই সূর্য, এই রুটি — কার দান? 🌿 কৃতজ্ঞতা শুধু মুখের “আলহামদুলিল্লাহ” নয়, বরং তা প্রকাশ পায় আনুগত্য ও ন্যায়পরায়ণ জীবনের মাধ্যমে। 🌸 অর্থাৎ, **কৃতজ্ঞতার প্রকৃত অর্থ হলো — দাতা (আল্লাহ)-এর নির্দেশ অনুযায়ী সেই দানকে ব্যবহার করা।**

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** মানুষকে পৃথিবীতে স্বাধীনতা ও বুদ্ধি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে 🌸 সে কি আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে কৃতজ্ঞ হবে, নাকি অহংকারে ভুলে যাবে? 🌿 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — পৃথিবীর প্রতিটি সুবিধা, প্রতিটি নিশ্বাস, প্রতিটি খাবার — সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান অনুগ্রহ। 🌸 তাই কৃতজ্ঞতা মানে শুধু বলার বিষয় নয়, এটি এক জীবনধারা — আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রকাশ।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • মানুষকে আল্লাহ জমিনে প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
  • পৃথিবীর প্রতিটি জীবিকা আল্লাহর দান ও পরিকল্পনার ফল।
  • মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রায়ই মুখে থাকে, কাজে নয়।
  • কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সর্বোত্তম উপায় হলো আনুগত্য ও ন্যায়পরায়ণতা।
  • আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَقَدْ مَكَّنَّـٰكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَـٰيِشَ قَلِيلًۭا مَّا تَشْكُرُونَ”** 🤍 — “আমি তোমাদের জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি, জীবিকার ব্যবস্থা করেছি, তবুও তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞ।” 🌸 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — আল্লাহর নেয়ামত অসীম, কিন্তু কৃতজ্ঞ হৃদয় খুবই অল্প 🌿 তাই আসুন, প্রতিটি নিঃশ্বাসে কৃতজ্ঞ হই, প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি খুঁজি, যেন আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি 🤍
আয়াত ১১
وَلَقَدْ خَلَقْنَـٰكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَـٰكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَـٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِـَٔادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ ٱلسَّـٰجِدِينَ
ওয়ালাকদ্‌ খালাকনাকুম সুম্মা সাওয়ারনাকুম, সুম্মা কুলনা লিল মালা-ইকাতিসজুদু লিআদামা, ফাসাজাদূ ইল্লা ইবলীস, লাম ইয়াকুম মিনাস্‌সাজিদীন।
“আর নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তারপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি; তারপর আমরা ফেরেশতাদের বলেছিলাম — ‘আদমকে সেজদা করো।’ তখন তারা সবাই সেজদা করল, কিন্তু ইবলিস সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির সূচনা ও ইবলিসের অহংকারের সূচনা — উভয় বিষয় একত্রে উল্লেখ করেছেন 🌿 এটি মানবতার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন এবং শয়তান অবাধ্য হয়েছে।

১️⃣ “وَلَقَدْ خَلَقْنَـٰكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَـٰكُمْ” —
“আর নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তারপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি।”
🌿 আল্লাহ বলেন — “আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি।” এখানে “তোমাদের” দ্বারা বোঝানো হয়েছে **আদম (আঃ) ও তার বংশধরগণ**। 🌸 “সাওয়ারনাকুম” অর্থ — সুন্দর আকৃতি প্রদান করা। আল্লাহ মানুষকে এমন আকৃতি দিয়েছেন, যা অন্য কোনো সৃষ্টিকে দেননি — দেহ, মুখমণ্ডল, বুদ্ধি ও বাকশক্তি সবই তাঁর বিশেষ দান 🌿 🌸 যেমন কুরআনে আরেক জায়গায় বলেন — **“لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ”** — “আমি মানুষকে সর্বোত্তম রূপে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা আত-তীন ৯৫:৪) 🌿 আল্লাহর এই ঘোষণা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় — তুমি কেবল মাটি নও, বরং এমন সৃষ্ট যা জ্ঞানে, সম্মানে ও দায়িত্বে অনন্য।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন শিল্পী তার প্রিয় চিত্রটি সূক্ষ্মভাবে গঠন করে সৌন্দর্য দেন, তেমনি আল্লাহ মানুষকে নিখুঁত রূপ ও বুদ্ধিতে গঠন করেছেন — যাতে সে চিন্তা করে, আল্লাহকে চেনে ও কৃতজ্ঞ হয় 🌿

২️⃣ “ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَـٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِـَٔادَمَ” —
“তারপর আমরা ফেরেশতাদের বলেছিলাম — ‘আদমকে সেজদা করো।’”
🌿 এটি কোনো উপাসনার সেজদা নয়, বরং **সম্মান ও শ্রদ্ধার সেজদা।** আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ দিয়েছিলেন আদম (আঃ)-এর মর্যাদা প্রকাশ করতে, কারণ তিনি ছিলেন জ্ঞানের বাহক ও আল্লাহর প্রতিনিধি (খলিফা)। 🌸 ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশ মেনে বিনীতভাবে সেজদা করলেন — এটি ছিল **আল্লাহর আদেশের প্রতি আনুগত্যের প্রতীক।** 🌿 এই সেজদার মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে দেখালেন — “আমি তোমাকে এমন মর্যাদা দিয়েছি, যা ফেরেশতাদের উপরে।”

৩️⃣ “فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ ٱلسَّـٰجِدِينَ” —
“তখন তারা সবাই সেজদা করল, কিন্তু ইবলিস সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।”
🌿 ইবলিস ছিল জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু সে ফেরেশতাদের সাথে ইবাদতে নিযুক্ত ছিল। যখন আল্লাহর আদেশ এল, সে অহংকার করল — “আমি আগুন থেকে তৈরি, আর আদম মাটি থেকে; আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” 🌸 এই অহংকারই তাকে **আল্লাহর রহমত থেকে বহিষ্কৃত** করে দিল। এভাবেই শয়তানের পথ শুরু হলো — অহংকার, অবাধ্যতা ও ঈর্ষা থেকে। 🌿 মানুষকে সেজদা করতে অস্বীকার করা মানে — আল্লাহর আদেশ প্রত্যাখ্যান করা। আর যে আল্লাহর আদেশ মানে না, সে কখনোই সফল হতে পারে না।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত শুধু ইতিহাস নয় — এটি শিক্ষা 🌿 মানুষ সম্মানিত হয়েছে জ্ঞান, আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার কারণে; আর শয়তান ধ্বংস হয়েছে অহংকার ও অবাধ্যতার কারণে। 🌿 তাই মানুষের আসল মর্যাদা তার রূপে নয়, বরং তার বিনয় ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যে। 🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি ফুল সুন্দর হলেও যদি অহংকারে মাথা তোলে, সূর্য তার দহন দিয়ে তা শুকিয়ে দেয় 🌿 তেমনি মানুষও যদি অহংকারে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে, তার হৃদয় শুকিয়ে যায়।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ মর্যাদায় সৃষ্টি করেছেন।
  • আদম (আঃ)-কে সেজদা করা ছিল সম্মান প্রদর্শন, উপাসনা নয়।
  • ইবলিস অহংকার ও ঈর্ষার কারণে ধ্বংস হয়েছে।
  • মানুষের প্রকৃত গৌরব আল্লাহর আনুগত্যে, অহংকারে নয়।
  • অবাধ্যতা ও আত্মগরিমা মানুষকে শয়তানের পথে নিয়ে যায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَقَدْ خَلَقْنَـٰكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَـٰكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَـٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِـَٔادَمَ...”** 🤍 — “আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, রূপ দিয়েছি, আর ফেরেশতাদের বলেছি আদমকে সেজদা করো।” 🌸 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — আল্লাহ মানুষকে মর্যাদা দিয়েছেন, কিন্তু সেই মর্যাদা বজায় থাকে কেবল আনুগত্যে, বিনয়ে, ও কৃতজ্ঞ হৃদয়ে 🌿 অহংকার মানুষকে শয়তানের কাতারে ফেলে, আর আনুগত্য তাকে ফেরেশতাদের মর্যাদায় উন্নীত করে 🤍
আয়াত ১২
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا۠ خَيْرٌۭ مِّنْهُ ۖ خَلَقْتَنِى مِن نَّارٍۢ وَخَلَقْتَهُۥ مِن طِينٍۢ
ক্বা-লা মা মানা‘আকা আল্লা তাসজুদা ইয্‌ আমারতুকা, ক্বা-লা আনা খাইরুম্‌ মিনহু, খালাকতানি মিন না-রিন, ওয়া খালাকতাহু মিন ত্বীন।
“আল্লাহ বললেন — ‘আমি তোমাকে আদেশ করার পরও তুমি কেন সেজদা করোনি?’ সে বলল — ‘আমি তার চেয়ে উত্তম; আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইবলিসের **অহংকার ও অবাধ্যতার মূল কারণ** উন্মোচন করেছেন 🌿 এটি সেই মুহূর্ত, যখন আল্লাহ সরাসরি তাকে প্রশ্ন করলেন, কেন সে তাঁর আদেশ অমান্য করল — এবং তখনই প্রকাশ পেল তার অন্তরের গর্ব ও হীনমন্যতা।

১️⃣ “قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ” —
“আল্লাহ বললেন — আমি তোমাকে আদেশ করার পরও তুমি কেন সেজদা করোনি?”
🌿 এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে **একটি প্রশ্ন, কিন্তু প্রকৃত অর্থে তিরস্কার।** যেন আল্লাহ বলছেন — “কী তোমাকে এমন সাহস দিল যে, তুমি আমার নির্দেশ অমান্য করলে?” 🌸 আল্লাহ তাকে সুযোগ দিলেন ব্যাখ্যা করার, কিন্তু ইবলিস তাও অহংকারের সঙ্গে ব্যবহার করল। 🌿 আল্লাহর এই প্রশ্ন আজও প্রতিধ্বনিত হয় — “তুমি কেন আমার নির্দেশ মানো না?” এটি প্রতিটি অহংকারী মানুষের অন্তরে প্রযোজ্য এক প্রশ্ন।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন শিক্ষক ছাত্রকে বলেন — “তুমি আমার আদেশ অমান্য করলে কেন?” এতে শিক্ষক জানতে চান না, বরং ছাত্রকে তার ভুলের উপলব্ধি করাতে চান 🌿 তেমনি আল্লাহও ইবলিসকে বোঝাতে চাইলেন — অবাধ্যতার পথ কতো ভয়াবহ।

২️⃣ “قَالَ أَنَا۠ خَيْرٌۭ مِّنْهُ” —
“সে বলল — আমি তার চেয়ে উত্তম।”
🌿 এখানেই প্রকাশ পেল ইবলিসের **অহংকার, যুক্তিহীন শ্রেষ্ঠত্ববোধ ও বিদ্রোহ।** সে আল্লাহর আদেশের প্রতি যুক্তি দাঁড় করাল নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে — বলল, “আমি তো আগুন থেকে, আর সে মাটি থেকে!” 🌸 সে আল্লাহর নির্দেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করল — যেন বলল, “আমি এমন নিম্নস্তরের সৃষ্টিকে সেজদা করব কেন?” 🌿 অথচ আল্লাহর দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ হয় না উপাদানে, বরং **আনুগত্য, বিনয় ও তাকওয়ায়।** 🌸 কুরআনের আরেক জায়গায় আল্লাহ বলেন — **“إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ ٱللَّهِ أَتْقَىٰكُمْ”** — “তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যার তাকওয়া বেশি।” (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:১৩)

🌿 ইবলিসের ভুল এখানেই — সে সৃষ্টির উৎস দেখে বিচার করল, স্রষ্টার আদেশ নয় 🌿 আর এটাই অহংকারের মূল: **নিজেকে বড় ভাবা, অন্যকে ছোট দেখা।**

৩️⃣ “خَلَقْتَنِى مِن نَّارٍۢ وَخَلَقْتَهُۥ مِن طِينٍۢ” —
“আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
🌿 ইবলিসের এই কথায় যুক্তি আছে বলে মনে হলেও — এটি ছিল **ভ্রান্ত যুক্তি ও আত্মগরিমার প্রমাণ।** 🌸 আগুনের প্রকৃতি উত্তপ্ত, অহংকারী ও ধ্বংসাত্মক; আর মাটির প্রকৃতি বিনয়ী, নরম ও সহনশীল। তাই আল্লাহর নিকট মাটি শ্রেষ্ঠ — কারণ তাতে আছে বিনয়। 🌿 মানুষ মাটি থেকে সৃষ্টি বলে সে **বিনয় ও সহিষ্ণুতার প্রতীক**, আর ইবলিস আগুন থেকে বলে **অহংকারের প্রতীক।**

🌸 **উদাহরণ:** যেমন আগুন যখন নিজের জ্বালায় গর্বিত হয়, তখন সে যা পায়, সব পুড়িয়ে ফেলে 🌿 তেমনি অহংকার মানুষকে নিজের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। 🌿 আর মাটি, যত পায় তত গ্রহণ করে, ফুল ফোটায়, জীবন দেয় — বিনয়ীর পরিণাম সবসময় বরকতপূর্ণ 🤍

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত মানব জীবনের জন্য এক গভীর শিক্ষা 🌿 আল্লাহর আদেশ মানার আগে যুক্তি খোঁজা নয়, বরং বিনয় ও আনুগত্যই প্রকৃত ঈমানের চিহ্ন। 🌿 যে ব্যক্তি “আমি ভালো” বলে নিজেকে উপরে রাখে, সে শয়তানের পথ অনুসরণ করে; আর যে বলে “আমি আল্লাহর বান্দা,” সে জান্নাতের পথ খুঁজে পায়।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • অহংকারই ছিল ইবলিসের পতনের মূল কারণ।
  • আল্লাহর আদেশ যুক্তির নয়, আনুগত্যের ব্যাপার।
  • শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ হয় তাকওয়া ও বিনয়ে, পদার্থে নয়।
  • অহংকার আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
  • মানুষের মর্যাদা তার আনুগত্যে, অহংকারে নয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ...”** 🤍 — “আমি তোমাকে আদেশ করার পরও কেন সেজদা করোনি?” 🌸 ইবলিস উত্তর দিল — “আমি তার চেয়ে উত্তম।” কিন্তু এই একটি বাক্যই তাকে জান্নাত থেকে জাহান্নামের পথে নামিয়ে দিল 💔 🌿 অহংকারের আগুন যেমন ইবলিসকে পুড়িয়েছিল, তেমনি আমাদেরও ধ্বংস করতে পারে যদি আমরা বিনয় হারাই। 🌸 তাই একজন মুমিনের মুখে সবসময় এই শব্দ থাকা উচিত — **“সামি‘না ওয়া আতাও‘না” — ‘আমরা শুনলাম এবং মানলাম।’** এটাই প্রকৃত আনুগত্য, এটাই জান্নাতের পথ 🤍
আয়াত ১৩
قَالَ فَٱهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَٱخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّـٰغِرِينَ
ক্বা-লা ফাহ্‌বিত্‌ মিন্‌হা, ফা মা ইয়াকূনু লাকা আন্‌ তাতাকাব্বারা ফীহা, ফাখ্‌রুজ্‌, ইন্‌নাকা মিনাস্‌সাগিরীন।
“আল্লাহ বললেন — ‘তুমি এখান থেকে নেমে যাও; এখানে তোমার অহংকার করার কোনো অধিকার নেই। বের হয়ে যাও! নিশ্চয়ই তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইবলিসের অহংকারের জবাবে কঠোর আদেশ জারি করেন 🌿 তার অবাধ্যতা ও গর্বের ফল হিসেবে আল্লাহ তাকে জান্নাত বা ফেরেশতাদের মহলে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন।

১️⃣ “قَالَ فَٱهْبِطْ مِنْهَا” —
“আল্লাহ বললেন — তুমি এখান থেকে নেমে যাও।”
🌿 “ফাহবিত” মানে নিচে নামা বা উৎখাত হওয়া। অর্থাৎ, আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদার স্থান থেকে নিচে নামিয়ে দিলেন — মানসিক, আধ্যাত্মিক ও অবস্থাগতভাবে। 🌸 একসময় ইবলিস ফেরেশতাদের সঙ্গে ইবাদত করত, কিন্তু অহংকারের কারণে সেই সম্মানের স্থান হারিয়ে ফেলল 💔 🌿 এটি প্রমাণ করে — আল্লাহর দরবারে **অহংকারের কোনো স্থান নেই।**

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো কর্মচারী তার কর্তাকে অবাধ্য করলে তাকে সম্মানিত পদ থেকে অপসারণ করা হয় 🌿 তেমনি ইবলিসও অবাধ্যতার কারণে “উচ্চ আসমানী সভা” থেকে বহিষ্কৃত হলো।

২️⃣ “فَمَا يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا” —
“এখানে তোমার অহংকার করার কোনো অধিকার নেই।”
🌿 আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিলেন — আমার রাজ্যে অহংকারের স্থান নেই। এখানে কেবল আনুগত্য, বিনয় ও কৃতজ্ঞতা টিকতে পারে। 🌸 ইবলিস মনে করেছিল সে শ্রেষ্ঠ, কিন্তু আল্লাহর নিকট সে হলো **সবচেয়ে নিকৃষ্ট।** 🌿 এটি প্রমাণ করে — যে আল্লাহর আদেশ মানে না, সে যত উপরে থাকুক না কেন, আল্লাহর দৃষ্টিতে সে নিচে নেমে যায়। 🌸 কুরআনে আল্লাহ বলেন — **“إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ”** — “নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীকে ভালোবাসেন না।” (সূরা নحل ১৬:২৩)

🌸 **উদাহরণ:** যেমন সূর্যের আলোয় দাঁড়ানো একজন ব্যক্তি যদি ছায়া খুঁজে অহংকার করে, সূর্য যখন সরে যায় — সে আঁধারে হারিয়ে যায় 🌿 তেমনি আল্লাহর আলো ছাড়া অহংকারের সব শক্তিই অন্ধকারে ডুবে যায়।

৩️⃣ “فَٱخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّـٰغِرِينَ” —
“বের হয়ে যাও! নিশ্চয়ই তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।”
🌿 আল্লাহর এই ঘোষণা ইবলিসের প্রতি **চূড়ান্ত অপমান ও প্রত্যাখ্যান।** “সাগিরীন” অর্থাৎ যারা অপদস্থ, নীচ, ও সম্মান হারানো। 🌸 একসময় সে ফেরেশতাদের সমগোত্রে ছিল, কিন্তু এখন সে নিকৃষ্ট প্রাণীতে পরিণত হলো। 🌿 এটি দেখায় — অহংকার মানুষকে উন্নতির নয়, বরং **অপমান ও পতনের দিকে** নিয়ে যায়।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** আল্লাহর দরবারে অহংকারের স্থান নেই 🌿 যেই ব্যক্তি নিজেকে বড় ভাবে, সে আল্লাহর নিকটে ছোট হয়ে যায়। 🌸 এ আয়াত আমাদের সতর্ক করে দেয় — অহংকারের পথ শেষ হয় অপমানের অন্ধকারে। তাই মুমিন সবসময় বলে — “আল্লাহ, আমাকে বিনয়ী রাখুন, কারণ বিনয়ই মর্যাদার আসল পথ।” 🤍

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি বীজ মাটির নিচে লুকিয়ে থাকলে তবেই গাছ হয়ে ওঠে 🌿 তেমনি যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকেই উঁচু মর্যাদা দেন।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • অহংকার আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট গুণ।
  • যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ অমান্য করে, সে মর্যাদা হারায়।
  • আল্লাহর রাজ্যে বিনয়ী বান্দারাই প্রিয়।
  • অহংকার ধ্বংসের সূচনা, বিনয় হলো মুক্তির সূচনা।
  • মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব আনুগত্যে, দম্ভে নয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বললেন — **“فَٱهْبِطْ مِنْهَا... فَٱخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّـٰغِرِينَ”** 🤍 — “তুমি এখান থেকে নেমে যাও; অহংকারের অধিকার তোমার নেই। বের হয়ে যাও, তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শিক্ষা দেয় — যে হৃদয় অহংকারে ফুলে ওঠে, সেখানে আল্লাহর নূর প্রবেশ করে না 🌿 তাই আসুন, আমরা বিনয়ী হই, যেন আল্লাহর দৃষ্টিতে ছোট নয় — বরং সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি 🤍
আয়াত ১৪
قَالَ أَنظِرْنِىٓ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
ক্বা-লা আনযিরনী ইলা ইয়াওমি ইউব’আছূন।
“সে বলল — ‘আমাকে অবকাশ দিন সেই দিন পর্যন্ত, যেদিন মানুষ পুনরুত্থিত হবে।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইবলিসের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করেছেন 🌿 যখন আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত ও অপদস্থ করে দিলেন, তখন সে অনুতাপ নয় — বরং **একটি কৌশলী অনুরোধ** জানাল।

১️⃣ “قَالَ أَنظِرْنِىٓ” —
“সে বলল — আমাকে অবকাশ দিন।”
🌿 “আনযিরনী” মানে — আমাকে সময় দিন, বিলম্ব করুন বা স্থগিত রাখুন। ইবলিস বলল, “আমাকে এখন ধ্বংস করবেন না, বরং আমাকে কিছু সময় দিন।” 🌸 কিন্তু লক্ষ্য করুন — সে তাওবা বা ক্ষমা চাইল না, বরং সময় চাইল নিজের কুমন্ত্রণার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য! 💔 🌿 এ ছিল তার কৌশল — নিজেকে ধ্বংস থেকে কিছুটা সময় বাঁচানো, যাতে সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো অপরাধী বিচারকের সামনে অনুতাপ না দেখিয়ে বলে, “আমাকে একটু সময় দিন, আমি আমার কাজ শেষ করব।” 🌿 তেমনি ইবলিসও অনুতাপের বদলে **সময় দাবি করল বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য।**

২️⃣ “إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ” —
“সেই দিন পর্যন্ত, যেদিন মানুষ পুনরুত্থিত হবে।”
🌿 অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আমাকে মেয়াদ দিন। সে চায়, যতদিন মানুষ বেঁচে থাকবে, ততদিন যেন সে অবাধে তাদেরকে বিপথে চালাতে পারে। 🌸 ইবলিস জানত, কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ সৃষ্টি হবে, তাই সে সেই সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতে চাইল — যেন সে প্রতিটি প্রজন্মকে আল্লাহর পথে বাধা দিতে পারে। 🌿 এটি ছিল তার **অহংকারের দ্বিতীয় রূপ** — আল্লাহর সামনে অনুতপ্ত না হয়ে, নিজের কু-উদ্দেশ্যেই অবকাশ চাওয়া।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে স্পষ্ট বোঝা যায় — ইবলিসের মন পরিবর্তন হয়নি; বরং সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার পরও নিজের পথেই অটল রইল। 🌿 সে জানে আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা, তবুও সে আনুগত্যের বদলে বিদ্রোহ বেছে নিল। 🌸 অর্থাৎ, **শুধু আল্লাহকে জানা নয় — আনুগত্যই আসল ঈমান।**

🌿 মানুষ প্রায়ই আল্লাহকে চেনে, জানে, নামও উচ্চারণ করে, কিন্তু যদি তার অন্তর ও কাজ বিদ্রোহে ভরে যায়, তবে সে ইবলিসের পথেই চলে যায়। 🌸 তাই এই আয়াত মুমিনকে সতর্ক করে — **অহংকার, অবাধ্যতা ও আল্লাহর নির্দেশে বিলম্বের মনোভাব** শয়তানের বৈশিষ্ট্য, মুমিনের নয়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ জানে পরীক্ষার তারিখ ঘনিয়ে আসছে, তবুও বলে, “আরও একটু পরে পড়ব।” 🌿 তেমনি শয়তান জানে আখিরাত আসবে, তবুও বলে — “আমি পরে দেখব।” এটি তার চিরস্থায়ী ধোঁকা।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • ইবলিস অনুতাপ করেনি, বরং প্রতারণার সুযোগ চেয়েছে।
  • শুধু আল্লাহকে চেনা নয়, তাঁর আদেশ মানাই আসল আনুগত্য।
  • অবকাশ চাওয়া অনুতাপ নয় — যদি তাতে খারাপ উদ্দেশ্য থাকে।
  • সময় চাওয়া নয়, সময়ের সঠিক ব্যবহারই মুক্তির পথ।
  • অহংকার মানুষকে এমন পর্যায়ে নামায়, যেখানে সে নিজের শত্রু হয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ أَنظِرْنِىٓ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ”** 🤍 — “সে বলল, আমাকে অবকাশ দিন সেই দিন পর্যন্ত, যেদিন মানুষ পুনরুত্থিত হবে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — শয়তান অনুতাপ করেনি, বরং বিদ্রোহের জন্য সময় চেয়েছে 🌿 কিন্তু একজন মুমিন আল্লাহর কাছে সময় নয় — ক্ষমা ও হিদায়াত প্রার্থনা করে। 🌸 তাই আসুন আমরা বলি — “হে আল্লাহ! আমাকে অবকাশ নয়, বরং হিদায়াত দিন; যেন আমি সময় নষ্ট না করে আপনার পথে চলতে পারি।” 🤍
আয়াত ১৫
قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلْمُنظَرِينَ
ক্বা-লা ইন্‌নাকা মিনাল্‌ মুনযারীন।
“আল্লাহ বললেন — ‘নিশ্চয়ই তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইবলিসের প্রার্থনার জবাব দিলেন 🌿 ইবলিস বলেছিল, “আমাকে অবকাশ দিন কিয়ামতের দিন পর্যন্ত।” আল্লাহ তার অনুরোধ মঞ্জুর করলেন — কিন্তু **তার অনুতাপের কারণে নয়**, বরং **একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ পরীক্ষা** হিসেবে।

১️⃣ “قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلْمُنظَرِينَ” —
“আল্লাহ বললেন — নিশ্চয়ই তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।”
🌿 আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকার অবকাশ দিলেন, তবে সীমিত ক্ষমতার মধ্যে — যেন সে মানুষকে বিপথে ডাকতে পারে, কিন্তু **বলপ্রয়োগ করতে না পারে।** 🌸 অর্থাৎ, আল্লাহ ইবলিসকে সময় দিলেন না তার সম্মানে, বরং **মানুষের পরীক্ষা ও হিদায়াতের সত্যতা প্রমাণের জন্য।** 🌿 এই অবকাশ ছিল এক **ঈশ্বরীয় পরিকল্পনা**, যেখানে আল্লাহ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও বিশ্বাসের দৃঢ়তা পরীক্ষা করবেন।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন শিক্ষক পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দেন না, কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সুযোগ দেন 🌿 তেমনি আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পরীক্ষা দিচ্ছেন, আর ইবলিসকে রেখে দিয়েছেন সেই পরীক্ষার “বাধা” হিসেবে।

🌿 আল্লাহর এই সিদ্ধান্ত ন্যায়ের এক দৃষ্টান্ত — যাতে কেউ কিয়ামতের দিন বলতে না পারে, “হে আল্লাহ! আমি জানতাম না বা সুযোগ পাইনি।” 🌸 এখন প্রতিটি মানুষ জানে — শয়তান তার শত্রু, কিন্তু তাকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছেন।

২️⃣ “المُنظَرِينَ” শব্দের ব্যাখ্যা:
🌿 “মুনযারীন” শব্দের অর্থ — যাদের অবকাশ বা বিলম্ব দেওয়া হয়েছে। ইবলিসকে এমন এক সময় পর্যন্ত অবকাশ দেওয়া হয়েছে, যতদিন কিয়ামতের ঘোষণা আসবে না। 🌸 তবে আল্লাহ কুরআনের অন্য আয়াতে স্পষ্ট করেছেন — **“إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ”** — “এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত।” (সূরা হিজর ১৫:৩৮) 🌿 অর্থাৎ, কিয়ামতের আগে এক বিশেষ সময়ে, ইবলিসের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে, যখন মৃত্যু ফেরেশতা তার আত্মা কবজ করবে।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** আল্লাহ ইবলিসকে অবকাশ দিলেন, কিন্তু তার শয়তানি কর্মকাণ্ডে কোনো অনুমোদন দিলেন না 🌿 বরং এটি ছিল আল্লাহর এক মহা পরিকল্পনা — যেন মানুষ নিজের ঈমান ও ইচ্ছাশক্তি দিয়ে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে পারে। 🌸 মানুষকে যেমন স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তেমনি শয়তানকে দেওয়া হয়েছে **প্রলোভনের সুযোগ।** কিন্তু যারা আল্লাহকে স্মরণ করে, তাদের উপর তার কোনো ক্ষমতা চলে না 🌿 আল্লাহ বলেন — **“إِنَّ عِبَادِى لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَـٰنٌ”** — “আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনো কর্তৃত্ব নেই।” (সূরা হিজর ১৫:৪২)

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো খেলায় এক পক্ষ আক্রমণ করে, অন্য পক্ষকে প্রতিরোধের সুযোগ দেওয়া হয় 🌿 তেমনি দুনিয়া হলো পরীক্ষার ময়দান — শয়তান আক্রমণ করে, আর মুমিন নিজের ঈমান দিয়ে তা প্রতিরোধ করে।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহ ইবলিসকে অবকাশ দিয়েছেন মানুষের পরীক্ষা হিসেবে।
  • শয়তান মানুষকে প্রলুব্ধ করতে পারে, কিন্তু জোর করতে পারে না।
  • আল্লাহর হিকমত (জ্ঞানে) প্রতিটি ঘটনার মধ্যে উদ্দেশ্য আছে।
  • মুমিনের জন্য আল্লাহর স্মরণই শয়তানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ঢাল।
  • আল্লাহর অবকাশ মানে সুযোগ, কিন্তু শয়তানের জন্য তা অভিশাপ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বললেন — **“قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلْمُنظَرِينَ”** 🤍 — “নিশ্চয়ই তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ; তিনি পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরি করেছেন 🌿 ইবলিসের উপস্থিতি হলো পরীক্ষা, আর ঈমান হলো সেই পরীক্ষার জয়ী অস্ত্র। 🌿 তাই মুমিনের দোয়া সর্বদা হওয়া উচিত — **“হে আল্লাহ! শয়তানের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে আমাকে দৃঢ় রাখুন।”** 🤍
আয়াত ১৬
قَالَ فَبِمَآ أَغْوَيْتَنِى لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَٰطَكَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
ক্বা-লা ফাবিমা আগওয়াইতানি, লা-আক‘উদান্না লাহুম সিরাতাকাল-মুস্তাকীম।
“সে বলল — ‘যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তাই আমি অবশ্যই আপনার সরল পথে তাদের জন্য ওঁত পেতে বসব।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে ইবলিসের কপট মানসিকতা ও তার শত্রুতার ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছে 🌿 আল্লাহ তাকে অবকাশ দেওয়ার পর সে অনুতপ্ত হলো না, বরং **নিজের দোষ আল্লাহর ওপর চাপিয়ে** এক শয়তানি প্রতিজ্ঞা করল!

১️⃣ “قَالَ فَبِمَآ أَغْوَيْتَنِى” —
“সে বলল — যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন।”
🌿 এখানে ইবলিস নিজের ভুলের জন্য অনুতাপ না করে, দোষ দিল আল্লাহকে! 💔 🌸 অর্থাৎ, সে বলল — “আপনি যদি আমাকে সেই সিজদার আদেশ না দিতেন, আমি অবাধ্য হতাম না।” এভাবে সে নিজের ব্যর্থতাকে আল্লাহর উপর চাপিয়ে বিদ্রোহ চালিয়ে গেল। 🌿 এটি সেই স্বভাব — যেখানে পাপী নিজের ভুল স্বীকার না করে, দোষ অন্যের ঘাড়ে দেয়। আর মুমিনের গুণ হলো — নিজের ভুলের দায় স্বীকার করে তাওবা করা।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক ছাত্র নিজের অলসতার জন্য ফেল করেও বলে, “স্যার আমার সাথে অন্যায় করেছেন।” 🌿 তেমনি ইবলিসও নিজের অহংকারের ফলকে আল্লাহর ওপর দোষ চাপিয়ে দিল।

🌿 এই বাক্যটি তার **অহংকারের দ্বিতীয় ধাপ** — প্রথমে সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল, আর এখন সে আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচরণ করছে।

২️⃣ “لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَٰطَكَ ٱلْمُسْتَقِيمَ” —
“আমি অবশ্যই আপনার সরল পথে তাদের জন্য ওঁত পেতে বসব।”
🌿 ইবলিস বলল, “আমি আপনার সরল পথে বসব” — অর্থাৎ, যারা হিদায়াতের পথে চলবে, আমি তাদেরই পথ রোধ করব। 🌸 লক্ষ্য করুন — সে বলল না, “আমি পাপীদের পাশে থাকব,” বরং বলল — “আমি সোজা পথের পাশে বসব।” 🌿 অর্থাৎ, শয়তান সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে তাদের উপর, যারা সৎ পথে চলার চেষ্টা করে। 🌸 **এটাই শয়তানের কৌশল:** সে কখনও আপনাকে পাপের রাস্তায় ঠেলে দেয় না, বরং প্রথমে ভালো কাজের মাঝেই বিভ্রান্তি আনে। 🌿 যেমন নামাজে মনোযোগ ভাঙা, ভালো কাজে অহংকার ঢোকানো, বা তাওবার পর হতাশা তৈরি করা — এসবই তার “সোজা পথে বসে থাকা”র নিদর্শন।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো চোর ব্যাংকের বাইরে নয়, বরং ভেতরেই ঢুকে থাকে 🌿 তেমনি শয়তানও মুমিনদের কাজের ভেতর প্রবেশ করে — যেন নেক কাজও বৃথা হয়ে যায়।

🌿 এই আয়াত এক গভীর সত্য প্রকাশ করে — শয়তান কখনো অবিশ্বাসীদের নয়, বরং বিশ্বাসীদের লক্ষ্য করে তার ফাঁদ পাতে। 🌸 তাই আল্লাহ কুরআনে সতর্ক করেছেন — **“إِنَّ الشَّيْطَـٰنَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّۭا”** — “নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তোমরা তাকে শত্রুই মনে করো।” (সূরা ফাতির ৩৫:৬)

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** ইবলিস জানে আল্লাহর অস্তিত্ব সত্য, জানে আখিরাত সত্য, তবুও সে শত্রুতা বেছে নিয়েছে। তার লক্ষ্য শুধু একটাই — মানুষকে সেই সোজা পথ থেকে সরানো, যেটি তাকে মুক্তির দিকে নিয়ে যায় 🌿 🌸 আর এজন্যই একজন মুমিনের প্রথম দোয়া হওয়া উচিত — **“اهدِنَا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ”** — “আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত কর।” (সূরা ফাতিহা ১:৬)

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • ইবলিস নিজের ভুলের জন্য অনুতাপ না করে আল্লাহকে দোষ দিল।
  • শয়তানের মূল লক্ষ্য — সোজা পথের মানুষদের বিপথে নেওয়া।
  • মুমিনের সত্যিকারের যুদ্ধ হলো শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রতিরোধ করা।
  • যারা আল্লাহর পথে চলে, তাদের প্রতি শয়তানের হিংসা বেশি।
  • হিদায়াতের পথে টিকে থাকতে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া উপায় নেই।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ فَبِمَآ أَغْوَيْتَنِى لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَٰطَكَ ٱلْمُسْتَقِيمَ”** 🤍 — “সে বলল, যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমি আপনার সোজা পথে তাদের জন্য ওঁত পেতে থাকব।” 🌸 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে দেয় — শয়তান দূরে নয়, বরং সোজা পথের কাছেই থাকে 🌿 তাই আল্লাহর জিকির ও কুরআনের অনুসরণই আমাদের জন্য একমাত্র নিরাপত্তা। 🌿 মুমিন সবসময় প্রার্থনা করে — “হে আল্লাহ, আমাকে শয়তানের ফাঁদ থেকে নিরাপদ রাখুন, এবং সোজা পথে দৃঢ় রাখুন।” 🤍
আয়াত ১৭
ثُمَّ لَـَٔاتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَـٰنِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَـٰكِرِينَ
সুম্মা লা-আতিয়ান্নাহুম মিন্‌ বায়নি আইদীহিম ওয়া মিন্‌ খলফিহিম, ওয়া ‘আন্‌ আইমানিহিম, ওয়া ‘আন্‌ শামা-ইলিহিম; ওালা তাজিদু আকসারাহুম শা-কিরীন।
“তারপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে যাব সামনে থেকে ও পেছন থেকে, ডান দিক থেকে ও বাম দিক থেকে, এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।”
তাফসীর:
এই আয়াতে শয়তান (ইবলিস) তার **স্পষ্ট যুদ্ধ-ঘোষণা** প্রকাশ করেছে 🌿 আল্লাহর অবকাশপ্রাপ্ত হওয়ার পর সে বলল — “আমি চার দিক থেকে মানুষের ওপর আক্রমণ চালাব, এবং তাদের অধিকাংশকে অকৃতজ্ঞ বানিয়ে ছাড়ব।”

১️⃣ “ثُمَّ لَـَٔاتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ” —
“তারপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে যাব সামনে থেকে ও পেছন থেকে।”
🌿 অর্থাৎ, আমি তাদের সামনে থেকে এমন প্রলোভন দেখাব যাতে তারা ভবিষ্যতের বিষয়ে ভুল আশা ও স্বপ্নে মগ্ন হয়ে যায়। 🌸 সামনে থেকে আক্রমণ মানে — ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অহংকার, অহেতুক আশাবাদ ও দুনিয়ার মোহ সৃষ্টি করা। 🌿 আর পেছন থেকে আক্রমণ মানে — অতীতের ভুল, ব্যর্থতা ও পাপের স্মৃতি জাগিয়ে হতাশা সৃষ্টি করা। 🌸 ইবলিস এভাবেই মানুষকে দুই চরমে ঠেলে দেয় — কখনও **অহংকারে** আবার কখনও **হতাশায়।**

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ ভবিষ্যতের সাফল্যে এত ডুবে যায় যে আল্লাহকে ভুলে যায়, আবার কেউ অতীতের পাপ ভেবে তাওবার আশা হারায় 🌿 উভয়টাই শয়তানের কৌশল।

২️⃣ “وَعَنْ أَيْمَـٰنِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ” —
“ডান দিক থেকে ও বাম দিক থেকে।”
🌿 “ডান দিক” মানে ভালো কাজ ও নেক আমলের দিক। ইবলিস বলে — আমি তাদের নেক কাজে রিয়া, অহংকার ও গর্ব ঢুকিয়ে দেব। 🌸 আর “বাম দিক” মানে গুনাহ, খারাপ কাজ ও কামনাময় প্রবৃত্তি। সে মানুষকে তাতে নিমজ্জিত করবে, যাতে তারা পাপকে হালকা মনে করে। 🌿 অর্থাৎ, সে শুধু পাপের দিকে নয়, বরং **সৎ কাজের ভেতরেও ফাঁদ পাতে!** 🌸 সে চায় মুমিন ভালো কাজ করলেও যেন তা নষ্ট হয়ে যায় — কখনও অহংকারে, কখনও আত্মপ্রশংসায়, আবার কখনও ভুল উদ্দেশ্যে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ নামাজ পড়ে কিন্তু ভাবে — “আমি অন্যদের চেয়ে ধার্মিক।” 🌿 এটিই শয়তানের ডান দিকের ফাঁদ — নেক কাজের ভেতর গর্ব ঢোকানো।

🌿 ইবলিসের এই কথা প্রমাণ করে — তার আক্রমণ সর্বত্র, প্রতিটি দিক থেকে, কিন্তু আকাশমুখী দিকের কথা সে বলেনি 🌸 কারণ — **উর্ধ্বমুখী দিক মানে আল্লাহর দিকে দোয়া, তাওবা ও আত্মসমর্পণ।** সেখানে শয়তানের কোনো প্রবেশাধিকার নেই 🤍

৩️⃣ “وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَـٰكِرِينَ” —
“আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।”
🌿 ইবলিস জানে — কৃতজ্ঞতা মানেই ঈমান। কারণ কৃতজ্ঞ ব্যক্তি আল্লাহকে স্বীকার করে, আর অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি ভুলে যায় কে দাতা। 🌸 তাই শয়তান বলে — “আমি তাদের মনে এমন চিন্তা আনব, যাতে তারা আল্লাহর নেয়ামত ভুলে যায়।” 🌿 **অকৃতজ্ঞতা শয়তানের প্রথম অস্ত্র।** যখন মানুষ বলে — “আমার নিজের যোগ্যতায় সব পেয়েছি,” তখন সে অজান্তেই ইবলিসের দলে যোগ দেয়।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত আমাদের এক বাস্তব সতর্কবার্তা দেয় — শয়তানের আক্রমণ চার দিক থেকে, কিন্তু আল্লাহর পথে ওঠার দরজা খোলা 🌿 🌸 কৃতজ্ঞতা ও দোয়া — এই দুই শক্তিই শয়তানের ফাঁদ ভাঙার ঢাল। আল্লাহ বলেন — **“إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَـٰنِ كَانَ ضَعِيفًۭا”** — “নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল দুর্বল।” (সূরা নিসা ৪:৭৬)

🌸 **উদাহরণ:** যেমন ঝড় চারদিক থেকে আঘাত করে, কিন্তু উপরের দিকের ছাদ যদি মজবুত হয়, ঘর অটুট থাকে 🌿 তেমনি আল্লাহর জিকিরে আবৃত হৃদয় শয়তানের ঝড়েও নিরাপদ থাকে।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • শয়তান মানুষের প্রতিটি দিক থেকে আক্রমণ করে।
  • ভবিষ্যতের লোভ ও অতীতের হতাশা — দুটোই তার ফাঁদ।
  • সে নেক কাজের ভেতরেও রিয়া ও অহংকার ঢোকায়।
  • কৃতজ্ঞ মানুষই শয়তানের আক্রমণ থেকে নিরাপদ।
  • আল্লাহর দিকে মুখ তুলে দোয়া করা — শয়তানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ثُمَّ لَـَٔاتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَـٰنِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَـٰكِرِينَ”** 🤍 — “আমি তাদের চার দিক থেকে আক্রমণ করব, এবং তাদের অধিকাংশকে অকৃতজ্ঞ পাবেন।” 🌸 এই আয়াত আমাদের স্মরণ করায় — শয়তান আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে আছে, কিন্তু উপরের দিক — আল্লাহর দিক — সর্বদা খোলা 🌿 তাই আসুন আমরা সর্বদা বলি — **“আলহামদুলিল্লাহ”**, কারণ কৃতজ্ঞ হৃদয়ই শয়তানের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম ঢাল 🤍
আয়াত ১৮
قَالَ ٱخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًۭا مَّدْحُورًۭا ۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ
ক্বা-লা, উখরুজ্‌ মিনহা মায’উমান মাদহূরান, লামান্‌ তাবি‘আকা মিনহুম লা-আমলা’আন্না জাহান্নামা মিনকুম আজমা‘ইন।
“আল্লাহ বললেন — ‘বের হয়ে যাও এখান থেকে, নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায়! আর তোমার অনুসারীদের মধ্যে যারা তোমার পথে চলবে, আমি অবশ্যই তোমাদের সবাইকে জাহান্নাম দিয়ে পূর্ণ করব।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা শয়তানের অহংকার ও হুমকির চূড়ান্ত জবাব দিয়েছেন 🌿 সে ঘোষণা করেছিল মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধের — আল্লাহ তাতে তাকে **চিরন্তন লাঞ্ছনা ও ধ্বংসের ঘোষণা** দিলেন।

১️⃣ “قَالَ ٱخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًۭا مَّدْحُورًۭا” —
“আল্লাহ বললেন — বের হয়ে যাও এখান থেকে, নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায়!”
🌿 এখানে “মায’উমান” মানে — **লাঞ্ছিত, অপমানিত, ঘৃণিত।** আর “মাদহূরান” মানে — **তাড়িত, প্রত্যাখ্যাত, দূরে নিক্ষিপ্ত।** 🌸 অর্থাৎ, আল্লাহ ইবলিসকে শুধু স্বর্গ থেকে নয়, বরং তাঁর রহমত ও নিকটতা থেকেও দূরে নিক্ষেপ করলেন। 🌿 এটি ছিল এক **চিরস্থায়ী অপমানের ঘোষণা।** একসময় সে ফেরেশতাদের সঙ্গে অবস্থান করত, এখন সে ধিক্কৃত ও শয়তান হিসেবে পরিচিত হলো। 🌸 এভাবেই অহংকার মানুষকে উঁচু থেকে নিচে নামিয়ে আনে — মর্যাদার আসন থেকে পতনের গভীর অতলে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক কর্মকর্তা নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরখাস্ত হয়, তার মর্যাদা মুছে যায় — তেমনি শয়তানও আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে “আদমের আগে প্রণামকারী” থেকে হয়ে গেল “মানবতার শত্রু।” 🌿

২️⃣ “لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ” —
“যে তোমার অনুসরণ করবে তাদের মধ্য থেকে।”
🌿 আল্লাহ শয়তানকে জানিয়ে দিলেন — “তুমি শুধু নিজে অভিশপ্ত নও; বরং যারা তোমার পথে চলবে, তারাও একই পরিণতির অংশীদার হবে।” 🌸 এটি ন্যায়বিচারের মূলনীতি: আল্লাহ কাউকে অন্যের পাপে শাস্তি দেন না। কিন্তু যে ইচ্ছায় শয়তানের পথ অনুসরণ করে, সে তারই দলের সদস্য হয়ে যায়। 🌿 অর্থাৎ, **শয়তান ডাক দেয় — কিন্তু মানুষই সাড়া দেয়।** তাই আল্লাহ শাস্তি দেন সেই প্রতিক্রিয়ার জন্য, যা মানুষ নিজেই বেছে নেয়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ জেনে শুনে অপরাধীর সঙ্গে যায়, তাহলে তার পরিণতিও সেই অপরাধীর মতো হয় 🌿 তেমনি যে ব্যক্তি শয়তানের চিন্তা, তার আচরণ, তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে তার সাথেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

৩️⃣ “لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ” —
“আমি অবশ্যই তোমাদের সবাইকে জাহান্নাম দিয়ে পূর্ণ করব।”
🌿 এটি আল্লাহর **ন্যায়বিচারের কঠোর ঘোষণা।** যে কেউ শয়তানের অনুসরণ করবে, সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে — কারণ সে নিজের ইচ্ছায় হিদায়াতকে ত্যাগ করেছে। 🌸 আল্লাহর ক্রোধ এখানে ন্যায়ভিত্তিক — তিনি কাউকে অন্যায় করেন না, বরং প্রত্যেকেই নিজের কাজের ফল ভোগ করবে। 🌿 জাহান্নাম পূর্ণ হবে দুটি শ্রেণিতে — **শয়তান ও তার অনুসারী মানুষ।** দুজনের পথ এক — বিদ্রোহ, অহংকার ও অকৃতজ্ঞতা।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** আল্লাহর এই ঘোষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয় — দুনিয়ার প্রতিটি পছন্দ আখিরাতের ফল নির্ধারণ করে 🌿 আমরা হয় শয়তানের অনুসারী, নয় আল্লাহর বান্দা — মাঝামাঝি কোনো স্থান নেই। 🌸 যারা ঈমান, কৃতজ্ঞতা ও বিনয়ের পথে চলে, তারা আল্লাহর বন্ধু; আর যারা অহংকার, কুফরি ও কামনায় ডুবে, তারা শয়তানের সঙ্গী। 🌿 এই আয়াতের শেষাংশ যেন এক **সতর্কবার্তা ও আহ্বান একসঙ্গে:** “তুমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছ?” 🤍

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন রাজা বিদ্রোহীর ঘোষণা শুনে বলে, “যে তার সঙ্গে যাবে, আমি তাদের সবাইকে নির্বাসিত করব।” 🌿 তেমনি আল্লাহ বললেন — “যে শয়তানের অনুসারী হবে, আমি তাদের সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।”

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • অহংকার মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে চিরতরে দূরে ফেলে।
  • শয়তান অভিশপ্ত, এবং তার অনুসারীরাও একই পরিণতি ভোগ করবে।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচারে কেউ অন্যায়ভাবে শাস্তি পায় না।
  • আল্লাহর কাছ থেকে দূরে থাকা মানেই প্রকৃত পরাজয়।
  • মুমিন সবসময় সতর্ক থাকে — সে যেন শয়তানের পথ অনুসরণ না করে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বললেন — **“ٱخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًۭا مَّدْحُورًۭا لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ”** 🤍 — “বের হয়ে যাও, নিন্দিত ও বিতাড়িত হয়ে। যারা তোমার অনুসরণ করবে, আমি তাদের সবাইকে জাহান্নাম দিয়ে পূর্ণ করব।” 🌸 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — শয়তান পরাজিত, কিন্তু যে তাকে অনুসরণ করে, সে নিজের পরাজয় ডেকে আনে 🌿 তাই আসুন আমরা বলি — “হে আল্লাহ! আমাকে আপনার সোজা পথে রাখুন, যাতে আমি কখনো শয়তানের দলে না পড়ি।” 🤍
আয়াত ১৯
وَيَـٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ
ওয়া ইয়্যা আদামু, উসকুন্‌ আনতা ওয়া যায়ুজুকাল-জান্নাহ; ফাকুলা মিন্‌ হাইসু শি’তুমা; ওালা তাকরাবা হাজিহিশ্‌ শাজারাহ; ফাতাকুনা মিনাজ্‌ জালিমীন।
“হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো, এবং সেখান থেকে যেখানে ইচ্ছা আহার করো; কিন্তু এই বৃক্ষের কাছেও যেও না, নইলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানব ইতিহাসের সূচনা মুহূর্তটি বর্ণনা করেছেন 🌿 এটি সেই সময়ের কথা, যখন আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রীকে জান্নাতে রাখা হলো, এবং তাদের জীবনের প্রথম **আদেশ ও নিষেধ** ঘোষণা করা হলো।

১️⃣ “وَيَـٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ” —
“হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো।”
🌿 এটি ছিল আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের এক বিশেষ ঘোষণা। আল্লাহ তাঁকে এমন এক পরিপূর্ণ সুখের স্থানে রাখলেন, যেখানে কোনো কষ্ট, দুঃখ বা পরিশ্রম ছিল না। 🌸 জান্নাতে প্রতিটি প্রয়োজন পূর্ণ ছিল, সেখানে শুধু একটি জিনিস প্রয়োজন ছিল — **আল্লাহর আদেশ মানা।** 🌿 আল্লাহ তাদের জান্নাতে সম্মানজনক স্থানে রাখলেন, যেন তারা বুঝতে পারে — **আনুগত্যই শান্তির উৎস।**

🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক পিতা সন্তানের জন্য সুন্দর ঘর বানিয়ে বলে, “তুমি এখানে স্বাধীনভাবে ঘুরো, শুধু একটি জিনিস স্পর্শ কোরো না।” 🌿 তেমনি আল্লাহও তাঁর প্রতিনিধি আদম (আঃ)-কে স্বাধীনতা দিলেন, কিন্তু পরীক্ষার জন্য একটি সীমা রাখলেন।

২️⃣ “فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا” —
“এবং সেখান থেকে যেখানে ইচ্ছা আহার করো।”
🌿 এটি ছিল পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা — জান্নাতে সব কিছু তাদের জন্য হালাল ছিল, শুধুমাত্র একটি জিনিস ব্যতীত। 🌸 আল্লাহ তাদের সীমাহীন নিয়ামত দিলেন, কিন্তু সেই সঙ্গে সীমারেখা স্থাপন করলেন, যেন তারা বুঝতে পারে — **স্বাধীনতা মানে সীমাহীনতা নয়।** 🌿 মানুষকে আল্লাহ স্বাধীন করেছেন, কিন্তু তা তাঁর আদেশের ভেতরেই নিরাপদ।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো বিশাল বাগানে এক কোণে লেখা থাকে — “এই অংশে প্রবেশ নিষেধ।” 🌿 মানুষ সেই পুরো বাগান উপভোগ করতে পারে, কিন্তু যদি নিষিদ্ধ স্থানে যায় — তবে সে নিজের ক্ষতি ডেকে আনে।

৩️⃣ “وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ” —
“কিন্তু এই বৃক্ষের কাছেও যেও না।”
🌿 আল্লাহ এখানে বলেননি “খেও না”, বরং “কাছেও যেও না” — কারণ নিষিদ্ধ জিনিসের নিকটে গেলে তা মানুষকে টেনে নেয়। 🌸 এটি এক মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা — পাপের কাছাকাছি যেও না, কারণ একবার কাছে গেলে দূরে থাকা কঠিন 🌿 🌿 এই নির্দেশ ছিল এক মহান পরীক্ষা — আনুগত্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা। 🌸 আল্লাহ মানুষকে শুরু থেকেই শেখালেন — স্বাধীনতার ভেতরেও সংযমই প্রকৃত সম্মান।

৪️⃣ “فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ” —
“নইলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
🌿 “জালিমীন” মানে — যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করে। অর্থাৎ, যদি তোমরা নিষেধ অমান্য করো, তাহলে তোমরাই নিজের শান্তি ও মর্যাদা হারাবে। 🌸 এখানে আল্লাহ বোঝাচ্ছেন — তাঁর আদেশ মানা মানে নিজের কল্যাণ, আর অমান্য করা মানে নিজের ক্ষতি। 🌿 এটি এক চিরন্তন নীতি — পাপের ফল শাস্তি নয়, বরং পাপ নিজেই শাস্তি।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে মানবজীবনের সূচনা ও দায়িত্ব উভয়ই নিহিত 🌿 আল্লাহ মানুষকে জান্নাতে রাখলেন, কিন্তু পরীক্ষা দিলেন একটি ছোট নিষেধের মাধ্যমে। 🌸 এভাবেই মানুষ শিখল — দুনিয়ার জীবনও এক পরীক্ষার জান্নাত, যেখানে অসংখ্য নিয়ামত আছে, কিন্তু কিছু জিনিস থেকে বিরত থাকা ফরজ। 🌿 প্রকৃত সুখ পাপমুক্ত স্বাধীনতায় নয়, বরং সীমার ভেতর আনুগত্যে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন নদী তার সীমা ভেঙে বের হলে ধ্বংস আনে 🌿 কিন্তু নিজের তীরের মধ্যে থাকলে সে জীবন দেয় — তেমনি মানুষও সীমার ভেতরে থাকলে শান্তি পায়, সীমা ভাঙলে ধ্বংস ডেকে আনে।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, তবে তাঁর নির্দেশের মধ্যে।
  • নিষিদ্ধ জিনিসের কাছাকাছি যাওয়া থেকেই পাপ শুরু হয়।
  • আল্লাহর আদেশ মানা মানে নিজের কল্যাণ নিশ্চিত করা।
  • অবাধ স্বাধীনতা নয়, নিয়ন্ত্রিত আনুগত্যই প্রকৃত মুক্তি।
  • আল্লাহর পরীক্ষা সবসময় মানুষের সক্ষমতার ভেতরে থাকে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“يَـٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ... وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّـٰلِمِينَ”** 🤍 — “হে আদম! জান্নাতে বাস করো, কিন্তু এই বৃক্ষের কাছে যেও না, নইলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — আল্লাহ সীমা নির্ধারণ করেন রক্ষা করার জন্য, বাধা দেওয়ার জন্য নয় 🌿 তাঁর আদেশ মানা মানে — জান্নাতের পথ প্রশস্ত করা 🤍
আয়াত ২০
فَوَسْوَسَ لَهُمَا ٱلشَّيْطَـٰنُ لِيُبْدِىَ لَهُمَا مَا وُورِىَ عَنْهُمَا مِن سَوْءَٰتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَىٰكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةِ إِلَّآ أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ ٱلْخَـٰلِدِينَ
ফাওয়াসওয়াসা লাহুমাশ্‌ শাইতানু, লিয়ুবদিয়া লাহুমা মা উরিয়া আনহুমা মিন্‌ সাও’আতিহিমা, ওয়া ক্বা-লা মা নহা-কুমা রব্বুকুমা ‘আন হাজিহিশ্‌ শাজারাহ, ইল্লা আন তাকুনা মালাকাইন আও তাকুনা মিনাল খালিদিন।
“অতঃপর শয়তান তাদের উভয়ের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিল, যেন তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন ছিল, প্রকাশিত হয়; এবং সে বলল — ‘তোমাদের প্রতিপালক এই বৃক্ষ থেকে তোমাদের নিষেধ করেননি, শুধু এই কারণে যে, তোমরা যেন ফেরেশতা না হও বা চিরজীবী না হয়ে যাও।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে মানব ইতিহাসের প্রথম প্রতারণার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে 🌿 শয়তান, যাকে আল্লাহ জান্নাত থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, এখন চুপিচুপি আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রীকে প্রতারণা করতে এলো।

১️⃣ “فَوَسْوَسَ لَهُمَا ٱلشَّيْطَـٰنُ” —
“অতঃপর শয়তান তাদের উভয়ের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিল।”
🌿 “ওয়াসওয়াসা” শব্দের অর্থ — হৃদয়ে ধীরে ধীরে ফিসফিসানো বা কুমন্ত্রণা দেওয়া। শয়তান সরাসরি বাধ্য করে না, বরং **ফিসফিসিয়ে প্ররোচনা দেয়**। 🌸 সে মানুষের মনকে এমনভাবে প্রভাবিত করে, যেন পাপ কাজটি আকর্ষণীয় মনে হয় 🌿 ঠিক যেমন বিষকে চিনি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। 🌿 এই কৌশল আজও একই — শয়তান আগে মনে ভাব ঢালে, তারপর সেটি যৌক্তিক মনে করায়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন সে বলে — “এটা তো ছোট একটা ভুল”, বা “আল্লাহ ক্ষমাশীল, করলেই বা কী হবে?” 🌿 এভাবেই ধীরে ধীরে মানুষকে বিপদে ফেলে।

২️⃣ “لِيُبْدِىَ لَهُمَا مَا وُورِىَ عَنْهُمَا مِن سَوْءَٰتِهِمَا” —
“যেন তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন ছিল, প্রকাশিত হয়।”
🌿 জান্নাতে আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-এর শরীর বিশেষ এক নূর দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। শয়তানের কুমন্ত্রণা মানার পর, সেই নূর চলে গেল — তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ পেল। 🌸 এটি শুধু দেহগত নয়, বরং **আধ্যাত্মিক উন্মোচনের প্রতীক** — পাপ মানুষের মর্যাদার আবরণ সরিয়ে দেয় 🌿 🌿 তাই আজও পাপ মানুষকে লজ্জা থেকে বঞ্চিত করে, আর তাওবা সেই লজ্জাকে পুনরুদ্ধার করে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন পাপ প্রথমে চোখে সুন্দর লাগে, কিন্তু পরে লজ্জা, অপমান ও ক্ষতি এনে দেয় 🌿 ঠিক তেমনি আদম (আঃ)-এর ঘটনাও এক শিক্ষা — পাপ মানুষের আবরণ কেড়ে নেয়।

৩️⃣ “وَقَالَ مَا نَهَىٰكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةِ” —
“সে বলল — তোমাদের প্রতিপালক এই বৃক্ষ থেকে তোমাদের নিষেধ করেননি…”
🌿 এখন শয়তান যুক্তির মুখোশ পরল। সে এমনভাবে কথা বলল, যেন সে উপকারী পরামর্শদাতা। 🌸 তার কথার মানে — “আল্লাহ তোমাদের কিছু থেকে বঞ্চিত রাখতে চাননি, বরং এই গাছ তোমাদের উন্নতি করবে!” 🌿 🌿 এভাবেই শয়তান মানুষকে মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে ধোঁকা দেয় — পাপকে “উন্নতি”, “স্বাধীনতা”, “সুবিধা” বলে উপস্থাপন করে।

৪️⃣ “إِلَّآ أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ ٱلْخَـٰلِدِينَ” —
“শুধু এই কারণে যে, তোমরা যেন ফেরেশতা না হও বা চিরজীবী না হয়ে যাও।”
🌿 শয়তান বলল — “তোমরা এই গাছ খেলে অমর হবে বা ফেরেশতা হয়ে যাবে।” অর্থাৎ, সে তাদের **মর্যাদা ও অমরত্বের লোভ দেখাল।** 🌸 এটি শয়তানের সবচেয়ে পুরনো কৌশল — মানুষকে এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া যা তার ক্ষমতার বাইরে। 🌿 আজও সে বলে — “এই গুনাহ করলে তুমি বেশি সফল হবে,” “এই অন্যায় করলে কেউ জানবে না,” “এই একবার করলে কিছু হবে না।” 🌿 কিন্তু প্রতিবারই ফল একই — **লজ্জা, অনুতাপ ও পতন।**

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে মানুষ ও শয়তানের চিরন্তন সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছে 🌿 শয়তান শুরু থেকেই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে, আর মানুষ বারবার তার প্রতারণায় পড়ে যায়। 🌸 কিন্তু এখানে বড় শিক্ষা হলো — শয়তান মানুষের উপর জোর করে না, বরং মানুষ নিজেই তার প্রলোভনে সাড়া দেয়। 🌿 তাই মুমিনের কাজ হলো — **তার কণ্ঠস্বর চিনে নেওয়া এবং সাথে সাথে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া।** আল্লাহ বলেন — **“فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ”** — “আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।” (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৩৬)

🌸 **উদাহরণ:** যেমন আগুনের পাশে খেললে পোড়া অবধারিত 🌿 তেমনি শয়তানের ফিসফিস শুনলে হৃদয় পুড়েই যায়, যদি না আল্লাহর স্মরণে আশ্রয় নেওয়া হয়।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • শয়তান মানুষকে ধীরে ধীরে কুমন্ত্রণা দিয়ে প্রলুব্ধ করে।
  • পাপ মানুষের মর্যাদা ও আবরণ কেড়ে নেয়।
  • শয়তান সবসময় পাপকে যৌক্তিক ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
  • মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও লোভ তার প্রধান অস্ত্র।
  • আল্লাহর আশ্রয়ই শয়তানের প্রতারণা থেকে নিরাপত্তার একমাত্র পথ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَوَسْوَسَ لَهُمَا ٱلشَّيْطَـٰنُ...”** 🤍 — “শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিল…” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — শয়তান সর্বদা ফিসফিস করে, কিন্তু সে বাধ্য করতে পারে না 🌿 তাই যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে থাকে, তার হৃদয়ে শয়তানের কোনো ফিসফিস প্রবেশ করতে পারে না 🤍
আয়াত ২১
وَقَاسَمَهُمَآ إِنِّى لَكُمَا لَمِنَ ٱلنَّـٰصِحِينَ
ওয়া কাসামাহুমা ইন্নী লাকুমা লামিনান্‌ নাসিহীন।
“আর সে (শয়তান) তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল — ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য একনিষ্ঠ উপদেশদাতা।’”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা শয়তানের প্রতারণার আরেকটি সূক্ষ্ম ধাপ প্রকাশ করেছেন 🌿 সে শুধু কুমন্ত্রণা দিল না, বরং **মিথ্যা শপথ** করে আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-কে প্রতারিত করল।

১️⃣ “وَقَاسَمَهُمَا” —
“আর সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করল।”
🌿 “কাসামাহুমা” শব্দের অর্থ — “শপথ করা”, “কসম খাওয়া”। অর্থাৎ, শয়তান বলল — “আমি আল্লাহর কসম খাচ্ছি, আমি তোমাদের মঙ্গলের জন্যই বলছি!” 🌸 🌿 এটি ছিল **মিথ্যার আড়ালে সবচেয়ে বড় সত্য বিকৃতি।** সে জানত যে, আদম (আঃ) সত্যবাদী; তাই মিথ্যা শপথ ব্যবহার করেই বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করল। 🌸 এটি তার কৌশল — মানুষের সামনে সত্যের ভাষায় মিথ্যা বলা 🌿

🌿 **এখানে শিক্ষা:** পাপ কখনো সরাসরি “আমি শয়তান” বলে আসে না, বরং “আমি তোমার উপকার করতে চাই” এই মুখোশ পরে আসে 🤍

২️⃣ “إِنِّى لَكُمَا لَمِنَ ٱلنَّـٰصِحِينَ” —
“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য একনিষ্ঠ উপদেশদাতা।”
🌿 শয়তান তাদের বিশ্বাস করানোর জন্য বলল — “আমি তো তোমাদের ভালো চাই! এই গাছ খেলে তোমরা উন্নত হবে, ফেরেশতার মতো হবে, বা অমর হবে।” 🌸 এভাবেই সে নিজের মিথ্যা চিন্তা “সৎ উপদেশ” হিসেবে উপস্থাপন করল। 🌿 আজও সে একই কৌশল ব্যবহার করে — **“এটা করলে তোমার লাভ হবে, এতে তোমার উন্নতি হবে, এতে কোনো সমস্যা নেই।”** কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি এমন কথার পেছনে থাকে ধ্বংসের দরজা 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো প্রতারক ব্যবসায়ী বলে — “আমি তোমার বন্ধু, এই চুক্তি তোমার মঙ্গলের জন্য।” কিন্তু শেষমেশ সে ঠকায় 🌿 তেমনি শয়তানও বন্ধুর ভান করে, কিন্তু লক্ষ্য থাকে — মানুষকে আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত প্রমাণ করে — শয়তান মানুষের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু, কারণ সে কখনো শত্রুর মতো নয়, বরং বন্ধুর মতো আচরণ করে 🌿 🌸 সে পাপকে “মঙ্গল”, অবাধ্যতাকে “স্বাধীনতা”, আর হারামকে “অধিকার” হিসেবে উপস্থাপন করে। 🌿 আর মানুষ যদি আল্লাহর বাণীর আলো না জানে, তবে সহজেই সেই অন্ধকারে হারিয়ে যায়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক ডাকাত “পুলিশের পোশাক” পরে মানুষকে ধোঁকা দেয়, তেমনি শয়তান “সৎ উপদেশদাতা” সেজে মানুষকে বিপথে নিয়ে যায় 🌿

🌸 **গভীর বার্তা:** শয়তান সত্যের ভাষা ব্যবহার করে মিথ্যাকে সুন্দর করে তোলে। কিন্তু আল্লাহর স্মরণ ও জ্ঞানই পারে সেই প্রতারণা উন্মোচন করতে। 🌿 তাই কুরআন পাঠ, নামাজ ও দোয়া — এগুলো শুধু ইবাদত নয়, এগুলো **শয়তানের প্রতারণা থেকে আত্মার ঢাল।**

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • শয়তান প্রতারণার জন্য মিথ্যা শপথ ও বন্ধুত্বের মুখোশ ব্যবহার করে।
  • মিথ্যা উপদেশ সত্যের চেয়ে বিপজ্জনক, কারণ তা বিশ্বাস অর্জন করে।
  • আল্লাহর বাণী ও স্মরণই মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • প্রতিটি “মঙ্গল” কথা যাচাই করতে হবে — এটি কি সত্যিই আল্লাহর নির্দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
  • শয়তান মানুষকে কষ্টে ফেলতে চায়, আর আল্লাহ চান তার কল্যাণ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
শয়তান বলল — **“إِنِّى لَكُمَا لَمِنَ ٱلنَّـٰصِحِينَ”** 🤍 — “আমি তো তোমাদের একনিষ্ঠ উপদেশদাতা!” 🌸 কিন্তু বাস্তবে সেটি ছিল প্রথম মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, যা মানবজাতির পতনের সূচনা করল 🌿 📖 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে দেয় — “প্রত্যেক উপদেশ নয় উপকারী, বরং যে উপদেশ আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে, তা শয়তানের ফিসফিস ছাড়া আর কিছুই নয়।” 🤍
আয়াত ২২
فَدَلَّىٰهُمَا بِغُرُورٍۢ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا ٱلشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْءَٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ ٱلْجَنَّةِ ۚ وَنَادَىٰهُمَا رَبُّهُمَآ أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَن تِلْكُمَا ٱلشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَآ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ لَكُمَا عَدُوٌّۭ مُّبِينٌۭ
ফাদাল্লাহুমা বিঘুরূর; ফালাম্মা জা-ক্বাশ্‌ শাজারাহ, বাদাত লাহুমা সাও’আতুহুমা; ওয়া তাফিক্বা ইয়াখসিফান ‘আলাইহিমা মিন্‌ ওয়ারাকিল জান্নাহ; ওয়া না-দাহুমা রব্বুহুমা, আলাম্‌ আনহাকুমা আন্‌ তিলকুমাশ্‌ শাজারাহ; ওয়া আকুল লাকুমা ইননাশ্‌ শাইতানা লাকুমা ‘আদুউম মুবীন।
“অতঃপর সে (শয়তান) তাদের ধোঁকা দিয়ে ফাঁদে ফেলল; তারপর যখন তারা সেই বৃক্ষের স্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে গেল, আর তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদের ঢাকতে শুরু করল। তখন তাদের প্রতিপালক ডাকলেন — ‘আমি কি তোমাদের ঐ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি? আর বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?’”
তাফসীর:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির প্রথম পতনের ঘটনাটি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন 🌿 এখানে আমরা দেখি — **কুমন্ত্রণা → প্রতারণা → পাপ → লজ্জা → অনুতাপ → আল্লাহর তিরস্কার।**

১️⃣ “فَدَلَّىٰهُمَا بِغُرُورٍۢ” —
“অতঃপর সে তাদের ধোঁকা দিয়ে ফাঁদে ফেলল।”
🌿 “দাল্লাহুমা” মানে — ধীরে ধীরে প্রলুব্ধ করা, ফাঁদে ফেলা। আর “বিঘুরূর” মানে — প্রতারণা, মিথ্যা আশা। 🌸 শয়তান এমনভাবে বোঝালো, যেন সে সত্য বলছে। সে আল্লাহর কসম খেয়েছিল (আগের আয়াতে), আর এখন সেই মিথ্যা শপথের ফল দেখা গেল — আদম ও হাওয়া ধোঁকায় পড়লেন। 🌿 এভাবেই শয়তান আজও মানুষকে **মিথ্যা আকর্ষণে ফেলে দেয়** — কখনো সম্পদ, কখনো ক্ষমতা, কখনো সৌন্দর্যের মাধ্যমে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ মধুতে বিষ মিশিয়ে বলে — “এটা মিষ্টি, কোনো ক্ষতি নেই।” 🌿 তেমনি শয়তানও পাপকে আকর্ষণীয় করে তোলে, কিন্তু ফল হয় ধ্বংস ও লজ্জা।

২️⃣ “فَلَمَّا ذَاقَا ٱلشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْءَٰتُهُمَا” —
“তারপর যখন তারা সেই বৃক্ষের স্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে গেল।”
🌿 পাপের প্রথম পরিণাম হলো — **লজ্জা হারানো।** যখন তারা নিষিদ্ধ ফল খেল, তখন আল্লাহর নূর-আবরণ সরে গেল, আর তারা নিজেদের উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেল। 🌸 এটি কেবল শারীরিক নয়, **আধ্যাত্মিক লজ্জার প্রকাশও।** কারণ পাপ আত্মাকে নগ্ন করে দেয় — লজ্জা, শান্তি ও মর্যাদা হারিয়ে যায়। 🌿 তাই আল্লাহ বলেন — “ইমানই লজ্জার উৎস, আর লজ্জা ছাড়া ইমান টেকে না।” 🌸

৩️⃣ “وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ ٱلْجَنَّةِ” —
“আর তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদের ঢাকতে শুরু করল।”
🌿 যখন লজ্জা জাগ্রত হলো, তারা দ্রুত নিজেদের ঢাকার চেষ্টা করল। এটি **মানব প্রকৃতির প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া** — পাপের পর অনুতাপ ও আত্মগোপন। 🌸 এটি ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম তাওবার সূচনা 🌿 আদম (আঃ) বুঝলেন, ভুল হয়ে গেছে, আর তিনি লজ্জায় নিজেকে ঢাকতে শুরু করলেন। 🌿 এখানে এক মহৎ শিক্ষা — মুমিন ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত হয়, আর পাপী তা লুকাতে চায়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি শিশু মায়ের নিষেধ ভেঙে কিছু করলে, মায়ের চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে লুকিয়ে ফেলে 🌿 তেমনি একজন মুমিনও পাপের পর লজ্জায় ডুবে যায় — সেটিই তাওবার প্রথম ধাপ।

৪️⃣ “وَنَادَىٰهُمَا رَبُّهُمَآ أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَن تِلْكُمَا ٱلشَّجَرَةِ” —
“তখন তাদের প্রতিপালক ডাকলেন — আমি কি তোমাদের ঐ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি?”
🌿 এটি ছিল আল্লাহর **স্নেহমিশ্রিত তিরস্কার** — যেন এক পিতা সন্তানের ভুলের পর জিজ্ঞাসা করছেন, “আমি কি তোমাকে বলিনি এটা করো না?” 🌸 আল্লাহর কণ্ঠে ক্রোধের চেয়ে মায়া ছিল — কারণ আদম (আঃ)-এর ভুল ছিল প্রতারণার ফল, বিদ্রোহ নয়। 🌿 আল্লাহ তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন তাঁর সীমারেখা, যাতে মানবজাতি সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেয়।

৫️⃣ “وَأَقُل لَّكُمَآ إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ لَكُمَا عَدُوٌّۭ مُّبِينٌۭ” —
“আর আমি কি তোমাদের বলিনি — শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?”
🌿 আল্লাহ আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-কে আগেই সতর্ক করেছিলেন — “সে তোমার শত্রু, তার ফাঁদে পা দিও না।” কিন্তু শয়তান বন্ধুর মুখোশ পরে প্রতারণা করল। 🌸 এখানে আল্লাহ আমাদেরও সতর্ক করছেন — “তুমি জানো শয়তান তোমার শত্রু, তবু কেন তার কথায় চলবে?” 🌿 🌿 পাপের পর অনুতাপ হয়, কিন্তু ক্ষতি ঘটে যায় — তাই সঠিক পথ হলো আগেই শয়তানের ধোঁকা চিনে ফেলা।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতের প্রতিটি শব্দ মানবজীবনের আয়না 🌿 শয়তান প্রতারণা করে, মানুষ লোভে পড়ে, তারপর লজ্জা পায়, অনুতপ্ত হয়, আর আল্লাহ মমতায় ডেকে বলেন — “আমি তো তোমাকে আগেই সতর্ক করেছিলাম।” 🤍 🌿 এভাবেই শুরু হয় মানব জীবনের শিক্ষা — **ভুলের পর অনুতাপ, এবং অনুতাপের পর ক্ষমা।**

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • শয়তানের প্রতারণা সবসময় আকর্ষণীয় আকারে আসে।
  • পাপ মানুষকে লজ্জা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে।
  • আল্লাহর নিষেধ মানা মানে নিজের সম্মান রক্ষা করা।
  • অনুতাপ ও লজ্জা তাওবার প্রথম ধাপ।
  • আল্লাহর দয়া ও সতর্কবার্তা সবসময় মানুষের কল্যাণে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَدَلَّىٰهُمَا بِغُرُورٍۢ ... إِنَّ ٱلشَّيْطَـٰنَ لَكُمَا عَدُوٌّۭ مُّبِينٌۭ”** 🤍 — “শয়তান ধোঁকা দিল, আর আমি তোমাদের বলেছিলাম, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ধোঁকা, আর মুমিনের সবচেয়ে বড় ঢাল আল্লাহর স্মরণ 🌿 তাই আসুন বলি — **“আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম”** — “আমি আশ্রয় নিচ্ছি আল্লাহর কাছে, অভিশপ্ত শয়তান থেকে।” 🤍
আয়াত ২৩
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ
ক্বা-লা রাব্বানা জালামনা আনফুসানা, ওয়া ইন লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা, লানাকূনান্না মিনাল খাসিরীন।
“তারা বলল — হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি; যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি মানবজাতির প্রথম **তাওবা (অনুতাপ ও ক্ষমা প্রার্থনা)**-এর ঘোষণা। আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আঃ) পাপ করার পর আল্লাহর সামনে বিনয়ভরে আত্মসমর্পণ করলেন। এটি তাদের **ভুলের পর ঈমানের পুনর্জন্ম**।

১️⃣ “قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنفُسَنَا” —
“তারা বলল — হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি।”
🌿 এখানে ‘জুলুম’ মানে — **নিজেদের ক্ষতি করা**, অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ অমান্য করে তারা নিজেদের মর্যাদা হারিয়েছিল। 🌸 এটি স্বীকারোক্তির ভাষা, অজুহাতের নয়। তারা বলেনি — “শয়তান আমাদের প্রতারণা করেছে।” বরং নিজেদের দোষ স্বীকার করলেন — “আমরা অন্যায় করেছি।” 🌿 🌸 এখানেই তাওবার মূল — **নিজের দোষ স্বীকার করা এবং দায় এড়িয়ে না যাওয়া।**

🌿 আল্লাহ মানুষকে যে সম্মান দিয়েছিলেন, সেটি আদম (আঃ)-এর বিনয় ও অনুতাপেই পুনরুদ্ধার হলো।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি শিশু ভুল করলে মায়ের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলে — “মা, আমি ভুল করেছি।” 🌿 তখন মা তাকে ক্ষমা করেন, ভালোবাসা ফিরিয়ে দেন। তেমনি আল্লাহও তাওবাকারী বান্দাকে মায়ার দৃষ্টিতে দেখেন।

২️⃣ “وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا” —
“যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো।”
🌿 এই অংশে রয়েছে বিনয় ও নির্ভরতার চরম প্রকাশ। তারা বুঝলেন — আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া ছাড়া মুক্তি অসম্ভব। 🌸 এটি এমন এক বাক্য, যা প্রকৃত মুমিনের চেতনাকে জাগিয়ে তোলে 🌿 ক্ষমা মানে শুধু পাপ মোচন নয়, বরং **আল্লাহর করুণা লাভ করে আবার ঘনিষ্ঠ হওয়া।** 🌿 আদম (আঃ)-এর এই দোয়া শেখায় — তাওবা মানে কেবল “ক্ষমা চাই” নয়, বরং “হে আল্লাহ, আমি তোমার দিকে ফিরে যাচ্ছি।” 🤍

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি শিশু দুঃখিত কণ্ঠে বলে — “বাবা, তুমি যদি আমাকে না ক্ষমা করো, আমি হারিয়ে যাব।” 🌿 তেমনি এই দোয়া মানুষের আত্মাকে কাঁপিয়ে দেয় — এটি এক গভীর **আল্লাহভীতি ও আশার মিলনবিন্দু।**

৩️⃣ “لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ” —
“তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।”
🌿 তারা বুঝেছিলেন, আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া ব্যতীত সমস্ত অর্জন অর্থহীন। কারণ প্রকৃত ক্ষতি মানে জান্নাত হারানো, আর প্রকৃত লাভ মানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন 🌸 🌿 “খাসিরীন” শব্দটি কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে তাদের জন্য, যারা আল্লাহর দিকে ফিরে না এসে নিজের আত্মাকে হারায়। 🌸 আদম (আঃ)-এর এই বাক্য যেন মানুষের মুখে রেখে দিলেন — **“হে আমার রব, আমি অন্যায় করেছি, তুমি না ক্ষমা করলে আমি নিঃশেষ হব।”**

🌿 **এই দোয়াটিই প্রথম মানবিক তাওবার দোয়া,** যা আজও বিশ্বজুড়ে মুমিনরা পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত মানুষকে দুটি চিরন্তন শিক্ষা দেয় —
  • ভুলের পরেও আল্লাহর দরজা কখনো বন্ধ হয় না।
  • যে বিনয়ভরে ফিরে আসে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।
🌿 আল্লাহ বলেন — **“إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّابِينَ”** — “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।” (সূরা আল-বাকারা ২:২২২) 🌸

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো দরজা বারবার বন্ধ হলেও, আল্লাহর দরজা কখনো বন্ধ হয় না 🌿 শুধু ডাকতে জানতে হয় — “رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا …”

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • নিজের ভুল স্বীকার করা তাওবার প্রথম ধাপ।
  • আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া ছাড়া মুক্তির কোনো পথ নেই।
  • ভুল মানুষ করে, কিন্তু ক্ষমা আল্লাহর কাছেই পাওয়া যায়।
  • যে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়, সে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায়।
  • এই দোয়া প্রতিটি মুমিনের জীবনের আশ্রয় হওয়া উচিত।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا …”** 🤍 — “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি, যদি তুমি ক্ষমা না করো ও দয়া না করো, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — মানুষ ভুল করতেই পারে, কিন্তু প্রকৃত মানুষ সে-ই, যে ভুলের পর **আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।** 🌿 এই দোয়াই মানবতার প্রথম কান্না, এবং আল্লাহর রহমতের প্রথম উত্তর 🤍
আয়াত ২৪
قَالَ ٱهْبِطُوا۟ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۭ ۖ وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّۭ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِينٍۢ
ক্বালা ইহবিতু বা‘দুকুম লিবা‘দিন ‘আদুউন; ওয়ালাকুম ফিল আরদি মুস্তাকর্রুন ওয়া মাতাউন ইলা হীন।
“আল্লাহ বললেন — ‘তোমরা সবাই নেমে যাও (পৃথিবীতে); তোমরা একে অপরের শত্রু হবে, আর পৃথিবীতে তোমাদের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট এককাল পর্যন্ত বসবাস ও জীবিকা।’”
তাফসীর:
এই আয়াত মানব ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা 🌿 এটি **জান্নাত থেকে পৃথিবীতে মানুষের প্রেরণ ও জীবনের সূচনা** ঘোষণা করে। আদম (আঃ), হাওয়া (আঃ) এবং শয়তান — সবাইকে জান্নাত থেকে অবতীর্ণ করা হলো পৃথিবীতে, কিন্তু ভিন্ন উদ্দেশ্য ও অবস্থানে।

১️⃣ “قَالَ ٱهْبِطُوا۟” —
“আল্লাহ বললেন — তোমরা সবাই নেমে যাও (পৃথিবীতে)।”
🌿 “ইহবিতু” অর্থ — নিচে নামো, অবতীর্ণ হও। এটি ছিল শুধু অবস্থানের পরিবর্তন নয়, বরং এক **দায়িত্বের যাত্রা**। 🌸 জান্নাতে ছিল নিঃশর্ত সুখ; আর পৃথিবীতে থাকবে পরীক্ষা, পরিশ্রম ও পরিণাম 🌿 🌿 আল্লাহ মানুষকে শাস্তি হিসেবে নয়, বরং **খলিফা হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন** — যেন সে এখানে দায়িত্ব পালন করে, ন্যায় ও ঈমান প্রতিষ্ঠা করে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন শিক্ষক পরীক্ষার জন্য ছাত্রকে শ্রেণিকক্ষ থেকে পরীক্ষাকক্ষে পাঠান 🌿 এটি তিরস্কার নয়, বরং যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ। তেমনি মানুষকেও আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠালেন পরীক্ষার জন্য।

২️⃣ “بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۭ” —
“তোমরা একে অপরের শত্রু হবে।”
🌿 এখানে ‘শত্রু’ বলতে বোঝানো হয়েছে — শয়তান ও মানুষের পারস্পরিক শত্রুতা 🌿 শয়তান চায় মানুষ পথভ্রষ্ট হোক, আর মানুষ চায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে। 🌸 এটি এক চিরন্তন সংঘর্ষ — **সত্য বনাম মিথ্যা, ঈমান বনাম কুফর, আলো বনাম অন্ধকার।** 🌿 তবে এটি মানুষের জন্য এক সতর্কতা — শয়তান তোমার চিরশত্রু, তাই তাকে বন্ধুর মতো গ্রহণ করো না। 🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ জানে সাপ তার শত্রু, তবুও যদি সে তার সঙ্গে খেলা করে — তবে দংশন অবধারিত 🌿 তেমনি শয়তানও সর্বদা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

৩️⃣ “وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّۭ” —
“আর পৃথিবীতে তোমাদের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট বাসস্থান।”
🌿 এখানে আল্লাহ মানুষকে আশ্বস্ত করছেন — যদিও জান্নাত থেকে অবতরণ, তবুও পৃথিবীতে থাকবে তোমাদের **আশ্রয় ও জীবিকা।** 🌸 এটি আল্লাহর **রহমত ও সুবিচারের নিদর্শন।** শাস্তির পরও আল্লাহ তাদের বঞ্চিত করেননি; বরং পৃথিবীতে জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করে দিলেন 🌿 🌿 এখানেই প্রকাশ পায় আল্লাহর করুণা — তিনি সতর্ক করেও বললেন — “তোমাদের জন্য পৃথিবী আছে, আমি তোমাদের একা ছাড়ছি না।” 🤍

🌿 আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠালেন দায়িত্বসহকারে, কিন্তু তাঁর দয়া ও পথনির্দেশও পাঠালেন সঙ্গে। এটি ছিল করুণামিশ্রিত এক সতর্কতা 🌸

৪️⃣ “وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِينٍۢ” —
“এবং নির্দিষ্ট এককাল পর্যন্ত উপভোগের সুযোগ থাকবে।”
🌿 মানুষ পৃথিবীতে থাকবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত — এ জীবন চিরস্থায়ী নয়। দুনিয়া শুধু এক অস্থায়ী আশ্রয়, যেখানে কাজের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে জান্নাত বা জাহান্নাম। 🌸 এই শব্দগুলো আল্লাহর এক কোমল স্মরণ — “এ জীবন চিরস্থায়ী নয়, তাই এটিকে জান্নাতের প্রস্তুতিক্ষেত্র বানাও।” 🌿 🌿 পৃথিবী মানুষের জন্য পরীক্ষা ও অনুগ্রহ উভয়ই — এখানে রয়েছে পরিশ্রম, প্রলোভন ও পুরস্কার।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতের প্রতিটি বাক্য মানুষের অস্তিত্বের ভিত্তি 🌿 আল্লাহ জান্নাতের পর মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে তাকে **দায়িত্ব, পরীক্ষা ও আশার জীবন** দিলেন। 🌿 এখানে “অবতরণ” মানে পতন নয়, বরং **আল্লাহর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।** মানুষকে এখন প্রমাণ করতে হবে — সে জান্নাতের যোগ্য কিনা। 🌸 আল্লাহ সতর্ক করেও বললেন — “তোমাদের জন্য পৃথিবী আছে, আমি তোমাদের একা ছাড়ছি না।” 🤍

🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক রাজা তাঁর প্রিয় সেবককে বলেন — “তুমি এখন যুদ্ধক্ষেত্রে যাও, কিন্তু আমি তোমার সঙ্গেই আছি।” 🌿 তেমনি আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ায় পাঠালেন, কিন্তু তাঁকে একা রাখলেন না — পাঠালেন ওহি, হিদায়াত ও দয়া।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • মানুষ পৃথিবীতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
  • শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু — তাকে বন্ধু মনে করা বিপদজনক।
  • দুনিয়ার জীবন অস্থায়ী; জান্নাতই স্থায়ী গন্তব্য।
  • আল্লাহ শাস্তির মধ্যেও রহমত রাখেন।
  • মানুষের প্রকৃত ঘর জান্নাত, পৃথিবী কেবল পরীক্ষার ময়দান।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ٱهْبِطُوا۟ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۭ وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّۭ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِينٍۢ”** 🤍 — “তোমরা সবাই পৃথিবীতে নেমে যাও; একে অপরের শত্রু হবে, আর পৃথিবীতে তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জীবিকা থাকবে।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — মানুষ দুনিয়ায় এসেছে ভুলের কারণে নয়, বরং এক মহান উদ্দেশ্যে 🌿 এখন তার কর্তব্য — আল্লাহর নির্দেশ মেনে জান্নাতে ফেরার যোগ্য হওয়া 🤍
আয়াত ২৫
قَالَ فِيهَا تَحْيَوْنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ
ক্বা-লা ফীহা তাহ্যাউন, ওয়া ফীহা তামুতুন, ওয়া মিনহা তুখরাজুন।
“আল্লাহ বললেন — তোমরা এখানেই (পৃথিবীতে) জীবনযাপন করবে, এখানেই মৃত্যুবরণ করবে, এবং এখান থেকেই পুনরুত্থিত করা হবে।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজীবনের **পূর্ণ চক্র (জন্ম, মৃত্যু ও পুনরুত্থান)** ঘোষণা করেছেন। জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়ার পর, এখানেই মানুষের জীবনযাত্রার পুরো পরিক্রমা নির্ধারিত হলো।

১️⃣ “قَالَ فِيهَا تَحْيَوْنَ” —
“আল্লাহ বললেন — তোমরা এখানেই জীবনযাপন করবে।”
🌿 অর্থাৎ, পৃথিবী হবে মানুষের জীবনধারণের স্থান — এখানে জন্ম, শিক্ষা, কর্ম ও পরীক্ষা সবই সম্পন্ন হবে। 🌸 মানুষ এই পৃথিবীতেই সুখ, দুঃখ, আনন্দ ও পরীক্ষা অনুভব করবে। এ জীবন হলো **একটি মিশন**, যেখানে প্রত্যেক মানুষকে নিজের আমল দ্বারা জান্নাতের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। 🌿 এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জীবনের সূচনা ঘোষণা — “এখন তোমরা আমার পাঠানো দায়িত্ব নিয়ে এই পৃথিবীতে বাঁচবে।” 🤍

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন সৈনিককে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হলে বলা হয় — “তুমি এখানেই থাকবে, এখানেই সংগ্রাম করবে।” তেমনি মানুষকেও আল্লাহ বললেন — “এই পৃথিবীতেই তোমার জীবনযুদ্ধ চলবে।” 🌿

২️⃣ “وَفِيهَا تَمُوتُونَ” —
“এখানেই মৃত্যুবরণ করবে।”
🌿 পৃথিবী শুধু জীবনের স্থান নয়, মৃত্যুর স্থানও বটে। এখানে জন্ম নেওয়া প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ”** — “প্রত্যেক প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১৮৫) 🌸 🌿 মৃত্যু কোনো শেষ নয়, বরং পরবর্তী ধাপের শুরু — এটি জান্নাত বা জাহান্নামের পথে এক যাত্রা মাত্র। 🌸 মানুষ পৃথিবীর মাটিতেই জন্ম নেয়, এবং এই মাটিতেই তার দেহ ফিরে যায় — এটি প্রকৃতির সেই চক্র, যা আল্লাহর হিকমতের অংশ 🌿

৩️⃣ “وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ” —
“এবং এখান থেকেই তোমরা পুনরুত্থিত করা হবে।”
🌿 এই অংশে কিয়ামতের ঘোষণা রয়েছে — মানুষ মৃত্যুর পর যখন মাটিতে মিশে যাবে, তখন আল্লাহ সেই একই পৃথিবী থেকেই আবার তাকে জীবিত করবেন। 🌸 এটি **আল্লাহর ক্ষমতা ও প্রতিশ্রুতির প্রতীক।** মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো — “তুমি এই পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছ, এখানেই মৃত্যু পাবে, এবং এখান থেকেই কিয়ামতের দিনে আবার উঠানো হবে।” 🌿 🌿 এটি জীবনের পূর্ণচিত্র — জন্ম ➜ জীবন ➜ মৃত্যু ➜ পুনরুত্থান ➜ বিচার।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি বীজ মাটিতে পোঁতা হয়, তারপর তা গাছ হয়ে জন্ম নেয় 🌿 তেমনি মানুষও পৃথিবীর মাটিতে জন্ম নিয়ে, মৃত্যুর পর সেই মাটিতেই ফিরে যায়, এবং পুনরুত্থানের দিনে সেই মাটি থেকেই আবার উঠে দাঁড়াবে।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে তিনটি সত্যের মুখোমুখি করেছেন —
  • জীবন — আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সুযোগ।
  • মৃত্যু — এই সুযোগের সমাপ্তি।
  • পুনরুত্থান — তোমার কাজের ফলাফলের সূচনা।
🌿 অর্থাৎ, পৃথিবী শুধু বসবাসের স্থান নয়, বরং **চিরজীবনের প্রস্তুতিক্ষেত্র।** এখানে প্রতিটি শ্বাসই এক পরীক্ষার অংশ 🌸

🌿 **আল্লাহ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন —** “তোমরা এই পৃথিবীতে এসেছ সাময়িকভাবে। এটি তোমাদের স্থায়ী ঘর নয়। কিন্তু এখানেই তোমাদের কর্মফল নির্ধারিত হবে।” 🤍

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন ভ্রমণকারী জানে — সে স্থায়ীভাবে কোনো রেলস্টেশনে থাকে না 🌿 সে জানে, এটি তার গন্তব্য নয় — বরং পথে এক অস্থায়ী বিরতি। তেমনি পৃথিবীও কেবল একটি যাত্রাবিরতি — চিরস্থায়ী গন্তব্য হলো জান্নাত বা জাহান্নাম।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থান — এই তিনটি ধাপ আল্লাহর পরিকল্পিত এক ধারাবাহিকতা।
  • পৃথিবী মানুষের সাময়িক আবাস; চিরস্থায়ী গন্তব্য আখিরাত।
  • মৃত্যু শেষ নয়, বরং পরবর্তী জীবনের সূচনা।
  • মানুষের দায়িত্ব — এই পৃথিবীর জীবনকে আখিরাতের প্রস্তুতিতে ব্যয় করা।
  • কিয়ামতের বিশ্বাসই মানুষকে ন্যায়পরায়ণ ও সচেতন রাখে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فِيهَا تَحْيَوْنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ”** 🤍 — “তোমরা এই পৃথিবীতেই বাঁচবে, এখানেই মরবে, এবং এখান থেকেই পুনরুত্থিত হবে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — জীবন কোনো খেলা নয়, বরং এক পবিত্র পরীক্ষা 🌿 যার শেষের ফল ঘোষণা হবে আখিরাতে — আর তার প্রস্তুতি নিতে হবে এখানেই, এই পৃথিবীতে 🤍
আয়াত ২৬
يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًۭا يُوَٰرِى سَوْءَٰتِكُمْ وَرِيشًۭا ۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌۭ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ ءَايَـٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
ইয়া বানী আদামা ক্বদ আনযালনা ‘আলাইকুম লিবাসান ইউওয়ারী সাও’আতিকুম, ওয়া রীশা; ওয়া লিবাসুত তাকওয়া যালিকা খাইর; যালিকা মিন আয়াতিল্লাহি লা‘ল্লাহুম ইয়াযযাক্কারূন।
“হে আদম সন্তানগণ! আমি তোমাদের জন্য এমন পোশাক দান করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আচ্ছাদন করে এবং শোভা বৃদ্ধি করে; কিন্তু তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের একটি, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সরাসরি সম্বোধন করেছেন — “হে আদম সন্তানগণ!” অর্থাৎ, এই নির্দেশ কেবল আদম (আঃ)-এর জন্য নয়, বরং তাঁর সমস্ত সন্তানদের জন্য — আমরাও সেই আহ্বানের অংশ 🌸

১️⃣ “يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًۭا يُوَٰرِى سَوْءَٰتِكُمْ” —
“হে আদম সন্তানগণ! আমি তোমাদের জন্য পোশাক দান করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আচ্ছাদন করে।”
🌿 এটি মানব সভ্যতার মূল ভিত্তি — **লজ্জা ও শালীনতা।** আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) যখন পাপের পর নিজেদের লজ্জা আড়াল করেছিলেন, তখন থেকেই পোশাক মানবিক মর্যাদার প্রতীক হয়ে যায়। 🌸 আল্লাহ মানুষকে বস্ত্রের মাধ্যমে দান করেছেন সম্মান ও নিরাপত্তা। এটি কেবল শরীর ঢাকার উপায় নয়, বরং **নৈতিক শৃঙ্খলারও প্রতীক।**

🌸 **উদাহরণ:** যেমন সূর্য মানুষকে আলো দেয়, তেমনি পোশাক মানুষকে মর্যাদা দেয়। যে লজ্জাশীল, সে প্রকৃত অর্থে মানবিক 🌿

২️⃣ “وَرِيشًۭا” —
“এবং শোভা (সৌন্দর্য)।”
🌿 আল্লাহ শুধু প্রয়োজনীয় আবরণই দেননি, বরং তা করেছেন **আনন্দ ও শোভা বৃদ্ধির উপকরণ।** মানুষকে আল্লাহ এমন সৌন্দর্যবোধ দিয়েছেন, যাতে সে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকতে পারে। 🌸 অর্থাৎ, আল্লাহ চান মানুষ শালীনতার সঙ্গে সৌন্দর্য বজায় রাখুক — বাহ্যিক শোভা যেন **ভিতরের পবিত্রতার প্রতিফলন** হয়। 🌿 ইসলাম সৌন্দর্য নিষিদ্ধ করেনি; বরং অহংকার ও অশালীনতা নিষিদ্ধ করেছে। 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — “আল্লাহ সুন্দর, এবং তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন।” *(সহিহ মুসলিম)* 🌸

৩️⃣ “وَلِبَاسُ ٱلتَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌۭ” —
“কিন্তু তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম।”
🌿 বাহ্যিক পোশাক শরীর ঢাকে, আর তাকওয়ার পোশাক ঢাকে **হৃদয়ের অশুদ্ধতা ও পাপ।** 🌸 তাকওয়া মানে — আল্লাহভীতি ও আত্মসংযম। যিনি আল্লাহকে ভয় করেন, তাঁর অন্তরের পোশাক সর্বাধিক সুন্দর। 🌿 আল্লাহর দৃষ্টিতে পোশাকের সৌন্দর্য নয়, **হৃদয়ের পবিত্রতাই প্রকৃত অলংকার।** 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদ দেখেন না; বরং তোমাদের হৃদয় ও আমল দেখেন।” *(সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬৪)* 🌸

🌸 **উদাহরণ:** যেমন সুন্দর বাহিরে যদি দুর্গন্ধ থাকে, কেউ কাছে যেতে চায় না 🌿 তেমনি বাহ্যিক পোশাকের আড়ালে যদি হৃদয় নোংরা হয়, তবে সেই সৌন্দর্যের কোনো মূল্য নেই।

৪️⃣ “ذَٰلِكَ مِنْ ءَايَـٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ” —
“এটি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের একটি, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।”
🌿 অর্থাৎ, পোশাক ও সৌন্দর্য — উভয়ই আল্লাহর দান ও নিদর্শন। মানুষ যেন এগুলো দেখে কৃতজ্ঞ হয়, এবং বুঝে — **প্রকৃত সৌন্দর্য তাকওয়াতে।**

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** বাহিরের পোশাক দুনিয়ায় মর্যাদা দেয়, কিন্তু তাকওয়ার পোশাক আখিরাতে মুক্তি দেয় 🌸

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • পোশাক আল্লাহর দান, তাই তা লজ্জা ও শালীনতা বজায় রাখার জন্য।
  • সৌন্দর্য ইসলাম অনুমোদন করে, কিন্তু অশালীনতা নয়।
  • তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মানুষের প্রকৃত অলংকার।
  • হৃদয়ের পবিত্রতা বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
  • প্রকৃত সম্মান তাকওয়াতেই নিহিত, পোশাকে নয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ ... وَلِبَاسُ ٱلتَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌۭ”** 🤍 — “হে আদম সন্তানগণ! আমি তোমাদের জন্য পোশাক দান করেছি, যা লজ্জা ঢাকে ও শোভা বৃদ্ধি করে; কিন্তু তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **বাহিরে নয়, অন্তরের সৌন্দর্যই আল্লাহর কাছে মূল্যবান।** তাই আসুন, আমরা তাকওয়ার পোশাকেই নিজেদের সাজাই 🌿🤍
আয়াত ২৭
يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ كَمَآ أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ ٱلْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَٰتِهِمَا ۗ إِنَّهُۥ يَرَىٰكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُۥ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا ٱلشَّيَـٰطِينَ أَوْلِيَآءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
ইয়া বানী আদামা, লা ইয়াফতিনান্নাকুমুশ শাইত্বানু, কামা আখরাজা আবাওয়াইকুম মিনাল জান্নাহ; ইয়ানযি‘ু ‘আনহুমা লিবাসাহুমা লিইউরিয়াহুমা সাও’আতিহিমা; ইন্নাহু ইয়ারা-কুম হুয়া ওয়া ক্বাবীলুহু মিন হাইসূ লা তারাউনাহুম; ইন্না জা‘আলনাশ শাইয়াতীনা আওলিয়া লিল্লাযীনা লা ইউ’মিনূন।
“হে আদম সন্তানগণ! তোমাদের যেন শয়তান প্রতারিত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল, তাদের পোশাক খুলে দিয়েছিল, যাতে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। নিশ্চয়ই সে (শয়তান) ও তার দল তোমাদের দেখে এমন জায়গা থেকে, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমি শয়তানদেরকে অবিশ্বাসীদের বন্ধু করেছি।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে আবারও ভালোবেসে সতর্ক করছেন — “হে আদম সন্তানগণ! শয়তান যেন তোমাদের প্রতারিত না করে।” অর্থাৎ, যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতা **আদম (আঃ)** ও **হাওয়া (আঃ)**-কে ধোঁকা দিয়েছিল, তেমনি সে যেন তোমাদেরকেও ঈমান থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়।

১️⃣ “لَا يَفْتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ” —
“শয়তান যেন তোমাদের ফিতনায় না ফেলে।”
🌿 “ফিতনা” শব্দের অর্থ — পরীক্ষা, বিপথগামিতা, বা ধোঁকা। এখানে তা বোঝাচ্ছে — **শয়তানের প্রলোভনে ঈমান হারিয়ে ফেলা।** 🌸 শয়তানের প্রথম কাজই ছিল — আদম (আঃ)-কে প্রতারিত করে জান্নাত থেকে বের করে আনা। সে মানুষের শত্রু, কিন্তু নিজেকে বন্ধুর মতো উপস্থাপন করে। 🌿 তাই আল্লাহ সতর্ক করলেন — “যেমন তোমাদের পিতা-মাতাকে ধোঁকা দিয়েছিল, তেমনি তোমাদেরও যেন না দেয়।”

২️⃣ “كَمَآ أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ ٱلْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا” —
“যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল, তাদের পোশাক খুলে দিয়েছিল।”
🌿 এটি সেই ঘটনার স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) শয়তানের ধোঁকায় পড়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে ফেলেছিলেন, আর তাদের শরীর থেকে পোশাক সরে গিয়েছিল। 🌸 এটি বোঝায় — **পাপের প্রথম ফলাফলই হলো লজ্জার উন্মোচন।** যখন মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়, তখন তার আভ্যন্তরীণ লজ্জা ও নৈতিক বোধও ক্ষীণ হয়ে যায়। 🌿 তাই আল্লাহ আমাদের সতর্ক করলেন — “শয়তান যেন তোমাদের থেকে তাকওয়ার পোশাক খুলে না নেয়।”

৩️⃣ “إِنَّهُۥ يَرَىٰكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُۥ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ” —
“নিশ্চয়ই সে (শয়তান) ও তার দল তোমাদের দেখে এমন জায়গা থেকে, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না।”
🌿 আল্লাহ এখানে মানুষের এক সীমাবদ্ধতা ও শয়তানের এক সুবিধা জানিয়েছেন। মানুষ শয়তানকে দেখতে পায় না, কিন্তু শয়তান মানুষকে দেখে — তার দুর্বলতা, অভ্যাস ও প্রবণতা জেনে তাকে আঘাত করে। 🌸 তাই আল্লাহ আমাদের অস্ত্র হিসেবে দিয়েছেন **“আউযু বিল্লাহ”**, অর্থাৎ — *“আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই শয়তান থেকে।”* 🌿 এটি ঈমানদারের প্রতিরক্ষা-বর্ম, কারণ দো‘আ ও জিকিরের মাধ্যমে শয়তান দুর্বল হয়ে যায়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি শিকারী তার শিকারকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করে ফাঁদ পাতে, তেমনি শয়তানও মানুষকে অদৃশ্যভাবে দেখে ও প্রলুব্ধ করে 🌿 তাই আল্লাহর স্মরণই একমাত্র সুরক্ষা।

৪️⃣ “إِنَّا جَعَلْنَا ٱلشَّيَـٰطِينَ أَوْلِيَآءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ” —
“আমি শয়তানদেরকে অবিশ্বাসীদের বন্ধু করেছি।”
🌿 অর্থাৎ, যারা ঈমান আনে না, তাদের অন্তর শয়তানের জন্য উন্মুক্ত। কারণ তারা আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে, আর যেখানে আল্লাহর স্মরণ নেই, সেখানে শয়তান বাসা বাঁধে। 🌸 ঈমানদাররা আল্লাহর বন্ধু, আর অবিশ্বাসীরা শয়তানের বন্ধু — এটি আখিরাতের এক কঠিন সত্য 🌿 📖 আল্লাহ বলেন — **“যে আল্লাহকে ভুলে যায়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিযুক্ত করি।”** *(সূরা যুখরুফ ৪৩:৩৬)*

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে আল্লাহ মানুষকে শয়তানের তিনটি কৌশল জানিয়েছেন —
  • সে নফসের দুর্বলতা লক্ষ্য করে।
  • সে অদৃশ্য থেকে কুপ্রবৃত্তি জাগিয়ে তোলে।
  • সে লজ্জা ও তাকওয়া ধীরে ধীরে মুছে দেয়।
🌿 তাই আল্লাহর স্মরণ, নামাজ ও তাকওয়া — এই তিনটি হলো শয়তানের প্রতিষেধক।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন সৈনিক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা বর্ম পরে যুদ্ধ করে, তেমনি একজন মুমিনও শয়তানের বিরুদ্ধে “জিকির” ও “ঈমান” নামক বর্ম পরে যুদ্ধ করে 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • শয়তান সর্বদা মানুষের শত্রু, সে বন্ধুর রূপে ধোঁকা দেয়।
  • পাপের প্রথম ফল লজ্জা হারানো; তাই তাকওয়া সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।
  • শয়তান মানুষকে এমনভাবে দেখে, যেভাবে মানুষ তাকে দেখে না — তাই সতর্ক থাকা জরুরি।
  • যারা ঈমান আনে না, তারা শয়তানের বন্ধু ও অনুসারী হয়ে যায়।
  • আল্লাহর স্মরণ ও দো‘আই শয়তানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَا يَفْتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ ... إِنَّا جَعَلْنَا ٱلشَّيَـٰطِينَ أَوْلِيَآءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ”** 🤍 — “হে আদম সন্তানগণ! শয়তান যেন তোমাদের প্রতারিত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **শয়তান সবসময় সক্রিয়, কিন্তু তাকওয়া ও জিকিরই তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্ত ঢাল।** তাই মুমিন সর্বদা আল্লাহর স্মরণে থাকুক, যাতে সে শয়তানের কৌশল থেকে নিরাপদ থাকে 🌿🤍
আয়াত ২৮
وَإِذَا فَعَلُوا۟ فَـٰحِشَةًۭ قَالُوا۟ وَجَدْنَا عَلَيْهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا ۗ قُلْ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَآءِ ۚ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
ওয়া ইযা ফা‘আলূ ফা-হিশাতান, ক্বালূ ওয়াজাদনা ‘আলাইহা আ-বা-আনা, ওয়াল্লাহু আমারানা বিহা; কুল, ইন্নাল্লাহা লা ইয়ামুরু বিল ফাহশা; আ তাকুলূনা ‘আলাল্লাহি মা লা তা‘লামুন।
“আর যখন তারা কোনো অশ্লীল কাজ করে, তখন বলে — ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এ অবস্থায় পেয়েছি, আর আল্লাহ আমাদেরকে এ কাজের নির্দেশ দিয়েছেন।’ বলো — ‘আল্লাহ কখনো অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর নামে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জানো না?’”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের এক বড় ভুল ধারণা ও আত্মপ্রবঞ্চনাকে উন্মোচন করেছেন। মুশরিকরা যখন কোনো পাপ বা অশ্লীল কাজ করত, তখন তারা সেটিকে **“আল্লাহর আদেশ”** বলে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করত। 🌸 তারা বলত — “আমরা তো আমাদের পিতৃপুরুষদের এমনই করতে দেখেছি, এবং আল্লাহও আমাদের এই কাজের অনুমতি দিয়েছেন!” 🌿 কিন্তু আল্লাহ সরাসরি তাদের যুক্তি বাতিল করে দিলেন — **“আল্লাহ কখনো অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না।”** 🤍

১️⃣ “وَإِذَا فَعَلُوا۟ فَـٰحِشَةًۭ قَالُوا۟ وَجَدْنَا عَلَيْهَآ ءَابَآءَنَا” —
“যখন তারা কোনো অশ্লীল কাজ করে, তখন বলে — আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের এমনই করতে দেখেছি।”
🌿 এটি মানুষের এক চিরন্তন প্রবণতা — নিজেদের ভুলকে ন্যায্য প্রমাণ করতে “পূর্বপুরুষদের পথ”কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা। 🌸 ঠিক যেমন আজও অনেকে বলে — “আমাদের সমাজে সবাই তো এমন করে, তাহলে আমরা কেন না করব?” অথচ পাপ, অন্যায় বা শিরক কখনো ঐতিহ্যের মাধ্যমে হালাল হয়ে যায় না। 🌿 আল্লাহ এই অন্ধ অনুকরণকে **অজ্ঞতার অজুহাত** হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

২️⃣ “وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا” —
“আর আল্লাহ আমাদেরকে এ কাজের নির্দেশ দিয়েছেন।”
🌿 এটি ছিল মুশরিকদের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবি — তারা তাদের জাহেলি রীতিকে “আল্লাহর আদেশ” বলে উপস্থাপন করত। 🌸 যেমন তারা নগ্ন হয়ে কাবা তাওয়াফ করত এবং বলত — “আমরা এভাবে তাওয়াফ করি কারণ আল্লাহ এভাবেই চেয়েছেন।” 🌿 বাস্তবে এটি ছিল শয়তানের প্ররোচনা, কিন্তু তারা সেটিকে ধর্মের নামে বৈধতা দিত। 🌸 তাই আল্লাহ স্পষ্টভাবে বললেন — **“আল্লাহ অশ্লীলতার আদেশ দেন না।”**

৩️⃣ “قُلْ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَآءِ” —
“বলো — আল্লাহ কখনো অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না।”
🌿 এটি একটি চিরন্তন সত্য — আল্লাহ যা আদেশ দেন, তা সবই পবিত্রতা, ন্যায় ও কল্যাণের। অশ্লীলতা, অন্যায় ও অহংকার কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে হতে পারে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আল্লাহ ন্যায় ও উত্তম কাজের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করেন।”** *(সূরা আন-নাহল ১৬:৯০)* 🌸 🌿 তাই কেউ যদি কোনো গুনাহ বা অন্যায়কে “ধর্ম” বলে চালায়, তবে সে আসলে আল্লাহর নামে মিথ্যা বলছে।

৪️⃣ “أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ” —
“তোমরা কি আল্লাহর নামে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জানো না?”
🌿 এটি এক কঠিন প্রশ্ন, যার উত্তর নেই তাদের কাছে। আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা ইসলাম অনুযায়ী **সবচেয়ে বড় অপরাধগুলোর একটি।** 🌸 যারা আল্লাহর আদেশ বিকৃত করে নিজেদের মনগড়া ধর্ম প্রচার করে, তাদের জন্য এই আয়াত এক কঠোর সতর্কতা। 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — **“যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজের আসন প্রস্তুত করে নেয়।”** *(সহিহ বুখারি, হাদীস ১০৮)* 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য আইনের নামে মিথ্যা বলে, সে শুধু অপরাধী নয়, বিশ্বাসঘাতকও বটে। তেমনি আল্লাহর নামে মনগড়া আদেশ তৈরি করা — এক গুরুতর ঈমানঘাতক কাজ।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে আল্লাহ মানুষকে তিনটি বড় ভুল থেকে সতর্ক করেছেন —
  • অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজকে “সংস্কৃতি” বলে গ্রহণ করা।
  • পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণে সত্য হারানো।
  • আল্লাহর নামে মনগড়া কথা প্রচার করা।
🌸 এসবই শয়তানের পুরনো কৌশল — সে মানুষকে এমনভাবে প্রতারণা করে, যাতে তারা মনে করে — “আমরা তো ভালো কাজই করছি।”

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহ কখনো অশ্লীলতা বা অন্যায়ের আদেশ দেন না।
  • অন্ধভাবে ঐতিহ্য অনুসরণ করা সত্যের বিকল্প নয়।
  • ধর্মের নামে মিথ্যা উদ্ভাবন করা গুরুতর অপরাধ।
  • আল্লাহর আদেশ সর্বদা ন্যায়, শুদ্ধতা ও কল্যাণের দিকে আহ্বান করে।
  • সত্য জানার আগ্রহ ও অনুসন্ধানই মুমিনের পরিচয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قُلْ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَآءِ”** 🤍 — “বলো, আল্লাহ কখনো অশ্লীলতার আদেশ দেন না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যের পরিমাপ ঐতিহ্য নয়, বরং আল্লাহর বাণী ও রাসূলের শিক্ষা।** তাই আমাদের উচিত প্রতিটি কাজের আগে যাচাই করা — এটি কি সত্যিই আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ 🌿🤍
আয়াত ২৯
قُلْ أَمَرَ رَبِّى بِٱلْقِسْطِ ۖ وَأَقِيمُوا۟ وُجُوهَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍۢ وَٱدْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ ۚ كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُودُونَ
কুল, আমারা রাব্বী বিল কিস্তি; ওয়া আকীমূ ওুজূহাকুম ‘ইন্দা কুল্লি মসজিদিন, ওয়াদ‘উহু মুখলিসীনালাহুদ্দীন; কামা বাদা-আকুম তা‘উদূন।
“বলুন — আমার প্রতিপালক ন্যায়ের আদেশ দিয়েছেন। এবং তোমরা প্রতিটি নামাজের সময় নিজ মুখমণ্ডল (হৃদয়) একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে স্থির করো; তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে পালন করো। যেমন তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তেমনই তোমরা (তাঁর কাছেই) ফিরে যাবে।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর আদেশের মূল ভিত্তি জানাচ্ছেন — **ন্যায়, একনিষ্ঠ ইবাদত ও ঈমানের দৃঢ়তা।** এটি পূর্ববর্তী আয়াতের (২৮) সরাসরি জবাব — যেখানে মুশরিকরা মিথ্যা দাবি করেছিল, “আল্লাহ আমাদের অশ্লীলতার নির্দেশ দেন।” 🌸 এখন আল্লাহ নবী ﷺ-এর মাধ্যমে বললেন — “না, আমার প্রতিপালক কখনো অন্যায় বা অশ্লীলতার নয়, বরং **ন্যায় ও সত্যের আদেশ দেন।**” 🤍

১️⃣ “قُلْ أَمَرَ رَبِّى بِٱلْقِسْطِ” —
“বলুন — আমার প্রতিপালক ন্যায়ের আদেশ দিয়েছেন।”
🌿 “القِسْط” অর্থ — পরিপূর্ণ ন্যায়, সুবিচার, ভারসাম্য। আল্লাহর আদেশ সর্বদা **ন্যায়, সংযম ও সঠিকতার পথেই পরিচালিত।** 🌸 এই ন্যায় শুধু বিচারব্যবস্থায় নয়, বরং চিন্তা, আচরণ ও উপাসনাতেও। অর্থাৎ, **কোনো কিছুতেই অতিরিক্ততা বা ঘাটতি নয়।** 📖 আল্লাহ বলেন — **“আল্লাহ ন্যায় ও উত্তম কাজের আদেশ দেন এবং অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করেন।”** *(সূরা আন-নাহল ১৬:৯০)* 🌸 🌿 এই আয়াত মানবজীবনের এক সার্বজনীন নীতি — ইসলাম মানে ভারসাম্য, ন্যায় ও নৈতিকতা।

২️⃣ “وَأَقِيمُوا۟ وُجُوهَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍۢ” —
“প্রতিটি নামাজের সময় নিজ মুখমণ্ডল (হৃদয়) একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে স্থির করো।”
🌿 “অকীমূ ওুজূহাকুম” মানে শুধু শারীরিকভাবে কিবলার দিকে মুখ করা নয়, বরং **হৃদয়কে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেওয়া।** 🌸 আল্লাহ চান না শুধু দেহের ইবাদত, বরং অন্তরেরও অংশগ্রহণ। প্রতিটি নামাজে, প্রতিটি সিজদায়, প্রতিটি আহ্বানে যেন মানুষের মন একান্তভাবে আল্লাহর দিকে থাকে 🌿 🌿 এটি **খুশু ও খুজু’র শিক্ষা** — নামাজ শুধু দেহের ক্রিয়া নয়, আত্মার সংলাপ। 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — **“একজন বান্দার নামাজ থেকে সে শুধু ততটুকুই পায়, যতটুকু সে মনোযোগ দেয়।”** *(সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৪৩১)* 🌸

🌸 **উদাহরণ:** যেমন সূর্যোদয়ের সময় ফুল স্বাভাবিকভাবেই সূর্যের দিকে মুখ ফেরায় 🌸 তেমনি মুমিনের হৃদয়ও প্রতিটি নামাজে আল্লাহর দিকে ফিরে যায় — ভালোবাসা, ভয় ও আশা নিয়ে 🤍

৩️⃣ “وَٱدْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ” —
“তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে পালন করো।”
🌿 এখানে “মুখলিসীন” শব্দটি অত্যন্ত গভীর — এর মানে হলো: **বিশুদ্ধতা, একনিষ্ঠতা ও নিঃস্বার্থ ইবাদত।** 🌸 অর্থাৎ, তোমাদের দো‘আ, নামাজ, সিজদা ও প্রতিটি কর্ম — শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া চাই। 🌿 আল্লাহ চান, মানুষের দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) যেন মিশ্র না হয় — তাতে কোনো শিরক, অহংকার বা আত্মস্বার্থ না থাকে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তারা কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁরই জন্য দ্বীনকে বিশুদ্ধ করে।”** *(সূরা আল-বাইয়্যিনাহ ৯৮:৫)* 🌸

🌸 **উদাহরণ:** যেমন নির্মল পানিতে এক ফোঁটা বিষ মিশলে সেটি আর বিশুদ্ধ থাকে না 🌿 তেমনি দ্বীনে সামান্য শিরক বা আত্মগর্ব থাকলে সেটি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।

৪️⃣ “كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُودُونَ” —
“যেমন তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তেমনই তোমরা (তাঁর কাছেই) ফিরে যাবে।”
🌿 এটি আল্লাহর ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত ঘোষণা — যেভাবে তিনি প্রথমবার মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি কিয়ামতের দিন সবাইকে আবার জীবিত করবেন। 🌸 এই বাক্যটি মানুষের প্রতি এক **গভীর স্মরণবাণী ও সতর্কতা।** জীবন ক্ষণস্থায়ী; কিন্তু পুনরুত্থান নিশ্চিত 🌿 📖 আল্লাহ বলেন — **“যেভাবে আমরা প্রথমবার সৃষ্টি করেছি, সেভাবেই আবার পুনরায় করব।”** *(সূরা আল-আম্বিয়া ২১:১০৪)* 🌸 তাই আল্লাহর পথে ন্যায় ও একনিষ্ঠতার যে আদেশ, সেটিই হবে মানুষের জন্য আখিরাতে মুক্তির পথ।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত মানুষকে তিনটি চিরন্তন নীতিতে আহ্বান জানায় —
  • আল্লাহর আদেশ সর্বদা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
  • ইবাদত শুধু দেহের নয়, হৃদয়েরও হওয়া উচিত।
  • যেমন শুরু হয়েছে জীবন, তেমনি শেষেও সবাই আল্লাহর কাছেই ফিরবে।
🌿 এটি এক আধ্যাত্মিক ভারসাম্য — **আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হৃদয়, ন্যায়পরায়ণ জীবন, এবং আখিরাতের বিশ্বাস।**

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহ ন্যায়ের আদেশ দেন, অন্যায় ও অশ্লীলতার নয়।
  • নামাজ কেবল শারীরিক নয়, হৃদয়নিষ্ঠ সংলাপ।
  • দ্বীনকে বিশুদ্ধভাবে পালন করাই ঈমানের আসল সৌন্দর্য।
  • মানুষ যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে।
  • ন্যায়, একনিষ্ঠতা ও আল্লাহভীতি — সফল জীবনের তিন স্তম্ভ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قُلْ أَمَرَ رَبِّى بِٱلْقِسْطِ ... كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُودُونَ”** 🤍 — “বলুন, আমার প্রতিপালক ন্যায়ের আদেশ দিয়েছেন, তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদত করো; যেমন তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তেমনই তোমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **জীবনের শুরু ও শেষ আল্লাহর হাতে, তাই মধ্যের প্রতিটি মুহূর্তও হওয়া উচিত আল্লাহর আনুগত্যে।** 🌿🤍
আয়াত ৩০
فَرِيقًۭا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلضَّلَـٰلَةُ ۚ إِنَّهُمُ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلشَّيَـٰطِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ
ফারীকান হাদা, ওয়া ফারীকান হাক্কা ‘আলাইহিমুদ্‌ দোলালাহ; ইন্নাহুমুত্‌তাখাযুশ্‌ শাইয়াতীনা আওলিয়া-আ মিন দুনিল্লাহ; ওয়া ইয়াহসাবূনা আন্নাহুম মুহতাদূন।
“তিনি (আল্লাহ) একদলকে হিদায়াত দিয়েছেন, আর অন্যদলের জন্য বিভ্রান্তি নিশ্চিত হয়ে গেছে। কারণ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানকে বন্ধু বানিয়েছিল, অথচ তারা মনে করত যে তারা সঠিক পথে আছে।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের ভাগ্য ও পথনির্দেশ সম্পর্কে এক গভীর সত্য তুলে ধরেছেন। পৃথিবীতে দুটি শ্রেণি সবসময় থাকবে — **(১) যারা হিদায়াতপ্রাপ্ত, (২) যারা বিভ্রান্তির পথে।** 🌸 কিন্তু এ বিভাজন কোনো জুলুম নয়; বরং এটি মানুষের নিজের পছন্দের ফল। আল্লাহ কাউকে জোর করে বিভ্রান্ত করেন না — মানুষ নিজেই যখন শয়তানের অনুসরণ বেছে নেয়, তখন বিভ্রান্তি তার জন্য “নিয়তি” হয়ে দাঁড়ায় 🌿

১️⃣ “فَرِيقًۭا هَدَىٰ” —
“একদলকে তিনি হিদায়াত দিয়েছেন।”
🌿 এই দল হলো সেই মুমিনরা, যারা সত্যকে চিনে নিয়েছে এবং আল্লাহর পথ অনুসরণ করেছে। 🌸 তাদের হৃদয় আল্লাহর আলোয় আলোকিত হয়েছে, এবং তারা ঈমান, তাকওয়া ও সৎকর্মের পথে চলেছে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন।”** *(সূরা আশ-শুরা ৪২:১৩)* 🌸 🌿 অর্থাৎ, হিদায়াত আল্লাহর দান, কিন্তু তা অর্জন করতে হলে মানুষের আন্তরিকতা প্রয়োজন।

২️⃣ “وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلضَّلَـٰلَةُ” —
“আর একদলের জন্য বিভ্রান্তি নিশ্চিত হয়ে গেছে।”
🌿 এই দল হলো সেই মানুষ, যারা নিজেদের ইচ্ছায় সত্য থেকে মুখ ফিরিয়েছে। তারা বারবার আহ্বান পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করেছে, এবং অবশেষে শয়তানের অনুসারী হয়ে গেছে। 🌸 তাদের জন্য বিভ্রান্তি “নিশ্চিত” হয়েছে — কারণ তারা নিজেরাই সেটিকে বেছে নিয়েছে। এটি শাস্তি নয়, বরং তাদের পছন্দের স্বাভাবিক পরিণতি 🌿 📖 আল্লাহ বলেন — **“যখন তারা বেঁকে গেল, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরকেও বেকে দিলেন।”** *(সূরা আস-সাফ ৬১:৫)* 🌸

৩️⃣ “إِنَّهُمُ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلشَّيَـٰطِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱللَّهِ” —
“কারণ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানকে বন্ধু বানিয়েছিল।”
🌿 এই অংশে আল্লাহ তাদের বিপথগামিতার কারণ প্রকাশ করেছেন — তারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানের কথায় বিশ্বাস রেখেছিল, তার আদেশ ও প্রলোভনকে অনুসরণ করেছিল। 🌸 তারা মনে করত — “এটাই স্বাধীনতা, এটাই আনন্দ।” কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল শয়তানের দাসত্বের এক ফাঁদ। 🌿 **আল্লাহর দাসত্বে সম্মান আছে, শয়তানের দাসত্বে অপমান।** আর মানুষ যখন আল্লাহর কথা ছেড়ে নিজের নফসের অনুসরণ করে, তখন সে ধীরে ধীরে শয়তানের বন্ধুত্বে আবদ্ধ হয়ে যায়। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যে শয়তানের বন্ধুত্ব গ্রহণ করে, সে স্পষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত।”** *(সূরা আন-নিসা ৪:১১৯)* 🌸

৪️⃣ “وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ” —
“অথচ তারা মনে করত যে তারা সঠিক পথে আছে।”
🌿 এটি বিভ্রান্তির সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা — **যখন মানুষ ভুল করে, কিন্তু ভাবে সে ঠিক আছে।** 🌸 শয়তান মানুষকে এমনভাবে ধোঁকা দেয়, যাতে সে নিজের পাপকেও সৎকাজ মনে করে। সে নিজেই নিজের বিচারক হয়ে যায়, আর সত্যকে শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। 🌿 তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের সতর্ক করেছেন — **“একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হলো — সে নিজের ভুলকেই সঠিক মনে করে।”** *(সহিহ মুসলিম)* 🌸

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ ভুল পথে গাড়ি চালাচ্ছে, কিন্তু মনে করছে সে সঠিক রাস্তায় আছে 🌿 তার গন্তব্যে পৌঁছানোর আশা থাকলেও, বাস্তবে সে বিপদের মুখে যাচ্ছে। ঠিক তেমনই বিভ্রান্ত মানুষ মনে করে সে হিদায়াতপ্রাপ্ত, অথচ বাস্তবে সে শয়তানের ফাঁদে বন্দী।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত মানুষকে আত্মসমালোচনার শিক্ষা দেয় —
  • আমি যে পথে চলছি, তা কি সত্যিই কুরআন ও সুন্নাহর পথ?
  • আমি কি আমার কাজকে “ধর্ম” ভেবে করছি, অথচ তা আসলে আমার নফসের অনুসরণ?
🌸 এ প্রশ্নগুলোই হিদায়াতের দরজা খুলে দেয় 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • মানুষের ভাগ্য তার নিজের পছন্দের ফল।
  • আল্লাহ কাউকে জোর করে বিভ্রান্ত করেন না।
  • শয়তানকে বন্ধু বানালে হিদায়াত হারানো নিশ্চিত।
  • সবচেয়ে বড় বিপদ — নিজের ভুলকে সঠিক মনে করা।
  • সত্য যাচাইয়ের মানদণ্ড হতে হবে কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَرِيقًۭا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلضَّلَـٰلَةُ”** 🤍 — “একদলকে তিনি হিদায়াত দিয়েছেন, আর একদল বিভ্রান্ত হয়েছে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — **হিদায়াত আল্লাহর দান, কিন্তু সেই দানের যোগ্যতা অর্জন করতে হয় আন্তরিকতা ও তাকওয়ার মাধ্যমে।** 🌿🤍
আয়াত ৩১
يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ خُذُوا۟ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍۢ وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ وَلَا تُسْرِفُوٓا۟ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسْرِفِينَ
ইয়াবানী আদামা খুযূ জীনাতাকুম ‘ইন্দা কুল্লি মসজিদিন, ওয়া কুলূ ওয়াশরাবূ ওয়ালা তুসরিফূ; ইন্নাহু লা ইউহিব্বুল মুসরিফীন।
“হে আদম সন্তান! প্রতিটি নামাজের সময় (ইবাদতের স্থানে) তোমরা তোমাদের সাজসজ্জা গ্রহণ করো; খাও ও পান করো, কিন্তু অপচয় করো না — নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছেন — **পরিচ্ছন্নতা, পরিমিতি ও কৃতজ্ঞতা।** এটি পূর্ববর্তী আয়াতের পরিপূরক, যেখানে বলা হয়েছিল — মানুষ যেন অশ্লীলতা ও কুসংস্কার থেকে বাঁচে, আর এখন শেখানো হলো, কীভাবে আল্লাহর উপাসনায় সৌন্দর্য ও ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় 🌸

১️⃣ “يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ خُذُوا۟ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍۢ” —
“হে আদম সন্তান! প্রতিটি মসজিদে (নামাজের সময়) তোমরা তোমাদের সাজসজ্জা গ্রহণ করো।”
🌿 এখানে “زِينَة” (জীনাহ) মানে হলো — পরিচ্ছন্নতা, সুন্দর পোশাক, ও শালীনতা। অর্থাৎ, নামাজে যাওয়ার সময় যেন মানুষ অগোছালো, মলিন বা অশোভন না হয়। 🌸 মুশরিকরা কাবা তাওয়াফ করত নগ্ন হয়ে, বলে — “আমরা যেমন জন্মেছি, তেমনই পবিত্র।” আল্লাহ এই জাহেলি ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে বললেন — **“ইবাদতের সময় নিজেকে পরিপাটি করো, কারণ আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন।”** 🤍 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — **“আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকেই ভালোবাসেন।”** *(সহিহ মুসলিম, হাদীস ৯১)* 🌸 🌿 অর্থাৎ, নামাজ কেবল শুদ্ধতা নয়, বরং উপস্থাপনেরও সৌন্দর্য চায়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ রাজাকে সাক্ষাৎ করতে গেলে নিজের পোশাক ঠিক করে, চেহারায় হাসি রাখে — তেমনি নামাজ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ, তাই সেখানে সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা হওয়া উচিত আন্তরিকতার অংশ 🌿

২️⃣ “وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ وَلَا تُسْرِفُوٓا۟” —
“খাও ও পান করো, কিন্তু অপচয় করো না।”
🌿 আল্লাহ খাওয়া ও পান করার অনুমতি দিয়েছেন — কিন্তু সীমার বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। ইসলাম মানুষকে উপবাসে কষ্ট দিতে বলে না, আবার বিলাসিতা ও অপচয়েও ডুবে যেতে বলে না। 🌸 ইসলাম মানে ভারসাম্য — **সংযমের জীবন।** 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — **“আদম সন্তান এমন কোনো পাত্র ভরে না, যা পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট। তার জন্য কয়েকটি লোকমাই যথেষ্ট, যা তাকে সোজা রাখবে।”** *(সহিহ তিরমিজি, হাদীস ২৩৮০)* 🌸 🌿 আল্লাহর দান ভোগ করা ইবাদত, কিন্তু অতিভোগ শয়তানের কৌশল।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি বাল্বে অতিরিক্ত ভোল্টেজ দিলে সেটি ফেটে যায়, তেমনি জীবনে অতিরিক্ততা সবকিছু নষ্ট করে দেয় 🌿 সংযমই সৌন্দর্য, পরিমিতিই প্রশান্তি।

৩️⃣ “إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسْرِفِينَ” —
“নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।”
🌿 এটি কেবল খাবারে নয় — সময়, অর্থ, সম্পদ, এমনকি কথাবার্তাতেও প্রযোজ্য। আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত যখন মানুষ অপচয় করে, তখন সে আসলে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেয়। 🌸 আল্লাহর ভালোবাসা সংযমকারীদের জন্য, আর অপচয়কারীরা আল্লাহর ঘৃণার পাত্র। 📖 আল্লাহ বলেন — **“অপচয় করো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।”** *(সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:২৭)* 🌿

🌸 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াত মানুষকে শেখায় — আল্লাহর দেওয়া দানগুলো উপভোগ করো, কিন্তু ভারসাম্য হারিয়ে নয়। নামাজে যাও, কিন্তু পরিচ্ছন্নভাবে; খাও, কিন্তু পরিমিতভাবে; বাঁচো, কিন্তু কৃতজ্ঞতার সঙ্গে 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহ পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য পছন্দ করেন।
  • ইবাদতের সময় পোশাক ও পরিচ্ছন্নতার যত্ন নেওয়া সুন্নাহ।
  • খাওয়া-পানায় অপচয় আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ।
  • সংযম ও কৃতজ্ঞতা জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
  • ইসলাম মানুষকে ভারসাম্য ও পরিমিতির শিক্ষা দেয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“خُذُوا۟ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍۢ ... وَلَا تُسْرِفُوٓا۟”** 🤍 — “ইবাদতের সময় নিজেকে পরিপাটি করো, খাও-পান করো, কিন্তু অপচয় করো না।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **ইসলাম মানে শুধু ইবাদত নয়, বরং জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৌন্দর্য, সংযম ও শুদ্ধতার শিক্ষা।** 🌿🤍
আয়াত ৩২
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِىٓ أَخْرَجَ لِعِبَادِهِۦ وَٱلطَّيِّبَـٰتِ مِنَ ٱلرِّزْقِ ۚ قُلْ هِىَ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا خَالِصَةًۭ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۗ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍۢ يَعْلَمُونَ
কুল, মান হাররামা জীনাতাল্লাহিল্লাতী আখরাজা লি‘ইবাদিহি, ওয়াত্ত্বাইয়্যিবাতি মিনার রিজক; কুল, হিয়া লিল্লাযীনা আ-মানূ ফিল হায়াতিদ্‌দুনিয়া, খালিসাতান ইয়াওমাল কিয়ামাহ; কাজালিকা নুফাসসিলুল আয়াতি লিকওমিন ইয়ালামূন।
“বলুন — কে আল্লাহর সেই সৌন্দর্যকে হারাম করেছে, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, এবং (কে হারাম করেছে) সেই উত্তম রিজিক, যা তিনি দিয়েছেন? বলুন — এ সকল জিনিস দুনিয়ার জীবনে বিশ্বাসীদের জন্য, আর কিয়ামতের দিনে একান্তভাবে তাদেরই জন্য নির্ধারিত। এভাবেই আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করি।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুশরিক ও ভ্রান্ত ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর এক বড় ভুল ধারণা দূর করেছেন — যারা ভাবত, আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করা বা সুন্দর পোশাক পরা পাপ! 🌸 আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন — **“কে আল্লাহর দেয়া সৌন্দর্য হারাম করল?”** অর্থাৎ, যা আল্লাহ হালাল করেছেন, সেটিকে হারাম বলার অধিকার কারও নেই 🤍

১️⃣ “قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِىٓ أَخْرَجَ لِعِبَادِهِۦ” —
“বলুন — কে আল্লাহর সেই সৌন্দর্যকে হারাম করেছে, যা তিনি বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন?”
🌿 “জীনাহ” মানে — পোশাক, পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য ও শোভা। অর্থাৎ, আল্লাহ মানুষকে সুন্দর পোশাক, পরিপাটি রূপ ও নান্দনিকতা দিয়েছেন — এটি তাঁর দান, কোনো পাপ নয়। 🌸 ইসলাম সৌন্দর্যকে নিষিদ্ধ করে না, বরং **অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ করে।** যেমন পোশাকের উদ্দেশ্য হলো শোভা ও শালীনতা — উলঙ্গতা বা অহংকার নয় 🌿 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — **“আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন।”** *(সহিহ মুসলিম, হাদীস ৯১)* 🌸

🌸 **উদাহরণ:** যেমন ফুলের সৌন্দর্য আল্লাহর সৃষ্টির প্রমাণ, তেমনি মানুষের পরিপাটি থাকা আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ 🌿

২️⃣ “وَٱلطَّيِّبَـٰتِ مِنَ ٱلرِّزْقِ” —
“এবং (কে হারাম করেছে) সেই উত্তম রিজিক, যা তিনি দিয়েছেন?”
🌿 এখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে আরেকটি স্পষ্ট বার্তা — ভালো, হালাল ও পরিপূর্ণ রিজিক উপভোগ করা ইবাদতের অংশ। আল্লাহ যা হালাল করেছেন, মানুষ তা নিজের মনগড়া যুক্তিতে হারাম করতে পারে না। 🌸 ইসলাম মানুষকে কষ্টের নয়, বরং **হালাল উপভোগের** ধর্ম। তবে সেটিতে সীমা অতিক্রম বা অহংকার থাকা চলবে না 🌿 📖 আল্লাহ বলেন — **“হে মুমিনগণ! আমি তোমাদের জন্য যে পবিত্র জিনিস হালাল করেছি, তা হারাম করো না।”** *(সূরা আল-মায়িদা ৫:৮৭)* 🌸

৩️⃣ “قُلْ هِىَ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا خَالِصَةًۭ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ” —
“বলুন — দুনিয়ায় এ সকল জিনিস বিশ্বাসীদের জন্য, আর কিয়ামতের দিনে একান্তভাবে তাদেরই জন্য নির্ধারিত।”
🌿 এই অংশে আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি এক বিশেষ সম্মান ঘোষণা করেছেন। পৃথিবীতে হালাল রিজিক সবাই ভোগ করে — মুমিন ও কাফের উভয়েই। কিন্তু **আখিরাতে কেবল মুমিনরাই পাবে বিশুদ্ধ, নিখুঁত সুখ।** 🌸 🌿 দুনিয়ার নিয়ামত মিশ্র — আনন্দের সঙ্গে কষ্টও থাকে। কিন্তু আখিরাতের নিয়ামত হবে **শুদ্ধ, স্থায়ী ও নিখুঁত।** 📖 আল্লাহ বলেন — **“আখিরাতের ঘর তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার গর্ব চায় না।”** *(সূরা আল-কাসাস ২৮:৮৩)* 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক অতিথি অল্প সময়ের জন্য কোনো সুন্দর স্থানে থাকে, কিন্তু জানে এটি স্থায়ী নয় — ঠিক তেমন দুনিয়ার নিয়ামত সাময়িক, আখিরাতের নিয়ামত স্থায়ী ও পরিপূর্ণ 🤍

৪️⃣ “كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍۢ يَعْلَمُونَ” —
“এভাবেই আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করি।”
🌿 আল্লাহ বলেন, এ বিষয়গুলো বোঝার ক্ষমতা কেবল তাদের আছে যারা জ্ঞান ও চিন্তা করে। অন্ধ অনুকরণ নয়, বরং কুরআনের আলোয় বুঝে জীবন পরিচালনা করা — এটাই প্রকৃত জ্ঞান। 🌸 যারা জ্ঞানী, তারা জানে — আল্লাহর দেয়া নিয়ামতকে অপব্যবহার নয়, কৃতজ্ঞতা সহকারে ভোগ করাই সত্য ঈমান 🌿

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • আল্লাহর দেয়া সৌন্দর্য, পোশাক ও রিজিক হারাম করা ইসলাম নয়।
  • হালাল ও পরিপূর্ণ নিয়ামত উপভোগ করা ইবাদতেরই অংশ।
  • আখিরাতের নিয়ামত কেবল মুমিনদের জন্য — শুদ্ধ ও চিরস্থায়ী।
  • সত্যিকার জ্ঞান মানে — কুরআনের আলোয় বোঝা ও তা বাস্তবে প্রয়োগ করা।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • ইসলাম সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতাকে স্বীকৃতি দেয়।
  • মনগড়া হারাম ঘোষণা করা শিরকের মতোই গুরুতর।
  • আল্লাহর দেয়া নিয়ামত উপভোগে কৃতজ্ঞতা অপরিহার্য।
  • দুনিয়ার ভোগ অস্থায়ী, আখিরাতের পুরস্কার স্থায়ী।
  • জ্ঞানই মানুষকে সত্য ও মিথ্যা পৃথক করতে শেখায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ ٱللَّهِ ... قُلْ هِىَ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟”** 🤍 — “কে আল্লাহর দেয়া সৌন্দর্য হারাম করল? বলুন, এটি মুমিনদের জন্য।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **ইসলাম কোনো নিষেধের ধর্ম নয়, বরং কৃতজ্ঞতার ধর্ম।** আল্লাহর দেয়া সৌন্দর্য, রিজিক ও সুখ — সেগুলো আল্লাহর পথে ব্যবহার করলেই তা ইবাদতে পরিণত হয় 🌿🤍
আয়াত ৩৩
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلْفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلْإِثْمَ وَٱلْبَغْىَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا۟ بِٱللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطَـٰنًۭا وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
কুল, ইন্নামা হাররামা রাব্বিয়াল ফাওয়াহিশা মা জাহারা মিনহা ওয়া মা বাতানা, ওয়াল ইছমা ওয়াল বাগইয়া বিঘাইরিল হাক্কি, ওয়া আন তুশরিকূ বিল্লাহি মা লাম ইউনাজ্জিল বিহি সুলতানা, ওয়া আন তাকূলূ ‘আলাল্লাহি মা লা তা‘লামুন।
“বলুন — আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন কেবল অশ্লীল কাজসমূহকে — প্রকাশ্য ও গোপন উভয়কেই; এবং (হারাম করেছেন) পাপাচার, অন্যায়ভাবে জুলুম করা, আর আল্লাহর সঙ্গে এমন কিছু শরীক করা, যার কোনো প্রমাণ তিনি অবতীর্ণ করেননি; এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা তোমরা জানো না।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা **ইসলামের মৌলিক নিষেধসমূহ** সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেছিলেন — “কে আল্লাহর দেয়া নিয়ামত হারাম করল?” এখন এই আয়াতে তিনি নিজেই জানিয়ে দিচ্ছেন — **আসলে কী হারাম করেছেন।** 🤍

১️⃣ “إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلْفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ” —
“আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন কেবল অশ্লীল কাজসমূহকে — প্রকাশ্য ও গোপন উভয়কেই।”
🌿 “الفَوَاحِش” অর্থ — অতি নিকৃষ্ট ও অশোভন কাজ, যেমন ব্যভিচার, অশালীনতা, নগ্নতা ইত্যাদি। আল্লাহ এ ধরনের কাজের সব রূপই হারাম করেছেন — **যা প্রকাশ্য (যেমন অশালীন আচরণ), এবং যা গোপন (যেমন লুকানো কামনা বা কুপ্রবৃত্তি)।** 🌸 আল্লাহর কাছে গোপন কিছু নেই। তাই তিনি শুধু বাহ্যিক আচরণ নয়, অন্তরের পবিত্রতাকেও গুরুত্ব দিয়েছেন 🌿 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — **“হায়া (লজ্জা) ঈমানের অংশ, আর অশ্লীলতা নাফরমানির অংশ।”** *(সহিহ বুখারি, হাদীস ২৪)* 🌸

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি ফুল বাহ্যিকভাবে সুন্দর, কিন্তু যদি ভিতরে পচে যায়, তার গন্ধ অসহনীয় হয়ে ওঠে — তেমনি মানুষ বাহ্যিকভাবে ভালো হলেও, অন্তরের অশুদ্ধতা তাকে ধ্বংস করে দেয়।

২️⃣ “وَٱلْإِثْمَ وَٱلْبَغْىَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ” —
“এবং (হারাম করেছেন) পাপাচার ও অন্যায়ভাবে জুলুম করা।”
🌿 এখানে “إثم” মানে — আল্লাহর অবাধ্যতা ও নৈতিক অপরাধ। “بغي” মানে — সীমা লঙ্ঘন বা অন্যের ওপর অন্যায় করা। 🌸 অর্থাৎ, আল্লাহ কেবল নৈতিক পাপ নয়, **সামাজিক অন্যায়কেও হারাম করেছেন।** যেমন— কারো সম্পদ, অধিকার বা সম্মান হরণ করা। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আল্লাহ ন্যায় ও সদাচারের আদেশ দেন এবং অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে নিষেধ করেন।”** *(সূরা আন-নাহল ১৬:৯০)* 🌿 🌸 অন্যের ওপর জুলুম করা শুধু মানুষ নয়, আল্লাহর কাছেও বড় অপরাধ।

৩️⃣ “وَأَن تُشْرِكُوا۟ بِٱللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطَـٰنًۭا” —
“আর আল্লাহর সঙ্গে এমন কিছু শরীক করা, যার কোনো প্রমাণ তিনি অবতীর্ণ করেননি।”
🌿 এটি আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিষেধ — **শিরক।** অর্থাৎ, আল্লাহর ইলাহি ক্ষমতার সঙ্গে অন্য কাউকে যুক্ত করা, অথবা এমন কাউকে উপাস্য করা, যার কোনো প্রমাণ কুরআন বা ওহিতে নেই। 🌸 আল্লাহর কোনো শরীক নেই, আর যার প্রমাণ তিনি দেননি, তা মিথ্যা দাবির সমান। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরীক করে, আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন।”** *(সূরা আল-মায়িদা ৫:৭২)* 🌿 🌸 তাই শিরক কেবল মূর্তি পূজা নয়, বরং যে কোনো বিশ্বাস, যা আল্লাহর একত্বের বিরুদ্ধে — সেটিই শিরক।

৪️⃣ “وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ” —
“এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা তোমরা জানো না।”
🌿 এটি আরেকটি বড় পাপ — **আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা।** যেমন — আল্লাহ কোনো আদেশ দিয়েছেন বলে দাবি করা, অথচ তিনি দেননি। 🌸 ধর্ম নিয়ে মনগড়া কথা বলা বা মানুষের তৈরি মতবাদকে “আল্লাহর আদেশ” বলা — এটি আল্লাহর ওপর অপবাদ দেওয়া। 🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো রোগের চিকিৎসা না জেনে ওষুধ দেওয়া — এটি অন্যের ক্ষতি করে; তেমনি ধর্মে মিথ্যা বক্তব্য দেওয়া মানুষের আত্মাকে ধ্বংস করে।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে আল্লাহ চারটি বড় হারাম বিষয়কে চিরতরে নিষিদ্ধ করেছেন —
  • অশ্লীলতা — প্রকাশ্য ও গোপন উভয়ই।
  • পাপ ও অন্যায়।
  • আল্লাহর সঙ্গে শরীক স্থাপন।
  • আল্লাহ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলা।
🌸 এই চারটি পাপই মানুষের আত্মাকে অন্ধকারে ঢেকে দেয়। এর বিপরীতে, ন্যায়, শুদ্ধতা, তাওহীদ ও সত্যবাদিতা — মানবতার আলোকে উজ্জ্বল করে তোলে 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • অশ্লীলতা আল্লাহর কাছে ঘৃণিত — প্রকাশ্যে বা অন্তরে হোক।
  • অন্যায়, জুলুম ও সীমালঙ্ঘন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
  • শিরক ইসলাম ধ্বংসের মূল কারণ।
  • আল্লাহর নামে মনগড়া কথা বলা সবচেয়ে বড় অপরাধ।
  • সত্য, ন্যায় ও তাওহীদ — ইসলামের চারটি স্তম্ভ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلْفَوَٰحِشَ ... وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ”** 🤍 — “বলুন, আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন অশ্লীলতা, অন্যায়, শিরক এবং আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলা।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যিকার ঈমান মানে কেবল উপাসনা নয়, বরং হৃদয়, আচরণ ও বিশ্বাসের পরিশুদ্ধতা।** ইসলাম নিষেধ করে শুধু মন্দ কাজ নয়, বরং মন্দ চিন্তাকেও 🌿🤍
আয়াত ৩৪
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌۭ ۖ فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَـْٔخِرُونَ سَاعَةًۭ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
ওয়া লিকুল্লি উম্মাতিন আজালুন, ফা ইযা জা-আ আজালুহুম, লা ইয়াস্তা’খিরূনা সা’আতাওয়ালায়াসতাকদিমূন।
“প্রত্যেক জাতির জন্য নির্ধারিত এক সময়সীমা রয়েছে; অতঃপর যখন তাদের সময় এসে যায়, তারা এক মুহূর্তও পিছাতে বা এগোতে পারে না।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এক চিরন্তন সত্য ঘোষণা করেছেন — **প্রত্যেক জাতি, প্রত্যেক মানুষ, প্রত্যেক যুগের জন্য একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে।** কারো জীবন, ক্ষমতা, বা সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী নয়। যখন আল্লাহর নির্ধারিত সময় এসে যায়, তখন কেউ এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না 🌸

১️⃣ “وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌۭ” —
“প্রত্যেক জাতির জন্য নির্ধারিত এক সময়সীমা রয়েছে।”
🌿 “উম্মাহ” শব্দটি এখানে বোঝাচ্ছে — জাতি, সম্প্রদায়, সভ্যতা কিংবা প্রজন্ম। অর্থাৎ, আল্লাহ প্রতিটি জাতিকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুযোগ দেন। সেই সময়েই তারা তাদের কর্ম, চিন্তা ও আচরণের মাধ্যমে নিজেদের পরিণতি নির্ধারণ করে। 🌸 আল্লাহর দুনিয়ায় কিছুই অনির্দিষ্ট নয় — **জীবন, মৃত্যু, উন্নতি, পতন — সবই নির্ধারিত সময়ে ঘটে।** 📖 আল্লাহ বলেন — **“প্রত্যেক জাতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তা আসে, তারা না পিছিয়ে যেতে পারে, না এগোতে পারে।”** *(সূরা ইউনুস ১০:৪৯)* 🌿 🌸 অর্থাৎ, আল্লাহ কাউকে অকারণে ধ্বংস করেন না — বরং সময়ের পূর্ণতা ঘটলে, তাদের আমলই তাদের পতনের কারণ হয়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি ফুলের ফুটে ওঠা ও ঝরে পড়া উভয়ই নির্ধারিত সময়ে ঘটে 🌸 তেমনি প্রতিটি জাতি ও মানুষের জীবনচক্রও আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়।

২️⃣ “فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَـْٔخِرُونَ سَاعَةًۭ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ” —
“অতঃপর যখন তাদের সময় এসে যায়, তারা এক মুহূর্তও পিছাতে বা এগোতে পারে না।”
🌿 এই অংশে আল্লাহর **পরিপূর্ণ ক্ষমতা ও ন্যায়বিচারের ঘোষণা** রয়েছে। মানুষের মৃত্যু বা কোনো জাতির পতন কখনও আগে বা পরে হয় না — ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘটে, যখন আল্লাহ তা নির্ধারণ করেন। 🌸 মানুষ অনেক পরিকল্পনা করে, “আরও একটু সময় পেলে ঠিক হয়ে যাব”, কিন্তু যখন মৃত্যু আসে — তখন আর সুযোগ থাকে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যখন তাদের মৃত্যুর সময় আসে, কেউ এক মুহূর্ত বিলম্ব করতে পারে না, বা এগোতেও পারে না।”** *(সূরা আল-মুনাফিকুন ৬৩:১১)* 🌿 🌸 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — **জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু কর্মের হিসাব চিরস্থায়ী।**

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • প্রত্যেক জাতির যেমন উত্থান আছে, তেমনি পতনও আছে।
  • জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর নির্ধারিত পরিকল্পনার অংশ।
  • সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না — এটি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলে।
  • মানুষের প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা হলো — মৃত্যু আসার আগে সঠিক পথে ফিরে আসা।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন সূর্যাস্তের পর আর দিনকে থামানো যায় না, তেমনি মৃত্যু ও পতনের সময়ও কাউকে এক মুহূর্তের জন্য থামতে দেয় না 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর নির্ধারিত সময় কখনও পরিবর্তন হয় না।
  • জীবন ক্ষণস্থায়ী, তাই তাওবার বিলম্ব বিপজ্জনক।
  • জাতি বা সমাজের পতনও আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ — তা তাদের কর্মের ফল।
  • আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও সময়ের বাস্তবায়নে কোনো ভুল হয় না।
  • মুমিন সবসময় প্রস্তুত থাকে — কারণ সে জানে, তার সময় নির্ধারিত।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌۭ ... لَا يَسْتَـْٔخِرُونَ سَاعَةًۭ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ”** 🤍 — “প্রত্যেক জাতির জন্য নির্ধারিত সময় আছে; যখন তা এসে যায়, তারা এক মুহূর্তও পিছাতে বা এগোতে পারে না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সময় কারও দাস নয়; এটি আল্লাহর হুকুমে চলে। তাই এখনই তাওবা, এখনই আমল — কারণ কাল হয়তো দেরি হয়ে যাবে।** 🌿🤍
আয়াত ৩৫
يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌۭ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ ءَايَـٰتِى فَمَنِ ٱتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
ইয়াবানী আদামা, ইম্মা ইয়াতিয়ান্নাকুম রুসুলুম মিনকুম, ইয়াকুসসুনা আলাইকুম আয়াতী; ফামানিত্তাকা ওয়া আসলাহা, ফালা খাওফুন আলাইহিম ওয়ালা হুম ইয়াহজনূন।
“হে আদম সন্তানগণ! যখন তোমাদের নিকটে তোমাদের মধ্য থেকে আমার রাসূলগণ আসবে, যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করবে — তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে ও নিজেদের সংশোধন করবে, তাদের কোনো ভয় থাকবে না, আর তারা দুঃখিতও হবে না।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে আহ্বান জানিয়েছেন — “হে আদম সন্তানগণ!” এটি এমন একটি আহ্বান, যা ভালোবাসা, সতর্কতা ও দায়িত্ববোধে পূর্ণ 🤍

১️⃣ “يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ” —
“হে আদম সন্তানগণ!”
🌿 এই আহ্বান মানবজাতির প্রতি আল্লাহর সরাসরি ডাক। এটি কেবল মুসলমানদের নয়, সকল মানুষের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। কারণ সবাই আদম (আঃ)-এর সন্তান। 🌸 এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক **মমতাময় স্মরণ** — “তোমরা আমারই সৃষ্টি, আমারই দাস; আমি তোমাদের পথপ্রদর্শনের জন্য রাসূল প্রেরণ করব।” 🌿

২️⃣ “إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌۭ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ ءَايَـٰتِى” —
“যখন তোমাদের নিকটে তোমাদের মধ্য থেকে আমার রাসূলগণ আসবে, যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করবে।”
🌿 আল্লাহ ঘোষণা করলেন যে তিনি তাঁর বান্দাদের কখনো একা ফেলে দেননি। যুগে যুগে, জাতি ভেদে, তিনি প্রেরণ করেছেন রাসূলগণকে — যারা আল্লাহর বাণী, নির্দেশনা ও সতর্কবাণী পৌঁছে দিয়েছেন। 🌸 “মিনকুম” — অর্থাৎ, রাসূলগণ তোমাদেরই মধ্য থেকে, তোমাদের ভাষায়, তোমাদের সমাজেই প্রেরিত হয়েছেন — যেন মানুষ বুঝতে পারে ও অনুসরণ করতে পারে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তোমাদের মধ্য থেকেই আমি পাঠিয়েছি এক রাসূল, যে তোমাদের ওপর আমার আয়াত তেলাওয়াত করে।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:১৫১)* 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন শিক্ষক ছাত্রদেরই মধ্য থেকে হলে তারা তাকে বেশি গ্রহণ করে — তেমনি রাসূলগণও মানুষের মধ্য থেকে প্রেরিত হয়েছেন, যাতে মানুষ তাদের বুঝতে ও অনুসরণ করতে পারে।

৩️⃣ “فَمَنِ ٱتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ” —
“তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে ও নিজেদের সংশোধন করবে।”
🌿 এখানে আল্লাহ সফলতার দুটি মূল শর্ত বলেছেন — **(১) তাকওয়া:** অর্থাৎ আল্লাহভীতি, আল্লাহর আদেশ মানা ও পাপ থেকে বিরত থাকা। **(২) ইসলা’ (اصلاح):** অর্থাৎ নিজেকে ও সমাজকে সংশোধন করা। 🌸 শুধু ভয় নয়, সংশোধনও প্রয়োজন — কারণ ঈমান মানে কেবল অন্তরের অনুভূতি নয়, বরং আচরণ, কাজ ও জীবনের পরিবর্তন 🌿 📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — **“যে ব্যক্তি এক মন্দ কাজ থেকে ফিরে আসে, সে এমন যেন কোনো পাপই করেনি।”** *(ইবন মাজাহ, হাদীস ৪২৫০)* 🌸

🌸 **উদাহরণ:** যেমন আয়নায় নিজের মুখ দেখে ময়লা মুছে ফেললে সেটি পরিষ্কার হয়, তেমনি তাকওয়া মানুষকে নিজের অন্তর পরিশুদ্ধ করতে শেখায়।

৪️⃣ “فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ” —
“তাদের কোনো ভয় থাকবে না, আর তারা দুঃখিতও হবে না।”
🌿 এটি মুমিনদের প্রতি আল্লাহর এক **সান্ত্বনাদায়ক প্রতিশ্রুতি।** যারা আল্লাহভীতি ও সংশোধনের পথে থাকে, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়েই নিরাপত্তা দেন। 🌸 “ভয় থাকবে না” — ভবিষ্যৎ নিয়ে। “দুঃখ থাকবে না” — অতীত নিয়ে। অর্থাৎ, তাদের অন্তর থাকবে প্রশান্ত, নির্ভীক ও পরিতৃপ্ত 🌿 📖 আল্লাহ বলেন — **“যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, তারপর সোজা পথে চলে — তাদের কোনো ভয় নেই, আর তারা দুঃখিতও নয়।”** *(সূরা আহকাফ ৪৬:১৩)* 🌸

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে আল্লাহ মানুষকে চারটি মহা সত্য শিখিয়েছেন —
  • সব মানুষ আদম (আঃ)-এর সন্তান — একেই মানবতার বন্ধন।
  • আল্লাহ প্রতিটি যুগে রাসূল প্রেরণ করেছেন পথ দেখানোর জন্য।
  • সফলতা নির্ভর করে তাকওয়া ও সংশোধনের ওপর।
  • যারা এই পথে চলে, তাদের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও অনন্ত আনন্দ।


🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহ কখনো মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধকারে একা রাখেননি।
  • তাকওয়া ও সংশোধনই মুক্তির চাবিকাঠি।
  • সত্যিকার ঈমান শান্তি এনে দেয়, ভয় ও দুঃখ দূর করে।
  • রাসূলগণ আল্লাহর বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যম — তাদের অনুসরণই নিরাপত্তা।
  • মুমিনের জীবনের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত — নিজেকে সংশোধন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَمَنِ ٱتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ”** 🤍 — “যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও নিজেদের সংশোধন করে, তাদের কোনো ভয় নেই, আর তারা দুঃখিতও নয়।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **মানুষ ভুল করতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কাছে ফিরে আসা মানেই মুক্তি।** তাকওয়া ও ইসলা’ মানুষকে সেই চিরশান্তির পথে নিয়ে যায়, যেখানে না ভয় আছে, না দুঃখ — শুধু প্রশান্তি 🌿🤍
আয়াত ৩৬
وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ
ওয়াল্লাযীনা কায্‌যাবূ বিআয়াতিনা, ওয়াসতাকবারূ ‘আনহা, উলায়িকা আসহাবুন্নারি, হুম ফিহা খালিদূন।
“আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অহংকারের কারণে তা থেকে মুখ ফিরিয়েছে — তারা আগুনের অধিবাসী; তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি আগের আয়াত (৩৫)-এর বিপরীত দিক প্রকাশ করছে — যারা রাসূলদের অনুসরণ করে, তারা নিরাপদ; আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে ও অহংকারে অন্ধ হয়, তাদের পরিণতি জাহান্নাম 🔥

১️⃣ “وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا” —
“আর যারা আমাদের আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে।”
🌿 এখানে “كَذَّبُوا” মানে — সত্যকে অস্বীকার করা, ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলা। তারা আল্লাহর নিদর্শন, কুরআনের বার্তা ও রাসূলদের শিক্ষা শুনেও তা অস্বীকার করেছে। 🌸 সত্য জেনেও অস্বীকার করা শুধু ভুল নয় — এটি বিদ্রোহ, কারণ এতে আল্লাহর কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করা হয় 🌿 📖 আল্লাহ বলেন — **“যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, আল্লাহ তাদের হিদায়াত দেন না।”** *(সূরা আল-মু’মিন ৪০:৭৪)*

🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন মানুষ সূর্য দেখে বলল — “আমি সূর্য মানি না।” এতে সূর্য মুছে যায় না, বরং তার নিজের চোখই অন্ধ হয়ে যায়। তেমনি যারা কুরআনের সত্য অস্বীকার করে, তারা আল্লাহর নয়, নিজের ক্ষতি করে।

২️⃣ “وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَآ” —
“আর অহংকারের কারণে তা থেকে মুখ ফিরিয়েছে।”
🌿 “ইসতাকবারু” মানে — অহংকার করা, নিজের জ্ঞান বা মর্যাদার কারণে সত্যকে গ্রহণ না করা। তারা সত্যের কথা শুনেও বলত — “আমরা এটা মানব না, আমরা ভালো জানি।” 🌸 অহংকার ছিল শয়তানের প্রথম পাপ। সে সেজদা করতে অস্বীকার করেছিল — কারণ সে মনে করেছিল, “আমি আগুন থেকে, আদম মাটি থেকে।” 📖 আল্লাহ বলেন — **“সে (ইবলিস) অহংকার করল ও কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:৩৪)* 🌿 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — জ্ঞান বা অবস্থানের অহংকারই অনেককে হিদায়াত থেকে বঞ্চিত করে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ ওষুধের কার্যকারিতা জানে, তবু অহংকারে সেটি খায় না — সে নিজেরই ক্ষতি ডেকে আনে। তেমনি আল্লাহর বাণী জেনেও যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা নিজের পরিণতি নিজেরাই নির্ধারণ করে।

৩️⃣ “أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ” —
“তারা আগুনের অধিবাসী; তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।”
🌿 আল্লাহ এখানে কঠিন এক বাস্তবতা ঘোষণা করেছেন — যারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে এবং অহংকার করে, তারা শুধু শাস্তি পাবে না, বরং **চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে।** 🌸 “أَصْحَابُ النَّار” — অর্থাৎ আগুনের সঙ্গী। তারা আগুনে অভ্যস্ত হবে, কিন্তু শান্তি পাবে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, নিশ্চয়ই তারা জাহান্নামের অধিবাসী।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:৩৯)* 🌿 🌸 আল্লাহর ন্যায়বিচার নিখুঁত — কেউই অন্যায়ভাবে জাহান্নামে যাবে না; তারা নিজেরাই সেখানে যাওয়ার পথ বেছে নেয়।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের দুটি পথে ভাগ করেছেন —
  • যারা রাসূলদের বার্তা মানে, তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য নিরাপত্তা।
  • আর যারা অহংকারে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য চিরস্থায়ী ধ্বংস।
🌸 এই বিভাজন আল্লাহর রহমতের নয় — বরং মানুষের নিজের নির্বাচনের ফল।

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করা সবচেয়ে বড় অন্যায়।
  • অহংকার মানুষকে হিদায়াত থেকে বঞ্চিত করে।
  • শয়তানের পথ হলো অহংকার ও অস্বীকারের পথ।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার নিখুঁত — কেউ অকারণে শাস্তি পায় না।
  • সত্য প্রত্যাখ্যান করা মানে নিজের জন্য জাহান্নাম বেছে নেওয়া।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَآ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ”** 🤍 — “যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে ও অহংকার করেছে, তারা আগুনের অধিবাসী — তাতে তারা চিরকাল থাকবে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে — **সত্য শুনেও মুখ ফিরিয়ে নিও না, কারণ অহংকারের পরিণতি ইবলিসের মতোই ধ্বংস।** 🌿🤍
আয়াত ৩৭
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًۭا أَوْ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦٓ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ يَنَالُهُمْ نَصِيبُهُم مِّنَ ٱلْكِتَـٰبِ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوٓا۟ أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ ۖ قَالُوا۟ ضَلُّوا۟ عَنَّا وَشَهِدُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا۟ كَـٰفِرِينَ
ফামান আযলামু মিম্মানিফতারা ‘আলাল্লাহি কাযিবা, আও কাজ্জাবা বিআয়াতিহি, উলাইকা ইয়ানালুহুম নাছীবুহুম মিনাল কিতাব, হত্তা ইযা জা’আতহুম রুসুলুনা ইয়াতাওয়াফ্ফাওনাহুম, ক্বালূ আইনা মা কুনতুম তাদ’উনা মিন দুনিল্লাহ, ক্বালূ দল্লূ ‘আন্না, ওয়া শাহিদূ ‘আলা আনফুসিহিম আন্নাহুম কা-নূ কাফিরীন।
“আর তার চেয়ে বড় জালেম কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে বা তাঁর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে? তারা তাদের কিতাবে নির্ধারিত অংশ পাবে, অবশেষে যখন আমাদের দূতগণ তাদের প্রাণ গ্রহণ করতে আসবে, তখন তারা বলবে — ‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহ ছাড়া ডাকতে, তারা কোথায়?’ তারা বলবে — ‘তারা তো আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে।’ আর তারা নিজেরাই স্বীকার করবে যে, তারা ছিল কাফের।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক করছেন সবচেয়ে বড় অপরাধের ব্যাপারে — **আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা** এবং **তাঁর নিদর্শন অস্বীকার করা।** এটি শুধু ভুল নয়, বরং এক ভয়াবহ জুলুম ও আত্মধ্বংসের পথ।

১️⃣ “فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًۭا” —
“আর তার চেয়ে বড় জালেম কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে।”
🌿 “ইফতারা” মানে — মনগড়া কথা বলা, আল্লাহর নামে বানিয়ে ফেলা। কেউ যদি বলে “আল্লাহ এটা বলেছেন” অথচ তিনি বলেননি — তবে সে আল্লাহর ওপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। 🌸 আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা মানে — তাঁর মাহাত্ম্য ও সত্য বিকৃত করা, যা সবচেয়ে বড় অন্যায়। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যে আল্লাহর নামে মিথ্যা বলে, সে কখনো সফল হবে না।”** *(সূরা ইউনুস ১০:৬৯)* 🌿 🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ রাজা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ায়, সেটি শুধু মিথ্যা নয়, রাজাকে অপমান করা — তেমনি আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ অসম্মান।

২️⃣ “أَوْ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦٓ” —
“অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।”
🌿 এটি আরেকটি বড় অপরাধ। আল্লাহর নিদর্শন — কুরআন, নবীদের শিক্ষা, সৃষ্টি — সবই মানুষকে সত্য চিনতে সাহায্য করে। কিন্তু কেউ যদি অহংকারে তা অস্বীকার করে, সে নিজেরই হিদায়াতের দরজা বন্ধ করে দেয়। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যে আল্লাহর নিদর্শনকে মিথ্যা বলে, আল্লাহ তার অন্তর মোহর করে দেন।”** *(সূরা আল-আন‘আম ৬:১১০)* 🌸 🌿 অস্বীকারের ফল হলো আত্মার অন্ধত্ব।

৩️⃣ “أُو۟لَـٰٓئِكَ يَنَالُهُمْ نَصِيبُهُم مِّنَ ٱلْكِتَـٰبِ” —
“তারা তাদের কিতাবে নির্ধারিত অংশ পাবে।”
🌿 অর্থাৎ, দুনিয়ার নির্ধারিত রিজিক, সময়, সুযোগ — সবই তারা পাবে। আল্লাহ তাদের তা থেকে বঞ্চিত করবেন না। কিন্তু আখিরাতে তাদের অংশ হবে — **শাস্তি ও অনুতাপ।** 🌸 এটি আল্লাহর ন্যায়বিচারের নিদর্শন — তিনি কারও অধিকার কেড়ে নেন না, কিন্তু প্রত্যেকে নিজের আমলের ফলই ভোগ করবে।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন পরীক্ষার আগে সবাইকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয় — কেউ মনোযোগ দেয়, কেউ অবহেলা করে। কিন্তু ফলাফলে পার্থক্য অনিবার্য 🌿

৪️⃣ “حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ” —
“যখন আমাদের দূতগণ তাদের প্রাণ গ্রহণ করতে আসবে।”
🌿 এখানে “রুসুলুনা” মানে মৃত্যুদূতগণ (মালাকুল মাউত ও তাঁর সহযোগীরা)। মৃত্যুর সময় তারা অস্বীকারকারীদের কাছে আসবে, আর তখন শুরু হবে তাদের বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। 📖 আল্লাহ বলেন — **“মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ কবজ করবে, আর তোমরা আমার কাছেই ফিরে আসবে।”** *(সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১১)* 🌿 🌸 মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষের চোখ খুলে যায়, কিন্তু তখন আর ফিরে আসার সুযোগ থাকে না।

৫️⃣ “قَالُوٓا۟ أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ ۖ” —
“তখন ফেরেশতারা বলবে — তোমরা যাদের ডাকতে, তারা কোথায়?”
🌿 অর্থাৎ, যাদেরকে তারা দুনিয়ায় উপাস্য মনে করত, সেই মূর্তি, দেবতা, সাধু বা রক্ষাকারীরা কোথায় গেল? কেন তারা এখন সাহায্য করছে না? 🌸 এটি হবে এক **বিদ্রূপমূলক প্রশ্ন**, যেন তারা নিজেরাই বুঝতে পারে — তারা যাদের ভরসা করেছিল, তারা কিছুই করতে পারছে না।

৬️⃣ “قَالُوا۟ ضَلُّوا۟ عَنَّا” —
“তারা বলবে — তারা তো আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে।”
🌿 অর্থাৎ, “আমাদের মিথ্যা উপাস্যরা তো কোথাও নেই!” তারা নিজেরাই স্বীকার করবে যে, তাদের সব ভরসা ছিল ভুল। 🌸 এ এক অনুতাপের মুহূর্ত — যখন মানুষ সত্য উপলব্ধি করবে, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।

৭️⃣ “وَشَهِدُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا۟ كَـٰفِرِينَ” —
“আর তারা নিজেরাই স্বীকার করবে যে, তারা ছিল কাফের।”
🌿 এটি হবে আখিরাতের এক ভয়ংকর সত্য — যখন অস্বীকারকারীরা নিজেরাই সাক্ষী দেবে নিজেদের কুফরির বিরুদ্ধে। 🌸 তখন তাদের মুখ বন্ধ থাকবে না; তাদের হাত, পা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গই সাক্ষ্য দেবে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আজ আমরা তাদের মুখে সীল এঁটে দেব, তাদের হাত বলবে, পা সাক্ষ্য দেবে।”** *(সূরা ইয়াসীন ৩৬:৬৫)* 🌿

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা ও তাঁর নিদর্শন অস্বীকার করা — সর্বোচ্চ অন্যায়।
  • মৃত্যু মুহূর্তে প্রতিটি আত্মা তার বাস্তবতা বুঝবে।
  • মিথ্যা দেবতা, অহংকার বা কল্পিত ভরসা তখন কারও কাজে আসবে না।
  • মানুষ নিজের মুখেই নিজের কুফরি ও অন্যায়ের সাক্ষ্য দেবে।


🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা মানে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করা।
  • সত্যকে অস্বীকার করলে, শেষ মুহূর্তে অনুতাপ ছাড়া কিছুই থাকবে না।
  • আখিরাতে কোনো মিথ্যা যুক্তি বা অজুহাত কাজ করবে না।
  • সত্যের সামনে বিনয়ী হওয়াই মুক্তির পথ।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার অটল — প্রতিটি আত্মা তার কর্মফলই পাবে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًۭا أَوْ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦٓ ... وَشَهِدُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا۟ كَـٰفِرِينَ”** 🤍 — “যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা বলে বা তাঁর নিদর্শন অস্বীকার করে, তারা নিজেরাই স্বীকার করবে — তারা ছিল কাফের।” 🌸 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে দেয় — **আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা ও অহংকারে সত্য অস্বীকার করা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।** তাই সত্য গ্রহণে বিনয়ী হওয়াই মুক্তির একমাত্র পথ 🌿🤍
আয়াত ৩৮
قَالَ ٱدْخُلُوا۟ فِىٓ أُمَمٍۢ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ فِى ٱلنَّارِ ۖ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌۭ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا ٱدَّارَكُوا۟ فِيهَا جَمِيعًۭا قَالَتْ أُخْرَىٰهُمْ لِأُولَىٰهُمْ رَبَّنَا هَـٰٓؤُلَآءِ أَضَلُّونَا فَـَٔاتِهِمْ عَذَابًۭا ضِعْفًۭا مِّنَ ٱلنَّارِ ۖ قَالَ لِكُلٍّۢ ضِعْفٌۭ وَلَـٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ
ক্বা-লা, উদখুলূ ফী উমামিন ক্বাদ খালাত মিন ক্বাবলিকুম মিনাল জিন্নি ওয়াল ইনসি ফিন্নার, কুল্লামা দাখালাত উম্মাতুন লা‘আনাত উখতাহা, হত্তা ইযাদ্দারাকূ ফীহা জামী‘আ, ক্বালাত উখরাহুম লি উলাহুম, রাব্বানা হা-উলা-ই আযাল্লূনা, ফা-আতিহিম আযা-বান দ্বি‘ফান মিনান নার, ক্বা-লা, লিকুল্লিন দ্বি‘ফুন ওয়ালাকিন্না লা তা‘লামূন।
“আল্লাহ বলবেন — ‘তোমরা প্রবেশ কর আগের জাতিগুলোর সঙ্গে, যারা জিন ও মানুষের মধ্যে ছিল, এবং আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে — আগুনে।’ যখনই কোনো জাতি সেখানে প্রবেশ করবে, তারা তাদের পূর্ববর্তী জাতিকে অভিশাপ দেবে। অবশেষে যখন সবাই সেখানে একত্রিত হবে, তখন পরবর্তী দল আগের দলকে বলবে — ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এরা-ই তো আমাদের বিপথে চালিয়েছিল, তাই তাদেরকে আগুনের দ্বিগুণ শাস্তি দিন।’ আল্লাহ বলবেন — ‘প্রত্যেকেরই দ্বিগুণ শাস্তি আছে, কিন্তু তোমরা তা জানো না।’”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে কিয়ামতের এক ভয়াবহ দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে — যেখানে জিন ও মানুষ, সব যুগের অবিশ্বাসীরা জাহান্নামে একত্র হবে। সেখানে তারা একে অপরকে দোষারোপ করবে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না 🔥

১️⃣ “قَالَ ٱدْخُلُوا۟ فِىٓ أُمَمٍۢ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ فِى ٱلنَّارِ” —
“আল্লাহ বলবেন — তোমরা প্রবেশ কর আগের জাতিগুলোর সঙ্গে, যারা জিন ও মানুষের মধ্যে ছিল, এবং আগেই ধ্বংস হয়েছে — আগুনে।”
🌿 এখানে আল্লাহ জাহান্নামের শাস্তিপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে বলবেন — “তোমরাও প্রবেশ করো তাদের সঙ্গে, যারা তোমাদের আগে অবিশ্বাস করেছিল।” অর্থাৎ, প্রত্যেক যুগের কাফেরদের শেষ পরিণতি এক — আগুন। 🌸 এটি আল্লাহর ন্যায়বিচারের নিদর্শন — প্রত্যেকে নিজের আমলের ফল ভোগ করবে।

২️⃣ “كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌۭ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا” —
“যখনই কোনো জাতি সেখানে প্রবেশ করবে, তারা তাদের পূর্ববর্তী জাতিকে অভিশাপ দেবে।”
🌿 জাহান্নামে প্রবেশ করার পর প্রত্যেক জাতি বলবে — “আমাদের আগের জাতিরাই আমাদের বিভ্রান্ত করেছে!” তারা নিজেদের দোষ না দেখে অন্যদের অভিশাপ দেবে। 🌸 দুনিয়ায় যেমন মানুষ ভুলের জন্য অন্যকে দোষ দেয়, তেমনি জাহান্নামেও তারা অজুহাত খুঁজবে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“প্রত্যেক দল আগের দলকে অভিশাপ দেবে।”** *(সূরা আল-আরাফ ৭:৩৮)* 🌿 🌸 এটি দেখায় — অহংকার ও আত্মপ্রবঞ্চনা মানুষকে শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

🌸 **উদাহরণ:** যেমন দুই চোর ধরা পড়লে একজন অন্যজনকে দোষ দেয়, অথচ দুজনেই অপরাধী — তেমনি কিয়ামতের দিন প্রতিটি অবিশ্বাসী দল বলবে, “ওরা আমাদের বিভ্রান্ত করেছে।”

৩️⃣ “حَتَّىٰٓ إِذَا ٱدَّارَكُوا۟ فِيهَا جَمِيعًۭا” —
“অবশেষে যখন সবাই সেখানে একত্রিত হবে।”
🌿 অর্থাৎ, জাহান্নামের সমস্ত কাফের, পাপী ও শয়তানরা একত্র হবে। তখন দেখা যাবে — নবী অস্বীকারকারী, পথভ্রষ্ট নেতা, অন্ধ অনুসারী — সবাই একত্র। 🌸 তারা একে অপরকে দেখেও রেহাই পাবে না, কারণ প্রত্যেকে নিজ আমলের জন্য দায়ী।

৪️⃣ “قَالَتْ أُخْرَىٰهُمْ لِأُولَىٰهُمْ” —
“তখন পরবর্তী দল আগের দলকে বলবে।”
🌿 অর্থাৎ, পরের প্রজন্মের অবিশ্বাসীরা আগের প্রজন্মকে দোষ দেবে — “তোমরাই আমাদের বিভ্রান্ত করেছিলে।”

“رَبَّنَا هَـٰٓؤُلَآءِ أَضَلُّونَا” —
“হে আমাদের প্রতিপালক! এরা-ই আমাদের বিপথে চালিয়েছিল।”
🌿 তারা বলবে — “আমরা শুধু অনুসারী ছিলাম; দোষ আসলে নেতাদের।” কিন্তু তখন এই যুক্তি কোনো কাজে আসবে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“প্রত্যেক দল তাদের নেতাদের দোষারোপ করবে, কিন্তু শাস্তি হবে সবার জন্য।”** *(সূরা আল-আহযাব ৩৩:৬৭–৬৮)* 🌸 🌸 দুনিয়ায় যেমন অন্ধ অনুসরণ মানুষকে ধ্বংস করে, আখিরাতে সেই অনুসরণই হবে অনুতাপের কারণ।

৫️⃣ “فَـَٔاتِهِمْ عَذَابًۭا ضِعْفًۭا مِّنَ ٱلنَّارِ ۖ” —
“তাই তাদেরকে আগুনের দ্বিগুণ শাস্তি দিন।”
🌿 অর্থাৎ, তারা চাইবে তাদের নেতাদের দ্বিগুণ শাস্তি হোক — কারণ তারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল এবং অন্যদেরও বিপথে নিয়েছিল। 🌸 কিন্তু আল্লাহর জবাব হবে — **“প্রত্যেকেরই দ্বিগুণ শাস্তি আছে।”**

৬️⃣ “قَالَ لِكُلٍّۢ ضِعْفٌۭ وَلَـٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ” —
“আল্লাহ বলবেন — প্রত্যেকেরই দ্বিগুণ শাস্তি আছে, কিন্তু তোমরা তা জানো না।”
🌿 অর্থাৎ, যারা বিভ্রান্ত করেছিল এবং যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল — উভয়েই অপরাধী। কারণ কেউ জেনে বিভ্রান্ত করেছে, আর কেউ সত্য জেনে তা অনুসরণ করেনি। 🌸 আল্লাহর ন্যায়বিচার এত নিখুঁত — কেউ এক বিন্দুও অন্যায়ের শিকার হবে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:২৮৬)* 🌿

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • জাহান্নামে কোনো অজুহাত বা দোষারোপ কাজ দেবে না।
  • যে বিভ্রান্ত করে এবং যে বিভ্রান্ত হয় — উভয়ের পরিণতি এক।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার সর্বোচ্চ; কেউ অন্যায়ভাবে শাস্তি পায় না।
  • অন্ধ অনুসরণ, অন্ধ বিশ্বাস ও অহংকার মানুষকে ধ্বংস করে।


🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • নিজের কর্মের দায় নিজের — অন্যকে দোষ দিয়ে মুক্তি নেই।
  • নেতা ও অনুসারী উভয়েরই দায়িত্ব আছে সত্যের অনুসরণে।
  • অন্যায় পথে আহ্বান করা ও অনুসরণ করা — উভয়ই পাপ।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার সমানভাবে সবার ওপর কার্যকর।
  • মানুষের প্রকৃত বুদ্ধি — সত্যকে যাচাই করা, অন্ধ অনুসরণ নয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ لِكُلٍّۢ ضِعْفٌۭ وَلَـٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ”** 🤍 — “প্রত্যেকেরই দ্বিগুণ শাস্তি আছে, কিন্তু তোমরা তা জানো না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে — **দুনিয়ায় কারও অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং কুরআন ও সত্যকে যাচাই করে অনুসরণ করো।** কারণ আখিরাতে কেউ অন্যের দায় নেবে না, প্রত্যেকেই নিজের কর্মের জবাবদিহি করবে 🌿🤍
আয়াত ৩৯
وَقَالَتْ أُولَىٰهُمْ لِأُخْرَىٰهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍۢ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
ওয়া ক্বালাত উলাহুম লি উখরাহুম, ফা মা কা-না লাকুম ‘আলাইনা মিন ফাদল, ফাযূকুল আযা-বা বিমা কুনতুম তাকসিবূন।
“তখন আগের দল পরের দলকে বলবে — ‘তোমাদের তো আমাদের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব ছিল না! তাই এখন ভোগ করো সেই শাস্তি, যা তোমরা নিজ হাতে অর্জন করেছিলে।’”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে জাহান্নামের ভেতরকার আরেকটি সংলাপ চিত্রিত হয়েছে — যেখানে অবিশ্বাসী জাতিগুলো, নেতা ও অনুসারীরা একে অপরকে দোষারোপ করছে। আগের আয়াত (৭:৩৮)-এ পরের দল আগের দলকে দোষ দিয়েছিল, আর এখানে আগের দল পাল্টা উত্তর দিচ্ছে 🔥

১️⃣ “وَقَالَتْ أُولَىٰهُمْ لِأُخْرَىٰهُمْ” —
“তখন আগের দল পরের দলকে বলবে।”
🌿 অর্থাৎ, যেসব নেতা, শাসক বা পথপ্রদর্শক আগে ছিল, তারা পরের অনুসারীদের বলবে — “তোমরাও তো আমাদের মতোই কাজ করেছ, আমাদের মতোই কুফরি ও অন্যায় করেছ।” 🌸 এটি হবে এক **দোষারোপের পাল্টা জবাব**, যেখানে কেউই নিজের দোষ স্বীকার করবে না, কিন্তু অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেবে। 📖 কুরআনে অনুরূপভাবে এসেছে — **“প্রত্যেক দল অন্য দলকে দোষ দেবে, কিন্তু সবার জন্যই একই শাস্তি নির্ধারিত।”** *(সূরা আল-আহযাব ৩৩:৬৭–৬৮)* 🌿

🌸 **উদাহরণ:** যেমন দুই অপরাধী ধরা পড়লে — একজন বলবে, “তুমি শুরু করেছিলে,” আর অন্যজন বলবে, “তুমি তো সঙ্গে ছিলে!” কিন্তু ন্যায়বিচারে দুজনকেই সমান দোষী ধরা হয়।

২️⃣ “فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍۢ” —
“তোমাদের তো আমাদের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব ছিল না!”
🌿 অর্থাৎ, “তোমরা আমাদের চেয়ে ভালো কিছু করোনি। আমরা পথভ্রষ্ট ছিলাম, তেমনি তোমরাও নিজের ইচ্ছায় বিভ্রান্ত হয়েছ।” 🌸 এটি এক গভীর সত্য — দুনিয়ায় কেউ যদি অন্যকে বিভ্রান্তও করে, তবু অনুসারীর নিজের বোধ, বিবেক ও দায়িত্ব থেকে মুক্তি নেই। 🌿 তাই এখানে আল্লাহ দেখিয়ে দিচ্ছেন — **প্রত্যেকে নিজের কর্মের জন্যই দায়ী।** 📖 আল্লাহ বলেন — **“কেউ অন্যের বোঝা বহন করবে না।”** *(সূরা আল-আন‘আম ৬:১৬৪)* 🌸 🌸 অর্থাৎ, নেতা বিভ্রান্ত করলে তার পাপ হবে, কিন্তু অনুসারীও দায়ী — কারণ সে যাচাই না করেই অনুসরণ করেছে।

৩️⃣ “فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ” —
“তাই এখন ভোগ করো সেই শাস্তি, যা তোমরা নিজ হাতে অর্জন করেছিলে।”
🌿 আগের দল এবার পরের দলকে বলবে — “তোমরা যে কাজ করেছিলে, তার ফল তোমরাই এখন ভোগ করছো।” 🌸 দুনিয়ায় যেমন মানুষ নিজ আমলের ফল পায়, তেমনি আখিরাতে প্রতিটি কর্মের সঠিক প্রতিদান হবে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আজ তাদের প্রতিদান হবে তাদেরই কাজের ফল।”** *(সূরা আত-তওবা ৯:৯৫)* 🌿 🌿 এখানে “فَذُوقُوا” (অর্থাৎ “স্বাদ গ্রহণ করো”) — এটি কঠিন তিরস্কার ও বাস্তবতার ঘোষণা। শাস্তি শুধু দেখা নয়, অনুভবও করতে হবে।

🌸 **গভীর উপলব্ধি:**
  • জাহান্নামে সবাই নিজের কর্মফলের দায় নেবে।
  • নেতা বা অনুসারী — কেউই পরস্পরকে রক্ষা করতে পারবে না।
  • দুনিয়ার দোষারোপ বা যুক্তি আখিরাতে কোনো কাজে আসবে না।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার নিখুঁত — প্রত্যেকের ফল তার কাজ অনুযায়ী।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন ছাত্র পরীক্ষায় ফেল করলে শিক্ষক বা বন্ধুকে দোষ দিতে পারে, কিন্তু ফলাফলে তার নিজের নামই থাকবে। তেমনি আখিরাতে কেউই নিজের কর্মফল থেকে বাঁচতে পারবে না 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যকে দোষারোপ করা মুমিনের গুণ নয়।
  • আল্লাহর বিচারে সবাই নিজের আমলের জন্য দাঁড়াবে।
  • অন্ধ অনুসরণ ও দোষারোপ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
  • তাওবা ও আত্মসমালোচনাই মুক্তির প্রথম ধাপ।
  • প্রত্যেকের উচিত নিজের কাজ যাচাই করা — তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিনা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ”** 🤍 — “তোমরা ভোগ করো সেই শাস্তি, যা তোমরা নিজ হাতে অর্জন করেছিলে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — **দুনিয়ায় অন্যকে দোষ দিয়ে মুক্তি নেই, মুক্তি আছে কেবল নিজের আমল শুদ্ধ করার মধ্যেই।** 🌿🤍
আয়াত ৪০
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلْجَمَلُ فِى سَمِّ ٱلْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُجْرِمِينَ
ইন্নাল্লাযীনা কাজ্‌যাবূ বিআয়াতিনা ওয়াস্‌তাক্ববারূ আনহা, লা তুফাত্তাহু লাহুম আবওয়াবুস্‌সামা, ওলা ইয়াদখুলূনাল জান্নাতা, হত্তা ইয়ালিজাল জামালু ফী সাম্মিল খিয়াত, ওয়াকাযালিকা নাজযিল মুজরিমীন।
“নিশ্চয় যারা আমাদের নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে এবং অহংকারবশে তা প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য আকাশের দরজাগুলো খোলা হবে না, আর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না — যতক্ষণ না উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে! এভাবেই আমরা অপরাধীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।”
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেই সব লোকদের পরিণতির বর্ণনা দিয়েছেন, যারা কুরআনের সত্যতা অস্বীকার করেছে এবং অহংকারবশে সত্য গ্রহণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটি এক ভয়াবহ ও প্রতীকধর্মী চিত্র — যা জান্নাত থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চনার ঘোষণা।

১️⃣ “إِنَّ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَا” —
“নিশ্চয় যারা আমাদের নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে এবং অহংকারবশে তা প্রত্যাখ্যান করে।”
🌿 অর্থাৎ, যারা কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর প্রেরিত সত্যকে অস্বীকার করেছে, তারা শুধু অজ্ঞ নয় — বরং অহংকারে অন্ধ। সত্যকে অস্বীকার করা এক জিনিস, আর অহংকারে তা প্রত্যাখ্যান করা আরও বড় অপরাধ। 📖 কুরআনে আল্লাহ বলেন — **“তাদের অন্তরে আছে অহংকার, যা তাদের কখনো সত্য গ্রহণ করতে দেয় না।”** *(সূরা আল-মুমিনূন ২৩:৪৬)* 🌸 🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ জানে কোনো ওষুধ তাকে সুস্থ করবে, তবুও অহংকারে বলে, “আমি খাব না!” — সে নিজের ক্ষতি নিজেই ডেকে আনে।

২️⃣ “لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ” —
“তাদের জন্য আকাশের দরজাগুলো খোলা হবে না।”
🌿 অর্থাৎ, তাদের দোয়া, তাদের রূহ (আত্মা), তাদের কোনো আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। মৃত্যুর পর তাদের আত্মা উপরে উঠতে চাইলেও, ফেরেশতারা বলবে — “ফিরে যাও, তোমার জন্য আকাশের দরজা বন্ধ।” 📖 আল্লাহ বলেন — **“যখন দুষ্টদের মৃত্যু আসে, ফেরেশতারা বলে, বের হও তোমাদের আত্মা, আজ তোমাদের জন্য অপমানের শাস্তি।”** *(সূরা আল-আন‘আম ৬:৯৩)* 🌿 🌸 এটি বোঝায় — আল্লাহর রহমতের দরজা কখনো অহংকারী ও অস্বীকারকারীদের জন্য খোলে না।

৩️⃣ “وَلَا يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ” —
“আর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
🌿 এটি এক স্পষ্ট ঘোষণা — যতদিন তারা কুফরির অবস্থায় থাকবে, জান্নাত তাদের জন্য নিষিদ্ধ। আল্লাহর জান্নাত কোনো অহংকারীর জন্য নয়, বরং তাদের জন্য যারা বিনয়ী ও অনুতপ্ত। 📖 রাসূল ﷺ বলেন — **“যার অন্তরে এক বিন্দু অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”** — *সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৯১* 🌸 🌿 তাই ঈমান শুধু বিশ্বাস নয়, বরং বিনয় ও আত্মসমর্পণের ফল।

৪️⃣ “حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلْجَمَلُ فِى سَمِّ ٱلْخِيَاطِ” —
“যতক্ষণ না উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে।”
🌿 এটি এক অসাধারণ **রূপক (metaphor)** — যার অর্থ হলো “অসম্ভব ঘটনা।” যেমন বড় উট সূচের ছোট ছিদ্র দিয়ে কখনো ঢুকতে পারে না, তেমনি অহংকারী কাফের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। 🌸 এটি বোঝায় — জান্নাত অর্জনের পথ শুধু বিনয়, ঈমান ও আনুগত্যের মাধ্যমে। 📖 অনুরূপভাবে আল্লাহ বলেন — **“আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না।”** *(সূরা আন-নাহল ১৬:২৩)* 🌿

৫️⃣ “وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُجْرِمِينَ” —
“এভাবেই আমরা অপরাধীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।”
🌿 অর্থাৎ, যারা নিজেদের অপরাধে অটল থাকে, আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায়, তাদের জন্য এই কঠিন পরিণতি নির্ধারিত। 🌸 এটি কোনো অবিচার নয় — বরং তাদের নিজের কর্মের ফল।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • অহংকার মানুষকে সত্য থেকে অন্ধ করে দেয়।
  • আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে যায় কেবল বিনয়ী হৃদয়ের জন্য।
  • জান্নাতে প্রবেশ অসম্ভব অহংকারীদের জন্য।
  • “উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ” — এটি চিরস্থায়ী বঞ্চনার প্রতীক।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন আকাশের দরজা কেবল আলো প্রবেশ করলেই খুলে যায়, অন্ধকারে তা বন্ধ থাকে — তেমনি ঈমান ও বিনয়ের আলো ছাড়া জান্নাতের দরজাও বন্ধ থাকে 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার করা ও অহংকার করা সমান অপরাধ।
  • জান্নাতে প্রবেশের জন্য বিনয় ও আত্মসমর্পণ অপরিহার্য।
  • আল্লাহর রহমতের দরজা খোলে শুধু ঈমানদার ও অনুতপ্তদের জন্য।
  • অহংকারই শয়তানের প্রথম পাপ — তাই তা থেকে দূরে থাকা মুমিনের কর্তব্য।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلْجَمَلُ فِى سَمِّ ٱلْخِيَاطِ”** 🤍 — “তাদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না, আর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না — যতক্ষণ না উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **অহংকার সত্যের শত্রু, আর বিনয় মুক্তির চাবি।** 🌿🤍
আয়াত ৪১
لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌۭ وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍۭ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلظَّـٰلِمِينَ
লাহুম মিন জাহান্নামা মিহাদুন্‌ ওয়া মিন্‌ ফাওকিহিম্‌ গাওয়াশিন্‌; ওয়াকাযালিকা নাজযিজ্‌-যালিমীন।
“তাদের জন্য জাহান্নাম হবে শয্যা, আর তাদের উপর থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন। এভাবেই আমি জালিমদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।” 🌿
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা জান্নাত থেকে বঞ্চিত ঐসব অহংকারী ও কাফেরদের পরিণতি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। তারা শুধু জান্নাত থেকে বঞ্চিতই নয়, বরং জাহান্নামের আগুনে হবে তাদের বাসস্থান — নিচে ও উপরে উভয় দিকেই আগুন! 🔥

১️⃣ “لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌۭ” —
“তাদের জন্য জাহান্নাম হবে শয্যা।”
🌿 অর্থাৎ, যেমন মানুষ পৃথিবীতে বিশ্রামের জন্য নরম বিছানা ব্যবহার করে, তেমনি কাফেরদের শয্যা হবে আগুনের! তারা সেখানে থাকবে শাস্তির মধ্যে, বিশ্রাম নয় — বরং অস্থিরতা, যন্ত্রণা ও হতাশায় পূর্ণ। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তাদের জন্য বিছানা হবে আগুনের এবং আচ্ছাদনও হবে আগুনের।”** *(সূরা আল-আরাফ ৭:৪১)* 🌸 এটি শাস্তির ভয়াবহতা বোঝায় — তারা চারদিক থেকে আগুনে ঘেরা থাকবে, পালানোর কোনো উপায় থাকবে না।

২️⃣ “وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍۭ” —
“আর তাদের উপর থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন।”
🌿 অর্থাৎ, আগুন শুধু নিচে নয়, উপরের দিক থেকেও তাদের ঢেকে ফেলবে — যেন এক অগ্নিঘেরা কারাগার! এটি এমন এক শাস্তি যেখানে উপরে-নিচে, ডানে-বামে, চারদিক থেকেই আগুনের তরঙ্গ উঠবে। 📖 অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন — **“তাদের উপরে ও নিচে আগুনের স্তর থাকবে।”** *(সূরা আজ-যুমার ৩৯:১৬)* 🌸 🌿 যেমন একজন পাপী পৃথিবীতে অন্যদের উপর জুলুম করে, তেমনি পরকালে তার উপর জাহান্নামের আচ্ছাদন পড়বে — এটি তার জুলুমের ন্যায্য প্রতিফল।

৩️⃣ “وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلظَّـٰلِمِينَ” —
“এভাবেই আমি জালিমদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।”
🌿 এটি আল্লাহর এক কঠিন ঘোষণা — পৃথিবীতে যারা অন্যায় ও জুলুম করে, যারা আল্লাহর বাণী অস্বীকার করে, যারা অহংকারে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে — তাদের জন্য এই ভয়াবহ পরিণতি অবধারিত। 🌸 এখানে “জালিমীন” (ظالمين) শব্দটি শুধু অন্যকে ক্ষতি করা বোঝায় না, বরং নিজের উপরও জুলুম করা — অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। 📖 আল্লাহ বলেন — **“নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের ভালোবাসেন না।”** *(সূরা আলে ইমরান ৩:৫৭)* 🌿

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • যারা অহংকার ও অস্বীকারে অন্ধ, তাদের জন্য জাহান্নামই শেষ পরিণতি।
  • আল্লাহর শাস্তি শুধু নীচে নয়, উপরে থেকেও ঘিরে ফেলবে।
  • “মিহাদ” (শয্যা) ও “গাওয়াশ” (আচ্ছাদন) — দুটি শব্দেই ভয়াবহ শাস্তির সম্পূর্ণ চিত্র আছে।
  • আল্লাহ জালিমদের কখনো ছাড় দেন না, বরং ন্যায়বিচার অনুযায়ী প্রতিফল দেন।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ আগুনে ঘেরা এক কক্ষে বন্দী, নিচে জ্বলছে অঙ্গার, আর উপরে পড়ছে আগুনের ফোঁটা — তেমনি হবে জাহান্নামের চিত্র, যেখানে না বিশ্রাম আছে, না মুক্তি। 🌋

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • অহংকার ও জুলুমের পরিণতি চিরস্থায়ী আগুন।
  • আল্লাহর দয়া যেমন সীমাহীন, তেমনি তাঁর ন্যায়বিচারও কঠোর।
  • যারা অন্যের প্রতি বা নিজের প্রতি অন্যায় করে, তারা আল্লাহর ক্রোধের যোগ্য।
  • বিনয়, ন্যায় ও ঈমানই মুক্তির একমাত্র পথ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌۭ وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍۭ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلظَّـٰلِمِينَ”** 🤍 — “তাদের জন্য জাহান্নাম হবে শয্যা, আর তাদের উপর থাকবে আগুনের আচ্ছাদন। এভাবেই আমি জালিমদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **অন্যায় ও অহংকার মানুষকে আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যায়, আর বিনয় ও ন্যায় মানুষকে জান্নাতের পথে পৌঁছে দেয়।** 🌿🤍
আয়াত ৪২
وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ
ওয়াল্লাযীনা আমানূ ওয়া আমিলুস্‌ সালিহাত, লা নুকাল্লিফু নাফসান ইল্লা উস‘আহা, উলা-ইকা আসহাবুল জান্নাহ, হুম ফিহা খালিদুন।
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে — আমি কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেই না — তারাই জান্নাতের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তাআলা অস্বীকারকারীদের ভয়াবহ পরিণতি বর্ণনা করেছেন, আর এই আয়াতে তিনি ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের জন্য জান্নাতের সুখবর দিচ্ছেন — এটি শাস্তি ও পুরস্কারের পরিপূর্ণ ভারসাম্য। 🌸

১️⃣ “وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ” —
“আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে।”
🌿 এখানে আল্লাহ দুইটি শর্তের কথা বলেছেন — (১) ঈমান এবং (২) সৎকর্ম। শুধুমাত্র মুখে ঈমান যথেষ্ট নয়, বরং সেই ঈমানের প্রমাণ দিতে হবে কর্মে। 📖 কুরআনে বহুবার এসেছে — **“যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের উদ্যান।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:২৫)* 🌿 🌸 অর্থাৎ, সত্যিকারের মুমিন সেই, যার ঈমান তার আচরণে ও জীবনে প্রকাশ পায়।

২️⃣ “لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا” —
“আমি কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেই না।”
🌿 এটি আল্লাহর এক অসীম দয়া ও ন্যায়বিচারের প্রতিফল। তিনি মানুষকে যতটুকু করতে সক্ষম, ততটুকুই দায়িত্ব দিয়েছেন। কারও উপর অতিরিক্ত চাপ দেননি। 📖 অনুরূপভাবে আল্লাহ বলেন — **“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা দেন না।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:২৮৬)* 🌸 🌿 অর্থাৎ, কেউ যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, আল্লাহ তার সামান্য আমলকেও মূল্যবান করে দেন। কারণ আল্লাহ চেষ্টাকে দেখেন, ফলাফল নয়। 🌿

৩️⃣ “أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ” —
“তারাই জান্নাতের অধিবাসী।”
🌸 এটি এক চূড়ান্ত ঘোষণা — যারা ঈমান ও আমল একসাথে সম্পন্ন করেছে, জান্নাত তাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা। 🌿 আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতের বন্ধু ও অধিবাসী বলে সম্মানিত করেছেন — তারা আর কখনো জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হবে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখ।”** *(সূরা আন-নিসা ৪:৫৭)* 🌸

৪️⃣ “هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ” —
“তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।”
🌿 জান্নাতে মৃত্যুর কোনো ধারণা নেই, নেই দুঃখ, নেই ব্যথা — শুধু চিরস্থায়ী আনন্দ ও শান্তি। 🌸 তারা সেখানে থাকবে আল্লাহর সান্নিধ্যে, যেখানে নেই সময়ের সীমা, নেই কোনো বিচ্ছেদ। 📖 রাসূল ﷺ বলেন — **“জান্নাতে এমন সুখ আছে যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, কোনো হৃদয় কল্পনাও করতে পারেনি।”** — *সহীহ বুখারী-৩২৪৪ ও মুসলিম-২৮২৪* 🌿

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • ঈমান ও সৎকর্ম একে অপরের পরিপূরক।
  • আল্লাহ কখনো কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।
  • আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাত চিরস্থায়ী ও সীমাহীন সুখের স্থান।
  • চেষ্টা ও নিষ্ঠাই জান্নাতের পথে সফলতার মূল চাবি।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন কৃষক যতটুকু বীজ বপন করে, ততটুকু ফল পায় — তেমনি আল্লাহও প্রত্যেকের প্রচেষ্টা অনুযায়ী প্রতিদান দেন 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর পথে চলার জন্য চেষ্টা করাই সাফল্যের চাবি।
  • আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ; তিনি কারও প্রতি অবিচার করেন না।
  • জান্নাত শুধু মুখের কথা নয়, বরং আমল ও বিনয়ের ফল।
  • চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা পেতে হলে, সামান্য কষ্টকেও ধৈর্য সহকারে সহ্য করতে হবে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ”** 🤍 — “যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে — আমি কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেই না — তারাই জান্নাতের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহ কখনো অন্যায় করেন না, বরং সামান্য সৎচেষ্টা দিয়েই জান্নাত অর্জন সম্ভব।** 🌿🤍
আয়াত ৪৩
وَنَزَعْنَا مَا فِى صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهِمُ ٱلْأَنْهَـٰرُ ۖ وَقَالُوا۟ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى هَدَىٰنَا لِهَـٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِىَ لَوْلَآ أَنْ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ ۖ لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ ۖ وَنُودُوا۟ أَن تِلْكُمُ ٱلْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
ওয়া নাযা‘না মা ফি সুদূরিহিম মিন গিল্লিন, তাজরী মিন তাহতিহিমুল আনহার, ওয়াকালু আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী হাদানা লিহাযা, ওয়া মা কুন্না লিনাহতাদিয়া লাওলা আন হাদানাল্লাহ, লাকাদ জা-আত রুসুলু রব্বিনা বিলহক্ক, ওা নূদূ আন্‌ তিল্কুমুল জান্নাতু উরিস্তুমূহা বিমা কুন্তুম তা‘মালুন।
“আমি তাদের অন্তর থেকে সব হিংসা ও বিদ্বেষ তুলে নেবো, তাদের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। তারা বলবে — ‘সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে এই (সঠিক পথের) দিকে পরিচালিত করেছেন। আমরা কখনো পথ পেতাম না, যদি আল্লাহ আমাদেরকে পথ না দেখাতেন। নিঃসন্দেহে আমাদের প্রভুর রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন।’ আর ঘোষণা করা হবে — ‘এই জান্নাতই তোমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছ, তোমাদের কর্মের কারণে।’” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে জান্নাতবাসীদের আনন্দ, কৃতজ্ঞতা ও শান্তির দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে — এমন এক দৃশ্য যা হৃদয়কে কোমল করে দেয় এবং আত্মাকে আলোকিত করে। এটি জান্নাতের সৌন্দর্য ও ঈমানদারদের পুরস্কারের এক জীবন্ত চিত্র। 🌸

১️⃣ “وَنَزَعْنَا مَا فِى صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّۢ” —
“আমি তাদের অন্তর থেকে সব হিংসা ও বিদ্বেষ তুলে নেবো।”
🌿 অর্থাৎ, জান্নাতে কারও অন্তরে কোনো হিংসা, ঘৃণা বা ঈর্ষা থাকবে না। সেখানে থাকবে কেবল ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও ভাইচারা। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তাদের অন্তর হতে আমি বিদ্বেষ দূর করব; তারা মুখোমুখি হবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।”** *(সূরা আল-হিজর ১৫:৪৭)* 🌿 🌸 এটি জান্নাতের এক বিশেষ নিয়ামত — পৃথিবীর সকল মানসিক কষ্ট ও অন্তরের কালিমা সেখানে থাকবে না।

২️⃣ “تَجْرِى مِن تَحْتِهِمُ ٱلْأَنْهَـٰرُ” —
“তাদের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ।”
🌿 জান্নাতের বাগানগুলোতে চারদিকে নদী প্রবাহিত — স্বচ্ছ জল, দুধ, মধু ও সুগন্ধি পানীয়ের নদী। এটি চিরস্থায়ী প্রশান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক। 📖 কুরআনে আল্লাহ বলেন — **“তাদের জন্য থাকবে এমন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত হয়।”** *(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১২)* 🌸 🌸 জান্নাতের প্রতিটি দৃশ্য আল্লাহর রহমতের পরিচয়।

৩️⃣ “وَقَالُوا۟ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى هَدَىٰنَا لِهَـٰذَا” —
“তারা বলবে — সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের এই পথে পরিচালিত করেছেন।”
🌿 জান্নাতে প্রবেশ করার পর মুমিনেরা গভীর কৃতজ্ঞতায় বলবে — “যদি আল্লাহ আমাদের পথ না দেখাতেন, আমরা কখনোই এই স্থানে পৌঁছাতে পারতাম না।” 📖 রাসূল ﷺ বলেছেন — **“যখন জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা বলবে — ‘সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ দূর করেছেন।’”** *(সূরা ফাতির ৩৫:৩৪)* 🌿 🌸 জান্নাতের প্রতিটি সুখই আল্লাহর হিদায়াতের ফল।

৪️⃣ “وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِىَ لَوْلَآ أَنْ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ” —
“আমরা কখনো পথ পেতাম না, যদি আল্লাহ আমাদের পথ না দেখাতেন।”
🌿 এটি জান্নাতবাসীদের বিনয়ী স্বীকারোক্তি — তারা বুঝে যাবে, তাদের ঈমান, ধৈর্য ও সাফল্য — সবই ছিল আল্লাহর কৃপা। 🌸 ঈমান কোনো ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং আল্লাহর অনুগ্রহের উপহার।

৫️⃣ “لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ” —
“নিশ্চয়ই আমাদের প্রভুর রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন।”
🌿 তারা স্বীকার করবে — নবীগণ যে সতর্কবার্তা ও সুসংবাদ এনেছিলেন, তা সত্য ছিল, বাস্তব ছিল, আর আজ আমরা তা প্রত্যক্ষ করছি। 🌿 📖 এটি এক প্রমাণ যে, পরকালের প্রতিশ্রুতি কখনো মিথ্যা নয়।

৬️⃣ “وَنُودُوا۟ أَن تِلْكُمُ ٱلْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ” —
“আর ঘোষণা করা হবে — এই জান্নাতই তোমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছ তোমাদের কর্মের কারণে।”
🌿 এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক চূড়ান্ত পুরস্কার ঘোষণা! জান্নাতবাসীরা শুনবে — “এই জান্নাত তোমাদের নিজের আমলের ফল, যদিও আল্লাহর রহমতই তোমাদের তা পেতে সাহায্য করেছে।” 🌸 📖 আল্লাহ বলেন — **“তোমাদের কর্মই তোমাদের জান্নাতের কারণ হবে।”** *(সূরা আন-নাহল ১৬:৩২)* 🌿

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • জান্নাতের প্রথম উপহার — অন্তর থেকে হিংসা দূর হয়ে যাবে।
  • জান্নাতবাসীরা কৃতজ্ঞতার অশ্রু ঝরাবে, অহংকার নয়।
  • তারা বুঝবে, আল্লাহর হিদায়াত ছাড়া কেউ পথ পেতে পারে না।
  • জান্নাত আসলে রহমত ও আমলের সম্মিলিত ফল।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন ক্লান্ত যাত্রী শেষমেশ নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে স্বস্তি পায় — তেমনি মুমিনেরা জান্নাতে পৌঁছে বলবে, “আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের এই শান্তির পথে পরিচালিত করেছেন।” 🤍

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর পথনির্দেশই জান্নাতের চাবি।
  • ঈমানদারদের হৃদয়ে থাকবে না কোনো বিদ্বেষ বা হিংসা।
  • জান্নাতবাসীরা সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকবে তাদের প্রভুর প্রতি।
  • কর্মের মাধ্যমে জান্নাত অর্জিত হয়, তবে রহমতই তার মূল চালিকা শক্তি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَنَزَعْنَا مَا فِى صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهِمُ ٱلْأَنْهَـٰرُ وَقَالُوا۟ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى هَدَىٰنَا لِهَـٰذَا...”** 🤍 — “আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা দূর করব, তাদের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ, তারা বলবে — ‘সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন।’” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যিকার জান্নাত শুরু হয় অন্তরের শান্তি থেকে, আর সেই শান্তি আসে আল্লাহর হিদায়াত ও কৃতজ্ঞতায়।** 🌿🤍
আয়াত ৪৪
وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ أَصْحَـٰبَ ٱلنَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّۭا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّۭا ۖ قَالُوا۟ نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌۢ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّـٰلِمِينَ
ওয়া নাদা আসহাবুল জান্নাতি আসহাবান নার, আন কদ্‌ ওয়াজাদনা মা ওয়াদানা রব্বুনা হাক্কা, ফাহাল ওয়াজাদতুম মা ওয়াদা রব্বুকুম হাক্কা? কালু নাআম, ফা-আযযানা মু'আযযিনুন বাইনাহুম, আন লা'নাতুল্লাহি ‘আলায্‌-যালিমীন।
“জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদেরকে ডাকবে — ‘আমরা তো পেয়েছি আমাদের প্রভু যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা সত্য বলে। তোমরাও কি পেয়েছ তোমাদের প্রভু যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন?’ তারা বলবে — ‘হ্যাঁ।’ তখন তাদের মধ্যে একজন ঘোষক ঘোষণা করবে — ‘আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক জালিমদের উপর।’” 🌿🔥
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি কিয়ামতের পর চূড়ান্ত বিচার ও পুরস্কার-বিচারের এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য। এখানে জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীর মধ্যে এক সংলাপের বর্ণনা করা হয়েছে — যেখানে সত্য ও মিথ্যার পরিণতি সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। 🌸

১️⃣ “وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ أَصْحَـٰبَ ٱلنَّارِ” —
“জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদেরকে ডাকবে।”
🌿 এই আহ্বান হবে এক বাস্তব দৃশ্য — জান্নাতবাসীরা শান্তি ও পুরস্কারের মাঝে থাকবে, আর জাহান্নামবাসীরা শাস্তির ভেতর চিৎকার করবে। 🌸 তখন জান্নাতবাসীরা বলবে, “আমরা যা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভেবেছিলাম, তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে।” 📖 এটি এক পরিপূর্ণ বাস্তবতা — পৃথিবীতে যা মানুষ অবিশ্বাস করেছিল, আজ তা প্রত্যক্ষ করছে।

২️⃣ “أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّۭا” —
“আমরা তো পেয়েছি আমাদের প্রভু যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা সত্য বলে।”
🌿 জান্নাতবাসীরা কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টির সাথে বলবে — “আল্লাহ যা বলেছেন, তা সত্য। জান্নাতের প্রতিশ্রুতি মিথ্যা নয়।” 📖 অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন — **“যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুত জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”** *(সূরা আল-হাজ্জ ২২:২৩)* 🌸 🌸 জান্নাতবাসীরা তখন বুঝবে — পৃথিবীর অল্প কষ্টের বিনিময়ে তারা পেয়েছে চিরন্তন সুখ।

৩️⃣ “فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّۭا؟” —
“তোমরাও কি পেয়েছ তোমাদের প্রভু যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন?”
🌿 এটি এক ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্ন নয়, বরং এক বাস্তব সাক্ষ্য — জান্নাতবাসীরা জানতে চাইবে, “তোমাদের প্রতিশ্রুত শাস্তিও কি সত্য প্রমাণিত হলো?” তখন জাহান্নামবাসীরা লজ্জা ও বেদনায় উত্তর দেবে — **“হ্যাঁ, সত্য প্রমাণিত হয়েছে।”** 🌸 এটি হবে তাদের নিজের মুখে স্বীকারোক্তি — যে আল্লাহর বাণী কখনো মিথ্যা নয়।

৪️⃣ “قَالُوا۟ نَعَمْ” —
“তারা বলবে — হ্যাঁ।”
🌿 এই এক শব্দেই লুকিয়ে থাকবে শত বছরের অনুশোচনা, অশেষ আফসোস ও অসহায়ত্বের কান্না। তারা আর কিছু বলতে পারবে না, শুধু বলবে — “হ্যাঁ।” 📖 এটি প্রমাণ করে — **সত্যকে পৃথিবীতে অস্বীকার করা যায়, কিন্তু আখিরাতে তা অস্বীকার করা যায় না।** 🌿

৫️⃣ “فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌۢ بَيْنَهُمْ” —
“তখন তাদের মধ্যে একজন ঘোষক ঘোষণা করবে।”
🌿 এই ঘোষক হবেন কোনো ফেরেশতা, যিনি দুই দলের মাঝে ঘোষণা করবেন — সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য এখন স্থায়ীভাবে নির্ধারিত!

৬️⃣ “أَن لَّعْنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّـٰلِمِينَ” —
“আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক জালিমদের উপর।”
🌿 এটি হবে এক চূড়ান্ত ঘোষণা — আল্লাহর রহমত থেকে চিরবঞ্চিত থাকবে সেইসব জালিম, যারা পৃথিবীতে সত্যকে অস্বীকার করেছে, অন্যায় করেছে, এবং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে রেখেছে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“জালিমদের উপর আল্লাহর লানত।”** *(সূরা হুদ ১১:১৮)* 🌿 🌸 অর্থাৎ, আল্লাহর দয়া, ক্ষমা ও সান্নিধ্য — সবকিছু থেকে তারা দূরে থাকবে।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • কিয়ামতের দিনে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য চিরতরে স্পষ্ট হবে।
  • জান্নাতবাসী কৃতজ্ঞ হবে, জাহান্নামবাসী স্বীকার করবে।
  • আল্লাহর বাণী কখনো মিথ্যা নয় — সবাই তা প্রত্যক্ষ করবে।
  • অন্যায় ও জুলুমকারীরা আল্লাহর অভিশাপে পতিত হবে।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন কোনো পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর কেউ আনন্দে আত্মহারা হয়, আর কেউ অনুতাপে পুড়ে যায় — তেমনি জান্নাতবাসী আনন্দে বলবে “আলহামদুলিল্লাহ”, আর জাহান্নামবাসী বলবে “হ্যাঁ, আমরা ভুল করেছিলাম।” 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু পরিণতি চিরস্থায়ী।
  • সত্য অস্বীকারের পরিণতি অনুশোচনাই শুধু।
  • আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সবসময় সত্য ও নির্ভুল।
  • অন্যায় ও জুলুম কখনো মুক্তির পথ হতে পারে না।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ أَصْحَـٰبَ ٱلنَّارِ... أَن لَّعْنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّـٰلِمِينَ”** 🤍 — “জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদেরকে ডাকবে... এবং ঘোষণা হবে — আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক জালিমদের উপর।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আজ যাকে তুচ্ছ ভাবি, কাল সে-ই চিরন্তন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াবে। তাই আজই সত্যকে গ্রহণ করো, অন্যায় থেকে দূরে থেকো।** 🌿🤍
আয়াত ৪৫
ٱلَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًۭا وَهُم بِٱلْـَٔاخِرَةِ كَـٰفِرُونَ
আল্লাযীনা ইয়াসুদ্দূনা আন্ সাবীলিল্লাহি, ওয়া ইয়াবগুনাহা ইওয়াজা, ওয়া হুম বিল-আখিরাতি কাফিরুন।
“যারা মানুষকে আল্লাহর পথে চলা থেকে বিরত রাখে, এবং সেই পথকে বাঁকা করার চেষ্টা করে, আর তারা পরকালে অবিশ্বাসী।” 🌿
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি পূর্বের আয়াত (৪৪)-এর ধারাবাহিকতায় এসেছে, যেখানে ঘোষণা করা হয়েছিল — “আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক জালিমদের উপর।” এখন এখানে সেই **“জালিমদের” প্রকৃতি ও অপরাধ** বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। 🌸

১️⃣ “ٱلَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ” —
“যারা মানুষকে আল্লাহর পথে চলা থেকে বিরত রাখে।”
🌿 অর্থাৎ, তারা নিজেরাও আল্লাহর পথে চলে না, আবার অন্যদেরকেও আল্লাহর দিক থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তারা সত্যকে আড়াল করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে, কখনো ভয় দেখিয়ে, কখনো প্রলোভন দিয়ে ঈমান থেকে ফিরিয়ে দেয়। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, এবং তা বিকৃত করতে চায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।”** *(সূরা ইব্রাহীম ১৪:৩)* 🌿 🌸 এরা সমাজের সেই শ্রেণি যারা সত্যকে ব্যাহত করে, আর মিথ্যাকে প্রচার করে আল্লাহর দ্বীনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়।

২️⃣ “وَيَبْغُونَهَا عِوَجًۭا” —
“এবং তারা সেই পথকে বাঁকা করার চেষ্টা করে।”
🌿 এখানে “عِوَجًا” (ইওয়াজা) অর্থ ‘বিকৃতি’ বা ‘বাঁকানো অবস্থা’। অর্থাৎ, তারা ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, সত্যকে বিকৃত করে মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। 🌸 যেমন — কেউ কুরআনের বাণীকে নিজের স্বার্থে ব্যাখ্যা করে, আবার কেউ ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে যেন মানুষ দূরে সরে যায়। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তারা কিতাবের কথা বিকৃত করে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যাখ্যা করে।”** *(সূরা আন-নিসা ৪:৪৬)* 🌿 🌿 এটি শুধু কুফরি নয়, বরং আল্লাহর বাণীর অপমানও বটে।

৩️⃣ “وَهُم بِٱلْـَٔاخِرَةِ كَـٰفِرُونَ” —
“আর তারা পরকালে অবিশ্বাসী।”
🌿 তাদের সব কর্মকাণ্ডের মূল কারণ হলো — তারা পরকালে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে এই জীবনই শেষ, কোনো জবাবদিহি নেই, কোনো পুনর্জন্ম নেই, কোনো প্রতিদান নেই। 🌸 তাই তারা নির্ভয়ে পাপ করে, আর মানুষকে সেই পথেও আহ্বান করে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যারা আখিরাতকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।”** *(সূরা আন-নাহল ১৬:২২)* 🌿 🌿 তাদের মন থেকে “ভয়” চলে গেছে, আর যে আল্লাহকে ভয় করে না, তার অন্তরেই শুরু হয় অন্যায়।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • সবচেয়ে বড় জালিম সেই, যে মানুষকে আল্লাহর দিক থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
  • সত্যকে বিকৃত করা আল্লাহর বাণীর অবমাননা।
  • যার হৃদয়ে আখিরাতের বিশ্বাস নেই, সে কখনো ন্যায়পরায়ণ হতে পারে না।
  • আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করা মানে নিজের মুক্তির পথ বন্ধ করে দেওয়া।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ জানে সূর্য আলোকিত করে, তবুও সে অন্যদের চোখে পর্দা ফেলে যাতে তারা আলো না দেখে — ঠিক তেমনি এই জালিমরা মানুষকে আল্লাহর আলো থেকে দূরে রাখে। 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করা সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ।
  • যারা ইসলামকে বিকৃত করে, তারা জাহান্নামের যোগ্য।
  • আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে ন্যায় ও সৎকর্মে দৃঢ় রাখে।
  • জীবনের সফলতা নির্ভর করে আল্লাহর পথে থাকা ও অন্যদেরও সেই পথে আহ্বান করার উপর।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ٱلَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًۭا وَهُم بِٱلْـَٔاخِرَةِ كَـٰفِرُونَ”** 🤍 — “যারা মানুষকে আল্লাহর পথে চলা থেকে বিরত রাখে, এবং সেই পথকে বিকৃত করতে চায়, আর তারা পরকালে অবিশ্বাসী।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যে মানুষ আল্লাহর পথে বাধা দেয়, সে শুধু অন্যদের নয় — নিজের মুক্তির পথও বন্ধ করে দেয়।** 🌿🤍
আয়াত ৪৬
وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌۭ ۚ وَعَلَى ٱلْأَعْرَافِ رِجَالٌۭ يَعْرِفُونَ كُلًّۢا بِسِيمَـٰهُمْ ۚ وَنَادَوْا۟ أَصْحَـٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَن سَلَـٰمٌ عَلَيْكُمْ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ
ওয়া বাইনাহুমা হিজাবٌ, ওয়া ‘আলা আল-আ‘রাফি রিজালٌ ইয়াআরিফূনা কুল্লান বিসীমাহুম, ওয়া নাদাউ আসহাবাল জান্নাতি আন সালামুন ‘আলাইকুম, লাম ইয়াদখুলুহা ওাহুম ইয়াতমা‘উন।
“আর তাদের (জান্নাত ও জাহান্নাম) মধ্যে থাকবে একটি পর্দা। এবং ‘আরাফ’-এ থাকবে কিছু লোক, যারা উভয় পক্ষকেই তাদের চেহারা দেখে চিনবে। তারা জান্নাতবাসীদেরকে ডাকবে — ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!’ যদিও তারা এখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু প্রবেশের আশা রাখে।” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এক বিশেষ দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে “আরাফ” নামক এক স্থানের উল্লেখ রয়েছে — যা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে অবস্থিত এক উঁচু প্রান্ত বা সীমারেখা। এখানে এমন কিছু লোক থাকবে যারা দুই পক্ষকেই দেখতে পাবে। এই আয়াত মানবজাতির ভাগ্য, ন্যায়বিচার ও আল্লাহর করুণার এক গভীর প্রতিফলন। 🌸

১️⃣ “وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌۭ” —
“আর তাদের মধ্যে থাকবে একটি পর্দা।”
🌿 অর্থাৎ, জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে একটি আলাদা সীমারেখা থাকবে — যেন জান্নাতবাসীরা শান্তিতে থাকে, আর জাহান্নামবাসীরা তাদের দিকে পৌঁছাতে না পারে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তাদের মাঝে থাকবে একটি দেয়াল, যার ভেতরের দিকে থাকবে রহমত এবং বাইরের দিকে শাস্তি।”** *(সূরা আল-হাদীদ ৫৭:১৩)* 🌿 🌸 এই “হিজাব” বা পর্দা আল্লাহর দয়া ও ন্যায়বিচারের প্রতীক।

২️⃣ “وَعَلَى ٱلْأَعْرَافِ رِجَالٌۭ يَعْرِفُونَ كُلًّۢا بِسِيمَـٰهُمْ” —
“আর আরাফে থাকবে কিছু লোক, যারা উভয় পক্ষকেই তাদের চেহারা দেখে চিনবে।”
🌿 “আরাফ” শব্দের অর্থ হলো “উঁচু স্থান” বা “চূড়া”। সেখানে থাকবে এমন কিছু লোক — যাদের সৎকর্ম ও দোষ সমান সমান। তারা জান্নাতে প্রবেশের যোগ্য, তবে এখনো অনুমতি পায়নি। 🌸 তারা জান্নাতবাসীদের আনন্দ আর জাহান্নামবাসীদের শাস্তি দুটোই দেখতে পাবে। তাদের দৃষ্টি ও হৃদয় থাকবে আশা ও ভয়ের মাঝামাঝি। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তারা প্রতিটি দলকে তাদের মুখাবয়ব দ্বারা চিনবে।”** *(সূরা আল-আ‘রাফ ৭:৪৬)* 🌿 🌿 এটি বোঝায় — আখিরাতে মানুষের মুখই তার কর্মের প্রতিফলন হয়ে উঠবে।

৩️⃣ “وَنَادَوْا۟ أَصْحَـٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَن سَلَـٰمٌ عَلَيْكُمْ” —
“তারা জান্নাতবাসীদেরকে ডাকবে — তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”
🌿 আরাফের লোকেরা জান্নাতবাসীদের দিকে তাকিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বলবে, “সালামুন ‘আলাইকুম” — তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। 🌸 তারা জান্নাতবাসীদের দেখে আনন্দিত হবে, কারণ তারাও জানে — তাদের পরিণতিও ইনশাআল্লাহ জান্নাত। 📖 কুরআনে বারবার এসেছে — **“জান্নাতবাসীরা একে অপরকে সালাম জানাবে।”** *(সূরা ইউনুস ১০:১০)* 🌿 🌿 “সালাম” এখানে শুধু অভিবাদন নয়, বরং চিরস্থায়ী নিরাপত্তা ও শান্তির প্রতীক।

৪️⃣ “لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ” —
“যদিও তারা এখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু প্রবেশের আশা রাখে।”
🌿 এই অংশটি সবচেয়ে সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী। এটি সেই মানুষদের বর্ণনা করে, যারা জান্নাতের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে — তারা জান্নাতের সুবাস অনুভব করছে, কিন্তু এখনো প্রবেশ করেনি। 🌸 তবুও তারা আশা হারায় না, কারণ তারা আল্লাহর রহমতে বিশ্বাস রাখে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আমার দয়া সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করেছে।”** *(সূরা আল-আ‘রাফ ৭:১৫৬)* 🌿 🌿 তাদের চোখে থাকবে আকুলতা, আর হৃদয়ে থাকবে আশা — “হয়তো আজ আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • আল্লাহর বিচার এত সূক্ষ্ম যে, কিছু লোকের সৎকর্ম ও দোষ সমান হবে।
  • আরাফের মানুষরা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ই দেখবে — যেন শিক্ষা লাভ করে।
  • আল্লাহর রহমতে আশা রাখা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
  • “সালাম” — জান্নাতবাসীদের পরিচয়চিহ্ন ও শান্তির প্রতীক।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে — পাশ করা বন্ধুদের দেখে আনন্দিত, আবার নিজের ভাগ্যের জন্য আশাবাদী — ঠিক তেমনি হবে “আরাফের মানুষদের” অবস্থা 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার নিখুঁত ও সুবিন্যস্ত।
  • কোনো আমলই তুচ্ছ নয় — কারণ সামান্য ভালো কাজও মুক্তির কারণ হতে পারে।
  • মুমিন কখনো হতাশ হয় না, আল্লাহর দয়ার প্রতি তার আশা সবসময় থাকে।
  • “সালাম” — এই শব্দেই লুকিয়ে আছে জান্নাতের শান্তির চাবি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌۭ وَعَلَى ٱلْأَعْرَافِ رِجَالٌۭ يَعْرِفُونَ كُلًّۢا بِسِيمَـٰهُمْ...”** 🤍 — “জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে থাকবে একটি পর্দা, আর আরাফে থাকবে এমন কিছু লোক যারা উভয় পক্ষকে চিনবে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর বিচার যেমন ন্যায়ের, তেমনি দয়ারও প্রতিফল। তাই কখনো আশাহত হয়ো না, আল্লাহর রহমতের দরজা সবসময় খোলা।** 🌿🤍
আয়াত ৪৭
وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَـٰرُهُمْ تِلْقَآءَ أَصْحَـٰبِ ٱلنَّارِ قَالُوا۟ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ
ওয়া ইযা সুরিফাত্‌ আবসারুহুম্‌ তিল্‌কা আ’স্হাবান্‌-নার, কালু রব্বানা লা তাজ‘আলনা মা‘আল কওমিজ্‌-যালিমীন।
“আর যখন তাদের দৃষ্টি জাহান্নামবাসীদের দিকে ফেরানো হবে, তখন তারা বলবে — ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের সাথে রেখো না।’” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 এই আয়াত “আরাফের মানুষদের” অন্তরের গভীর অনুভূতি তুলে ধরে — যখন তারা জাহান্নামের ভয়াবহ দৃশ্য দেখবে, তখন তাদের হৃদয় কেঁপে উঠবে। তারা তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে, যেন কোনোভাবেই সেই শাস্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত না হয়। 🌸

১️⃣ “وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَـٰرُهُمْ تِلْقَآءَ أَصْحَـٰبِ ٱلنَّارِ” —
“আর যখন তাদের দৃষ্টি জাহান্নামবাসীদের দিকে ফেরানো হবে।”
🌿 এখানে বোঝানো হয়েছে — “আরাফের মানুষরা” জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় দিকেই তাকাবে। একসময় যখন তাদের চোখ জাহান্নামের দিকে যাবে, তারা দেখবে আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখা, আর চিৎকাররত মানুষ। 📖 কুরআনে আল্লাহ বলেন — **“তারা জাহান্নামের আওয়াজ শুনবে, যা তাদেরকে ভয়ে কাঁপিয়ে দেবে।”** *(সূরা আল-ফুরকান ২৫:১২)* 🌿 🌸 এটি এমন এক দৃশ্য, যা হৃদয়কে কাঁপিয়ে দেবে — তারা বুঝবে, এক মুহূর্তের কুফরও কত বড় বিপর্যয় ছিল!

২️⃣ “قَالُوا۟ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ” —
“তারা বলবে — হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের সাথে রেখো না।”
🌿 জাহান্নামের ভয়াবহতা দেখে তাদের হৃদয়ে জেগে উঠবে তীব্র দোয়া, তারা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলবে — “হে আল্লাহ, আমাদের সেই জালিমদের সাথে রেখো না, যারা তোমার আদেশ অমান্য করেছে।” 📖 এই দোয়াটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর অর্থবহ — এটি মুমিনদের জন্যও এক প্রিয় দোয়া হওয়া উচিত: **رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ** (হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে জালিমদের সাথে করো না)। 🌸 এরা তখন বুঝবে — আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত দলের সাথে থাকা মানেই চিরস্থায়ী অন্ধকার ও হতাশা। 📖 আল্লাহ বলেন — **“অন্যায়কারীরা চিরকাল আগুনে থাকবে।”** *(সূরা আশ-শোরা ৪২:৪৫)* 🌿 🌿 তাই তারা আল্লাহর কাছে মুক্তি প্রার্থনা করবে, যেন তিনি তাদের দয়া করে জান্নাতের দিকে স্থান দেন।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • “আরাফের মানুষরা” জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ের সাক্ষী হবে।
  • জাহান্নামের দৃশ্য দেখেই তারা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
  • আল্লাহর দয়া ব্যতীত কেউ নিরাপদ নয়।
  • এটি এক শিক্ষা — জুলুম ও অন্যায় থেকে সবসময় দূরে থাকা।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ গভীর খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে নিচে আগুন জ্বলতে দেখে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে পেছনে সরে এসে বলে — “আল্লাহ, আমাকে এর থেকে বাঁচাও!” ঠিক তেমনি বলবে “আরাফের মানুষরা” 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো তাওবা ও সৎকর্ম।
  • আল্লাহর ভয় মুমিনের হৃদয়কে কোমল ও সতর্ক রাখে।
  • জাহান্নামের ভয় মুমিনের অন্তরে আল্লাহভীতির আগুন জ্বালায়, যা তাকে অন্যায় থেকে দূরে রাখে।
  • প্রতিদিন এই দোয়াটি পড়া উচিত — “رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ” যেন আমরা কখনো জালিমদের সঙ্গী না হই।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَـٰرُهُمْ تِلْقَآءَ أَصْحَـٰبِ ٱلنَّارِ قَالُوا۟ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ”** 🤍 — “যখন তারা জাহান্নামবাসীদের দিকে তাকাবে, তারা বলবে — হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে জালিমদের সঙ্গে রেখো না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর ভয় হৃদয়ে রাখলে মানুষ কখনো অন্যায়ের পথে যায় না। কারণ প্রকৃত ঈমান মানেই অন্যায় থেকে দূরে থাকা ও আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাওয়া।** 🌿🤍
আয়াত ৪৮
وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلْأَعْرَافِ رِجَالًۭا يَعْرِفُونَهُم بِسِيمَـٰهُمْ قَالُوا۟ مَآ أَغْنَىٰ عَنكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ
ওয়া নাদা আসহাবুল আ‘রাফি রিজালান ইয়াআরিফূনাহুম বিসীমাহুম, কালূ মা আগনা আনকুম জাম‘উকুম, ওয়া মা কুনতুম তাসতাক্ববিরুন।
“আরাফের মানুষরা এমন কিছু লোককে ডাকবে, যাদের তারা মুখাবয়ব দ্বারা চিনবে, এবং বলবে — ‘তোমাদের দলবদ্ধতা ও অহংকার আজ তোমাদের কোনো উপকারে এলো না!’” 🌿🔥
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে “আরাফের মানুষদের” কণ্ঠে শোনা যায় ন্যায়ের কঠোর ঘোষণা। তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে অবস্থান করছে, এবং এখন তারা জাহান্নামবাসীদের দিকে তাকিয়ে সত্য কথাগুলো উচ্চারণ করছে — যা তাদের জীবনের অহংকার ও অবিশ্বাসের পরিণতি স্পষ্ট করে। 🌸

১️⃣ “وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلْأَعْرَافِ رِجَالًۭا يَعْرِفُونَهُم بِسِيمَـٰهُمْ” —
“আরাফের মানুষরা এমন কিছু লোককে ডাকবে, যাদের তারা মুখাবয়ব দ্বারা চিনবে।”
🌿 অর্থাৎ, “আরাফের মানুষরা” জাহান্নামে থাকা সেইসব লোকদের চিনে ফেলবে — যাদের মুখমণ্ডলে কুফরি ও অহংকারের ছাপ স্পষ্ট থাকবে। পৃথিবীতে তারা ছিল প্রভাবশালী, বড় গর্বিত, কিন্তু আজ তারা লাঞ্ছিত। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তুমি তাদের মুখাবয়ব দ্বারা চিনবে, যারা মিথ্যা বলে।”** *(সূরা আল-মুনাফিকুন ৬৩:১)* 🌿 🌸 এখানে বোঝানো হয়েছে — কিয়ামতের দিন মুখই হবে পরিচয়, অন্তরের অবস্থা তখন চেহারায় ফুটে উঠবে।

২️⃣ “قَالُوا۟ مَآ أَغْنَىٰ عَنكُمْ جَمْعُكُمْ” —
“তারা বলবে — তোমাদের দলবদ্ধতা আজ তোমাদের কোনো উপকারে এলো না।”
🌿 অর্থাৎ, তোমরা দুনিয়ায় গর্ব করেছিলে তোমাদের সংখ্যার, সম্পদের, অনুসারীর, ও শক্তির উপর — কিন্তু আজ সেই সব কিছুই কোনো কাজে এল না। 🌸 এই কথায় এক তীব্র তিরস্কার আছে — দুনিয়ায় যারা ভেবেছিল “আমরা সংখ্যায় বেশি, আমরা শক্তিশালী”, আজ তারা একেবারে নিঃস্ব ও একা। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তোমাদের সম্পদ ও সন্তান তোমাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না।”** *(সূরা আলে ইমরান ৩:১০)* 🌿 🌿 সত্য হলো — কিয়ামতের দিনে মানুষ শুধু নিজের আমলের জন্য দাঁড়াবে, কোনো দল বা সংখ্যা তখন কিছুই বাঁচাতে পারবে না।

৩️⃣ “وَمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ” —
“আর তোমাদের অহংকারও কোনো উপকারে এলো না।”
🌿 এটি সেইসব লোকদের উদ্দেশে বলা, যারা পৃথিবীতে অহংকারে সত্যকে অস্বীকার করেছিল। তারা নবীদের উপহাস করেছিল, মুমিনদের তুচ্ছ করেছিল, অথচ আজ তারা নিজেরাই নীচতম অবস্থানে। 📖 রাসূল ﷺ বলেছেন — **“যার অন্তরে এক কণামাত্র অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”** *(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৯১)* 🌿 🌸 দুনিয়ার সামান্য অহংকারও আখিরাতে চিরকালীন বঞ্চনার কারণ হতে পারে। 🌿 তাই “আরাফের মানুষরা” কঠিন সত্য উচ্চারণ করবে — “তোমাদের গর্ব, অহংকার, ও অনুসারীরা আজ কিছুই করতে পারছে না!”

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • আল্লাহর সামনে দুনিয়ার মর্যাদা, ক্ষমতা, ও সংখ্যা কোনো মূল্য রাখে না।
  • যারা সত্যকে অহংকারে অস্বীকার করেছিল, তারা পরকালে সর্বাধিক লাঞ্ছিত হবে।
  • কিয়ামতের দিন “চেহারা” হবে মানুষের আমলের সাক্ষ্য।
  • অহংকারই সেই আগুন, যা শয়তানকে জান্নাত থেকে দূরে রেখেছিল।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ জিতে ফেলার গর্ব করে, কিন্তু যখন বিচার হয়, দেখা যায় — তার সব শক্তি অবৈধ পথে ব্যবহার হয়েছে, আর শেষমেশ সে শৃঙ্খলবদ্ধ বন্দী। তেমনি হবে কিয়ামতের দিন অহংকারীদের পরিণতি। 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • অহংকার ও দলীয় গর্ব মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।
  • সত্যের পথে কখনো অহংকার নিয়ে দাঁড়ানো যায় না।
  • প্রকৃত মর্যাদা কেবল বিনয় ও ঈমানের মধ্যে।
  • আল্লাহর সামনে সবাই সমান — কেউ সংখ্যা বা সম্পদ দিয়ে বাঁচতে পারবে না।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلْأَعْرَافِ رِجَالًۭا يَعْرِفُونَهُم بِسِيمَـٰهُمْ قَالُوا۟ مَآ أَغْنَىٰ عَنكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ”** 🤍 — “আরাফের মানুষরা জাহান্নামবাসীদের চিনে ডাকবে — ‘তোমাদের দলবদ্ধতা ও অহংকার আজ তোমাদের কোনো উপকারে এল না!’” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **অহংকার, সংখ্যা বা ক্ষমতা নয় — মুক্তির একমাত্র উপায় হলো বিনয়, ঈমান ও সৎকর্ম।** 🌿🤍
আয়াত ৪৯
أَهَـٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحْمَةٍۭ ۚ ٱدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَآ أَنتُمْ تَحْزَنُونَ
আহা-উলাইল্লাযীনা আকসামতুম লা ইয়ানালুহুমুল্লাহু বিরাহমাহ, উদখুলুল জান্নাতা, লা খাওফুন ‘আলাইকুম, ওয়ালা আনতুম তাহযানুন।
“(আরাফের লোকেরা বলবে) — ‘এরা কি সেই লোক নয়, যাদের সম্পর্কে তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ কখনো তাদের প্রতি দয়া করবেন না?’ (তখন আল্লাহর আদেশ আসবে) — ‘প্রবেশ করো জান্নাতে! তোমাদের উপর কোনো ভয় নেই, এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না।’” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি এমন এক মুহূর্ত বর্ণনা করে যখন **আল্লাহর দয়া প্রকাশ পাবে তাদের জন্য**, যাদের পৃথিবীতে তুচ্ছ করা হয়েছিল, কিন্তু আজ আল্লাহ তাদের সম্মানিত করবেন। এটি এক মহিমান্বিত দৃশ্য — যেখানে “আরাফের মানুষরা” আল্লাহর রহমতের সাক্ষী হবে। 🌸

১️⃣ “أَهَـٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحْمَةٍۭ” —
“এরা কি সেই লোক নয়, যাদের সম্পর্কে তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ কখনো তাদের প্রতি দয়া করবেন না?”
🌿 এখানে বলা হচ্ছে সেই মুমিনদের কথা, যাদেরকে দুনিয়ায় ধনী ও অহংকারী লোকেরা তুচ্ছ করেছিল। তারা বলত — “এরা গরীব, দুর্বল, অশিক্ষিত — আল্লাহ এদের ভালোবাসবেন না।” 🌸 কিন্তু আজ দেখা গেল, আল্লাহ ঠিক তাদেরকেই সম্মানিত করেছেন, আর সেই অহংকারীদেরকে করেছেন লাঞ্ছিত। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আমি পৃথিবীতে নম্রদের উত্তরাধিকারী করব।”** *(সূরা আল-কাসাস ২৮:৫)* 🌿 🌿 এটি আল্লাহর ন্যায়বিচারের এক অলৌকিক ঘোষণা — যে দুনিয়ায় ছোট ছিল, আল্লাহর কাছে সে-ই আজ বড়।

২️⃣ “ٱدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ” —
“প্রবেশ করো জান্নাতে।”
🌸 এই বাক্যটি আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার চূড়ান্ত প্রতিফলন। “আরাফের মানুষরা” এতক্ষণ জান্নাতের বাইরে ছিল, এখন আল্লাহর আদেশে তাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। 🌿 তারা শুনবে সেই মধুর আহ্বান — **“উদখুলুল জান্নাহ” — প্রবেশ করো জান্নাতে।** এটি এমন এক বাক্য, যা শুনেই সব ক্লান্তি ও অপেক্ষা দূর হয়ে যাবে। 📖 কুরআনে আল্লাহ বলেন — **“তাদের প্রতি বলা হবে — প্রবেশ করো জান্নাতে শান্তিসহ।”** *(সূরা ইয়াসীন ৩৬:৫৮)* 🌸 🌿 এটি সেই মুহূর্ত, যখন আশা বাস্তবে রূপ নেবে, আর অপেক্ষা পরিণত হবে চিরস্থায়ী আনন্দে।

৩️⃣ “لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَآ أَنتُمْ تَحْزَنُونَ” —
“তোমাদের উপর কোনো ভয় নেই, এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না।”
🌿 এই বাক্যটি জান্নাতবাসীদের প্রতি আল্লাহর প্রতিশ্রুতি — সেখানে নেই কোনো ভয়, নেই কোনো অশ্রু, নেই কোনো দুঃখ। অতীতের কষ্ট, অপেক্ষা, বঞ্চনা — সব শেষ। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তারা সেখানে দুঃখভোগ করবে না, বরং থাকবে চিরস্থায়ী শান্তিতে।”** *(সূরা আল-ওয়াকিয়াহ ৫৬:৮৯)* 🌿 🌸 এটি হলো “রহমতের পুরস্কার” — যেখানে আল্লাহ নিজেই জান্নাতবাসীদের শান্তির আশ্বাস দেবেন।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • দুনিয়ায় তুচ্ছ বা দুর্বল মনে করা মানুষরাই আল্লাহর নিকটে সম্মানিত।
  • আল্লাহর দয়া সবকিছুকে অতিক্রম করে — এমনকি অপেক্ষমাণদেরও জান্নাতে স্থান দেয়।
  • জান্নাতে প্রবেশের আহ্বান হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি।
  • ভয় ও দুঃখহীন জীবনই জান্নাতের প্রকৃত সংজ্ঞা।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক পরীক্ষার্থী বহু অপেক্ষার পর ফলাফলে দেখে — “তুমি সফল!” তার চোখে জল আসে আনন্দে, ঠিক তেমনি হবে জান্নাতের দ্বারে দাঁড়ানো “আরাফের মানুষদের” অনুভূতি 🌿🤍

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • মানুষের দৃষ্টিতে ছোট হওয়া মানে আল্লাহর কাছে ছোট হওয়া নয়।
  • আল্লাহ কাউকে তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত করেন না, যদি তার হৃদয়ে ঈমান থাকে।
  • অপেক্ষার শেষে আল্লাহর পুরস্কার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
  • জান্নাতের প্রকৃত সুখ হলো — “আর কোনো ভয় নেই, আর কোনো দুঃখ নেই।”

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَهَـٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحْمَةٍۭ ٱدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَآ أَنتُمْ تَحْزَنُونَ”** 🤍 — “এরা সেই লোক, যাদের সম্পর্কে তোমরা বলেছিলে আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করবেন না। (কিন্তু আজ বলা হচ্ছে) প্রবেশ করো জান্নাতে — তোমাদের উপর কোনো ভয় নেই, এবং তোমরা দুঃখিত হবে না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর দয়া কখনো সীমাবদ্ধ নয়; যে বিনয়ী ও ঈমানদার, একদিন আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন।** 🌿🤍
আয়াত ৫০
وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ أَصْحَـٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا۟ عَلَيْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ ۚ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ
ওয়া নাদা আসহাবান্‌-নারি আসহাবাল জান্নাহ, আন আফীযূ ‘আলাইনা মিনাল মাআ’ই আও মিম্মা রাযাকাকুমুল্লাহ, কালু ইন্নাল্লাহা হার্‌রামাহুমা ‘আলাল কাফিরীন।
“আর জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডাকবে — ‘আমাদের ওপর একটু পানি ঢেলে দাও, বা আল্লাহ তোমাদের যেসব রিজিক দিয়েছেন, তার কিছু দাও।’ তখন তারা বলবে — ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এগুলো কাফেরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’” 🌿🔥
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি এমন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের বর্ণনা করে, যেখানে জাহান্নামের তাপ, তৃষ্ণা ও হতাশা তাদেরকে অসহায় করে তুলবে। তারা জান্নাতবাসীদের দিকে তাকিয়ে সাহায্য চাইবে — কিন্তু তখন আর কোনো সাহায্য পাওয়া সম্ভব হবে না। 😢

১️⃣ “وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ أَصْحَـٰبَ ٱلْجَنَّةِ” —
“আর জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডাকবে।”
🌿 আগের আয়াতগুলোতে জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদেরকে ডেকেছিল — এখন দৃশ্য উল্টে গেছে। আগুনে পুড়ে তৃষ্ণার্ত জাহান্নামবাসীরা জান্নাতের দিকে চিৎকার করে বলবে, “হে জান্নাতবাসীরা! আমাদের প্রতি একটু দয়া করো!” 📖 আল্লাহ বলেন — **“তারা আগুনে চিৎকার করবে — হে আমাদের প্রভু! আমাদের শাস্তি কিছুটা লাঘব কর।”** *(সূরা ফাতির ৩৫:৩৭)* 🌿 🌸 এটি সেই সময়, যখন তাদের হৃদয় অনুতাপ ও অসহায়তায় ভরে যাবে।

২️⃣ “أَنْ أَفِيضُوا۟ عَلَيْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ” —
“আমাদের ওপর একটু পানি ঢেলে দাও।”
🌿 তারা জাহান্নামের আগুনে পুড়ে তৃষ্ণায় মরবে, কিন্তু কোনো পানি পাবে না। জান্নাতের ঠান্ডা পানির দিকে তাকিয়ে তাদের হৃদয় কাঁদবে। 🌸 দুনিয়ায় যারা আল্লাহর বাণী উপেক্ষা করেছিল, আজ তারা এক ফোঁটা পানির জন্য মিনতি করবে — কিন্তু তাদের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যাত হবে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তাদের তৃষ্ণা এত প্রবল হবে যে, তারা ফুটন্ত পানিও পান করতে চাইবে — কিন্তু তা তাদের অন্তর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে।”** *(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৫)* 🌿

৩️⃣ “أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ” —
“অথবা আল্লাহ তোমাদের যেসব রিজিক দিয়েছেন, তার কিছু দাও।”
🌿 তারা জান্নাতবাসীদের কাছে জান্নাতের ফল, খাদ্য ও নিয়ামতের প্রার্থনা করবে। কিন্তু জান্নাতের প্রতিটি নিয়ামত আল্লাহ শুধুমাত্র ঈমানদারদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। 🌸 আল্লাহর দেয়া রিজিক শুধু শরীরের নয়, বরং আত্মার খাদ্যও — আর কুফরি সেই আত্মাকে চিরকাল ক্ষুধার্ত রাখে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য থাকবে জান্নাতের রিজিক।”** *(সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১৯)* 🌿

৪️⃣ “قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ” —
“তখন তারা বলবে — নিশ্চয়ই আল্লাহ এগুলো কাফেরদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।”
🌿 জান্নাতবাসীরা তাদের জবাবে স্পষ্টভাবে বলবে — “তোমরা দুনিয়ায় কুফরি করেছিলে, অহংকার করেছিলে, আল্লাহর বাণী অস্বীকার করেছিলে — তাই আজ জান্নাতের রিজিক তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ।” 🌸 এটি কোনো কঠোরতা নয়, বরং ন্যায়বিচার — কারণ জান্নাত তাদের জন্য, যারা দুনিয়ায় বিনয় ও ঈমানের পথে ছিল। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আজ তোমাদেরকে এমনভাবে ভুলে যাওয়া হবে, যেমন তোমরা দুনিয়ায় তোমার প্রভুকে ভুলে গিয়েছিলে।”** *(সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১৪)* 🌿

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • জাহান্নামে থাকবে তীব্র তৃষ্ণা, অথচ পানি থাকবে জান্নাতেই।
  • দুনিয়ার অবাধ ভোগ আসলে আখিরাতের বঞ্চনার সূচনা।
  • আল্লাহর দয়া চাওয়া তখনই ফলপ্রসূ, যখন দুনিয়ায় তাঁর পথে থাকা হয়।
  • কুফরি মানুষকে শুধু দুনিয়ায় নয়, চিরকালের বঞ্চনায় ফেলে দেয়।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ জীবনে একটিও দান করেনি, তবু শেষে সাহায্য চায় — কিন্তু তখন আর কেউ তাকে সাহায্য করতে পারে না। তেমনি জাহান্নামবাসীরা সাহায্য চাইবে, কিন্তু জান্নাতের দরজা তখন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহর রহমত লাভ করতে হলে আজই তাঁর পথে ফিরে আসা জরুরি।
  • আজ যে জান্নাতের দিকে তাকাতে চায়, কাল তাকেই জান্নাত ডাকবে।
  • কুফরি ও অহংকার মানুষকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যেখানে অনুরোধও ব্যর্থ হয়।
  • আল্লাহর নিয়ামত কখনো অযোগ্যদের জন্য নয় — এটি ঈমানের ফল।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَنَادَىٰٓ أَصْحَـٰبُ ٱلنَّارِ أَصْحَـٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا۟ عَلَيْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ ۚ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ”** 🤍 — “জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদের বলবে — আমাদের ওপর কিছু পানি ঢেলে দাও, বা আল্লাহ তোমাদের যেসব দিয়েছেন তার কিছু দাও। তারা বলবে — আল্লাহ এগুলো কাফেরদের জন্য হারাম করেছেন।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আজ যদি আমরা আল্লাহর পথে ফিরি, তবে কাল জান্নাত আমাদের ডাক দেবে; আর যদি মুখ ফিরিয়ে নিই, তবে চিরতৃষ্ণার আগুন হবে পরিণতি।** 🌿🤍
আয়াত ৫১
ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ دِينَهُمْ لَهْوًۭا وَلَعِبًۭا وَغَرَّتْهُمُ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا ۚ فَٱلْيَوْمَ نَنسَىٰهُمْ كَمَا نَسُوا۟ لِقَآءَ يَوْمِهِمْ هَـٰذَا وَمَا كَانُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا يَجْحَدُونَ
আল্লাযীনত্তাখাযূ দীনাহুম লাহ্‌ওয়ান্‌ ওয়া লা‘ইবান্‌, ওয়া ঘাররাত্‌হুমুল হায়াতুদ্‌দুনিয়া, ফাল্‌ইয়াওমা নানসাহুম কামা নাসূ লিকাআ’ ইয়াওমিহিম হাজা, ওয়া মা কানু বিআয়াতিনা ইয়াজহাদুন।
“যারা তাদের ধর্মকে খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদের বস্তু বানিয়েছিল, আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল — আজ আমি তাদের ভুলে যাব, যেমন তারা আজকের এই দিনের সাক্ষাৎ ভুলে গিয়েছিল, এবং তারা আমাদের নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল।” 🌿🔥
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা জান্নাত ও জাহান্নামের সংলাপের পর স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করছেন, কেন জাহান্নামবাসীরা সেই ভয়াবহ শাস্তির যোগ্য হলো। তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছিল — কারণ তারা **দ্বীনকে উপহাসে পরিণত করেছিল** এবং **দুনিয়ার মোহে ডুবে গিয়েছিল**। 🌸

১️⃣ “ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ دِينَهُمْ لَهْوًۭا وَلَعِبًۭا” —
“যারা তাদের ধর্মকে খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদের বস্তু বানিয়েছিল।”
🌿 অর্থাৎ, তারা দ্বীনের প্রতি গুরুত্ব দেয়নি; নামাজ, রোযা, কুরআন — সবকিছুকে তুচ্ছ মনে করত, দ্বীনের আলোচনা তাদের কাছে ছিল বিনোদনের মতো। 🌸 কেউ হাসাহাসি করত ইসলাম নিয়ে, কেউ বিতর্ক করত অহংকারে, আবার কেউ দ্বীনের বিধানকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের উপকরণ বানাতো। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যখন তারা আমার নিদর্শন শুনত, তারা উপহাস করত।”** *(সূরা আল-মুতাফ্ফিফীন ৮৩:৩১)* 🌿 🌿 এরা ছিল সেই মানুষ, যারা দ্বীনকে বিনোদনে পরিণত করে নিজেরাই বিভ্রান্ত হয়েছে।

২️⃣ “وَغَرَّتْهُمُ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا” —
“আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছিল।”
🌿 অর্থাৎ, তারা দুনিয়ার চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে পড়েছিল — অর্থ, সম্পদ, পদ-মর্যাদা, ভোগবিলাস — সবকিছুই তাদের মনে আখিরাতের স্থান কেড়ে নিয়েছিল। 🌸 তারা ভাবত, দুনিয়াই স্থায়ী; তাই নামাজ, তাওবা, ইবাদত তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল। 📖 আল্লাহ বলেন — **“দুনিয়ার জীবন কেবল ছলনা ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।”** *(সূরা আলে ইমরান ৩:১৮৫)* 🌿 🌿 দুনিয়া তাদের চোখে আলো ফেলে তাদের অন্তর অন্ধ করে দিয়েছিল।

৩️⃣ “فَٱلْيَوْمَ نَنسَىٰهُمْ كَمَا نَسُوا۟ لِقَآءَ يَوْمِهِمْ هَـٰذَا” —
“আজ আমি তাদের ভুলে যাব, যেমন তারা আজকের এই দিনের সাক্ষাৎ ভুলে গিয়েছিল।”
🌸 কতটা কঠিন বাক্য — আল্লাহ নিজেই বলছেন, “আজ আমি তাদের ভুলে যাব।” অর্থাৎ, আজ আমি তাদের প্রতি দয়া, সাহায্য ও মনোযোগ থেকে বিরত থাকব, যেমন তারা দুনিয়ায় আল্লাহকে, আখিরাতকে, ও হিসাবের দিনকে ভুলে গিয়েছিল। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তুমি তাদের ছেড়ে দাও, যারা এই জীবনকে ভালোবেসেছে ও আখিরাত ভুলে গেছে।”** *(সূরা আন-নাজম ৫৩:২৯)* 🌿 🌿 আল্লাহ কাউকে ভুলে যান না; বরং এটি এক রূপক — তারা নিজেরাই আল্লাহর দয়া থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে।

৪️⃣ “وَمَا كَانُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا يَجْحَدُونَ” —
“আর তারা আমাদের নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করত।”
🌿 তারা কুরআনের আয়াত শুনেও বলত — “এটা তো গল্প”, রাসূল ﷺ–এর হাদীস শুনেও বলত — “এটা মানব রচিত কথা।” তারা সত্য দেখেও অস্বীকার করেছিল, আলো দেখেও অন্ধ থাকার ভান করেছিল। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তারা সত্যকে মিথ্যা বলেছিল, অথচ তা স্পষ্ট ছিল।”** *(সূরা আন-নামল ২৭:১৪)* 🌿 🌸 তাই আজ তাদের অস্বীকারের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাদের দয়া থেকে বঞ্চিত করেছেন।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • যে দ্বীনকে উপহাস করে, সে আসলে নিজের ধ্বংসকে ডেকে আনে।
  • দুনিয়ার চাকচিক্য মানুষকে প্রতারণা করে আখিরাত থেকে অন্ধ করে দেয়।
  • আল্লাহর দয়া তাদের জন্য, যারা আখিরাত ভুলে যায় না।
  • আল্লাহর “ভুলে যাওয়া” মানে — দয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া, যা সবচেয়ে কঠিন শাস্তি।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন কেউ পরীক্ষার দিনে হাসি-ঠাট্টায় সময় কাটায়, পড়াশোনা না করে অন্যদের নিয়ে মজা করে, কিন্তু ফলাফলের দিনে দেখে — সে ফেল করেছে, আর সফলরা এগিয়ে গেছে। ঠিক তেমনি দুনিয়ায় দ্বীনকে উপহাসকারীদের জন্য হবে আখিরাতে লাঞ্ছনা। 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • দ্বীন কোনো বিনোদন নয়; এটি আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি।
  • দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, তাই আখিরাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
  • আল্লাহর কথা উপহাস করা মানে নিজের পরিণতি নিজে নির্ধারণ করা।
  • যে আজ আল্লাহকে ভুলে যায়, কাল আল্লাহও তাকে “ভুলে যাবেন”।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ دِينَهُمْ لَهْوًۭا وَلَعِبًۭا وَغَرَّتْهُمُ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا فَٱلْيَوْمَ نَنسَىٰهُمْ كَمَا نَسُوا۟ لِقَآءَ يَوْمِهِمْ هَـٰذَا”** 🤍 — “যারা তাদের ধর্মকে খেলাধুলায় পরিণত করেছিল এবং দুনিয়ায় প্রতারিত হয়েছিল, আজ আমি তাদের ভুলে যাব, যেমন তারা আজকের এই দিনকে ভুলে গিয়েছিল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী খেলা, কিন্তু দ্বীন হলো চিরস্থায়ী সত্য। তাই যে আল্লাহকে স্মরণ করে বাঁচে, আল্লাহও তাকে কখনো ভুলে যান না।** 🌿🤍
আয়াত ৫২
وَلَقَدْ جِئْنَـٰهُم بِكِتَـٰبٍۢ فَصَّلْنَـٰهُ عَلَىٰ عِلْمٍۢ هُدًۭى وَرَحْمَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ
ওয়ালাকাদ্‌ জি’নাহুম বিখিতাবিন্‌ ফাসসালনাহু ‘আলা ইল্‌মিন, হুদাঁও ওয়া রাহমাতাল্লি কওমিইউ’মিনুন।
“আমি তো তাদের কাছে এমন একটি কিতাব পৌঁছে দিয়েছি, যা আমি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছি পূর্ণ জ্ঞানের সঙ্গে — এটি পথনির্দেশ ও রহমত তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে।” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছিলেন — যারা দ্বীনকে উপহাসে পরিণত করে, তারা কিয়ামতের দিনে ভুলে যাওয়া হবে। আর এই আয়াতে আল্লাহ জানাচ্ছেন — তারা কোনো অজুহাত দেখাতে পারবে না, কারণ **আল্লাহ ইতোমধ্যে তাদের কাছে কুরআন প্রেরণ করেছেন**, যা পরিপূর্ণ জ্ঞানে, যুক্তিতে ও রহমতে ভরপুর। 🌸

১️⃣ “وَلَقَدْ جِئْنَـٰهُم بِكِتَـٰبٍۢ” —
“আমি তো তাদের কাছে কিতাব পৌঁছে দিয়েছি।”
🌿 এখানে “কিতাব” বলতে বোঝানো হয়েছে **আল-কুরআনুল কারীম** — যা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ ওহি। আল্লাহ বলছেন, “আমরা তাদের কাছে এমন একটি কিতাব পাঠিয়েছি, যাতে আছে সকল পথের দিকনির্দেশ।” 📖 আল্লাহ বলেন — **“এটি এমন একটি কিতাব, যার কোনো সন্দেহ নেই — এটি মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:২)* 🌿 🌸 অর্থাৎ, আল্লাহ মানুষকে একা ছেড়ে দেননি; বরং পথনির্দেশের জন্য দিয়েছেন তাঁর পবিত্র কিতাব।

২️⃣ “فَصَّلْنَـٰهُ عَلَىٰ عِلْمٍۢ” —
“আমি সেটিকে ব্যাখ্যা করেছি পূর্ণ জ্ঞানের সঙ্গে।”
🌿 অর্থাৎ, এই কুরআনের প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি শব্দ আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও হিকমতের ভিত্তিতে অবতীর্ণ। এটি শুধু একটি ধর্মীয় বই নয় — বরং জীবন, সমাজ, নীতি, ন্যায়, ও আখিরাতের পূর্ণ নির্দেশিকা। 📖 আল্লাহ বলেন — **“এটি এমন এক কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বিশদ করা হয়েছে।”** *(সূরা হুদ ১১:১)* 🌿 🌸 কুরআন শুধু পড়ার জন্য নয়, বরং বোঝা, অনুসরণ ও জীবনে প্রয়োগের জন্য নাযিল হয়েছে।

৩️⃣ “هُدًۭى وَرَحْمَةًۭ” —
“এটি হিদায়াত ও রহমত।”
🌿 কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে দুইটি বড় উপহার — (১) **হিদায়াত** — অর্থাৎ সঠিক পথের দিশা, (২) **রহমত** — অর্থাৎ আত্মার প্রশান্তি, শান্তি ও মুক্তি। 🌸 যারা কুরআনের আলোয় চলে, তারা পথ হারায় না এবং অন্তরে পায় আল্লাহর প্রশান্তি। 📖 আল্লাহ বলেন — **“এই কুরআন মুমিনদের জন্য দিকনির্দেশ ও দয়া।”** *(সূরা আন-নাহল ১৬:৬৪)* 🌿 🌿 কুরআন যেমন পথ দেখায়, তেমনি আত্মাকে নরম করে ও মনকে শুদ্ধ করে।

৪️⃣ “لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ” —
“যারা ঈমান আনে।”
🌿 কুরআনের হিদায়াত ও রহমত কেবল তাদের জন্য, যারা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে, বিনয় ও শ্রদ্ধায় তার সামনে মাথা নত করে। 🌸 যারা অহংকারে অস্বীকার করে, তারা কুরআন শুনেও কিছুই বুঝতে পারে না। কিন্তু যারা হৃদয় খোলে, তাদের কাছে প্রতিটি আয়াত এক এক দীপ্তি হয়ে আসে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“এই কুরআন হৃদয়বানদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শিফা (আরোগ্য)।”** *(সূরা ইউনুস ১০:৫৭)* 🌿 🌿 অর্থাৎ, ঈমানই কুরআনের আলোকে গ্রহণ করার দরজা খুলে দেয়।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • কুরআন শুধুমাত্র পাঠের জন্য নয়, বরং জীবন পরিচালনার জন্য নাযিল হয়েছে।
  • এটি আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
  • কুরআন ঈমানদারদের জন্য একদিকে পথনির্দেশ, অন্যদিকে আল্লাহর রহমত।
  • অবিশ্বাসীরা কুরআনের আলো থেকেও অন্ধকারে থেকে যায়।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন মানুষ অন্ধকারে হাঁটছে, আর তার হাতে আছে এক উজ্জ্বল বাতি — যদি সে বাতিটি জ্বালায়, সে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাবে; কিন্তু যদি সে সেটি নিভিয়ে রাখে, সে নিজের ধ্বংস ডেকে আনবে। ঠিক তেমনি কুরআনও আমাদের জীবনের সেই আলো। 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • কুরআন পড়ো, বুঝো, এবং জীবনে প্রয়োগ করো — এটাই মুক্তির পথ।
  • কুরআনের আলো থেকে দূরে থাকা মানে নিজের জীবনকে অন্ধকারে ফেলা।
  • আল্লাহর জ্ঞানে রচিত কুরআনই হলো একমাত্র নির্ভুল দিকনির্দেশনা।
  • ঈমানদাররাই কুরআনের প্রকৃত রহমত অনুভব করে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَقَدْ جِئْنَـٰهُم بِكِتَـٰبٍۢ فَصَّلْنَـٰهُ عَلَىٰ عِلْمٍۢ هُدًۭى وَرَحْمَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ”** 🤍 — “আমি তাদের কাছে এমন একটি কিতাব দিয়েছি, যা আমি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছি পূর্ণ জ্ঞানের সঙ্গে — এটি পথনির্দেশ ও রহমত ঈমানদারদের জন্য।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **কুরআন শুধুমাত্র পাঠের নয়, বরং জীবনের দিকনির্দেশ। যে কুরআনের আলো গ্রহণ করে, তার জীবন কখনো অন্ধকারে থাকে না।** 🌿🤍
আয়াত ৫৩
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا تَأْوِيلَهُۥ ۚ يَوْمَ يَأْتِى تَأْوِيلُهُۥ يَقُولُ ٱلَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَآءَ فَيَشْفَعُوا۟ لَنَا أَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ ٱلَّذِى كُنَّا نَعْمَلُ قَدْ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ
হাল্‌ ইয়ানযুরূনা ইল্লা তাওইলাহু, ইয়াওমা ইয়াতি তাওইলুহু, ইয়াকুলুল্লাযীনা নাসুহু মিন কাবলু, কাদ্‌ জা’আত্‌ রুসুলু রব্বিনা বিল্‌হাক্ক, ফাহাল্‌ লানা মিন্‌ শুফা‘আ’ ফাইয়াশফা‘উ লানা, আও নুরাদ্দু ফা না‘মালা গাইরাল্লাযী কুন্না না‘মাল, কাদ্‌ খাসিরু আনফুসাহুম, ওয়া দল্লা ‘আনহুম মা কানু ইয়াফতারুন।
“তারা কি কুরআনের বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই অপেক্ষা করছে? যেদিন তার বাস্তবায়ন (ফলাফল) উপস্থিত হবে, সেদিন যারা আগে একে ভুলে গিয়েছিল, তারা বলবে — ‘নিশ্চয়ই আমাদের প্রভুর রসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন।’ কিন্তু আজ কি আমাদের কোনো সুপারিশকারী আছে, যারা আমাদের জন্য সুপারিশ করবে? অথবা আমাদের আবার ফেরত পাঠানো যায় কি, যাতে আমরা পূর্বের কাজের পরিবর্তে সৎকর্ম করতে পারি?’ — কিন্তু তারা নিজেদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, এবং যা তারা মিথ্যা উদ্ভাবন করত, তা তাদের থেকে বিলীন হয়ে যাবে।” 🌿😢
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনের সেই ভয়ংকর মুহূর্তের চিত্র তুলে ধরেছেন — যখন অবিশ্বাসীরা কুরআনের প্রতিশ্রুত সব সত্য নিজেদের চোখে দেখতে পাবে। তখন তারা অনুতাপে কাঁদবে, সাহায্য চাইবে, ফিরে যেতে চাইবে… কিন্তু তখন আর কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। 😔

১️⃣ “هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا تَأْوِيلَهُۥ” —
“তারা কি কুরআনের বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই অপেক্ষা করছে?”
🌿 অর্থাৎ, তারা কুরআনের সতর্কবার্তা শুনেও হেলাফেলা করেছে। যেন বলছে — “দেখি তো, কী হয়!” তারা কিয়ামতের ব্যাপারে ঠাট্টা করেছে, অবিশ্বাস করেছে, অথচ আল্লাহর ওহি কখনো মিথ্যা হতে পারে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তারা কিয়ামতকে মিথ্যা বলে, অথচ তা হঠাৎ এসে যাবে।”** *(সূরা আন-নাহল ১৬:৭৭)* 🌿 🌸 আজ যারা কুরআনকে অবহেলা করে, একদিন সেই কুরআনের সত্যতা তাদের চোখে আগুনের মতো প্রমাণিত হবে।

২️⃣ “يَوْمَ يَأْتِى تَأْوِيلُهُۥ” —
“যেদিন তার বাস্তবায়ন (ফলাফল) উপস্থিত হবে।”
🌿 এই দিনটি হলো **কিয়ামতের দিন** — যখন কুরআনে যা প্রতিশ্রুত ছিল, সব বাস্তবে রূপ নেবে। জান্নাত হবে দৃশ্যমান, জাহান্নাম প্রজ্জ্বলিত, ফেরেশতারা উপস্থিত, আর আল্লাহর বিচার শুরু হবে। 🌸 তখন কোনো অস্বীকারকারীর মুখে যুক্তি থাকবে না। কারণ প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি সতর্কবার্তা তখন বাস্তব প্রমাণ হয়ে যাবে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যেদিন সবকিছু প্রকাশিত হবে, সেদিন সত্য মিথ্যা থেকে আলাদা হয়ে যাবে।”** *(সূরা আল-হাক্কাহ ৬৯:১৮)* 🌿

৩️⃣ “يَقُولُ ٱلَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ” —
“যারা একে ভুলে গিয়েছিল, তারা বলবে — ‘নিশ্চয়ই আমাদের প্রভুর রসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন।’”
🌿 তারা তখন স্বীকার করবে যে রাসূলগণ সত্যবাদী ছিলেন। কিন্তু এই স্বীকারোক্তি হবে অনুতাপের কণ্ঠে, যখন আর কোনো সুযোগ অবশিষ্ট থাকবে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যেদিন মৃত্যু আসবে, তারা বলবে: হে আমাদের প্রভু, আমাদের ফিরিয়ে দাও, আমরা ভালো কাজ করব।”** *(সূরা আল-মুমিনুন ২৩:৯৯–১০০)* 🌿 🌸 কিন্তু এই স্বীকারোক্তি হবে অর্থহীন — কারণ “আখিরাতের দরজা” তখন বন্ধ হয়ে যাবে।

৪️⃣ “فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَآءَ فَيَشْفَعُوا۟ لَنَا أَوْ نُرَدُّ” —
“তখন তারা বলবে — আমাদের কি কোনো সুপারিশকারী আছে, অথবা আমরা কি আবার ফেরত যেতে পারি?”
🌿 জাহান্নামের শাস্তি দেখে তারা আশা করবে কেউ যেন তাদের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু সেই দিন **সুপারিশ শুধু ঈমানদারদের জন্যই অনুমোদিত** হবে। 🌸 তারা অনুরোধ করবে — “হে আল্লাহ! আমাদের দুনিয়ায় ফেরত পাঠাও, এবার আমরা ভালো কাজ করব।” কিন্তু তখন আল্লাহর উত্তর হবে — **“না, আজ আর ফিরে যাওয়া নেই।”** 📖 আল্লাহ বলেন — **“যদি তারা ফিরেও যায়, তারা আবার আগের মতোই করবে।”** *(সূরা আল-আন‘আম ৬:২৮)* 🌿

৫️⃣ “قَدْ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ” —
“তারা নিজেদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”
🌿 এটাই আসল ক্ষতি — সম্পদ হারানো নয়, সম্মান হারানো নয়, বরং **আত্মা হারানো, চিরকালীন মুক্তি হারানো।** 🌸 তারা দুনিয়ার জন্য সবকিছু করেছিল, কিন্তু আখিরাতের জন্য কিছুই করেনি — তাই আজ তারা নিজেরাই নিজের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“নিশ্চয়ই যারা নিজেদের ক্ষতি করে, তারাই প্রকৃত পরাজিত।”** *(সূরা আল-হাজ্জ ২২:১১)* 🌿

৬️⃣ “وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ” —
“আর যা তারা মিথ্যা উদ্ভাবন করত, তা তাদের থেকে বিলীন হয়ে যাবে।”
🌿 অর্থাৎ, তারা দুনিয়ায় মিথ্যা ভরসা বানিয়েছিল — “আমরা ধনী, প্রভাবশালী, দেবতারা আমাদের রক্ষা করবে।” কিন্তু আজ তাদের সেই সব কল্পিত উপাস্য, প্রিয়জন, সম্পদ — কিছুই কাজে আসবে না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“যাদের তারা আল্লাহর অংশীদার বানিয়েছিল, আজ তারা বলবে — আমরা তো তাদের চিনিই না।”** *(সূরা আল-কাসাস ২৮:৬৩)* 🌿 🌸 সব মিথ্যা আশা আজ উবে যাবে; শুধু থাকবে নিঃসঙ্গতা, অনুশোচনা, আর জাহান্নামের শীতল নীরবতা।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • কুরআনের সত্যতা অস্বীকারকারীরা একদিন নিজেরাই তার সত্যতা প্রমাণ দেখতে পাবে।
  • কিয়ামতের দিন অনুতাপ ও স্বীকারোক্তি কোনো উপকারে আসবে না।
  • দুনিয়ায় যে ঈমান রাখে, কেবল তার জন্যই সুপারিশ থাকবে।
  • সব মিথ্যা বিশ্বাস ও অহংকার সেই দিনে বিলীন হয়ে যাবে।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন একজন পরীক্ষার্থী পুরো বছর খেলাধুলায় কাটায়, আর পরীক্ষার দিনে এসে বলে — “আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও।” কিন্তু তখন সময় ফুরিয়ে গেছে, পরীক্ষা শেষ। তেমনি হবে কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের অবস্থা। 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • কুরআনের সতর্কতা বাস্তব — তাই আজই তা মানা ও অনুসরণ করা জরুরি।
  • কিয়ামতের অনুশোচনা কোনো ফল বয়ে আনবে না।
  • আজ যারা আল্লাহর পথে ফিরে আসে, কাল তাদের মুখ আলোকিত হবে।
  • আল্লাহর বার্তাকে অবহেলা করা মানে নিজের আত্মাকে ধ্বংস করা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“يَوْمَ يَأْتِى تَأْوِيلُهُۥ يَقُولُ ٱلَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ...”** 🤍 — “যেদিন কুরআনের বাস্তব ফলাফল প্রকাশ পাবে, সেদিন যারা একে ভুলে গিয়েছিল, তারা বলবে — ‘আমাদের প্রভুর রসূলগণ তো সত্য নিয়ে এসেছিলেন!’” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আজ যদি আমরা কুরআনকে আঁকড়ে ধরি, তবে কাল কিয়ামতের দিনে কুরআনই আমাদের পক্ষে সাক্ষী দেবে।** 🌿🤍
আয়াত ৫৪
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍۢ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ يُغْشِى ٱلَّيْلَ ٱلنَّهَارَ يَطْلُبُهُۥ حَثِيثًۭا وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتٍۭ بِأَمْرِهِۦٓ أَلَا لَهُ ٱلْخَلْقُ وَٱلْأَمْرُ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
ইন্না রব্বাকুমুল্লাহুল্লাযী খালাকাস্‌ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা ফি সিত্তাতি আয়্যাম, সুম্মাস্‌তাওয়া ‘আলাল আরশ, ইউগশিইল লায়লান নাহারা ইয়াতলুবুহু হাসীসা, ওয়াশ্‌শামসা ওয়াল্‌কামারা ওয়ান্‌নুজূমা মুসাখ্‌খারাতিন বিআমরিহি, আলা লাহুল খালকু ওয়াল আমর, তাবারাকাল্লাহু রব্বুল ‘আলামীন।
“নিশ্চয় তোমাদের প্রভু আল্লাহ — যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি রাতকে দিন দিয়ে আচ্ছাদিত করেন, যা দ্রুত তাকে অনুসরণ করে; সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রসমূহকে করেছেন তাঁর আদেশে নিয়ন্ত্রিত। জেনে রাখো! সৃষ্টি ও আদেশ — উভয়ই তাঁরই অধিকার। বরকতময় আল্লাহ, সমগ্র জগতের পালনকর্তা।” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন — “তোমাদের রব কে?” — সেই আল্লাহ, যিনি শুধু উপাস্য নন, বরং **পুরো মহাবিশ্বের স্রষ্টা, নিয়ন্ত্রক ও একক মালিক।** এ আয়াত আল্লাহর মহিমা, ক্ষমতা ও পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণের এক অসীম প্রতিচ্ছবি। 🌸

১️⃣ “إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍۢ” —
“নিশ্চয় তোমাদের প্রভু আল্লাহ, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে।”
🌿 এখানে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিশক্তির ঘোষণা দিচ্ছেন। “ছয় দিন” বলতে আল্লাহর জন্য দিন-রাতের মানে মানবিক সময় নয়; বরং ধাপে ধাপে, পরিকল্পিতভাবে — এক নিখুঁত ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং যা কিছু এর মধ্যে আছে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি।”** *(সূরা ক্বাফ ৫০:৩৮)* 🌿 🌸 এটি আল্লাহর প্রজ্ঞা ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের প্রতিফল — সৃষ্টিতে কোনো তাড়াহুড়ো নেই, বরং নিখুঁত পরিমিতি আছে।

২️⃣ “ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ” —
“তারপর তিনি আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।”
🌿 “আরশ” মানে আল্লাহর সর্বোচ্চ সিংহাসন — যা সমস্ত সৃষ্টির ঊর্ধ্বে, তাঁর ক্ষমতার কেন্দ্র। “ইস্তাওয়া ‘আলাল আরশ” অর্থ — **আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিজগতের উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।** 📖 কুরআনে এই বাক্য সাতবার এসেছে — যা আল্লাহর সর্বময় নিয়ন্ত্রণের নিদর্শন। 🌸 অর্থাৎ, সৃষ্টির পর আল্লাহ তাঁর রাজত্বে পূর্ণভাবে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছেন।

৩️⃣ “يُغْشِى ٱلَّيْلَ ٱلنَّهَارَ يَطْلُبُهُۥ حَثِيثًۭا” —
“তিনি রাতকে দিন দিয়ে আচ্ছাদিত করেন, যা দ্রুত তাকে অনুসরণ করে।”
🌿 আল্লাহর এক নিখুঁত ভারসাম্য — রাত ও দিন একে অপরকে অনুসরণ করছে চিরস্থায়ী নিয়মে। সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের প্রতিটি ঘূর্ণন আল্লাহর নির্দেশে ঘটে। 🌸 বিজ্ঞান আজ যা ব্যাখ্যা করে “rotation” ও “revolution” দ্বারা, কুরআন তা শত শত বছর আগেই ঘোষণা করেছে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“রাত ও দিন একে অপরের পশ্চাতে প্রবাহিত হয়।”** *(সূরা আলে ইমরান ৩:২৭)* 🌿 🌿 এই নিয়মিত চক্রই প্রমাণ করে — সৃষ্টিকর্তা আছেন, যিনি সবকিছু নির্ধারিতভাবে চালাচ্ছেন।

৪️⃣ “وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتٍۭ بِأَمْرِهِۦٓ” —
“সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রসমূহ তাঁর আদেশে নিয়ন্ত্রিত।”
🌿 সূর্য ওঠে, চাঁদ ঘোরে, তারা জ্বলে — সবকিছু নির্ধারিত পথে, আল্লাহর আদেশে। কোনো সূর্য কখনো তার কক্ষপথ অতিক্রম করে না, কোনো তারা অন্যের স্থান দখল করে না — এ এক নিখুঁত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। 📖 আল্লাহ বলেন — **“সূর্য ও চন্দ্র নির্ধারিত কক্ষপথে চলে।”** *(সূরা আর-রহমান ৫৫:৫)* 🌿 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — পৃথিবীর প্রতিটি জ্যোতিষ্কই আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন।

৫️⃣ “أَلَا لَهُ ٱلْخَلْقُ وَٱلْأَمْرُ” —
“জেনে রাখো! সৃষ্টি ও আদেশ — উভয়ই তাঁরই অধিকার।”
🌿 এটি এক ঐশী ঘোষণা — আল্লাহ শুধু সৃষ্টি করেছেন না, বরং তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন, আদেশ দেন, রিজিক দেন, জীবন ও মৃত্যু নির্ধারণ করেন। 🌸 সৃষ্টি (Creation) ও আদেশ (Command) — উভয়ই আল্লাহর হাতে; কেউ তাঁর সঙ্গে অংশীদার নয়। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তিনি আদেশ করেন, তিনি সৃষ্টি করেন; বরকতময় আল্লাহ।”** *(সূরা ইয়াসীন ৩৬:৮২–৮৩)* 🌿 🌿 এটি প্রমাণ করে — আল্লাহ একাই মালিক, বাকি সবকিছু তাঁর দাস।

৬️⃣ “تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَـٰلَمِينَ” —
“বরকতময় আল্লাহ, সমগ্র জগতের পালনকর্তা।”
🌿 এখানে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করা হয়েছে। “তাবারাকা” মানে — অসীম কল্যাণ, বরকত, শক্তি ও মহত্ত্বে ভরপুর। তিনি একাই “রব্বুল ‘আলামীন” — সকল সৃষ্টির পালনকর্তা। 📖 এই একই বাক্য কুরআনের প্রথম সূরা “আল-ফাতিহা”-তেও আছে — **“আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন।”** 🌿 🌸 অর্থাৎ, সকল প্রশংসা শুধু তাঁরই, কারণ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই তাঁর পরিকল্পনার অধীন।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা, অন্য কারও কোনো ক্ষমতা নেই।
  • রাত-দিনের চক্র, সূর্য-চন্দ্রের গতি — সবই আল্লাহর আদেশে চলে।
  • আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তা পরিচালনা করছেন।
  • যে আল্লাহ এত নিখুঁতভাবে মহাবিশ্ব পরিচালনা করেন, তিনি তোমার জীবনও জানেন।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক দক্ষ শিল্পী শুধু শিল্প সৃষ্টি করেন না, বরং সেটি রক্ষণাবেক্ষণও করেন — ঠিক তেমনি আল্লাহ শুধু সৃষ্টি করেননি, বরং প্রতিটি কণার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেন 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • প্রকৃতি ও বিশ্বজগত আল্লাহর ক্ষমতার জীবন্ত প্রমাণ।
  • রাত-দিন, সূর্য-চন্দ্রের নিয়মিততা আমাদের আল্লাহকে স্মরণ করায়।
  • আল্লাহই একমাত্র রব, তাঁরই আদেশে সবকিছু পরিচালিত হয়।
  • তাঁর প্রশংসায় ও কৃতজ্ঞতায় জীবন কাটানোই প্রকৃত ইবাদত।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَلَا لَهُ ٱلْخَلْقُ وَٱلْأَمْرُ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَـٰلَمِينَ”** 🤍 — “জেনে রাখো! সৃষ্টি ও আদেশ উভয়ই তাঁরই অধিকার। বরকতময় আল্লাহ, সমগ্র জগতের পালনকর্তা।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা, পরিচালক ও রব্ব। তিনি যেমন আকাশের নিয়ন্ত্রণ রাখেন, তেমনি আমাদের জীবনও তাঁরই হাতে।** 🌿🤍
আয়াত ৫৫
ٱدْعُوا۟ رَبَّكُمْ تَضَرُّعًۭا وَخُفْيَةًۭ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُعْتَدِينَ
উদ‘উ রাব্বাকুম তাদার্রু‘আঁ ওয়া খুফইয়াতান, ইন্নাহু লা ইউহিব্বুল মুআতাদীন।
“তোমরা তোমাদের প্রভুকে ডাকো বিনয়সহ ও গোপনে; নিশ্চয়ই তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজের সৃষ্টিশক্তি, রাজত্ব ও ক্ষমতার বর্ণনা দিয়েছিলেন। আর এখন তিনি আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, কীভাবে সেই মহান রবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয় — অর্থাৎ **“দোয়া” (প্রার্থনা)** এর মাধ্যমে। 🌸 এই আয়াত কুরআনের অন্যতম **সুন্দরতম দোয়ার শিক্ষা** দেয়।

১️⃣ “ٱدْعُوا۟ رَبَّكُمْ” —
“তোমরা তোমাদের প্রভুকে ডাকো।”
🌿 “উদ‘উ” অর্থ হলো — আহ্বান করো, ডাকো, প্রার্থনা করো। অর্থাৎ, আল্লাহ চান তুমি তাঁকে ডাকো, তোমার চাওয়া, তোমার দুঃখ, তোমার আশা সব কিছু তাঁর কাছে প্রকাশ করো। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তোমাদের প্রভু বলেছেন: আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব।”** *(সূরা গাফির ৪০:৬০)* 🌿 🌸 আল্লাহ দোয়া শুনেন, এমনকি নিঃশব্দ অশ্রুর শব্দও তাঁর কানে পৌঁছে যায়।

২️⃣ “تَضَرُّعًۭا” —
“বিনয়সহ।”
🌿 অর্থাৎ, হৃদয়ের গভীর বিনয়, নম্রতা ও আত্মসমর্পণের সঙ্গে আল্লাহকে ডাকতে হবে। গর্ব, অহংকার বা আনুষ্ঠানিকভাবে নয়; বরং এমনভাবে যেন আমরা সত্যিই তাঁর প্রয়োজন অনুভব করি। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তিনি সেইজন, যিনি কষ্টে পড়লে দোয়া করলে সাড়া দেন।”** *(সূরা আন-নামল ২৭:৬২)* 🌿 🌸 দোয়ার আসল সৌন্দর্য শব্দে নয়, বরং বিনম্র হৃদয়ে ও ভাঙা মনোভাবে।

৩️⃣ “وَخُفْيَةًۭ” —
“এবং গোপনে।”
🌿 অর্থাৎ, দোয়া করতে হবে **নিরবে, আন্তরিকভাবে, চোখে অশ্রু নিয়ে**, অন্যদের দেখানোর জন্য নয়, বরং শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। 🌸 এটি দোয়ার সর্বোত্তম রূপ — যখন কেউ জানে না তুমি কী চাচ্ছো, কিন্তু আল্লাহ জানেন তোমার হৃদয় কী বলছে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তিনি জানেন গোপন কথাও এবং আরও লুকানো বিষয়ও।”** *(সূরা ত্বা-হা ২০:৭)* 🌿 🌿 তাই দোয়া যত নিঃশব্দ হবে, ততই তা আন্তরিক হয়।

৪️⃣ “إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُعْتَدِينَ” —
“নিশ্চয়ই তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।”
🌿 আল্লাহ আমাদের শিখাচ্ছেন — দোয়াতেও যেন সীমা না লঙ্ঘন করি। যেমন: ❌ অযথা চাওয়া, ❌ অহংকারভরে দাবি করা, ❌ নিষিদ্ধ বিষয় চাওয়া, ❌ বা দোয়ায় অন্যের প্রতি অভিশাপ করা। 📖 রাসূল ﷺ বলেছেন — **“দোয়ায় বিনয় রাখো, কারণ তোমরা এমন এক সত্তার সঙ্গে কথা বলছো, যিনি শুনেন ও নিকটে আছেন।”** — *তিরমিযি, হাদিস: ৩৪৫২* 🌿 🌸 আল্লাহ ভালোবাসেন সেই দোয়াকে, যেখানে বিনয় আছে, অশ্রু আছে, আর অন্তরে আছে আল্লাহর প্রতি ভরসা।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • দোয়া হলো আল্লাহ ও বান্দার সরাসরি সংযোগ।
  • দোয়ার আসল শক্তি শব্দে নয়, বরং হৃদয়ের আন্তরিকতায়।
  • গোপনে করা দোয়া আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
  • দোয়ায় অহংকার বা বাড়াবাড়ি করা আল্লাহর অপছন্দ।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন সন্তান নিঃশব্দে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদে, তখন মা তার অশ্রু না দেখেও বোঝেন কী চাচ্ছে। ঠিক তেমনি, যখন তুমি নীরবে আল্লাহর কাছে কাঁদো, তখন আল্লাহ তোমার দোয়া শুনে সাড়া দেন 🌿🤍

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • আল্লাহকে ডাকো — প্রকাশ্যে নয়, অন্তরের নিঃশব্দে।
  • বিনয়, শ্রদ্ধা ও আত্মসমর্পণ দোয়ার মৌলিক শর্ত।
  • দোয়া করো এমনভাবে যেন তুমি সত্যিই তাঁর প্রয়োজন অনুভব করো।
  • অতিরিক্ত বা অন্যায় দোয়া করা আল্লাহর অপছন্দনীয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ٱدْعُوا۟ رَبَّكُمْ تَضَرُّعًۭا وَخُفْيَةًۭ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُعْتَدِينَ”** 🤍 — “তোমরা তোমাদের প্রভুকে ডাকো বিনয়সহ ও গোপনে; নিশ্চয়ই তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **দোয়া শুধু মুখের নয়, হৃদয়ের ভাষা। আর আল্লাহর দরবারে নরম চোখের অশ্রুই সবচেয়ে মূল্যবান দোয়া।** 🌿🤍
আয়াত ৫৬
وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَـٰحِهَا وَٱدْعُوهُ خَوْفًۭا وَطَمَعًا ۚ إِنَّ رَحْمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٌۭ مِّنَ ٱلْمُحْسِنِينَ
ওয়ালা তুফসিদূ ফিল আরদি বা‘দা ইসলা-হি-হা, ওয়াদ‘উহু খাওফাওঁ ওয়া তোমা‘আঁ, ইন্না রহমাতাল্লাহি কারীবুম্ মিনাল মুহসিনীন।
“পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না, তার সংস্কার সাধনের পর। আর তাঁকে ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে; নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সন্নিকটে তাদের জন্য, যারা সৎকর্মশীল।” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তাআলা আমাদের দোয়ার আদব শিখিয়েছিলেন — বিনয়, গোপনতা ও সীমা না লঙ্ঘনের শিক্ষা। আর এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন — শুধু মুখে দোয়া নয়, বরং জীবনে যেন আমাদের কাজও দোয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। 🌸 অর্থাৎ, **দোয়া করো আর পৃথিবীকে ঠিক রাখো — বিনাশ সৃষ্টি করো না।**

১️⃣ “وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَـٰحِهَا” —
“পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না, তার সংস্কার সাধনের পর।”
🌿 আল্লাহ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন পরিমিতভাবে — আকাশে ভারসাম্য, জমিনে শান্তি, সমাজে ন্যায়বিচার। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে, তখন এই ভারসাম্য নষ্ট হয়। 🌸 “ফাসাদ” বা অনর্থ মানে কেবল যুদ্ধ নয় — এটি অন্যায়, পাপ, লোভ, অহংকার, অন্যের অধিকার হরণ — যা পৃথিবীর শৃঙ্খলা নষ্ট করে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও জলে ফিতনা ছড়িয়ে পড়েছে।”** *(সূরা আর-রূম ৩০:৪১)* 🌿 🌿 তাই সত্যিকার ঈমানদার সেই ব্যক্তি, যে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।

২️⃣ “وَٱدْعُوهُ خَوْفًۭا وَطَمَعًا” —
“আর তাঁকে ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে।”
🌸 এখানে আল্লাহ দোয়ার দুইটি ভারসাম্যপূর্ণ রূপ বর্ণনা করেছেন — ➤ **“খাওফ” (ভয়):** আল্লাহর গজব, শাস্তি ও বিচার থেকে ভয়। ➤ **“তামা‘” (আশা):** আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও জান্নাতের আশা। 🌿 দোয়া কখনো শুধু ভয় নিয়ে নয়, আবার শুধুমাত্র আশা নিয়েও নয় — বরং দুটির মাঝে ভারসাম্য থাকা উচিত। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তারা তাদের প্রভুর কাছে দোয়া করে ভয় ও আশা নিয়ে।”** *(সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১৬)* 🌿 🌸 যেমন শিশুরা মায়ের বকুনি পেয়েও জানে, মা শেষ পর্যন্ত তাদের কোলে তুলে নেবে। ঠিক তেমনি, মুমিনের মন আল্লাহর ভয় ও দয়ার মাঝে থাকে।

৩️⃣ “إِنَّ رَحْمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٌۭ مِّنَ ٱلْمُحْسِنِينَ” —
“নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সন্নিকটে তাদের জন্য, যারা সৎকর্মশীল।”
🌿 “মুহসিনীন” মানে সেইসব মানুষ, যারা আল্লাহকে ভালোবাসে, এবং তাঁর সন্তুষ্টির জন্য নেক কাজ করে। তারা শুধু ইবাদতই করে না, বরং মানুষের প্রতিও ভালো ব্যবহার করে, অন্যের কল্যাণে কাজ করে। 📖 রাসূল ﷺ বলেছেন — **“আল্লাহ বলেছেন, আমি মুহসিনদের ভালোবাসি।”** — *সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৫৫* 🌿 🌸 আল্লাহর রহমত তাদের খুব কাছেই থাকে, কারণ তারা নিজের জীবনকেও “রহমত” বানিয়ে ফেলে অন্যদের জন্য।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • আল্লাহর সৃষ্টি ভারসাম্যপূর্ণ — তা নষ্ট করা মহাপাপ।
  • দোয়ায় সবসময় ভয় ও আশা—এই দুটি অনুভূতির ভারসাম্য রাখো।
  • সৎকর্ম মানুষকে আল্লাহর রহমতের কাছে নিয়ে যায়।
  • ফাসাদ (অন্যায়) বন্ধ করে ইসলা’ (সংস্কার) করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন একটি বাগান সাজিয়ে দিলে সেটি সুন্দর ফুলে ভরে যায়, কিন্তু কেউ যদি সেখানে আগুন লাগায়, সব পুড়ে যায়। আল্লাহ পৃথিবীকে সুন্দর বাগান বানিয়েছেন; এখন যদি আমরা পাপের আগুন লাগাই, আমরা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • দোয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের কর্মও হতে হবে সৎ ও ভারসাম্যপূর্ণ।
  • আল্লাহকে ডাকো — ভয় নিয়ে, যেন তিনি রুষ্ট না হন; আবার আশা নিয়ে, যেন তিনি ক্ষমা করেন।
  • পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা একধরনের ইবাদত।
  • আল্লাহর রহমত সৎকর্মীদের সঙ্গেই থাকে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَـٰحِهَا وَٱدْعُوهُ خَوْفًۭا وَطَمَعًا ۚ إِنَّ رَحْمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٌۭ مِّنَ ٱلْمُحْسِنِينَ”** 🤍 — “পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না তার সংস্কারের পর, এবং আল্লাহকে ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে; নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মীদের নিকটে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **দোয়া ও সৎকর্ম একে অপরের পরিপূরক। যে পৃথিবীকে শান্ত রাখে, তার হৃদয়ে আল্লাহর রহমত নেমে আসে।** 🌿🤍
আয়াত ৫৭
وَهُوَ ٱلَّذِى يُرْسِلُ ٱلرِّيَـٰحَ بُشْرًۭا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِۦ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَقَلَّتْ سَحَابًۭا ثِقَالًۭا سُقْنَـٰهُ لِبَلَدٍۢ مَّيِّتٍۢ فَأَنزَلْنَا بِهِ ٱلْمَآءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِۦ مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ۚ كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ ٱلْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
ওয়া হুয়াল্লাযী ইউরসিলুর রিয়াহা বুশরাঁ বাইনা ইয়াদাই রহমাতিহি, হত্তা ইযা আকাল্লাত্‌ সাহাবান্‌ থিকালান, সুউকনাহু লিবালাদিন্‌ মাইয়্যিতিন, ফা-আনযালনা বিহিল মা’আ ফা-আখরাজনা বিহি মিন্‌ কুল্লিস্‌ সামারাত, কাযালিকা নুখরিজুল মাউতা লা‘আল্লাকুম তাযাক্কারুন।
“আর তিনিই সেইজন, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন তাঁর রহমতের (বৃষ্টির) আগমনের পূর্বাভাস হিসেবে। অবশেষে যখন তা ভারী মেঘ বহন করে আনে, তখন আমরা সেটিকে মৃত ভূখণ্ডে পরিচালিত করি; এরপর আমরা তাতে পানি বর্ষণ করি, এবং তার দ্বারা উৎপন্ন করি সকল প্রকার ফল। ঠিক তেমনিভাবে আমরা মৃতদেরকে পুনর্জীবিত করব — যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা **বৃষ্টির প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে** এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা তাঁর রহমত, শক্তি ও মৃতদের পুনরুত্থানের প্রমাণ বহন করে। পৃথিবীতে বৃষ্টি শুধু পানি নয় — এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক জীবনের বার্তা। 🌧️🌸

১️⃣ “وَهُوَ ٱلَّذِى يُرْسِلُ ٱلرِّيَـٰحَ بُشْرًۭا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِۦ” —
“আর তিনিই সেইজন, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন তাঁর রহমতের আগমনের পূর্বাভাস হিসেবে।”
🌿 “রিয়াহ” (বাতাস) — আল্লাহর এক বিশেষ সৈন্য। বৃষ্টি নামার আগে বাতাস আসে, মেঘকে একত্র করে, আর মানুষ বুঝে — বৃষ্টি আসছে 🌧️ 🌸 আল্লাহ একে “বুশরান” বলেছেন — অর্থাৎ **“সুসংবাদ”।** কারণ এই বাতাসই ঘোষণা দেয় — “আল্লাহর রহমত আসছে!” 📖 আল্লাহ বলেন — **“তিনি বাতাস প্রেরণ করেন আনন্দের বার্তা নিয়ে।”** *(সূরা আর-রূম ৩০:৪৬)* 🌿 🌿 এই বাতাসের মাধ্যমেই মানুষ বুঝতে পারে — আল্লাহ মৃত মাটিতেও জীবন দান করেন।

২️⃣ “حَتَّىٰٓ إِذَآ أَقَلَّتْ سَحَابًۭا ثِقَالًۭا” —
“অবশেষে যখন তা ভারী মেঘ বহন করে আনে।”
🌿 এখানে বর্ণনা করা হয়েছে মেঘের গঠন — বাতাস মেঘকে একত্র করে, পানি-বাষ্প জমে ভারী হয়, তারপর তা বৃষ্টি নামানোর জন্য প্রস্তুত হয়। 🌸 আজকের বিজ্ঞান এই প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করছে, অথচ ১৪০০ বছর আগে কুরআন তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল। 📖 সূরা আন-নূর (২৪:৪৩)-তেও আল্লাহ বলেন — **“তিনি মেঘকে স্তরে স্তরে একত্র করেন, তারপর তুমি দেখো, এর মাঝখান থেকে বৃষ্টি ঝরে।”** 🌿 🌿 এটি প্রমাণ করে — আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি এক নিয়মে চলছে, যা শুধু তিনিই নির্ধারণ করেছেন।

৩️⃣ “سُقْنَـٰهُ لِبَلَدٍۢ مَّيِّتٍۢ” —
“আমরা সেটিকে মৃত ভূখণ্ডে পরিচালিত করি।”
🌿 এখানে “মাইয়্যিত” অর্থাৎ মৃত ভূমি — যা দীর্ঘদিন শুকনো, প্রাণহীন, ফসলবিহীন। কিন্তু বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই তাতে নতুন জীবন ফিরে আসে। 🌸 মৃত মাটি জেগে ওঠে, ফুল ফোটে, সবুজ ঘাস জন্মে — এটাই আল্লাহর রহমতের স্পষ্ট নিদর্শন। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আমি মৃত জমিকে জীবন দিই, তেমনিভাবে আমি মৃতদেরও জীবিত করব।”** *(সূরা ক্বাফ ৫০:১১)* 🌿 🌿 এই দৃষ্টান্ত দ্বারা আল্লাহ মানুষকে কিয়ামতের পুনরুত্থান বোঝাচ্ছেন।

৪️⃣ “فَأَنزَلْنَا بِهِ ٱلْمَآءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِۦ مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ” —
“এরপর আমরা তাতে পানি বর্ষণ করি, এবং তার দ্বারা উৎপন্ন করি সকল প্রকার ফল।”
🌿 আল্লাহর এক ফোঁটা পানির মাধ্যমেই অগণিত ফল, ফসল ও জীবনের খাদ্য তৈরি হয়। এটি শুধু কৃষিজাত ফসল নয়, বরং মানুষের জীবনের প্রতিটি উপকরণ বৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। 🌸 এটি আমাদের শেখায় — যে পানি আমরা অবহেলায় দেখি, সেটিই আল্লাহর রহমতের জীবন্ত প্রমাণ। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আমি আকাশ থেকে বরকতময় পানি বর্ষণ করেছি।”** *(সূরা ক্বাফ ৫০:৯)* 🌿 🌿 প্রতিটি ফল, ফুল, সবুজ পাতা — বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহর দয়ার নিদর্শন হয়ে ফুটে ওঠে।

৫️⃣ “كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ ٱلْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ” —
“ঠিক তেমনিভাবে আমরা মৃতদেরকে পুনর্জীবিত করব — যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।”
🌿 আল্লাহ এই দৃশ্যমান উদাহরণের মাধ্যমে বলছেন — যেমন শুকনো জমিনে জীবন ফিরে আসে, তেমনি কিয়ামতের দিনে মৃত মানুষকেও জীবিত করা তাঁর জন্য সহজ। 🌸 মৃত মাটি যেমন পানি পেয়ে জেগে ওঠে, তেমনি মৃত আত্মাও ঈমান ও রহমতের মাধ্যমে জেগে উঠতে পারে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ মৃত জমিকে জীবিত করেন? তিনি অবশ্যই মৃতদের পুনরুত্থান করবেন।”** *(সূরা রূম ৩০:২৪)* 🌿 🌿 তাই প্রতিটি বৃষ্টি আমাদের জন্য এক আখিরাতের বার্তা — “আজ যে জমিন জেগে উঠলো, কাল সেই মানুষও উঠবে তাঁর হুকুমে।” 🌧️

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • বৃষ্টি কেবল পানি নয়, এটি আল্লাহর রহমতের নিদর্শন।
  • মৃত জমিনে জীবন ফেরানোই কিয়ামতের পুনরুত্থানের বাস্তব উদাহরণ।
  • প্রতিটি বাতাস, মেঘ, ফোঁটা আল্লাহর আদেশেই কাজ করে।
  • বৃষ্টি নেমে যেমন মাটি সজীব হয়, তেমনি ঈমান নেমে হৃদয় সজীব হয়।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন এক শুকনো গাছ হঠাৎ বৃষ্টির ছোঁয়ায় ফুলে-ফেঁপে ওঠে, তেমনি মানুষও আল্লাহর রহমতের ছোঁয়ায় আবার জেগে ওঠে। বৃষ্টি কিয়ামতের বাস্তব নিদর্শন — “মৃতও একদিন জীবিত হবে।” 🌿🤍

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • প্রকৃতিতে আল্লাহর রহমতের বার্তা লুকিয়ে আছে।
  • প্রত্যেক বৃষ্টি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — আল্লাহ মৃতকেও জীবিত করেন।
  • রহমত শুধু আকাশ থেকে নয়, আল্লাহর কৃপা হৃদয়ে বর্ষিত হয়।
  • কিয়ামতের বিশ্বাস শক্ত করতে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করো।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَهُوَ ٱلَّذِى يُرْسِلُ ٱلرِّيَـٰحَ بُشْرًۭا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِۦ... كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ ٱلْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ”** 🤍 — “তিনিই বাতাস প্রেরণ করেন রহমতের পূর্বাভাস হিসেবে, এবং যেমন মৃত ভূমিকে জীবিত করেন, তেমনি আমরা মৃতদের পুনর্জীবিত করব — যাতে তোমরা শিক্ষা নাও।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **প্রতিটি বৃষ্টি শুধু ফসল আনে না, বরং মনে আনে ঈমান, আশা ও কিয়ামতের স্মরণ।** 🌿🤍
আয়াত ৫৮
وَٱلْبَلَدُ ٱلطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُهُۥ بِإِذْنِ رَبِّهِۦ وَٱلَّذِى خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًۭا ۚ كَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍۢ يَشْكُرُونَ
ওয়াল্‌বালাদুত্‌ ত্বই্যিবু ইয়াখরুজু নাবাতুহু বিইযনি রব্বিহি, ওয়াল্লাযী খাবুছা লা ইয়াখরুজু ইল্লা নাকিদা, কাজালিকা নুসার্রিফুল আয়াতি লিকাওমিই ইয়াশকুরুন।
“উর্বর ভূমি তার উদ্ভিদ উৎপন্ন করে তার প্রভুর আদেশে; কিন্তু নিষ্ফলা ভূমি থেকে বের হয় না কিছুই, সামান্য কষ্টকর জিনিস ছাড়া। এভাবেই আমি বিভিন্নভাবে নিদর্শনসমূহ ব্যাখ্যা করি তাদের জন্য, যারা কৃতজ্ঞ।” 🌿🤍
তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা একটি গভীর **রূপক উদাহরণ** দিয়েছেন — মাটি ও হৃদয়ের মধ্যে তুলনা করে বুঝিয়েছেন, **যেমন ভালো মাটি আল্লাহর আদেশে ফলবতী হয়, তেমনি ভালো হৃদয় আল্লাহর কালাম গ্রহণ করে ফল দেয়।** 🌸

১️⃣ “وَٱلْبَلَدُ ٱلطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُهُۥ بِإِذْنِ رَبِّهِۦ” —
“উর্বর ভূমি তার উদ্ভিদ উৎপন্ন করে তার প্রভুর আদেশে।”
🌿 “বালাদু ত্বয়্যিব” — অর্থাৎ **পরিষ্কার, পবিত্র, উর্বর মাটি।** এতে যখন বৃষ্টি পড়ে, তখন তা তাজা সবুজ ফসল উৎপন্ন করে। 🌸 এটি সেই হৃদয়ের প্রতীক — যা পবিত্র, অহংকারমুক্ত, ঈমানদার, এবং আল্লাহর কালামের জন্য প্রস্তুত। কুরআনের আয়াত যখন এমন হৃদয়ে প্রবেশ করে, তখন তা ফুল ফোটায়, ফল জন্মায়, এবং নেক আমল উৎপন্ন করে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“আল্লাহর কথা তো এক পবিত্র বৃক্ষের মতো — যার মূল দৃঢ় ও শাখা আকাশে।”** *(সূরা ইবরাহিম ১৪:২৪)* 🌿 🌿 অর্থাৎ, সৎ অন্তর কুরআনের আলো গ্রহণ করে, আর তার ফল হয় ঈমান, তাকওয়া ও সৎকর্ম।

২️⃣ “وَٱلَّذِى خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًۭا” —
“আর যে ভূমি নিষ্ফলা, তা থেকে বের হয় না কিছুই, সামান্য কষ্টকর জিনিস ছাড়া।”
🌿 “খাবুছা” মানে — নোংরা, অনুর্বর, শক্ত মাটি। সেখানে যতই বৃষ্টি পড়ুক না কেন, সেটি কোনো ফল দেয় না, বরং শুধু কাঁটা, আগাছা ও পাথর উৎপন্ন করে। 🌸 এটি সেই হৃদয়ের প্রতীক — যা পাপ, অহংকার, ঈমানহীনতা ও অবহেলায় ভরা। কুরআনের আলো তাতে পড়ে, কিন্তু সে উপকৃত হয় না। 📖 আল্লাহ বলেন — **“তুমি তাদেরকে কুরআন শুনাও, কিন্তু তারা শোনে না; কারণ তাদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:৭)* 🌿 🌿 যেমন অনুর্বর জমি বৃষ্টির কোনো উপকার পায় না, তেমনি কঠিন হৃদয় আল্লাহর বাণী থেকেও বঞ্চিত থাকে।

৩️⃣ “كَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍۢ يَشْكُرُونَ” —
“এভাবেই আমি বিভিন্নভাবে নিদর্শনসমূহ ব্যাখ্যা করি তাদের জন্য, যারা কৃতজ্ঞ।”
🌿 আল্লাহ বলছেন — আমি বিভিন্ন উপমা, উদাহরণ, নিদর্শন ও সত্য পাঠাচ্ছি, কিন্তু কেবল কৃতজ্ঞ মানুষই তা বুঝে ও গ্রহণ করে। 🌸 কৃতজ্ঞ মানুষ সে-ই, যে আল্লাহর বাণীতে চিন্তা করে, অনুধাবন করে, এবং আল্লাহর দিকনির্দেশনা নিজের জীবনে প্রয়োগ করে। 📖 আল্লাহ বলেন — **“সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।”** *(সূরা আল-বাকারা ২:১৫২)* 🌿 🌿 কুরআন যেমন সবার জন্য নাযিল হয়েছে, কিন্তু এর আলো কেবল তাদের জন্য, যাদের হৃদয় উর্বর।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:**
  • মানুষের অন্তর মাটির মতো — উর্বর হলে ঈমানের ফল দেয়।
  • আল্লাহর বাণী তখনই প্রভাব ফেলে, যখন অন্তর পরিষ্কার থাকে।
  • কুরআনের নিদর্শন সবাই শোনে, কিন্তু কৃতজ্ঞরাই তা বোঝে।
  • বৃষ্টি যেমন ফসলের জন্য দরকার, তেমনি কুরআনের আলো দরকার হৃদয়ের জন্য।


🌸 **উদাহরণ:** যেমন একই বৃষ্টি দুই মাটিতে পড়ে — একটিতে ফসল জন্মে, অন্যটিতে জন্মায় কাঁটা। বৃষ্টিতে দোষ নেই, পার্থক্য মাটির গুণে। তেমনি কুরআনের আলো একই, পার্থক্য হৃদয়ের গ্রহণক্ষমতায়। 🌿

🌸 **শিক্ষনীয় বিষয়:**
  • নিজের হৃদয়কে আল্লাহর কালাম গ্রহণের উপযুক্ত করতে হবে।
  • অহংকার ও পাপ হৃদয়কে অনুর্বর করে দেয়।
  • আল্লাহর বাণী বোঝার জন্য চিন্তা, তাদাব্বুর ও কৃতজ্ঞতা জরুরি।
  • ভালো মাটি যেমন ফসল আনে, ভালো মন তেমনি আমল আনে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَٱلْبَلَدُ ٱلطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُهُۥ بِإِذْنِ رَبِّهِۦ وَٱلَّذِى خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًۭا ۚ كَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لِقَوْمٍۢ يَشْكُرُونَ”** 🤍 — “উর্বর ভূমি তার ফসল দেয় তার প্রভুর আদেশে, কিন্তু অনুর্বর ভূমি থেকে কিছুই বের হয় না। এভাবেই আমি নিদর্শনসমূহ ব্যাখ্যা করি তাদের জন্য, যারা কৃতজ্ঞ।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **কুরআনের আলো সবার জন্য, কিন্তু ফল দেয় কেবল উর্বর হৃদয়ে। তাই তোমার অন্তরকে করো বিনয়ী, পবিত্র ও কৃতজ্ঞ — যেন তাতে ঈমানের ফুল ফোটে।** 🌿🤍
আয়াত ৫৯
لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِۦ فَقَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥٓ إِنِّىٓ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍۢ
লাকাদ্‌ আর্সালনা নূহান ইলা কওমিহি, ফা-ক্বালা ইয়াকওমি উ‘বুদুল্লাহা, মা লাকুম মিন ইলাহিন গাইরুহু, ইন্নি আখাফু ‘আলাইকম আযাবা ইয়াওমিন ‘আযীম।
“আমি নিশ্চয়ই নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি। তিনি বলেছিলেন — ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত করো; তোমাদের জন্য তাঁর ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্য এক মহা দিনের শাস্তি আশঙ্কা করছি।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত থেকে শুরু হচ্ছে **নবী নূহ (আঃ)**–এর কাহিনি, যিনি প্রথম রসূল হিসেবে তার কওমকে স্পষ্ট তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তাঁর আহ্বান ছিল সহজ — “শুধু আল্লাহর ইবাদত করো, কারণ তিনিই একমাত্র ইলাহ (উপাস্য)।”

নূহ (আঃ) তাদের সতর্ক করেছিলেন, যেন তারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ধ্বংসের মুখে না পড়ে। তাঁর দাওয়াত ছিল মমতাপূর্ণ, সতর্কতামূলক ও ঈমানভিত্তিক। 🌸

🌿 তিনি বললেন — “আমি তোমাদের জন্য আশঙ্কা করছি আল্লাহর সেই দিনের, যেদিন তাঁর শাস্তি হবে কঠিন ও অবধারিত।” অর্থাৎ, দাওয়াতের প্রথম ধাপই ছিল **ভালোবাসার সঙ্গে সতর্কতা প্রদান**।

উদাহরণ:
যেমন একজন পিতা তার সন্তানকে সতর্ক করে — “এ পথে যেও না, ওখানে বিপদ আছে।” তেমনি নবী নূহ (আঃ) তাঁর জাতিকে বিপদ থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন — আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে আহ্বান করেছিলেন। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • তাওহীদই ছিল সকল নবীর দাওয়াতের মূল বিষয়।
  • আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনা মানেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।
  • সত্যিকারের দাওয়াতে থাকতে হবে মমতা, ধৈর্য ও সতর্কতা।
  • প্রতিটি জাতির জন্য নবী ছিলেন সতর্কবার্তাদাতা, আর যারা তা উপেক্ষা করে, তারা আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নূহ (আঃ)-এর দাওয়াত ছিল এক বাক্যে — **“উ‘বুদুল্লাহা, মা লাকুম মিন ইলাহিন গাইরুহু।”** 🤍 — “আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যিকার মুক্তি কেবল তাওহীদের পথেই, আর সেই পথের দাওয়াতই নবীদের মূল মিশন।** 🌿🤍
আয়াত ৬০
قَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى ضَلَـٰلٍۢ مُّبِينٍۢ
ক্বালাল মালা-উ মিন কওমিহি, ইন্না লানারাকা ফি দোলালিম্‌ মুবীন।
“তার সম্প্রদায়ের নেতারা বলল — ‘নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে দেখছি।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে নবী নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতের পর তাঁর কওমের অহংকারপূর্ণ প্রতিক্রিয়া। যারা সমাজে ক্ষমতাবান ছিল — “আল-মালাঅ” (নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি), তারা নূহ (আঃ)-এর বার্তা অস্বীকার করেছিল। তারা সত্যকে বুঝেও মেনে নেয়নি, বরং উল্টোভাবে তাঁকে বলল — “তুমি বিভ্রান্ত!”

🌸 এটি ছিল ইতিহাসে নবীদের প্রতি অবিশ্বাসীদের প্রচলিত অভিযোগ — যখনই কোনো নবী মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করতেন, তখন অহংকারীরা বলত — “তুমি ভুল পথে আছো।”

প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের বিভ্রান্তি লুকানোর জন্য নবীকেই বিভ্রান্ত বলে অভিযুক্ত করত। এটি অহংকারের সর্বোচ্চ রূপ — **সত্যকে অস্বীকার করে মিথ্যার সাফাই দেওয়া।**

উদাহরণ:
যেমন কেউ অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালালে, কিছু লোক সেই আলোর দিকে না তাকিয়ে বরং বলে — “তুমি অন্ধকার সৃষ্টি করেছো!” বাস্তবে আলোই তাদের চোখে পড়ছে, কিন্তু তারা চোখ বন্ধ করে আছে। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্য বলা সবসময় সহজ নয়; মানুষ অনেক সময় সেটিকে ভুল বলে মনে করে।
  • যারা অহংকারে অন্ধ, তারা নবীদের দাওয়াতকেও উপহাস করে।
  • সত্যিকারের দাঈ (দাওয়াতদাতা)–এর উচিত ধৈর্য ও দৃঢ়তা রাখা।
  • মানুষের সমালোচনায় নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিতেই মনোযোগী হওয়া উচিত।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
অবিশ্বাসীরা বলেছিল — **“إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى ضَلَـٰلٍۢ مُّبِينٍۢ”** 🤍 — “আমরা তোমাকে স্পষ্ট বিভ্রান্ত মনে করি।” 🌸 কিন্তু বাস্তবে বিভ্রান্ত ছিল তারাই, যারা সত্য শুনে অস্বীকার করেছিল। এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন তুমি সত্যের পথে থাকো, মানুষ তোমাকে ‘ভুল’ বলবে — কিন্তু আল্লাহ জানেন, কে আসলে সঠিক পথে আছে।** 🌿🤍
আয়াত ৬১
قَالَ يَـٰقَوْمِ لَيْسَ بِى ضَلَـٰلَةٌۭ وَلَـٰكِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
ক্বালা ইয়াকওমি, লাইসা বিয়ি দোলালাতুন, ওয়ালাকিন্নি রাসূলুম্‌ মির্‌ রব্বিল ‘আলামীন।
“তিনি বললেন — ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি নেই; বরং আমি সমগ্র জগতের প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন রসূল।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী নূহ (আঃ) তাঁর কওমের অভিযোগের জবাব দিচ্ছেন — তাঁরা তাঁকে “বিভ্রান্ত” বলেছিল, কিন্তু তিনি বিনয়পূর্ণভাবে বললেন, “আমি বিভ্রান্ত নই; বরং আমি তোমাদের জন্য সত্যের বার্তাবাহক।” তাঁর উত্তরে নেই অহংকার, নেই তর্ক — আছে শুধু **ধৈর্য, স্পষ্টতা ও সততার পরিচয়।** 🌸

নূহ (আঃ) দেখিয়েছেন — একজন প্রকৃত দাঈ কখনো রাগ করে নয়, বরং শান্তভাবে সত্য তুলে ধরে। তিনি তাঁর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন — “আমি কোনো স্বপ্নবাজ নই; আমি আল্লাহর রাসূল।”

🌿 এই বক্তব্যে তিনটি দাওয়াতি শিক্ষা রয়েছে — ১️⃣ নিজের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা, ২️⃣ ব্যক্তিগত নয়, আল্লাহর পক্ষ থেকে দাওয়াত প্রদান, ৩️⃣ অপবাদে নিরুৎসাহ না হওয়া।

উদাহরণ:
যেমন একজন ডাকপিয়ন চিঠি পৌঁছে দিতে গিয়ে কেউ যদি তাকে সন্দেহ করে, তবুও সে বলে — “আমি কিছু তৈরি করিনি, আমি শুধু বার্তাবাহক।” নবী নূহ (আঃ)–ও তেমনি বললেন — “আমি আমার ইচ্ছায় আসিনি; আমি আল্লাহর বার্তা নিয়ে এসেছি।” 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্যের দাওয়াতে শান্ত, বিনয়ী ও প্রজ্ঞাপূর্ণ থাকা উচিত।
  • অভিযোগ বা উপহাসে প্রতিক্রিয়া না দিয়ে যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতে হবে।
  • দাঈ (আল্লাহর বার্তাবাহক) নিজেকে নয়, বার্তাকে সামনে রাখে।
  • আল্লাহর রসূলেরা মানুষের মতোই, কিন্তু তাঁদের মিশন আল্লাহর পক্ষ থেকে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নূহ (আঃ) বলেছিলেন — **“لَيْسَ بِى ضَلَـٰلَةٌۭ وَلَـٰكِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ”** 🤍 — “আমার মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি নেই; আমি কেবল আল্লাহর প্রেরিত একজন রসূল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যিকারের দাঈ অভিযোগে ভেঙে পড়ে না, বরং বিনয় ও দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দেয়।** 🌿🤍
আয়াত ৬২
أُبَلِّغُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَأَنصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
উবাল্লিগুকুম রিসালাতি রাব্বি, ওয়া আনসাহু লাকুম, ওয়া আ‘লামু মিনাল্লাহি মা লা তা‘লামুন।
“আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি আমার প্রভুর বার্তাসমূহ, এবং আমি তোমাদের জন্য আন্তরিক উপদেশ দিচ্ছি; আমি আল্লাহ সম্পর্কে জানি যা তোমরা জানো না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী নূহ (আঃ) তাঁর কওমকে তাঁর **দাওয়াতের প্রকৃত উদ্দেশ্য** জানাচ্ছেন। তিনি বলেন — “আমি নিজের কথা বলছি না; বরং আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি তোমাদের কাছে।”

🌸 এটি একজন নবীর তিনটি মহান দায়িত্বকে তুলে ধরে — (১) বার্তা পৌঁছে দেওয়া, (২) আন্তরিক উপদেশ দেওয়া, (৩) এবং আল্লাহর জ্ঞান অনুযায়ী মানুষকে সতর্ক করা।

🔹 “أُبَلِّغُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى” — অর্থাৎ, নবীর কাজ হলো শুধু বার্তা পৌঁছে দেওয়া। গ্রহণ করা বা না করা — সেটি মানুষের নিজের দায়িত্ব। 🔹 “وَأَنصَحُ لَكُمْ” — তিনি বলেন, “আমি তোমাদের মঙ্গল কামনা করি, আমি তোমাদের শত্রু নই।” দাওয়াতের আসল রূপই হলো ভালোবাসা ও শুভকামনা। 🔹 “وَأَعْلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ” — অর্থাৎ, “আমি জানি আল্লাহর কাছ থেকে এমন কিছু, যা তোমরা জানো না।” নবীরা ওহি দ্বারা প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে মানুষকে পথ দেখান।

🌿 নূহ (আঃ)-এর এই কথাগুলো শুধু তাঁর কওমের জন্য নয়, বরং সব যুগের দাঈদের জন্যও শিক্ষা — দাওয়াত মানে **সততা, আন্তরিকতা ও সহানুভূতি।** 🌸

উদাহরণ:
যেমন একজন চিকিৎসক অসুস্থ রোগীকে উপদেশ দেয়, “আমি চাই তুমি সুস্থ হও, তাই তিক্ত ওষুধ খাও,” নবীরা তেমনি মানুষের আখিরাতের জন্য মঙ্গল চেয়েছেন — যদিও মানুষ তা বোঝে না। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • দাওয়াত মানে শুধু বলা নয় — বরং আন্তরিকভাবে উপদেশ দেওয়া।
  • নবীরা মানুষের মঙ্গল চেয়েছেন, তাদের ধ্বংস চাননি।
  • সত্যিকারের জ্ঞান আল্লাহর দিকনির্দেশ থেকে আসে।
  • একজন দাঈর ভাষা হওয়া উচিত নরম, যুক্তিসঙ্গত ও মমতাপূর্ণ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নূহ (আঃ) বলেছিলেন — **“أُبَلِّغُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَأَنصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ”** 🤍 — “আমি পৌঁছে দিচ্ছি আল্লাহর বার্তা, তোমাদের কল্যাণ চাই, এবং আল্লাহ সম্পর্কে জানি যা তোমরা জানো না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে হলে দরকার জ্ঞান, আন্তরিকতা ও করুণা। কারণ দাওয়াত কখনো বিতর্ক নয়, বরং হৃদয়ের আহ্বান।** 🌿🤍
আয়াত ৬৩
أَوَعَجِبْتُمْ أَنْ جَآءَكُمْ ذِكْرٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍۢ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوا۟ وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
আওয়া‘জিবতুম্‌ আন্না জা-আ-আকুম্‌ যিকরুম্‌ মিন্‌ রাব্বিকুম্‌ ‘আলা রাযুলিম্‌ মিনকুম্‌ লিইউনযিরাকুম্‌ ওয়ালিতাত্তাকু ওয়ালা‘আল্লাকুম্‌ তুরহামুন।
“তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছ যে, তোমাদেরই একজন মানুষের মাধ্যমে তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর স্মরণিকা এসেছে — যাতে সে তোমাদের সতর্ক করে, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, এবং তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 নবী নূহ (আঃ) এখানে তাঁর কওমকে প্রশ্ন করছেন — “তোমরা কি অবাক হচ্ছ যে, আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকেই একজন মানুষকে রাসূল বানিয়েছেন?” অর্থাৎ, তোমাদেরই মতো একজন মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তাঁকে দিয়েছেন ওহি, যাতে তিনি তোমাদের সত্যের দিকে ডাকেন।

🌸 তাদের অবাক হওয়া আসলে ছিল অহংকারের বহিঃপ্রকাশ। তারা ভাবত, “যদি সত্যিই আল্লাহ কোনো বার্তা পাঠাতেন, তবে তা কোনো ফেরেশতার মাধ্যমে আসা উচিত ছিল!” কিন্তু আল্লাহ মানুষকেই নবী বানিয়েছেন, যাতে মানুষ তাদের বুঝতে পারে, এবং তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

🌿 “لِيُنذِرَكُمْ” — অর্থাৎ “যেন তিনি তোমাদের সতর্ক করেন।” নবীদের আসার উদ্দেশ্যই ছিল মানুষকে সতর্ক করা — গাফিলতা থেকে জাগিয়ে তোলা, এবং তাদের সামনে আখিরাতের বাস্তবতা তুলে ধরা।

🌸 “وَلِتَتَّقُوا۟” — যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করো, অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করো, পাপ থেকে দূরে থাকো। 🌸 “وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ” — যেন তোমরা রহমত লাভ করো। আল্লাহর দাওয়াত ও নবীর বার্তা — আসলে মানুষের প্রতি আল্লাহর করুণার প্রকাশ। 🌿

উদাহরণ:
যেমন কোনো রাজা যদি দূতের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করেন — “সতর্ক থাকো, আমি তোমাদের খবর রাখছি,” তাহলে সেটি আসলে রাজ্যের শাস্তি নয়, বরং করুণা, যাতে জনগণ শুদ্ধ পথে ফিরে আসে। তেমনি আল্লাহ নবীদের পাঠিয়েছেন করুণার নিদর্শন হিসেবে, শাস্তির ঘোষণা হিসেবে নয়। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর দাওয়াত মানুষই পৌঁছে দেয় — এটাই তাঁর প্রজ্ঞা।
  • নবীদের আগমন শাস্তি নয়, বরং রহমত ও হিদায়াতের বার্তা।
  • তাকওয়া ও সতর্কতা আল্লাহর রহমত পাওয়ার মূল চাবি।
  • অহংকার মানুষকে সত্যের প্রতি অবাক ও সন্দিহান করে তোলে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নূহ (আঃ) বলেছিলেন — **“أَوَعَجِبْتُمْ أَنْ جَآءَكُمْ ذِكْرٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍۢ مِّنكُمْ...”** 🤍 — “তোমরা কি অবাক হচ্ছ যে, তোমাদেরই একজন মানুষ তোমাদের কাছে আল্লাহর বার্তা এনেছে?” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহ তাঁর বার্তা মানুষের কাছেই পাঠান, যাতে মানুষ বুঝতে পারে, চিন্তা করে, ও পথ ঠিক করে নিতে পারে। নবীদের দাওয়াতই আল্লাহর রহমতের প্রতিচ্ছবি।** 🌿🤍
আয়াত ৬৩
أَوَعَجِبْتُمْ أَنْ جَآءَكُمْ ذِكْرٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍۢ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوا۟ وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
আওয়া‘জিবতুম্‌ আন্না জা-আ-আকুম্‌ যিকরুম্‌ মিন্‌ রাব্বিকুম্‌ ‘আলা রাযুলিম্‌ মিনকুম্‌ লিইউনযিরাকুম্‌ ওয়ালিতাত্তাকু ওয়ালা‘আল্লাকুম্‌ তুরহামুন।
“তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছ যে, তোমাদেরই একজন মানুষের মাধ্যমে তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর স্মরণিকা এসেছে — যাতে সে তোমাদের সতর্ক করে, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, এবং তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 নবী নূহ (আঃ) এখানে তাঁর কওমকে প্রশ্ন করছেন — “তোমরা কি অবাক হচ্ছ যে, আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকেই একজন মানুষকে রাসূল বানিয়েছেন?” অর্থাৎ, তোমাদেরই মতো একজন মানুষ, কিন্তু আল্লাহ তাঁকে দিয়েছেন ওহি, যাতে তিনি তোমাদের সত্যের দিকে ডাকেন।

🌸 তাদের অবাক হওয়া আসলে ছিল অহংকারের বহিঃপ্রকাশ। তারা ভাবত, “যদি সত্যিই আল্লাহ কোনো বার্তা পাঠাতেন, তবে তা কোনো ফেরেশতার মাধ্যমে আসা উচিত ছিল!” কিন্তু আল্লাহ মানুষকেই নবী বানিয়েছেন, যাতে মানুষ তাদের বুঝতে পারে, এবং তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

🌿 “لِيُنذِرَكُمْ” — অর্থাৎ “যেন তিনি তোমাদের সতর্ক করেন।” নবীদের আসার উদ্দেশ্যই ছিল মানুষকে সতর্ক করা — গাফিলতা থেকে জাগিয়ে তোলা, এবং তাদের সামনে আখিরাতের বাস্তবতা তুলে ধরা।

🌸 “وَلِتَتَّقُوا۟” — যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করো, অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করো, পাপ থেকে দূরে থাকো। 🌸 “وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ” — যেন তোমরা রহমত লাভ করো। আল্লাহর দাওয়াত ও নবীর বার্তা — আসলে মানুষের প্রতি আল্লাহর করুণার প্রকাশ। 🌿

উদাহরণ:
যেমন কোনো রাজা যদি দূতের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করেন — “সতর্ক থাকো, আমি তোমাদের খবর রাখছি,” তাহলে সেটি আসলে রাজ্যের শাস্তি নয়, বরং করুণা, যাতে জনগণ শুদ্ধ পথে ফিরে আসে। তেমনি আল্লাহ নবীদের পাঠিয়েছেন করুণার নিদর্শন হিসেবে, শাস্তির ঘোষণা হিসেবে নয়। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর দাওয়াত মানুষই পৌঁছে দেয় — এটাই তাঁর প্রজ্ঞা।
  • নবীদের আগমন শাস্তি নয়, বরং রহমত ও হিদায়াতের বার্তা।
  • তাকওয়া ও সতর্কতা আল্লাহর রহমত পাওয়ার মূল চাবি।
  • অহংকার মানুষকে সত্যের প্রতি অবাক ও সন্দিহান করে তোলে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নূহ (আঃ) বলেছিলেন — **“أَوَعَجِبْتُمْ أَنْ جَآءَكُمْ ذِكْرٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍۢ مِّنكُمْ...”** 🤍 — “তোমরা কি অবাক হচ্ছ যে, তোমাদেরই একজন মানুষ তোমাদের কাছে আল্লাহর বার্তা এনেছে?” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহ তাঁর বার্তা মানুষের কাছেই পাঠান, যাতে মানুষ বুঝতে পারে, চিন্তা করে, ও পথ ঠিক করে নিতে পারে। নবীদের দাওয়াতই আল্লাহর রহমতের প্রতিচ্ছবি।** 🌿🤍
আয়াত ৬৪
فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَيْنَـٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ فِى ٱلْفُلْكِ وَأَغْرَقْنَا ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمًا عَمِينَ
ফা-কায্‌যাবুহু ফা-আঞ্জাইনা-হু ওয়াল্লাযীনা মা‘আহু ফিল্‌ ফুল্কি, ওয়া আগরাকনা আল্লাযীনা কায্‌যাবু বিআয়াতিনা, ইন্নাহুম্‌ কানু কওমাঁ ‘আমীন।
“অতঃপর তারা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, ফলে আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে নৌকায় রক্ষা করলাম, এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয়ই তারা ছিল অন্ধ এক সম্প্রদায়।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী নূহ (আঃ) ও তাঁর কওমের পরিণতি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। পূর্বের আয়াতগুলোয় নূহ (আঃ)-এর দাওয়াত ও সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে, আর এখানে বলা হচ্ছে — তারা তাঁর কথা বিশ্বাস না করে মিথ্যা বলেছিল।

🌸 **“فَكَذَّبُوهُ” — “অতঃপর তারা তাঁকে মিথ্যা বলল।”** অর্থাৎ, তারা শুধু অস্বীকারই করেনি, বরং উপহাস ও বিদ্রূপ করেছিল। নূহ (আঃ) প্রায় ৯৫০ বছর দাওয়াত দিয়েছিলেন, তবুও অল্প কয়েকজন ছাড়া কেউ তাঁর আহ্বান গ্রহণ করেনি।

🌸 **“فَأَنجَيْنَـٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ فِى ٱلْفُلْكِ” —** “ফলে আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে নৌকায় রক্ষা করলাম।”
🌿 যখন আল্লাহর শাস্তি নাযিল হলো — মহাপ্লাবন আকারে, তখন নূহ (আঃ)-এর নৌকা আল্লাহর নির্দেশে রক্ষা পেল। এটি ছিল **আল্লাহর প্রতিশ্রুতির বাস্তব ফলাফল** — যে সত্যের পথে থাকে, আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন।

🌸 **“وَأَغْرَقْنَا ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ” —** “এবং যারা আমাদের নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছিল, তাদেরকে আমরা ডুবিয়ে দিলাম।”
🌿 তারা নূহ (আঃ)-কে বিশ্বাস করেনি, বরং বিদ্রূপ করেছিল — “তুমি নৌকা বানাচ্ছো মরুভূমিতে!” কিন্তু যখন আল্লাহর আদেশ এল, তখন তাদের হাসি থেমে গেল, আর নৌকার বাইরে সবাই ডুবে গেল।

🌸 **“إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمًا عَمِينَ” —** “নিশ্চয়ই তারা ছিল অন্ধ এক সম্প্রদায়।”
🌿 “আমীন” মানে অন্ধ — কিন্তু চোখের নয়, **হৃদয়ের অন্ধত্ব**। তারা সত্য দেখেও অস্বীকার করেছে, প্রমাণ শুনেও অমান্য করেছে। এটাই ছিল তাদের ধ্বংসের কারণ।

উদাহরণ:
যেমন কেউ দিনের আলোয় চোখ বন্ধ করে বলে, “এখানে কোনো সূর্য নেই!” — আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকারকারীদের অবস্থা ঠিক এমনই ছিল। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর রাসূলকে অস্বীকার করা মানেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।
  • যারা সত্যের পথে থাকে, আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করেন — যেমন নূহ (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীদের রক্ষা করা হয়েছিল।
  • হৃদয়ের অন্ধত্ব চোখের অন্ধত্বের চেয়ে ভয়াবহ।
  • আল্লাহর শাস্তি ন্যায়সংগত — অবাধ্যদের পরিণতি কখনো ভালো হয় না।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَأَنجَيْنَـٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ فِى ٱلْفُلْكِ وَأَغْرَقْنَا ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمًا عَمِينَ”** 🤍 — “আমি রক্ষা করেছি নূহ (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীদের, আর অস্বীকারকারীদের ডুবিয়ে দিয়েছি; তারা ছিল অন্ধ হৃদয়ের এক জাতি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যে সত্যকে অস্বীকার করে, সে অন্ধ হয়ে যায়; আর যে সত্যকে আঁকড়ে ধরে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন।** 🌿🤍
আয়াত ৬৫
وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًۭا ۗ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥٓ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ
ওয়া ইলা ‘আদিন আখাহুম হূদাঁ, ক্বালা ইয়াকওমি উ‘বুদুল্লাহা, মা লাকুম মিন ইলাহিন গাইরুহু, আফালা তাত্তাকুন।
“আর আমি আদ জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদের ভাই হূদকে। তিনি বলেছিলেন — ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত করো; তোমাদের জন্য তাঁর ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না?’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নতুন এক নবীর কাহিনি শুরু করছেন — তিনি হলেন **নবী হূদ (আঃ)**, যাকে পাঠানো হয়েছিল **‘আদ জাতির** কাছে, যারা ছিল শক্তিশালী, ধনী ও অহংকারে পূর্ণ এক জাতি।

🌸 “وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًۭا” — “আর আদ জাতির কাছে পাঠানো হয়েছিল তাদের ভাই হূদ।” অর্থাৎ, তিনি তাদেরই একজন — তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও সমাজের মধ্যে জন্ম নেওয়া এক সত্যবাদী মানুষ। আল্লাহ মানুষের মধ্য থেকেই নবী পাঠিয়েছেন, যাতে মানুষ সহজে বুঝতে ও গ্রহণ করতে পারে।

🌸 “يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ” — “হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত করো।” হূদ (আঃ)-এর দাওয়াতও ছিল সব নবীর মতোই এক ও অভিন্ন — **তাওহীদ (এক আল্লাহর উপাসনা)**। তিনি আহ্বান করেছিলেন — “তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উপাসনা করো না।”

🌿 “مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥ” — “তোমাদের জন্য তাঁর ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।” আদ জাতি আল্লাহর নিয়ামত পেয়েছিল — পাহাড় কেটে প্রাসাদ বানাতো, শক্তিশালী দেহ ও বুদ্ধির অধিকারী ছিল। কিন্তু তারা এই শক্তির গর্বে একমাত্র রবকে ভুলে গিয়েছিল।

🌸 “أَفَلَا تَتَّقُونَ” — “তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না?” এটি এক হৃদয় ছোঁয়া প্রশ্ন — যেন হূদ (আঃ) ভালোবাসার সুরে বলছেন, “তোমরা কেন নিজের স্রষ্টার কথা ভুলে যাচ্ছো?” তাঁর আহ্বান ছিল যুক্তি, করুণা ও ঈমানের আহ্বান।

উদাহরণ:
যেমন কেউ দেখছে একটি শিশু আগুনের দিকে দৌড়াচ্ছে, সে ভালোবাসা নিয়ে বলে — “থামো, ওই আগুন তোমাকে পুড়িয়ে দেবে!” নবীরা তেমনি ভালোবাসা ও দয়া নিয়ে বলতেন — “আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর দিকে ফিরে আসো।” 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সব নবীর বার্তা এক — আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
  • আল্লাহ মানুষের মধ্য থেকেই নবী পাঠান, যাতে তারা বুঝতে পারে।
  • অহংকার, শক্তি ও ধনসম্পদ মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
  • তাওহীদ মানে শুধু মুখে বলা নয়, বরং হৃদয়ে ও কাজে আল্লাহর একত্ব স্বীকার করা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًۭا ۗ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥٓ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ”** 🤍 — “হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত করো; তাঁর ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না?” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **তাওহীদই সকল নবীর প্রথম দাওয়াত। যে আল্লাহকে এক জানে, সে-ই সত্যিকার মুক্ত মানুষ।** 🌿🤍
আয়াত ৬৬
قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى سَفَاهَةٍۢ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلْكَـٰذِبِينَ
ক্বালাল মালা-উল্লাযীনা কাফারু মিন কওমিহি, ইন্না লানারাকা ফি সাফাহাতিন, ওয়া ইন্না লানাজুন্নুকা মিনাল কাযিবীন।
“তাঁর সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী নেতারা বলল — ‘নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে মূর্খ মনে করি, এবং আমরা ধারণা করি তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে **নবী হূদ (আঃ)**–এর দাওয়াতের পর তাঁর কওম ‘আদ জাতির নেতাদের প্রতিক্রিয়া। তারা সত্যকে গ্রহণ না করে উল্টো তাঁকে অপমান করেছে — “তুমি মূর্খ, তুমি মিথ্যাবাদী!”

🌸 “ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟” — অর্থাৎ, সমাজের উচ্চপদস্থ, ধনী, প্রভাবশালী নেতারা। ইতিহাসে দেখা যায় — সাধারণ মানুষ আগে সত্য গ্রহণ করে, কিন্তু ক্ষমতাধারীরা অহংকারে তা প্রত্যাখ্যান করে।

🌿 “إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى سَفَاهَةٍۢ” — “আমরা তোমাকে মূর্খ মনে করি।” তারা ভাবত, “যে আমাদের মূর্তির বিরোধিতা করে, সে নিশ্চয়ই জ্ঞানহীন বা বিভ্রান্ত।” অথচ প্রকৃত মূর্খতা ছিল তাদের — যারা আল্লাহকে ভুলে পাথরের সামনে মাথা নত করেছিল।

🌸 “وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلْكَـٰذِبِينَ” — “আমরা মনে করি তুমি মিথ্যাবাদী।” তারা ভাবত, হূদ (আঃ) ক্ষমতা বা প্রভাব অর্জনের জন্য দাওয়াত দিচ্ছেন। এটি ছিল **অহংকার ও সন্দেহের চূড়ান্ত রূপ।**

🌿 কিন্তু নবীরা কখনো জনপ্রিয়তার জন্য দাওয়াত দেননি, বরং মানুষের কল্যাণের জন্য — যেন তারা আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, মুক্তি পায়।

উদাহরণ:
যেমন একজন চিকিৎসক যদি রোগীকে বলে — “তুমি এই বিষ খেও না, এটি তোমাকে মেরে ফেলবে,” আর রোগী বলে — “তুমি আমাদের শত্রু!” বাস্তবে সে শত্রু নয়, বরং বন্ধু; কিন্তু অজ্ঞতা ও অহংকার চোখ ঢেকে দেয় 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকার সত্যকে অস্বীকার করার সবচেয়ে বড় কারণ।
  • সত্যিকারের দাঈ অপমানিত হলেও ধৈর্য হারায় না।
  • মিথ্যা অভিযোগ নবীদের জন্য নতুন কিছু নয় — প্রতিটি যুগেই সত্যের প্রচারকরা তা মুখোমুখি হয়েছেন।
  • মানুষ প্রায়ই যাকে ‘মূর্খ’ ভাবে, আল্লাহর দৃষ্টিতে তিনিই সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
অবিশ্বাসীরা বলল — **“إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى سَفَاهَةٍۢ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلْكَـٰذِبِينَ”** 🤍 — “আমরা তোমাকে মূর্খ ও মিথ্যাবাদী মনে করি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন তুমি সত্যের পথে থাকো, তখন মানুষ তোমাকে ভুল বোঝে, কিন্তু আল্লাহ জানেন তুমি সঠিক পথে আছো।** 🌿🤍
আয়াত ৬৭
قَالَ يَـٰقَوْمِ لَيْسَ بِى سَفَاهَةٌۭ وَلَـٰكِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
ক্বালা ইয়াকওমি, লাইসা বিয়ি সাফাহাতুন, ওয়ালাকিন্নি রাসুলুম্‌ মির্‌ রব্বিল ‘আলামীন।
“তিনি বললেন — ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোনো মূর্খতা নেই; বরং আমি সমগ্র জগতের প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন রসূল।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী হূদ (আঃ) তাঁর কওমের অপমানের জবাব দিচ্ছেন — তারা তাঁকে বলেছিল, “তুমি মূর্খ ও মিথ্যাবাদী।” কিন্তু তিনি শান্ত, বিনয়ী ও দৃঢ়ভাবে জবাব দিলেন — “আমার মধ্যে কোনো মূর্খতা নেই; আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল।”

🌸 তাঁর উত্তরে নেই রাগ, নেই প্রতিশোধের সুর — বরং এক অসাধারণ ধৈর্য ও যুক্তির সৌন্দর্য। এটাই নবীদের চরিত্র — তারা কখনো কটুবাক্যে প্রতিক্রিয়া দেন না, বরং শান্তভাবে সত্য প্রকাশ করেন।

🌿 “لَيْسَ بِى سَفَاهَةٌۭ” — “আমার মধ্যে কোনো মূর্খতা নেই।” অর্থাৎ, আমি অবিবেচক নই; বরং যা বলছি তা জ্ঞানের আলোকে বলছি। মূর্খতা তো তাদের, যারা আল্লাহর নিদর্শন দেখেও অস্বীকার করছে।

🌸 “وَلَـٰكِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ” — “বরং আমি আল্লাহর প্রেরিত একজন রাসূল।” হূদ (আঃ) তাঁর পরিচয় স্পষ্ট করলেন — তিনি নিজের ইচ্ছায় কিছু বলেন না; তিনি আল্লাহর নির্দেশে মানুষকে সতর্ক করেন।

🌿 এটি দাওয়াতের এক চিরন্তন আদর্শ — যখন কেউ তোমাকে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করে, তখন নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দাও, কিন্তু কোনো অপমানের বদলে সম্মান ও প্রজ্ঞায় উত্তর দাও 🌸

উদাহরণ:
যেমন কেউ তোমাকে বলে — “তুমি ভুল করছো!”, আর তুমি শান্তভাবে বলো — “আমি ভুল করছি না; আমি তোমার ভালো চাচ্ছি।” নবীরা ঠিক এভাবেই মানুষকে দাওয়াত দিতেন — রাগ নয়, করুণার সঙ্গে 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অভিযোগের জবাব দিতে হবে প্রজ্ঞা ও বিনয়ের সঙ্গে।
  • সত্যিকারের দাঈ কখনো রাগে নয়, যুক্তিতে উত্তর দেয়।
  • নবীদের ভাষায় ছিল দৃঢ়তা, কিন্তু কখনো কঠোরতা নয়।
  • আল্লাহর প্রতিনিধি কখনো নিজের জন্য নয়, মানুষের কল্যাণের জন্য কথা বলেন।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নবী হূদ (আঃ) বলেছিলেন — **“لَيْسَ بِى سَفَاهَةٌۭ وَلَـٰكِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ”** 🤍 — “আমি মূর্খ নই; আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন রাসূল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন মানুষ তোমার সত্যকে অস্বীকার করে, তখন রাগ নয়, বরং বিনয় ও যুক্তিতেই জবাব দাও। কারণ সত্যের শক্তি কখনো উচ্চ স্বরে নয়, বরং শান্ত আত্মবিশ্বাসে।** 🌿🤍
আয়াত ৬৮
أُبَلِّغُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَأَنَا۠ لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌۭ
উবাল্লিগুকুম রিসালাতি রাব্বি, ওয়া আনা লাকুম নাসিহুন আমীন।
“আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি আমার প্রভুর বার্তাসমূহ, এবং আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত উপদেশদাতা।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী হূদ (আঃ) তাঁর দাওয়াতের **মূল উদ্দেশ্য ও পরিচয়** স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন — “আমি তোমাদের নিজের কথা বলছি না; আমি পৌঁছে দিচ্ছি আমার প্রভুর বার্তা।” তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ নববী চরিত্রের প্রতিফলন 🌸 — “সত্যতা, বিশ্বস্ততা ও আন্তরিক উপদেশ।”

🌸 “أُبَلِّغُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى” — অর্থাৎ, “আমি আল্লাহর বার্তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।” নবীরা নিজেরা কিছু উদ্ভাবন করেননি; তাঁরা ছিলেন বার্তাবাহক — যাঁরা আল্লাহর ওহি ঠিক যেমনটি নাযিল হয়েছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন।

🌿 “وَأَنَا۠ لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌۭ” — “আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত উপদেশদাতা।” নবী হূদ (আঃ) নিজেকে **“নাসিহ”** (উপদেশদাতা) বলেছেন — কারণ তাঁর দাওয়াতের উদ্দেশ্য ছিল না বিতর্ক জেতা, বরং মানুষকে সংশোধন করা। আর তিনি **“আমীন”**, অর্থাৎ “বিশ্বস্ত” — তাঁর দাওয়াতে কোনো স্বার্থ নেই, কোনো প্রতারণা নেই; তিনি যা বলছেন, তা আল্লাহর নির্দেশেই বলছেন। 🌿

🌸 এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা নবীদের সত্যবাদিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনুভব করতে পারি। তারা কখনো নিজের লাভের জন্য কথা বলেননি; তাদের মিশন ছিল **মানবতার হিদায়াত**।

উদাহরণ:
যেমন একজন ডাকপিয়ন রাজদরবারের চিঠি সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়, সে কিছু যোগ করে না, কিছু বাদও দেয় না — নবীরাও তেমনি আল্লাহর বার্তা হুবহু পৌঁছে দিতেন, বিনা ভয়ে, বিনা স্বার্থে 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • দাওয়াতের মূল শর্ত হলো সততা ও বিশ্বস্ততা।
  • সত্যিকার দাঈ কখনো নিজের লাভ চায় না, বরং অন্যের মঙ্গল চায়।
  • নবীদের দাওয়াত ছিল নরম ভাষায়, আন্তরিক হৃদয়ে ও আল্লাহর ভয়ে।
  • আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দেওয়া এক পবিত্র দায়িত্ব — এতে যোগ বা বিয়োগের সুযোগ নেই।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নবী হূদ (আঃ) বলেছিলেন — **“أُبَلِّغُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَأَنَا۠ لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌۭ”** 🤍 — “আমি পৌঁছে দিচ্ছি আমার প্রভুর বার্তা, এবং আমি তোমাদের বিশ্বস্ত উপদেশদাতা।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **দাওয়াত মানে শুধু বলা নয়, বরং ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে পথ দেখানো। সত্যিকারের দাঈ সে-ই, যে আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দেয় বিনা ভয়ে, বিনা স্বার্থে।** 🌿🤍
আয়াত ৬৯
أَوَعَجِبْتُمْ أَنْ جَآءَكُمْ ذِكْرٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍۢ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ ۖ وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍۢ وَزَادَكُمْ فِى ٱلْخَلْقِ بَسْطَةًۭ ۖ فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
আওয়া‘জিবতুম আন্না জা-আ-আকুম যিকরুম মিন রাব্বিকুম ‘আলা রাযুলিম মিনকুম লিইউনযিরাকুম, ওয়াজকুরু ইয জা‘আলাকুম খুলাফা-আ মিম্‌ বা‘দি কওমি নূহ, ওয়া যাদাকুম ফিল্‌ খালকি বাসতোহ, ফাজকুরু আ’লা-আল্লাহি লা‘আল্লাকুম তুফলিহুন।
“তোমরা কি অবাক হচ্ছ যে, তোমাদেরই একজন মানুষের মাধ্যমে তোমাদের প্রভুর বার্তা এসেছে, যাতে সে তোমাদের সতর্ক করে? আর স্মরণ করো — আল্লাহ তোমাদের করেছেন নূহ (আঃ)-এর পর উত্তরসূরি, এবং সৃষ্টি গঠনে তোমাদের দিয়েছেন শক্তি ও সামর্থ্যের প্রাচুর্য। সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হও।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী হূদ (আঃ) তাঁর কওম ‘আদ জাতিকে যুক্তিসঙ্গতভাবে উপদেশ দিচ্ছেন। তারা নবীর আগমনকে অবাক হয়ে দেখছিল, তাই তিনি প্রশ্ন করলেন — “তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছ যে, আল্লাহ তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন মানুষকে নবী বানিয়েছেন?”

🌸 এখানে “অওয়া‘জিবতুম” শব্দটি এক কোমল জিজ্ঞাসা — যেন হূদ (আঃ) ভালোবাসার সুরে বলছেন, “তোমরা কেন এত অবাক হচ্ছ? আল্লাহ মানুষকেই নবী বানান, যাতে মানুষ মানুষের ভাষায় সত্য বুঝতে পারে।”

🌿 এরপর তিনি স্মরণ করিয়ে দেন তাদের অতীত — “তোমরা নূহ (আঃ)-এর পর উত্তরসূরি হয়েছো।” অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদেরকে সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির পর উন্নত ও শক্তিশালী জাতি করেছেন। কিন্তু সেই শক্তির জন্য কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে, তারা অহংকারে অন্ধ হয়ে পড়েছিল।

🌸 “وَزَادَكُمْ فِى ٱلْخَلْقِ بَسْطَةًۭ” — “আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি গঠনে প্রাচুর্য দিয়েছেন।” আদ জাতি ছিল বিশালদেহী, শক্তিশালী ও সক্ষম — তারা মরুভূমিতে প্রাসাদ বানাতো, পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করত। কিন্তু সেই শক্তি তাদেরকে বিনয়ী করেনি; বরং তারা গর্বে আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল।

🌿 তাই নবী হূদ (আঃ) স্মরণ করিয়ে দিলেন — “ফাজকুরু আ’লা-আল্লাহি” — “আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো।” কারণ কৃতজ্ঞতাই মানুষকে সফলতার পথে রাখে। যে অনুগ্রহের বদলে অহংকার করে, সে ধ্বংসের মুখে পড়ে। 🌸

উদাহরণ:
যেমন একজনকে যদি রাজা বড় দায়িত্ব দেয়, আর সে সেই দায়িত্ব ভুলে অহংকার করে বলে, “এটি আমার নিজের ক্ষমতা,” — তবে সেই রাজা তাকে অপসারণ করে। তেমনি আল্লাহও অহংকারী জাতিকে তুলে দেন, আর বিনয়ীদের দিয়ে পৃথিবী পূর্ণ করেন 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ মানুষকেই নবী বানান, যাতে মানুষ বোঝে ও শিক্ষা নেয়।
  • নিয়ামত পেয়ে কৃতজ্ঞতা ভুলে গেলে, সেই নিয়ামতই শাস্তিতে পরিণত হয়।
  • অহংকার ধ্বংস ডেকে আনে, বিনয় সফলতা আনে।
  • সফলতার চাবি হলো — আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নবী হূদ (আঃ) বলেছিলেন — **“فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ”** 🤍 — “আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হও।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **অহংকারে নয়, কৃতজ্ঞতায় আছে সফলতা। শক্তি ও সম্পদ নয়, বিনয় ও তাকওয়াই আনে মুক্তি।** 🌿🤍
আয়াত ৭০
قَالُوٓا۟ أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ ٱللَّهَ وَحْدَهُۥ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ ءَابَآؤُنَا ۖ فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ
ক্বালু, আ-জিতানা লিনা‘বুদাল্লাহা ওয়াহদাহু, ওয়া নাযারা মা কানায়া‘বুদু আ-বা-উনা, ফা’তিনা বিমা তা‘ইদুনা ইন্‌ কুনতা মিনাস্‌ সাদিকীন।
“তারা বলল — ‘তুমি কি এসেছ আমাদেরকে কেবল আল্লাহরই ইবাদত করতে বলার জন্য এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের উপাস্যদের ত্যাগ করতে? তবে তুমি আমাদের প্রতি যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ, তা আমাদের উপর নিয়ে আসো, যদি তুমি সত্যবাদী হও।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে নবী হূদ (আঃ)-এর দাওয়াতের প্রতি **আদ জাতির অহংকারপূর্ণ প্রতিক্রিয়া**। তাঁরা নবীর আহ্বানকে অবজ্ঞা ও চ্যালেঞ্জের ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছিল।

🌸 “أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ ٱللَّهَ وَحْدَهُۥ” — “তুমি কি এসেছ আমাদেরকে একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করতে বলার জন্য?” তারা অবাক হয়ে বলল — “তুমি কি আমাদের বহু দেবতা ছেড়ে কেবল এক আল্লাহর ইবাদতের কথা বলছো?” 🌿 তাদের কথায় স্পষ্ট বিদ্রূপ ও অহংকার ছিল। তারা বুঝতেই পারছিল না — আল্লাহর একত্বই তাদের মুক্তির পথ।

🌸 “وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ ءَابَآؤُنَا” — “আর আমরা কি আমাদের পূর্বপুরুষদের উপাস্যদের ত্যাগ করব?” এটি ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল যুক্তি — তারা **সত্যকে পরিমাপ করেছিল ঐতিহ্যের মানদণ্ডে**, আল্লাহর ওহির আলোকে নয়। 🌿 তারা ভাবত, “যা আমাদের বাপ-দাদারা করতেন, সেটিই সঠিক!” — যদিও সেটিই ছিল শিরক ও ভ্রান্তি।

🌸 “فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ” — “তাহলে তুমি আমাদের প্রতি যে শাস্তির কথা বলছো, তা নিয়ে আসো।”
এটি এক **চরম বিদ্রূপ ও অবজ্ঞা**; তারা নবীর সতর্কবার্তাকে হুমকি মনে করেনি, বরং চ্যালেঞ্জের সুরে বলেছিল — “দেখি, যদি সত্যিই নবী হও, তাহলে শাস্তি এনে দেখাও!” 🌿 তাদের এই উক্তি আসলে এক “অহংকারের সীমা”, যা ধ্বংসের পূর্বলক্ষণ।

উদাহরণ:
যেমন কেউ আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে — “দেখি, যদি আগুন সত্যিই পোড়ায়, তাহলে আমায় জ্বালাও!” কিন্তু সে জানে না — আগুন স্পর্শ করলেই ধ্বংস অনিবার্য 🔥 তেমনি এই জাতিও আল্লাহর শাস্তিকে হালকা করে দেখেছিল, আর সেই কারণেই তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকার মানুষকে সত্য চিনতে দেয় না।
  • ঐতিহ্য ও পূর্বপুরুষের অন্ধ অনুসরণ মানুষকে শিরকে ডুবায়।
  • নবীদের বার্তাকে চ্যালেঞ্জ করা মানে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।
  • আল্লাহর সতর্কবার্তা কখনো উপহাসের বিষয় নয়; এটি মুক্তির আহ্বান।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
অবিশ্বাসীরা বলেছিল — **“أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ ٱللَّهَ وَحْدَهُۥ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ ءَابَآؤُنَا ۖ فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ”** 🤍 — “তুমি কি আমাদের এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য ডাকছো? তাহলে শাস্তি এনে দেখাও!” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যে মানুষ সত্যকে উপহাস করে, সে নিজেই নিজের ধ্বংসের কারণ হয়। আর যে আল্লাহর দাওয়াত গ্রহণ করে, সে নিরাপত্তা ও সফলতা লাভ করে।** 🌿🤍
আয়াত ৭১
قَالَ قَدْ وَقَعَ عَلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ رِجْسٌۭ وَغَضَبٌۭ ۚ أَتُجَـٰدِلُونَنِى فِىٓ أَسْمَآءٍۢ سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَـٰنٍۢ ۚ فَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنِّى مَعَكُم مِّنَ ٱلْمُنتَظِرِينَ
ক্বালা কদ্‌ ওয়াকা’আ ‘আলাইকুম মিন্‌ রাব্বিকুম রিজ্‌সুন্‌ ওয়া গাদাবুন, আতুজাদিলুনানি ফি আসমা-ইন সাম্মাইতুমুহা আনতুম ওয়া আ-বা-উকুম, মা নায্যালাল্লাহু বিহা মিন্‌ সুলতানিন, ফানতাযিরু ইন্নি মা‘আকুম মিনাল মুনতাযিরীন।
“তিনি বললেন — ‘তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর পড়েছে অপবিত্রতা ও রাগ। তোমরা কি আমার সঙ্গে বিতর্ক করছ এমন নাম নিয়ে, যেগুলো তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা বানিয়ে নিয়েছ, অথচ আল্লাহ এগুলোর বিষয়ে কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি? সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো; আমি-ও তোমাদের সঙ্গে অপেক্ষা করছি।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী **হূদ (আঃ)** তাঁর জাতির অহংকারপূর্ণ জবাবের উত্তরে দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তারা যখন বলল — “তুমি যদি সত্যবাদী হও, শাস্তি নিয়ে এসো,” তখন হূদ (আঃ) ঘোষণা করলেন — “এখনই তোমাদের উপর পড়েছে আল্লাহর রাগ ও অপবিত্রতা!” ⚡

🌸 “رِجْسٌۭ وَغَضَبٌۭ” — অর্থাৎ, আল্লাহর **অপবিত্র ক্রোধ ও শাস্তি** এখন তোমাদের উপর নেমে আসছে। তোমরা সত্যকে অস্বীকার করেছ, আর মিথ্যা দেবতাদের সামনে মাথা নত করেছো।

🌿 “أَتُجَـٰدِلُونَنِى فِىٓ أَسْمَآءٍۢ” — “তোমরা কি আমার সঙ্গে বিতর্ক করছ এমন নাম নিয়ে?” অর্থাৎ, তোমরা যাদের ‘দেবতা’ বলে ডাকো, তারা তো কেবল তোমাদের বানানো নাম! আল্লাহ এসবের কোনো প্রমাণ পাঠাননি। তারা কোনো কিছু সৃষ্টি করে না, বরং নিজেরাই সৃষ্টি — তবুও তোমরা তাদের উপাসনা করছ!

🌸 নবী হূদ (আঃ)-এর এই বক্তব্য ছিল এক যৌক্তিক ও দৃঢ় দাওয়াতি যুক্তি। তিনি তাদের শিরককে যুক্তির দ্বারা খণ্ডন করলেন — “তোমাদের দেবতারা কেবল নাম মাত্র, বাস্তব কোনো ক্ষমতা নেই।”

🌿 “فَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنِّى مَعَكُم مِّنَ ٱلْمُنتَظِرِينَ” — “সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো; আমিও অপেক্ষা করছি।” অর্থাৎ, যদি তোমরা আমার কথা না মানো, তাহলে এখন আল্লাহর সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করো। আমি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে অপেক্ষা করব, আর দেখো, সত্য ও মিথ্যার পরিণতি কেমন হয়।

🌸 এটি নবীসুলভ দৃঢ়তার প্রতীক — হূদ (আঃ) কখনো রাগ বা প্রতিশোধে নয়, বরং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে বললেন — “তোমরা অপেক্ষা করো, আল্লাহ বিচার করবেন।” 🌿

উদাহরণ:
যেমন কেউ অহংকারে সত্য অস্বীকার করে বলে — “আমি কিছুই বিশ্বাস করি না,” আর সত্যবাদী ব্যক্তি শান্তভাবে বলে — “তাহলে অপেক্ষা করো, বাস্তবই প্রমাণ দেবে।” নবী হূদ (আঃ)-এর উত্তরে ঠিক এই ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস দেখা যায়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসে যখন মানুষ অহংকারে সত্য অস্বীকার করে।
  • শিরক মানে মানুষ কর্তৃক বানানো নাম ও ধারণার পূজা করা।
  • দাওয়াতের শক্তি যুক্তি ও ঈমান — প্রতিশোধ নয়।
  • সত্যিকারের দাঈ আল্লাহর সিদ্ধান্তের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নবী হূদ (আঃ) বলেছিলেন — **“فَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنِّى مَعَكُم مِّنَ ٱلْمُنتَظِرِينَ”** 🤍 — “তোমরা অপেক্ষা করো; আমি-ও অপেক্ষা করছি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্য কখনো তর্কে নয়, সময়েই প্রমাণিত হয়। যারা আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, তাদের জন্য শেষ পরিণতি সর্বদা সুন্দর।** 🌿🤍
আয়াত ৭২
فَأَنجَيْنَـٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ بِرَحْمَةٍۢ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا ۖ وَمَا كَانُوا۟ مُؤْمِنِينَ
ফা-আঞ্জাইনা-হু ওয়াল্লাযীনা মা‘আহু বিঃ রাহমাতিম মিন্‌না, ওয়াকাত্বা‘না দা-বিরাল্লাযীনা কাজ্‌যাবু বিআয়াতিনা, ওয়া মা কানু মুমিনীন।
“অতঃপর আমি তাঁকে (হূদকে) ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমতের মাধ্যমে রক্ষা করলাম, এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছিল, তাদের মূলমূলাসহ ধ্বংস করে দিলাম; তারা ছিল না বিশ্বাসী।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছেন — নবী হূদ (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলাফল ও আদ জাতির পরিণতি। দীর্ঘ সময় দাওয়াত, উপদেশ ও সতর্কবার্তার পরও তারা যখন অহংকারে অটল রইল, তখন আল্লাহর শাস্তি নেমে এলো।

🌸 “فَأَنجَيْنَـٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ بِرَحْمَةٍۢ مِّنَّا” — “আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে আমার রহমতে রক্ষা করলাম।”
এখানে ‘রহমত’ শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়েছে — অর্থাৎ, শুধু উদ্ধার নয়, বরং আল্লাহর করুণা ও আশ্রয়। মুমিনরা রক্ষা পেলেন ঝড় ও বিপর্যয়ের মাঝেও, কারণ আল্লাহ তাদের সাথে ছিলেন 🤍

🌿 “وَقَطَعْنَا دَابِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا” — “আর যারা আমার নিদর্শনকে মিথ্যা বলেছিল, তাদের মূলমূলাসহ ধ্বংস করলাম।”
‘দাবির’ শব্দের অর্থ — গোড়া, শিকড়, শেষ প্রজন্ম পর্যন্ত। অর্থাৎ, আল্লাহ তাদের এমনভাবে ধ্বংস করেছিলেন, যাতে তাদের কোনো চিহ্ন, কোনো উত্তরসূরি, কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। ইতিহাসে তারা এক নিঃশেষ জাতিতে পরিণত হয়েছিল 🌪️

🌸 “وَمَا كَانُوا۟ مُؤْمِنِينَ” — “তারা ছিল না বিশ্বাসী।” অর্থাৎ, তাদের অন্তরে কোনো ঈমানের আলো প্রবেশ করেনি। তারা সব প্রমাণ, সব সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছে — তাই আল্লাহর রহমতের দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

🌿 এই আয়াত নবীদের প্রতি আল্লাহর প্রতিশ্রুতির প্রমাণ — **“আল্লাহ তাঁর রাসূলদের রক্ষা করেন, আর মিথ্যাবাদীদের ধ্বংস করেন।”** এটাই আল্লাহর সুন্নাহ — যেটি কখনো পরিবর্তিত হয় না 🌸

উদাহরণ:
যেমন ঝড় আসলে গাছের দুর্বল পাতা উড়ে যায়, কিন্তু মজবুত গাছ টিকে থাকে। তেমনি ঈমানদাররা আল্লাহর রহমতে টিকে যায়, আর অবিশ্বাসীরা হারিয়ে যায় ইতিহাসের অন্ধকারে 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর রহমতই মুমিনদের প্রকৃত আশ্রয়।
  • যারা সত্য অস্বীকার করে, তারা নিজেদের মূলসহ ধ্বংস হয়।
  • ধৈর্য ও ঈমান মানুষকে বিপদ থেকে মুক্তি দেয়।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার চিরন্তন — মুমিন রক্ষা পায়, কাফের ধ্বংস হয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَأَنجَيْنَـٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ بِرَحْمَةٍۢ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا ۖ وَمَا كَانُوا۟ مُؤْمِنِينَ”** 🤍 — “আমি রক্ষা করেছি হূদ ও তাঁর সঙ্গীদের রহমতের মাধ্যমে, আর অস্বীকারকারীদের মূলসহ ধ্বংস করেছি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর রহমতই নিরাপত্তা, আর তাঁর শাস্তি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো ঈমান ও আনুগত্য।** 🌿🤍
আয়াত ৭৩
وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَـٰلِحًۭا ۚ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥ ۖ قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ هَـٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمْ ءَايَةًۭ ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِىٓ أَرْضِ ٱللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٍۢ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ
ওয়া ইলা ছামূদা আখাহুম ছালিহাঁ, ক্বালা ইয়াকওমি উ‘বুদুল্লাহা, মা লাকুম মিন ইলাহিন গাইরুহু, কদ্‌ জা-আতকুম বাইইনাতুম মিন রাব্বিকুম, হাজিহি না-কাতুল্লাহি লাকুম আয়াহ, ফাযারুহা তা’কুল ফি আরদিল্লাহি, ওয়ালা তামাসসুহা বিসু’ইন্‌ ফাইআখুযাকুম আজাবুন আলীম।
“আর আমি পাঠিয়েছিলাম ছামূদ জাতির প্রতি তাদের ভাই সালেহকে। তিনি বললেন — ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো; তোমাদের জন্য তাঁর ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এক স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে — এই উষ্ট্রী আল্লাহর নিদর্শন তোমাদের জন্য। একে আল্লাহর জমিতে অবাধে চারণ করতে দাও, এবং একে কোনোভাবে ক্ষতি করো না, না হলে তোমাদের উপর আসবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে শুরু হয়েছে **নবী সালেহ (আঃ)** ও তাঁর জাতি **ছামূদ**-এর কাহিনি। ছামূদ জাতি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী ও ধনী — তারা পাহাড় কেটে ঘর বানাত, স্থাপত্যে পারদর্শী ছিল, কিন্তু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে তারা শিরক ও অহংকারে লিপ্ত ছিল।

🌸 “وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَـٰلِحًۭا” — “আর ছামূদ জাতির প্রতি তাদের ভাই সালেহ।” অর্থাৎ, নবী সালেহ (আঃ) ছিলেন তাদেরই মধ্য থেকে — এক সৎ, বিশ্বস্ত ও সম্মানিত ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাওহীদের দাওয়াতের জন্য প্রেরণ করেছিলেন।

🌿 “ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥ” — “আল্লাহর ইবাদত করো; তাঁর ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই।” এটি ছিল সকল নবীর মূল দাওয়াত — আল্লাহকে এক বলে মানা এবং তাঁর নির্দেশে জীবন পরিচালনা করা।

🌸 “قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ” — “তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এক স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে।” এই নিদর্শন ছিল — **আল্লাহর উষ্ট্রী (না-কাতুল্লাহ)** 🐪 এটি ছিল এক অলৌকিক চিহ্ন, যা পাথর থেকে অলৌকিকভাবে বেরিয়ে এসেছিল নবী সালেহ (আঃ)-এর দোয়ায়।

🌿 “هَـٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمْ ءَايَةًۭ” — “এই উষ্ট্রী আল্লাহর নিদর্শন তোমাদের জন্য।” অর্থাৎ, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা — তোমরা কি এটি সম্মান করবে, নাকি অস্বীকার করবে?

🌸 “فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِىٓ أَرْضِ ٱللَّهِ” — “একে আল্লাহর জমিতে অবাধে চারণ করতে দাও।” নবী সালেহ (আঃ) বললেন, এটিকে কেউ বাধা দেবে না, কারণ এটি আল্লাহর নির্ধারিত পরীক্ষা।

🌿 “وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٍۢ” — “একে কোনোভাবে ক্ষতি করো না।” অর্থাৎ, যদি তোমরা একে আঘাত করো বা হত্যা করো, তবে আল্লাহর শাস্তি নেমে আসবে। পরবর্তী আয়াতে দেখা যাবে — তারা ঠিক সেটিই করেছিল 😔

🌸 “فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ” — “না হলে তোমাদের উপর আসবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” নবী সালেহ (আঃ) আগেই সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তারা তাঁর সতর্কবাণীকে উপহাস করেছিল — আর সেই অহংকারই হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের ধ্বংসের কারণ।

উদাহরণ:
যেমন একজন শিক্ষক পরীক্ষার আগে সতর্ক করে বলেন — “এ প্রশ্নে ভুল করো না, তা না হলে নম্বর কাটা যাবে,” কিন্তু ছাত্র অহংকারে উপহাস করে, পরে শাস্তি এড়াতে পারে না। তেমনি নবী সালেহ (আঃ)-এর জাতিও সতর্কতা উপেক্ষা করে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর বার্তা প্রত্যাখ্যান করা মানেই নিজেকে বিপদে ফেলা।
  • আল্লাহর নিদর্শন কখনো তুচ্ছ নয় — এগুলো ঈমানের পরীক্ষা।
  • নবীদের দাওয়াতের মূল কথা সর্বদাই এক — “তাওহীদ”।
  • আল্লাহর রহমতের সাথে তাঁর শাস্তির সতর্কতাও স্মরণে রাখা জরুরি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নবী সালেহ (আঃ) বলেছিলেন — **“هَـٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمْ ءَايَةًۭ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِىٓ أَرْضِ ٱللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٍۢ”** 🤍 — “এই উষ্ট্রী আল্লাহর নিদর্শন; একে অবাধে চারণ করতে দাও, এবং একে ক্ষতি করো না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা, নবীদের সতর্কতার প্রতি আনুগত্য, আর অহংকার থেকে দূরে থাকা — এটাই মুক্তির পথ।** 🌿🤍
আয়াত ৭৪
وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعْدِ عَادٍۢ وَبَوَّأَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورًۭا وَتَنْحِتُونَ ٱلْجِبَالَ بُيُوتًۭا ۖ فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا۟ فِى ٱلْأَرْضِ مُفْسِدِينَ
ওয়াজকুরু ইয জা‘আলাকুম খুলাফা-আ মিম্‌ বা‘দি ‘আদ, ওয়া বাওয়া-আকুম ফিল আরদি তাত্তাখিযূনা মিন সুহুলিহা কুসূরা, ওয়া তানহিতূনাল জিবালা বুয়ূতা, ফাজকুরু আ’লা-আল্লাহি ওয়ালা তা’ছাও ফিল আরদি মুফসিদীন।
“আর স্মরণ করো — আল্লাহ তোমাদের করেছেন ‘আদ জাতির পরে উত্তরসূরি, এবং তিনি তোমাদেরকে ভূমিতে স্থায়ী আবাস দিয়েছেন। তোমরা এর সমতলভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ করো, আর পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করো। সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে অশান্তি করো না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 নবী সালেহ (আঃ) তাঁর জাতিকে এখন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তাদের ইতিহাস, নিয়ামত ও দায়িত্ব। তাঁরা ‘আদ জাতির পর পৃথিবীর উত্তরসূরি হয়েছিল — কিন্তু সেই শক্তি ও সম্পদ তাদের কৃতজ্ঞ না করে, অহংকারী করেছিল।

🌸 “إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعْدِ عَادٍۢ” — “আল্লাহ তোমাদের করেছেন ‘আদ জাতির পর উত্তরসূরি।” অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদের সেই জাতির স্থানে স্থাপন করেছেন, যাদের ধ্বংস তোমরা দেখেছো, যেন তোমরা শিক্ষা নাও — কিন্তু তোমরা তাদের পথেই চলছো!

🌿 “وَبَوَّأَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ” — “তিনি তোমাদেরকে ভূমিতে স্থায়ী আবাস দিয়েছেন।” আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছিলেন শক্তিশালী ভূমি, উর্বর জমি, আর পাহাড় কেটে ঘর বানানোর ক্ষমতা। তারা ছিল স্থাপত্যে পারদর্শী ও উন্নত সভ্যতার জাতি।

🌸 “تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورًۭا وَتَنْحِتُونَ ٱلْجِبَالَ بُيُوتًۭا” — “তোমরা সমতলভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ করো, আর পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করো।” তাদের শহরগুলো আজও ইতিহাসে পরিচিত, যেমন আল্লাহ বলেন — *“আর তোমরা পাহাড় কেটে গর্বের ঘর বানাও।”* কিন্তু সেই গর্বই তাদের পতনের কারণ হয়েছিল।

🌿 “فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ” — “স্মরণ করো আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ।” নবী সালেহ (আঃ) বললেন — “তোমরা আল্লাহর দান ভুলে গিয়েছো! তোমরা ভাবছো, তোমাদের শক্তিই তোমাদের রক্ষা করবে?”

🌸 “وَلَا تَعْثَوْا۟ فِى ٱلْأَرْضِ مُفْسِدِينَ” — “পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে অশান্তি করো না।” অর্থাৎ, আল্লাহর দানকে অন্যায়ে ব্যবহার কোরো না, গর্বে ও অত্যাচারে লিপ্ত হয়ো না। আল্লাহর দেয়া শক্তি মানুষকে অন্যায়ে নয়, সৎকাজে কাজে লাগাতে হবে 🌿

উদাহরণ:
যেমন কোনো রাজা কাউকে শক্তিশালী দুর্গ দেয়, কিন্তু সে সেই দুর্গ ব্যবহার করে অন্যের ক্ষতি করে — তাহলে সেই রাজা নিশ্চয়ই তাকে ক্ষমা করবেন না। তেমনি আল্লাহর দেয়া শক্তি দিয়ে যদি মানুষ অন্যায় করে, তবে সেই শক্তিই তার ধ্বংসের কারণ হয় 🌪️

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • নিয়ামত কৃতজ্ঞতার জন্য, অহংকারের জন্য নয়।
  • আল্লাহ মানুষের উপর দান করেন পরীক্ষা হিসেবে — সে কেমন ব্যবহার করে।
  • সমৃদ্ধ জাতির পতন শুরু হয় যখন তারা অন্যায়ে মত্ত হয়।
  • আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করা সফলতার মূল চাবি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا۟ فِى ٱلْأَرْضِ مُفْسِدِينَ”** 🤍 — “আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে ফিতনা করো না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর দান অহংকারের নয়, কৃতজ্ঞতার জন্য; শক্তি ও সম্পদ তখনই আশীর্বাদ, যখন তা ন্যায় ও ইমানের পথে ব্যবহার করা হয়।** 🌿🤍
আয়াত ৭৫
قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لِلَّذِينَ ٱسْتُضْعِفُوا۟ لِمَنْ ءَامَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَـٰلِحًۭا مُّرْسَلٌۭ مِّن رَّبِّهِۦ ۚ قَالُوٓا۟ إِنَّا بِمَآ أُرْسِلَ بِهِۦ مُؤْمِنُونَ
ক্বালাল মালা-উল্লাযীনা স্তাক্ববারু মিন কওমিহি লিল্লাযীনা স্তুদ্‌ইফু লিমান আ-মানা মিনহুম, আতা‘লামুনা আন্না ছালিহাঁ মুরসালুম মিন রাব্বিহি? ক্বালু ইন্না বিমা উরসিলা বিহি মুমিনুন।
“তাঁর সম্প্রদায়ের অহংকারী নেতারা দুর্বল বিশ্বাসীদের বলল — ‘তোমরা কি জানো, সালেহ তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী?’ তারা (মুমিনরা) বলল — ‘আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি, তিনি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে দেখা যায় — ছামূদ জাতির সমাজে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে এক বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। নবী সালেহ (আঃ)-এর দাওয়াতের পর, সমাজে দুটি শ্রেণি গঠিত হয়েছিল — অহংকারী নেতারা ও বিনয়ী বিশ্বাসীরা।

🌸 “ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟” — অর্থাৎ, জাতির সেই প্রভাবশালী ও ধনী নেতারা, যারা অহংকারে অন্ধ ছিল। তারা বিশ্বাসীদের উপহাস করে বলল — “তোমরা কি সত্যিই মনে করো, সালেহ আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী?”

🌿 “لِلَّذِينَ ٱسْتُضْعِفُوا۟” — অর্থাৎ, যারা সমাজে দুর্বল, দরিদ্র বা সাধারণ মানুষ ছিল। ইতিহাস সাক্ষী — সর্বদা সত্যের অনুসারীরা প্রথমে আসে সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে, আর বিরোধিতা আসে অহংকারী নেতাদের দিক থেকে।

🌸 তারা প্রশ্ন করল অবজ্ঞার সুরে, “তোমরা কি সত্যিই বিশ্বাস করো সালেহ (আঃ) আল্লাহর প্রেরিত?” তারা আসলে জানতে চায়নি, বরং ব্যঙ্গ করেছিল।

🌿 কিন্তু মুমিনরা দৃঢ়ভাবে উত্তর দিল — “إِنَّا بِمَآ أُرْسِلَ بِهِۦ مُؤْمِنُونَ” — “আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি, তিনি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন।”
কত সুন্দর ও শান্ত উত্তর — কোনো বিতর্ক নয়, কোনো তর্ক নয়, শুধু এক দৃঢ় ও শান্ত ঈমানের ঘোষণা 🌸

🌿 এভাবেই মুমিনরা যুগে যুগে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে — যখন প্রভাবশালী শ্রেণি উপহাস করেছে, তারা উত্তর দিয়েছে দৃঢ় বিশ্বাসে: “আমরা বিশ্বাস করি।”

উদাহরণ:
যেমন একজন শিক্ষার্থী যদি সঠিক পথে চলে, আর ক্লাসের ধনী ছাত্ররা বলে, “তুমি কি সত্যিই স্যারকে বিশ্বাস করো?” সে শান্তভাবে বলে — “হ্যাঁ, কারণ আমি জানি তিনি সত্য বলছেন।” তেমনি মুমিনরাও তাদের নবীর প্রতি এই দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেছিল। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকার সর্বদা ঈমানের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
  • সত্যের অনুসারী সাধারণত বিনয়ী ও সাধারণ মানুষ।
  • মুমিনের শক্তি হলো তার বিশ্বাস, তর্ক নয়।
  • সত্যিকার ঈমান দৃঢ় বিশ্বাসে প্রকাশ পায়, বিতর্কে নয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
মুমিনরা বলেছিল — **“إِنَّا بِمَآ أُرْسِلَ بِهِۦ مُؤْمِنُونَ”** 🤍 — “আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি, তিনি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন দুনিয়া উপহাস করে, তখনও মুমিন শান্তভাবে বলে — ‘আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী।’ ঈমানের শক্তি কথায় নয়, বিশ্বাসে প্রমাণিত হয়।** 🌿🤍
আয়াত ৭৬
قَالَ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوٓا۟ إِنَّا بِٱلَّذِىٓ ءَامَنتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ
ক্বালাল্লাযীনা স্তাক্ববারু, ইন্না বিল্লাযী আ-মানতুম বিহি কাফিরুন।
“অহংকারীরা বলল — ‘তোমরা যা বিশ্বাস করেছ, আমরা সেটি অস্বীকার করি।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে ছামূদ জাতির অহংকারী নেতাদের কঠোর প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। যখন বিনয়ী ও দুর্বল মানুষরা বলল, “আমরা সালেহ (আঃ)-এর প্রেরিত বার্তায় বিশ্বাস করি,” তখন অহংকারী শ্রেণি অহংকারভরে বলল — “আমরা তোমাদের সেই ঈমানকে অস্বীকার করি।”

🌸 তাদের এই বাক্য শুধু অবিশ্বাস নয়, বরং এক **বিদ্রূপ ও আত্মগর্বের প্রকাশ**। তারা মনে করেছিল, সত্য মানলে তাদের মর্যাদা কমে যাবে। অথচ সত্য অস্বীকার করেই তারা নিজেদের ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল।

🌿 “إِنَّا بِٱلَّذِىٓ ءَامَنتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ” — অর্থাৎ, “তোমরা যে বিশ্বাস করেছ, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।” তারা সত্যকে দেখতে পেয়েছিল, কিন্তু হৃদয়ের অন্ধত্বে তা অস্বীকার করেছিল। যেমন সূর্যকে চোখে দেখে কেউ বলে, “আমি বিশ্বাস করি না যে এটা আলো দেয়।” ☀️

🌸 তাদের এই উক্তি নবী সালেহ (আঃ)-এর প্রতি এক সরাসরি চ্যালেঞ্জও ছিল — তারা বলতে চেয়েছিল, “তুমি যা নিয়ে এসেছ, আমরা তা মানবো না, বরং তোমার ঈমানকে হাসির বিষয় বানাবো।” কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে — **অহংকারের হাসি খুব বেশিদিন টেকে না।** 🌿

উদাহরণ:
যেমন কেউ ডাক্তারের পরামর্শকে তুচ্ছ করে বলে — “আমি তোমার ওষুধে বিশ্বাস করি না,” কিন্তু রোগ যখন বাড়ে, তখন অনুশোচনা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তেমনি এই জাতিও শেষ পর্যন্ত অনুতপ্ত হলেও — তখন আর সময় ছিল না 😔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকার মানুষকে সত্য থেকে অন্ধ করে দেয়।
  • ঈমানের বিপরীত শুধু অবিশ্বাস নয়, অবজ্ঞাও।
  • সত্যের পথে যারা থাকে, তাদের উপহাস করা নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।
  • যারা ঈমানকে তুচ্ছ করে, তারা একদিন অনুতপ্ত হয় — কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
অহংকারীরা বলেছিল — **“إِنَّا بِٱلَّذِىٓ ءَامَنتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ”** 🤍 — “তোমরা যা বিশ্বাস করেছ, আমরা তা অস্বীকার করি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **অহংকার সত্যকে অস্বীকার করায়, আর বিনয় মানুষকে সত্যের কাছে নিয়ে যায়। বিশ্বাসীরা আলো খোঁজে, আর অহংকারীরা অন্ধকারে হারিয়ে যায়।** 🌿🤍
আয়াত ৭৭
فَعَقَرُوا۟ ٱلنَّاقَةَ وَعَتَوْا۟ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا۟ يَـٰصَـٰلِحُ ٱئْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلْمُرْسَلِينَ
ফা‘আকারুন্‌ না-কাত, ওয়া ‘আতাউ ‘আন আমরি রাব্বিহিম, ওয়া ক্বালু, ইয়াসালিহু, ই'তিনা বিমা তা‘ইদুনা ইন্‌ কুনতা মিনাল মুরসালীন।
“অতঃপর তারা উষ্ট্রীটিকে হত্যা করল এবং তাদের প্রভুর আদেশ অমান্য করল। তারা বলল — ‘হে সালেহ! তুমি যদি সত্যিই প্রেরিত নবী হও, তবে আমাদের প্রতি যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ, তা নিয়ে এসো।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে ছামূদ জাতির সবচেয়ে বড় অপরাধ — তারা আল্লাহর নিদর্শন **“না-কাতুল্লাহ” (উষ্ট্রী)**-কে হত্যা করেছিল। এই উষ্ট্রী ছিল আল্লাহর এক মহান চিহ্ন ও পরীক্ষা, কিন্তু তারা সেই নিদর্শনকে অবজ্ঞা করে ধ্বংস করল।

🌸 “فَعَقَرُوا۟ ٱلنَّاقَةَ” — অর্থাৎ, তারা উষ্ট্রীটিকে জবাই করল। ইতিহাসে বলা হয় — তাদের নেতাদের মধ্যে এক ব্যক্তি, **কুদার ইবনে সালিফ**, প্রথম আঘাত করে উষ্ট্রীটিকে হত্যা করেছিল, আর বাকিরা তাতে সম্মতি দিয়েছিল। 🌿 তারা ভেবেছিল, নবী সালেহ (আঃ)-এর সতর্কতা মিথ্যা; কিন্তু বাস্তবে তারা নিজের হাতে নিজের ধ্বংস লিখে ফেলেছিল।

🌸 “وَعَتَوْا۟ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ” — “তারা তাদের প্রভুর আদেশ অমান্য করল।” অর্থাৎ, তারা কেবল এক নিদর্শন হত্যা করেনি, বরং আল্লাহর আদেশ ও হুঁশিয়ারিকে উপহাস করেছে। তাদের এই অপরাধ শিরক ও বিদ্রোহের চূড়ান্ত সীমা ছিল।

🌿 “وَقَالُوا۟ يَـٰصَـٰلِحُ ٱئْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ” — “তারা বলল, হে সালেহ! এখন সেই শাস্তি নিয়ে এসো।”
কী ভয়ঙ্কর ঔদ্ধত্য! তারা আল্লাহর শাস্তিকে চ্যালেঞ্জ করল — যেন তারা সত্যিই আল্লাহর ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে! 🌸 তারা বলল, “তুমি যদি সত্যিই নবী হও, তাহলে সেই শাস্তি এখনই পাঠিয়ে দাও!” অথচ তারা বুঝল না — **যখন মানুষ আল্লাহর আদেশকে ব্যঙ্গ করে, তখনই ধ্বংসের ঘড়ি বেজে যায়।** ⚡

উদাহরণ:
যেমন একজন লোক আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে — “দেখি, যদি আগুন সত্যিই পোড়ায়, তাহলে আমাকে জ্বালাও!” 🔥 আর পরক্ষণেই আগুন তাকে গ্রাস করে। তেমনি এই জাতিও আল্লাহর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনল।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি অবজ্ঞা করা সবচেয়ে বড় অন্যায়।
  • যখন মানুষ অহংকারে আল্লাহর আদেশকে উপহাস করে, তখন ধ্বংস অনিবার্য হয়।
  • নবীদের সতর্কতা কখনো তুচ্ছ নয় — সেটিই বাস্তব সত্য।
  • অপরাধ কখনো একা আসে না — তা সবসময় অহংকার ও অবজ্ঞার ফল।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَعَقَرُوا۟ ٱلنَّاقَةَ وَعَتَوْا۟ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ”** 🤍 — “তারা উষ্ট্রীটিকে হত্যা করল এবং তাদের প্রভুর আদেশ অমান্য করল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যে মানুষ আল্লাহর চিহ্নকে উপহাস করে, সে নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনে। আর যে বিনয়ে আল্লাহর নিদর্শনকে সম্মান করে, তার জন্য খুলে যায় রহমতের দরজা।** 🌿🤍
আয়াত ৭৮
فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ
ফা-আখাযাতহুমুর রজফাহ, ফা-আসবাহু ফি দারিহিম জাসিমীন।
“অতঃপর তাদেরকে গ্রাস করল এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প, এবং তারা নিজ নিজ গৃহে নিথর হয়ে পড়ে রইল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ছামূদ জাতির পরিণতির কথা জানাচ্ছেন। তারা নবী সালেহ (আঃ)-এর সতর্কবার্তাকে উপহাস করেছিল, আল্লাহর নিদর্শন “উষ্ট্রী”-কে হত্যা করেছিল, এবং চ্যালেঞ্জ করেছিল — “শাস্তি আনো!” এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে এলো ভয়াবহ শাস্তি ⚡

🌸 “فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ” — “তাদেরকে গ্রাস করল এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প।” এটি ছিল এক ধ্বংসাত্মক কম্পন, যা তাদের ঘর, দুর্গ, প্রাসাদ সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই তাদের শক্তিশালী নগরী পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে। 🌿 আল্লাহর এই শাস্তি কেবল মাটি কাঁপানো ছিল না — এটি ছিল আল্লাহর ক্রোধের প্রতিফলন, যা তাদের হৃদয় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

🌸 “فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ” — “এবং তারা নিজ নিজ গৃহে নিথর হয়ে পড়ে রইল।”
অর্থাৎ, তারা সবাই একই অবস্থায় মারা গেল, কেউ দাঁড়িয়ে রইল না, কেউ পালাতে পারল না। একসময় যারা পাহাড় কেটে ঘর বানিয়েছিল, আজ তারা সেই ঘরের মধ্যেই মৃতদেহ হয়ে পড়ে রইল। 🌿 তাদের সেই শক্তি, গর্ব ও ধন সম্পদ — কোনো কিছুই তাদেরকে রক্ষা করতে পারল না। পৃথিবী তাদের জন্য কবর হয়ে গেল।

গভীর উপলব্ধি:
এই আয়াতের প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে আছে শিক্ষা — 👉 “ফা-আখাযাতহুম” — আল্লাহর শাস্তি এক মুহূর্তে এসে পড়ে, যখন মানুষ ভাবতে থাকে, “এখন কিছুই হবে না।” 👉 “ফি দারিহিম” — তারা তাদের নিজ বাড়িতেই ধ্বংস হয়েছিল; নিরাপদ ভেবে যে আশ্রয় নিয়েছিল, সেটিই তাদের কবরে পরিণত হয়।

🌸 এটি প্রমাণ করে — **কোনো প্রাসাদ, দুর্গ, সম্পদ বা শক্তি আল্লাহর সিদ্ধান্তের সামনে কিছুই নয়।** 🌿

উদাহরণ:
যেমন কেউ পাহাড়ের নিচে গিয়ে বলে, “এই পাহাড় কখনও নড়বে না,” কিন্তু মুহূর্তেই ভূমিকম্পে পাহাড় ভেঙে যায় — ঠিক তেমনি, যারা নিজেদের শক্তির উপর ভরসা করে আল্লাহকে ভুলে যায়, তারা এক ঝলকেই ধ্বংস হয়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সতর্কতা উপহাসের নয়, তা জীবন বদলের আহ্বান।
  • অহংকারই জাতির ধ্বংসের মূল কারণ।
  • আল্লাহর সিদ্ধান্ত সর্বশক্তিমান — কোনো নিরাপত্তা তাঁকে ঠেকাতে পারে না।
  • মানুষের ঘর তখনই নিরাপদ, যখন তার ভিতরে থাকে ঈমান ও তাকওয়া।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ”** 🤍 — “তাদেরকে গ্রাস করল ভূমিকম্প, এবং তারা নিজ গৃহে নিথর হয়ে গেল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন মানুষ আল্লাহর সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে, তখন আল্লাহর শাস্তি আসে নীরবে কিন্তু নিশ্চিতভাবে। আর যারা বিনয়ী ও ঈমানদার, তাদের ঘরই থাকে আল্লাহর নিরাপত্তায়।** 🌿🤍
আয়াত ৭৯
فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَـٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّـٰصِحِينَ
ফাতাওয়াল্লা ‘আনহুম, ওয়া ক্বালা ইয়াকওমি লাকদ্‌ আবলাগ তুকুম রিসালাতা রাব্বি ওয়া নাছাহতু লাকুম, ওয়ালাকিন লা তুহিব্বুনান্‌ নাসিহীন।
“অতঃপর তিনি (সালেহ) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন — ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম আমার প্রভুর বার্তা এবং তোমাদের জন্য উপদেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা উপদেশদাতাদের পছন্দ করো না।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 ছামূদ জাতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর, নবী সালেহ (আঃ) গভীর বেদনায় তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন এই কথাগুলো। এটি শুধু একটি শোকবার্তা নয় — বরং এক নবীর অন্তরের আর্তনাদ 💔

🌸 “فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ” — “তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।” অর্থাৎ, যখন দেখলেন তাদের ঘর-বাড়ি ভস্মীভূত, মৃতদেহ নিথর হয়ে পড়ে আছে, তখন সালেহ (আঃ) মুখ ফিরিয়ে নিলেন — কারণ এখন আর তাদের সঙ্গে কথা বলার কেউ বেঁচে নেই। 🌿 তিনি দুঃখে ভরা কণ্ঠে বললেন — “হে আমার কওম!” — দেখো, ধ্বংসের পরও তিনি তাদেরকে “আমার জাতি” বলে ডাকছেন — কারণ এক নবীর হৃদয়ে ভালোবাসা কখনো মরে না। 🤍

🌸 “لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّى” — “আমি তো তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলাম।” এটি নবীদের দায়িত্বের সমাপ্তির ঘোষণা — তিনি দাওয়াতের কাজ পূর্ণ করেছেন, আর এখন ফলাফল আল্লাহর হাতে।

🌿 “وَنَصَحْتُ لَكُمْ” — “আমি তোমাদের উপদেশ দিয়েছিলাম।” অর্থাৎ, আমি ভালোবাসা দিয়ে, কোমলভাবে, যুক্তি ও সতর্কতায় তোমাদের বুঝিয়েছিলাম — কিন্তু তোমরা শুনতে চাওনি।

🌸 “وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّـٰصِحِينَ” — “কিন্তু তোমরা উপদেশদাতাদের পছন্দ করো না।” এটি এক গভীর বাস্তব সত্য — অধিকাংশ মানুষ উপদেশ শুনতে পছন্দ করে না। তারা চায় প্রশংসা, না যে কেউ সত্য বলুক। 🌿 তাই সালেহ (আঃ) বললেন — “তোমরা সত্যকে ভালোবাসনি, আর যারা সত্য বলেছে, তাদেরও ঘৃণা করেছিলে।”

উদাহরণ:
যেমন একজন ডাক্তার ওষুধের পরামর্শ দেন, কিন্তু রোগী বলে — “আমার ভালো লাগছে না!” পরে রোগ যখন বাড়ে, তখন অনুশোচনা ছাড়া কিছু থাকে না। তেমনি নবীর দাওয়াতও ছিল আত্মার চিকিৎসা, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল — ফল হলো ধ্বংস।

🌸 এই আয়াত নবীদের চরিত্রের এক মহিমান্বিত দিকও প্রকাশ করে — শত্রুরাও ধ্বংস হলে, নবীরা কান্না করেন, রাগ নয়, বরং দয়া ও অনুশোচনায় হৃদয় ভরে যায় 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • নবীদের দায়িত্ব হলো বার্তা পৌঁছে দেয়া — ফলাফল আল্লাহর হাতে।
  • উপদেশ শুনতে না চাওয়া মানুষকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যায়।
  • সত্যের দাঈ কখনো ঘৃণা করেন না; এমনকি শত্রুর ধ্বংসেও তাঁর হৃদয়ে মায়া থাকে।
  • আল্লাহর বার্তা প্রত্যাখ্যান করা মানে নিজেকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
নবী সালেহ (আঃ) বলেছিলেন — **“لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّـٰصِحِينَ”** 🤍 — “আমি তো তোমাদের উপদেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা উপদেশদাতাদের পছন্দ করোনি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যের বার্তা সবসময় সহজ নয়, কিন্তু যে হৃদয় উপদেশ গ্রহণ করে, সে-ই আল্লাহর রহমতের ছায়ায় নিরাপদ।** 🌿🤍
আয়াত ৮০
وَلُوطًۭا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَتَأْتُونَ ٱلْفَـٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍۢ مِّنَ ٱلْعَـٰلَمِينَ
ওয়া লূতান ইয ক্বালা লিকওমিহি, আতা’তূনাল ফাহিশাতা, মা সাবাকাকুম বিহা মিন আহাদিম মিনাল ‘আলামীন।
“আর (আমি পাঠিয়েছিলাম) লূতকে, যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন — ‘তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছো, যা তোমাদের আগে বিশ্বের কেউই করেনি?’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে শুরু হয়েছে নবী **লূত (আঃ)** ও তাঁর জাতির কাহিনি। তারা এমন এক জঘন্য পাপে লিপ্ত ছিল, যা মানবজাতির ইতিহাসে প্রথমবার ঘটেছিল — পুরুষে পুরুষে যৌন সম্পর্ক।

🌸 “أَتَأْتُونَ ٱلْفَـٰحِشَةَ” — “তোমরা কি অশ্লীল কাজ করছো?” এখানে “আল-ফাহিশাহ” শব্দটি এসেছে, যার অর্থ — সীমা অতিক্রম করা, লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য কাজ। নবী লূত (আঃ) কঠোর ভাষায় নয়, বরং **আশ্চর্য ও ঘৃণার সুরে** প্রশ্ন করছেন — “তোমরা কি সত্যিই এমন কাজ করছো?”

🌿 “مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍۢ مِّنَ ٱلْعَـٰلَمِينَ” — “যা তোমাদের আগে বিশ্বের কেউই করেনি।” অর্থাৎ, তোমরা এমন এক অপরাধের সূচনা করেছো, যা ইতিহাসে প্রথম — পূর্ববর্তী কোনো জাতি, কোনো মানুষ, এমনকি কোনো প্রাণীও করেনি। 🌸 এটি শুধু পাপ নয়, বরং মানবপ্রকৃতি ও সমাজবিন্যাসের বিপর্যয়। তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করেছিল, আর সেই সীমালঙ্ঘনের ফলই ছিল তাদের ধ্বংস।

🌿 নবী লূত (আঃ) আল্লাহর আদেশে তাদের কাছে দাওয়াত দিলেন, তাদেরকে সতর্ক করলেন, কিন্তু তারা বরং তাঁর উপদেশকে ব্যঙ্গ করেছিল — “তুমি তো অদ্ভুত কথা বলছো, কেউ এমন আগে বলেনি!” অথচ সত্যের আহ্বান নতুন হলেও, সেটিই ছিল মুক্তির পথ।

গভীর উপলব্ধি:
এই আয়াত কেবল ইতিহাস নয় — এটি এক চিরন্তন বার্তা: 👉 যখন মানুষ পাপকে ‘স্বাভাবিক’ মনে করতে শুরু করে, 👉 যখন সমাজ লজ্জাকে ত্যাগ করে, তখনই ধ্বংসের বীজ বপন হয়। 🌿 লূত (আঃ) তাঁদের মনে করিয়ে দিলেন — “তোমরা এমন এক পাপ করছো, যা কেউ আগে করেনি।” অর্থাৎ, তোমাদের এই কাজ নতুন হলেও, তা মানবতার জন্য ধ্বংসাত্মক।

উদাহরণ:
যেমন কোনো ওষুধ মানুষের জীবন বাঁচায়, কিন্তু কেউ যদি সেটিকে বিষের মতো ব্যবহার করে, তবে সেটিই তার মৃত্যুর কারণ হয়। তেমনি যৌনতা — যা পরিবার গঠনের নিয়ামত, যখন বিকৃতভাবে ব্যবহার হয়, তখন তা সমাজের ধ্বংস ডেকে আনে। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • পাপ যখন স্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন সমাজ ধ্বংসের পথে যায়।
  • নবীরা সর্বদাই মানুষকে নৈতিক সীমা ও পবিত্রতার দিকে আহ্বান করেছেন।
  • মানব ইতিহাসে প্রথম সমকামিতার সূচনা করেছিল লূত (আঃ)-এর জাতি।
  • আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন মানেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধ্বংস করা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَتَأْتُونَ ٱلْفَـٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍۢ مِّنَ ٱلْعَـٰلَمِينَ”** 🤍 — “তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছো, যা তোমাদের আগে বিশ্বের কেউই করেনি?” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন পাপকে গর্বের বিষয় বানানো হয়, তখন আল্লাহর গজব অবশ্যম্ভাবী। আর যারা বিনয়ে তওবা করে, তাদের জন্য খুলে যায় রহমতের দরজা।** 🌿🤍
আয়াত ৮১
إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهْوَةًۭ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌۭ مُّسْرِفُونَ
ইন্নাকুম লাতা’তূনার রিজালা শাহওয়াতাম মিন দুনিন্‌ নিসা, বাল আনতুম কওমুম মুসরিফূন।
“তোমরা তো কামনাবশে পুরুষদের কাছে গমন করো, নারীদের পরিবর্তে! বরং তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী **লূত (আঃ)** তাঁর জাতির নিকৃষ্ট কর্মের প্রকৃতি ও বিকৃত মানসিকতা প্রকাশ করেছেন। তিনি সরাসরি ও স্পষ্টভাবে বলেছেন — “তোমরা এমন এক কাজ করছো যা মানব প্রকৃতি ও বিবেকবোধের পরিপন্থী।”

🌸 “لَتَأْتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهْوَةًۭ” — “তোমরা পুরুষদের কাছে গমন করো কামনাবশে।” অর্থাৎ, তোমরা এমন প্রবৃত্তি অনুসরণ করছো যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন নারী-পুরুষের মাঝে — কিন্তু তোমরা সেটিকে বিকৃত করে পুরুষের প্রতি প্রয়োগ করছো। 🌿 এই আচরণ ছিল প্রকৃতি, বিবেক ও ধর্ম — তিনেরই বিরুদ্ধে। তাই নবী লূত (আঃ) “শাহওয়াতান” (কামনা) শব্দটি ব্যবহার করেছেন — কারণ এটি ছিল নৈতিক আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং পশুতুল্য বিকৃতি।

🌸 “مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِ” — “নারীদের পরিবর্তে!” অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদের জন্য নারীদের সৃষ্টি করেছেন বৈধ ও পবিত্র উপায়ে আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য, অথচ তোমরা সেই পবিত্র পথ ছেড়ে বিকৃত ও অপ্রাকৃত পথ বেছে নিয়েছো। 🌿 এই বাক্যটি বোঝায় — **যখন মানুষ আল্লাহর দেয়া সীমা অতিক্রম করে, তখন সে প্রকৃতি থেকে বিচ্যুত হয়, আর সেই বিচ্যুতিই ধ্বংসের সূচনা।**

🌸 “بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌۭ مُّسْرِفُونَ” — “বরং তোমরা এক সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।” এখানে “مُسْرِفُونَ” শব্দের অর্থ হলো — যারা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, যারা সীমা ভাঙে, যারা আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মকে উপহাস করে। 🌿 অর্থাৎ, তোমরা কেবল পাপ করছো না, বরং পাপকে **গর্বের বিষয়** বানিয়েছো। এটি ছিল তাদের অপরাধের চূড়ান্ত ধাপ।

গভীর উপলব্ধি:
এই আয়াতে তিনটি বড় শিক্ষা রয়েছে — ১️⃣ আল্লাহ মানব প্রকৃতি নির্ধারণ করেছেন পবিত্রতার জন্য। ২️⃣ যখন কামনা নিয়ন্ত্রণহীন হয়, তখন তা নৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনে। ৩️⃣ সীমালঙ্ঘন (ইস্রাফ) শুধু বস্তুগত নয় — নৈতিক ইস্রাফই সবচেয়ে বিপজ্জনক।

🌸 নবী লূত (আঃ) তাদের বোঝাতে চেয়েছিলেন — “তোমরা কেবল পাপ করছো না, বরং এমন পথ নিচ্ছো যা মানব সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনবে।”

উদাহরণ:
যেমন নদী যদি নিজের তীর ভেঙে বয়ে যায়, তখন তা আর কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং ধ্বংস করে। তেমনি মানুষ যখন নিজের প্রাকৃতিক সীমা ভাঙে, তখন তার সমাজ ও আত্মা — দুটোই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর বিধান মানব প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ — তা ভাঙলে ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।
  • যৌন আকাঙ্ক্ষা পবিত্র যখন তা হালাল পথে হয়।
  • অবাধ কামনা ও বিকৃতি সমাজে নৈতিক অন্ধকার সৃষ্টি করে।
  • সীমা অতিক্রম মানেই আল্লাহর গজবের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهْوَةًۭ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌۭ مُّسْرِفُونَ”** 🤍 — “তোমরা নারীদের পরিবর্তে পুরুষদের কাছে কামনাবশে গমন করো; তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন সমাজ পাপকে আনন্দে গ্রহণ করে, তখন আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসে নীরবে, কিন্তু নির্ভুলভাবে। আর যারা আল্লাহর সীমা মানে, তাদের জন্য আছে নিরাপত্তা ও শান্তি।** 🌿🤍
আয়াত ৮২
وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِۦٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓا۟ أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ إِنَّهُمْ أُنَاسٌۭ يَتَطَهَّرُونَ
ওয়া মা কানা জাওয়াবা কওমিহি ইল্লা আন ক্বালু, আখরিজুহুম মিন কারিয়াতিকুম, ইন্নাহুম উনাসুং ইয়াতাতাহ্হারুন।
“তাঁর জাতির জবাব ছিল কেবল এই যে তারা বলল — ‘এদের তোমাদের শহর থেকে বের করে দাও, কারণ তারা তো নিজেদের পবিত্র রাখতে চায়।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে নবী **লূত (আঃ)**-এর জাতির লজ্জাজনক প্রতিক্রিয়া। যখন তিনি তাদের অশ্লীলতা ও বিকৃত কর্মের বিরুদ্ধে সতর্ক করলেন, তখন তারা তাঁর দাওয়াতের জবাবে যুক্তি বা চিন্তা নয়, বরং বিদ্রূপ ও বিদ্বেষ দেখিয়েছিল।

🌸 “وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِۦٓ” — “তাঁর জাতির জবাব ছিল না (কোনো যুক্তি বা প্রমাণ)।” অর্থাৎ, তারা নবীর কথার সত্যতা বুঝেও, অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নিল। তারা নৈতিক যুক্তির জবাব দিতে না পেরে, বরং নবী ও তাঁর অনুসারীদের সমাজ থেকে বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিল।

🌿 “أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ” — “তাদের তোমাদের শহর থেকে বের করে দাও।” তারা বলল — “এদের শহরে থাকা উচিত নয়, কারণ তারা আমাদের মতো নয়!” এটি ছিল **সত্যবিমুখ সমাজের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া** — যারা পাপ ভালোবাসে, তারা ধার্মিকদের সহ্য করতে পারে না। 🌸 তারা ভাবল, যদি এই পবিত্র মানুষগুলো শহরে থাকে, তাহলে তাদের বিকৃত আনন্দে বাধা আসবে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল, **“এদের বহিষ্কার করো।”**

🌿 “إِنَّهُمْ أُنَاسٌۭ يَتَطَهَّرُونَ” — “কারণ তারা তো নিজেদের পবিত্র রাখতে চায়!” — কী ভয়ঙ্কর বিদ্রূপ! তারা “পবিত্রতা”কে অপরাধ মনে করেছিল! তারা বলল — “এরা নাকি আমাদের মতো নয়, এরা নিজেদের শুদ্ধ রাখতে চায় — তাই এদের বের করে দাও।” 🌸 এই বাক্যটি দেখায়, যখন পাপ সমাজে স্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন **পবিত্রতা অপরাধে পরিণত হয়**। যারা সত্যে থাকে, তাদের ‘অদ্ভুত’ বলা হয়, যেমন নবী ﷺ বলেছেন — *“ইসলাম শুরু হয়েছিল অপরিচিত হিসেবে, এবং আবার অপরিচিত হিসেবেই ফিরে যাবে।”* 🌿

গভীর উপলব্ধি:
এই আয়াত আজকের সমাজেও প্রযোজ্য — 👉 যখন কেউ পাপ থেকে দূরে থাকে, তাকে বলা হয় “অতিরিক্ত ধার্মিক”। 👉 যখন কেউ পর্দা করে, তাকওয়া অবলম্বন করে, তখন তাকে উপহাস করা হয়। অথচ ইতিহাস বলছে — যারা সত্যে অবিচল থাকে, তারাই আল্লাহর রহমতের ছায়ায় থাকে 🤍

🌿 নবী লূত (আঃ)-এর জাতি এক মহা ভুল করেছিল — তারা নিজেদের বিকৃত জীবনধারাকে “স্বাভাবিক” মনে করেছিল, আর নবীকে বলেছিল “অসামঞ্জস্যপূর্ণ”। কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে, বিকৃতই ছিল অস্বাভাবিক, আর পবিত্রতাই ছিল মানদণ্ড।

উদাহরণ:
যেমন কেউ অসুস্থ অবস্থায় ওষুধ খাওয়াকে “অস্বাভাবিক” মনে করে, অথচ অসুস্থ জীবনকেই স্বাভাবিক ভাবে — তেমনি এই জাতি পাপকেই স্বাভাবিক বানিয়েছিল। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • যখন সমাজ পাপে মগ্ন হয়, তখন পবিত্রতা উপহাসের বিষয় হয়ে যায়।
  • আল্লাহর পথে চলা কখনো জনপ্রিয় নয়, কিন্তু সেটিই মুক্তির পথ।
  • অহংকারী জাতি কখনো যুক্তি দেয় না — তারা শুধু সত্যকে দমন করতে চায়।
  • যে নিজের আত্মাকে শুদ্ধ রাখতে চায়, সে-ই আল্লাহর প্রিয় বান্দা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ إِنَّهُمْ أُنَاسٌۭ يَتَطَهَّرُونَ”** 🤍 — “তাদের শহর থেকে বের করে দাও, কারণ তারা নিজেদের পবিত্র রাখতে চায়।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন দুনিয়া পাপকে স্বাভাবিক করে তোলে, তখন আল্লাহর পথে থাকা কঠিন হয়, কিন্তু সেই পথই জান্নাতের পথ। পবিত্রতা আজ অপরিচিত, কিন্তু আল্লাহর কাছে সেটিই সম্মানের প্রতীক।** 🌿🤍
আয়াত ৮৩
فَأَنجَيْنَـٰهُ وَأَهْلَهُۥٓ إِلَّا ٱمْرَأَتَهُۥ كَانَتْ مِنَ ٱلْغَـٰبِرِينَ
ফা-আঞ্জাইনাহু ওয়া আহলাহু, ইল্লামরআতাহু, কানাত মিনাল গাবিরীন।
“অতঃপর আমরা তাঁকে (লূতকে) ও তাঁর পরিবারকে রক্ষা করেছিলাম, কেবল তাঁর স্ত্রী ব্যতীত; সে ছিল পিছনে থাকা ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করছেন — যারা সত্যে অবিচল থাকে, আল্লাহ তাঁদেরকে রক্ষা করেন; আর যারা সত্যকে উপহাস করে, তারা নিজেরাই ধ্বংসের পথে চলে যায়। 🌸 “فَأَنجَيْنَـٰهُ وَأَهْلَهُۥٓ” — “আমরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে রক্ষা করেছিলাম।” অর্থাৎ, যখন আল্লাহর শাস্তি নেমে এলো, তখন লূত (আঃ) ও তাঁর ঈমানদার পরিবারকে ফেরেশতারা বের করে আনলেন। তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ছিল নিরাপত্তা ও করুণা 🌿

🌸 “إِلَّا ٱمْرَأَتَهُۥ” — “কেবল তাঁর স্ত্রী ব্যতীত।” সে লূত (আঃ)-এর স্ত্রী হলেও, অন্তরে ছিল তাঁর জাতির পক্ষের সমর্থন ও সহানুভূতি। বাহ্যিকভাবে সে নবীর সঙ্গে ছিল, কিন্তু হৃদয়ে ছিল পাপীদের দলে 💔 🌿 এটি প্রমাণ করে — **আত্মীয়তার বন্ধন নয়, ঈমানই আসল রক্ষা।** নবীর স্ত্রী হওয়া তাকে বাঁচাতে পারেনি, কারণ তার হৃদয় ছিল কাফেরদের সঙ্গে।

🌸 “كَانَتْ مِنَ ٱلْغَـٰبِرِينَ” — “সে ছিল পিছনে থাকা (ধ্বংসপ্রাপ্তদের) অন্তর্ভুক্ত।” অর্থাৎ, যখন লূত (আঃ) ও তাঁর পরিবার শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছিল, তখন সে পিছনে রইল — মন ছিল সেই বিকৃত সমাজের প্রতি আকৃষ্ট, ফলে আল্লাহর শাস্তি তাকে গ্রাস করল। 🌿 এটি এক ভয়াবহ শিক্ষা — বাহ্যিকভাবে ধার্মিক পরিবারের অংশ হওয়া যথেষ্ট নয়; হৃদয়ের ঈমানই রক্ষা করে।

গভীর উপলব্ধি:
🌸 এই আয়াত প্রমাণ করে — আল্লাহর বিচার কখনো জাতিগত বা পারিবারিক নয়; তা সর্বদা **আন্তরিক ঈমান ও আমল**-এর উপর নির্ভরশীল। 👉 কেউ নবীর পরিবারে থেকেও ধ্বংস হতে পারে, যদি সে সত্যকে অস্বীকার করে। 👉 আবার কেউ অপরিচিত হয়েও রক্ষা পেতে পারে, যদি তার হৃদয়ে থাকে ঈমান। 🌿 লূত (আঃ)-এর স্ত্রী ছিল বাহ্যিকভাবে “মুমিনদের মাঝে”, কিন্তু অন্তরে ছিল “অপরাধীদের মাঝে” — তাই সে “গাবিরীন” — পিছনে থাকা, ধ্বংসপ্রাপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত হলো।

উদাহরণ:
যেমন একটি নৌকা ডুবছে, আর একজন যাত্রী বলছে — “আমি ক্যাপ্টেনের স্ত্রী, আমি ডুবব না!” কিন্তু যদি সে জাহাজেই থাকে, তাহলে সে-ও ডুবে যাবে। তেমনি লূতের স্ত্রী — সত্যের জাহাজ ত্যাগ করেনি, তাই শাস্তি থেকে বাঁচেনি।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর রক্ষা কেবল ঈমানদারদের জন্য — সম্পর্ক বা মর্যাদার কারণে নয়।
  • একই ঘরে থেকেও হৃদয় ভিন্ন হলে, পরিণতিও ভিন্ন হয়।
  • আল্লাহর আদেশ মানার ক্ষেত্রে দেরি বা দ্বিধা ধ্বংস ডেকে আনে।
  • সত্যের সঙ্গ ত্যাগ মানে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَأَنجَيْنَـٰهُ وَأَهْلَهُۥٓ إِلَّا ٱمْرَأَتَهُۥ كَانَتْ مِنَ ٱلْغَـٰبِرِينَ”** 🤍 — “আমরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে রক্ষা করেছিলাম, কিন্তু তাঁর স্ত্রী ছিল ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর পথে একাই হলেও এগিয়ে যাও, কারণ যারা পেছনে থাকে, তাদের সঙ্গে রয়ে যাওয়া মানেই ধ্বংস।** 🌿🤍
আয়াত ৮৪
وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًۭا فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُجْرِمِينَ
ওয়া আম্তারনা ‘আলাইহিম মাতারান, ফানযুর্‌ কাইফা কানা ‘আকিবাতুল মুজরিমীন।
“আর আমরা তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম (শাস্তির) এক বৃষ্টি; অতএব দেখো — অপরাধীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল!” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা জানাচ্ছেন **লূত (আঃ)**-এর জাতির উপর নেমে আসা ভয়ঙ্কর শাস্তির বিবরণ। তারা অশ্লীলতা, বিকৃতি ও অহংকারে মগ্ন ছিল, নবীর সতর্কবার্তা উপহাস করেছিল — অবশেষে আল্লাহর গজব নেমে এলো ⚡

🌸 “وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًۭا” — “আমরা তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম এক বৃষ্টি।” এটি ছিল সাধারণ বৃষ্টি নয়, বরং **পাথরের বৃষ্টি** — আকাশ থেকে পাথরের টুকরো আগুনের মতো ঝরে পড়েছিল। 🌿 প্রত্যেকটি পাথর ছিল আল্লাহর আদেশে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে নির্ধারিত, যাতে কেউ পালাতে না পারে। কুরআনের অন্য জায়গায় বলা হয়েছে — *“আর আমরা তাদের উপর ঝরিয়েছিলাম পোড়া মাটির পাথর।”* (সূরা হূদ: ৮২)

🌸 এই পাথরগুলো তাদের শহরকে ধ্বংস করে দেয়, ভূমি উল্টে যায়, ঘর-বাড়ি মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। এক মুহূর্তেই সেই বিকৃত সমাজ ইতিহাস হয়ে গেল।

🌿 “فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُجْرِمِينَ” — “অতএব দেখো, অপরাধীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল।” আল্লাহ তাআলা এখানে আমাদেরকে আহ্বান করছেন — “দেখো! শিক্ষা নাও!” 🌸 অর্থাৎ, এটা শুধু ইতিহাস নয়, বরং প্রতিটি যুগের জন্য **একটি সতর্কবার্তা।** যারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা ভাঙে, তাদের পরিণাম একই হয় — ধ্বংস, অনুতাপ ও ইতিহাসে লজ্জা।

🌿 এখানে “مطر” (বৃষ্টি) শব্দের ব্যবহারও অর্থবহ — যা সাধারণত **রহমত ও বরকতের প্রতীক**, কিন্তু যখন মানুষ সীমা লঙ্ঘন করে, তখন সেই “বরকত”ই রূপ নেয় **আযাবে।** একেই বলে — **রহমতের উল্টো রূপ, যখন সমাজ বিকৃত হয়।** 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌸 আল্লাহর শাস্তি সবসময় হঠাৎ আসে না, বরং পূর্বে সতর্কবার্তা আসে — নবীর দাওয়াত, উপদেশ, শিক্ষা... কিন্তু যখন সমাজ তা প্রত্যাখ্যান করে, তখন “মাতারান” — শাস্তির ঝড় নেমে আসে। 🌿 আজও পৃথিবী যেন সেই আয়াতের প্রতিধ্বনি শুনছে — যখন মানুষ আল্লাহর সীমা উপহাস করে, তখন প্রকৃতির ভারসাম্যই তাকে শাস্তি দেয়।

উদাহরণ:
যেমন আকাশের মেঘ হয়তো একসময় বৃষ্টির আশীর্বাদ দেয়, কিন্তু যখন মানুষ অন্যায়ে মত্ত হয়, তখন সেই মেঘই ঝরায় বজ্রপাত ও ধ্বংস। ⚡ তেমনি আল্লাহর রহমত যদি অবাধ্যতার মুখে উপহাস পায়, তখন তা গজবে পরিণত হয়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সতর্কতা কখনো অবহেলা করার নয়।
  • রহমত অবাধ্যদের জন্য আযাবে পরিণত হয়।
  • অপরাধের শেষ পরিণাম সর্বদা ধ্বংস ও অপমান।
  • আল্লাহর বিচার ন্যায়সঙ্গত ও সতর্কতার জন্য শিক্ষামূলক।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًۭا فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُجْرِمِينَ”** 🤍 — “আমরা তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম (শাস্তির) এক বৃষ্টি, অতএব দেখো — অপরাধীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন মানুষ আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, তখন রহমতও গজবে পরিণত হয়। কিন্তু যারা ঈমান ও বিনয়ে থাকে, তাদের উপর বর্ষণ হয় শুধু রহমতের বৃষ্টি।** 🌿🤍
আয়াত ৮৫
وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًۭا ۚ قَالَ يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُۥ ۖ قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا۟ ٱلْكَيْلَ وَٱلْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا۟ ٱلنَّاسَ أَشْيَآءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَـٰحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
ওয়া ইলা মাদইয়ানা আখাহুম শু‘আইবা, ক্বালা ইয়াকওমি, উ‘বুদুল্লাহা, মা লাকুম মিন ইলাহিং গাইরুহু, ক্বাদ্‌ জা’আতকুম বায়্যিনাতুম মির্‌ রাব্বিকুম, ফা-আউফুল কৈলা ওয়াল মীযানা, ওয়ালা তাবখাসুন নাসা আশইয়াহুম, ওয়ালা তুফসিদু ফিল আরদি বা‘দা ইসলাহিহা, জালিকুম খাইরুল্লাকুম ইন কুনতুম মুমিনীন।
“আর মাদইয়ান জাতির প্রতি আমরা পাঠিয়েছিলাম তাদের ভাই শু‘আইবকে। তিনি বললেন — ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত করো; তোমাদের জন্য তাঁর বাইরে আর কোনো উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ। তাই মাপ ও ওজন ঠিকভাবে পূর্ণ করো, এবং মানুষের প্রাপ্য জিনিসে কম দিও না। পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না, যখন তা সংশোধিত হয়েছে। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা ঈমানদার হও।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে শুরু হচ্ছে নবী **শু‘আইব (আঃ)**-এর কাহিনি — যিনি পাঠানো হয়েছিলেন “মাদইয়ান” জাতির কাছে। তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত ছিল, কিন্তু তাদের বড় সমস্যা ছিল — **প্রতারণা, মাপে কম দেওয়া, এবং আর্থিক অন্যায়।**

🌸 “يَـٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ” — “হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত করো।” নবীদের দাওয়াতের মূল ভিত্তি সর্বদা এক — **তাওহিদ।** তিনি প্রথমেই তাদের আল্লাহর একত্বের দিকে আহ্বান জানালেন, কারণ ঈমান ঠিক না হলে কোনো সমাজিক ন্যায়বিচার স্থায়ী হয় না।

🌿 “قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ” — “তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ।” অর্থাৎ, আমি কেবল কথা বলছি না, বরং আল্লাহর নিদর্শন ও সত্যতার প্রমাণও তোমাদের সামনে আছে।

🌸 “فَأَوْفُوا۟ ٱلْكَيْلَ وَٱلْمِيزَانَ” — “তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করো।” এটি ছিল তাদের প্রধান অপরাধ — তারা বেচাকেনায় কম দিত, মাপে প্রতারণা করত। শু‘আইব (আঃ) বললেন — **ন্যায্যতা ও সততা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং ঈমানের দাবি।**

🌿 “وَلَا تَبْخَسُوا۟ ٱلنَّاسَ أَشْيَآءَهُمْ” — “মানুষের প্রাপ্য জিনিসে কম দিও না।” অর্থাৎ, কারও অধিকার বা পরিশ্রমের বিনিময় নষ্ট করো না। এই বাক্য শুধু ব্যবসার জন্য নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য — যেমন, ন্যায়বিচার, সততা, কথা রাখা, প্রতিশ্রুতি পূরণ।

🌸 “وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَـٰحِهَا” — “পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না, যখন তা সংশোধিত হয়েছে।” অর্থাৎ, আল্লাহ যেভাবে ন্যায় ও শান্তির ভারসাম্য তৈরি করেছেন, তা তোমাদের অন্যায়ের মাধ্যমে ভেঙো না। 🌿 অন্যায়, প্রতারণা, সুদ, ধোঁকাবাজি — এগুলোই পৃথিবীতে ‘ফাসাদ’ (অশান্তি)-এর মূল কারণ।

🌸 “ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ” — “এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা ঈমানদার হও।” অর্থাৎ, ন্যায়, সততা ও আল্লাহভীতি কেবল ধর্ম নয় — এগুলোই প্রকৃত কল্যাণ ও সাফল্যের পথ।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 শু‘আইব (আঃ) তাঁর জাতিকে দুইটি বিষয়ে সতর্ক করলেন — ১️⃣ আল্লাহর একত্বে ঈমান আনা। ২️⃣ লেনদেনে সততা ও ন্যায্যতা বজায় রাখা। 🌸 তিনি দেখিয়েছেন — **যেখানে ব্যবসা অন্যায়ে ভরে যায়, সেখানেই সমাজ ধ্বংসের দিকে যায়।** অর্থনীতি ও ঈমান — দুটোই একে অপরের পরিপূরক।

উদাহরণ:
যেমন, কেউ নামাজ পড়ে কিন্তু লেনদেনে প্রতারণা করে — তার ধর্ম অপূর্ণ। আবার কেউ সৎ ব্যবসায়ী হলেও ঈমানহীন — তার সৎকাজ স্থায়ী নয়। তাই শু‘আইব (আঃ) উভয় দিককে একত্রে যুক্ত করলেন 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • তাওহিদ ও ন্যায্যতা — আল্লাহর ধর্মের দুই স্তম্ভ।
  • ব্যবসায় সততা রাখা একপ্রকার ইবাদত।
  • পৃথিবীতে ফাসাদ (অশান্তি) শুরু হয় প্রতারণা ও লোভ থেকে।
  • সত্যিকার ঈমান মানুষকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও দায়িত্বশীল করে তোলে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَأَوْفُوا۟ ٱلْكَيْلَ وَٱلْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا۟ ٱلنَّاسَ أَشْيَآءَهُمْ”** 🤍 — “তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করো, এবং মানুষের প্রাপ্য জিনিসে কম দিও না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **ধর্ম শুধু নামাজে নয়, বরং প্রতিটি লেনদেন, প্রতিটি আচরণেও আল্লাহভীতি থাকা উচিত। ন্যায্যতা ও সততাই প্রকৃত ঈমানের প্রতিচ্ছবি।** 🌿🤍
আয়াত ৮৬
وَلَا تَقْعُدُوا۟ بِكُلِّ صِرَٰطٍۢ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ بِهِۦ وَتَبْغُونَهَا عِوَجًۭا ۚ وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ كُنتُمْ قَلِيلًۭا فَكَثَّرَكُمْ ۖ وَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ
ওয়ালা তাকউদূ বিকুল্লি সিরাতিন তু’ঈদূন, ওয়াতাসুদ্দূনা আন সাবীলিল্লাহি মান আমানা বিহি, ওয়াতাবগূনাহা ‘ইওয়াজা, ওয়াজকুরূ ইয কুনতুম কালীলান ফাকাসসারাকুম, ওয়ানজুরূ কাইফা কানা ‘আকিবাতুল মুফসিদিন।
“আর তোমরা প্রতিটি পথে বসে মানুষকে ভয় দেখিও না, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহর পথে চলা থেকে বিরত রেখো না, এবং সেই পথকে বাকা দেখাতে চেও না। স্মরণ করো — একসময় তোমরা ছিলে অল্প, তারপর আল্লাহ তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। এখন দেখো, যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের পরিণাম কেমন হয়েছিল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী **শু‘আইব (আঃ)** তাঁর জাতিকে আরো গভীরভাবে উপদেশ দিচ্ছেন। তিনি শুধু ব্যবসায়িক সততা নয়, বরং সামাজিক ন্যায় ও দাওয়াতের স্বাধীনতার কথাও বলছেন।

🌸 “وَلَا تَقْعُدُوا۟ بِكُلِّ صِرَٰطٍۢ تُوعِدُونَ” — “প্রতিটি পথে বসে মানুষকে ভয় দেখিও না।” অর্থাৎ, তারা রাস্তা বা পথের মোড়ে বসে মানুষকে ভয় দেখাতো, বিশেষ করে যারা ঈমান এনেছিল তাদের বাধা দিত। তারা দাওয়াতের পথরোধ করত — যেন কেউ আল্লাহর বার্তা না শুনতে পারে। 🌿 তারা ছিল এক ধরনের **দাওয়াত-বিরোধী দল**, যারা সত্য প্রচারে বাধা দিত এবং মানুষকে হুমকি দিত: “যদি শু‘আইব (আঃ)-এর অনুসারী হও, তবে ব্যবসা বন্ধ, বর্জন, শাস্তি!” এভাবেই তারা সমাজে ভয় ও প্রতিরোধের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।

🌸 “وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ بِهِۦ” — “আর যারা ঈমান এনেছে, তাদের আল্লাহর পথে চলা থেকে বিরত রেখো না।” এটি এক স্পষ্ট দাওয়াতি নিষেধ — অর্থাৎ, কারও ঈমান, নামাজ বা ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধা দিও না। আল্লাহর পথ বন্ধ করার চেষ্টা করা সমাজে সবচেয়ে বড় ফাসাদ (অশান্তি)।

🌿 “وَتَبْغُونَهَا عِوَجًۭا” — “আর সেই পথকে বাকা দেখাতে চেও না।” অর্থাৎ, সত্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করো না। যেমন তারা বলতো — “শু‘আইব আমাদের অর্থনীতি নষ্ট করতে চায়।” অথচ নবী (আঃ) চাইতেন শুধু ন্যায় ও সততা প্রতিষ্ঠা করতে। 🌸 এই বাক্যটি আজকের সমাজের জন্যও প্রযোজ্য — অনেকেই ধর্মীয় আহ্বানকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে যেন মানুষ সত্যকে ভয় পায় বা ভুল বোঝে।

🌿 “وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ كُنتُمْ قَلِيلًۭا فَكَثَّرَكُمْ” — “স্মরণ করো — একসময় তোমরা ছিলে অল্প, তারপর আল্লাহ তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন।” নবী শু‘আইব (আঃ) তাদের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন — আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন ধন, জনসংখ্যা, প্রভাব, ক্ষমতা — তাহলে সেই আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কেন? 🌸 অর্থাৎ, তোমরা নিজের উন্নতির কৃতিত্ব নিজেদের দিও না — এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, তাই তাঁর পথের বিরোধিতা কোরো না।

🌿 “وَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ” — “এবং দেখো, যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল, তাদের পরিণাম কেমন হয়েছিল।” নবী তাঁদের সতর্ক করলেন — আগের জাতিদের ধ্বংসের ইতিহাস তোমাদের জন্য শিক্ষা হওয়া উচিত। **অহংকার ও অন্যায়ের শেষ কখনো ভালো হয় না।**

গভীর উপলব্ধি:
🌸 এই আয়াত এক চিরন্তন সামাজিক শিক্ষা দেয় — 👉 যারা সত্য প্রচারে বাধা দেয়, তারা আল্লাহর গজবকে আমন্ত্রণ জানায়। 👉 যারা আল্লাহর পথে মানুষকে ভয় দেখায়, তারা নিজেদের জন্য ধ্বংসের পথ প্রস্তুত করে। 👉 সমাজে দাওয়াত বন্ধ করা মানে — আলো নেভানো 🌙

🌿 নবী শু‘আইব (আঃ) নরম ভাষায় তাদের বললেন — “তোমরা একসময় ছিলে অল্প, আল্লাহ তোমাদের অনেক করেছেন; তাহলে কৃতজ্ঞ হও, বিদ্রোহ করো না।”

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর পথে মানুষকে বাধা দেওয়া এক মারাত্মক অপরাধ।
  • যে সমাজে দাওয়াত বন্ধ হয়, সেখানে আল্লাহর রহমত বন্ধ হয়ে যায়।
  • সব অর্জন আল্লাহর অনুগ্রহ, অহংকার নয়।
  • যারা সত্যকে বিকৃত করে, তাদের পরিণাম আগের জাতির মতোই ধ্বংস।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَا تَقْعُدُوا۟ بِكُلِّ صِرَٰطٍۢ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ بِهِۦ”** 🤍 — “তোমরা প্রতিটি পথে বসে মানুষকে ভয় দেখিও না, এবং ঈমানদারদের আল্লাহর পথে চলা থেকে বিরত রেখো না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যের পথ থামানো যায় না, কিন্তু যারা বাধা দেয়, তারা নিজেরাই থেমে যায়। আল্লাহর পথ শান্তি ও ন্যায়ের পথ, আর যারা তা বিকৃত করে, তারা অন্ধকারে হারিয়ে যায়।** 🌿🤍
আয়াত ৮৭
وَإِن كَانَ طَآئِفَةٌۭ مِّنكُمْ ءَامَنُوا۟ بِٱلَّذِىٓ أُرْسِلْتُ بِهِۦ وَطَآئِفَةٌۭ لَّمْ يُؤْمِنُوا۟ فَٱصْبِرُوا۟ حَتَّىٰ يَحْكُمَ ٱللَّهُ بَيْنَنَا ۚ وَهُوَ خَيْرُ ٱلْحَـٰكِمِينَ
ওয়া ইন কানা ত্বা-ইফাতুম মিনকুম, আ-মানু বিল্লাযি উরসিল্তু বিহি, ওয়া ত্বা-ইফাতুল লাম ইউ’মিনু, ফাসবিরূ হাত্তা ইয়াহকুমাল্লাহু বাইনানা, ওয়া হুয়া খাইরুল হাকিমীন।
“আর যদি তোমাদের মধ্যে একদল বিশ্বাস করে আমার প্রেরিত বার্তায়, আর একদল তা অস্বীকার করে, তবে ধৈর্য ধরো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেন — আর তিনিই সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী **শু‘আইব (আঃ)** তাঁর জাতির প্রতি সর্বোচ্চ প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর দাওয়াত শুনে সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে — একদল ঈমান এনেছে, আরেকদল অস্বীকার করেছে। 🌸 তখন তিনি রাগ বা প্রতিশোধ নয়, বরং **ধৈর্য ও আল্লাহর বিচারের অপেক্ষা** অবলম্বন করলেন।

🌿 “وَإِن كَانَ طَآئِفَةٌۭ مِّنكُمْ ءَامَنُوا۟” — “তোমাদের মধ্যে যদি একদল বিশ্বাস করে...” অর্থাৎ, সত্য সর্বদা সবাই গ্রহণ করে না। কিছু মানুষ সত্য চিনে নেয়, আর কিছু মানুষ তা উপেক্ষা করে। এটি ইতিহাসের এক স্থায়ী বাস্তবতা। 🌸 শু‘আইব (আঃ) বললেন — “তোমরা বিভক্ত হয়ে গিয়েছ, তবুও আমি কারও প্রতি বিদ্বেষ রাখি না; আল্লাহই আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করবেন।”

🌿 “فَٱصْبِرُوا۟ حَتَّىٰ يَحْكُمَ ٱللَّهُ بَيْنَنَا” — “তবে ধৈর্য ধরো, যতক্ষণ না আল্লাহ ফয়সালা করে দেন।” এটি নবীদের দাওয়াতের এক চিরন্তন শিক্ষা 🌸 অর্থাৎ, সত্য ও মিথ্যার লড়াইয়ে **আল্লাহর ফয়সালার জন্য ধৈর্য ধরো**। 🌿 দুনিয়ার বিচার হয় সংখ্যায়, প্রভাবে, গোষ্ঠীতে; কিন্তু আল্লাহর বিচার হয় **সত্যের ভিত্তিতে**। তাই নবী শু‘আইব (আঃ) বললেন — “আমরা তর্কে নয়, অপেক্ষায় থাকবো — আল্লাহর রায়ই চূড়ান্ত।”

🌸 “وَهُوَ خَيْرُ ٱلْحَـٰكِمِينَ” — “আর তিনিই সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।” কত সুন্দর ও প্রশান্তিকর বাক্য! 🤍 এটি নবীর বিশ্বাস প্রকাশ করে — যে বিচার মানুষ দেয়, তা কখনো চূড়ান্ত নয়; আল্লাহর বিচারই সর্বোচ্চ ও ন্যায়পূর্ণ।

🌿 এখানে নবী (আঃ)-এর চরিত্রের তিনটি দিক ফুটে উঠেছে — ১️⃣ ধৈর্য, ২️⃣ প্রজ্ঞা, ৩️⃣ আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা। 🌸 তিনি বিতর্ক বা প্রতিহিংসায় জড়ালেন না; বরং বললেন — “আসুন, আমরা সবাই অপেক্ষা করি, আল্লাহই ঠিক করে দেবেন কে সঠিক।”

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আজকের যুগের দাঈদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা — 👉 সবাই আপনার কথা বুঝবে না — এটি স্বাভাবিক। 👉 কেউ গ্রহণ করবে, কেউ বিরোধিতা করবে — এটিও আল্লাহর নিয়ম। 👉 কিন্তু এর মাঝে রাগ নয়, ধৈর্যই মুমিনের পরিচয়। 🌸 কখনো কখনো “অপেক্ষা”-ই সবচেয়ে শক্তিশালী দাওয়াত। কারণ সময় নিজেই প্রমাণ করে দেয়, কে সত্য আর কে মিথ্যা।

উদাহরণ:
যেমন একজন কৃষক বীজ বপন করে সঙ্গে সঙ্গে ফল আশা করে না 🌱 সে অপেক্ষা করে — কারণ জানে, ফসল সময়মতোই আসবে। তেমনি নবীগণ বীজ বপন করেছেন ঈমানের, আর ফল এসেছে আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্যের পথে বিভাজন হবে — সেটিই পরীক্ষার অংশ।
  • আল্লাহর ফয়সালা আসবেই, তাই ধৈর্যই মুমিনের ঢাল।
  • অহংকার নয়, প্রজ্ঞা দিয়ে বিরোধের জবাব দিতে হবে।
  • আল্লাহর বিচার সর্বোচ্চ ও ন্যায়পূর্ণ — সেটির জন্য অপেক্ষা করা মুমিনের কর্তব্য।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَٱصْبِرُوا۟ حَتَّىٰ يَحْكُمَ ٱللَّهُ بَيْنَنَا وَهُوَ خَيْرُ ٱلْحَـٰكِمِينَ”** 🤍 — “ধৈর্য ধরো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন; আর তিনিই সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন সমাজ বিভক্ত হয়, তখন ধৈর্যই ঈমানের প্রমাণ। আল্লাহর ফয়সালা দেরি হলেও, সেটি সর্বদা ন্যায়পূর্ণ ও পরিপূর্ণ।** 🌿🤍
আয়াত ৮৮
قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لَنُخْرِجَنَّكَ يَـٰشُعَيْبُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَكَ مِن قَرْيَتِنَآ أَوْ لَتَعُودُنَّ فِى مِلَّتِنَا ۚ قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَـٰرِهِينَ
ক্বালাল মালাউল্লাযিনা স্তাকবারূ মিন কওমিহি, লানুখরিজান্নাকা ইয়াশু‘আইবু, ওয়াল্লাযিনা আমানূ মা‘আকা মিন কারিয়াতিনা, আও লাতাউদুন্না ফি মিল্লাতিনা। ক্বালা আওালাও কুন্‌না কারিহীন।
“তাঁর জাতির অহংকারী নেতারা বলল — ‘হে শু‘আইব! আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে আমাদের শহর থেকে বের করে দেবো, অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে।’ তিনি বললেন — ‘আমরা কি তা করব, যদিও আমরা তা ঘৃণা করি?’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী **শু‘আইব (আঃ)**-এর জাতির অহংকারী নেতাদের প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠেছে। যখন তিনি সত্য ও ন্যায়ের দাওয়াত দিলেন, তখন তারা যুক্তি বা প্রমাণে পরাস্ত হয়ে **হুমকি ও জোরজবরদস্তি**র আশ্রয় নিল।

🌸 “قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟” — “তাঁর জাতির অহংকারী নেতারা বলল...” এখানে “الْمَلَأُ” (আল-মালাঅ) বলতে সমাজের ধনবান, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী শ্রেণিকে বোঝানো হয়েছে — যারা সর্বদা সত্যের বিরোধিতা করে, কারণ তা তাদের স্বার্থের বিরোধী। 🌿 তারা নবীকে সম্মানের সঙ্গে নয়, অপমানের সুরে সম্বোধন করল — “হে শু‘আইব! তোমাকে আমরা আমাদের শহর থেকে বের করে দেব!”

🌸 “لَنُخْرِجَنَّكَ ... مِن قَرْيَتِنَآ” — “আমরা তোমাকে এবং তোমার সঙ্গীদের শহর থেকে বের করে দেব।” তারা ভাবল — শহরটি কেবল তাদের, যেন নবী (আঃ) ও ঈমানদারদের সেখানে থাকার অধিকার নেই। 🌿 ইতিহাস বলে — প্রতিটি যুগে সত্যবাহকরা এমন হুমকির মুখে পড়েছেন। কখনো বলা হয়েছে, “তুমি নির্বাসিত”, আবার কখনো “তোমাকে হত্যা করা হবে।”

🌸 “أَوْ لَتَعُودُنَّ فِى مِلَّتِنَا” — “অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে।” এটি ছিল **বিশ্বাসের উপর জোরজবরদস্তি।** তারা বলল, “আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ধর্মই মানতে হবে — নইলে তোমাদের এখানে স্থান নেই।” 🌿 লক্ষ্য করো — তারা “ফিরে আসবে” বলেছে, অর্থাৎ তারা জানত, নবী শু‘আইব (আঃ) আগে কখনো তাদের মতো ছিল না। কিন্তু সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়লে, তারা সেটিকে দমন করতে চাইল।

🌸 “قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَـٰرِهِينَ” — “তিনি বললেন — আমরা কি তা করব, যদিও আমরা তা ঘৃণা করি?” কত কোমল অথচ শক্ত উত্তর! 🌿 নবী শু‘আইব (আঃ) বললেন — **বিশ্বাস কখনো জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না।** যদি আমরা তা অপছন্দ করি, তবে কিভাবে তোমাদের ধর্মে ফিরব? 🌿 তাঁর উত্তরে ছিল দৃঢ়তা, মর্যাদা ও বুদ্ধিমত্তা। তিনি ক্রোধে নয়, যুক্তিতে জবাব দিলেন — কারণ সত্যের শক্তি কখনো চিৎকারে নয়, বরং স্থিরতায়।

গভীর উপলব্ধি:
🌸 এই আয়াতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় — 👉 অহংকারীরা সত্যকে দমন করতে চায় বলপ্রয়োগে। 👉 মুমিনেরা সত্য রক্ষা করে ধৈর্য ও যুক্তির মাধ্যমে। 👉 সমাজের ক্ষমতাবান শ্রেণি সাধারণত নিজের স্বার্থে ধর্মকে বিকৃত করে। 🌿 নবী শু‘আইব (আঃ)-এর উত্তর আমাদের শেখায় — **সত্যের পথে অটল থাকা মানেই সম্মান, আর জোর করে মিথ্যা মানা মানেই অপমান।**

উদাহরণ:
যেমন বাতাস জোর করে ফুলের গন্ধ বন্ধ করতে পারে না 🌸 তেমনি অহংকারীরা জোর করে ঈমান মুছে ফেলতে পারে না। কারণ ঈমান থাকে হৃদয়ে — আর হৃদয় আল্লাহর অধীনে। 🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকারীরা যুক্তি হারালে হুমকির আশ্রয় নেয়।
  • ঈমান কখনো জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বা ফেরানো যায় না।
  • সত্যবাদী কখনো ভয় পায় না, কারণ তার পাশে আল্লাহ থাকেন।
  • শান্ত, যুক্তিসম্মত ও দৃঢ়ভাবে অন্যায়ের জবাব দেওয়াই নবীদের পথ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَنُخْرِجَنَّكَ يَـٰشُعَيْبُ ... أَوْ لَتَعُودُنَّ فِى مِلَّتِنَا ۚ قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَـٰرِهِينَ”** 🤍 — “হে শু‘আইব! আমরা তোমাকে ও তোমার অনুসারীদের শহর থেকে তাড়িয়ে দেব, যদি না তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসো।” — “তিনি বললেন, আমরা কি তা করব, যদিও আমরা তা ঘৃণা করি?” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন মিথ্যা আতঙ্কিত হয়। কিন্তু সত্যবাদী কখনো নতি স্বীকার করে না — কারণ তার শক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে।** 🌿🤍
আয়াত ৮৯
قَدِ ٱفْتَرَيْنَا عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِى مِلَّتِكُم بَعْدَ إِذْ نَجَّىٰنَا ٱللَّهُ مِنْهَا ۚ وَمَا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّعُودَ فِيهَآ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّنَا ۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَىْءٍ عِلْمًا ۚ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلْنَا ۚ رَبَّنَا ٱفْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِٱلْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْفَـٰتِحِينَ
কদিফতারাইনা ‘আলাল্লাহি কাজিবা, ইন উ‘দনা ফি মিল্লাতিকুম বা‘দা ইয নাজ্জানাল্লাহু মিনহা। ওয়া মা ইয়াকুনু লানা আন নাআ‘উদা ফিহা ইল্লা আন ইয়াশা’আল্লাহু রাব্বুনা। ওয়াসি‘া রাব্বুনা কুল্লা শাইইন ‘ইলমা। ‘আলাল্লাহি তাওাক্কালনা। রাব্বানাফতাহ বাইনানা ওয়া বাইনাকওমিনা বিলহক্কি, ওয়া আনতা খাইরুল ফাতিহীন।
“যদি আমরা তোমাদের ধর্মে ফিরে যাই, তবে আমরা নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করব — পরিণতিতে, আল্লাহ আমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন। আমাদের পক্ষে এতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, যদি না আল্লাহ, আমাদের প্রভু, তা ইচ্ছা করেন। আমাদের প্রভু জ্ঞানে সবকিছু পরিব্যাপ্ত। আমরা আল্লাহরই উপর ভরসা রাখি। হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের ও আমাদের জাতির মধ্যে সত্যের ভিত্তিতে ফয়সালা করে দাও — আর তুমি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী **শু‘আইব (আঃ)** তাঁর জাতির হুমকির জবাবে এক অসাধারণ ঈমানভিত্তিক উত্তর দিয়েছেন। আগের আয়াতে তারা বলেছিল — “তুমি ও তোমার অনুসারীরা আমাদের ধর্মে ফিরে এসো, নতুবা তোমাদের তাড়িয়ে দেব।” আর এই আয়াতে নবী (আঃ) বললেন — **“আমরা কখনোই মিথ্যা ধর্মে ফিরে যাব না, কারণ আল্লাহ আমাদের তা থেকে মুক্ত করেছেন।”**

🌸 “قَدِ ٱفْتَرَيْنَا عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا” — “আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করব, যদি ফিরে যাই।” অর্থাৎ, যদি আমরা তোমাদের পুরোনো ধর্মে ফিরে যাই, তবে তা হবে আল্লাহর উপর মিথ্যা বলা — কারণ আল্লাহ আমাদের ইতিমধ্যেই সেই অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। 🌿 এখানে নবী শু‘আইব (আঃ)-এর উত্তর দৃঢ় ও পরিপূর্ণ যুক্তিসম্মত — **সত্যের পথে ফিরে যাওয়া মানে মিথ্যার পথে নামা।**

🌸 “وَمَا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّعُودَ فِيهَآ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّنَا” — “আমাদের পক্ষে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন।” 🌿 এটি বিনয় ও ঈমানের পরিপূর্ণ প্রকাশ — অর্থাৎ, আমরা নিজের শক্তিতে নয়, বরং আল্লাহর তাওফিকেই দৃঢ় থাকি। তিনি স্বীকার করলেন, **ঈমান টিকিয়ে রাখাও আল্লাহর রহমত।**

🌸 “وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَىْءٍ عِلْمًا” — “আমাদের প্রভুর জ্ঞান সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত।” অর্থাৎ, আল্লাহ জানেন কারা সত্যে অবিচল এবং কারা ভণ্ডামি করে। মানুষের দৃষ্টিতে বিভ্রান্তি থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহর জ্ঞানে কোনো ভুল নেই।

🌿 “عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلْنَا” — “আমরা আল্লাহরই উপর ভরসা রাখি।” এটি ঈমানের সারাংশ 🌸 নবী শু‘আইব (আঃ) ঘোষণা করলেন — “মানুষের হুমকি আমাদের কাঁপাতে পারবে না, কারণ আমরা মানুষের নয়, আল্লাহর উপর নির্ভর করি।”

🌸 “رَبَّنَا ٱفْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِٱلْحَقِّ” — “হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের ও আমাদের জাতির মধ্যে সত্যের ভিত্তিতে ফয়সালা করে দাও।” 🌿 এটি এক নবীর **দাওয়াতি দোয়া** — তিনি কারও প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করলেন না, বরং বললেন — “হে আল্লাহ, সত্য প্রকাশ করে দাও।” 🌸 তাঁর লক্ষ্য ছিল না প্রতিশোধ, বরং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। এটাই নবীদের প্রকৃত রূপ — **দয়া, ধৈর্য ও সত্যপ্রেম।**

🌿 “وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْفَـٰتِحِينَ” — “আর তুমি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।” তিনি আল্লাহর বিচারেই চূড়ান্ত আস্থা রাখলেন। যেন বলছেন — “আমরা কারও উপর জোর করতে চাই না, আল্লাহই সবার মাঝে ফয়সালা করবেন।”

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে তিনটি মহান গুণ একত্রিত হয়েছে — ১️⃣ ঈমানের দৃঢ়তা — “আমরা ফিরে যাব না।” ২️⃣ বিনয় — “যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন।” ৩️⃣ তাওয়াক্কুল — “আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করি।” 🌸 এটি এক পূর্ণ ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য — যে না ভয় পায়, না অহংকার করে, বরং আল্লাহর ওপর নির্ভর করে স্থির থাকে।

উদাহরণ:
যেমন একটি মোমবাতি বাতাসের মধ্যে টিকে থাকে কারণ তার আগুনের উষ্ণতা ভিতর থেকে আসে 🔥 তেমনি মুমিনও বিপদের মধ্যে দৃঢ় থাকে, কারণ তার শক্তি আসে আল্লাহর উপর নির্ভরতা থেকে 🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্য ত্যাগ করা মানেই আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ।
  • ঈমান টিকিয়ে রাখা আল্লাহর তাওফিক ছাড়া অসম্ভব।
  • প্রতিকূল অবস্থায় তাওয়াক্কুলই মুমিনের ঢাল।
  • আল্লাহর বিচারই চূড়ান্ত ও ন্যায়পূর্ণ — সেটিই আমাদের আশ্রয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلْنَا ۚ رَبَّنَا ٱفْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِٱلْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْفَـٰتِحِينَ”** 🤍 — “আমরা আল্লাহর উপরই ভরসা রাখি; হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের ও আমাদের জাতির মধ্যে সত্যের ভিত্তিতে ফয়সালা করো, আর তুমি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যের পথে অটল থাকা শুধু সাহস নয়, বরং আল্লাহর উপর নির্ভরতার প্রতীক। ধৈর্য ধরলে আল্লাহই শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় দান করেন।** 🌿🤍
আয়াত ৯০
وَقَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لَئِنِ ٱتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًۭا إِنَّكُمْ إِذًۭا لَّخَـٰسِرُونَ
ওয়া ক্বালাল মালা'উল্লাযিনা কাফারূ মিন কওমিহি, লা-ইনিত্তাবা‘তুম শু‘আইবা, ইন্নাকুম ইযান লাখাসিরূন।
“আর তাঁর জাতির অবিশ্বাসী নেতারা বলল — ‘যদি তোমরা শু‘আইবকে অনুসরণ করো, তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে নবী **শু‘আইব (আঃ)**-এর জাতির অহংকারী নেতাদের শেষ প্রতিক্রিয়া। তারা সত্যের আলোকে সহ্য করতে না পেরে, **ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে বাধা দিতে** চাইল।

🌸 “وَقَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟” — “আর তাঁর জাতির অবিশ্বাসী নেতারা বলল...” এখানে আবারও ‘মালাঅ’ (অভিজাত শ্রেণি)-এর উল্লেখ এসেছে, কারণ ইতিহাসে সর্বদা ক্ষমতাবান ও ধনীরা নবীদের বিরোধিতার সামনের সারিতে থেকেছে। 🌿 তারা সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে বলেছিল — “যদি শু‘আইবের পথে চলো, তাহলে ক্ষতি হবে, ব্যবসা ধ্বংস হবে, সমাজ ভেঙে পড়বে!” অথচ প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল তারাই — যারা আল্লাহর পথ ত্যাগ করেছিল।

🌸 “لَئِنِ ٱتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًۭا” — “যদি তোমরা শু‘আইবকে অনুসরণ করো...” তারা এই বাক্য বলল তাচ্ছিল্যের সুরে, যেন শু‘আইব (আঃ)-এর দাওয়াত ছিল তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির কারণ। 🌿 তাদের অন্ধত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তারা **সত্যকে ক্ষতি** আর **অন্যায়কে লাভ** মনে করত।

🌸 “إِنَّكُمْ إِذًۭا لَّخَـٰسِرُونَ” — “তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” এই কথাটি ছিল **ভয় দেখানোর কৌশল** — তারা সমাজে প্রচার করত যে, “শু‘আইবের অনুসারীরা নাকি সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে!” 🌿 অথচ বাস্তবে, যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল, তারাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল অল্প কিছুদিন পরেই।

🌸 এই আয়াত আজও সমাজের প্রতিচ্ছবি — যখন কেউ সত্য পথে চলে, তখন চারপাশের লোক বলে — “তুমি পিছিয়ে পড়বে!”, “তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে!”, “তুমি দুনিয়ার সুযোগ হারাবে!” অথচ তারা বোঝে না — **আল্লাহর পথে চলা কোনো ক্ষতি নয়, বরং সেটাই চিরস্থায়ী সফলতা।** 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 মিথ্যা সবসময় সত্যকে ভয় পায় — তাই সে ভয় দেখিয়ে মানুষকে আটকে রাখতে চায়। কিন্তু সত্যবাদী কখনো ভয় পায় না, কারণ সে জানে — আল্লাহই তার রক্ষক। 🌸 যারা ঈমানের পথে আসে, তাদের দুনিয়ার কিছু হারাতে হতে পারে, কিন্তু তারা আখিরাতে সব পেয়ে যায় 🤍

উদাহরণ:
যেমন একজন চিকিৎসক রোগীকে ওষুধ খেতে বলেন, আর রোগী ভয় পায় যে ওষুধ তিতা! 🍃 অথচ সেই তিতাই তার আরোগ্যের পথ। তেমনি, সত্যের পথে কিছু কষ্ট আছে, কিন্তু সেটিই প্রকৃত মুক্তি।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অবিশ্বাসীরা সর্বদা সত্যকে “ক্ষতি” হিসেবে উপস্থাপন করে।
  • ভয় দেখানো হচ্ছে মিথ্যার সবচেয়ে পুরনো অস্ত্র।
  • সত্যের পথে কিছু হারালেও, তা কখনো প্রকৃত ক্ষতি নয়।
  • আল্লাহর পথে চলা মানেই চিরস্থায়ী সাফল্যের সূচনা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَئِنِ ٱتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًۭا إِنَّكُمْ إِذًۭا لَّخَـٰسِرُونَ”** 🤍 — “যদি তোমরা শু‘আইবকে অনুসরণ করো, তবে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যারা আল্লাহর পথে ফিরে আসে, তারা হারায় না, বরং জয়ী হয়; আর যারা অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারাই আসল পরাজিত।** 🌿🤍
আয়াত ৯১
فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ
ফা-আখাযাতহুমুর রজফাহ, ফা-আসবাহূ ফি দারিহিম জাসিমীন।
“অতঃপর তাদেরকে আঘাত করল এক প্রবল ভূমিকম্প, এবং তারা নিজেদের ঘরে পড়ে রইল নিথর অবস্থায়।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছেন সেই ভয়াবহ পরিণতি, যা নেমে এসেছিল নবী **শু‘আইব (আঃ)**-এর জাতির উপর। তারা বারবার সতর্কবার্তা পাওয়ার পরও অহংকার করেছিল, আর শেষমেশ আল্লাহর গজব তাদের উপর নেমে এল ⚡

🌸 “فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ” — “তাদেরকে আঘাত করল এক প্রবল ভূমিকম্প।” 🌿 এখানে “ٱلرَّجْفَةُ” (আর-রজফাহ) শব্দটি এসেছে — যার অর্থ **ভয়াবহ কাঁপন বা ভূমিকম্প।** আল্লাহ এমন এক কম্পন পাঠালেন, যা তাদের ঘরবাড়ি, শহর ও জীবন এক মুহূর্তেই উল্টে দিল। 🌸 এটি ছিল এক **হঠাৎ আসা আল্লাহর গজব**, যেমন পূর্বে আদ ও সামূদ জাতির উপরও নেমে এসেছিল।

🌿 “فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ” — “তারা নিজেদের ঘরে পড়ে রইল নিথর অবস্থায়।” 🌸 অর্থাৎ, কেউ পালাতে পারেনি, কেউ চিৎকার করতে পারেনি — সবাই এক মুহূর্তে মাটিতে পড়ে নিথর হয়ে গেল। তাদের শহর নিঃশব্দ, তাদের জীবন শেষ। 🌿 “جَاثِمِينَ” শব্দের অর্থ — হাঁটু গেড়ে পড়ে থাকা বা মুখ থুবড়ে নিস্তব্ধ অবস্থায় থাকা। যেন প্রকৃতি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছে, **“অহংকারের শেষ পরিণতি এই।”**

🌸 এই ভূমিকম্প শুধু মাটির কাঁপন ছিল না, বরং **তাদের হৃদয় ও অহংকারের পতন।** তারা ভেবেছিল, “আমরা শক্তিশালী, আমরা সফল।” কিন্তু এক মুহূর্তেই সব ধূলিসাৎ হয়ে গেল 💔

🌿 এখানে আল্লাহ কোনো দীর্ঘ বিবরণ দেননি — শুধু দুটি সংক্ষিপ্ত বাক্যেই পুরো ধ্বংসের ইতিহাস বলে দিয়েছেন: **“ভূমিকম্প ধরল — আর তারা পড়ে রইল।”** কত গভীর ও গম্ভীর ভাষা!

গভীর উপলব্ধি:
🌸 আল্লাহর গজব যখন আসে, তখন তা হঠাৎ ও নিশ্চিত হয়। 🌿 যারা মিথ্যার উপর দাঁড়ায়, তাদের ভিত্তিই কেঁপে যায় — এটাই রজফাহ (ভূমিকম্প)-এর প্রকৃত অর্থ। 👉 মাটির ভূমিকম্প কেবল পৃথিবীকে কাঁপায়, কিন্তু সত্যের অস্বীকারের ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দেয় পুরো জাতিকে।

🌿 শু‘আইব (আঃ)-এর জাতি অহংকার করেছিল — “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব?” অথচ কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তারা “ধ্বংসপ্রাপ্ত” জাতিতে পরিণত হলো।

উদাহরণ:
যেমন এক শক্তিশালী প্রাসাদ দাঁড়িয়ে থাকে শত বছর, কিন্তু ভিতরে যদি ফাটল পড়ে — এক মুহূর্তেই সব ভেঙে যায়। তেমনি, একটি জাতির ভেতর যখন অন্যায়, প্রতারণা ও অহংকার জন্ম নেয়, তখন সেটিই তাদের পতনের ভূমিকম্প হয়ে দাঁড়ায় ⚡

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর শাস্তি সবসময় হঠাৎ আসে — তাই অবকাশের সময়েই তাওবা করতে হবে।
  • অহংকার জাতির মূল ভিত্তি ধ্বংস করে দেয়।
  • যারা আল্লাহর বাণীকে উপহাস করে, তাদের পরিণতি সবসময় করুণ।
  • “জাসিমীন” — নিথর হয়ে পড়া, অহংকারের নিঃশেষতার প্রতীক।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَـٰثِمِينَ”** 🤍 — “তাদেরকে আঘাত করল এক প্রবল ভূমিকম্প, আর তারা নিজেদের ঘরে নিথর হয়ে পড়ে রইল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **অহংকার মানুষকে উঁচু করে না, বরং ধ্বংস করে দেয়। যে জাতি অন্যায়ে স্থির থাকে, একদিন সেই জাতিরই ভূমি কেঁপে ওঠে।** 🌿🤍
আয়াত ৯২
ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًۭا كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا۟ فِيهَا ۚ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًۭا كَانُوا۟ هُمُ ٱلْخَـٰسِرِينَ
আল্লাযিনা কাজ্‌যাবূ শু‘আইবা, কা-আন লাম ইয়াগনাও ফিহা। আল্লাযিনা কাজ্‌যাবূ শু‘আইবা, কানূ হুমুল খাসিরীন।
“যারা শু‘আইবকে মিথ্যা বলেছিল, তাদের অবস্থা এমন হলো যেন তারা কখনোই সেখানে ছিল না! যারা শু‘আইবকে অস্বীকার করেছিল — তারাই ছিল প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা শু‘আইব (আঃ)-এর জাতির **চূড়ান্ত পরিণতি** বর্ণনা করেছেন। ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়ার পর তাদের এমন অবস্থা হলো, যেন তারা কখনোই সেই ভূমিতে বাস করেনি।

🌸 “ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًۭا” — “যারা শু‘আইবকে মিথ্যা বলেছিল।” অর্থাৎ, যারা নবীর সত্য বার্তাকে উপহাস করেছিল, যারা বলেছিল “শু‘আইবের পথে চললে ক্ষতি হবে” — তারাই এখন ইতিহাস থেকে মুছে গেল। 🌿 আল্লাহ তাঁদের নাম, স্মৃতি ও শহর — সবকিছু মুছে দিলেন। যেন পৃথিবীই তাদের চিহ্ন মুছে ফেলল।

🌸 “كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا۟ فِيهَا” — “তাদের অবস্থা এমন হলো যেন তারা কখনোই সেখানে ছিল না।” 🌿 “يَغْنَوْا۟” শব্দের অর্থ — বসবাস করা, উন্নতি করা, আনন্দে থাকা। অর্থাৎ, একসময় তারা ঐ শহরের গর্ব ছিল, প্রাসাদ, ব্যবসা, বাণিজ্য, ক্ষমতা — সবকিছুই তাদের ছিল। কিন্তু আজ যেন তারা কখনোই সেখানে ছিল না! 🌸 এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক **বিচারমূলক মুছে ফেলা** — যেন অহংকারের ইতিহাস বিলীন হয়ে যায়, আর মানুষ শিক্ষা নেয় — **ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়।**

🌿 “ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًۭا كَانُوا۟ هُمُ ٱلْخَـٰسِرِينَ” — “যারা শু‘আইবকে অস্বীকার করেছিল — তারাই ছিল প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।” 🌸 আগের আয়াতে তারা বলেছিল — “যদি তোমরা শু‘আইবকে অনুসরণ করো, তবে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” আর এখন আল্লাহ বলছেন — **“ক্ষতিগ্রস্ত তো তারাই হলো, যারা শু‘আইবকে অস্বীকার করেছিল!”** 💔 🌿 সত্য-মিথ্যার এই উল্টানো পরিণতিই আল্লাহর ন্যায়বিচারের সৌন্দর্য।

গভীর উপলব্ধি:
🌸 এই আয়াত যেন এক নিঃশব্দ ইতিহাসের প্রতিধ্বনি — 👉 যে জাতি নবীদের অস্বীকার করে, সে জাতি শুধু মাটিতে নয়, স্মৃতিতেও বিলীন হয়ে যায়। 👉 যে জাতি অহংকারে মত্ত থাকে, সে জাতি নিজেই নিজের ইতিহাসের সমাধি রচনা করে। 🌿 আল্লাহর গজব কেবল শরীর ধ্বংস করে না, বরং **সম্মান, স্মৃতি ও অস্তিত্বও মুছে দেয়।**

🌸 “যেন তারা কখনোই ছিল না” — এ বাক্যটি কেবল ইতিহাস নয়, এক গভীর দার্শনিক সতর্কতা: **দুনিয়ার অহংকারের কোনো মূল্য নেই, যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি তাতে না থাকে।**

উদাহরণ:
যেমন একদিন গাছটি ছায়া দেয়, ফুল ফোটায়, কিন্তু শিকড় শুকিয়ে গেলে — পরদিন কেউ বুঝতেই পারে না যে এখানে একদিন গাছ ছিল 🌳 তেমনি, যে জাতি আল্লাহর পথে মুখ ফিরিয়ে নেয়, ইতিহাসই তাদের স্মৃতি মুছে দেয়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকারী জাতির অস্তিত্ব একদিন বিলীন হয়ে যায়।
  • আল্লাহর নবীকে অস্বীকার করা মানেই আত্মবিনাশ ডেকে আনা।
  • যারা সত্যকে অস্বীকার করে, তারাই আসল “খাসিরীন” — ক্ষতিগ্রস্ত।
  • দুনিয়ার উন্নতি স্থায়ী নয়; ঈমান ও ন্যায়ই চিরস্থায়ী সাফল্য।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًۭا كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا۟ فِيهَا ۚ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًۭا كَانُوا۟ هُمُ ٱلْخَـٰسِرِينَ”** 🤍 — “যারা শু‘আইবকে মিথ্যা বলেছিল, তাদের অবস্থা এমন হলো যেন তারা কখনোই সেখানে ছিল না। যারা তাঁকে অস্বীকার করেছিল, তারাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যে জাতি আল্লাহর পথে মুখ ফিরিয়ে নেয়, ইতিহাস সেই জাতিকে ভুলে যায়। কিন্তু যারা সত্যের পথে স্থির থাকে, তাদের নাম চিরকাল বেঁচে থাকে আল্লাহর কিতাবে।** 🌿🤍
আয়াত ৯৩
فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَـٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ فَكَيْفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوْمٍۢ كَـٰفِرِينَ
ফাতাওয়াল্লা ‘আনহুম, ওয়া ক্বালা, ইয়া কওমি লাক্বাদ্‌ আ্বলাগতুকুম রিসালাতি রাব্বি, ওয়া নাসাহতু লাকুম, ফা কাইফা আসা ‘আলা কওমিন কাফিরীন।
“অতঃপর তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন — ‘হে আমার জাতি! আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি আমার প্রভুর বার্তাসমূহ এবং তোমাদের উপদেশ দিয়েছি। এখন আমি কীভাবে দুঃখ করব এমন এক জাতির জন্য, যারা অবিশ্বাসী?’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে নবী **শু‘আইব (আঃ)**-এর দাওয়াতি জীবনের **শেষ মুহূর্তের দৃশ্য** ফুটে উঠেছে। যখন তাঁর জাতি অহংকারে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো, তখন তিনি গভীর বেদনা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে এই কথা বললেন।

🌸 “فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ” — “অতঃপর তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।” অর্থাৎ, তাদের ধ্বংস দেখে তিনি চলে গেলেন — কিন্তু তা ছিল **রাগে নয়, বেদনায়।** নবীরা কখনো প্রতিশোধে আনন্দ পান না; বরং হৃদয়ে ব্যথা নিয়ে আল্লাহর ফয়সালার সামনে নত হন। 🌿 তিনি জানতেন — এ জাতি আল্লাহর আজাবের যোগ্য ছিল, কিন্তু একজন দাঈ (দাওয়াতদাতা) হিসেবে তাঁর হৃদয় কাঁদছিল।

🌸 “يَـٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى” — “হে আমার জাতি! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বার্তাসমূহ পৌঁছে দিয়েছি।” 🌿 এটি এক নবীর **দাওয়াতি দায়িত্বের পূর্ণতা ঘোষণা।** তিনি বললেন — আমি বার্তা পৌঁছে দিয়েছি, সত্য বোঝানোর চেষ্টা করেছি, এখন তোমাদের পরিণতি আল্লাহর হাতে। 🌸 এটি এমন এক হৃদয়স্পর্শী বিদায়, যেখানে দায়িত্ব শেষ, কিন্তু ভালোবাসা রয়ে গেছে।

🌿 “وَنَصَحْتُ لَكُمْ” — “আমি তোমাদের উপদেশ দিয়েছি।” নবী শু‘আইব (আঃ) কেবল আল্লাহর বার্তা দেননি, বরং আন্তরিকভাবে কল্যাণের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন তাদের ঈমান, তাদের নিরাপত্তা, তাদের জান্নাত। 🌸 কিন্তু তারা সেই দাওয়াতকে উপহাস করেছে, তাই এখন তিনি শুধু দুঃখের নিঃশ্বাস ফেললেন।

🌿 “فَكَيْفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوْمٍۢ كَـٰفِرِينَ” — “এখন আমি কীভাবে দুঃখ করব এমন এক জাতির জন্য, যারা অবিশ্বাসী?” 🌸 এটি হতাশা নয়, বরং **দাওয়াতের বাস্তব শিক্ষা।** যখন কেউ সত্য অস্বীকার করে এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, তখন মুমিন কেবল দুঃখিত হতে পারে — কিন্তু শোকাহত নয়, কারণ সে জানে আল্লাহর বিচারই সঠিক। 🌿 নবী শু‘আইব (আঃ)-এর এই বাক্যে এক গভীর ঈমানী প্রশান্তি আছে — তিনি তাঁর দায়িত্ব পূর্ণ করেছেন, এখন ফলাফলের ব্যাপার আল্লাহর হাতে।

গভীর উপলব্ধি:
🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় দাওয়াতের তিনটি মহান নীতি —
  • 📩 দায়িত্ব — সত্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
  • 💬 নসীহা — আন্তরিকভাবে উপদেশ দেওয়া।
  • 🕊️ তাওয়াক্কুল — ফলাফল আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেওয়া।
🌿 নবী শু‘আইব (আঃ) কখনো বললেন না, “আমি হেরে গেলাম” — বরং বললেন, “আমি বার্তা পৌঁছে দিয়েছি।” কারণ নবীর জয় সংখ্যায় নয়, **দাওয়াতের সততায়।**

🌸 তাঁর এই উক্তি নবীদের সকল উত্তরসূরি দাঈদের জন্য এক অনন্ত দৃষ্টান্ত — 👉 “তুমি তোমার কাজ করো, ফলাফল আল্লাহর হাতে দাও।” 👉 “মানুষ ফিরবে না মানেই তুমি ব্যর্থ নও।”

উদাহরণ:
যেমন একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তাঁর ছাত্রদের বোঝাতে, কেউ বোঝে, কেউ অমান্য করে — কিন্তু শিক্ষক ব্যর্থ নয়, কারণ তিনি **তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন।** তেমনি, নবীগণও বার্তা পৌঁছে দিয়ে সফল — গ্রহণ করবে কি না, তা আল্লাহর ফয়সালায় নির্ভর করে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • দাওয়াতের সাফল্য মানুষের গ্রহণে নয়, প্রচেষ্টার আন্তরিকতায়।
  • নবীরা কখনো প্রতিশোধে আনন্দ পান না; তারা দুঃখে কেঁদে ওঠেন।
  • সত্য বলা দায়িত্ব, কিন্তু হৃদয় শান্ত রাখা ঈমান।
  • “আমি উপদেশ দিয়েছি” — দাওয়াতের এই বাক্যটি আজও আমাদের জন্য আদর্শ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“يَـٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ فَكَيْفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوْمٍۢ كَـٰفِرِينَ”** 🤍 — “হে আমার জাতি! আমি আমার প্রভুর বার্তা পৌঁছে দিয়েছি, তোমাদের উপদেশ দিয়েছি; এখন কীভাবে দুঃখ করব এমন জাতির জন্য, যারা অবিশ্বাসী?” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্য বলা আমাদের দায়িত্ব, কিন্তু হৃদয় শান্ত রাখা আমাদের ঈমান। যে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, সে কখনো দুঃখে হার মানে না।** 🌿🤍
আয়াত ৯৪
وَمَآ أَرْسَلْنَا فِى قَرْيَةٍۢ مِّن نَّبِىٍّ إِلَّآ أَخَذْنَآ أَهْلَهَا بِٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُونَ
ওয়া মা আর্সালনা ফি কারইয়াতিন মিন নবিয়্যিন, ইল্লা আখাযনা আহলাহা বিল-বা’সা-ই ওয়াদ-দার্‌রা, লা‘আল্লাহুম ইয়ায্যার্‌রাঊন।
“আমি কোনো নগরে নবী পাঠাইনি, কিন্তু সেই নগরবাসীদেরকে আমি কষ্ট ও বিপদে আক্রান্ত করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়ে আমার দিকে ফিরে আসে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এক গুরুত্বপূর্ণ **সুন্নাহ্‌ (ঐশী নীতি)** ঘোষণা করেছেন — ইতিহাসে কখনো কোনো জাতির প্রতি নবী পাঠানো হয়েছে, আর সেই জাতি যদি অহংকার করে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষার মাধ্যমে জাগিয়ে তুলেছেন।

🌸 “وَمَآ أَرْسَلْنَا فِى قَرْيَةٍۢ مِّن نَّبِىٍّ” — “আমি কোনো নগরে নবী পাঠাইনি...” অর্থাৎ, প্রতিটি জাতি ও সভ্যতার জন্যই আল্লাহ একজন করে বার্তাবাহক পাঠিয়েছেন। আল্লাহর দয়া এমন যে, **কোনো জাতি সতর্কবার্তা ছাড়া ধ্বংস হয়নি।** 🌿

🌸 “إِلَّآ أَخَذْنَآ أَهْلَهَا بِٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ” — “কিন্তু সেই নগরবাসীদেরকে আমি কষ্ট ও বিপদে আক্রান্ত করেছি।” 🌿 এখানে “ٱلْبَأْسَآء” অর্থ — **বহিঃশত্রু, যুদ্ধ বা অর্থনৈতিক সংকট**, এবং “ٱلضَّرَّآء” অর্থ — **রোগ, দারিদ্র্য ও ব্যক্তিগত বিপদ।** অর্থাৎ, আল্লাহ তাদের জীবনে এমন পরীক্ষাগুলো পাঠান যাতে তাদের হৃদয় নরম হয় এবং তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। 🌸 এই কষ্ট ছিল না **শাস্তি**, বরং **স্মরণ করানোর এক সুযোগ।** আল্লাহ চান মানুষ অহংকার থেকে বিনয়ে ফিরে আসুক।

🌿 “لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُونَ” — “যাতে তারা বিনীত হয়ে আমার দিকে ফিরে আসে।” 🌸 আল্লাহর উদ্দেশ্য শাস্তি নয় — বরং **হৃদয় জাগানো।** এই শব্দটি “تضرّع” (তাযার্‌রু’) থেকে এসেছে, যার অর্থ — **বিনয়, অনুনয় ও কান্না সহকারে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা।** 🌿 আল্লাহ ভালোবাসা ও দয়া দিয়ে চান, মানুষ যেন ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্তরিকভাবে তাওবা করে।

🌸 এই আয়াত আসলে এক গভীর রহমতের ঘোষণা — যখন কষ্ট আসে, তখন সেটি ধ্বংসের পূর্বাভাস নয়, বরং **আল্লাহর ডাক: “ফিরে এসো, এখনো সময় আছে।”** 🤍

গভীর উপলব্ধি:
🌿 প্রতিটি পরীক্ষা ও বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আহ্বান — 👉 “আমি তোমাকে ডাকছি, আমার দিকে ফিরে এসো।” 👉 “তুমি ভুলে গিয়েছিলে আমাকে, এখন স্মরণ করো।” 🌸 দুনিয়ার কষ্টগুলো মুমিনের জন্য **জাগরণের ঘণ্টাধ্বনি।** আল্লাহ বলেন, “আমি কষ্ট দিই যাতে তারা বিনয়ী হয়,” কারণ **অহংকারী হৃদয় কেবল কষ্টেই নম্র হয়।**

🌿 ইতিহাসে দেখা যায় — যখন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে, তখন তারা ভুলে যায় আল্লাহকে; কিন্তু বিপদে পড়লে তারা বলে — “হে আল্লাহ, আমাদের বাঁচাও!” এটাই মানব প্রকৃতি, যা আল্লাহ ভালোভাবে জানেন 🌸

উদাহরণ:
যেমন একজন শিক্ষক দুর্বল ছাত্রকে একটু কঠিন পরীক্ষা দেন, যাতে সে পরিশ্রম শিখে, নিজের ভুল বুঝতে পারে। তেমনি, আল্লাহ কষ্ট দেন **ভাঙার জন্য নয়, গড়ার জন্য।** 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • কষ্ট ও বিপদ প্রায়ই আল্লাহর দয়া হিসেবে আসে — জাগানোর জন্য।
  • আল্লাহ কাউকে বিনা সতর্কবার্তায় শাস্তি দেন না।
  • পরীক্ষা আমাদের অহংকার ভেঙে বিনয় শেখায়।
  • “লা‘আল্লাহুম ইয়ায্যার্‌রাঊন” — এই বাক্যটি আল্লাহর ভালোবাসার পরিচয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“إِلَّآ أَخَذْنَآ أَهْلَهَا بِٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُونَ”** 🤍 — “আমি তাদের কষ্ট ও বিপদে ফেলেছি, যাতে তারা বিনীত হয়ে আমার দিকে ফিরে আসে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন বিপদ আসে, তখন বুঝে নাও — আল্লাহ তোমাকে ডাকছেন, যেন তুমি আরেকবার তাঁর দিকে ফিরে যাও।** 🌿🤍
আয়াত ৯৫
ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ ٱلسَّيِّئَةِ ٱلْحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَوا۟ وَقَالُوا۟ قَدْ مَسَّ ءَابَآءَنَا ٱلضَّرَّآءُ وَٱلسَّرَّآءُ فَأَخَذْنَـٰهُم بَغْتَةًۭ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
সুম্মা বাদ্দালনা মাকানাস্‌সাইয়্যি’তি আল্‌হাসানাহ, হাত্তা ‘আফাউ ওয়া ক্বালূ, ক্বাদ মাস্সা আ-বা-আনা আদ্দার্‌রা-উ ওয়াস্‌সার্‌রা-উ, ফা-আখাযনাহুম বাগ্‌তাতান ওাহুম লা ইয়াশ‘উরূন।
“অতঃপর আমি তাদের দুঃখ-কষ্টের পরিবর্তে সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করলাম, এমনকি তারা সমৃদ্ধ হয়ে গেল। তারপর তারা বলল — ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো কষ্ট ও সুখ ভোগ করেছিল।’ অতঃপর আমি তাদেরকে হঠাৎ ধরে ফেললাম, যখন তারা কিছুই টের পেল না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের এক বড় মানসিক দুর্বলতার কথা বলেছেন — যখন বিপদ চলে যায় ও সুখ ফিরে আসে, তখন মানুষ দ্রুতই আল্লাহকে ভুলে যায় 😔

🌸 “ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ ٱلسَّيِّئَةِ ٱلْحَسَنَةَ” — “অতঃপর আমি তাদের কষ্টের পরিবর্তে সুখ দিলাম।” 🌿 অর্থাৎ, যখন তারা কষ্টে ছিল, তখন কিছুটা বিনয়ী হয়েছিল, আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করে **সুখ ও সমৃদ্ধি** দিলেন। তারা আবার অন্ধ হয়ে গেল দুনিয়ার আরামে। 🌸 মানুষ প্রায়ই কষ্টে আল্লাহকে স্মরণ করে, কিন্তু আরামে ভুলে যায় — এটাই এই আয়াতের বাস্তব শিক্ষা 🌿

🌿 “حَتَّىٰ عَفَوا۟” — “যতক্ষণ না তারা সমৃদ্ধ হয়ে গেল।” অর্থাৎ, তারা এত উন্নত, ধনী ও নির্ভার হলো যে মনে করতে লাগল — “এটাই তো স্বাভাবিক জীবন।” তাদের হৃদয় থেকে বিনয় হারিয়ে গেল, এবং তারা আত্মতৃপ্ত অহংকারে ভরে উঠল।

🌸 “وَقَالُوا۟ قَدْ مَسَّ ءَابَآءَنَا ٱلضَّرَّآءُ وَٱلسَّرَّآءُ” — “তারা বলল — আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো কষ্ট ও সুখ ভোগ করেছিল।” 🌿 অর্থাৎ, তারা পরীক্ষাগুলোকে **স্বাভাবিক ঘটনা** বলে ধরে নিল, এবং **আল্লাহর সতর্কবার্তাকে উপহাস** করল। 🌸 তারা বলল — “বিপদ আসে, চলে যায় — এটা তো সব যুগেই হয়েছে, এতে বিশেষ কিছু নয়।” তারা আল্লাহর শিক্ষার বার্তা বুঝতে অস্বীকার করল।

🌿 “فَأَخَذْنَـٰهُم بَغْتَةًۭ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ” — “অতঃপর আমি তাদের হঠাৎ ধরে ফেললাম, যখন তারা কিছুই টের পেল না।” 🌸 এই বাক্যটি আল্লাহর গজবের এক **ভয়াবহ দৃশ্য** প্রকাশ করে — যখন মানুষ সুখে, নিশ্চিন্তে, ব্যস্ততায় ডুবে থাকে, তখনই আল্লাহর শাস্তি হঠাৎ এসে পড়ে ⚡ 🌿 “বাগ্‌তাহ্” অর্থ — হঠাৎ, অপ্রত্যাশিতভাবে। তারা ভেবেছিল সব নিরাপদ, কিন্তু তাদের জীবনের সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল।

🌸 এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা শেখাচ্ছেন — **সুখও হতে পারে এক কঠিন পরীক্ষা।** কারণ, অনেক সময় আরামের জীবন মানুষকে ভুলিয়ে দেয় আল্লাহর দান ও দায়িত্ব।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 দুঃখ মানুষকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায়, কিন্তু সুখ মানুষকে প্রায়ই আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। 🌸 আল্লাহ দুঃখ দেন যাতে মানুষ তাওবা করে, আবার সুখ দেন যাতে মানুষ কৃতজ্ঞ হয় — কিন্তু যখন কেউ **না তাওবা করে, না কৃতজ্ঞ হয়**, তখন আল্লাহর ফয়সালা এসে যায়।

🌿 এই আয়াত এক বাস্তব শিক্ষা দেয় — “বিপদে যে আল্লাহকে ডাকে, তাকে সমৃদ্ধিতেও আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে।”

উদাহরণ:
যেমন একজন ছাত্র বিপদের সময় পড়াশোনা শুরু করে, কিন্তু পরীক্ষা পাস করার পর শিক্ষককে ভুলে যায় 🎓 তেমনি, মানুষ কষ্টে আল্লাহকে ডাকে, কিন্তু আরামে আল্লাহকে ভুলে যায় — এবং সেখানেই আসে **হঠাৎ ধ্বংসের মুহূর্ত।** ⚡

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ কখনো কষ্ট ও সুখ — দুটিই পাঠান পরীক্ষা হিসেবে।
  • সুখের সময়েও কৃতজ্ঞ থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
  • আল্লাহর সতর্কবার্তাকে হালকা ভাবে নেওয়া ধ্বংস ডেকে আনে।
  • “বাগ্‌তাহ্” — আল্লাহর শাস্তি আসে হঠাৎ, যখন মানুষ অসচেতন।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ ٱلسَّيِّئَةِ ٱلْحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَوا۟ وَقَالُوا۟ قَدْ مَسَّ ءَابَآءَنَا ٱلضَّرَّآءُ وَٱلسَّرَّآءُ فَأَخَذْنَـٰهُم بَغْتَةًۭ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ”** 🤍 — “আমি কষ্টের পর সুখ দিলাম, তারা সমৃদ্ধ হলো, বলল — ‘এ তো সব যুগেই হয়!’ তারপর আমি তাদের হঠাৎ ধরে ফেললাম, যখন তারা বুঝতেও পারল না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **কষ্টে নয়, আরামেও আল্লাহকে মনে রাখো। কারণ, যে সুখে গাফেল হয়, সে প্রায়ই হঠাৎ ধ্বংসের মুখে পড়ে।** 🌿🤍
আয়াত ৯৬
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَـٰتٍۢ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ وَلَـٰكِن كَذَّبُوا۟ فَأَخَذْنَـٰهُم بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ
ওয়ালাও আন্না আহলাল কুরা আ-মানূ ওয়াত্তাকাও, লাফাতাহনা ‘আলাইহিম বারাকাতিম মিনাস্‌সামা-ই ওয়াল আরদ, ওয়ালাকিন কাজ্‌যাবূ, ফা-আখাযনাহুম বিমা কানো ইয়াক্সিবূন।
“আর যদি নগরবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবী থেকে বরকতের দ্বার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা বলল, তাই আমি তাদেরকে ধরেছিলাম তাদেরই কৃতকর্মের কারণে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এক **অপরিবর্তনীয় আধ্যাত্মিক নীতি** ঘোষণা করেছেন — যে জাতি **ঈমান ও তাকওয়া** অবলম্বন করে, আল্লাহ তাদের জন্য পৃথিবী ও আকাশ উভয় দিক থেকে **বরকতের দ্বার উন্মুক্ত করেন।**

🌸 “وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟” — “যদি নগরবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত।” 🌿 অর্থাৎ, যদি তারা নবীদের বার্তা গ্রহণ করত, আল্লাহকে ভয় করত এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকত — তবে তাদের সমাজ, অর্থনীতি ও জীবন সবই সমৃদ্ধ হতো। 🌸 এখানে “ঈমান” হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আর “তাকওয়া” হলো সেই বিশ্বাস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।

🌿 “لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَـٰتٍۢ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ” — “তবে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবী থেকে বরকতের দ্বার খুলে দিতাম।” 🌸 এটি এক বিস্ময়কর প্রতিশ্রুতি — আল্লাহ বলেন, **যে সমাজ ন্যায়, সততা ও তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য প্রকৃতি নিজেই ফলপ্রসূ হয়ে যায়।** 🌧️🌾 🌿 আকাশ থেকে নামে বৃষ্টি ও রহমত, আর পৃথিবী দেয় ফল, শস্য, শান্তি ও স্থিতি। 🌸 এখানে “বরকাত” (আশীর্বাদ) বলতে শুধু ধন-সম্পদ নয়, বরং হৃদয়ের প্রশান্তি, সমাজের ন্যায়বিচার, এবং জীবনযাত্রার সৌন্দর্য — সবই অন্তর্ভুক্ত।

🌿 “وَلَـٰكِن كَذَّبُوا۟” — “কিন্তু তারা মিথ্যা বলল।” অর্থাৎ, তারা নবীদের অস্বীকার করল, অহংকারে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করল। 🌸 এর ফল হলো — **আল্লাহর বরকত সরে গেল।** বৃষ্টি বরফ হলো, খাদ্য দুর্লভ হলো, আর তাদের সমাজে এল অশান্তি ও দুর্ভিক্ষ।

🌿 “فَأَخَذْنَـٰهُم بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ” — “তাই আমি তাদের ধরেছিলাম তাদেরই কৃতকর্মের কারণে।” 🌸 আল্লাহ বলেন — “আমার শাস্তি অন্যায় নয়; এটি তাদের নিজেদের কর্মের ফল।” 🌿 যেমন কোনো সমাজে যখন প্রতারণা, অন্যায়, সুদ, ব্যভিচার ও গাফেলি বাড়ে, তখন আল্লাহর বরকত সরে যায় — আর জীবন কঠিন হয়ে পড়ে, যদিও সম্পদ প্রচুর থাকে।

গভীর উপলব্ধি:
🌸 এই আয়াত সমাজ ও জাতির সাফল্যের এক **আধ্যাত্মিক ফর্মুলা** — 👉 ঈমান + তাকওয়া = বরকত 🌿 👉 কুফরি + অন্যায় = ধ্বংস 💔 🌿 আল্লাহর বরকত শুধু সম্পদ নয় — বরং শান্তি, নিরাপত্তা ও ভালো সম্পর্কও তাঁর রহমতের অংশ। 🌸 আজও যদি মানুষ ঈমান ও তাকওয়ায় ফিরে আসে, আল্লাহ সেই বরকতের দ্বার আবার খুলে দেবেন — যেমন তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই আয়াতে 🤍

উদাহরণ:
যেমন সূর্যের আলো সব জায়গায় পড়ে, কিন্তু জানালা বন্ধ রাখলে আলো ঘরে আসে না ☀️ তেমনি, আল্লাহর বরকত সবার জন্য, কিন্তু কুফর ও অন্যায় সেই জানালাটি বন্ধ করে দেয়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর বরকত আসে ঈমান ও তাকওয়ার মাধ্যমে।
  • অন্যায় ও মিথ্যা বরকতকে দূর করে দেয়।
  • সামাজিক ন্যায় ও নৈতিকতা আল্লাহর রহমতের পথ খুলে দেয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَـٰتٍۢ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ”** 🤍 — “যদি নগরবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকত খুলে দিতাম।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **বরকতের চাবি অর্থ নয়, ঈমান ও তাকওয়া। যে আল্লাহকে মানে ও অন্যায় থেকে বাঁচে, আল্লাহ তাঁর জন্য সুখ ও শান্তির দুয়ার খুলে দেন।** 🌿🤍
আয়াত ৯৭
أَفَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَـٰتًۭا وَهُمْ نَآئِمُونَ
আফা-আমিনা আহলুল কুরা আন ইয়াতিয়াহুম বা’সুনা বাইয়াতান ওয়াহুম নায়িমূন।
“তবে কি নগরবাসীরা নিরাপদ মনে করেছিল যে, আমার শাস্তি তাদের উপর রাতে এসে পড়বে, যখন তারা ঘুমিয়ে থাকবে?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে এক **গভীর ও ভীতিপূর্ণ বাস্তবতা** স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যখন তারা পাপ, অন্যায় ও গাফেলিতে নিমগ্ন থাকে, তখন তারা ভাবে — “সব ঠিক আছে।” কিন্তু আল্লাহর গজব **যেকোনো সময়ে, যেভাবে চান,** এসে পড়তে পারে। ⚡

🌸 “أَفَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ” — “তবে কি নগরবাসীরা নিরাপদ মনে করেছিল?” 🌿 এখানে “أَمِنَ” (আমিনা) শব্দের অর্থ — নিশ্চিন্ত বা নিরাপদ মনে করা। অর্থাৎ, তারা নিজেদের অপরাধ ও গাফেলি সত্ত্বেও মনে করেছিল আল্লাহর শাস্তি কখনো আসবে না। 🌸 তাদের অহংকার ছিল — “আমরা শক্তিশালী, আমরা উন্নত, আমাদের কিছু হবে না।” কিন্তু আল্লাহ জিজ্ঞাসা করছেন — “তোমরা কি নিশ্চিত যে, আমি রাতে তোমাদের ঘুমের মধ্যেই শাস্তি দিতে পারব না?”

🌿 “أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا” — “আমাদের শাস্তি তাদের কাছে এসে পড়বে।” এখানে “بَأْس” (বা’স) শব্দটি নির্দেশ করে আল্লাহর গজব বা ধ্বংসের শক্তি। 🌸 এটি হতে পারে ভূমিকম্প, ঝড়, রোগব্যাধি, বা এমন কোনো দুর্যোগ — যা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।

🌿 “بَيَـٰتًۭا وَهُمْ نَآئِمُونَ” — “রাতে, যখন তারা ঘুমিয়ে থাকবে।” 🌸 আল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবে “রাত” শব্দটি ব্যবহার করেছেন — কারণ রাত হলো নিশ্চিন্ততা, বিশ্রাম ও নিরাপত্তার সময়। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি যখন আসে, তখন তা এমন সময়ে আসে, **যখন মানুষ একেবারেই অচেতন ও অসচেতন থাকে।** 🌿 ঠিক যেমন নূহ (আঃ)-এর জাতি বা লুত (আঃ)-এর জাতির উপর গজব এল — তারা ঘুমাচ্ছিল, আনন্দে ছিল, কিন্তু এক মুহূর্তেই ইতিহাসে পরিণত হলো 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌸 এই আয়াত এক সতর্ক ঘণ্টাধ্বনি — 👉 পাপ যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন মানুষ ভাবতে শুরু করে, “আল্লাহর শাস্তি তো আসে না, এতদিনেও কিছু হয়নি।” কিন্তু আল্লাহর গজব আসে **হঠাৎ**, যেমন বজ্রপাত ⚡ 🌿 তাই একজন মুমিন কখনো নিরাপত্তার ভ্রান্তিতে পড়ে না; সে সর্বদা সতর্ক থাকে, তাওবায় ফিরে আসে, কারণ সে জানে — **আল্লাহর ধৈর্য সীমাহীন, কিন্তু ন্যায়বিচারও অনিবার্য।**

🌸 এই আয়াত মানুষকে অহংকার থেকে সতর্ক করে — যে রাতের ঘুমও নিরাপত্তা নয়, যদি অন্তর জেগে না থাকে আল্লাহর স্মরণে।

উদাহরণ:
যেমন কোনো মানুষ রাতের বেলা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, কিন্তু এক মুহূর্তে ভূমিকম্পে ঘর ভেঙে পড়ে যায় 🏚️ সে ভাবত, সব ঠিক আছে — অথচ আল্লাহর ফয়সালা এসে গেছে। 🌿 তেমনি এক জাতি যখন অন্যায়ে মগ্ন থাকে, তখন একদিন এমনভাবেই গজব এসে যায়, এবং তারা বুঝতেও পারে না কবে সব শেষ হয়ে গেল।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর গজব আসে হঠাৎ — তাই কখনো আত্মতুষ্ট হওয়া যাবে না।
  • রাতের ঘুম যেমন দেহের বিশ্রাম, তেমনি গাফেলি হৃদয়ের মৃত্যু।
  • যে সমাজ অন্যায়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যায়, তার পতন অনিবার্য।
  • সতর্ক থাকা ও তাওবায় ফিরে আসাই নিরাপত্তার একমাত্র পথ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَفَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَـٰتًۭا وَهُمْ نَآئِمُونَ”** 🤍 — “তবে কি নগরবাসীরা নিরাপদ মনে করেছিল যে, আমার শাস্তি তাদের উপর রাতে এসে পড়বে, যখন তারা ঘুমিয়ে থাকবে?” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর ন্যায়বিচার কখনো বিলীন হয় না; তিনি সুযোগ দেন, সতর্ক করেন, কিন্তু যখন মানুষ পরিবর্তন করে না — তখন গজব আসে, হঠাৎ ও নিশ্চিতভাবে।** 🌿🤍
আয়াত ৯৮
أَوَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًۭى وَهُمْ يَلْعَبُونَ
আওয়া-আমিনা আহলুল কুরা আন ইয়াতিয়াহুম বা’সুনা দুহান ওয়াহুম ইয়ালআবূন।
“অথবা কি নগরবাসীরা নিরাপদ মনে করেছিল যে, আমার শাস্তি তাদের উপর দিনে এসে পড়বে, যখন তারা খেলাধুলা ও ব্যস্ততায় মত্ত থাকবে?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াতের ধারাবাহিকতা — যেখানে আল্লাহ রাতের শাস্তির কথা বলেছিলেন, আর এখানে বলা হচ্ছে **দিনের গজবের কথা।** 🌸 উদ্দেশ্য একটাই — **মানুষ যেন কখনো নিরাপত্তার ভ্রান্তিতে না পড়ে।** কারণ, আল্লাহর শাস্তি আসতে পারে **যেকোনো সময়ে**, দিনে বা রাতে, সতর্কতা ছাড়াই। ⚡

🌸 “أَوَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ” — “অথবা কি নগরবাসীরা নিরাপদ মনে করেছিল?” 🌿 আল্লাহ প্রশ্নরূপে জিজ্ঞাসা করেছেন — “তোমরা কি নিশ্চিন্ত যে, আমার গজব শুধু অন্যদের জন্য?” এই প্রশ্নের মধ্যেই রয়েছে গভীর সতর্কতা ও তাগিদ।

🌿 “أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًۭى” — “যে আমাদের শাস্তি তাদের কাছে দিনে এসে পড়বে।” 🌸 “ضُحًۭى” (দুহা) মানে হলো **সকাল বা মধ্যদিনের আলোয় ভরা সময়**, যখন মানুষ কাজ, আনন্দ ও ব্যস্ততায় থাকে। অর্থাৎ, তারা তখন নিশ্চিন্ত, চঞ্চল ও আনন্দময় পরিবেশে। 🌿 ঠিক সেই সময়েই আল্লাহর গজব এসে পড়তে পারে — কারণ, **গাফেলি যখন চরমে পৌঁছে যায়, তখনই আল্লাহর ন্যায়বিচার কার্যকর হয়।**

🌸 “وَهُمْ يَلْعَبُونَ” — “যখন তারা খেলাধুলা ও ব্যস্ততায় মত্ত থাকবে।” 🌿 এটি শুধুমাত্র খেলার অর্থ নয়, বরং এখানে বোঝানো হয়েছে — **অলসতা, বিনোদন, গাফেলি, দুনিয়ার ভোগে মগ্ন থাকা।** 🌸 তারা হাসছিল, আনন্দ করছিল, ব্যবসা করছিল, অথচ আল্লাহর ধৈর্যের সীমা ফুরিয়ে যাচ্ছিল... আর এক মুহূর্তে সেই জাতি ইতিহাস হয়ে গেল 😔

🌿 এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের শেখাচ্ছেন — গজব শুধু দুর্যোগ নয়, বরং এটি হতে পারে এমন পরিস্থিতি, যা মানুষ আনন্দের মাঝেই বুঝে উঠতে পারে না। যেমন — শান্ত সমাজে হঠাৎ নৈতিক পতন, বা উন্নতির মাঝেই ধ্বংসের বীজ রোপিত হওয়া 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌸 আল্লাহ চান মানুষ যেন সবসময় সচেতন থাকে — 👉 শুধু বিপদে নয়, আনন্দের মাঝেও যেন তারা তাঁকে স্মরণ করে। 🌿 কারণ, গাফেলি ও আনন্দের সময়েই মানুষ সবচেয়ে দূরে সরে যায় আল্লাহ থেকে। 🌸 এই আয়াতটি মনে করিয়ে দেয় — **আল্লাহর ধৈর্য কোনো দুর্বলতা নয়, বরং পরীক্ষা।** যখন মানুষ সুযোগ পেয়েও পরিবর্তন করে না, তখনই আল্লাহর শাস্তি “দুহা” অর্থাৎ উজ্জ্বল দিনের মতো প্রকাশ পায়।

উদাহরণ:
যেমন সূর্য ওঠার পর সবাই ভাবে, “আজ দিনটা সুন্দর যাবে।” ☀️ কিন্তু হঠাৎ আসে ঝড়, বৃষ্টি, অন্ধকার — তখন কেউ কিছুই বুঝে ওঠার আগে সব বদলে যায়। 🌿 তেমনি, এক জাতি যখন আল্লাহর কথা ভুলে যায়, তখন তাদের আনন্দের মধ্যেই শুরু হয় ধ্বংসের সূচনা।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর গজব শুধু রাতে নয়, দিনে আসতেও পারে — যখন মানুষ গাফেল।
  • গাফেলি ও অহংকার মানুষকে নিরাপত্তার ভ্রান্তিতে ফেলে।
  • আনন্দের মাঝেও একজন মুমিন সচেতন থাকে — এটাই তাকওয়া।
  • আল্লাহর ধৈর্য অসীম, কিন্তু ন্যায়বিচার অনিবার্য।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَوَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًۭى وَهُمْ يَلْعَبُونَ”** 🤍 — “তবে কি নগরবাসীরা নিরাপদ মনে করেছিল যে, আমার শাস্তি তাদের উপর দিনে এসে পড়বে, যখন তারা খেলাধুলা ও ব্যস্ততায় থাকবে?” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আনন্দের মুহূর্তেও আল্লাহকে ভুলে যেয়ো না। কারণ, নিরাপত্তা নয় — আল্লাহর সন্তুষ্টিই প্রকৃত শান্তি।** 🌿🤍
আয়াত ৯৯
أَفَأَمِنُوا مَكْرَ ٱللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْقَوْمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ
আফা-আমিনূ মাকারাল্লাহ্‌? ফালা ইয়ামানু মাকারাল্লাহি ইল্লাল কাওমুল খাসিরূন।
“তবে কি তারা আল্লাহর পরিকল্পনা (ধরা–ফেলা/পদক্ষেপ) থেকে নিরাপদ মনে করেছে? আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ মনে করে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরাই।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত পূর্বের দুই সতর্কতার সমাপ্তি—রাতেও নয়, দিনেও নয়, **কখনোই** মানুষ আল্লাহর গ্রেফতার থেকে নিশ্চিন্ত হতে পারে না। “মাকরুল্লাহ” মানে এখানে আল্লাহর এমন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা, যা গাফেলদের অপ্রত্যাশিতভাবে ধরে ফেলে — ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত রূপে।

🌸 মূল বার্তা: যে হৃদয় পাপে অভ্যস্ত হয়ে বলে— “কিছুই হবে না,” সে-ই আসলে **খাসির** (ক্ষতিগ্রস্ত); কারণ নিরাপত্তার ভ্রান্তি তাকে তাওবা ও বিনয় থেকে দূরে সরায়।

উদাহরণ:
যেমন কেউ বাঁধের চিড় দেখে বলে— “এতে কিছু হবে না,” আর ঠিক সেখানেই একদিন বাঁধ ভেঙে প্লাবন নামে। তেমনি, পাপের চিড়কে ছোট ভাবলেই একদিন আল্লাহর পরিকল্পনা তাকে হঠাৎ ঘিরে ফেলে ⚡

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আত্মতুষ্টি (গাফেলি) ঈমানের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।
  • আল্লাহর ধৈর্যকে দুর্বলতা ভাবা ধ্বংস ডেকে আনে।
  • মুমিনের চিহ্ন—ভয় (খশিয়ত) ও আশা (রজা) একসাথে রাখা।
  • প্রতিদিনের তাওবা ও আত্মসমালোচনাই নিরাপত্তার প্রকৃত পথ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**“فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْقَوْمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ”** — আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিশ্চিন্ত থাকে কেবল ক্ষতিগ্রস্তরা; তাই মুমিনের পথ হলো— **সচেতন থাকা, তাওবায় ফিরা, আর আল্লাহর উপর নির্ভর।** 🤍
আয়াত ১০০
أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلْأَرْضَ مِنۢ بَعْدِ أَهْلِهَآ أَن لَّوْ نَشَآءُ أَصَبْنَـٰهُم بِذُنُوبِهِمْ وَنَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ
আওালাম ইয়াহদি লিল্লাযিনা ইয়ারিসূনাল আরদা মিম্‌ বা‘দি আহলিহা, আন লাও নাশা-উ আসাবনাহুম বিযুনুবিহিম, ওয়ানাতবা‘উ ‘আলা কুলুবিহিম, ফাহুম লা ইয়াসমা‘ঊন।
“তাদের কি বোধগম্য হয়নি, যারা নিজেদের পূর্ববর্তীদের পরে পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হয়েছে, যে আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকেও তাদের গুনাহের কারণে শাস্তি দিতে পারতাম? আমি তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দিই, ফলে তারা আর কিছুই শুনতে পারে না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে ইতিহাসের দিকে তাকাতে বলছেন — “তোমাদের আগে যারা ছিল, তারা অন্যায় করেছিল, গাফেল হয়েছিল, আর আমি তাদের ধ্বংস করেছি।” তাহলে, যারা আজ তাদের পর পৃথিবীতে এসেছে, তারা কি কিছুই শিখবে না?

🌸 “أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلْأَرْضَ” — “যারা পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হয়েছে, তাদের কি বোধগম্য হয়নি?” 🌿 অর্থাৎ, যারা পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংস দেখে আজ পৃথিবীতে বসবাস করছে, তাদের জন্য এ শিক্ষা কি যথেষ্ট নয়? 🌸 আল্লাহ যেন প্রশ্ন করছেন — “তোমরা কি তাদের ধ্বংসাবশেষ দেখো না? সেই শহরগুলো, প্রাসাদগুলো — যেগুলো একসময় গর্বের প্রতীক ছিল, আজ সেগুলো নিঃশব্দ ধ্বংসস্তূপ।”

🌿 “أَن لَّوْ نَشَآءُ أَصَبْنَـٰهُم بِذُنُوبِهِمْ” — “আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকেও তাদের গুনাহের কারণে শাস্তি দিতে পারতাম।” 🌸 আল্লাহর এই বাক্য এক সতর্ক ঘোষণা — তিনি শুধু অতীতের জাতিদেরই নয়, বর্তমানের মানুষকেও ধ্বংস করতে পারেন, যদি তারা একই পথে চলে। 🌿 অর্থাৎ, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কখনো থামে না — অন্যায়ের পথ এক, ফলও এক।

🌿 “وَنَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ” — “আমি তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দিই, ফলে তারা আর কিছুই শুনতে পারে না।” 🌸 এটি সেই ভয়াবহ অবস্থা যখন মানুষ সত্য শোনে, কিন্তু হৃদয় আর তা গ্রহণ করে না। 🌿 “মোহর মেরে দেওয়া” অর্থ হলো — তাদের অন্তর সত্য উপলব্ধির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কান শুনে, কিন্তু মন অস্বীকার করে; চোখ দেখে, কিন্তু হৃদয় অন্ধ হয়ে যায় 💔

🌸 এই আয়াতে এক গভীর সতর্কবার্তা আছে — **ইতিহাস শুধু কাহিনি নয়, শিক্ষা।** যে জাতি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, সে একই ভুল পুনরাবৃত্তি করে এবং একই পরিণতি ভোগ করে।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহ চান মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিদের ধ্বংসাবশেষ দেখে শিক্ষা নিক, অহংকার না করুক, গাফেল না হোক। 🌸 কিন্তু যখন কেউ সত্য শুনেও তাওবা করে না, তখন আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন — আর সেই অবস্থাই সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি। 🌿 **কারণ, মৃত হৃদয় জীবিত দেহের চেয়েও ভয়ঙ্কর।**

উদাহরণ:
যেমন কেউ আগুনে পুড়ে যেতে দেখে, তারপরও সে নিজের হাতে আগুন ছোঁয় — তখন তার ক্ষতি শুধু অজ্ঞতার নয়, বরং জেদ ও অবহেলার ফল। তেমনি, যারা পূর্ববর্তীদের পতন দেখে শিক্ষা নেয় না, তারাও ধ্বংসের পথে চলে যায়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • পূর্ববর্তী জাতিদের ইতিহাস শিক্ষা ও সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে।
  • অহংকার ও গাফেলি হৃদয়কে অন্ধ করে দেয়।
  • আল্লাহর ধৈর্য সীমাহীন, কিন্তু ন্যায়বিচার অনিবার্য।
  • যে জাতি শিক্ষা নেয় না, তার পরিণতিও আগের মতোই হয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَن لَّوْ نَشَآءُ أَصَبْنَـٰهُم بِذُنُوبِهِمْ وَنَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ”** 🤍 — “আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকেও তাদের গুনাহের কারণে শাস্তি দিতে পারতাম, এবং তাদের হৃদয় সিল করে দিই, ফলে তারা আর কিছুই শুনতে পারে না।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **ইতিহাস শুধু গল্প নয়, আয়না। যারা এতে নিজেদের চেহারা দেখে না, তারাই একদিন ইতিহাস হয়ে যায়।** 🌿🤍
আয়াত ১০১
تِلْكَ ٱلْقُرَىٰ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنۢبَآئِهَا ۚ وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَمَا كَانُوا۟ لِيُؤْمِنُوا۟ بِمَا كَذَّبُوا۟ مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ ٱلْكَـٰفِرِينَ
তিল্কাল কুরা নাকুসসু ‘আলাইকা মিন আনবা-ইহা, ওয়ালাকাদ্‌ জা-আতহুম রুসুলুহুম বিল বাই্যিনাত, ফা মা কানো লিইউমিনু বিমা কাজ্‌যাবু মিন্‌ কাবল, কাজালিকা ইয়াতবা‘ুল্লাহু ‘আলা কুলুবিল কাফিরীন।
“এসবই সেই নগরসমূহ, যাদের কাহিনি আমি তোমাকে বর্ণনা করছি। তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু তারা বিশ্বাস করতে চায়নি যা তারা আগে থেকেই অস্বীকার করেছিল। এভাবেই আল্লাহ কাফেরদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেন।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে বলছেন — “হে নবী, আমি তোমাকে যেসব জাতির কাহিনি শুনাচ্ছি, এগুলো কোনো গল্প নয়, বরং শিক্ষা ও সতর্কবার্তা।” 🌸 এই জাতিগুলো — নূহ (আঃ), হুদ (আঃ), সালেহ (আঃ), লুত (আঃ), শু‘আইব (আঃ) — প্রত্যেকেই তাদের রাসূলদের অস্বীকার করেছিল, যদিও তারা স্পষ্ট নিদর্শন ও প্রমাণ দেখেছিল।

🌿 “تِلْكَ ٱلْقُرَىٰ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنۢبَآئِهَا” — “এসবই সেই নগরসমূহ, যাদের কাহিনি আমি তোমাকে বর্ণনা করছি।” 🌸 আল্লাহ বলছেন — আমি তোমাকে এই ইতিহাসগুলো জানাচ্ছি যেন তুমি ও তোমার উম্মত শিক্ষা নাও, এবং অহংকার ও অবিশ্বাস থেকে সাবধান থাকো। 🌿 এই কাহিনিগুলো কেবল ইতিহাস নয়, বরং আল্লাহর ন্যায়বিচারের সাক্ষ্য।

🌿 “وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ” — “তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিলেন।” 🌸 অর্থাৎ, তারা শুধু কথার দাওয়াত পাননি, বরং এমন স্পষ্ট প্রমাণ দেখেছেন, যা বোঝার পরও কেউ অস্বীকার করতে পারে না। 🌿 কিন্তু তবুও তারা অহংকারে অন্ধ থেকে বলেছিল — “এটা তো যাদু, এটা আমরা মানি না।”

🌿 “فَمَا كَانُوا۟ لِيُؤْمِنُوا۟ بِمَا كَذَّبُوا۟ مِن قَبْلُ” — “তারা বিশ্বাস করতে চায়নি যা তারা আগে থেকেই অস্বীকার করেছিল।” 🌸 অর্থাৎ, একবার তারা যখন সত্যকে মিথ্যা বলেছিল, তখন তাদের হৃদয় এমনভাবে কঠিন হয়ে গিয়েছিল যে পরবর্তীতে আর কোনো প্রমাণই তাদের পরিবর্তন করতে পারেনি। 🌿 এটি বোঝায় — **অহংকার একবার হৃদয়ে প্রবেশ করলে, সত্যকে মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।**

🌿 “كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ ٱلْكَـٰفِرِينَ” — “এভাবেই আল্লাহ কাফেরদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেন।” 🌸 এটি আল্লাহর **সুন্নাহ্‌ (নীতি):** যারা জেদ ও অবিশ্বাসে অটল থাকে, আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সত্য গ্রহণের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেন। 🌿 তাদের কান শুনে, চোখ দেখে, কিন্তু তাদের হৃদয় মৃত হয়ে যায় — কারণ তারা নিজেরাই সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — 👉 ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয়, যখন মানুষ শিক্ষা নেয় না। 👉 কুফরি শুরু হয় অস্বীকার থেকে, আর শেষ হয় হৃদয়ের অন্ধত্বে। 🌿 আল্লাহর বার্তা বারবার আসে, কিন্তু যে মানুষ অহংকারে নিজেকে যথেষ্ট ভাবে, সে শেষ পর্যন্ত নিজের হৃদয় বন্ধ করে ফেলে। 🌸 তাই আল্লাহ বলেন — **“আমি তাদের হৃদয়ে সিল মেরে দিই।”** এটি সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি, কারণ তখন আর দাওয়াত কাজ করে না।

উদাহরণ:
যেমন কেউ অনেকবার সতর্ক করার পরও একই ভুল করে, শেষে শিক্ষক বলে — “এখন আর বোঝানোর কিছু নেই।” তেমনি আল্লাহও এক পর্যায়ে সেই হৃদয়কে বন্ধ করে দেন যা বারবার সত্য শুনেও পরিবর্তন হয় না।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • কুরআনের ইতিহাস শিক্ষা দেওয়ার জন্য, কৌতূহল মেটানোর জন্য নয়।
  • অহংকার ও জেদ সত্যের প্রতি অন্ধতা সৃষ্টি করে।
  • আল্লাহর রাসূলদের বার্তা সবসময় পরিষ্কার ও যুক্তিনির্ভর ছিল।
  • যে হৃদয় সত্য প্রত্যাখ্যান করে, সে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَمَا كَانُوا۟ لِيُؤْمِنُوا۟ بِمَا كَذَّبُوا۟ مِن قَبْلُ”** 🤍 — “তাদের কাছে নবীগণ স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু তারা বিশ্বাস করতে চায়নি যা আগে থেকেই অস্বীকার করেছিল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **অস্বীকার হৃদয়কে অন্ধ করে, আর অহংকার সত্যকে মুছে দেয়। শিক্ষা নিতে চাইলে ইতিহাসে নয়, নিজের অন্তরে তাকাও।** 🌿🤍
আয়াত ১০২
وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم مِّنْ عَهْدٍۢ ۖ وَإِن وَجَدْنَآ أَكْثَرَهُمْ لَفَـٰسِقِينَ
ওয়া মা ওয়াজাদনা লি আকসারিহিম মিন ‘আহ্‌দিন, ওয়া ইন ওয়াজাদনা আকসারাহুম লাফাসিকীন।
“আমি তাদের অধিকাংশের মধ্যে কোনো অঙ্গীকার (বিশ্বাস ও আনুগত্য) রক্ষা পাইনি; বরং তাদের অধিকাংশকেই পেয়েছি অবাধ্য ও পাপাচারী।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী সব জাতির ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত সার দিয়েছেন — নবীদের বার্তা, নিদর্শন, সতর্কতা — সব কিছু তারা দেখেছে, কিন্তু খুব অল্প কিছু মানুষই প্রতিশ্রুতিতে অটল ছিল। 🌸 “وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم مِّنْ عَهْدٍۢ” — “আমি তাদের অধিকাংশের মধ্যে কোনো অঙ্গীকার রক্ষা পাইনি।” 🌿 অর্থাৎ, মানুষ আল্লাহর সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল — *“তুমি আমাদের রব, আমরা তোমার বান্দা”* — সেই ঈমানি অঙ্গীকার তারা ভেঙে ফেলেছিল। 🌸 এই অঙ্গীকার শুধু কথার নয়, বরং ফিতরার গভীরে থাকা সত্যের স্বীকৃতি — যা তারা নিজেদের চাওয়া-পাওয়ায় ভুলে গিয়েছিল।

🌿 “وَإِن وَجَدْنَآ أَكْثَرَهُمْ لَفَـٰسِقِينَ” — “বরং তাদের অধিকাংশকেই পেয়েছি অবাধ্য।” 🌸 “ফাসিক” অর্থ — সীমা অতিক্রমকারী, যে আল্লাহর হুকুম মানে না এবং সত্য থেকে সরে যায়। 🌿 আল্লাহ বলেন — “তারা শুধু ঈমান ভেঙে ফেলেনি, বরং অন্যায়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।” এ যেন এমন এক মানসিকতা যেখানে পাপ স্বাভাবিক হয়ে যায় 💔

🌸 এই আয়াতে আল্লাহর এক গভীর দুঃখ প্রকাশ পেয়েছে — মানুষ বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ভঙ্গ করেছে, বারবার স্মরণ করিয়ে দিলেও গাফেল থেকেছে। 🌿 এটি আল্লাহর অসীম ধৈর্যের প্রতিফলনও — কারণ তিনি তাদের ধ্বংস করার আগে বহুবার সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু তারা সেই সুযোগকে উপহাস করেছে।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের প্রতিচ্ছবি — আজও মানুষ আল্লাহর সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে জীবন পরিচালনা করে দুনিয়ার নিয়মে, না ঈমানের আলোকে। 🌸 এটি যেন এক নিঃশব্দ প্রশ্ন — 👉 “তুমি কি তোমার অঙ্গীকার রাখছো?” 👉 “তুমি কি সত্যিই তোমার রবকে মনে রেখেছো, যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে?” 🌿 অধিকাংশ মানুষ শুধু মুখে “আল্লাহু রব্বি” বলে, কিন্তু কাজে, মনে, সিদ্ধান্তে তা ভুলে যায় — এ কারণেই আল্লাহ বলেন, **“আমরা অধিকাংশকেই ফাসিক পেয়েছি।”**

উদাহরণ:
যেমন একজন ছাত্র শিক্ষককে বলে — “আমি প্রতিদিন পড়ব,” কিন্তু কয়েকদিন পর ভুলে যায়। প্রতিশ্রুতি আছে, কিন্তু কাজ নেই। তেমনি মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অঙ্গীকার দেয়, কিন্তু দুনিয়ার চাপে তা ভুলে যায়। 🌿 তাই আল্লাহ আমাদের মনে করিয়ে দেন — “অঙ্গীকার মানে শুধু মুখের কথা নয়, বরং আমল, ন্যায় ও আনুগত্যে প্রমাণ।”

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার (ঈমান) ভাঙা সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা।
  • ফাসিক হওয়া মানে শুধু পাপ নয়, সত্যের সীমা অতিক্রম করা।
  • অঙ্গীকার রক্ষা ও ঈমানের স্থায়িত্বের জন্য তাওবা ও তাকওয়া জরুরি।
  • ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় — অঙ্গীকারভঙ্গ জাতিগুলোই ধ্বংস হয়েছে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم مِّنْ عَهْدٍۢ وَإِن وَجَدْنَآ أَكْثَرَهُمْ لَفَـٰسِقِينَ”** 🤍 — “আমি তাদের অধিকাংশের মধ্যে কোনো অঙ্গীকার রক্ষা পাইনি; বরং অধিকাংশকেই পেয়েছি অবাধ্য।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **ঈমান শুধু মুখের প্রতিশ্রুতি নয়, বরং সেই চুক্তি রক্ষার জীবন্ত প্রমাণ হলো তাকওয়া ও আনুগত্য।** 🌿🤍
আয়াত ১০৩
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنۢ بَعْدِهِم مُّوسَىٰ بِـَٔايَـٰتِنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَإِي۟هِۦ فَظَلَمُوا۟ بِهَا ۖ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ
সুম্মা বাআস্‌না মিম্‌ বা‘দিহিম মূসা বিআয়াতিনা ইলা ফির‘আউনা ওয়া মালা-ইহি; ফাযালামূ বিহা; ফানযুর্‍ কৈফা কানা ‘আকিবাতুল মুফসিদীন।
“তাদের পর আমরা মূসা (আঃ)-কে পাঠালাম আমাদের নিদর্শনসমূহসহ ফিরআউন ও তার প্রভাবশালী দলের কাছে; কিন্তু তারা সেগুলোর প্রতি জুলুম করল (সত্যকে অস্বীকার করল)। অতএব দেখো— বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল!” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 পূর্ববর্তী জাতিদের কাহিনি শেষ করে এখানে শুরু হলো **মূসা (আঃ)** ও ফিরআউনের অধ্যায়। আল্লাহ তাঁর স্পষ্ট নিদর্শন (মুজিজা) দিয়ে মূসা (আঃ)-কে পাঠালেন— সত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলুমভাঙার জন্য। কিন্তু ফিরআউন ও তার “মালাঅ” (ক্ষমতাবান লবি) সত্যকে মানল না; বরং **সত্যকে অস্বীকার করে জুলুমকে বজায় রাখল**— এটাই “فَظَلَمُوا بِهَا”।

🌸 আল্লাহ বলেন: **“ফানযুর”— ‘দেখো’**— ইতিহাসে যারা ফাসাদ (অন্যায়-অবিচার) করেছে, তাদের পরিণতি সবসময়ই ধ্বংস। সত্যকে আটকে রাখার চেষ্টা সাময়িক, কিন্তু **সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী**।

উদাহরণ:
যেমন একটা শক্ত দড়ি দিয়ে নদীর স্রোত থামাতে চাইলেও স্রোত থামে না— কিছুক্ষণ পর দড়িই ছিঁড়ে যায়। তেমনি আল্লাহর নিদর্শনের স্রোতকে ফিরআউন থামাতে পারেনি; শেষমেশ **ফাসাদেরই পরিণাম খারাপ** হলো।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • নবীদের মিশন—সত্য প্রতিষ্ঠা, জুলুম অপসারণ, হৃদয় জাগানো।
  • ক্ষমতা ও লবিইং সত্যকে বদলাতে পারে না; বরং নিজেই ধ্বংস ডেকে আনে।
  • আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করা মানেই নিজের উপর জুলুম।
  • ইতিহাসে ফাসাদকারীদের শেষ—সবসময়ই **অপরাধীর পরিণাম**।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**“فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ”** — দেখো, ফাসাদকারীদের পরিণাম কেমন ছিল; তাই সত্য এলে দেরি না করে **আত্মসমর্পণই মুক্তি** 🤍
আয়াত ১০৪
وَقَالَ مُوسَىٰ يَـٰفِرْعَوْنُ إِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
ওয়া ক্বালা মূসা, ইয়াফির‘আউনু, ইন্নী রাসূলুম মিন রাব্বিল ‘আলামীণ।
“মূসা (আঃ) বললেন, ‘হে ফিরআউন! নিশ্চয়ই আমি প্রেরিত একজন রাসূল — বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এখানে শুরু হচ্ছে এক ঐতিহাসিক দৃশ্য — **আল্লাহর রাসূল মূসা (আঃ)** এবং **বিশ্বের অন্যতম অহংকারী রাজা ফিরআউন**-এর মুখোমুখি সংলাপ। 🌸 মূসা (আঃ) কোনো ভয় বা দ্বিধা ছাড়াই সত্যের ঘোষণা দিলেন — “আমি আল্লাহর রাসূল।” এটা কোনো আত্মগর্ব নয়, বরং এক চরম দায়িত্বের ঘোষণা। 🌿 লক্ষ্য করো — মূসা (আঃ) প্রথমেই নিজের নয়, বরং “**রাব্বুল ‘আলামীনের**” (বিশ্বজগতের প্রতিপালক)-এর নাম উল্লেখ করেছেন। কারণ, ফিরআউন নিজেকে “রব” দাবি করত!

🌸 এই এক বাক্যে মূসা (আঃ) ফিরআউনের অহংকারের ভিত্তি কাঁপিয়ে দিলেন — তিনি জানিয়ে দিলেন, “রব” কোনো মানুষ নয়, বরং সেই মহান সত্তা যিনি সব কিছুর মালিক ও পরিচালনাকারী। 🌿 এভাবেই একজন নবী সত্যের দাওয়াত শুরু করেন — দৃঢ় বিশ্বাস, কোমল কথা ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা নিয়ে।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শেখায় — সত্য বলার সাহস তখনই আসে, যখন হৃদয়ে থাকে ঈমান ও আল্লাহর ভয়। 🌸 মূসা (আঃ) একা ছিলেন, আর ফিরআউনের ছিল ক্ষমতা, সৈন্য ও রাজ্য — তবুও একজন নবী সত্যের সামনে অপরাজেয়, কারণ তার শক্তি ছিল **আল্লাহর সাথে সংযোগ**। 🌿 এটি দাওয়াতদাতাদের জন্য এক অনন্ত শিক্ষা — **সত্য বলো, ভয় নয়; কারণ সত্যের পেছনে থাকে আল্লাহর সাহায্য।**

উদাহরণ:
যেমন এক বাতি ছোট হলেও অন্ধকারকে ভয় পায় না — কারণ সে জানে, তার আলোই অন্ধকার ভাঙার শক্তি। তেমনি একজন ঈমানদার মানুষ, যত একা হোক, তবুও সত্যের আলো বহন করে 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্য প্রচার শুরু হয় “আমি আল্লাহর বান্দা” এই পরিচয় দিয়ে।
  • অহংকারের সামনে সত্যের আওয়াজই নবীদের বৈশিষ্ট্য।
  • দাওয়াতের ভাষা হতে হবে দৃঢ়, কিন্তু ভদ্র ও আল্লাহকেন্দ্রিক।
  • যে আল্লাহর উপর নির্ভর করে, তার জন্য কোনো ফেরাউনের ক্ষমতাই ভয়ের নয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَقَالَ مُوسَىٰ يَـٰفِرْعَوْنُ إِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ”** 🤍 — “হে ফিরআউন! আমি প্রেরিত একজন রাসূল — বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্য বলার সাহস তখনই আসে, যখন হৃদয়ে থাকে আল্লাহর ভয়, মানুষের নয়।** 🌿🤍
আয়াত ১০৫
حَقِيقٌ عَلَىٰٓ أَن لَّآ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ ۚ قَدْ جِئْتُكُم بِبَيِّنَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَرْسِلْ مَعِىَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ
হাকীকুন ‘আলা আন্না আকূলা ‘আলাল্লাহি ইল্লাল হাক্কা, কদ জি’তুকুম বিবাইয়িনাতিম মিন রাব্বিকুম, ফা-আরসিল মা‘ইয়া বানী ইস্‌রাঈল।
“আমার উপর এটা অবশ্য কর্তব্য যে, আমি আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ব্যতীত কিছু বলব না। আমি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি। সুতরাং তুমি আমার সঙ্গে বনি ইসরাঈলকে যেতে দাও।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে মূসা (আঃ) তাঁর দাওয়াতের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন — তিনি ফিরআউনের সামনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিলেন তিনটি বিষয়:
  1. আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত।
  2. আমি তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা কিছু বলব না।
  3. আমি তোমাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন (প্রমাণ) নিয়ে এসেছি।
🌸 এটি ছিল এক নবীর দাওয়াতের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির ঘোষণা।

🌿 “حَقِيقٌ عَلَىٰٓ أَن لَّآ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ” — “আমার উপর এটা কর্তব্য যে, আমি আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া কিছু বলব না।” 🌸 অর্থাৎ, আমি এমন কেউ নই যে নিজের মতামত বা কল্পনা দিয়ে কথা বলি। আমি যা বলছি — তা একমাত্র আল্লাহর আদেশ। 🌿 এটি নবুয়তের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য — **নবী আল্লাহর কথা বলেন, নিজের নয়।**

🌿 “قَدْ جِئْتُكُم بِبَيِّنَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ” — “আমি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি।” 🌸 মূসা (আঃ)-এর হাতে ছিল **মুজিজা (অলৌকিক নিদর্শন)** — যেমন তাঁর লাঠি সাপ হয়ে যেত, হাত থেকে আলো বের হতো ইত্যাদি। এগুলো ছিল সত্য প্রমাণের নিদর্শন, কোনো জাদু নয়। 🌿 তিনি বললেন — “এগুলো আমার নয়, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে।” কারণ একজন নবীর ভাষা সবসময় নম্র ও আল্লাহনির্ভর।

🌿 “فَأَرْسِلْ مَعِىَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ” — “সুতরাং আমার সঙ্গে বনি ইসরাঈলকে যেতে দাও।” 🌸 এটি ছিল মূসা (আঃ)-এর দাবির সারাংশ — অর্থাৎ, **দাসত্বে নিপীড়িত বনি ইসরাঈল জাতিকে মুক্ত করে দাও।** 🌿 তিনি কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করেননি, বরং আল্লাহর আদেশে **অত্যাচারীকে ন্যায় ও স্বাধীনতার দাওয়াত** দিয়েছেন।

🌸 এই আয়াতের প্রতিটি বাক্যে নবুয়তের সৌন্দর্য ঝরে পড়ে — সততা, প্রমাণ, বিনয় ও ন্যায়ের আহ্বান 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 সত্য প্রচারের জন্য প্রয়োজন চারটি জিনিস —
  • সত্যনিষ্ঠতা (কেবল আল্লাহর কথা বলা)
  • প্রমাণ (আল্লাহর নিদর্শন)
  • বিনয় (নিজের অহংকারহীনতা)
  • ন্যায়ের আহ্বান (অত্যাচার মুক্ত করা)
🌸 এগুলোই মূসা (আঃ)-এর দাওয়াতের চার স্তম্ভ — যা আজও প্রতিটি দাওয়াতদাতার জন্য আদর্শ।

উদাহরণ:
যেমন একজন সত্যবাদী ডাক্তার রোগীকে বলে — “আমি মিথ্যা আশা দিতে পারি না, সত্য বলব, যদিও তা তিতা।” তেমনি মূসা (আঃ)ও বললেন — “আমি আল্লাহর নামে কখনো মিথ্যা বলব না।” 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্য বলার প্রথম শর্ত হলো আল্লাহর ভয় ও আন্তরিকতা।
  • দাওয়াত সর্বদা প্রমাণ, বিনয় ও সাহসের উপর দাঁড়ানো উচিত।
  • অত্যাচার ভাঙা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা নবুয়তের লক্ষ্যগুলোর একটি।
  • আল্লাহর প্রতিনিধিরা কখনো ব্যক্তিগত লাভের জন্য কথা বলেন না।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“حَقِيقٌ عَلَىٰٓ أَن لَّآ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ قَدْ جِئْتُكُم بِبَيِّنَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ”** 🤍 — “আমি আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া কিছু বলব না; আমি তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যের পথে চলা মানে দায়িত্ব নেওয়া; কারণ সত্য বলা শুধু মুখের কাজ নয়, হৃদয়ের আমানত।** 🌿🤍
আয়াত ১০৬
قَالَ إِن كُنتَ جِئْتَ بِـَٔايَةٍۢ فَأْتِ بِهَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ
ক্বালা ইন কুনতা জি’তা বিআয়াতিন, ফা’তি বিহা ইন কুনতা মিনাস্‌সাদিকীন।
“(ফিরআউন) বলল, ‘যদি তুমি সত্যিই কোনো নিদর্শন (প্রমাণ) নিয়ে এসে থাকো, তবে তা উপস্থিত করো, যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে ফিরআউনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে — নবী মূসা (আঃ)-এর সত্য দাওয়াত শুনে সে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলল, “যদি সত্যিই তুমি প্রমাণসহ এসেছো, তবে দেখাও!” 🌸 এটি বিশ্বাসের ভাষা নয়, বরং **অহংকার ও বিদ্রুপের ভাষা**। ফিরআউন নবীকে একজন জাদুকর বা চালাক বক্তা মনে করত। 🌿 “إِن كُنتَ جِئْتَ بِـَٔايَةٍۢ فَأْتِ بِهَا” — “যদি তুমি কোনো নিদর্শন এনেছো, তবে তা উপস্থিত করো।” এখানে সে আল্লাহর বার্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, যেন বলতে চায় — “তুমি সত্যি নবী হলে প্রমাণ দাও।” 🌸 অথচ, আল্লাহর নবীরা কখনো নিজেদের প্রমাণ দেখান না, বরং আল্লাহই তাঁদের মাধ্যমে নিদর্শন প্রকাশ করেন।

🌿 “إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ” — “যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।” 🌸 এটি ছিল বিদ্রুপপূর্ণ প্রশ্ন। ফিরআউন প্রকৃত প্রমাণ চায়নি; বরং সে চেয়েছিল মূসা (আঃ)-কে **চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে অপমান করা।** 🌿 অহংকারী মানুষ সবসময় প্রমাণের কথা বলে, কিন্তু প্রমাণ দেখলেও মেনে নেয় না — কারণ তার হৃদয় ইতিমধ্যেই অন্ধ হয়ে গেছে।

🌸 এই আয়াতে এক সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক সত্য আছে — **অহংকার যুক্তি চায় না, জেদ চায়।** ফিরআউন প্রমাণ দেখতে চায়নি, বরং অস্বীকার করার সুযোগ খুঁজছিল। 🌿 এটি সেই মানসিকতা যা আজও দেখা যায় — কেউ সত্য শোনে, কিন্তু মেনে নেওয়ার বদলে বলে, “প্রমাণ দাও, দেখাও, বিশ্বাসযোগ্য করো”— অথচ মন ইতিমধ্যেই তা প্রত্যাখ্যানের জন্য প্রস্তুত।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 সত্যকে বোঝার জন্য চোখ নয়, হৃদয় খোলা প্রয়োজন। 🌸 ফিরআউন দেখেছিল মূসা (আঃ)-এর হাতে আল্লাহর নিদর্শন, কিন্তু তার হৃদয় অন্ধ ছিল। 🌿 তাই আল্লাহ কুরআনে বারবার বলেন — “তাদের চোখ অন্ধ নয়, বরং হৃদয় অন্ধ।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যে মন সত্যকে মেনে নিতে চায় না, তার কাছে হাজার প্রমাণও ব্যর্থ।**

উদাহরণ:
যেমন সূর্য আকাশে উঠলেও কেউ চোখ বন্ধ রাখে, সে যদি বলে “আলো দেখাও!”, তাহলে সমস্যা সূর্যে নয় — সমস্যা তার চোখে ☀️ 🌿 তেমনি, মূসা (আঃ)-এর নিদর্শন স্পষ্ট ছিল, কিন্তু ফিরআউনের হৃদয় বন্ধ ছিল।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকার সত্যকে বুঝতে দেয় না।
  • প্রমাণের দাবি করা সহজ, কিন্তু গ্রহণ করা কঠিন।
  • সত্যের আলো দেখার জন্য প্রয়োজন বিনয় ও খোলা মন।
  • ফিরআউনের মতো জেদী মানসিকতা আজও মানুষকে ধ্বংস করে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ إِن كُنتَ جِئْتَ بِـَٔايَةٍۢ فَأْتِ بِهَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ”** 🤍 — “যদি তুমি প্রমাণসহ এসে থাকো, তবে দেখাও, যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্য অস্বীকারকারীর সমস্যা প্রমাণের অভাবে নয়, বরং অন্তরের অন্ধকারে।** 🌿🤍
আয়াত ১০৭
فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِىَ ثُعْبَانٌۭ مُّبِينٌۭ
ফা-আল্‌কা ‘সাহু, ফা ইযা হিয়া সুআ’বানুম মুবীন।
“তখন সে (মূসা আঃ) তার লাঠি নিক্ষেপ করল — আর তা হঠাৎই স্পষ্ট এক সাপ হয়ে গেল!” 🐍🌿
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এটি ছিল মূসা (আঃ)-এর প্রথম মুজিজা (অলৌকিক নিদর্শন) — যা আল্লাহ তাআলা তাঁকে দিয়েছিলেন ফিরআউনের সামনে প্রমাণ হিসেবে। 🌸 যখন ফিরআউন তাচ্ছিল্যের সাথে বলল — “প্রমাণ দেখাও, যদি তুমি সত্যবাদী হও,” তখন মূসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর লাঠি ফেলে দিলেন। 🌿 হঠাৎ সেই সাধারণ লাঠি পরিণত হলো **“ثُعْبَانٌ مُّبِينٌ”** — অর্থাৎ, “একটি স্পষ্ট, জীবন্ত, বিশাল সাপ!” 🌸 এখানে “مُّبِينٌ” শব্দটি বোঝাচ্ছে — এটি কোনো জাদু নয়, বরং বাস্তব, জীবন্ত ও দৃশ্যমান রূপান্তর।

🌿 আল্লাহর শক্তির এক প্রকাশ — যে কাঠ (লাঠি) ছিল, তা মুহূর্তে প্রাণ পেল! যেন আল্লাহ বলছেন — “আমার ইচ্ছায় জড়ও জীবিত হয়।” 🌸 এটি কেবল এক মুজিজা নয়, বরং এক **প্রতীকী বার্তা** — সত্যের লাঠি মিথ্যার সাপকেও গ্রাস করতে পারে 🐍✨

🌿 এই দৃশ্য দেখে ফিরআউনের সভা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। কারণ তারা জানত— মূসা (আঃ) কোনো যাদুকর নন, এবং যা ঘটল, তা মানুষের সাধ্যের বাইরে। 🌸 তবুও ফিরআউন হৃদয় দিয়ে না ভেবে, অহংকারে সত্যকে জাদু বলে অস্বীকার করল।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর নির্দেশ মানলে অসম্ভবও সম্ভব হয়।** 🌸 মূসা (আঃ)-এর হাতে ছিল কেবল এক লাঠি, কিন্তু আল্লাহর আদেশে সেটিই হয়ে গেল শক্তির প্রতীক। 🌿 এটি দাওয়াতদাতাদের জন্য এক শিক্ষা — তোমার হাতে যতই সামান্য কিছু থাকুক, যদি তা আল্লাহর পথে ব্যবহার করো, আল্লাহ সেটিতে অদৃশ্য বরকত ঢেলে দেবেন 🌸

🌸 আরও একটি গভীর দিক হলো — “সাপ” এখানে শুধু মুজিজা নয়, বরং **অহংকারের সামনে সত্যের তেজের প্রতীক।** সত্যের শক্তি যখন প্রকাশ পায়, তখন মিথ্যার জাদু গলে যায় আলোর মতো।

উদাহরণ:
যেমন রাত যত গভীরই হোক, সূর্য ওঠার সাথে সাথে অন্ধকার হারিয়ে যায় 🌅 তেমনি, আল্লাহর নিদর্শনের সামনে মিথ্যা, জাদু ও অহংকারের কোনো অস্তিত্ব থাকে না।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর নির্দেশ মানলেই ক্ষুদ্রতম জিনিসও মহাশক্তিতে রূপ নিতে পারে।
  • অলৌকিক নিদর্শন কেবল আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে, মানুষের কৌশলে নয়।
  • সত্যের শক্তি অহংকারের যাদু ভেঙে দেয়।
  • যারা মিথ্যা শক্তির উপর নির্ভর করে, তারা শেষ পর্যন্ত নিজেরাই পরাজিত হয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِىَ ثُعْبَانٌۭ مُّبِينٌۭ”** 🤍 — “তখন সে তার লাঠি নিক্ষেপ করল, আর তা হয়ে গেল স্পষ্ট এক সাপ।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন ঈমান ও আনুগত্য মিলে যায়, তখন আল্লাহর সাহায্য আসে এমন পথে, যা মানুষের চিন্তাকেও অতিক্রম করে।** 🌿🤍
আয়াত ১০৮
وَنَزَعَ يَدَهُۥ فَإِذَا هِىَ بَيْضَآءُ لِلنَّـٰظِرِينَ
ওয়া নাযা‘আ ইয়াদাহু, ফা ইযা হিয়া বাইদাউ লিন্না-যিরীন।
“আর তিনি (মূসা আঃ) তাঁর হাত বের করলেন — তখন তা দর্শকদের জন্য উজ্জ্বল দীপ্তিময় হয়ে গেল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি মূসা (আঃ)-এর দ্বিতীয় মুজিজা (অলৌকিক নিদর্শন) — যেখানে তাঁর হাত আল্লাহর নির্দেশে এমনভাবে দীপ্ত হলো, যেন অন্ধকারের ভেতর সূর্যের আলো ফেটে পড়েছে ☀️ 🌸 “وَنَزَعَ يَدَهُۥ” — অর্থাৎ, তিনি তাঁর হাত পোশাকের ভিতর থেকে বের করলেন। এবং তখন তা হলো **“بَيْضَآءُ” — উজ্জ্বল শুভ্র আলোতে ভরা।** 🌿 এটি কোনো রোগ বা জাদু নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে এক স্পষ্ট নিদর্শন। তাঁর হাত ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর আদেশে তা মুহূর্তেই পরিণত হয় **আলোর উৎসে।**

🌸 “لِلنَّـٰظِرِينَ” — “দর্শকদের জন্য দীপ্তিময়।” অর্থাৎ, এটি শুধুমাত্র তাঁর চোখে নয়, বরং যারা দেখেছিল, সবাই বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিল! 🌿 এই মুজিজা ছিল এমন — অন্ধকার রাতে যখন মূসা (আঃ) হাত বের করতেন, তখন পুরো পরিবেশ আলোকিত হয়ে যেত।

🌸 এই অলৌকিক দৃশ্যের মাধ্যমে আল্লাহ দেখালেন — সত্যের আলো কখনো লুকানো যায় না, তা শেষ পর্যন্ত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে 🌿✨

গভীর উপলব্ধি:
🌿 মূসা (আঃ)-এর হাতে যে আলো ফুটে উঠেছিল, সেটি কেবল এক নিদর্শন নয় — বরং **সত্য, ঈমান ও ওহির আলোর প্রতীক।** 🌸 যেমন অন্ধকার দূর করতে সূর্যের আলোই যথেষ্ট, তেমনি অবিশ্বাসের অন্ধকার দূর করতে আল্লাহর ওহি ও নবুয়তের আলোই যথেষ্ট। 🌿 আল্লাহ তাঁর নবীদের মাধ্যমে এই বার্তা দেন — “তোমরা পৃথিবীতে আলো ছড়াও, কারণ আমি তোমাদের হাতেই রেখেছি সত্যের নূর।” 🤍

🌸 এই দুই নিদর্শন — (১) লাঠির সাপে রূপান্তর, (২) হাতের আলোর উদ্ভাস — একসাথে প্রমাণ করে যে, মূসা (আঃ)-এর দাওয়াত **যাদু নয়, বরং আল্লাহর সত্য বার্তা।**

উদাহরণ:
যেমন রাত যতই গাঢ় হোক, যদি এক প্রদীপও জ্বলে, সবাই সেটি দেখতে পায়। 🌿 তেমনি, আল্লাহর প্রেরিত নবীর হাতেই থাকে এমন আলো, যা মানুষের অন্তর জাগিয়ে তোলে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর নিদর্শন সবসময় সত্য ও প্রমাণনির্ভর।
  • সত্যের আলো কখনো লুকানো যায় না।
  • আল্লাহ চাইলে সামান্য জিনিসেও তাঁর ক্ষমতার প্রকাশ ঘটান।
  • নবীদের মুজিজা মানুষকে ঈমান ও আলোর পথে ডাকার জন্য।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَنَزَعَ يَدَهُۥ فَإِذَا هِىَ بَيْضَآءُ لِلنَّـٰظِرِينَ”** 🤍 — “আর তিনি হাত বের করলেন, তখন তা দর্শকদের জন্য উজ্জ্বল হয়ে উঠল।” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **যখন আল্লাহর নির্দেশে হাত বাড়ানো হয়, তখন সেটিই হয়ে যায় আলোর উৎস, এবং অন্ধকার পৃথিবী জেগে ওঠে তাতে।** 🌿🤍
আয়াত ১০৯
قَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَـٰذَا لَسَـٰحِرٌ عَلِيمٌۭ
ক্বালাল মালা-উ মিন কাওমি ফির‘আউন, ইন্‌না হা-যা লাসাহিরুন ‘আলীম।
“ফিরআউনের সম্প্রদায়ের নেতারা বলল — ‘নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি (মূসা) এক জাদুকর, এবং অত্যন্ত দক্ষ (চতুর) জাদুকর।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ফিরআউনের দরবারের **প্রভাবশালী নেতাদের (الملأ)** প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করেছেন। তারা মূসা (আঃ)-এর অলৌকিক নিদর্শন — লাঠির সাপ হওয়া ও হাতের আলোর উদ্ভাস — উভয়টি নিজের চোখে দেখল, তবুও তারা বলল: **“এ তো এক জাদু!”** 🌸 “إِنَّ هَـٰذَا لَسَـٰحِرٌ عَلِيمٌۭ” — অর্থাৎ, “এ ব্যক্তি নিঃসন্দেহে এক দক্ষ জাদুকর।” তারা মূসা (আঃ)-এর সত্যতা অস্বীকার করে তাঁর মর্যাদা কমানোর চেষ্টা করল। 🌿 কারণ তারা জানত — যদি মূসা (আঃ)-এর বার্তা সত্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তবে তাদের ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও মানুষকে ভয় দেখিয়ে শাসন করার অবস্থান হারাবে। 🌸 তাই তারা সত্যকে মেনে না নিয়ে, **অন্যায়ভাবে তাকে বিকৃত অর্থে ব্যাখ্যা করল।**

🌿 এখানে “ٱلْمَلَأُ” (আল-মালাআ) মানে হলো — সমাজের প্রভাবশালী নেতারা, রাজনীতিবিদ, উপদেষ্টা ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় — নবীদের বিরোধিতার সূচনা সবসময়ই এই শ্রেণি থেকেই হয়েছে। 🌸 কারণ, সত্য এলে মিথ্যা ভেঙে পড়ে, আর যারা মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে থাকে, তারা সেই সত্যকেই “বিপদ” মনে করে।

🌿 তারা বলল — “এ এক **‘আলীম’ (দক্ষ)** জাদুকর।” অর্থাৎ, তারা মূসা (আঃ)-এর অলৌকিক কর্মকে ব্যাখ্যা করল **যাদু ও কৌশল হিসেবে**, যেন সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। 🌸 এটা ছিল এক ধূর্ত প্রচারণা — সত্যকে মিথ্যা বলে উপস্থাপন করা, আর মানুষকে সত্য থেকে দূরে রাখা।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — ইতিহাসে **সত্যকে প্রথমে স্বীকার না করে “অপবাদ” দেওয়া হয়েছে।** নবীদের বলা হয়েছে — “যাদুকর”, “পাগল”, “কবি”, “প্রতারক” ইত্যাদি। 🌸 কিন্তু বাস্তবে এগুলো ছিল দুর্বল মিথ্যার শব্দ, যা সত্যের আলোকে কখনোই টিকতে পারেনি। 🌿 যারা সত্যের বিরোধিতা করে, তারা জানে — তারা পরাজিত হবে; তবুও অহংকারের কারণে মিথ্যা আঁকড়ে ধরে থাকে।

🌸 যেমন আজও, যখন কেউ কুরআনের আলো ছড়ায়, তখন অনেকেই তা “অতিরঞ্জন”, “গুজব” বা “চালাকি” বলে ব্যাখ্যা করে। অথচ, সত্যের শক্তি সবসময় প্রমাণিত — **সময়ই একে সমর্থন দেয়।** 🌿

উদাহরণ:
যেমন কোনো সত্য সংবাদ ক্ষমতাশালীকে অস্বস্তিতে ফেলে, তারা সেটিকে “ভুয়া” বলে ঘোষণা করে। তেমনি, মূসা (আঃ)-এর বার্তা ফেরাউনের অহংকারে আঘাত করেছিল, তাই তার উপদেষ্টারা বলল — “এ এক জাদু!” 🌿 কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় — সত্যকে “জাদু” বললেও, সেটি আল্লাহর আলো; আর আল্লাহর আলো নিভানো যায় না 🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্য আসলে মিথ্যার শক্তি ভয় পায়।
  • অহংকারী ও ক্ষমতাবানরা প্রায়ই সত্যকে “যাদু” বা “প্রতারণা” বলে ছোট করে।
  • সত্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো পুরোনো কৌশল, যা আজও চলমান।
  • মুমিনের কর্তব্য হলো — দাওয়াতে দৃঢ় থাকা, যদিও মানুষ উপহাস করে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَـٰذَا لَسَـٰحِرٌ عَلِيمٌۭ”** 🤍 — “ফিরআউনের সম্প্রদায়ের নেতারা বলল, ‘নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি এক চতুর জাদুকর।’” 🌸 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্যকে যাদু বললেও, সত্য তার আলো হারায় না; বরং মিথ্যার পর্দা আরও স্পষ্ট হয়ে যায়।** 🌿🤍
আয়াত ১১০
يُرِيدُ أَن يُخْرِجَكُم مِّنْ أَرْضِكُمْ ۖ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ
ইয়ুরীদু আন ইউখরিজাকুম মিন আরদিকুম, ফা-মা-যা তা’মুরূন?
“সে (মূসা) চায় তোমাদেরকে তোমাদের ভূখণ্ড থেকে উৎখাত করতে! সুতরাং (হে ফিরআউন) তোমরা কী নির্দেশ দাও?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আগের আয়াতে নেতারা মূসা (আঃ)-কে “দক্ষ জাদুকর” বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিল। এই আয়াতে তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে **রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার হুমকি** বানাল— “মূসা তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেবে!” এটি ছিল পরিষ্কার **ভয়-সৃষ্টি ও উসকানির প্রচারণা**— যাতে রাজা ও জনগণ দ্রুত কঠোর পদক্ষেপে রাজি হয়।

🌸 “فَمَاذَا تَأْمُرُونَ” — “তোমরা কী নির্দেশ দাও?” উপদেষ্টারা এবার জনতাকে ও দরবারকে সাথে নিয়ে **সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত** চাইছে, যেন দমন-পীড়নকে বৈধতা দেওয়া যায়। অর্থাৎ, **অন্যায়ের সিদ্ধান্তকে ‘জনমতের’ মোড়কে পাস করানো**— এটাই কৌশল।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 সত্যের দাওয়াতকে থামাতে ক্ষমতাবানরা যে কৌশল নেয়: ১) চরিত্র হনন — “সে জাদুকর/প্রতারক।” ২) নিরাপত্তা আতঙ্ক — “সে দেশ উল্টে দেবে।” ৩) জনমতকে হাতিয়ার — “তোমরা কী নির্দেশ দাও?” এসবের লক্ষ্য একটাই— **সত্যকে অপরাধী বানানো**।

উদাহরণ:
যেমন কোনো সমাজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ালে, দুর্নীতিবাজরা বলে— “সে নাকি ব্যবস্থা ভাঙতে চায়, অস্থিরতা আনবে!” অথচ সত্যিকার উদ্দেশ্য থাকে **ন্যায় প্রতিষ্ঠা**।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • ভয়-সৃষ্টি (fear-mongering) সত্যদমনকারীদের পুরনো কৌশল।
  • দাওয়াতকে “রাষ্ট্রবিরোধী” বা “নিয়মভঙ্গ” আখ্যা দিয়ে জনসমর্থন তোলা হয়।
  • মুমিনের কাজ— প্ররোচনার জবাব যুক্তি, ধৈর্য ও সত্যের প্রমাণে দেওয়া।
  • জনতার শোরগোল কখনো ন্যায়ের প্রমাণ নয়— সত্যের মাপকাঠি হলো **আল্লাহর হুকুম**।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**“يُرِيدُ أَن يُخْرِجَكُم مِّنْ أَرْضِكُمْ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ”** — মিথ্যা যখন যুক্তিতে হারে, তখন সে **ভয়ের কাহিনি** বানায়। মুমিনের করণীয়— **আতঙ্কে নয়, আমলে ও প্রমানে দৃঢ় থাকা।** 🤍
আয়াত ১১১
قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي ٱلْمَدَآئِنِ حَـٰشِرِينَ
ক্বালূ: আর্‌জিহ্‌ ওয়া আখাহু, ওয়া আরসিল ফিল-মাদাঈনি হাশিরীন।
“তারা বলল — ‘তাকে (মূসা) ও তার ভাইকে (হারূন) আপাতত স্থগিত রাখো, এবং নগরসমূহে সমবেতকারীদের পাঠিয়ে দাও (মানুষ/যাদুকর জড়ো করার জন্য)।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 ফিরআউনের উপদেষ্টারা দ্রুত একটি রাজনৈতিক কৌশল নিল: **তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং “স্থগিত” করে জনমত গঠন**— তারপর এক বিশাল প্রদর্শনী আয়োজন। উদ্দেশ্য স্পষ্ট: মূসা (আঃ)-এর স্পষ্ট নিদর্শনকে “যাদু–প্রতিযোগিতা”তে নামিয়ে এনে সত্যকে **মঞ্চায়িত বিভ্রান্তিতে** ডুবিয়ে দেওয়া।

🌸 “أَرْجِهْ وَأَخَاهُ” — “তাকে ও তার ভাইকে স্থগিত রাখো” মানে, আটক/নজরদারিতে রেখে সময় টেনে রাজনীতি ও প্রচারণা সাজাও। 🌿 “وَأَرْسِلْ فِي ٱلْمَدَآئِنِ حَاشِرِينَ” — “শহরগুলোতে সমবেতকারীদের পাঠাও”— যাতে **শ্রেষ্ঠ জাদুকর, গণ-জনতা ও মিডিয়া–আয়োজন** জোগাড় হয়; সত্যকে শোরগোল ও বিনোদনের কুয়াশায় ঢেকে দেওয়া যায়।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 মিথ্যার কৌশল তিন ধাপে চলে— ১) স্থগিতকরণ (delay tactics), ২) জনসমাবেশ/স্পেক্ট্যাকল, ৩) সত্যকে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে সমান করে দেওয়া। 🌸 তারা জানত মূসা (আঃ)-এর বার্তা যুক্তিতে অদম্য, তাই **“বড় শো” বানিয়ে** মানুষের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে চাইল।

উদাহরণ:
যেমন কোনো সত্য প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে ক্ষমতাবানরা বলে— “এখনই নয়, পরে দেখা হবে,” তারপর বিশাল অনুষ্ঠান/শো আয়োজন করে **খবরকে শোরগোলে ডুবিয়ে দেয়** 🎪 তেমনি তারা চাইল আল্লাহর নিদর্শনকে “যাদুর কৌশল” বানিয়ে দেখাতে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্যকে থামাতে প্রথমে “স্থগিত” ও “সময়ক্ষেপণ” করা হয়।
  • মিডিয়া–শো/ভিড়–রাজনীতি প্রায়ই সত্যকে আড়াল করার অস্ত্র।
  • মুমিনের কাজ— শোরগোল নয়, প্রমাণ ও ধৈর্যে স্থির থাকা।
  • আল্লাহর নিদর্শন কোনো “দক্ষতা প্রতিযোগিতা” নয়— তা হক্বের স্পষ্ট দলিল।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**“أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي ٱلْمَدَآئِنِ حَاشِرِينَ”** — যখন যুক্তি হারায়, তখন মিথ্যা **শো বানায়**। কিন্তু শোরগোলের শেষে জয় হয়— **হক্বের নিদর্শনেরই।** 🤍
আয়াত ১১২
يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَـٰحِرٍ عَلِيمٍ
ইয়াতূকা বিকুল্লি সাহিরিন ‘আলীম।
“যাতে তারা তোমার কাছে উপস্থিত করে প্রতিটি দক্ষ (চতুর) জাদুকরকে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আগের আয়াতে ফিরআউনের উপদেষ্টারা প্রস্তাব করেছিল: “মূসা ও হারূনকে আপাতত স্থগিত রাখো এবং শহরগুলোতে লোক পাঠাও।” এবার তারা পরিকল্পনার পরের ধাপ ঘোষণা করল — **“সবচেয়ে দক্ষ জাদুকরদের একত্র করো!”** 🌸 “يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ” — অর্থাৎ, “তারা তোমার কাছে নিয়ে আসবে প্রতিটি অভিজ্ঞ, শিক্ষিত, দক্ষ জাদুকর।” 🌿 তারা বুঝেছিল মূসা (আঃ)-এর নিদর্শন সাধারণ নয়, তাই প্রতিযোগিতায় নামানোর জন্য দরকার **সবচেয়ে পাকা জাদুকর**। 🌸 তারা ভাবল— **আল্লাহর নিদর্শনের মোকাবেলা মানুষিক দক্ষতায় সম্ভব!** কিন্তু তারা ভুলে গেল— আল্লাহর শক্তি কখনো মানুষের কৌশলে পরাজিত হয় না।

🌿 এখানে “عَلِيمٍ” শব্দটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ — শুধু জাদুকর নয়, বরং “বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ” জাদুকর। অর্থাৎ, তাদের লক্ষ্য ছিল— সত্যকে মিথ্যার রঙে ঢেকে দিতে **দক্ষতা ও প্রদর্শনী** ব্যবহার করা। 🌸 এটা ইতিহাসের পুরনো কৌশল — সত্যের বার্তা যখন প্রভাব ফেলতে শুরু করে, তখন মিথ্যা একে **“কৌশল বা দক্ষতার খেলা”** বানাতে চায়।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহর পথে চলা মানুষকে সবসময় **কৌশল ও প্রচারণার শক্তির** মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু আল্লাহ বলেন — “আমার বান্দারা যারা সত্যে অটল, তাদের কোনো কৌশল ক্ষতি করতে পারবে না।” 🌸 মূসা (আঃ)-এর হাতে ছিল লাঠি, আর তাদের হাতে থাকবে যাদুর দড়ি — একপাশে অহংকার, অন্যপাশে ঈমান। এ এক মহাসংঘর্ষের প্রস্তুতি। 🌿 এই আয়াতে সেই প্রস্তুতির বীজ বপন করা হলো।

🌸 এটি আমাদের শেখায় — **মিথ্যা কখনো শক্তির অভাবে হারায় না, বরং সত্যের সামনে নিজের অন্ধকারে গলে যায়।** 🌿

উদাহরণ:
যেমন সূর্যের সামনে হাজার প্রদীপ জ্বালালেও, সূর্যের আলোকে ম্লান করা যায় না ☀️ তেমনি আল্লাহর নিদর্শনের সামনে মানুষের জাদু কিছুই নয়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্য যখন আলো ছড়াতে শুরু করে, তখন মিথ্যা তা ঢাকতে পরিকল্পনা করে।
  • দুনিয়ার “দক্ষতা” কখনো আল্লাহর নিদর্শনের সমান নয়।
  • আল্লাহর বান্দার কাছে কৌশল নয়, ঈমানই প্রকৃত শক্তি।
  • আল্লাহর দাওয়াত সর্বদা প্রতারণার চেয়ে শক্তিশালী ও স্থায়ী।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَـٰحِرٍ عَلِيمٍ”** 🤍 — “যাতে তারা তোমার কাছে প্রতিটি চতুর জাদুকরকে নিয়ে আসে।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **মিথ্যা যতই দক্ষ হোক, আল্লাহর সত্যের এক ঝলকই যথেষ্ট সব কৌশল গলিয়ে দিতে।** 🌿🤍
আয়াত ১১৩
وَجَآءَ ٱلسَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوٓا۟ إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِن كُنَّا نَحْنُ ٱلْغَـٰلِبِينَ
ওয়া জা-আস্‌ সাহারাতু ফির‘আউনা, ক্বালূ ইন্না লানা লা-আজরান ইন কুন্না নাহনুল গালিবীন।
“আর জাদুকররা ফিরআউনের কাছে এসে বলল — ‘যদি আমরা জয়লাভ করি, তবে নিশ্চয়ই আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে দৃশ্য বদলে যায় — এখন ফিরআউনের রাজসভায় একত্র হয়েছে **সবচেয়ে দক্ষ জাদুকররা**, যারা দেশের বিভিন্ন শহর থেকে ডেকে আনা হয়েছিল। 🌸 তারা আল্লাহর নিদর্শনকে সত্য মনে করেনি, বরং এটিকে “প্রতিযোগিতা” ভেবে মাঠে নামল — **পুরস্কারের আশায় ও দুনিয়ার লোভে।**

🌿 “إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا” — “আমাদের জন্য কি পুরস্কার থাকবে?” এটি তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করে — তাদের মিশন ছিল না সত্য প্রমাণ করা, বরং **রাজা খুশি করে লাভ পাওয়া।** 🌸 এভাবেই দুনিয়ার লোভ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। তারা জানে কাজটা মিথ্যা, তবুও পুরস্কারের আশায় তাতে অংশ নেয়।

🌿 “إِن كُنَّا نَحْنُ ٱلْغَـٰلِبِينَ” — “যদি আমরা জয়ী হই।” অর্থাৎ, তারা আত্মবিশ্বাসী ছিল যে তারা মূসা (আঃ)-কে হারাতে পারবে, কারণ তারা ভাবত— **যাদু সব কিছুর জবাব দিতে পারে।** 🌸 তারা জানত না, আজকের প্রতিযোগিতা যাদুর নয়, বরং **আল্লাহর শক্তি বনাম মিথ্যার শক্তি।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত একটি চিরন্তন সত্য প্রকাশ করে — যারা শুধু দুনিয়ার পুরস্কারের জন্য কাজ করে, তারা কখনো সত্যের গভীরে পৌঁছাতে পারে না। 🌸 মূসা (আঃ)-এর হাতে যে নিদর্শন, তা কোনো পুরস্কারের খেলা নয়; বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হক্বের ঘোষণা। 🌿 জাদুকরদের এই মনোভাব আজও দেখা যায় — যখন কেউ দাওয়াত বা ন্যায়ের পথে নয়, বরং প্রশংসা, সম্মান বা অর্থের জন্য কাজ করে। 🌸 কিন্তু যে কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, সেটিই একমাত্র **ফলপ্রসূ ও স্থায়ী কাজ।**

🌿 আর দেখো, এই একই জাদুকররাই অচিরেই আল্লাহর শক্তি দেখে ঈমান আনবে ও শাহাদাত দেবে। তাদের হৃদয় বদলে যাবে পুরস্কার–লোভ থেকে ঈমানের শক্তিতে 🌿🤍

উদাহরণ:
যেমন কেউ সত্যের পথে আসে শুধুমাত্র অর্থ বা খ্যাতির জন্য, তার হৃদয় সত্যে স্থির হয় না। কিন্তু যে মানুষ আল্লাহর জন্য কাজ শুরু করে, আল্লাহ নিজেই তার অন্তর আলোকিত করেন ✨ 🌸 জাদুকররা প্রথমে দুনিয়ার পুরস্কার চাইছিল, কিন্তু আল্লাহর নিদর্শন দেখে তারা বলবে — “আমরা আমাদের রবের উপর ঈমান এনেছি।” (আসছে পরের আয়াতে 💫)

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • দুনিয়ার পুরস্কারের জন্য করা কাজ কখনো চিরস্থায়ী হয় না।
  • সত্যের সাথে প্রতিযোগিতা করলে মানুষ নিজের ক্ষতি ডেকে আনে।
  • আল্লাহর নিদর্শনকে কেউ ঠেকাতে পারে না, তা প্রমাণ বা লোভে হার মানে না।
  • অহংকারের দরবারেও কখনো আল্লাহর আলো জ্বলে ওঠে — যেমন পরের আয়াতে দেখা যাবে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَجَآءَ ٱلسَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوٓا۟ إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِن كُنَّا نَحْنُ ٱلْغَـٰلِبِينَ”** 🤍 — “জাদুকররা ফিরআউনের কাছে এসে বলল, ‘যদি আমরা জয়লাভ করি, তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?’” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **দুনিয়ার পুরস্কার চাওয়া হৃদয় অন্ধ করে, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি চাওয়া হৃদয় আলোকিত করে।** 🌿🤍
আয়াত ১১৪
قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ
ক্বালা না‘আম, ওয়া ইন্নাকুম লামিনাল মুকাররাবীন।
“(ফিরআউন) বলল, ‘হ্যাঁ! এবং তোমরা অবশ্যই আমার ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে ফিরআউনের উত্তর এসেছে জাদুকরদের পুরস্কার-লোভের জবাবে। তারা জিজ্ঞাসা করেছিল— “আমাদের কি পুরস্কার থাকবে যদি আমরা জয়ী হই?” ফিরআউন বলল — “অবশ্যই থাকবে, বরং তোমরা হবে আমার দরবারের ঘনিষ্ঠ, প্রভাবশালী মানুষ!” 🌸 “قَالَ نَعَمْ” — “হ্যাঁ” — এক শব্দেই ফিরআউন তাদের **লোভ ও মানসিক দুর্বলতাকে ধরে ফেলল।** আর বলল — **“وَإِنَّكُمْ لَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ”** — “তোমরা হবে আমার ঘনিষ্ঠ ও প্রিয়জনদের একজন।” 🌿 অর্থাৎ, কেবল অর্থই নয়, বরং মর্যাদা, সম্মান ও দরবারে উচ্চ স্থান — সবকিছুই দেবে! 🌸 এটি ফিরআউনের রাজনীতি — **প্রলোভন ও প্রতারণার মিশ্রণে মানুষকে নিজের দলে টানা।**

🌿 ফিরআউন জানত, পুরস্কারের চেয়ে বড় প্রলোভন হলো **ক্ষমতা ও ঘনিষ্ঠতার প্রতিশ্রুতি।** মানুষ অর্থের চেয়ে পদ-মর্যাদা বেশি চায়। তাই সে বলল — “তোমরা হবে আমার মুকাররাবীন (ঘনিষ্ঠজন)।” 🌸 এই এক বাক্যেই সে তাদের দুনিয়ার লোভকে সক্রিয় করে দিল।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 সত্যের শত্রুরা সবসময় দুই অস্ত্র ব্যবহার করে — ১️⃣ ভয় দেখানো, ২️⃣ প্রলোভন দেখানো। 🌸 আগে সে বলেছিল, “মূসা তোমাদের দেশ দখল করবে” (ভয়); এখন বলছে, “আমার দলে এলে পুরস্কার ও মর্যাদা পাবে” (লোভ)। 🌿 এটি মানুষের অন্তর পরীক্ষা করার আল্লাহর এক পদ্ধতি। **যে হৃদয় দুনিয়ার জন্য নত হয়, সে সত্যকে চিনেও মেনে নিতে পারে না।** 🌸 কিন্তু শীঘ্রই দেখা যাবে — এই একই জাদুকররা, যারা দুনিয়ার পুরস্কার চেয়েছিল, আল্লাহর সত্য দেখে তাদের জীবন বিলিয়ে দেবে ঈমানের পথে! 🤍

🌿 আল্লাহর পরিকল্পনা এখানে নিখুঁত — ফিরআউন তাদের “দুনিয়ার ঘনিষ্ঠ” করতে চায়, আর আল্লাহ তাদের “জান্নাতের ঘনিষ্ঠ” করে দেবেন। 🌸

উদাহরণ:
যেমন কেউ বলে — “তুমি যদি আমার পক্ষে কথা বলো, আমি তোমাকে বড় পদে বসাবো।” কিন্তু আল্লাহর বান্দা বলে — “আমার লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি, তোমার পদ নয়।” 🌿 🌸 ফিরআউন চাইছিল মূসা (আঃ)-এর বিপরীতে “দুনিয়ার সেনা” বানাতে, কিন্তু আল্লাহ সেই জাদুকরদের বানাবেন **ঈমানের সৈনিক**।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকারীরা মানুষের ঈমান ভাঙতে “প্রলোভন” ব্যবহার করে।
  • দুনিয়ার সম্মান অস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি চিরস্থায়ী।
  • সত্যের মানুষ কখনো ঘনিষ্ঠতার জন্য সত্য বিক্রি করে না।
  • আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বোত্তম— তিনি মিথ্যার কৌশলকেও হক্বের বিজয়ে রূপ দেন।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ”** 🤍 — “(ফিরআউন) বলল, ‘হ্যাঁ! এবং তোমরা অবশ্যই আমার ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যারা দুনিয়ার ঘনিষ্ঠ হতে চায়, তারা আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়; আর যারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠ হতে চায়, দুনিয়া নিজেই তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে।** 🌿🤍
আয়াত ১১৫
قَالُوٓا۟ يَـٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلْقِىَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ نَحْنُ ٱلْمُلْقِينَ
ক্বালূ: ইয়ামূসা, ইম্মা আন্‌ তুলকিয়া, ওয়া ইম্মা আন্নাকূনা নাহনুল্‌ মুলকীন।
“তারা (জাদুকররা) বলল, ‘হে মূসা! তুমি চাও তবে (তোমার লাঠি) আগে নিক্ষেপ করো, অথবা আমরা (আমাদের দড়ি ও লাঠি) আগে নিক্ষেপ করব।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে শুরু হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক **সংঘর্ষের মুহূর্ত**, যেখানে একপাশে আল্লাহর নবী — মূসা (আঃ), আর অন্যপাশে ফিরআউনের আহ্বানে সমবেত **দক্ষ জাদুকররা।** 🌸 তারা বলল — “হে মূসা, তুমি আগে নিক্ষেপ করবে, না আমরা আগে করব?” — এটি ছিল সৌজন্যের ভান, কিন্তু অন্তরে প্রতিযোগিতার অহংকার। 🌿 তারা ভাবল, মূসা (আঃ)-এর কাজও যাদুরই এক রূপ, তাই তারা আত্মবিশ্বাসী ছিল যে নিজেদের কৌশলে তাকে হারাতে পারবে। 🌸 অথচ তারা জানত না, **আল্লাহর নিদর্শনের সামনে জাদু খেলনা মাত্র!**

🌿 “إِمَّآ أَن تُلْقِىَ” — “তুমি আগে নিক্ষেপ করো।” এখানে তারা মূসা (আঃ)-কে সুযোগ দিচ্ছে, যেন মানুষ প্রথমে তার কাজ দেখে, তারপর তাদের ‘জাদু’ দেখলে তুলনা করতে পারে। 🌸 কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল **তাদের অহংকারের প্রদর্শনী** — যেন তারা বলে, “তুমি যাই করো, আমরা তার চেয়ে বেশি দেখাবো।”

🌿 “وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ نَحْنُ ٱلْمُلْقِينَ” — “অথবা আমরা আগে নিক্ষেপ করব।” অর্থাৎ, তারা চায় নিজেদের প্রতিভা আগে দেখিয়ে জনতাকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে। 🌸 এটাই মিথ্যার কৌশল — সত্যকে আগেই ঢেকে ফেলতে চায় শব্দ, প্রদর্শনী ও নাটক দিয়ে 🎭

🌿 কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন — তিনি মূসা (আঃ)-কে শান্ত থাকতে বলেছিলেন, কারণ **সত্য কখনো তাড়াহুড়ো করে না।** মিথ্যা যত নাটকই করুক, শেষ আঘাতটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসবে ⚡

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক দারুণ মানসিক দৃশ্য তুলে ধরে — মূসা (আঃ) নির্ভীক, একা, শান্ত — আল্লাহর উপর ভরসা রেখে দাঁড়িয়ে। আর অন্যপাশে শত শত জাদুকর, অহংকার ও জনতার করতালিতে গর্বিত 🎪 🌸 কিন্তু আল্লাহর বান্দা জানে — **সংখ্যা নয়, বরং সত্যই বিজয়ের মূল।** 🌿 আল্লাহর সত্যের শক্তি এক লাঠির মধ্যেই এমন ছিল, যা মিথ্যার পুরো সাম্রাজ্য গ্রাস করে ফেলবে।

উদাহরণ:
যেমন কোনো বিতর্কে সত্যবাদী মানুষ শান্তভাবে কথা বলে, কিন্তু মিথ্যাবাদী চিৎকার করে, অঙ্গভঙ্গি করে মনোযোগ টানে। তেমনি জাদুকররা প্রদর্শনী করছিল, আর মূসা (আঃ) শান্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন— **কারণ তার বিশ্বাস ছিল আল্লাহর উপর।** 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • মিথ্যা সবসময় শব্দ, প্রদর্শনী ও শো দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
  • সত্যের শক্তি সংখ্যায় নয়, বরং আল্লাহর সাহায্যে।
  • দাওয়াতদাতা কখনো তাড়াহুড়ো করে না — সে অপেক্ষা করে আল্লাহর নির্দেশের।
  • অহংকারের মুখে শান্ত ঈমানই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالُوٓا۟ يَـٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلْقِىَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ نَحْنُ ٱلْمُلْقِينَ”** 🤍 — “তারা বলল, ‘হে মূসা, তুমি আগে নিক্ষেপ করবে, না আমরা?’” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **সত্য কখনো প্রতিযোগিতায় নামে না; সে কেবল আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ পায়, আর একবার প্রকাশ পেলেই মিথ্যা মুছে যায়।** 🌿🤍
আয়াত ১১৬
قَالَ أَلْقُوا۟ فَلَمَّآ أَلْقَوْا۟ سَحَرُوٓا۟ أَعْيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَآءُوا۟ بِسِحْرٍ عَظِيمٍ
ক্বালা আলকু, ফালাম্মা আলকাউ সাহারূ আয়ুনান্‌-নাসি, ওয়াস্তারহাবূহুম, ওয়া জা-উ বিসিহরিন আযীম।
“(মূসা বললেন,) ‘তোমরাই নিক্ষেপ করো।’ তারপর তারা (জাদুকররা) যখন নিক্ষেপ করল, তারা মানুষের চোখে জাদু করল, তাদের ভয় দেখাল, এবং এক মহান জাদু উপস্থাপন করল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এবার শুরু হলো সেই মুহূর্ত— যেখানে একপাশে আল্লাহর নবী মূসা (আঃ), আর অন্যপাশে শত শত দক্ষ জাদুকর। 🌸 মূসা (আঃ) বললেন: **“তোমরাই আগে নিক্ষেপ করো।”** — বিনয়, সাহস ও আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা নিয়ে। এটি ছিল নবীর সৌজন্যপূর্ণ অনুমতি, অহংকার নয়। 🌿 “فَلَمَّآ أَلْقَوْا۟” — “যখন তারা নিক্ষেপ করল।” তারা দড়ি ও লাঠি নিক্ষেপ করল ময়দানে, এবং তাদের যাদুর কৌশলে তা **চলন্ত সাপের মতো** মনে হলো! 🐍 🌸 “سَحَرُوٓا۟ أَعْيُنَ ٱلنَّاسِ” — “তারা মানুষের চোখে জাদু করল।” অর্থাৎ, বাস্তবে দড়িগুলো সাপ ছিল না, বরং দৃষ্টিভ্রম (illusion) সৃষ্টি করা হয়েছিল। 🌿 তারা **দৃষ্টিবিভ্রম ও দ্রুতগতির কৌশলে** মানুষকে অবাক করল, যেন দড়িগুলো সত্যিই নড়াচড়া করছে! 🌸 এটি ছিল “মায়া” — বাস্তব পরিবর্তন নয়, বরং **ইন্দ্রিয়কে প্রতারিত করার কৌশল।**

🌿 “وَٱسْتَرْهَبُوهُمْ” — “তারা মানুষকে ভয় দেখাল।” তাদের প্রদর্শনী এত বড় ছিল যে, উপস্থিত জনতা ও এমনকি কিছু মুমিনও আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। 🌸 এটাই মিথ্যার কৌশল — **ভয় দেখিয়ে মানুষকে সত্য থেকে দূরে রাখা।** যেমন আজও, মিথ্যা শক্তি সংখ্যায় ও শোরগোলে মানুষকে ভয় দেখায়।

🌿 “وَجَآءُوا۟ بِسِحْرٍ عَظِيمٍ” — “তারা এক মহান জাদু উপস্থাপন করল।” অর্থাৎ, তাদের যাদু ছিল প্রভাবশালী ও চিত্তাকর্ষক, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফেলেছিল। 🌸 কিন্তু মনে রেখো — **মহান জাদু** আল্লাহর কাছে কিছুই নয়। তিনি তো সত্যের এক আঘাতেই মিথ্যার সব দড়ি ভেঙে দেন 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শেখায়— মিথ্যা কখনো যুক্তি দিয়ে টিকতে পারে না, তাই সে **প্রদর্শনী, ভয় ও চোখের ধোঁকা** ব্যবহার করে। 🌸 কিন্তু সত্যের শক্তি কখনো বাহ্যিক নয়, বরং হৃদয়ের দৃঢ় ঈমান থেকে আসে। 🌿 মূসা (আঃ)-এর ধৈর্য ও আল্লাহর উপর নির্ভরতা এই “মহান জাদু”কেও মুহূর্তে তুচ্ছ বানিয়ে দেবে (পরের আয়াতে ইনশাআল্লাহ 💫)।

উদাহরণ:
যেমন আজও মিডিয়া ও সমাজে “মিথ্যা”কে আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়ে দেখানো হয়, কিন্তু যারা সত্যনিষ্ঠ, তারা জানে— **এই সবই চোখের ধোঁকা, বাস্তবতা একমাত্র আল্লাহর কিতাবেই।** 📖

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • মিথ্যা কখনো বাস্তব পরিবর্তন করতে পারে না, শুধু বিভ্রম সৃষ্টি করে।
  • সত্যের মানুষ কখনো মিথ্যার ভয় দেখানোতে ভীত হয় না।
  • প্রদর্শনী ও বাহ্যিক চাকচিক্য সত্যের বিকল্প নয়।
  • আল্লাহর সাহায্য সর্বদা ধৈর্যশীল ও ঈমানদারদের পক্ষেই আসে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَلَمَّآ أَلْقَوْا۟ سَحَرُوٓا۟ أَعْيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَآءُوا۟ بِسِحْرٍ عَظِيمٍ”** 🤍 — “তারা মানুষের চোখে জাদু করল, তাদের ভয় দেখাল, এবং এক মহান জাদু উপস্থাপন করল।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **মিথ্যা যত বড় প্রদর্শনীই করুক, সত্যের এক আলোই যথেষ্ট তা গলিয়ে দিতে।** 🌿🤍
আয়াত ১১৭
وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِىَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ
ওয়াওহাইনা ইলা মূসা, আন্‌ আলকিয়া ‘সাকা, ফা ইযা হিয়া তালকাফু মা ইয়াফিকূন।
“আর আমরা মূসা (আঃ)-এর প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম — ‘তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো।’ তখন তা (লাঠিটি) তাদের সমস্ত প্রতারণা গিলে ফেলল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 যখন ফিরআউনের জাদুকররা তাদের দড়ি ও লাঠি নিক্ষেপ করল, তখন পুরো ময়দান চোখ ধাঁধানো দৃশ্যে ভরে গেল — যেন শত শত সাপ ছুটে বেড়াচ্ছে 🐍 🌸 ঠিক তখনই আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে নির্দেশ দিলেন: **“أَلْقِ عَصَاكَ” — ‘তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো।’** 🌿 মূসা (আঃ) বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে আল্লাহর আদেশ পালন করলেন, আর সেই সাধারণ কাঠের লাঠি মুহূর্তে রূপ নিল **জীবন্ত সাপে!** 🌸 “فَإِذَا هِىَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ” — “তখন তা তাদের সমস্ত প্রতারণা গিলে ফেলল।” 🌿 অর্থাৎ, যে দড়িগুলোকে তারা সাপের মতো নড়াচড়া করাচ্ছিল, আল্লাহর নির্দেশে মূসা (আঃ)-এর লাঠি সত্যিকার সাপে পরিণত হয়ে তাদের সব কৃত্রিম যাদু **গিলে ফেলতে লাগল!** ⚡ 🌸 এখানে “تَلْقَفُ” শব্দের অর্থ — গিলে ফেলা, শোষণ করা, সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা। এটি এমনভাবে ঘটেছিল যে, কেউ বুঝতে পারেনি কীভাবে পুরো “জাদু” মুহূর্তেই উধাও হয়ে গেল!

🌿 “مَا يَأْفِكُونَ” — অর্থাৎ, “তাদের সব মিথ্যা ও প্রতারণা।” আল্লাহর এক নিদর্শনই যথেষ্ট ছিল সব মিথ্যাকে নিশ্চিহ্ন করতে। 🌸 এই মুহূর্তটি ছিল **সত্যের বিজয়ের দৃশ্যমান প্রকাশ।** মানুষ দেখল— জাদুকরদের প্রতারণা ছিল মায়া, আর মূসা (আঃ)-এর লাঠি ছিল বাস্তব সত্য।

🌿 এই ঘটনায় কেবল এক সাপ নয়, বরং আল্লাহর ক্ষমতা ও সত্যের আলো পুরো ময়দান গ্রাস করল। মানুষের হৃদয় কেঁপে উঠল— “এ তো যাদু নয়, এটা আল্লাহর শক্তি!” 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত ইতিহাসের এক স্থায়ী শিক্ষা — **সত্য কখনো যুক্তির জোরে নয়, বরং আল্লাহর আদেশে বিজয়ী হয়।** মূসা (আঃ)-এর হাতে ছিল এক সাধারণ লাঠি, কিন্তু আল্লাহর অনুমতিতে সেটিই হয়ে গেল **মিথ্যার সর্বনাশের হাতিয়ার।** 🌸 মিথ্যা যত জটিল, সংগঠিত বা জনপ্রিয় হোক না কেন, সত্যের এক ঝলকেই তা বিলীন হয়ে যায়। 🌿 আর লক্ষ্য করো — মূসা (আঃ) কোনো যুক্তি, তর্ক বা বক্তৃতা দেননি। কেবল **আল্লাহর নির্দেশ পালন** করলেন। কারণ, আল্লাহর আদেশই সর্বশ্রেষ্ঠ যুক্তি।

উদাহরণ:
যেমন অন্ধকার রাত কতই না গভীর হোক, সূর্যের এক কিরণেই সব ছায়া মুছে যায় 🌅 তেমনি মিথ্যা যত গভীরই হোক, আল্লাহর সত্যের এক আঘাতেই তা শেষ হয়ে যায়। 🌸 মূসা (আঃ)-এর লাঠি ছিল সেই “আলোর কিরণ,” যা মিথ্যার পর্দা ছিঁড়ে সত্যকে প্রকাশ করল।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর আদেশ মানলেই অলৌকিক সাহায্য আসে।
  • সত্যের শক্তি মিথ্যার চেয়ে অসীম — এমনকি এক লাঠিও যথেষ্ট।
  • মিথ্যা যত বড় হোক, সত্যের সামনে তা টিকতে পারে না।
  • সত্যের পথে ভয় নয়, তাওয়াক্কুল ও আনুগত্যই আসল শক্তি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِىَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ”** 🤍 — “আর আমরা মূসাকে বললাম: ‘তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো,’ তখন তা তাদের সব প্রতারণা গিলে ফেলল।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যখন আল্লাহর নির্দেশে কাজ করা হয়, তখন ক্ষুদ্রতর মাধ্যমও হয়ে যায় বিজয়ের প্রতীক।** 🌿🤍
আয়াত ১১৮
فَوَقَعَ ٱلْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
ফাওয়াকাআল হাক্কু, ওয়া বাতালা মা কানোয়া ইয়ামালূন।
“অতঃপর সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো, এবং তারা যা করছিল (যাদু ও প্রতারণা) তা ব্যর্থ হয়ে গেল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 পূর্বের আয়াতে আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন লাঠি নিক্ষেপ করতে। সেই লাঠি যখন আল্লাহর আদেশে জাদুকরদের সব দড়ি ও প্রতারণা গিলে ফেলল, তখন পুরো ময়দানে এমন দৃশ্য দেখা গেল যা কেউ কখনও ভুলতে পারেনি! ⚡ 🌸 এরপরই আল্লাহ বলেন — **“فَوَقَعَ ٱلْحَقُّ”** — “অতঃপর সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো।” অর্থাৎ, এখন সবাই স্পষ্টভাবে দেখল — মূসা (আঃ)-এর নিদর্শন কোনো যাদু নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য বার্তা।

🌿 “وَبَطَلَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ” — “এবং তারা যা করছিল, তা ব্যর্থ হয়ে গেল।” তাদের যাদু, দৃষ্টিভ্রম ও প্রতারণা সব মুহূর্তেই মুছে গেল, যেন কখনো তা ছিলই না! 🌊

🌸 এই এক মুহূর্তে আল্লাহর সত্য পুরো ময়দানে প্রমাণিত হলো — **এক নবীর হাতে এক লাঠি** পরাজিত করল শত শত জাদুকর, কৌশল, আর মিথ্যার সাম্রাজ্য। 🌿 এটাই আল্লাহর সুন্নাহ — **সত্য ধীরে আসে, কিন্তু স্থায়ী হয়।** আর মিথ্যা দ্রুত আসে, কিন্তু মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায়।

🌿 এই আয়াতের প্রতিটি শব্দ গভীর অর্থ বহন করে — - “وَقَعَ” মানে হলো “দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হওয়া।” - অর্থাৎ, সত্য এমনভাবে প্রমাণিত হলো যে, কেউ আর তা অস্বীকার করতে পারল না। 🌸 “بَطَلَ” মানে “নিশ্চিহ্ন হওয়া,” অর্থাৎ, মিথ্যা এতটাই পরাজিত হলো যে তার কোনো অস্তিত্বই রইল না।

🌿 সত্য ও মিথ্যার এই যুদ্ধ চিরন্তন, আর এই আয়াত তার এক শাশ্বত রায়: **“সত্যের ভবিষ্যৎ বিজয়, মিথ্যার পরিণতি ধ্বংস।”** 🤍

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এখানে আমরা দেখতে পাই — সত্যের জন্য বড় বাহিনী দরকার নেই, দরকার এক **আল্লাহর আদেশে অটল অন্তর।** 🌸 মূসা (আঃ)-এর লাঠি ছিল সাধারণ কাঠ, কিন্তু আল্লাহর শক্তিতে সেটিই সত্যের দলিল হয়ে উঠল। 🌿 আর যারা মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়েছিল, তাদের পরিশ্রম, পরিকল্পনা, কৌশল — সব ধুলায় মিশে গেল।

🌸 আল্লাহর এই বাণী শুধু ইতিহাস নয়, বরং প্রত্যেক যুগের জন্য এক শিক্ষা — **সত্য শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়, আর মিথ্যা নিজেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।**

উদাহরণ:
যেমন বাতাসে ধূলার ঝড় ওঠে, মনে হয় সব ঢেকে ফেলবে, কিন্তু সূর্য উঠলেই সব মিলিয়ে যায় ☀️ তেমনি মিথ্যা কিছুক্ষণ গর্জন করে, কিন্তু সত্যের আলোয় সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্য ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু চিরস্থায়ী।
  • মিথ্যা যত বড়ই হোক, তার ভিত্তি দুর্বল।
  • আল্লাহর সাহায্য এলে ক্ষুদ্রতম জিনিসেও বিজয় আসে।
  • প্রতিটি যুগে “সত্য বনাম মিথ্যা”-এর যুদ্ধ চলে, আর শেষ জয় সবসময় সত্যের।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَوَقَعَ ٱلْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ”** 🤍 — “অতঃপর সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো, এবং তারা যা করছিল, তা ব্যর্থ হয়ে গেল।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যখন আল্লাহর সত্য প্রকাশ পায়, তখন মিথ্যার সমস্ত কৌশল ধূলার মতো উড়ে যায়।** 🌿🤍
আয়াত ১১৯
فَغُلِبُوا۟ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُوا۟ صَـٰغِرِينَ
ফাগুলিবূ হুনালিক, ওয়ান্‌কোলাবূ সাগিরীন।
“অতঃপর তারা (জাদুকররা) সেখানে পরাজিত হলো, এবং তারা ফিরে গেল লাঞ্ছিত অবস্থায়।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি হলো **সত্যের প্রকাশ ও মিথ্যার পতনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।** মূসা (আঃ)-এর লাঠি যখন আল্লাহর আদেশে জাদুকরদের সমস্ত প্রতারণা গিলে ফেলল, তখন মুহূর্তেই পুরো দরবার স্তব্ধ হয়ে গেল — **মিথ্যা ভেঙে পড়ল, আর সত্য মাথা তুলে দাঁড়াল।** 🌸 আল্লাহ বলেন — **“فَغُلِبُوا۟ هُنَالِكَ”** — “তারা সেখানে পরাজিত হলো।” অর্থাৎ, সেই মুহূর্তেই (ফিরআউনের সামনেই) তাদের পরাজয় ঘটল। 🌿 লক্ষ্য করো— “হুনালিক” শব্দটি বোঝায় *সেই স্থানেই, সেই মুহূর্তে*। অর্থাৎ, আল্লাহর আদেশের পর পরই **মিথ্যার সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ল কোনো বিলম্ব ছাড়াই।** ⚡ 🌸 “وَٱنقَلَبُوا۟ صَـٰغِرِينَ” — “তারা ফিরে গেল লাঞ্ছিত অবস্থায়।” অর্থাৎ, যারা আগে ছিল গর্বিত, প্রভাবশালী, অহংকারী, তারা এখন লজ্জিত, ভীত ও চুপচাপ ফিরে গেল। 🌿 তাদের মাথা নত হয়ে গেল— কারণ তারা নিজের চোখে দেখল, **আল্লাহর শক্তি মানুষের যাদু নয়, বরং বাস্তব সত্য।**

🌸 এক মুহূর্ত আগে যারা অহংকারে বলছিল— “আমরা ফিরআউনের প্রিয়জন হবো,” তারাই এখন বিনীত, ভীত ও চূর্ণ অবস্থায়। 🌿 এভাবেই আল্লাহ অহংকারীদের মাথা নিচু করেন, আর বিনয়ী ও সত্যনিষ্ঠদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত ইতিহাসের এক শাশ্বত নীতি জানিয়ে দেয় — **যে মিথ্যা সত্যের সামনে দাঁড়ায়, সে পরাজিত হবেই, যত বড় শক্তিই তার পাশে থাকুক না কেন।** 🌸 “ফাগুলিবূ” — তারা পরাজিত হলো। কিন্তু কে পরাজিত করল? — এক নবী, এক লাঠি, আর এক আল্লাহর আদেশ। 🌿 এটাই ঈমানের শক্তি। যেখানে আল্লাহর সহায়তা থাকে, সেখানকার বিজয় অবধারিত 🌿🤍 🌸 এবং “ওয়ান্‌কোলাবূ সাগিরীন” — শুধু পরাজয় নয়, বরং অপমানিত পরাজয়। কারণ তারা শুধু হেরেছে নয়, বরং মানুষের চোখে লাঞ্ছিতও হয়েছে।

🌿 এভাবেই আল্লাহ দেখিয়ে দিলেন — **অহংকার যত উঁচু হয়, পতন ততই ভয়াবহ হয়।**

উদাহরণ:
যেমন পাহাড়ের মাথা থেকে পাথর পড়লে, তা যত উঁচু থেকে পড়ে, তত জোরে ভাঙে। তেমনি মিথ্যার অহংকার যত বড়, আল্লাহর সামনে তত করুণভাবে চূর্ণ হয়। 🌸 ফিরআউনের সেই অহংকারপূর্ণ সভা আজ সত্যের সাক্ষ্যে পরিণত হয়েছে — যেখানে মিথ্যা শুধু হারে না, **নিজেই নিজের লজ্জা হয়ে যায়।**

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সত্যের সামনে মিথ্যা স্থায়ী নয়।
  • অহংকারের পরিণতি সর্বদা লাঞ্ছনা।
  • আল্লাহর সাহায্য কখনো বিলম্বিত হয় না, আসে সময়মতো।
  • সত্যের বিজয় শুধু যুক্তিতে নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَغُلِبُوا۟ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُوا۟ صَـٰغِرِينَ”** 🤍 — “অতঃপর তারা সেখানে পরাজিত হলো, এবং ফিরে গেল লাঞ্ছিত অবস্থায়।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **মিথ্যার গর্ব যত বড়ই হোক, সত্যের এক মুহূর্তেই তা ভেঙে পড়ে।** 🌿🤍
আয়াত ১২০
وَأُلْقِىَ ٱلسَّحَرَةُ سَـٰجِدِينَ
ওউলকিয়াস্‌ সাহারাতু সাজিদীন।
“আর জাদুকররা সেজদারত অবস্থায় পতিত হলো।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এক মুহূর্ত আগে যারা ছিল মিথ্যার প্রচারক, যারা দুনিয়ার পুরস্কার ও ক্ষমতার আশায় মূসা (আঃ)-এর মুখোমুখি হয়েছিল, তারা এখন **সত্যের আলোয় অভিভূত হয়ে** সেজদায় লুটিয়ে পড়ল! 🌸 “وَأُلْقِىَ ٱلسَّحَرَةُ سَـٰجِدِينَ” — “জাদুকররা সেজদারত অবস্থায় পতিত হলো।” এখানে “أُلْقِىَ” (উলকিয়া) শব্দের অর্থ খুব গভীর — অর্থাৎ, তারা নিজের ইচ্ছায় নয়, বরং **আল্লাহর মহাশক্তির প্রভাবে** যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেজদায় পড়ে গেল। 🌿 🌸 তাদের হৃদয় কেঁপে উঠল — “এটা কোনো যাদু নয়, এটা আল্লাহর নিদর্শন!” 🌿 যারা এক মুহূর্ত আগে “পুরস্কার” চাইছিল, তারা এখন পুরস্কারের চিন্তা না করেই আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে নত হলো। 🤲

🌿 এই দৃশ্য ছিল এতই আকস্মিক ও হৃদয়স্পর্শী, যে ফিরআউনের দরবার, সৈন্য ও প্রজারা হতবাক হয়ে গেল। শত শত জাদুকর একসাথে মাটিতে মাথা রাখছে— **যারা আগে ছিল রাজদরবারের মানুষ, এখন তারা ঈমানের সৈনিক।** 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এটি এক ঐতিহাসিক শিক্ষা — **যখন সত্য স্পষ্ট হয়ে যায়, তখন অন্তর বাধা দিতে পারে না।** যত বড় যাদুকরই হোক, আল্লাহর নিদর্শন দেখলে হৃদয় আত্মসমর্পণ করেই ফেলে। 🌸 এটাই আল্লাহর কুদরতের সৌন্দর্য — যারা মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিল, আল্লাহ তাদেরকেই সত্যের সাক্ষী বানিয়ে দিলেন। 🌿 এই এক সেজদা ছিল ঈমানের ঘোষণা, যা ফিরআউনের সমস্ত অহংকার ভেঙে দিল।

🌸 এই সেজদা ছিল শুধু শারীরিক নয়, বরং আত্মার, হৃদয়ের ও অন্তরের আত্মসমর্পণ। তারা বুঝল — “এ শক্তি কোনো মানুষিক নয়, এটি আসমানী সত্য।” 🌿

🌿 তাদের এই ঈমানি সেজদা ইতিহাসে অমর হয়ে গেল — কারণ তারা জানত, এই সেজদার পরই ফিরআউনের ক্রোধ ও শাস্তি আসবে, তবুও তারা মাথা নত করল আল্লাহর পথে। 🤍

উদাহরণ:
যেমন বজ্রপাতের আলো এক মুহূর্তে চারপাশ আলোকিত করে দেয়, তেমনি আল্লাহর সত্যের আলো তাদের হৃদয়ে এমনভাবে প্রবেশ করল যে তারা সব ভয়, স্বার্থ ও দুনিয়ার চিন্তা ভুলে গেল। 🌸 এটাই ঈমানের প্রভাব — **একবার সত্য অন্তরে ঢুকলে, আর কোনো শক্তি তাকে থামাতে পারে না।** 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর নিদর্শন হৃদয়কে এমনভাবে পরিবর্তন করে, যা যুক্তিতে সম্ভব নয়।
  • সত্য স্পষ্ট হলে, বিনয় ও সেজদাই তার প্রকৃত প্রতিক্রিয়া।
  • যারা মিথ্যার পক্ষে কাজ করত, তারাও আল্লাহর হিদায়াতে ঈমানদার হতে পারে।
  • এক সেজদাই হতে পারে জীবনের শ্রেষ্ঠ মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَأُلْقِىَ ٱلسَّحَرَةُ سَـٰجِدِينَ”** 🤍 — “আর জাদুকররা সেজদারত অবস্থায় পতিত হলো।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যখন হৃদয় সত্যের আলো দেখে, তখন অহংকার মাথা নিচু করেই ফেলে।** 🌿🤍
আয়াত ১২১
قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِرَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
ক্বালূ: আ-মান্না বি-রব্বিল ‘আলামীন।
“তারা বলল — ‘আমরা বিশ্বাস করেছি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রতি।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এটি সেই মুহূর্ত — যেখানে মিথ্যার যোদ্ধারা সত্যের সৈনিক হয়ে গেল। সেজদায় পড়েই তারা উচ্চারণ করল: **“آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ”** — “আমরা বিশ্বাস করেছি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রতি।” 🌸 এক বাক্যে তারা ঘোষণা করল— তাদের ঈমান আর কোনো মানুষ বা রাজাকে উদ্দেশ্য নয়, বরং **সমস্ত সৃষ্টির রব আল্লাহর প্রতি।** 🌿 এই এক কথায় ভেঙে গেল ফিরআউনের গর্ব, যার দাবি ছিল — “আমি তোমাদের সর্বোচ্চ রব।” (সূরা নাজিআত ২৪) এখন তারই সভার ভেতর, শত শত জাদুকর ঘোষণা দিচ্ছে — “আমরা বিশ্বাস করেছি আল্লাহতে, তোমাতে নয়!” ⚡

🌸 তারা এক মুহূর্ত আগেও ফিরআউনের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল, অথচ এখন আল্লাহর রাসুলের অনুসারী হয়ে গেল। এটি আল্লাহর হিদায়াতের এমন এক উদাহরণ, যা মুহূর্তের ভেতরেই হৃদয় বদলে দিতে পারে 🌿 🌿 লক্ষ্য করো— তারা বলেনি “আমরা বিশ্বাস করেছি মূসাতে,” বরং বলেছে “আমরা বিশ্বাস করেছি বিশ্বজগতের রব-এ।” অর্থাৎ, তাদের ঈমান সরাসরি **আল্লাহর প্রতি**। 🌸 মূসা (আঃ) তাদের শুধু পথ দেখিয়েছেন, কিন্তু ঈমানের আলো তারা আল্লাহর কাছ থেকেই পেয়েছে ✨

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **সত্য যখন হৃদয়ে প্রবেশ করে, তখন কোনো যুক্তি বা ভয় তাকে থামাতে পারে না।** 🌸 এরা জানত — এই ঈমানের ঘোষণা মানে তাদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, কিন্তু তারা তবুও বলল — “আমরা বিশ্বাস করেছি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রতি।” 🌿 তারা এখন আর দুনিয়ার পুরস্কার চায় না, বরং চায় আল্লাহর সন্তুষ্টি। 🌸 তাদের অন্তরে তখন একটাই অনুভূতি— **সত্যের জন্য জীবন দিতে হলেও তাতে কোনো ক্ষতি নেই।**

🌿 এখানেই দেখা যায় ঈমানের প্রকৃত রূপ — **যেখানে দুনিয়ার সব প্রলোভন, ভয় ও লোভ মুছে যায়, এবং হৃদয় আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে বিনা দ্বিধায়।** 🤍

উদাহরণ:
যেমন কোনো মানুষ দীর্ঘ অন্ধকারের পর হঠাৎ সূর্যের আলো দেখে, তখন চোখ বন্ধ থাকলেও সে আলো অনুভব করে ☀️ তেমনি, এই জাদুকররা আল্লাহর নিদর্শনের আলোয় নিজেদের অন্তরের পর্দা ছিঁড়ে ঈমানকে চিনে ফেলল 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর হিদায়াত মুহূর্তেই মানুষের হৃদয় পরিবর্তন করে দিতে পারে।
  • সত্য স্পষ্ট হলে, তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
  • সত্যিকার ঈমানের লক্ষ্য কোনো মানুষ নয়, শুধুই আল্লাহ।
  • ঈমানদার কখনো সংখ্যার দিকে তাকায় না, সে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِرَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ”** 🤍 — “তারা বলল, ‘আমরা বিশ্বাস করেছি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রতি।’” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **সত্য যখন অন্তরে প্রবেশ করে, তখন মানুষ সেজদা করেই বলে— ‘আমি এখন আমার রবকে চিনে ফেলেছি।’** 🌿🤍
আয়াত ১২২
رَبِّ مُوسَىٰ وَهَـٰرُونَ
রাব্বি মূসা ওয়া হারূন।
“(তিনি) মূসা ও হারূনের প্রতিপালক।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আগের আয়াতে জাদুকররা ঘোষণা করেছিল — **“আমরা বিশ্বাস করেছি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রতি।”** কিন্তু এখন তারা তাদের বিশ্বাসের পরিচয়কে আরও স্পষ্ট করছে — **“তিনি হচ্ছেন মূসা ও হারূনের রব।”** 🤍 🌸 তারা জানত, ফিরআউন নিজেকে “রব” বলে দাবি করেছিল, তাই তারা স্পষ্টভাবে বলল — “আমরা বিশ্বাস করেছি সেই আল্লাহর প্রতি, যিনি মূসা ও হারূনের প্রতিপালক, তোমার নয়, হে ফিরআউন!” ⚡ 🌿 এটি ছিল **সাহসী ঈমানের ঘোষণা**, যা রাজসভার সামনে প্রকাশ্যে বলা মানে ছিল মৃত্যুকে আহ্বান করা। তবুও তারা নির্ভয়ে বলল — **“রব্বি মূসা ওয়া হারূন।”** 🌸 কারণ, সত্যের আলো একবার অন্তরে প্রবেশ করলে, ভয় ও স্বার্থের সমস্ত পর্দা ছিঁড়ে যায় 🌿

🌿 তাদের এই বাক্য ফিরআউনের অহংকারে আগুন ধরিয়ে দিল। যিনি দাবি করেছিলেন, “أنا رَبُّكُمُ الأَعْلَىٰ” — “আমি তোমাদের সর্বোচ্চ রব,” (সুরা আন-নাজিয়া-২৪) এখন তাঁরই সভায় শত শত জাদুকর একসাথে ঘোষণা করছে — **“আমাদের রব আল্লাহ, যিনি মূসা ও হারূনের প্রতিপালক।”** 🌸 🌿 এটি ছিল এক বিপ্লবী মুহূর্ত — এক মুহূর্তেই মিথ্যার প্রাসাদ ভেঙে পড়ল সত্যের ঘোষণায়।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এখানে আমরা দেখতে পাই, ঈমান কেবল বিশ্বাস নয় — বরং **সাহসিক প্রকাশ**ও ঈমানের অংশ। 🌸 তারা শুধু অন্তরে বিশ্বাস করেই থামেনি, বরং প্রকাশ্যে বলেছে — “আমাদের রব সেই, যাঁর কাছে মূসা ও হারূন আত্মসমর্পণ করেছে।” 🌿 ঈমান কখনো গোপন রাখার নয়, বরং সত্য প্রকাশের মাধ্যমেই তা পূর্ণ হয় 🌸 🌿 আল্লাহ তাদের মুখ দিয়ে এই বাক্য বলিয়ে দিলেন — যাতে কিয়ামত পর্যন্ত ইতিহাস জানে, **আল্লাহর নিদর্শন হৃদয় বদলে দিতে পারে এক মুহূর্তেই।** 🤍

উদাহরণ:
যেমন কোনো সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্রে পতাকা উঁচু করে জানিয়ে দেয় “আমার আনুগত্য কেবল এক নেতার প্রতি,” তেমনি এই জাদুকররা ঘোষণা করল — **“আমাদের আনুগত্য এখন কেবল আল্লাহর প্রতি।”** 🌿 🌸 তারা হারাল দুনিয়ার রাজা, কিন্তু পেয়ে গেল আসমানের রাজা! 🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • ঈমান শুধু অন্তরের নয়, মুখেও সাহসের সাথে প্রকাশ করতে হয়।
  • যে আল্লাহর পথে দাঁড়ায়, সে কোনো রাজা বা ক্ষমতাকে ভয় পায় না।
  • সত্যের প্রকাশ প্রায়শই কষ্ট ডেকে আনে, কিন্তু তা-ই মুক্তির দরজা খুলে দেয়।
  • আল্লাহর হিদায়াত মানুষকে মুহূর্তে বদলে দিতে পারে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“رَبِّ مُوسَىٰ وَهَـٰرُونَ”** 🤍 — “(তিনি) মূসা ও হারূনের প্রতিপালক।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে সত্যকে চিনে ফেলে, সে আল্লাহকে ডাকার সময় আর কোনো নামের প্রয়োজন বোধ করে না — শুধু বলে, ‘আমার রব মূসা ও হারূনের রব।’** 🌿🤍
আয়াত ১২৩
قَالَ فِرْعَوْنُ ءَامَنتُم بِهِۦ قَبْلَ أَنْ ءَاذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّ هَـٰذَا لَمَكْرٌۭ مَّكَرْتُمُوهُ فِى ٱلْمَدِينَةِ لِتُخْرِجُوا۟ مِنْهَآ أَهْلَهَا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ
ক্বালা ফিরআউনু, আ-মানতুম বিহি কাবলা আন আযানা লাকুম, ইন্না হাযা লা মাকরুম মাকরতুমূহু ফিল মাদীনাহ, লিতুখরিজূ মিনহা আহলাহা, ফাসাওফা তা‘লামূন।
“ফিরআউন বলল, ‘তোমরা কি তার (মূসার) প্রতি বিশ্বাস করেছ আমার অনুমতি দেওয়ার আগেই? নিশ্চয়ই এটি তোমাদের এক ষড়যন্ত্র, যা তোমরা শহরে সাজিয়েছ — যাতে এখানকার লোকদের উৎখাত করতে পারো। কিন্তু তোমরা শীঘ্রই (এর পরিণাম) জেনে যাবে।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে ফিরআউনের অহংকার, ভয় ও হীনমন্যতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যখন জাদুকররা প্রকাশ্যে আল্লাহর প্রতি ঈমান ঘোষণা করল, ফিরআউন তার রাজকীয় আসন থেকে রাগে কেঁপে উঠল। 🌸 সে বলল — **“آمَنتُم بِهِ قَبْلَ أَنْ ءَاذَنَ لَكُمْ”** — “তোমরা কি আমার অনুমতি ছাড়া বিশ্বাস করেছ?” 🌿 এখানে দেখা যায় ফিরআউনের চরম অহংকার — সে মনে করে **ঈমানও তার অনুমতির অপেক্ষায়!** অর্থাৎ, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখাও তার অনুমোদন ছাড়া নাকি অপরাধ! 🌸 এটাই ছিল তার মনস্তত্ত্ব — **মানুষের হৃদয়কেও সে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।**

🌿 এরপর সে তাদের ঈমানকে “ষড়যন্ত্র” হিসেবে প্রচার করল: **“إِنَّ هَـٰذَا لَمَكْرٌۭ مَّكَرْتُمُوهُ فِى ٱلْمَدِينَةِ”** — “নিশ্চয় এটি তোমাদের শহরে সাজানো এক চক্রান্ত।” 🌸 সে বলল — “তোমরা (মূসা ও জাদুকররা) একসাথে পরিকল্পনা করেছ, যাতে আমার শাসন উৎখাত করতে পারো!” 🌿 অর্থাৎ, সে সত্যকে স্বীকার না করে **রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের গল্প বানিয়ে নিজের পরাজয় ঢাকতে চাইল।**

🌸 এরপর সে বলল — **“لِتُخْرِجُوا۟ مِنْهَآ أَهْلَهَا”** — “তোমরা শহরের লোকদের উৎখাত করতে চাও।” অর্থাৎ, সে মূসা (আঃ)-এর দাওয়াতকে “রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলন” হিসেবে দাগিয়ে দিল। 🌿 এটি আজও সত্যের শত্রুদের কৌশল — **তারা ঈমানকে ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করে, আর সত্যবাদীদের রাষ্ট্রবিরোধী বলে অপবাদ দেয়।**

🌿 শেষে ফিরআউন হুমকি দিল — **“فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ”** — “তোমরা শীঘ্রই জেনে যাবে।” অর্থাৎ, “আমি তোমাদের এমন শাস্তি দেব যা তোমরা ভুলতে পারবে না।” ⚡ 🌸 সে বুঝতে পারল না — **যে আল্লাহর পথে মাথা নত করেছে, তাকে আর কোনো মানুষ ভয় দেখাতে পারে না।** 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক দারুণ বাস্তব শিক্ষা দেয় — যখন সত্য স্পষ্ট হয়, মিথ্যার শাসকরা যুক্তি হারিয়ে ফেলে। তখন তারা **ভয় দেখানো, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ও শক্তি প্রদর্শন** — এই তিন অস্ত্র ব্যবহার করে। 🌸 কিন্তু আল্লাহর বান্দারা জানে — **ভয় দেখানো মানুষকে নয়, আল্লাহকে মানা-ই আসল সাহস।** 🌿 ফিরআউনের ভাষা থেকে বোঝা যায় — তার ভয় ছিল শুধু একটাই: **“এই সত্য যদি মানুষের মনে ঢুকে যায়, তবে আমার রাজত্ব টিকবে না।”** 🌸 সত্যিই তাই হলো — মূসা (আঃ)-এর দাওয়াত ইতিহাসে অমর, আর ফিরআউনের অহংকার ডুবে গেল নীল নদে 🌊

উদাহরণ:
যেমন কেউ নিজের ভুল ঢাকতে অন্যকে দোষ দেয়, তেমনি ফিরআউনও নিজের দুর্বলতা ঢাকতে মূসা (আঃ)-এর উপর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ চাপাল। 🌸 কিন্তু আল্লাহর নীতি হলো — **অহংকার যত চিৎকার করে, ততই তার পতন ত্বরান্বিত হয়।**

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকারী মানুষ নিজের ভুল স্বীকার না করে, সবসময় দোষ দেয় অন্যকে।
  • সত্য যখন উজ্জ্বল হয়, মিথ্যা তখন ষড়যন্ত্রের গল্প বানায়।
  • আল্লাহর পথে যারা চলে, তাদের ভয় দেখানো যায় না।
  • রাজত্ব ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ঈমানই স্থায়ী বিজয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ فِرْعَوْنُ ءَامَنتُم بِهِۦ قَبْلَ أَنْ ءَاذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّ هَـٰذَا لَمَكْرٌۭ مَّكَرْتُمُوهُ فِى ٱلْمَدِينَةِ ۖ لِتُخْرِجُوا۟ مِنْهَآ أَهْلَهَا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **অহংকার সবসময় সত্যকে “ষড়যন্ত্র” বলে দোষ দেয়, কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনাই শেষ কথা।** 🌿🤍
আয়াত ১২৪
لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُم مِّنْ خِلَافٍ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ
লা-উকত্তি‘আন্না আইদিয়াকুম ওয়া আরজুলাকুম মিন্‌ খিলাফ, সুম্মা লা-উসাল্লিবান্নাকুম আজমা‘ঈন।
“আমি অবশ্যই তোমাদের হাত-পা **বিপরীত দিক থেকে** কেটে ফেলব, তারপর তোমাদের সবাইকে অবশ্যই **শূল/ক্রুশে** ঝুলিয়ে হত্যা করব।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 পূর্বের আয়াতে ফিরআউন ঈমানদার জাদুকরদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে হুমকি দেয়। এখানে সে সেই হুমকিকে স্পষ্ট করে— **চরম নির্যাতনের ঘোষণা** দেয়: “বিপরীত অঙ্গচ্ছেদ + ক্রুশবিদ্ধ করা।” 🌸 “مِّنْ خِلَافٍ” — বিপরীত দিক থেকে; অর্থাৎ **ডান হাত + বাম পা** অথবা **বাম হাত + ডান পা** কেটে ফেলা— এটি ছিল অত্যাচারের ভয়াবহতম শাস্তি। 🌿 “لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ” — “তোমাদের সবাইকে ক্রুশে ঝুলিয়ে দেব”— জনসমক্ষে অপমান ও আতঙ্ক ছড়ানোর কৌশল; উদ্দেশ্য: **সত্যের দাওয়াতকে ভয় দেখিয়ে থামানো।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 যখন সত্য হৃদয়ে বসে যায়, তখন ক্ষমতাবানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র থাকে— **ভয় প্রদর্শন ও নির্মম শাস্তির হুমকি।** কিন্তু ঈমানদারদের শক্তি হলো— **আল্লাহর ভয়, মানুষের নয়।** 🌸 ফিরআউন ভেবেছিল শাস্তির ভয় দেখিয়ে ঈমান ফিরিয়ে নেবে; বাস্তবে— এই হুমকি তাদের ঈমানকে আরও দৃঢ় করবে (পরের আয়াতগুলোতে তারই সাক্ষ্য)।

উদাহরণ:
যেমন ঝড়ের ভয় দেখালে পাহাড় নড়ে না; বরং পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ঝড়ই দুর্বল হয়ে যায়। তেমনি আল্লাহভীরু হৃদয়কে **নির্যাতনের হুমকি** নাড়াতে পারে না ⛰️

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অত্যাচারীরা সত্যের বিরুদ্ধে ভয়–নির্ভর রাজনীতি চালায়।
  • ঈমানদারদের শক্তি শাস্তিভীতি নয়, বরং আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল।
  • জনসমক্ষে অপমানের কৌশল সত্যকে থামাতে পারে না; বরং সত্য আরও প্রসারিত হয়।
  • ইতিহাস দেখায়— ক্ষমতার জুলুম ক্ষণস্থায়ী, ঈমানের মর্যাদা চিরস্থায়ী।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**অত্যাচারীর শেষ হাতিয়ার হলো ভয়; কিন্তু মুমিনের প্রথম ঢাল হলো আল্লাহর উপর ভরসা।** 🤍
আয়াত ১২৫
قَالُوا إِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ
ক্বালূ: ইন্না ইলা রাব্বিনা মুন্‌ক্বালিবূন।
“তারা বলল— ‘নিশ্চয়ই আমরা আমাদের প্রতিপালকের দিকেই ফিরে যাবো।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 ফিরআউনের নৃশংস হুমকির (বিপরীত অঙ্গচ্ছেদ ও শূলে চড়ানো) জবাবে মুমিন জাদুকরদের সংক্ষিপ্ত, দৃঢ় ও ঈমানভরা উত্তর— **“আমরা তো শেষ পর্যন্ত আমাদের রবের কাছেই ফিরে যাব।”** অর্থাৎ, শাস্তি-ভয় দিয়ে আমাদের পথ বদলানো যাবে না; দুনিয়ার সিদ্ধান্ত সাময়িক, **আসল ফয়সালা আল্লাহর দরবারে।**

🌸 এই বাক্য তাদের অন্তরের প্রশান্তি ও আখিরাত-দর্শন প্রকাশ করে— মৃত্যুকে তারা পরাজয় নয়, **রবের সান্নিধ্যে প্রত্যাবর্তন** মনে করেছে। তাই দুনিয়ার অপমান, শাস্তি বা ক্ষতি— কোনো কিছুই তাদের ঈমান নাড়াতে পারেনি।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 “ইন্না ইলা রাব্বিনা মুনক্বালিবূন” — মুমিনের জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়: দুনিয়ার ক্ষতি ≠ শেষ; আখিরাতই **চূড়ান্ত গন্তব্য**। যে হৃদয় আল্লাহর দিকে ফেরার কথা স্মরণ রাখে, তার কাছে মানুষিক ভয় ছোট হয়ে যায়।

উদাহরণ:
যেমন কোনো আদালতের রায়ের পর সবচেয়ে বড় কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল থাকে— মুমিনও জানে: **সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আল্লাহ।** তাই দুনিয়ার শাস্তিও তাকে ভেঙে দিতে পারে না; সে বলে— “শেষ বিচারে আমি আমার রবের কাছেই যাচ্ছি।”

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আখিরাত-সচেতনতা ভয়কে ছোট করে, ঈমানকে বড় করে।
  • মৃত্যু মুমিনের জন্য প্রত্যাবর্তন— পরাজয় নয়, সাক্ষাতের দরজা।
  • দুনিয়ার ক্ষমতা সাময়িক; চূড়ান্ত ফয়সালা আল্লাহর।
  • সংক্ষিপ্ত কিন্তু দৃঢ় বাক্যেই ঈমানের শক্তি প্রকাশ পায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**“ইন্না ইলা রাব্বিনা মুনক্বালিবূন”** — মুমিনের হৃদয়ের মন্ত্র: **ভয় নয়, ফিরতি— আর সেই ফিরতি একমাত্র রবের দিকে।** 🤍
আয়াত ১২৬
وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ ءَامَنَّا بِـَٔايَـٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَا ۚ رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًۭا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
ওয়া মা তানকিমু মিন্‌না ইল্লা আন্না আ-মান্না বি-আয়াতি রব্বিনা লাম্মা জা-আতনা, রাব্বানা আফরিগ ‘আলাইনা সাবরাওয়া তাওাফ্ফানা মুসলিমীন।
“তুমি আমাদের প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছো শুধু এজন্যই যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনগুলোতে ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের নিকট এসেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষণ করো এবং আমাদের মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করাও।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি ফিরআউনের ভয়ংকর হুমকির জবাবে মুমিন জাদুকরদের ঈমান, ধৈর্য ও আত্মসমর্পণের সর্বোচ্চ প্রকাশ। তারা বলল — “তুমি আমাদের ওপর রাগ করছো কেন? শুধু এজন্য যে আমরা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করেছি?” 🌸 **তাদের অপরাধ শুধু ‘ঈমান’ — আর অপরাধী তারা ফিরআউনের কাছে।** এটি ইতিহাসের এক চরম ব্যঙ্গ — **সত্যের মানুষ সবসময় মিথ্যার চোখে অপরাধী হয়ে যায়।**

🌿 “وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ ءَامَنَّا” — “তুমি আমাদের বিরুদ্ধে রাগ করছো শুধু এজন্য যে আমরা ঈমান এনেছি।” এখানে মুমিনদের কণ্ঠে কোনো অভিযোগ নেই, আছে অবিচল ঈমান। তারা বুঝিয়ে দিল — **তোমার অত্যাচার আমাদের মনোবল নষ্ট করতে পারবে না।**

🌸 “رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًۭا” — “হে আমাদের প্রভু! আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষণ করো।” তারা শাস্তির ভয় নয়, ধৈর্যের দোয়া করছে। কারণ তারা জানে — **যে ধৈর্য ধরে, আল্লাহ তাকে অজেয় শক্তি দেন।**

🌿 “وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ” — “আমাদের মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করাও।” তাদের একটাই আকাঙ্ক্ষা — মৃত্যুর সময় ঈমান যেন অটুট থাকে। দুনিয়ার জীবন নয়, **আখিরাতের পরিণতি**-ই তাদের চিন্তা।

🌸 কী অসাধারণ দোয়া! তারা মৃত্যুর ভয় পায়নি; বরং মৃত্যুকে ঈমানের শেষ প্রমাণ বানাতে চেয়েছে। এটি ছিল সত্যিকার ঈমানদারদের মুখের উচ্চারণ — **ধৈর্য ও আত্মসমর্পণ একসাথে।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে তিনটি ঈমানি স্তর ফুটে উঠেছে — ১️⃣ সত্যের কারণে অত্যাচার সহ্য করা। ২️⃣ ধৈর্যের জন্য দোয়া করা। ৩️⃣ মৃত্যুতেও ঈমানের কামনা করা। 🌸 এরা বুঝে গিয়েছিল — “জীবন-মৃত্যু যদি আল্লাহর জন্য হয়, তবে কোনো শাস্তিই ক্ষতি নয়।” 🌿 তারা কোনো অলৌকিক সাহায্য চায়নি, চেয়েছিল শুধু **ধৈর্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টির মৃত্যু।** এটাই ছিল তাদের প্রকৃত বিজয় 🌸

উদাহরণ:
যেমন আগুনে ঝাঁপ দেয়া ঈমানদাররা হাসতে হাসতে মৃত্যুবরণ করে, কারণ তারা জানে — **এই আগুনের ওপারে জান্নাতের শীতলতা অপেক্ষা করছে।** তেমনি এই জাদুকররাও মৃত্যুকে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার সেতু ভেবে নিল। 🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • সত্যের পথে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হলো ধৈর্য।
  • মুমিন শাস্তির ভয় নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে।
  • ঈমানের দৃঢ়তা মানুষের দেহ নয়, তার অন্তরকে অপরাজেয় করে।
  • মৃত্যু কখনো শেষ নয়; ঈমানদারের জন্য এটি প্রত্যাবর্তন — আল্লাহর দিকে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ ءَامَنَّا بِـَٔايَـٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَا ۚ رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًۭا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে আল্লাহর পথে চলে, তার শত্রুরা তাকে আঘাত করবে; কিন্তু মুমিন বলবে — ‘হে প্রভু, আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষণ করো।’** 🌿🤍
আয়াত ১২৭
وَقَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوْمَهُۥ لِيُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَءَالِهَتَكَ ۚ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْىِۦ نِسَآءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَـٰهِرُونَ
ওয়া ক্বালাল মালা-উ মিন্‌ কওমি ফিরআউন, আ-তাযারু মূসা ওয়া কওমাহু লিউফসিদু ফিল আরদি, ওয়া ইয়াযারাকা ওয়া আলিহাতাক, ক্বালা সানুকত্তিলু আবনাআহুম ওয়া নাস্তাহী নিসা-আহুম, ওয়া ইন্না ফাওকাহুম ক্বাহিরূন।
“ফিরআউনের সম্প্রদায়ের নেতারা বলল, ‘তুমি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে এভাবে ছেড়ে দেবে, যাতে তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং তোমাকে ও তোমার দেবতাদের ত্যাগ করে?’ ফিরআউন বলল, ‘আমরা অবশ্যই তাদের পুত্রদের হত্যা করব এবং নারীদের জীবিত রাখব। আর নিশ্চয়ই আমরা তাদের উপর প্রভাবশালী।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে দেখা যায়, ফিরআউনের উপদেষ্টারা (মালা’) তার কাছে এসে এক ধরণের **ভয় ও রাজনীতি মিশ্রিত পরামর্শ** দিচ্ছে। তারা বলছে — “তুমি কি মূসা ও তার জাতিকে ছেড়ে দেবে? তারা তো তোমার শাসনের জন্য হুমকি!”

🌸 **তাদের অভিযোগ তিনটি মূল পয়েন্টে:**
১️ “তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে” — অর্থাৎ, মানুষকে ফিরআউনের দাসত্ব থেকে মুক্ত করছে।
২️ “তারা তোমাকে ত্যাগ করছে” — তোমার ক্ষমতা দুর্বল করছে।
৩️ “তারা তোমার দেবতাদের অগ্রাহ্য করছে” — ধর্মীয় প্রভাব নষ্ট করছে।

🌿 এই তিন অভিযোগ আজও সত্যবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয় — **“তারা সমাজ নষ্ট করছে, সরকারবিরোধী, ধর্মবিরোধী!”** অথচ বাস্তবে তারা কেবল সত্যের দাওয়াত দিচ্ছে 🌸

🌸 ফিরআউনের উত্তরও ছিল অহংকারে পূর্ণ: **“সানুকত্তিলু আবনাআহুম ওয়া নাস্তাহী নিসা-আহুম”** — “আমরা তাদের পুত্রদের হত্যা করব এবং নারীদের জীবিত রাখব।” অর্থাৎ, পুরুষদের মেরে জাতিকে দুর্বল করে ফেলা, নারীদের বাঁচিয়ে রেখে তাদের দাসী বানানো— এটি ছিল ফিরআউনের পুরনো নীতি (যা সে আগে নবজাতকদের হত্যার মাধ্যমে চালু করেছিল)। 🌿 সে ভাবল, আবার সেই নীতিই ব্যবহার করবে, যাতে মূসা (আঃ)-এর জাতি, বনী ইসরাঈল, ধ্বংস হয়ে যায়।

🌸 এরপর সে বলল — **“ওয়া ইন্না ফাওকাহুম ক্বাহিরূন”** — “নিশ্চয়ই আমরা তাদের উপর প্রভাবশালী।” অর্থাৎ, “আমাদের ক্ষমতা তাদের চেয়ে অনেক বেশি, তারা আমাদের কিছুই করতে পারবে না।” 🌿 এটি ছিল এক **অন্ধ আত্মবিশ্বাস**, যা সবসময়ই আল্লাহর গযবে পতিত হয়।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে আমরা দেখি, ক্ষমতাবানরা সবসময় সত্যের দাওয়াতকে ভয় পায়। কারণ সত্য মানুষকে **স্বাধীন করে**, আর মিথ্যা মানুষকে **দাসত্বে বেঁধে রাখে।** 🌸 ফিরআউনের উপদেষ্টারা বুঝেছিল — যদি মানুষ “আল্লাহর বান্দা” হয়ে যায়, তাহলে তারা আর “ফিরআউনের দাস” থাকবে না। 🌿 তাই তারা মূসা (আঃ)-এর দাওয়াতকে “ফিতনা” বা “অরাজকতা” বলে প্রচার করল। ইতিহাসে সত্যের পথে এ অপবাদ সবচেয়ে পুরনো অস্ত্র।

🌸 আর ফিরআউনের প্রতিক্রিয়া — “হত্যা, ভয় ও নিয়ন্ত্রণ” — এটাই ছিল তার রাজনীতি ও ক্ষমতা রক্ষার কৌশল। 🌿 কিন্তু সে বুঝতে পারেনি — **যার বিরোধিতা করছে সে মানুষ নয়, আল্লাহর প্রেরিত নবী।**

উদাহরণ:
যেমন অন্ধকারের রাজা আলোকে ভয় পায়, কারণ আলো তার অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে 🌙 তেমনি মিথ্যার শাসক সত্যকে সহ্য করতে পারে না; কারণ সত্য আসলে মিথ্যা নিজেরাই বিলীন হয়ে যায়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • মিথ্যা শাসকরা সবসময় সত্যবাদীদের বিরুদ্ধে ভয় ও মিথ্যা প্রচার চালায়।
  • ক্ষমতার অহংকার মানুষকে অন্যায়ের সীমা অতিক্রম করায়।
  • আল্লাহর বান্দারা নিপীড়িত হলেও শেষ জয় সর্বদা তাদেরই হয়।
  • অত্যাচার যতই বাড়ুক, আল্লাহর পরিকল্পনা ততই ন্যায়ের দিকে এগিয়ে চলে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوْمَهُۥ لِيُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ ... سَنُقَتِّلُ أَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْىِۦ نِسَآءَهُمْ”** 🤍 — “তুমি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে ছেড়ে দেবে, আমরা তাদের পুত্রদের হত্যা করব এবং নারীদের জীবিত রাখব।” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **ক্ষমতার অহংকার যতই গর্জে উঠুক, আল্লাহর পরিকল্পনা ততই নিঃশব্দে সত্যের বিজয় ঘটায়।** 🌿🤍
আয়াত ১২৮
قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱللَّهِ وَٱصْبِرُوٓا۟ ۖ إِنَّ ٱلْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ ۖ وَٱلْعَـٰقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ
ক্বালা মূসা লিকওমিহি ইস্তাঈনূ বিল্লাহি ওয়াসবিরূ, ইন্নাল আরদা লিল্লাহ, ইউরিসুহা মান ইয়াশাউ মিন ইবাদিহি, ওয়াল ‘আকিবাতু লিলমুত্তাকীন।
“মূসা তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন — ‘তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই পৃথিবী আল্লাহরই, তিনি যাকে ইচ্ছা, তাঁর বান্দাদের মধ্যে তাকে এর উত্তরাধিকারী করেন; আর সাফল্যময় পরিণতি তো মুত্তাকিদেরই।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 ফিরআউনের নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ও দাসত্বের চাপে বনী ইসরাঈল ভেঙে পড়েছিল। ঠিক তখন মূসা (আঃ) তাদের সাহস ও ঈমানের বার্তা দিলেন— “ভয় পেও না, ধৈর্য ধরো, আল্লাহর সাহায্য আসবেই।”

🌸 **“ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱللَّهِ” — “আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।”** অর্থাৎ, তোমাদের শক্তি সীমিত, কিন্তু আল্লাহর সাহায্য অসীম। কোনো পরিকল্পনা বা রাজনীতি নয় — **আল্লাহর উপর নির্ভর করাই মুমিনের অস্ত্র।** 🌿 **“وَٱصْبِرُوٓا۟” — “ধৈর্য ধরো।”** কারণ বিজয় কখনো তাৎক্ষণিক নয়; ধৈর্যই হচ্ছে আল্লাহর প্রতিশ্রুত সাহায্য পাওয়ার চাবি। 🌸 ধৈর্য মানে দুর্বল থাকা নয় — বরং কষ্টের মধ্যেও ঈমান না হারানো।

🌿 এরপর মূসা (আঃ) বললেন — **“إِنَّ ٱلْأَرْضَ لِلَّهِ”** — “নিশ্চয়ই পৃথিবী আল্লাহরই।” অর্থাৎ, ক্ষমতা, রাজত্ব, ভূমি — কিছুই কারও স্থায়ী নয়। আজ ফিরআউন শাসন করছে, কিন্তু কালই আল্লাহ অন্যকে উত্তরাধিকারী করবেন 🌸 🌸 **“يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ”** — “তিনি যাকে চান, তাঁর বান্দাদের মধ্যে তাকে দেন।” এর মানে — আল্লাহর সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে, আর এই পরিবর্তন **ধৈর্যশীল ও ঈমানদারদের জন্য কল্যাণকর।**

🌿 শেষে মূসা (আঃ) তাদের চূড়ান্ত আশার বার্তা দেন — **“وَٱلْعَـٰقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ”** — “সফল পরিণতি মুত্তাকিদেরই।” অর্থাৎ, শেষ বিজয় সবসময় **আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ ও ধৈর্যশীলদের জন্য।** 🌸 ইতিহাসে দেখো — সব ফেরআউন ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু প্রতিটি মূসা বেঁচে আছে মানুষের হৃদয়ে 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 মূসা (আঃ)-এর এই বাক্যে তিনটি ঈমানের স্তম্ভ: ১️⃣ আল্লাহর সাহায্যে আস্থা রাখা। ২️⃣ বিপদে ধৈর্য ধারণ করা। ৩️⃣ বিশ্বাস রাখা— শেষ জয় মুত্তাকিদের জন্যই। 🌸 এটি কেবল বনী ইসরাঈলের জন্য নয়, বরং প্রতিটি যুগের মুমিনদের জন্য এক **আল্লাহভিত্তিক আশার শিক্ষা।** 🌿 দুনিয়ার ক্ষমতা অস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর সাহায্য স্থায়ী — এবং তাঁর সিদ্ধান্ত কখনো ভুল হয় না 🤍

উদাহরণ:
যেমন ঝড়ে গাছ নড়ে, কিন্তু শিকড়বদ্ধ গাছ ভাঙে না — তেমনি ধৈর্যশীল মুমিনের হৃদয়ও ঝড়ে নড়ে, কিন্তু ভাঙে না। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সাহায্য আসে ধৈর্যের পরেই।
  • ক্ষমতা ও রাজত্ব কারও স্থায়ী নয়; সবই আল্লাহর হাতে।
  • কষ্টের সময় হতাশ না হয়ে ঈমানকে শক্ত করা উচিত।
  • চূড়ান্ত সাফল্য আল্লাহভীরু মুত্তাকিদের জন্য নির্ধারিত।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱللَّهِ وَٱصْبِرُوٓا۟ ۖ إِنَّ ٱلْأَرْضَ لِلَّهِ ... وَٱلْعَـٰقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **বিপদের মাঝেও হতাশ হয়ো না; আল্লাহর জমিন, আল্লাহর হুকুম, আর শেষ জয় মুত্তাকিদের জন্য।** 🌿🤍
আয়াত ১২৯
قَالُوا۟ أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِيَنَا وَمِنۢ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا ۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ
ক্বালূ: উযীনা মিন্‌ কাবলি আন তা’তিয়ানা, ওয়া মিন্‌ বাআদি মা জি’তানা, ক্বালা ‘আসা রব্বুকুম আন ইউহলিকা ‘আদুয়্যাকুম, ওয়া ইয়াস্তাখলিফাকুম ফিল আরদ, ফাইয়ানযুরা কাইফা তা‘মালূন।
“তারা বলল, ‘তুমি আসার আগেও আমরা কষ্টে ছিলাম, আর তুমি আসার পরেও আমরা নির্যাতিত হচ্ছি।’ মূসা বললেন, ‘সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করবেন এবং তোমাদেরকে এই দেশে উত্তরাধিকারী করবেন, তারপর তিনি দেখবেন, তোমরা কীভাবে আচরণ করো।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 যখন ফিরআউনের নির্যাতন আরও বেড়ে গেল, তখন বনী ইসরাঈল হতাশ হয়ে মূসা (আঃ)-কে বলল — “তুমি আসার আগেও আমরা নিপীড়িত ছিলাম, আর এখনো সেই কষ্টই চলছে!” 😔 🌸 তারা আসলে বলতে চাচ্ছিল — “তোমার আগমনেও আমাদের কোনো পরিবর্তন হলো না; আমাদের অবস্থা তো আগের মতোই।”

🌿 এটি ছিল **হতাশার প্রকাশ**, কিন্তু মূসা (আঃ) তাদের মনোবল ভাঙতে দেননি। তিনি বললেন — **“আসা রব্বুকুম আন ইউহলিকা ‘আদুয়্যাকুম”** — “সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করবেন।” 🌸 এটি কোনো অনুমান নয়, বরং এক **আশাবাদী ঈমানী বাক্য** — কারণ আল্লাহর রহমত সবসময় ধৈর্যশীলদের পাশে থাকে 🌿

🌿 এরপর বললেন — **“وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ”** — “এবং তোমাদেরকে তিনি জমিনে উত্তরাধিকারী করবেন।” অর্থাৎ, আজ যারা দাস, কাল তারাই শাসক হবে। এটি ছিল আল্লাহর এক সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি — **ধৈর্যশীলদের হাতেই শেষমেশ বিজয় আসবে।** 🌸 কিন্তু মূসা (আঃ) এখানেই থামলেন না; বরং বললেন — **“فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ”** — “তারপর তিনি দেখবেন, তোমরা কীভাবে আচরণ করো।” 🌿 অর্থাৎ, আল্লাহ শুধু ক্ষমতা দেবেন না; বরং দেখবেন, তোমরা তা **ন্যায়, কৃতজ্ঞতা ও তাকওয়া**-র সাথে ব্যবহার করো কি না।

🌸 এটি ছিল এক অসাধারণ শিক্ষা — **বিজয় পাওয়া যত সহজ, বিজয়ের পর ঈমান ধরে রাখা তত কঠিন।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহর একটি চিরন্তন নীতি ফুটে উঠেছে — কষ্টের পর আসে আশীর্বাদ, দাসত্বের পর আসে স্বাধীনতা, কিন্তু এই পরিবর্তনের পর মানুষকে **পরীক্ষা দেওয়া হয়।** 🌸 মূসা (আঃ) বুঝিয়ে দিলেন — “আল্লাহ তোমাদের উদ্ধার করবেন, কিন্তু তিনি দেখতে চান, তোমরা পরে কেমন আচরণ করো।” 🌿 তাই প্রকৃত ঈমানদার শুধু বিজয়ের অপেক্ষায় নয়, বরং বিজয়ের পরের পরীক্ষার প্রস্তুতিও রাখে। 🤍

উদাহরণ:
যেমন ঝড়ের পর রোদ আসে, কিন্তু সেই রোদই ফসল শুকিয়ে দিতে পারে যদি কেউ যত্ন না নেয় ☀️ তেমনি মুক্তির পর মানুষ যদি আল্লাহকে ভুলে যায়, তবে সেই মুক্তি আবার বিপদে রূপ নিতে পারে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • কষ্টের মাঝেও ধৈর্য হারানো উচিত নয় — আল্লাহর পরিকল্পনা সবসময় উত্তম।
  • আল্লাহ কেবল শত্রুকে ধ্বংস করেন না, বরং তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন।
  • বিজয়ের পরেও ঈমান ও ন্যায় রক্ষা করা সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
  • যে জাতি ধৈর্য ধরে, তারই জন্য আল্লাহ উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **ধৈর্য রাখো, কারণ আল্লাহর পরিকল্পনা কখনো ভুল হয় না; আর যদি তিনি বিজয় দেন, তখন দেখো তুমি কেমন আচরণ করো।** 🌿🤍
আয়াত ১৩০
وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ بِٱلسِّنِينَ وَنَقْصٍ مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَرُونَ
ওয়া লাকদ্‌ আখয়নাআ আলা ফিরআউনা বি-স্‌সিনীন ওয়া নাক্সিন মিনাল থামরাতি লা-আল্লাহুম ইয়ায্জাক্কারূন।
“নিশ্চয়ই আমরা ফিরআউনের লোকদের যারা ছিল তাদেরকে (ধরে) দীর্ঘ সময়ের অনাবৃষ্টি ও ফসলের হ্রাসে কষ্ট দিয়েছি— যাতে তারা স্মরণ করুক (প্রত্যাবর্তন করে)।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত জানাচ্ছে— আল্লাহ তাদের ওপর এমন সময়ের অভাব ও ফসলের ঘাটতি গ্রহণ করালেন যাতে মানুষ সতর্ক হয়, স্মরণ করে ও তাঁর দিকে ফিরে আসে। অর্থাৎ, কখনো কঠিনতা আল্লাহর হুকুমে তওবাহ, জ্বালাময় উপলব্ধি ও বিবেচনার মাধ্যম হতে পারে। 0

🌸 **কি ঘটল:** ফিরআউনের সমাজে একদিকে সমৃদ্ধির পাল্লা ছিল, অন্যদিকে আল্লাহর হিতাহিত কথাকে(ignore) করে অহংকার থাকত। আল্লাহ তাদেরকে ‘সাল’ (সেই সময়ের চাপে) ও ফসলের ক্ষয়ে এমন এক অবস্থা দিলেন, যাতে তারা তাদের আচরণ ও বিশ্বাস পুনর্বিবেচনা করে।

🌿 **গভীর উপলব্ধি:** - কঠিনতা ও অভাবকে আল্লাহ প্রায়ই একটি “পুনঃসম্মানোপলব্ধি”-এর সুযোগ বানান— যাতে মানুষ পুনরায় স্মরণ করে, লজ্জা পায় ও ফিরে আসে। - তবে লোকেরা প্রায়ই সময়ের ভালো-মন্দ দেখে দ্বন্দ্ব করে: ভালো হলে “আমার ফলে”— খারাপ হলে “নাবল/শাস্তি” বলে অন্যকে দোষারোপ করে। এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে— সংবেদনশীলতা ও আত্মপর্যালোচনা জরুরি। 1

উদাহরণ:
যদি একটি জাতি দীর্ঘ দিন সমৃদ্ধি পায়, তখন তারা আল্লাহর নিদর্শন ভুলে যায়; কিন্তু যখন মন্দা আসে (ফসল কমে, ঘাটতি হয়), তখন তারা উপলব্ধি পায়— ঠিক যেমন এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ কখনোই অকারণে শাস্তি দেন না; তা প্রায়ই মানুষের সংশোধন ও স্মরণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
  • সমৃদ্ধি ও অভাব— দুই অবস্থাতেই কৃতজ্ঞতা ও স্মরণ বজায় রাখতে হবে।
  • ভালো-মন্দ উভয় ঘটনারই পরীক্ষা-মূলক দিক আছে; আমাদের কাজ— ধৈর্য, তাওবা ও আল্লাহর নৈকট্য প্রার্থনা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
এই আয়াত শিখায়— **আবহাওয়া বা অর্থনৈতিক ওঠানামা আল্লাহর নিদর্শন;** স্মরণ রেখে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা আমাদের উত্তম কাজ। 2
আয়াত ১৩১
فَإِذَا جَآءَتْهُمُ ٱلْحَسَنَةُ قَالُوا۟ لَنَا هَـٰذِهِۦ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌۭ يَطَّيَّرُوا۟ بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥٓ ۗ أَلَآ إِنَّمَا طَـٰٓئِرُهُمْ عِندَ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
ফা-ইযা জা-আতহুমুল হাসানাতু ক্বালু লানা হাজিহি, ওয়াইন তুসিবহুম সাইয়্যাতুন ইয়াত্তায়্যরু বিউসা ওয়া মান মা‘আহু, আলা ইন্নামা তায়িরুহুম ‘ইন্দাল্লাহ, ওয়ালাকিন্না আকসারাহুম লা ইয়ালামূন।
“যখনই তাদের কাছে কোনো ভালো অবস্থা আসত, তারা বলত, ‘এ তো আমাদেরই প্রাপ্য।’ আর যখন কোনো বিপদ তাদের স্পর্শ করত, তখন তারা মূসা ও তার সঙ্গীদেরকে অমঙ্গলজনক মনে করত। জেনে রাখ, তাদের অমঙ্গল তো কেবল আল্লাহর কাছেই নির্ধারিত; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ এ আয়াতে ফিরআউনের জাতির মনোভাব বর্ণনা করেছেন — তারা ছিল **কৃতঘ্ন, আত্মকেন্দ্রিক ও ঈমানহীন।** যখনই সমৃদ্ধি, বৃষ্টি বা ফসল পেত — তারা বলত, “এ তো আমাদের বুদ্ধি, আমাদের পরিশ্রমের ফল!” 🌸 কিন্তু যখন খরা, দুর্ভিক্ষ বা কষ্ট আসত — তারা বলত, “এ সব মূসা ও তার অনুসারীদের কারণে!” 😔 🌿 অর্থাৎ, তারা নিজের গুনাহ বা অন্যায় না দেখে বরং নবী ও মুমিনদেরকেই দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করত।

🌸 **“يَطَّيَّرُوا۟ بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥٓ”** — “তারা মূসা ও তার সঙ্গীদেরকে অমঙ্গল মনে করত।” এখানে “তায়্যুর” মানে কুসংস্কার, অশুভ ধারণা করা। তারা ভাবত, মূসা (আঃ)-এর আগমনের পর থেকেই সব বিপদ এসেছে! 🌿 কিন্তু আল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন — **“أَلَآ إِنَّمَا طَـٰٓئِرُهُمْ عِندَ ٱللَّهِ”** — “তাদের ভাগ্য তো আল্লাহর কাছেই নির্ধারিত।” অর্থাৎ, সৌভাগ্য-অভাগ্য, ভালো-মন্দ সবই আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হয়; **মানুষের কুসংস্কারে নয়।**

🌸 আল্লাহ আরও বলেন — **“وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ”** — “কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।” কারণ, অজ্ঞতা ও অহংকার মানুষকে সত্য উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত করে। তারা চিন্তায় ডুবে গেল নিজের অহংকারে, অথচ **সব ঘটনার নেপথ্যে ছিল আল্লাহর পরীক্ষা ও সতর্কবাণী।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের এক চিরন্তন শিক্ষা দিচ্ছেন — **ভালো সময়ে কৃতজ্ঞ হও, খারাপ সময়ে আত্মসমালোচক হও।** কারণ উভয়ই আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা। 🌸 মানুষ যখন সফল হয়, তখন ভাবে — “এ তো আমার প্রাপ্য।” আর বিপদে পড়ে বলে — “অন্যের কারণে এটা ঘটেছে।” অথচ উভয় অবস্থাই আসে **আল্লাহর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।** 🌿 এই আয়াত আজকের সমাজেও গভীরভাবে প্রযোজ্য — আমরা যখন সমস্যায় পড়ি, তখন প্রায়ই অন্যকে দোষ দিই, কিন্তু নিজের ভুল, গুনাহ বা অবহেলাকে দেখি না।

উদাহরণ:
যেমন কেউ বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হলে বলে — “আবহাওয়া খারাপ!” কিন্তু নিজের অবহেলা ভুলে যায়। তেমনি ফিরআউনের জাতি বিপদকে নবী মূসার কারণে মনে করেছিল, অথচ আসল কারণ ছিল তাদেরই অন্যায়। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • কুসংস্কার ও দোষারোপ ঈমানের দুর্বলতার লক্ষণ।
  • ভালো-মন্দ উভয় অবস্থাই আল্লাহর পরীক্ষা — কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্য প্রয়োজন।
  • যে নিজের গুনাহ দেখে, সে সংশোধিত হয়; যে অন্যকে দোষ দেয়, সে অন্ধই থাকে।
  • আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কিছুই ঘটে না — সব ভাগ্য তাঁর ইচ্ছার অধীন।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَإِذَا جَآءَتْهُمُ ٱلْحَسَنَةُ قَالُوا۟ لَنَا هَـٰذِهِۦ ... أَلَآ إِنَّمَا طَـٰٓئِرُهُمْ عِندَ ٱللَّهِ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **ভালোতে কৃতজ্ঞ হও, বিপদে আল্লাহর দিকে ফিরো; দোষারোপ নয়, আত্মসমালোচনাই মুমিনের পথ।** 🌿🤍
আয়াত ১৩২
وَقَالُوا۟ مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِۦ مِنْ ءَايَةٍۢ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ
ওয়া ক্বালূ: মাহ্‌মা তা’তিনা বিহি মিন্‌ আয়াতিল্‌ লিতাসহারানা বিহা, ফামা নাহনু লাকা বিমু’মিনীন।
“তারা বলল — ‘তুমি যেকোনো নিদর্শনই আমাদের কাছে আনো না কেন, আমাদের জাদু দেখানোর জন্যই আনছো; তাই আমরা কখনোই তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব না।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ ফিরআউনের জাতির জেদি মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তারা মূসা (আঃ)-এর দেখানো প্রতিটি নিদর্শন — যেমন লাঠি সাপ হওয়া, হাত উজ্জ্বল হওয়া, বৃষ্টির পর জীবনের সঞ্চার — সবকিছুকেই “জাদু” বলে অস্বীকার করেছিল।

🌸 তারা বলল — **“مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِۦ مِنْ ءَايَةٍۢ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا”** অর্থাৎ, “তুমি যতই নিদর্শন দেখাও, তা শুধু আমাদের ওপর জাদু করার জন্য।” 🌿 তাদের এই কথায় বোঝা যায় — **যখন হৃদয় অহংকারে ভরে যায়, তখন সত্যকে দেখেও তা মেনে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।**

🌸 তারা বলল — **“فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ”** — “আমরা কখনো তোমার প্রতি বিশ্বাস করব না।” অর্থাৎ, তারা নিজেদের অবিশ্বাসের প্রতিজ্ঞা করল — যেন সত্যকে প্রত্যাখ্যান করাটাই তাদের “অভিমানী পরিচয়” হয়ে দাঁড়াল। 🌿 এটি এক আত্মপ্রবঞ্চনা — কারণ তারা জানত মূসা (আঃ)-এর কাজ কোনো জাদু নয়, কিন্তু তারা **ক্ষমতার ভয়ে** সত্য অস্বীকার করল।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এ আয়াতে আল্লাহ মানুষকে দেখাচ্ছেন — কখনো অস্বীকারের কারণ যুক্তি নয়, **অহংকার**। ফিরআউনের জাতি জানত মূসা (আঃ) সত্যের বাহক, কিন্তু সত্য মানলে তাদের রাজনীতি, ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব ভেঙে যেত। 🌸 তাই তারা যুক্তির বদলে ব্যঙ্গ ও অভিযোগের আশ্রয় নিল — “তুমি আমাদেরকে জাদু করছো।” অথচ সত্যের সামনে জাদু কবে টেকে? 🌿 🌿 এই জেদ ও অস্বীকারের কারণেই আল্লাহ পরবর্তী আয়াতগুলোতে (১৩৩–১৩৫) তাদের ওপর **বিপর্যয়, রক্ত, ব্যাঙ, উকুন, পঙ্গপাল** প্রভৃতি নিদর্শন পাঠাবেন — যাতে তারা বুঝতে পারে, এটি কোনো জাদু নয়, বরং **আল্লাহর শাস্তি।** ⚡

উদাহরণ:
যেমন কেউ জানে, সূর্য আলো দেয়; তবু বলে — “না, এটা কেবল চোখের ধাঁধা।” ঠিক তেমনি মূসার জাতি সত্য দেখেও বলেছিল — “এ তো জাদু!” 🌸 🌿 এটা ছিল **অহংকারের অন্ধত্ব।** যখন মানুষ নিজের ইগোকে ঈমানের উপরে রাখে, তখন সে সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য মনে করতে শুরু করে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • যে হৃদয় অহংকারে ভরে যায়, সে সত্যকে কখনো গ্রহণ করতে পারে না।
  • আল্লাহর নিদর্শন দেখেও যারা অস্বীকার করে, তাদের পরিণাম ভয়াবহ।
  • অবিশ্বাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক রূপ হলো “সচেতন অস্বীকার”।
  • সত্যের প্রতি প্রতিরোধ আসলে নিজের পরাজয়ের স্বীকৃতি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِۦ مِنْ ءَايَةٍۢ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যখন মানুষ নিজের ইচ্ছাকেই সত্য মনে করে, তখন আল্লাহর নিদর্শনও তার কাছে কোনো প্রভাব ফেলে না।** 🌿🤍
আয়াত ১৩৩
فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلْجَرَادَ وَٱلْقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَايَـٰتٍۢ مُّفَصَّلَـٰتٍۢ فَٱسْتَكْبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ قَوْمًۭا مُّجْرِمِينَ
ফা-আর্সালনা আলাইহিমুত তুফানা, ওয়াল জরাদা, ওয়াল কুম্মালা, ওয়াদ্‌ দাফাদিআ, ওয়াদ্‌ দামা, আয়াতিম্‌ মুফাসসালাতিন, ফাস্তাকবারূ, ওয়াকানূ কওমান মুজরিমীন।
“অতঃপর আমরা তাদের ওপর পাঠালাম — প্রবল বন্যা, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ এবং রক্ত — (সবগুলোই ছিল) স্পষ্ট স্পষ্ট নিদর্শন। তবুও তারা অহংকারে অটল থাকল এবং তারা ছিল এক অপরাধী জাতি।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ ফিরআউনের জাতির ওপর পাঠানো **পাঁচটি নিদর্শন** বা শাস্তির কথা বলেছেন, যেগুলো ছিল তাদের জন্য সতর্কবার্তা ও তওবার আহ্বান। কিন্তু তারা প্রতিবারই অস্বীকার ও অহংকারে অটল থাকল।

🌸 **১️⃣ তুফান (প্রবল বন্যা):** আল্লাহ এমন এক বন্যা পাঠালেন যা তাদের ফসল, ঘরবাড়ি ও সম্পদ ধ্বংস করে দিল। জমিন কাদামাটিতে ভরে গেল, জীবন অচল হয়ে পড়ল। তারা বুঝল — এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, কিন্তু তাও তারা ফিরে এল না।

🌸 **২️⃣ জরাদ (পঙ্গপাল):** তারপর আল্লাহ পাঠালেন অসংখ্য পঙ্গপাল। তারা আকাশ ঢেকে ফেলল, ফসল ও গাছপালা সব খেয়ে ফেলল। মানুষ হতাশ হয়ে মূসা (আঃ)-এর কাছে দোয়া চাইল — কিন্তু বিপদ কেটে গেলে আবার পুরনো পথে ফিরে গেল।

🌸 **৩️⃣ কুম্মাল (উকুন):** এরপর এল উকুনের আক্রমণ। তাদের শরীর, কাপড়, ঘরবাড়ি সব জায়গায় উকুন ছেয়ে গেল। ঘুম, শান্তি, কাজ — কিছুই রইল না। কিন্তু তবুও তারা তওবা করল না।

🌸 **৪️⃣ দাফাদিআ (ব্যাঙ):** এরপর এল ব্যাঙের প্লাবন! পানি, খাদ্য, পাত্র, এমনকি বিছানাতেও ব্যাঙ ভরে গেল। তারা যেদিকে তাকায়, ব্যাঙের শব্দ — ক CROAK! CROAK! জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল।

🌸 **৫️⃣ দাম (রক্ত):** সর্বশেষ, আল্লাহ তাদের পানিকে রক্তে পরিণত করলেন। তারা পানি খেতে গেলেই তা রক্ত হয়ে যেত। কিন্তু বনী ইসরাঈলদের পানি ছিল স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ 🌸 — এতে প্রমাণিত হলো, এটি আল্লাহরই নিদর্শন।

🌿 তবুও আল্লাহ বলেন — **“فَٱسْتَكْبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ قَوْمًۭا مُّجْرِمِينَ”** — “তারা অহংকার করল এবং অপরাধী জাতি রইল।” 🌸 এটাই ছিল তাদের আত্মবিনাশের সূচনা। কারণ, **নিদর্শন দেখে ফিরে না আসা মানে অন্ধ হওয়া, আর অহংকারে অন্ধরা কখনো হিদায়াত পায় না।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহর শাস্তি কখনো হঠাৎ আসে না; তা ধীরে ধীরে আসে — সতর্কতা হিসেবে। কিন্তু যারা বারবার তা উপেক্ষা করে, তাদের ওপরই পতিত হয় চূড়ান্ত ধ্বংস। 🌸 এই পাঁচটি শাস্তি শুধু অতীতের ঘটনা নয়, বরং আজকের মানুষকেও মনে করিয়ে দেয় — “প্রত্যেক নিদর্শন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বার্তা।” 🌿 যেমন আজও খরা, বন্যা, রোগ, দুর্ভিক্ষ — এগুলো আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যম।

উদাহরণ:
যেমন একজন শিক্ষক যখন ছাত্রকে সতর্ক করেন বারবার, কিন্তু সে শুনে না, তখন শিক্ষক কঠিন শাস্তি দেন — আল্লাহও তেমনই তাঁর বান্দাদের ধীরে ধীরে সতর্ক করেন। কিন্তু যারা বারবার ফিরেও ফিরে না আসে, তাদের জন্য থাকে কঠোর পরিণতি। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর নিদর্শনকে জাদু বা কাকতালীয় বলা বড় অপরাধ।
  • প্রত্যেক বিপদ আল্লাহর সতর্কবার্তা, যা মানুষকে তওবার দিকে আহ্বান করে।
  • অহংকার ও জেদ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
  • আল্লাহর নিদর্শন বারবার দেখেও যে ফিরে আসে না, তার অন্তর অন্ধ হয়ে যায়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلْجَرَادَ وَٱلْقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَايَـٰتٍۢ مُّفَصَّلَـٰتٍۢ فَٱسْتَكْبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ قَوْمًۭا مُّجْرِمِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যখন মানুষ বারবার সত্যকে অস্বীকার করে, তখন আল্লাহ তাঁর নিদর্শনগুলোকে “শাস্তি”তে পরিণত করেন।** 🌿🤍
আয়াত ১৩৪
وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ ٱلرِّجْزُ قَالُوا۟ يَـٰمُوسَى ٱدْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ ۖ لَئِن كَشَفْتَ عَنَّا ٱلرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ
ওয়ালাম্মা ওয়াকা‘আ আলাইহিমুর্‌ রিজ্‌যু, ক্বালূ: ইয়ামূসা, উদ‘উ লানা রাব্বাকা, বিমা আহিদা ‘ইন্দাকা — লা’ইন্‌ কাশাফতা ‘আন্‌নার্‌ রিজ্‌যা লানু’মিনান্না লাকা, ওা লা নুরসিলান্না মা‘আকা বানী ইসরাঈল।
“আর যখন তাদের ওপর শাস্তি নেমে এল, তারা বলল— ‘হে মূসা! তোমার প্রভুর কাছে আমাদের জন্য দোয়া করো— তোমার কাছে তাঁর যে অঙ্গীকার আছে তার মাধ্যমে। যদি তুমি আমাদের থেকে এই শাস্তি দূর করো, তবে আমরা অবশ্যই তোমার প্রতি ঈমান আনব এবং অবশ্যই বনী ইসরাঈলদেরকে তোমার সঙ্গে যেতে দেব।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 পরপর নিদর্শন (তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত) যখন তাদের ওপর শাস্তি হয়ে নেমে এলো, তখন তারা অসহায় হয়ে মূসা (আঃ)-এর কাছে মিনতি করল: “আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে দোয়া করো।” তারা প্রতিশ্রুতি দিল— শাস্তি দূর হলে তারা ঈমান আনবে এবং বনী ইসরাঈলকে মুক্তি দেবে। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি ছিল **ভয় থেকে উচ্চারিত**, সত্যের ভালোবাসা থেকে নয়— তাই পরবর্তীতে তারা কথা ভাঙল।

কেন “তোমার প্রভু” বলল?
🌸 তারা এখনো নিজেদের প্রভু হিসেবে আল্লাহকে মানেনি; তাই বলল “তোমার প্রভু”— অর্থাৎ মূসার মর্যাদা ভরসা করে দোয়া চাইলো, কিন্তু নিজেরা আল্লাহর সামনে নত হতে রাজি হলো না।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত দেখায়— কষ্ট মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনে, কিন্তু **অকৃতজ্ঞতা** (শান্তি পেয়ে ভুলে যাওয়া) মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। বিপদে কান্না করা সহজ; শান্তিতে কৃতজ্ঞ থাকা— এটাই মুমিনের পরীক্ষা।

উদাহরণ:
🌸 ঝড়ে জাহাজ ডুবে গেলে সবাই আল্লাহকে ডাকে; তীরে উঠেই অনেকে আবার গাফেলতায় ফিরে যায়। ফিরআউনের জাতিও ঠিক তেমন— বিপদে “ইয়া মূসা!”, আর শান্তিতে “আমরা ফিরআউনের জাতি!”

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • শুধু বিপদের ঈমান নয়— শান্তির কৃতজ্ঞতাই সত্যিকারের ঈমানের প্রমাণ।
  • অঙ্গীকার যদি অন্তরের পরিবর্তন না আনে, তবে তা মুখের উচ্চারণই থেকে যায়।
  • আল্লাহর সাহায্য চাইলে “তোমার রব” নয়— “আমাদের রব”-এর কাছে নিজেই নত হও।
  • বিপদ দূর হলে গাফেলতায় না পড়ে শোকর ও আনুগত্যে স্থির থাকা জরুরি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**বিপদে দোয়া— সহজ; শান্তিতে শোকর— মুমিনের পরিচয়।** প্রতিশ্রুতি তখনই সত্য, যখন শাস্তি দূর হলেও তা অটুট থাকে। 🤍
আয়াত ১৩৫
فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ ٱلرِّجْزَ إِلَىٰٓ أَجَلٍۢ هُمۡ بَٰلِغُوهُ إِذَا هُمۡ يَنكُثُونَ
ফালাম্মা কাশাফনা ‘আনহুমুর রিজজা ইলা আজালিন হুম বালিগুহু, ইযা হুম ইয়ানকুছূন।
“অতঃপর যখন আমরা তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেই শাস্তি দূর করে দিলাম, তখনই তারা আবার নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আগের আয়াতে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল — “হে মূসা, যদি আল্লাহ শাস্তি দূর করেন, আমরা ঈমান আনব!” কিন্তু আল্লাহ যখন দয়া করে তাদের শাস্তি তুলে নিলেন, তখনই তারা আবার মিথ্যা বলল ও পুরনো পথে ফিরে গেল 😔

🌸 **“فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ ٱلرِّجْزَ”** — অর্থাৎ, “যখন আমরা তাদের ওপরের শাস্তি দূর করলাম।” আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করলেন — যদি তারা সত্যি তওবা করে! কিন্তু তাদের তওবা ছিল **ভয়-ভিত্তিক, ঈমান-ভিত্তিক নয়।** 🌿 তাই শাস্তি দূর হতেই তারা আবার কুফরিতে ফিরে গেল। যেমন বলা হয়েছে — **“إِذَا هُمۡ يَنكُثُونَ”** — “তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করল।” অর্থাৎ, তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল কেবল জিহ্বার শব্দ, হৃদয়ের কোনো আমানত নয়।

🌸 আল্লাহর এ দয়া তাদের জন্য এক শেষ সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা দয়াকে দুর্বলতা ভেবে ভুল করল। তারা ভাবল, “যেহেতু বিপদ কেটে গেছে, আমরা নিরাপদ!” অথচ আল্লাহর দয়া কখনো চিরস্থায়ী নয়, যদি বান্দা তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ না করে 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষকে এক গভীর সত্য শেখায় — **যে আল্লাহর দয়া দেখে তওবা করে না, তার অন্তর পাথর থেকেও কঠিন।** 🌸 বিপদে তওবা করা সহজ, কিন্তু শান্তিতে ঈমান ধরে রাখা কঠিন। ফিরআউনের জাতি বিপদে কেঁদেছিল, কিন্তু স্বস্তিতে অকৃতজ্ঞ হয়ে উঠেছিল। 🌿 তাই আল্লাহ তাদের ধীরে ধীরে অবকাশ দিলেন — “إِلَىٰٓ أَجَلٍۢ هُمۡ بَٰلِغُوهُ” — অর্থাৎ, “এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।” সেই সময় শেষ হলে, শাস্তি আবার ফিরে এল — এবার তা ধ্বংসের আকারে ⚡

🌸 এ আয়াত আমাদের জন্যও সতর্কবাণী — আল্লাহ যখন কোনো কষ্ট দূর করেন, তখন সেটি আসলে “পরীক্ষা-পরবর্তী অবকাশ।” যদি মানুষ সে অবকাশে সৎ না হয়, তবে সেই অবকাশই হয় তার শেষ সুযোগ 💔

উদাহরণ:
যেমন একজন ছাত্র পরীক্ষায় ফেল করার পর শিক্ষক তাকে বলে— “আর একবার সুযোগ দিলাম।” কিন্তু সে আবার অবহেলা করলে, এবার আর সুযোগ থাকে না। ঠিক তেমনি আল্লাহও বান্দাকে বারবার অবকাশ দেন, যেন সে ফিরে আসে, কিন্তু অবহেলা করলে শেষমেশ শাস্তিই নামে। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর দয়া কোনো দুর্বলতা নয়; এটি সংশোধনের সুযোগ।
  • যে বিপদে দোয়া করে, তাকে শান্তিতেও কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।
  • অঙ্গীকার ভঙ্গ করা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
  • দয়া ও অবকাশ— উভয়ই আল্লাহর পরীক্ষা, এর অবহেলা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ ٱلرِّجْزَ ... إِذَا هُمۡ يَنكُثُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর দয়া যখন তোমার কষ্ট দূর করে, তখন ভুলে যেও না; কারণ অকৃতজ্ঞতার পর আর সুযোগ থাকে না।** 🌿🤍
আয়াত ১৩৬
فَٱنتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَـٰهُمْ فِى ٱلْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنْهَا غَـٰفِلِينَ
ফানতাকামনা মিনহুম, ফা-আগ্রাকনাহুম ফিল ইয়াম্মি, বি-আন্নাহুম কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা, ওয়াকানূ আনহা গাফিলীন।
“অতঃপর আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম — এবং তাদেরকে সমুদ্রের মধ্যে নিমজ্জিত করলাম, কারণ তারা আমাদের নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছিল এবং তা থেকে সম্পূর্ণভাবে গাফেল ছিল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত আল্লাহর ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত দৃশ্য। বহু সতর্কবার্তা, বহু নিদর্শন ও শাস্তির পরও ফিরআউনের জাতি সত্য অস্বীকার করে চলেছিল। অবশেষে আল্লাহ ঘোষণা করলেন — **“ফানতাকামনা মিনহুম”** — “অতঃপর আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম।” ⚡ 🌸 এটি কোনো প্রতিহিংসা নয়, বরং ন্যায়বিচারের প্রতিফল। কারণ তারা অহংকার করে বলেছিল — “আমরা প্রভাবশালী, মূসা দুর্বল!” অথচ আল্লাহ দেখিয়ে দিলেন — **“ক্ষমতার মালিক কেবল আমিই।”**

🌿 **“فَأَغْرَقْنَـٰهُمْ فِى ٱلْيَمِّ”** — “আমরা তাদেরকে সমুদ্রের মধ্যে ডুবিয়ে দিলাম।” এটি সেই অলৌকিক ঘটনা — যখন মূসা (আঃ) লাঠি মেরে সাগর ভাগ করে দেন, বনী ইসরাঈল নিরাপদে পার হয়, আর ফিরআউন ও তার বাহিনী সেই একই সমুদ্রেই ডুবে যায় 🌊 🌸 ইতিহাসে এ এক অনন্য শিক্ষা — **যে আল্লাহর পথে বাধা দেয়, আল্লাহ সেই পথকেই তার ধ্বংসের কারণ বানিয়ে দেন।**

🌿 **“بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا”** — “কারণ তারা আমাদের নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছিল।” অর্থাৎ, তাদের ধ্বংসের মূল কারণ ছিল **অবিশ্বাস ও অহংকার।** আল্লাহর চিহ্নগুলো বারবার দেখা সত্ত্বেও তারা বলেছিল, “এ সব জাদু!” 🌸 এই অবিশ্বাসের ফলেই তারা **আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত** হলো।

🌿 **“وَكَانُوا۟ عَنْهَا غَـٰفِلِينَ”** — “এবং তারা ছিল এসব থেকে গাফেল।” অর্থাৎ, তারা আয়াতগুলো শুনত, কিন্তু চিন্তা করত না; দেখত, কিন্তু শিক্ষা নিত না; বুঝত, কিন্তু হৃদয়ে স্থান দিত না। 🌸 গাফেলতা— কুফরির সবচেয়ে বড় জ্বালানি। কারণ, **যে চিন্তা করে না, সে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যায়।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত প্রমাণ করে— আল্লাহর ধৈর্য সীমাহীন, কিন্তু চূড়ান্ত ন্যায়বিচার অনিবার্য। তিনি বারবার সতর্ক করেন, সুযোগ দেন, অবকাশ দেন; কিন্তু যখন মানুষ তাতে সাড়া দেয় না, তখন আল্লাহর “রহমত” রূপান্তরিত হয় “আযাবে।” ⚡ 🌸 ফিরআউনের জাতি প্রতিটি সুযোগ হারিয়েছিল — তারা **দেখেছে**, **জেনেছে**, কিন্তু **বিশ্বাস করেনি।** তাই সমুদ্রের পানি হলো তাদের কবর। 🌿 এই আয়াত আজও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — **যদি গাফেল হয়ে পড়ি, তবে আমাদের আশেপাশের নিয়ামতই আমাদের পরীক্ষায় ফেলে দিতে পারে।**

উদাহরণ:
যেমন আগুন যে আলো দেয়, সেই আগুনই অসতর্ক হলে পুড়িয়ে দেয়। তেমনি আল্লাহর নিদর্শন মানুষকে পথ দেখায়, কিন্তু যে গাফেল থাকে, সেই একই নিদর্শন হয় তার শাস্তি। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সতর্কবাণীকে অবহেলা করা ধ্বংসের পথ।
  • অহংকার মানুষকে এমন অন্ধ করে যে, সে নিজের পতনও দেখে না।
  • আল্লাহর প্রতিশোধ ন্যায়বিচারের প্রতিফল — তা অন্যায় নয়।
  • আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে গাফেলতা কুফরির প্রথম ধাপ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَٱنتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَـٰهُمْ فِى ٱلْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنْهَا غَـٰفِلِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যখন মানুষ অহংকারে সত্যকে অস্বীকার করে, তখন আল্লাহ সেই অহংকারকেই তার ধ্বংসের কারণ বানিয়ে দেন।** 🌿🤍
আয়াত ১৩৭
وَأَوْرَثْنَا ٱلْقَوْمَ ٱلَّذِينَ كَانُوا۟ يُسْتَضْعَفُونَ مَشَـٰرِقَ ٱلْأَرْضِ وَمَغَـٰرِبَهَا ٱلَّتِى بَـٰرَكْنَا فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ بِمَا صَبَرُوا۟ ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُۥ وَمَا كَانُوا۟ يَعْرِشُونَ
ওয়া আওরাছনা আল্‌ কওমাল্লাযীনা কানো ইউস্তদ্‌‘আফূনা মাশারিকাল্‌ আরদি ওয়া মাগারিবাহা আল্লাতী বারাকনা ফিহা, ওয়া তাম্মাত্‌ কালিমাতু রব্বিকাল্‌ হুসনা ‘আলা বনী ইসরাঈলা বিমা সাবারূ, ওয়া দাম্মারনা মা কানা ইয়াসনাউ ফিরআউনু ওয়া কওমুহু ওয়া মা কানো ইয়াআরিশূন।
“আর আমরা ঐ জাতিকে, যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল, তাদের উত্তরাধিকারী করেছিলাম সেই ভূমির পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের, যাকে আমরা বরকতময় করেছিলাম। আর তোমার প্রভুর উত্তম প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হলো বনী ইসরাঈলের প্রতি, তাদের ধৈর্যের কারণে। আর আমরা ধ্বংস করে দিলাম ফিরআউন ও তার জাতি যা কিছু নির্মাণ করেছিল এবং যা কিছু তারা উঁচু করে তুলেছিল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে জানাচ্ছেন — যাদেরকে ফিরআউনের জাতি দাস বানিয়েছিল, যাদেরকে নির্যাতন করেছিল, সেই বনী ইসরাঈলদেরই আল্লাহ জমিনের উত্তরাধিকারী করলেন 🌸

🌸 **“وَأَوْرَثْنَا ٱلْقَوْمَ ٱلَّذِينَ كَانُوا۟ يُسْتَضْعَفُونَ”** — “আমরা ঐ জাতিকে উত্তরাধিকারী করলাম, যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো।” — অর্থাৎ, যারা ফিরআউনের চোখে তুচ্ছ ছিল, আল্লাহর দৃষ্টিতে তারাই হলো বিজয়ী। 🌿 এটি আল্লাহর এক মহান নিয়ম: **যারা ধৈর্যধারণ করে, শেষ বিজয় তাদেরই জন্য।** পৃথিবীর ক্ষমতা ও মর্যাদা চিরকাল অত্যাচারীর হাতে থাকে না।

🌸 **“مَشَـٰرِقَ ٱلْأَرْضِ وَمَغَـٰرِبَهَا ٱلَّتِى بَـٰرَكْنَا فِيهَا”** — অর্থাৎ, “আমরা তাদেরকে বরকতময় ভূমির পূর্ব ও পশ্চিম দিকের মালিক বানালাম।” এখানে বোঝানো হয়েছে — **শাম (প্যালেস্টাইন ও সিরিয়া অঞ্চল)**, যা নবীদের ভূমি, বরকতময় ও ফলপ্রসূ। 🌿 আল্লাহ তাদের সেই জমিনে মর্যাদা দিলেন, যা একসময় ফিরআউনের দাসত্বের নিচে ছিল।

🌸 **“وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ بِمَا صَبَرُوا۟”** — “তোমার প্রভুর উত্তম প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হলো বনী ইসরাঈলের প্রতি, তাদের ধৈর্যের কারণে।” অর্থাৎ, তাদের দীর্ঘ নির্যাতন, কষ্ট ও ধৈর্য অবশেষে সফলতা পেল 🌸 তারা প্রতিশ্রুত মুক্তি ও স্বাধীনতা লাভ করল। 🌿 এটি দেখায় — **ধৈর্য শুধু সহ্য নয়, বরং আল্লাহর প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা।** যে ধৈর্য ধরে, আল্লাহ তার পরিণতি উত্তম করেন।

🌸 **“وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُۥ وَمَا كَانُوا۟ يَعْرِشُونَ”** — “আর আমরা ধ্বংস করে দিলাম ফিরআউন ও তার জাতির সব কাজ ও নির্মাণ।” অর্থাৎ, তাদের রাজপ্রাসাদ, দুর্গ, সেতু, ও বিশাল স্থাপনাগুলো সবই সমুদ্রে বিলীন হলো 🌊 তারা যে গৌরব নিয়ে অহংকার করত, তা আল্লাহ মুহূর্তেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন। 🌿 **তারা ভেবেছিল তাদের সভ্যতা অমর, কিন্তু আল্লাহ দেখালেন — ঈমানহীন সভ্যতা চিরস্থায়ী হয় না।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক চিরন্তন শিক্ষা দেয় — পৃথিবীর ক্ষমতা চিরকাল কারও হাতে থাকে না। আল্লাহ এক জাতিকে পরীক্ষা করেন, আরেক জাতিকে উত্তরাধিকার দেন। **অত্যাচারীরা কখনো স্থায়ী নয়, কিন্তু ধৈর্যশীলরা স্থায়ী সম্মান পায়।** 🌸 ধৈর্যই বিজয়ের মূল চাবিকাঠি। আল্লাহ বলেন — “নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” *(সূরা আল-বাকারা ২:১৫৩)* 🌿 এই আয়াতে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হলো — ফিরআউনের পতন, বনী ইসরাঈলের মুক্তি, এবং জমিনে তাদের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা।

উদাহরণ:
যেমন বীজকে অন্ধকার মাটির নিচে ধৈর্য ধরতে হয়, তারপরই সে আলো দেখে অঙ্কুরিত হয় 🌱 তেমনি ধৈর্যবান মুমিনও কষ্ট সহ্য করে একদিন আলোয় উদ্ভাসিত হয়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • ধৈর্যই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পথ।
  • অত্যাচার কখনো স্থায়ী নয়; আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরই উন্নত করেন।
  • ফিরআউনের মতো অহংকার যতই বড় হোক, আল্লাহর এক নির্দেশই যথেষ্ট ধ্বংসের জন্য।
  • আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কখনো মিথ্যা নয়, তবে তা ধৈর্য ও ঈমানের পরীক্ষার পর পূর্ণ হয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ بِمَا صَبَرُوا۟”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **ধৈর্যশীলদের হাতে একদিন বিজয় আসবেই, কারণ আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কখনো ব্যর্থ হয় না।** 🌿🤍
আয়াত ১৩৮
وَجَـٰوَزْنَا بِبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱلْبَحْرَ فَأَتَوْا۟ عَلَىٰ قَوْمٍۢ يَعْكُفُونَ عَلَىٰٓ أَصْنَامٍۢ لَّهُمْ قَالُوا۟ يَـٰمُوسَى ٱجْعَل لَّنَآ إِلَـٰهًۭا كَمَا لَهُمْ ءَالِهَةٌۭ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌۭ تَجْهَلُونَ
ওয়া জাওয়াজনা বিবানী ইসরাঈলা আল-বাহরা, ফা’আতাউ ‘আলা কওমিন ইয়াকুফূনা ‘আলা অসনামিল্লাহুম, ক্বালূ ইয়ামূসা, ইজ‘আল লানাআ ইলাহান কামা লাহুম আ’লিহাহ, ক্বালা ইন্নাকুম কওমুন তাজহালূন।
“আর আমরা বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম, তারপর তারা এমন এক জাতির কাছে এল, যারা নিজেদের মূর্তিগুলোর উপাসনায় নিমগ্ন ছিল। তখন তারা বলল, ‘হে মূসা! আমাদের জন্যও এমন এক উপাস্য বানিয়ে দাও, যেমন তাদের উপাস্য আছে।’ মূসা বললেন, ‘তোমরা সত্যিই এক অজ্ঞ জাতি!’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে অলৌকিকভাবে সমুদ্র পার করিয়ে দিলেন — যেখানে ফিরআউনের বাহিনী ডুবে গেল, আর তারা নিরাপদে পার হলো 🌊 এটি ছিল এক বিশাল নিদর্শন ও মুক্তির দিন।

কিন্তু সমুদ্র পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরই তারা এমন এক জাতির পাশে এল, যারা কাঠ ও পাথরের মূর্তি বানিয়ে তাতে উপাসনা করছিল। তাদের চোখে সেই দৃশ্য **“আকর্ষণীয়”** মনে হলো — এবং তারা মূসা (আঃ)-কে বলল: > “হে মূসা! আমাদের জন্যও এমন এক ইলাহ বানিয়ে দাও, যেমন তাদের আছে।”

🌸 কত বড় অকৃতজ্ঞতা! যারা কয়েক ঘণ্টা আগেই আল্লাহর করুণা দেখে ফিরআউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল, তারা আবার মূর্তিপূজার চিন্তা করছে! 🌿 এটি দেখায় — **মানুষের অন্তর দ্রুত ভুলে যায়, যদি তা আল্লাহর স্মরণে ভরা না থাকে।**

🌸 মূসা (আঃ) সঙ্গে সঙ্গেই কঠোরভাবে তাদের তিরস্কার করলেন: **“إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ”** — “তোমরা এক অজ্ঞ জাতি!” অর্থাৎ, তোমরা এখনো বুঝতে পারোনি, কে তোমাদের রক্ষা করল, কে তোমাদের মুক্তি দিল, আর কে প্রকৃত উপাস্য। 🌿 “অজ্ঞতা” এখানে শুধুই জ্ঞানের অভাব নয়, বরং হৃদয়ের অন্ধত্ব, যা মানুষকে কুফরির দিকে ঠেলে দেয়।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষের স্বভাবের এক দিক উন্মোচন করে — মানুষ যত বড় নিদর্শনই দেখুক না কেন, যদি অন্তর আল্লাহর ভয়ে না ভরে, তবে সে আবার ভুল পথে ফিরে যায়। 🌸 বনী ইসরাঈল যেন অনেক আধুনিক মুসলমানেরই প্রতিচ্ছবি — বিপদে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, আর শান্তিতে “দুনিয়ার দেবতা”! 💔 🌿 তারা সমুদ্রের আল্লাহর ক্ষমতা দেখল, তবুও মূর্তিপূজার প্রতি আকর্ষণ হারায়নি। কারণ তাদের হৃদয় এখনো **তাওহিদের মর্ম** বুঝে ওঠেনি।

উদাহরণ:
যেমন একজন মানুষ বিপদে আল্লাহর দোয়া করে, কিন্তু পরে অন্ধভাবে অন্যের অনুকরণে চলে যায় — বনী ইসরাঈলও তেমনি, তারা অন্য জাতির সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়ে সত্যকে ভুলে গেল 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • মানুষের হৃদয় সহজে ভুলে যায়; তাই আল্লাহর স্মরণ স্থায়ী করা জরুরি।
  • অন্য জাতির অনুকরণে বিশ্বাস পরিবর্তন করা মারাত্মক ভুল।
  • তাওহিদ শিখা শুধু মুখের নয়, অন্তরের গভীরে গেঁথে নিতে হয়।
  • অজ্ঞতা (জাহালাত) ঈমানের সবচেয়ে বড় শত্রু।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে পার করালেন, অথচ তাদের হৃদয় এখনো মূর্তির দিকে টান অনুভব করল। এ থেকে শিক্ষা — **শারীরিক মুক্তি কিছু নয়, যদি হৃদয় এখনো দাসত্বে বন্দী থাকে।**

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌۭ تَجْهَلُونَ”** 🤍 — “তোমরা এক অজ্ঞ জাতি!” 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে জাতি তাওহিদ ভুলে যায়, সে যত মুক্তই হোক, আসলে সে আবার দাসত্বে ফিরে যায়।** 🌿🤍
আয়াত ১৩৯
إِنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ مُتَبَّرٌۭ مَّا هُمْ فِيهِ وَبَـٰطِلٌۭ مَّا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
ইন্না হাউলাআই মুতাব্বারুম্‌ মা হুম্‌ ফিহি, ওয়া বাতিলুম্‌ মা কানোয়া ইয়ামালূন।
“নিশ্চয়ই এরা (যারা মূর্তি উপাসনা করছে) ধ্বংসপ্রাপ্ত তাদের কাজে, এবং তাদের সমস্ত কর্মই বৃথা।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলকে সতর্ক করে বললেন — “যাদের তুমি অনুকরণ করতে চাও, তাদের পথ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে!” 🌸 **“إِنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ مُتَبَّرٌۭ مَّا هُمْ فِيهِ”** — “তারা যে অবস্থায় আছে, তা ধ্বংসপ্রাপ্ত।” অর্থাৎ, তাদের বিশ্বাস, তাদের জীবনপদ্ধতি, এবং তাদের উপাসনা সবই নিঃশেষ হয়ে যাবে।

🌿 **“وَبَـٰطِلٌۭ مَّا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ”** — “তাদের কাজগুলোও বাতিল।” অর্থাৎ, তারা যতই পরিশ্রম করুক, আল্লাহর কাছে তার কোনো মূল্য নেই, কারণ তা তাওহিদবিহীন, শিরকভিত্তিক কাজ। 🌸 এই আয়াত মানুষকে শেখায় — **যে ঈমান নেই, তার কর্মেরও কোনো ভিত্তি নেই।** ঠিক যেমন পাথরের ওপর গাছ রোপণ করলে, তা কখনো শেকড় গাঁথতে পারে না।

🌿 মূসা (আঃ)-এর এ বক্তব্যে এক স্পষ্ট ঘোষণা ছিল — “মূর্তি, প্রতিমা, বা মানুষের বানানো উপাস্য— কিছুই টিকে থাকবে না।” এগুলো মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে টানে, কিন্তু আল্লাহর কাছে এগুলোর কোনো মানে নেই।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহর দৃষ্টিতে **মূল্যবান কাজ সেই যা ঈমানের সঙ্গে সম্পন্ন হয়।** ঈমান ছাড়া আমল অন্ধকারে তীর ছোঁড়ার মতো — তা লক্ষ্যভ্রষ্ট ও অর্থহীন। 🌸 মূসা (আঃ) এখানে শুধু শিরককারীদের ধ্বংসের কথা বলেননি, বরং তাঁর জাতিকে সতর্ক করেছেন, যাতে তারা আবার একই ভুল না করে। 🌿 এই আয়াত আজকের মুসলমানদের জন্যও সতর্কবার্তা — কেবল নামাজ, দান বা রোজা নয়, **যদি অন্তর তাওহিদে অটল না থাকে, তবে সেই কাজগুলোও ফলহীন হয়ে যায়।**

উদাহরণ:
যেমন কেউ সুন্দর ঘর বানায়, কিন্তু তার ভিত্তি যদি বালির ওপর হয়, তবে এক ঝড়েই তা ভেঙে যায়। ঠিক তেমনি শিরকভিত্তিক আমল, যত বড়ই হোক, আল্লাহর কাছে কোনো মর্যাদা পায় না 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • তাওহিদ (একত্ববাদ) ছাড়া কোনো কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
  • যে শিরকে লিপ্ত, সে যতই সফল হোক, তার অন্তিম পরিণতি ধ্বংস।
  • অন্ধ অনুকরণ মানুষকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে।
  • মূসা (আঃ)-এর এই সতর্কতা আজও প্রযোজ্য — ঈমানের শুদ্ধতা সর্বাগ্রে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর পথে যারা অবিচল, তাদের কর্মই ফলপ্রসূ। কিন্তু যারা আল্লাহর বিকল্পে অন্য কিছুকে “ইলাহ” বানায়, তাদের আমল শুধু পরিশ্রম, ফল শূন্য। 🌸 তাই ঈমানের শুদ্ধতা হলো প্রতিটি আমলের প্রাণ। **তাওহিদবিহীন কর্মের কোনো আলো নেই, আর শিরকভিত্তিক পথের শেষ গন্তব্য অন্ধকার।** 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“إِنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ مُتَبَّرٌۭ مَّا هُمْ فِيهِ وَبَـٰطِلٌۭ مَّا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে ঈমানহীন, তার সকল সাফল্য আসলে ধ্বংসের পূর্বভূমিকা। আর যে তাওহিদে অটল, তার সামান্য কাজও আল্লাহর নিকট মহামূল্যবান।** 🌿🤍
আয়াত ১৪০
قَالَ أَغَيْرَ ٱللَّهِ أَبْغِيكُمْ إِلَـٰهًۭا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ
ক্বালা: আ-গাইরাল্লাহি আবগীকুম ইলাহান, ওয়া হুয়া ফাদ্দালাকুম ‘আলা আল্-‘আলামীন।
“তিনি (মূসা) বললেন — ‘আল্লাহ ব্যতীত কি আমি তোমাদের জন্য অন্য কোনো উপাস্য খুঁজে দেব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন!’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 বনী ইসরাঈল মূসা (আঃ)-এর কাছে বলেছিল — “হে মূসা, আমাদের জন্যও এমন এক উপাস্য বানিয়ে দাও!” এই অজ্ঞ অনুরোধ শুনে মূসা (আঃ) বিস্মিত হয়ে বললেন — **“আল্লাহ ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোনো ইলাহ খুঁজব?!”** 🌸 এই প্রশ্নটি ছিল তিরস্কার ও জাগরণের প্রতীক। মূসা (আঃ) তাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন — আল্লাহই তো তাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন, আল্লাহই তো তাদের মর্যাদা দিয়েছেন, আল্লাহই তো তাদেরকে বনী ইসরাঈল নামের সম্মানিত জাতি বানিয়েছেন। 🌿 তাহলে কেন তারা সেই আল্লাহকে ছেড়ে মূর্তির মতো অক্ষম কিছু চায়?

🌸 **“وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ”** — “অথচ তিনিই তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।” অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদের এমন মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য জাতির কাছে ছিল না — নবুওয়াত, হিদায়াত, মুক্তি, এবং অনুগ্রহ। 🌿 অথচ তোমরা সেই অনুগ্রহের পরও অকৃতজ্ঞ হয়ে অন্যের ধর্মের অনুকরণে পড়ছো!

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষকে এক মৌলিক শিক্ষা দেয় — **যে আল্লাহর অনুগ্রহ ভুলে যায়, সে অবশ্যম্ভাবীভাবে শিরক বা গাফেলতায় পড়ে।** 🌸 মানুষ প্রায়ই ভাবে — “আরো কিছু দরকার, আরো কিছু চাই।” অথচ আল্লাহর দানই সর্বোচ্চ ও পরিপূর্ণ। আল্লাহই একমাত্র “ইলাহ”, বাকিগুলো মানুষের কল্পনা ও বিভ্রম। 🌿 মূসা (আঃ) এই আয়াতে কেবল তাঁর জাতিকেই নয়, বরং সমগ্র মানবজাতিকে স্মরণ করিয়ে দিলেন — **যে আল্লাহকে যথেষ্ট মনে করে না, সে অবশেষে অন্য কিছুর দাস হয়ে যায়।**

🌸 যেমন আজও অনেকে আল্লাহর দান থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ার ভোগ-বিলাস, সম্পদ বা মানুষের প্রশংসাকে উপাস্য বানিয়ে ফেলে — এটাই আধুনিক “মূর্তি-পূজা।” 💔

উদাহরণ:
🌿 একজন মানুষ ধনী ও সম্মানিত, কিন্তু সে বারবার ভাবে — “আমার আরও দরকার।” তার অন্তর কখনো তৃপ্ত হয় না। তেমনি বনী ইসরাঈল আল্লাহর আশীর্বাদে ভরপুর ছিল, তবুও তারা অন্যের ধর্মের অনুকরণে শান্তি খুঁজতে চাইল। 🌸 অথচ প্রকৃত শান্তি কেবল আল্লাহর একত্বে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহই একমাত্র উপাস্য; তাঁর বিকল্প কিছু খোঁজা কুফরির সূচনা।
  • যে জাতি আল্লাহর অনুগ্রহ ভুলে যায়, তার শ্রেষ্ঠত্বও হারিয়ে যায়।
  • অন্ধ অনুকরণ ও হিংসা মানুষকে সোজা পথ থেকে সরিয়ে দেয়।
  • আল্লাহর দেয়া নিয়ামত চিনে কৃতজ্ঞ থাকা তাওহিদের অন্যতম নিদর্শন।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর অনুগ্রহ মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে, কিন্তু যারা সেই অনুগ্রহ ভুলে যায়, তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে। 🌸 **মূসা (আঃ)-এর প্রশ্ন ছিল এক চাবুকের মতো — “আল্লাহকে ছেড়ে কি অন্যের উপাসনা করবে?”** এই প্রশ্ন আজও প্রতিটি যুগের মানুষের জন্য এক আয়না।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَغَيْرَ ٱللَّهِ أَبْغِيكُمْ إِلَـٰهًۭا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে আল্লাহর দান ও মর্যাদা বুঝে কৃতজ্ঞ থাকে, সে কখনো অন্যের উপাস্য খোঁজে না। আর যে অকৃতজ্ঞ, সে বরকত হারিয়ে ফেলে।** 🌿🤍
আয়াত ১৪১
وَإِذْ أَنجَيْنَـٰكُم مِّنْ ءَالِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ يُقَتِّلُونَ أَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَآءَكُمْ ۚ وَفِى ذَٰلِكُم بَلَآءٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌۭ
ওয়াইয্‌ আনজাইনা কুম্‌ মিন আলে ফিরআউন, ইয়াসূমুনাকুম্‌ সূআল্‌ আযাবি, ইউকাত্তিলূনা আবনা’আকুম্‌, ওয়া ইয়াস্তাহ্‌ইয়ূনা নিসাআ’আকুম্‌, ওয়া ফি যালিকুম্‌ বালা’উম্‌ মিন রাব্বিকুম্‌ আজীম।
“আর স্মরণ কর, যখন আমরা তোমাদের ফিরআউনের সম্প্রদায় থেকে রক্ষা করেছিলাম, তারা তোমাদেরকে কঠিন নির্যাতনে ফেলে রাখত — তোমাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করত আর তোমাদের নারীদের বেঁচে রাখত (দাসত্বের জন্য)। এবং এতে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ছিল এক মহান পরীক্ষা।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বনী ইসরাঈলকে তাদের অতীতের ভয়াবহ দুঃখ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। ফিরআউনের জাতি তাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাত — ছেলে সন্তানদের হত্যা করত, আর মেয়েদের জীবিত রেখে দাসী বানাত। 🌸 এই শাস্তি শুধু রাজনৈতিক ছিল না, ছিল **মনস্তাত্ত্বিক দাসত্বের এক ভয়াবহ রূপ**। ফিরআউন চেয়েছিল — তাদের মনোবল ভেঙে দিতে, যেন তারা কখনো আল্লাহর পথে উঠতে না পারে। 🌿 কিন্তু আল্লাহ তাঁর রহমতে তাদের রক্ষা করলেন, এবং মূসা (আঃ)-এর মাধ্যমে মুক্তি দিলেন 🌊 এটি ছিল এক মহান “বালাআ” — অর্থাৎ পরীক্ষা ও শিক্ষা, যাতে তারা বুঝতে পারে — মুক্তির মালিক একমাত্র আল্লাহই।

🌸 **“يَسُومُونَكُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ”** — অর্থাৎ, তারা তোমাদের ওপর নিরবচ্ছিন্ন নির্যাতন চালাত। দিন-রাতের শান্তি কেড়ে নিয়েছিল; মানুষ জীবনের আশা হারিয়ে ফেলেছিল।

🌿 **“يُقَتِّلُونَ أَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَآءَكُمْ”** — এই ছিল ফিরআউনের নিষ্ঠুর নীতি: পুরুষদের ধ্বংস করা, নারীদের লাঞ্ছিত করা। কারণ সে চেয়েছিল — বনী ইসরাঈলকে দুর্বল করে নিজের দাসে পরিণত করতে। 🌸 আল্লাহ সেই দুঃসহ দিনগুলোর স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন, যাতে তারা এখনকার স্বাধীনতা ও বরকতের কদর করে।

“وَفِى ذَٰلِكُم بَلَآءٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌۭ” — 🌿 অর্থাৎ, “এতে ছিল তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এক মহান পরীক্ষা।” এই “বালা’” শব্দের দুটি অর্থ:
  • **পরীক্ষা (test)** — আল্লাহ দেখতে চেয়েছিলেন, কষ্টেও তারা ঈমান ধরে রাখে কি না।
  • **নিয়ামত (blessing)** — কারণ সেই বিপদের মধ্যেই ছিল মুক্তি ও হিদায়াতের বীজ।
🌸 তাই আল্লাহর পরীক্ষা কখনো নিছক কষ্ট নয়, বরং ভবিষ্যতের রহমতের প্রস্তুতি 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শেখায় — **যে জাতি কষ্টের দিন ভুলে যায়, সে কৃতজ্ঞতাও ভুলে যায়।** আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দেন যেন সে পরিণত হয়, মুক্তির পর যেন সে নম্র থাকে। 🌸 আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে স্মরণ করালেন — “তোমরা এখন স্বাধীন, কিন্তু ভুলে যেও না কিভাবে তোমাদের মুক্তি পেয়েছিলে।” 🌿 আজকের মানুষও প্রায়ই শান্তিতে এসে কষ্টের দিনে আল্লাহকে স্মরণ করার অভ্যাস ভুলে যায়। অথচ মুক্তির মূল উদ্দেশ্যই হলো **আল্লাহর স্মরণে জীবিত থাকা।**

উদাহরণ:
🌸 যেমন কেউ দীর্ঘ অসুস্থতার পর সুস্থ হয়, কিন্তু যদি সে সেই কষ্টের দিন ভুলে যায়, তাহলে সে আবার গাফেল হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি বনী ইসরাঈল যদি তাদের দাসত্বের ইতিহাস ভুলে যায়, তবে তারা আবার নতুন দাসত্বে জড়িয়ে পড়বে — এই সতর্কতাই এই আয়াতে নিহিত।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর প্রতিটি পরীক্ষা আসলে পরবর্তী নিয়ামতের প্রস্তুতি।
  • অতীতের কষ্ট ভুলে গেলে মানুষ অকৃতজ্ঞ ও গাফেল হয়ে যায়।
  • আল্লাহই প্রকৃত মুক্তিদাতা; অন্য কেউ কেবল বাহ্যিক সাহায্যকারী।
  • কৃতজ্ঞতা ও স্মরণই মুমিনের মুক্তিকে স্থায়ী করে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহ তোমাকে কখনো এমন এক কষ্টে ফেলেন, যার ভেতরেই তোমার ভবিষ্যতের শক্তি লুকিয়ে থাকে। সেই কষ্ট না এলে তুমি কখনো বদলাতে না। 🌸 **বনী ইসরাঈলের দাসত্ব ছিল তাদের ঈমানের প্রশিক্ষণ, আর মুক্তি ছিল তার ফল।** 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَفِى ذَٰلِكُم بَلَآءٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌۭ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে পরীক্ষায় তুমি ধৈর্য ধরো, সেটিই একদিন তোমার মুক্তির দরজা খুলে দেয়।** 🌿🤍
আয়াত ১৪২
وَوَٰعَدْنَا مُوسَىٰ ثَلَـٰثِينَ لَيْلَةًۭ وَأَتْمَمْنَـٰهَا بِعَشْرٍۢ فَتَمَّ مِيقَـٰتُ رَبِّهِۦٓ أَرْبَعِينَ لَيْلَةًۭ ۚ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِيهِ هَـٰرُونَ ٱخْلُفْنِى فِى قَوْمِى وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ ٱلْمُفْسِدِينَ
ওয়া ওয়া‘আদনা মূসা সালাসীনা লাইলা, ওয়া আতমামনাহা বি‘আশর, ফাতাম্মা মীকাতু রাব্বিহি আরবাঈনা লাইলা। ওয়া ক্বালা মূসা লি-আখীহি হারূন, উখলুফনী ফি কওমী, ওয়া আসলিহ, ওয়া লা তাত্তাবি‘ সাবীলাল মুফসিদীন।
“আর আমরা মূসার সঙ্গে ত্রিশ রাতের জন্য প্রতিশ্রুতি করেছিলাম, তারপর তা দশ রাত দ্বারা পূর্ণ করলাম, ফলে তাঁর প্রভুর নির্ধারিত সময় পূর্ণ হলো **চল্লিশ রাত।** আর মূসা তাঁর ভাই হারূনকে বললেন — ‘তুমি আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের স্থলাভিষিক্ত হও, তাদের মধ্যে সংশোধন করো, এবং ফাসাদকারীদের পথ অনুসরণ করো না।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ জানাচ্ছেন — তিনি মূসা (আঃ)-কে আহ্বান করেছিলেন তুর পাহাড়ে, প্রথমে ৩০ রাতের জন্য, পরে আরও ১০ রাত যোগ করে **মোট ৪০ রাতের বিশেষ সাক্ষাৎ (ওয়াদা)** নির্ধারণ করা হলো 🌙 🌸 এই ৪০ দিনের উদ্দেশ্য ছিল — মূসা (আঃ)-এর জন্য **তাওরাত (আল্লাহর আইন)** প্রাপ্তি, যা পরবর্তীতে বনী ইসরাঈলের জন্য দিকনির্দেশনা হয়। 🌿 আল্লাহর সঙ্গে এই সাক্ষাৎ ছিল এক অলৌকিক, মর্যাদাপূর্ণ ও ঐশী অভিজ্ঞতা — যেখানে আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে বিশেষভাবে সম্মানিত করলেন 💫

🌸 **“فَتَمَّ مِيقَـٰتُ رَبِّهِۦٓ أَرْبَعِينَ لَيْلَةًۭ”** — অর্থাৎ, “তাঁর প্রভুর নির্ধারিত সময় পূর্ণ হলো ৪০ রাত।” এ সংখ্যাটি শুধু সময় নয়, বরং **আত্মশুদ্ধি ও ধৈর্যের প্রতীক।** মূসা (আঃ) এই সময়ে রোজা রাখতেন, ইবাদতে থাকতেন, যেন আল্লাহর বাক্য গ্রহণের জন্য অন্তর সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়।

🌿 তারপর মূসা (আঃ) যাওয়ার আগে তাঁর ভাই হারূন (আঃ)-কে বললেন — **“উখলুফনী ফি কওমী”** — “আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হও।” অর্থাৎ, নেতৃত্ব, দাওয়াত ও সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব তাঁর হাতে দিলেন। 🌸 এরপর বললেন — **“ওয়া আসলিহ”** — “সংশোধন করো।” অর্থাৎ, তাদের মধ্যে শান্তি ও ঈমান বজায় রেখো। 🌿 এবং শেষ নির্দেশ — **“ওয়া লা তাত্তাবি‘ সাবীলাল মুফসিদীন”** — “ফাসাদকারীদের পথ অনুসরণ করো না।” এটি শুধু হারূনের জন্য নয়, বরং সমগ্র উম্মতের জন্য এক শাশ্বত নীতি 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শেখায় — **দায়িত্বের সঙ্গে নেতৃত্ব মানে শুধু শাসন নয়, বরং সংশোধন।** মূসা (আঃ) তাঁর ভাইকে নেতৃত্ব দিলেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নৈতিক দিকনির্দেশনাও দিলেন — যেন ক্ষমতা কখনো অন্যায়ের দিকে না যায়। 🌸 “৪০ রাত” শুধু সময় নয়, এটি ছিল আল্লাহর নিকট এক প্রশিক্ষণকাল — যেখানে মূসা (আঃ)-এর অন্তর আল্লাহর কথার ভার বহন করার উপযুক্ত হলো। 🌿 এ থেকে শিক্ষা — আল্লাহর বিশেষ দায়িত্ব পাওয়ার আগে **ধৈর্য, একাগ্রতা ও ইবাদতের প্রস্তুতি** প্রয়োজন।

🌸 হারূন (আঃ)-এর জন্যও এটি ছিল এক পরীক্ষা — কারণ মূসা অনুপস্থিত থাকাকালে তাঁর জাতি বাছুর-পূজায় লিপ্ত হয়ে পড়ে, আর তিনি তখনও তাদের সংশোধনে লড়াই করছিলেন 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন শিক্ষক পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীকে প্রস্তুতির জন্য সময় দেন, তেমনি আল্লাহও তাঁর নবীকে ওহির ভার বহনের আগে একান্ত প্রশিক্ষণ ও আত্মশুদ্ধির সময় দেন। 🌸 এই আয়াত দেখায় — **আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ বা তাঁর দায়িত্বের জন্য অন্তরের প্রস্তুতি অপরিহার্য।**

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর কাজ করার আগে আত্মিক প্রশিক্ষণ অপরিহার্য।
  • নেতৃত্ব মানে সংশোধন, ক্ষমতা নয়।
  • ফাসাদকারীদের অনুকরণ না করা আল্লাহর আদেশ।
  • ধৈর্য ও সময়ের পরীক্ষাই মানুষকে প্রকৃতভাবে গঠন করে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর দায়িত্ব পাওয়া একদিনে ঘটে না — তা ধৈর্য, প্রস্তুতি ও আত্মশুদ্ধির ফসল। মূসা (আঃ)-এর ৪০ রাত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর নিকটে পৌঁছানোর জন্য নিজেকে আগে পরিশুদ্ধ করতে হয়।** 🌸 আর হারূনের প্রতি নির্দেশ শেখায় — **যে নেতা ফাসাদকারীদের পথ এড়ায়, তিনিই আল্লাহর প্রিয় প্রতিনিধি।** 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَتَمَّ مِيقَـٰتُ رَبِّهِۦٓ أَرْبَعِينَ لَيْلَةًۭ … وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ ٱلْمُفْسِدِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধৈর্য অপরিহার্য, আর সমাজে শান্তি রক্ষায় ফাসাদ থেকে দূরে থাকা সর্বোত্তম ইবাদত।** 🌿🤍
আয়াত ১৪৩
وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَـٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِىٓ أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَىٰنِى وَلَـٰكِنِ ٱنظُرْ إِلَى ٱلْجَبَلِ فَإِنِ ٱسْتَقَرَّ مَكَانَهُۥ فَسَوْفَ تَرَىٰنِى فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكًّۭا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًۭا فَلَمَّآ أَفَاقَ قَالَ سُبْحَـٰنَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلْمُؤْمِنِينَ
ওয়ালাম্মা জা’আ মূসা লিমীকাতিনা, ওয়া কাল্লামাহু রাব্বুহু, ক্বালা রাব্বি, আরিনি আনজুর ইলাইকা। ক্বালা লান তারানী, ওয়ালাকিনিনজুর ইলা আল-জাবাল, ফা-ইনিস্তাক্কাররা মাকানাহু ফাসাওফা তারানী। ফালাম্মা তাজাল্লা রাব্বুহু লিল-জাবালি, জা‘আলাহু দাক্কান, ওয়া খার্রা মূসা সা‘ইকান। ফালাম্মা আফাকা ক্বালা: সুবহানাকা, তুব্তু ইলাইকা, ওয়া আনা আওয়ালুল মুমিনীন।
“আর যখন মূসা আমাদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো, আর তাঁর প্রভু তাঁর সঙ্গে কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে (আপনাকে) দেখাও, আমি আপনার দিকে তাকাব।’ তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে দেখতে পারবে না, তবে পাহাড়ের দিকে তাকাও — যদি তা তার স্থানে স্থির থাকে, তাহলে তুমি আমাকে দেখতে পারবে।’ কিন্তু যখন তাঁর প্রভু পাহাড়ের প্রতি (তাঁর জ্যোতি) প্রকাশ করলেন, তখন সেটি ভস্মীভূত হয়ে গেল, আর মূসা অচেতন হয়ে পড়ল। পরে যখন তিনি চেতনা ফিরে পেলেন, তিনি বললেন, ‘আপনি পবিত্র, আমি আপনার দিকে তাওবা করছি, আর আমি প্রথম বিশ্বাসীদের একজন।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত আল্লাহর “জালাল” (মহিমা) ও “নূর”-এর এক আশ্চর্য বর্ণনা। মূসা (আঃ) যখন আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য লাভ করলেন, তখন তাঁর অন্তরে আল্লাহর প্রতি এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল — তিনি দেখতে চাইলেন তাঁর প্রভুকে, যাঁর সঙ্গে তিনি কথা বলছেন 🌸 🌸 তিনি বললেন: **“রাব্বি, আরিনি আনজুর ইলাইকা”** — “হে আমার প্রভু, আমাকে দেখান, আমি আপনাকে দেখব।” 🌿 কিন্তু আল্লাহ বললেন: **“লান তারানী”** — “তুমি আমাকে দেখতে পারবে না।” কারণ মানবচক্ষু সীমিত, আর আল্লাহর নূর অসীম — যা কোনো দৃষ্টি সহ্য করতে পারে না।

🌸 তবে আল্লাহ তাঁকে একটি দৃশ্য দেখালেন — বললেন, “পাহাড়ের দিকে তাকাও।” অর্থাৎ, যদি পাহাড় আমার জ্যোতি সহ্য করতে পারে, তবে তুমিও পারবে। 🌿 কিন্তু যখন আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পাহাড়ের উপর প্রকাশ করলেন — **“জা‘আলাহু দাক্কান”** — পাহাড়টি মুহূর্তেই গুঁড়িয়ে গেল! ⚡ এই দৃশ্য দেখে মূসা (আঃ) অচেতন হয়ে পড়লেন।

🌸 জ্ঞান ফিরলে তিনি বললেন — **“সুবহানাকা, তুব্তু ইলাইকা, ওয়া আনা আওয়ালুল মুমিনীন”** — “আপনি পবিত্র, আমি তাওবা করছি, এবং আমি প্রথম বিশ্বাসীদের একজন।” 🌿 তাঁর তাওবা ছিল কুফরি থেকে নয়, বরং **“অতিশয় আকাঙ্ক্ষা”র সীমা অতিক্রম করার বিনয়পূর্ণ স্বীকারোক্তি।** তিনি বুঝলেন — আল্লাহকে দৃষ্টি দিয়ে নয়, বরং হৃদয়ের ঈমান দিয়ে চেনা যায় 💫

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আল্লাহর মহিমা ও সীমাহীন জ্যোতির প্রমাণ। মানবদৃষ্টি এই দুনিয়ায় আল্লাহকে দেখতে অক্ষম, কারণ এই দেহিক দৃষ্টি সীমাবদ্ধ। 🌸 কিন্তু আখিরাতে ঈমানদাররা আল্লাহর দর্শন লাভ করবে, যেমন কুরআনে আছে — **“সেদিন কিছু মুখ আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবে।”** *(সূরা আল-কিয়ামাহ ৭৫:২২–২৩)* 🌿 🌿 মূসা (আঃ)-এর এই ঘটনা শেখায় — ঈমান যত গভীরই হোক, আল্লাহর মহিমা বুঝতে সর্বদা বিনয় থাকা উচিত। আল্লাহর মহত্ত্ব উপলব্ধি করতে চাইলে দৃষ্টি নয়, **হৃদয়কে পরিশুদ্ধ** করতে হয় 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ সূর্যের দিকে সরাসরি তাকালে চোখ ঝলসে যায়, কিন্তু তার আলো ও তাপ চারপাশে অনুভব করা যায়। তেমনি আল্লাহর জ্যোতি দেখা যায় না, কিন্তু তাঁর উপস্থিতি প্রতিটি সৃষ্টিতে অনুভব করা যায় ✨

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর জ্যোতি ও মহিমা সীমাহীন — তা মানবদৃষ্টিতে ধরা যায় না।
  • মূসা (আঃ)-এর বিনয় শেখায়, জ্ঞান ও ঈমানের চূড়ান্ত অবস্থাতেও অহংকার নয়, বিনয় থাকা উচিত।
  • আল্লাহর দর্শন আখিরাতের বিশেষ নিয়ামত — দুনিয়ায় নয়।
  • আল্লাহকে অনুভব করতে হৃদয় পরিশুদ্ধ ও ঈমান দৃঢ় করা জরুরি।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর নূর কোনো সীমার মধ্যে নয় — মানুষ যদি তাঁর “এক ঝলক তাজাল্লি” সহ্য করতে না পারে, তবে আমরা কেমন ক্ষুদ্র! তাই প্রকৃত ঈমান হলো — নিজের ক্ষুদ্রতাকে স্বীকার করে আল্লাহর মহিমায় মাথা নত করা। 🌸 মূসা (আঃ) অচেতন হলেন, কিন্তু সেই অচেতনতার মধ্যেই তিনি আল্লাহকে সবচেয়ে গভীরভাবে চিনলেন 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكًّۭا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًۭا”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর জ্যোতি দৃষ্টি দিয়ে নয়, ঈমান দিয়ে অনুভব করতে হয়। আর প্রকৃত ঈমান হলো — ‘সুবহানাকা’ বলে মাথা নত করা।** 🌿🤍
আয়াত ১৪৪
قَالَ يَـٰمُوسَىٰٓ إِنِّى ٱصْطَفَيْتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ بِرِسَـٰلَـٰتِى وَبِكَلَـٰمِى فَخُذْ مَآ ءَاتَيْتُكَ وَكُن مِّنَ ٱلشَّـٰكِرِينَ
ক্বালা ইয়ামূসা, ইন্নী ইস্তাফাইতুকা ‘আলান্‌-নাসি বিরিসালাতী ওয়া বিকালামী, ফাখুজ মা আতাইতুকা, ওয়াকুন মিনাশ্‌ শাকিরীন।
“আল্লাহ বললেন, ‘হে মূসা! আমি তোমাকে মানুষদের মধ্যে বাছাই করেছি আমার বার্তা প্রেরণের জন্য এবং আমার সঙ্গে কথা বলার মর্যাদায়। অতএব, আমি যা তোমাকে দিয়েছি তা গ্রহণ করো, এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)-কে নবীদের মধ্যে একটি অনন্য মর্যাদা দান করেছেন — তাঁকে তাঁর বাণীবাহক (রাসূল) বানানোর পাশাপাশি **নিজের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সম্মান** দিয়েছেন। 🌸 এ কারণেই মূসা (আঃ)-কে বলা হয় — **“কালিমুল্লাহ” (كليم الله)** — অর্থাৎ, *যার সঙ্গে আল্লাহ সরাসরি কথা বলেছেন।* 💫

“বিকালামী” — আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা বলতে কী বোঝায়?
🌿 এর মানে এই নয় যে, মূসা (আঃ) আল্লাহকে চোখে দেখেছিলেন — বরং আল্লাহ তাঁকে **পর্দার আড়াল থেকে, কোনো ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি কথা শুনিয়েছিলেন।** 📖 যেমন আল্লাহ বলেন — **“وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَىٰ تَكْلِيمًا”** — “আর আল্লাহ মূসার সঙ্গে (সরাসরি) কথা বললেন।” *(সূরা আন-নিসা ৪:১৬৪)* 🌸 🌿 অর্থাৎ, এটি ছিল **এক অলৌকিক শ্রবণ অভিজ্ঞতা**, যেখানে মূসা (আঃ) আল্লাহর বাণী শুনেছেন, কিন্তু আল্লাহকে দেখেননি। আল্লাহর কণ্ঠ বা বাণী মানুষের মতো নয়, বরং এটি ছিল তাঁর **“কালাম”** — যা সৃষ্টি নয়, বরং আল্লাহর নিজ গুণাবলির প্রকাশ। 🌸 তাই বলা হয় — **মূসা (আঃ) আল্লাহর সঙ্গে পর্দা ছাড়া নয়, বরং ফেরেশতা বা অন্য মাধ্যম ছাড়া কথা বলেছিলেন।** আল্লাহর মহিমা ও পর্দার আড়াল অবশ্যই অক্ষুণ্ণ ছিল 🌿

🌿 **“إِنِّى ٱصْطَفَيْتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ”** — “আমি তোমাকে মানুষদের মধ্যে বাছাই করেছি।” অর্থাৎ, নবুওয়াত, ওহি ও নেতৃত্বের জন্য তোমাকে বিশেষভাবে মনোনীত করেছি। 🌸 **“বিরিসালাতী”** — আমার বার্তা প্রদানের জন্য। **“বিকালামী”** — আমার সঙ্গে কথোপকথনের মর্যাদায়। অর্থাৎ, তুমি এমন এক নবী যিনি সরাসরি আল্লাহর বাণী শুনেছেন, অন্য কারো মাধ্যমে নয় 💫

🌸 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ফাখুজ মা আতাইতুকা”** — “আমি যা তোমাকে দিয়েছি তা গ্রহণ করো।” অর্থাৎ, তাওরাতের ভার, নবুওয়াতের দায়িত্ব ও হিদায়াতের মিশন গ্রহণ করো দৃঢ়তার সঙ্গে। 🌿 এবং বলেন — **“ওয়াকুন মিনাশ্‌ শাকিরীন”** — “কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।” অর্থাৎ, এই মহান সম্মান অহংকারের জন্য নয়, বরং কৃতজ্ঞতার জন্য।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহর এক মহান নীতি প্রকাশ পেয়েছে — **যাকে আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দেন, তাঁর কাছ থেকে আরও কৃতজ্ঞতা ও বিনয় প্রত্যাশা করেন।** 🌸 মূসা (আঃ) শুধু নবী নন, বরং এমন এক প্রতিনিধি যিনি আল্লাহর কালাম শুনেছেন, তাওরাতের দায়িত্ব পেয়েছেন এবং জাতিকে হিদায়াত দিয়েছেন। 🌿 আল্লাহর সঙ্গে “কথা বলা”র এই সম্মান আমাদের শেখায় — **যে আল্লাহর নিকটে যেতে চায়, তার অন্তরকে বিনয় ও কৃতজ্ঞতায় পরিশুদ্ধ করতে হবে।**

উদাহরণ:
🌸 যেমন রাজা যদি কারো সঙ্গে নিজে কথা বলেন, সেটা তার সর্বোচ্চ মর্যাদা। তেমনি আল্লাহ নিজে যখন মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে কথা বললেন, সেটি ছিল নবুওয়াতের সর্বোচ্চ সম্মান 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের সর্বোচ্চ মাধ্যম হলো — পরিশুদ্ধ হৃদয়।
  • নবুওয়াত বা মর্যাদা যতই বড় হোক, কৃতজ্ঞতা ততই প্রয়োজন।
  • আল্লাহ কাউকে বাছাই করেন না, যতক্ষণ না সে নিজেকে তাঁর জন্য প্রস্তুত করে।
  • “পর্দা ছাড়া কথা” মানে — ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া সরাসরি বাণী প্রাপ্তি, দেখা নয়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক কখনো দৃষ্টিতে নয়, হৃদয়ে অনুভূত হয়। মূসা (আঃ)-এর এই ঘটনা প্রমাণ করে — **যে হৃদয় বিনয়ী ও ঈমানদার, সেই হৃদয়ই আল্লাহর বাণী গ্রহণে উপযুক্ত।** 🌸 তাই আল্লাহ তাঁকে বললেন — “আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি, এখন কৃতজ্ঞ থেকো এবং দৃঢ় থেকো।” 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“إِنِّى ٱصْطَفَيْتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ بِرِسَـٰلَـٰتِى وَبِكَلَـٰمِى فَخُذْ مَآ ءَاتَيْتُكَ وَكُن مِّنَ ٱلشَّـٰكِرِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর নৈকট্য কণ্ঠে নয়, অন্তরে অনুভব করা যায়। আর যার অন্তরে কৃতজ্ঞতা থাকে, সে-ই আল্লাহর নির্বাচিতদের পথের উত্তরসূরি।** 🌿🤍
আয়াত ১৪৫
وَكَتَبْنَا لَهُۥ فِى ٱلْأَلْوَاحِ مِن كُلِّ شَىْءٍۢ مَّوْعِظَةًۭ وَتَفْصِيلًۭا لِّكُلِّ شَىْءٍۢ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍۢ وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوا۟ بِأَحْسَنِهَا سَأُرِيكُمْ دَارَ ٱلْفَـٰسِقِينَ
ওয়া কাতাবনা লাহু ফিল আলওয়াহি মিন কুল্লি শাই’ইন মাওইযাতান ওয়া তাফসীলান লিকুল্লি শাই’, ফাখুজহা বিকুওয়াতিন, ওয়ামুর কাওমাকা ইয়াখুযু বিআহসানিহা, সা-উরীকুম দারাল ফাসিকীন।
“আর আমরা তাঁর জন্য ফলকসমূহে সবকিছু সম্পর্কে উপদেশ ও বিশদ বিবরণ লিখেছিলাম। (বলেছিলাম) — এগুলো দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করো, এবং তোমার সম্প্রদায়কেও আদেশ দাও যেন তারা এর উত্তম দিকগুলো অনুসরণ করে। আমি শীঘ্রই তোমাদের দেখাবো অবাধ্যদের আবাসস্থল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন সেই মহা মুহূর্ত, যখন মূসা (আঃ)-কে তুর পাহাড়ে **তাওরাতের ফলকসমূহ (লওহ্‌)** প্রদান করা হয়। এতে ছিল আল্লাহর দিকনির্দেশনা, আইন, নৈতিক শিক্ষা ও উপদেশ — যা বনী ইসরাঈলের জন্য এক পূর্ণ জীবনবিধান ছিল 📜

🌸 **“ওয়া কাতাবনা লাহু ফিল আলওয়াহি”** — অর্থাৎ, “আমরা ফলকসমূহে লিখে দিয়েছি।” এটি ছিল আল্লাহর সরাসরি লিখিত বা লিখিয়ে দেওয়া বাণী, যা আল্লাহর নির্দেশেই মূসা (আঃ)-এর হাতে পৌঁছে। 🌿 **“মাওইযাতান”** — অর্থাৎ উপদেশ ও সতর্কবার্তা। **“তাফসীলান লিকুল্লি শাই’”** — অর্থাৎ বিস্তারিত বিধান, যাতে ছিল হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায়, ও সমাজ পরিচালনার নির্দেশনা।

🌸 এরপর আল্লাহ বললেন — **“ফাখুজহা বিকুওয়াতিন”** — “এগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে গ্রহণ করো।” অর্থাৎ, শুধু মুখে নয়, দৃঢ় ঈমান, মনোযোগ ও কর্মের শক্তি দিয়ে ধারণ করো। ধর্ম মানা মানে শুধু জানা নয়, বরং জীবনে বাস্তবায়ন করা 🌿

🌿 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ওয়ামুর কওমাকা ইয়াখুযু বিআহসানিহা”** — “তোমার সম্প্রদায়কেও আদেশ দাও যেন তারা এর উত্তম দিকগুলো গ্রহণ করে।”
👉 এখানে ‘এর উত্তম দিকগুলো গ্রহণ করা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
🌸 এর অর্থ এই নয় যে আল্লাহর কিতাবে কিছু ভালো, কিছু খারাপ দিক আছে — বরং এর মানে হলো —
  • আল্লাহ যা **আদেশ করেছেন**, তা দৃঢ়ভাবে পালন করা;
  • আর যা **নিষেধ (হারাম)** করেছেন, তা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা।
🌿 অর্থাৎ, আল্লাহর কিতাবের “উত্তম দিক গ্রহণ” মানে — তাঁর আদেশগুলোর প্রতি আনুগত্য, এবং তাঁর নিষেধ থেকে সতর্ক থাকা। 🌸 তাই এখানে **‘উত্তম দিক’** মানে কিতাবের **নৈতিক, আদেশমূলক ও সৎ আচরণের দিকগুলো** — যা আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ নির্দেশ করে। 💫 আল্লাহর কিতাবে “খারাপ দিক” বলতে কিছুই নেই; বরং বান্দাকে বলা হয়েছে — “তুমি এর সর্বোত্তম অংশ গ্রহণ করো”, অর্থাৎ — “সেই পথেই চলো, যা আল্লাহর কাছে উত্তম।”

🌿 তারপর আল্লাহ সতর্ক করলেন — **“সা-উরীকুম দারাল ফাসিকীন”** — “আমি তোমাদের দেখাবো অবাধ্যদের আবাসস্থল।” অর্থাৎ, যারা কিতাব পেয়েও তা অবহেলা করে, তারা দুনিয়ায় লাঞ্ছনা ও আখিরাতে ধ্বংসের মুখ দেখবে। 🌸 এটি এক চিরন্তন সতর্কবার্তা — জ্ঞান তখনই বরকতময়, যখন তা বিনয় ও আনুগত্যে রূপ নেয় 🌿

📘 অতিরিক্ত ব্যাখ্যা (স্পষ্টীকরণ):
🌿 কেউ যেন ভুল না বোঝে — “উত্তম দিকগুলো গ্রহণ করা” মানে এই নয় যে আল্লাহর কিতাবে ভালো-মন্দ মিশে আছে! বরং মানে হলো — আল্লাহর বাণী **সবই উত্তম**, তবে মানুষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা **সর্বোত্তমভাবে পালন করে, নিষেধ থেকে বেঁচে থাকে, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করে।** 🤍

গভীর উপলব্ধি:
🌸 আল্লাহর কিতাব শুধু জ্ঞানের উৎস নয়, বরং এক চলমান জীবনপথ — যা আদেশে আমল, নিষেধে বিরতি, আর চরিত্রে উত্তমতা শেখায়। 🌿 কিতাবের প্রতি শ্রদ্ধা মানে তার প্রতিটি নির্দেশের সামনে বিনম্র আত্মসমর্পণ করা।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর কিতাব সবই উত্তম, তার প্রতিটি বাণী হিদায়াত।
  • ‘উত্তম দিক গ্রহণ’ মানে আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকা।
  • কিতাব ধারণে দৃঢ়তা, আমল ও নৈতিকতা অপরিহার্য।
  • কিতাব অবহেলা করলে মানুষ জ্ঞানী হয়েও পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর কিতাব শুধু পাথরে লেখা নয় — বরং হৃদয়ে খোদাই করার জন্য নাযিল হয়েছে। যে কিতাবকে সর্বোত্তমভাবে গ্রহণ করে, সে-ই প্রকৃত মুত্তাকি ও কৃতজ্ঞ বান্দা 🌸

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوا۟ بِأَحْسَنِهَا”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর কিতাবের উত্তম দিক গ্রহণ মানে হলো — তাঁর আদেশ পালন করা, নিষেধ থেকে দূরে থাকা, এবং জীবনে সর্বোত্তম আচরণে তা প্রতিফলিত করা।** 🌿🤍
আয়াত ১৪৬
سَأَصْرِفُ عَنْ ءَايَـٰتِىَ ٱلَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِى ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَإِن يَرَوْا۟ كُلَّ ءَايَةٍۢ لَّا يُؤْمِنُوا۟ بِهَا وَإِن يَرَوْا۟ سَبِيلَ ٱلرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًۭا وَإِن يَرَوْا۟ سَبِيلَ ٱلْغَىِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًۭا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنْهَا غَـٰفِلِينَ
সা-আসরিফু আন আয়াতিয়া আল্লাযীনা ইয়াতাকাব্বারূনা ফিল আরদি বিগাইরিল হাক্কি, ওয়া ইন ইয়ারাও কুল্লা আয়াতিল্লা ইউমিনু বিহা, ওয়া ইন ইয়ারাও সাবীলার রুশ্দি লা ইয়াত্তাখিযূহু সাবীলা, ওয়া ইন ইয়ারাও সাবীলাল গাইয়্যি ইয়াত্তাখিযূহু সাবীলা। যালিকা বিঅন্নাহুম কাজ্জাবু বিআয়াতিনা ওয়াকানু আনহা গাফিলীন।
“আমি আমার নিদর্শনসমূহ থেকে দূরে রাখব তাদের, যারা অহংকারের কারণে পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বড়াই করে। তারা যদি প্রত্যেক নিদর্শনও দেখে, তবুও তাতে বিশ্বাস করবে না। তারা যদি সঠিক পথ দেখে, তা গ্রহণ করবে না; আর যদি ভ্রান্ত পথ দেখে, সেটিকেই গ্রহণ করবে। এটি এজন্য যে, তারা আমাদের নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং সে সম্পর্কে গাফেল ছিল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন এক ভয়াবহ পরিণতির কথা বলেছেন, যা ঘটে তাদের জন্য — যারা **অহংকার ও জিদের কারণে সত্যকে অস্বীকার করে।**

🌸 **“সা-আসরিফু আন আয়াতিয়া”** — অর্থাৎ, “আমি আমার নিদর্শন থেকে তাদের ফিরিয়ে রাখব।” মানে, আল্লাহ তাদের অন্তর ও দৃষ্টি থেকে সত্যের আলো সরিয়ে নেন। তারা আর হিদায়াত দেখতে বা বুঝতে পারে না। 🌿 এটি এক আধ্যাত্মিক শাস্তি — যখন মানুষ বারবার সত্য অস্বীকার করে, তখন আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন; সে আর ভালো চিনতে পারে না, বরং মিথ্যাকে ভালো ও সত্যকে মিথ্যা মনে করে ফেলে 💔

🌸 **“ইয়াতাকাব্বারূনা ফিল আরদি বিগাইরিল হাক্কি”** — অর্থাৎ, “যারা অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করে।” তারা নিজের জ্ঞান, সম্পদ বা মর্যাদার কারণে আল্লাহর আদেশকে ছোট করে দেখে, এবং মনে করে — “আমরা তো জানি, আমাদের কী দরকার কুরআনের?” 🌿 এই অহংকারই তাদের অন্তর অন্ধ করে দেয়। আল্লাহর নিদর্শন সামনে থাকলেও তারা চিনতে পারে না।

🌸 **“ওয়া ইন ইয়ারাও কুল্লা আয়াতিল্লা ইউমিনু বিহা”** — “তারা যদি প্রত্যেক নিদর্শনও দেখে, তবুও বিশ্বাস করবে না।” অর্থাৎ, তাদের অস্বীকার এখন শুধু যুক্তির নয়, বরং **অহংকারের জিদ**। তাদের হৃদয় হিদায়াত গ্রহণে অক্ষম হয়ে গেছে।

🌿 **“ওয়া ইন ইয়ারাও সাবীলার রুশ্দি লা ইয়াত্তাখিযূহু সাবীলা”** — “তারা যদি সঠিক পথ দেখে, তা গ্রহণ করবে না।” অর্থাৎ, সত্য তাদের সামনে আসলেও, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তা এড়িয়ে চলে। 🌸 আর বিপরীতে — **“ওয়া ইন ইয়ারাও সাবীলাল গাইয়্যি ইয়াত্তাখিযূহু সাবীলা”** — “যদি তারা ভ্রান্ত পথ দেখে, সেটিকেই বেছে নেয়।” তারা নিজের গোঁড়ামি ও জিদে এমন অন্ধ হয়ে যায় যে তারা মিথ্যার পথকে নিজেদের চিন্তা বলে মনে করে ফেলে 💔

🌿 **“যালিকা বিঅন্নাহুম কাজ্জাবু বিআয়াতিনা ওয়াকানু আনহা গাফিলীন”** — “এ কারণেই তারা আমাদের নিদর্শনকে মিথ্যা বলেছে এবং গাফেল ছিল।” অর্থাৎ, তাদের শাস্তি এসেছে তাদের কাজের ফল হিসেবে — তারা নিজেরাই এমন জীবন বেছে নিয়েছিল, যেখানে আল্লাহর আলো পৌঁছাতে পারে না।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক কঠিন আধ্যাত্মিক সত্য প্রকাশ করে — আল্লাহ কাউকে অন্যায়ভাবে হিদায়াত থেকে বঞ্চিত করেন না। বরং মানুষ নিজেই যখন অহংকারে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন আল্লাহ তাঁর নিদর্শনগুলো তার চোখ থেকে সরিয়ে দেন। 🌸 **অহংকার = হিদায়াতের দরজা বন্ধ।** কারণ অহংকারী হৃদয় কখনো সত্য গ্রহণ করতে চায় না। 🌿 তাই যারা বলে — “আমাদের জানা আছে, আমাদের উপদেশের দরকার নেই” — তারাই আসলে আল্লাহর আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে।

🌸 যেমন সূর্য সবকিছুকে আলো দেয়, কিন্তু যে চোখ বন্ধ রাখে, তার জন্য সেই আলোও অন্ধকারের মতোই! 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন কোনো রোগী ওষুধ দেখতে চায় না, কারণ সে মনে করে সে নিজেই ভালো হয়ে যাবে — শেষ পর্যন্ত সে নিজেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনে। তেমনি অহংকারী মানুষ মনে করে — “আমি সঠিক”, অথচ আল্লাহর পথ থেকেই দূরে চলে যায়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকার মানুষকে হিদায়াত থেকে বঞ্চিত করে দেয়।
  • আল্লাহর নিদর্শন দেখতে পেতে বিনয় অপরিহার্য।
  • যে হৃদয় জিদ ও গাফেলতায় ভরে যায়, সে আর সত্য চিনতে পারে না।
  • হিদায়াত শুধু জ্ঞানে নয়, বিনয় ও আত্মসমর্পণে নিহিত।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত প্রমাণ করে — **আল্লাহর শাস্তির শুরু হয় হৃদয় থেকে।** যখন হৃদয় সত্যের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তখন মানুষ নিজেই নিজের অন্ধকার তৈরি করে। 🌸 তাই হিদায়াত পেতে চাইলে, অহংকারকে ভেঙে ফেলতে হবে, এবং বিনয় দিয়ে আল্লাহর নিদর্শন দেখতে শিখতে হবে 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“سَأَصْرِفُ عَنْ ءَايَـٰتِىَ ٱلَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِى ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **অহংকার হিদায়াতের সবচেয়ে বড় বাধা, আর বিনয় সত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল দরজা।** 🌿🤍
আয়াত ১৪৭
وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَ لِقَآءِ ٱلْـَٔاخِرَةِ حَبِطَتْ أَعْمَـٰلُهُمْ ۚ هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
ওয়াল্লাযীনা কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা ওয়া লিক্বা’ইল আখিরাহ, হাবিতাত আ'মালুহুম, হাল ইউজ্‌যাউন ইল্লা মা কানূ ইয়ামালূন।
“আর যারা আমাদের নিদর্শনসমূহ ও পরকালের সাক্ষাৎকে মিথ্যা বলে, তাদের সব কাজ ব্যর্থ হয়ে যাবে। তারা তাদের কাজ অনুযায়ীই প্রতিদান পাবে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন এক বাস্তব সত্য ঘোষণা করেছেন, যা প্রতিটি যুগে প্রযোজ্য — **যদি ঈমান না থাকে, তাহলে কর্মের কোনো মূল্য থাকে না।**

🌸 **“ওয়াল্লাযীনা কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা”** — “যারা আমাদের নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছে।” অর্থাৎ, যারা আল্লাহর বাণী, রাসূল ও কিতাবকে অস্বীকার করেছে।

🌿 **“ওয়া লিক্বা’ইল আখিরাহ”** — “আর আখিরাতের সাক্ষাৎকে (পরকালীন জবাবদিহি) মিথ্যা বলেছে।” অর্থাৎ, যারা বিশ্বাসই করে না যে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও বিচার হবে। 🌸 এই দুই অস্বীকারই (কুফর ও আখিরাত অস্বীকার) মানুষের আমলকে ভিত্তিহীন করে দেয় — কারণ তাদের কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং দুনিয়ার প্রশংসা বা স্বার্থের জন্য।

🌿 **“হাবিতাত আ'মালুহুম”** — “তাদের সব কাজ ব্যর্থ হয়ে যাবে।” অর্থাৎ, দুনিয়ায় যত ভালো কাজই তারা করুক, যদি তা ঈমান ছাড়া হয়, তবে আখিরাতে তার কোনো ফল পাওয়া যাবে না। 🌸 কুরআনের ভাষায়, **‘হাবিতাত’ (حَبِطَتْ)** মানে হলো — কাজ এমনভাবে বাতিল হয়ে যাওয়া, যেন কখনো ছিলই না! 💔

🌿 **“হাল ইউজ্‌যাউন ইল্লা মা কানূ ইয়ামালূন”** — “তারা তাদের কাজ অনুযায়ীই প্রতিদান পাবে।” অর্থাৎ, আল্লাহ কারো প্রতি অবিচার করেন না; তারা যা করেছে, ঠিক সেই অনুযায়ীই ফল পাবে। 🌸 কিন্তু যেহেতু তাদের কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে ছিল না, তাই তাদের প্রতিদানও আল্লাহর কাছে শূন্য। তারা দুনিয়াতেই প্রশংসা পেয়ে গেছে — আর আখিরাতে পাবে না কিছুই 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহর কাছে কর্মের মূল্য নির্ধারণ হয় **নিয়ত ও ঈমানের ওপর।** ঈমানহীন কর্ম সুন্দর মনে হলেও, তা আল্লাহর কাছে বাতাসে উড়ে যাওয়া ধূলার মতো। 🌸 ঈমান হলো আমলের প্রাণ। প্রাণ ছাড়া দেহ যেমন মৃত, তেমনি ঈমান ছাড়া আমলও মৃত। 🌿 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে — মানুষ হয়তো দুনিয়ায় ভালো কাজ করছে, কিন্তু যদি তার উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি না হয়, তবে আখিরাতে সেই কাজের কোনো মূল্য থাকবে না।

🌸 যেমন কেউ অন্যের প্রশংসা পেতে দান করে, কিন্তু আল্লাহর জন্য নয় — সে দুনিয়ায় প্রশংসা পায়, কিন্তু আখিরাতে সেই দান নিঃশেষ হয়ে যায় 🌿

উদাহরণ:
🌿 একটি বীজ যদি মাটিতে পোঁতা হয় কিন্তু পানিহীন থাকে, তাহলে তা কখনো গাছ হবে না। তেমনি আমল যদি ঈমান ও আল্লাহভীতির পানিতে সিঞ্চিত না হয়, তবে তা কখনো ফল দিবে না 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আখিরাতে কেবল ঈমানদারদের আমলই গ্রহণযোগ্য হবে।
  • আল্লাহর বাণী ও পরকাল অস্বীকার করলে সব কাজ বৃথা হয়ে যায়।
  • আমলের মূল্য নির্ধারণ হয় নিয়ত ও ঈমানের ওপর।
  • আল্লাহ কাউকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেন না; প্রত্যেকে নিজের কাজের ফল পায়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **কাজের পরিমাণ নয়, বরং উদ্দেশ্যই আসল।** ঈমান ছাড়া আমল যেন আত্মাহীন দেহ — দেখতে সুন্দর, কিন্তু আসলে মৃত। 🌸 তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত — এমন কাজ করা যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আখিরাতের জবাবদিহির চেতনা নিয়ে 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَ لِقَآءِ ٱلْـَٔاخِرَةِ حَبِطَتْ أَعْمَـٰلُهُمْ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **ঈমান ছাড়া আমল বৃথা, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া কাজের কোনো চিরস্থায়ী মূল্য নেই।** 🌿🤍
আয়াত ১৪৮
وَٱتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَىٰ مِنۢ بَعْدِهِۦ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًۭا جَسَدًۭا لَّهُۥ خُوَارٌ ۚ أَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّهُۥ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًۭا ۘ ٱتَّخَذُوهُ وَكَانُوا۟ ظَـٰلِمِينَ
ওয়াত্তাখাযা কাওমু মূসা মিন্‌ বা‘দিহি মিন্‌ হুলিয়্যিহিম ‘ইজলান জাসাদান লাহু খুওয়ার, আলাম ইয়ারাও আননাহু লা ইউকাল্লিমুহুম ওয়ালা ইয়াহদিহিম সাবীলা, ইত্তাখাযুহু ওয়াকানু যালিমীন।
“আর মূসার সম্প্রদায় তাঁর অনুপস্থিতিতে নিজেদের গহনা দিয়ে এক বাছুরের প্রতিমা তৈরি করল — যার থেকে গরুর মতো শব্দ বের হতো। তারা কি দেখল না যে এটি তাদের সঙ্গে কথা বলে না, এবং তাদের সঠিক পথে চালায় না? তবুও তারা সেটিকে উপাস্য বানাল; তারা ছিল একেবারে সীমালঙ্ঘনকারী (জালিম) জাতি।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত বর্ণনা করছে সেই সময়ের ঘটনা, যখন মূসা (আঃ) তুর পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন, আর তাঁর অনুপস্থিতিতে বনী ইসরাঈল **বাছুরের পূজায় লিপ্ত হয়েছিল।** 🌸 **“ওয়াত্তাখাযা কাওমু মূসা মিন্‌ হুলিয়্যিহিম”** — “তারা নিজেদের গহনা দিয়ে তৈরি করেছিল।” অর্থাৎ, তারা মিসর থেকে নিয়ে আসা স্বর্ণ ও অলংকার গলিয়ে একটি **সোনার বাছুর (golden calf)** তৈরি করেছিল।

🌿 **“‘ইজলান জাসাদান লাহু খুওয়ার”** — “একটি বাছুরের মতো প্রতিমা, যার থেকে শব্দ বের হতো।” তারা এক চতুর উপায়ে এর ভিতরে এমন ফাঁকা ব্যবস্থা করেছিল যাতে বাতাস ঢুকলে গরুর মতো আওয়াজ হয় — এতে তারা মনে করেছিল, এটি কোনো “দেবতা” কথা বলছে! 💔 🌸 এটি ছিল এক ভয়াবহ শিরক — এমন এক জাতির কাছ থেকে, যারা অল্প আগে আল্লাহর কুদরত নিজের চোখে দেখেছিল — সমুদ্র বিভাজন, ফেরাউনের ধ্বংস, মান্না ও সালওয়া প্রাপ্তি!

🌿 **“আলাম ইয়ারাও আননাহু লা ইউকাল্লিমুহুম ওয়ালা ইয়াহদিহিম সাবীলা”** — “তারা কি দেখল না, এটি তাদের সঙ্গে কথা বলে না, কিংবা পথও দেখায় না?” অর্থাৎ, সামান্য চিন্তা করলেই তারা বুঝতে পারত — এটি কোনো জীবন্ত সত্তা নয়, বরং তাদের তৈরি এক বস্তু! 🌸 কিন্তু তারা যুক্তি নয়, আবেগের অনুসরণ করল — এবং তাই অন্ধ ভক্তিতে পড়ে গেল, যা শিরক ও মূর্খতার চরম উদাহরণ 🌿

🌿 **“ইত্তাখাযুহু ওয়াকানু যালিমীন”** — “তারা একে উপাস্য বানাল, আর তারা ছিল জালিম।” এখানে “জালিম” শব্দটি শুধু অন্যের প্রতি অন্যায় বোঝায় না, বরং **নিজেদের আত্মার প্রতি অন্যায়**, কারণ তারা আল্লাহর পরিবর্তে একটি মূর্তিকে পূজা করেছে। 🌸 শিরক আসলে মানুষের আত্মার সবচেয়ে বড় অন্যায় — কারণ এটি আল্লাহর দাসত্বের মর্যাদা নষ্ট করে দেয়।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত প্রমাণ করে — মানুষ কখনও কখনও অলৌকিক কুদরত দেখেও পথ হারায়, যদি অন্তর থেকে আল্লাহভীতি হারিয়ে ফেলে। 🌸 জ্ঞান, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা — কিছুই কাজে আসে না, যদি অন্তর আখিরাতমুখী না হয়। 🌿 বনী ইসরাঈল চেয়েছিল এমন এক উপাস্য, যাকে তারা চোখে দেখতে পারে, কিন্তু আল্লাহর প্রকৃত উপাসনা চোখে নয়, হৃদয়ে।

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ সুন্দর কভার দেখে বইকে সম্মান দেয়, কিন্তু ভিতরের জ্ঞানকে উপেক্ষা করে — তেমনি বনী ইসরাঈল বাহ্যিক কিছু দেখে পূজা শুরু করেছিল, অথচ সত্যিকার উপাস্য তো আল্লাহ, যিনি অদৃশ্য অথচ সর্বব্যাপী 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকার ও গাফেলতা মানুষকে শিরকের দিকে ঠেলে দেয়।
  • আল্লাহর কুদরত দেখেও অন্তর অন্ধ হতে পারে।
  • শিরক শুধু অন্যের প্রতি নয়, নিজের আত্মার প্রতিও অন্যায়।
  • সত্য উপাসনা চোখে দেখা নয়, হৃদয়ে উপলব্ধি করা।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — যে জাতি জ্ঞানী, কিন্তু আত্মিকভাবে অন্ধ, তারা ইতিহাসে বারবার পথ হারায়। 🌸 মূর্তির পূজা শুধু প্রাচীন নয় — আজও মানুষ অর্থ, খ্যাতি, বা নিজের অহংকারকে “মূর্তি” বানিয়ে বসে আছে। এগুলোই আধুনিক যুগের বাছুর 🌿💔

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّهُۥ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًۭا ۘ ٱتَّخَذُوهُ وَكَانُوا۟ ظَـٰلِمِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে হৃদয় আল্লাহ থেকে দূরে যায়, সে কোনো না কোনো বাছুরের দাস হয়ে পড়ে।** 🌿🤍
আয়াত ১৪৯
وَلَمَّا سُقِطَ فِىٓ أَيْدِيهِمْ وَرَأَوْا۟ أَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّوا۟ قَالُوا۟ لَئِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ
ওয়ালাম্মা সুক্বিতা ফি আইদিহিম, ওয়া রাও আন্নাহুম ক্বদ দাল্লূ, ক্বালু লাইন লাম ইয়ারহামনা রাব্বুনা ওয়া ইয়াগফির লানা লানাকূনান্না মিনাল খাসিরীন।
“আর যখন তারা বুঝল (তাদের হাতে পড়ল অনুতাপ), এবং দেখল যে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, তখন তারা বলল — ‘যদি আমাদের প্রতিপালক আমাদের প্রতি দয়া না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে বনী ইসরাঈলের সেই জাগরণের মুহূর্ত — যখন তারা বুঝতে পারল, তারা এক বিশাল গোনাহ করেছে। তারা আল্লাহর উপাসনা ছেড়ে এক বাছুরের পূজায় লিপ্ত হয়েছিল। 🌸 **“ওয়ালাম্মা সুক্বিতা ফি আইদিহিম”** — এই আরবি বাক্যাংশের অর্থ — “যখন অনুতাপ তাদের হাতে পড়ল।” অর্থাৎ, তারা তাদের ভুল বুঝে **হাত কামড়াতে লাগল** (চরম অনুশোচনায়)। কুরআনের ভাষায় এটি এক **রূপক প্রকাশ** — যখন কেউ নিজের ভুলে গভীরভাবে লজ্জিত হয়, তখন সে বলে — “হায়! আমি কী করেছি!” 💔

🌿 **“ওয়া রাও আন্নাহুম ক্বদ দাল্লূ”** — “তারা দেখল যে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।” অর্থাৎ, তাদের মন খুলে গেল, সত্য প্রকাশ পেল — এখন আর কোনো অজুহাত নেই; তারা জানল, তারা এক মূর্তিকে ইলাহ বানিয়ে কঠিন পাপ করেছে।

🌸 **“ক্বালু লাইন লাম ইয়ারহামনা রাব্বুনা ওয়া ইয়াগফির লানা…”** “তারা বলল — যদি আমাদের প্রতিপালক দয়া না করেন ও ক্ষমা না করেন…” 🌿 এটি ছিল তাদের প্রথম **তাওবা ও স্বীকারোক্তি।** তারা জানল, শুধু অনুতাপ যথেষ্ট নয় — এখন আল্লাহর রহমত ও মাফই একমাত্র আশ্রয়।

🌸 **“লানাকূনান্না মিনাল খাসিরীন”** — “তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।” অর্থাৎ, আল্লাহর ক্ষমা ব্যতীত মুক্তির কোনো পথ নেই। তারা স্বীকার করল যে, নিজেরা নিজের ক্ষতি করেছে 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক মহা শিক্ষা দেয় — **পাপের পর অনুতাপই ঈমানের প্রথম চিহ্ন।** ভুল করা মানুষের স্বভাব, কিন্তু ক্ষমা চাওয়া মুমিনের গুণ। 🌸 বনী ইসরাঈল বুঝতে পেরেছিল — আল্লাহর দয়া ব্যতীত মুক্তির কোনো পথ নেই। এটি ছিল তাদের আত্মজাগরণের সূচনা, যদিও দেরিতে। 🌿 কুরআন আমাদেরও শেখায় — **আল্লাহর রহমত এতই মহান যে, সবচেয়ে বড় গোনাহও ক্ষমা পেতে পারে,** যদি বান্দা আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়।

🌸 তবুও, শুধু মুখের তাওবা নয় — প্রকৃত তাওবা মানে হল **আত্মার পরিবর্তন**, যেখানে মানুষ সেই পথে আর ফিরে যায় না 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন কোনো অন্ধকার ঘরে কেউ ভুল করে পড়ে যায়, তারপর আলো জ্বালিয়ে দেখে — “হায়! আমি কীভাবে এমন করলাম!” — ঠিক তেমনি অনুতাপ হচ্ছে সেই আলো, যা ভুলের অন্ধকার ভেদ করে হৃদয়ে জ্বলে ওঠে 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • ভুল বুঝে অনুতপ্ত হওয়া মুমিনের প্রথম বিজয়।
  • আল্লাহর রহমত ছাড়া মুক্তি অসম্ভব।
  • তাওবা মানে শুধু দুঃখ নয়, বরং পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি।
  • যে নিজের ভুল স্বীকার করে, আল্লাহ তার জন্য ক্ষমার দরজা খুলে দেন।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 মানুষ যত বড় গোনাহই করুক, আল্লাহর রহমতের দরজা কখনো বন্ধ হয় না। কিন্তু সেই দরজা খুলে যায় শুধুমাত্র **যখন মানুষ তার অহংকার ভেঙে নিজের ভুল স্বীকার করে।** 🌸 বনী ইসরাঈলের এই অনুতাপ আমাদের শেখায় — আল্লাহর দিকে ফিরে আসার পথ কখনো বন্ধ নয়, যদি তা আসে বিনয়ের সঙ্গে, চোখের অশ্রু আর হৃদয়ের দুঃখ নিয়ে 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَئِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **ভুলে পড়ে যাওয়া গোনাহ নয়, কিন্তু সেই ভুল বুঝেও ফিরে না আসা — সেটিই প্রকৃত ক্ষতি।** 🌿🤍
আয়াত ১৫০
وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰٓ إِلَىٰ قَوْمِهِۦ غَضْبَـٰنَ أَسِفًۭا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُونِى مِنۢ بَعْدِىٓ ۖ أَعَجِلْتُمْ أَمْرَ رَبِّكُمْ ۖ وَأَلْقَى ٱلْأَلْوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِۦ يَجُرُّهُۥٓ إِلَيْهِ ۚ قَالَ ٱبْنَ أُمَّ إِنَّ ٱلْقَوْمَ ٱسْتَضْعَفُونِى وَكَادُوا۟ يَقْتُلُونَنِى فَلَا تُشْمِتْ بِىَ ٱلْأَعْدَآءَ وَلَا تَجْعَلْنِى مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّـٰلِمِينَ
ওয়ালাম্মা রজাআ মূসা ইলা কওমিহি গাদ্ববান আসিফা, ক্বালা বিইসা মা খালাফতুমুনী মিন্‌ বা‘দী, আআজিলতুম আমরা রাব্বিকুম, ওয়া আলকা আল-আলওয়াহা, ওয়া আখাযা বিরআসি আখীহি ইয়াজুররুহু ইলাইহি, ক্বালা ইবন উম্মা ইন্নাল কওমাস্তাদ্বআফূনী ওয়া কাদু ইয়াক্তুলুনানী, ফালা তুশমিত বিয়াল আ‘দা’, ওয়ালা তাজ‘আলনী মাআল কওমিজ যালিমীন।
“আর যখন মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এলেন, ক্রুদ্ধ ও দুঃখিত অবস্থায় বললেন — ‘তোমরা আমার অনুপস্থিতিতে কী নিকৃষ্ট কাজ করলে! তোমরা কি তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের জন্য ধৈর্য ধরতে পারলে না?’ তখন তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন এবং তাঁর ভাইয়ের মাথা ধরে তাঁকে নিজের দিকে টানতে লাগলেন। (হারুন বললেন) — ‘হে আমার জননী-জাত ভাই! এই সম্প্রদায় আমাকে দুর্বল মনে করেছে এবং তারা আমাকে প্রায় হত্যা করেছিল! তাই তুমি আমার ওপর শত্রুদের হাসির কারণ করো না, এবং আমাকে এই অন্যায়কারী সম্প্রদায়ের সঙ্গে গণ্য করো না।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে এক প্রবল মানবিক আবেগের চিত্র ফুটে উঠেছে — মূসা (আঃ) তুর পাহাড় থেকে ফিরলেন আল্লাহর কালাম ও ফলকসমূহ নিয়ে, কিন্তু তাঁর জাতি তখন শিরক ও বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত।

🌸 **“গাদ্ববান আসিফা”** — অর্থাৎ, “রাগান্বিত ও গভীরভাবে দুঃখিত।” রাগ ছিল গোনাহ দেখার কারণে, আর দুঃখ ছিল প্রিয় জাতির পতনের জন্য 💔 🌿 **“বিইসা মা খালাফতুমুনী”** — “তোমরা কত নিকৃষ্টভাবে আমার অনুপস্থিতিতে কাজ করলে!” অর্থাৎ, তোমরা সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙে ফেললে যা আমি তোমাদের সঙ্গে করে গিয়েছিলাম — শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে।

🌸 **“আআজিলতুম আমরা রাব্বিকুম”** — “তোমরা কি তোমাদের রবের আদেশের জন্য ধৈর্য ধরতে পারলে না?” অর্থাৎ, আমি তো সাময়িকভাবে আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে গিয়েছিলাম — কিন্তু তোমরা এত অস্থির হলে যে আল্লাহকে ছেড়ে বাছুর বানালে!

🌿 **“ওয়া আলকা আল-আলওয়াহা”** — “তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন।” এটি ক্রোধের প্রকাশ, অসম্মানের নয়। কারণ পরক্ষণেই তিনি তা পুনরায় তুলে নিয়েছিলেন। এটি তাঁর গভীর ব্যথা ও আঘাতের মুহূর্ত 🌸 🌿 **“ওয়া আখাযা বিরআসি আখীহি ইয়াজুররুহু ইলাইহি”** — “তিনি তাঁর ভাইয়ের মাথা ধরে নিজের দিকে টানলেন।” এটি তাঁর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল, কারণ হারুন (আঃ) জাতির মধ্যে রেখে যাওয়া নবী ছিলেন। মূসা (আঃ) ভেবেছিলেন, হয়তো ভাই তাঁর কর্তব্যে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

🌸 কিন্তু হারুন (আঃ) সঙ্গে সঙ্গে বললেন — **“ইবন উম্মা (হে আমার জননী-জাত ভাই!)”** — এটি অত্যন্ত কোমল, আবেগপূর্ণ শব্দ। হারুন (আঃ) এভাবে বললেন যেন ভাইয়ের ক্রোধ শান্ত হয়। 🌿 তিনি ব্যাখ্যা করলেন — “কওম আমাকে দুর্বল মনে করেছিল এবং প্রায় হত্যা করেছিল।” অর্থাৎ, আমি তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাই আমি অপেক্ষা করেছি তোমার আগমনের জন্য। 🌸 এরপর হারুন (আঃ) বললেন — “আমার ওপর শত্রুদের হাসির কারণ করো না।” অর্থাৎ, যদি তুমি আমাকে কঠিনভাবে তিরস্কার করো, তাহলে শত্রুরা হাসবে, মনে করবে আমি তোমার শত্রু। 🌿 “আমাকে যালিমদের সঙ্গে গণ্য করো না।” অর্থাৎ, আমি তাদের মতো নই; আমি তাদের থামাতে চেষ্টা করেছি।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে দুই নবীর (মূসা ও হারুন আলাইহিমাস সালাম) মানবিক ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ ও নবুওয়াতের আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে। 🌸 মূসা (আঃ) একজন রসূল হিসেবে দায়িত্বের ভারে জ্বলছিলেন, আর হারুন (আঃ) ছিলেন কোমল, সহিষ্ণু ও শান্ত স্বভাবের। 🌿 রাগ এখানে **আল্লাহর জন্য রাগ (غضب لله)** — ব্যক্তিগত নয়, বরং ঈমানের সুরক্ষা ও শিরকের প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা আগুন। 🌸 হারুন (আঃ)-এর উত্তর থেকে আমরা শিখি — নরম ভাষা রাগকে গলিয়ে দেয়। “হে আমার জননী-জাত ভাই” — এই বাক্য ভালোবাসার এমন কোমল প্রকাশ, যা ক্রোধকে মুহূর্তেই শান্ত করে দেয় 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন শিক্ষক নিজের ছাত্রদের ভুলে ক্ষুব্ধ হন, কিন্তু তাঁর রাগের উদ্দেশ্য শাস্তি নয় — সংশোধন। তেমনি মূসা (আঃ)-এর ক্রোধও জাতির কল্যাণের জন্যই ছিল, ব্যক্তিগত ক্ষোভের জন্য নয় 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • পাপ ও শিরকের প্রতি রাগ ঈমানের অংশ।
  • কখনো কখনো রাগও হিদায়াতের কারণ হতে পারে, যদি তা আল্লাহর জন্য হয়।
  • ভাইয়ের প্রতি কোমল আচরণ, এমনকি কঠিন মুহূর্তেও, নবীদের চরিত্র।
  • অহংকার নয়, বিনয় ও ব্যাখ্যা — ভুল বোঝাবুঝি দূর করে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — নেতৃত্ব মানে শুধু দায়িত্ব নয়, হৃদয়ের ভারও বহন করা। একজন দায়িত্বশীল মানুষ কখনো কখনো আবেগে কাঁপে, কিন্তু তার সেই আবেগও সত্যের জন্যই হয় 🌸 🌿 একই সঙ্গে শেখায় — “রাগ নিয়ন্ত্রণ” ও “কোমল ভাষায় উত্তর দেওয়া” — উভয়ই নবীদের শিক্ষা।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰٓ إِلَىٰ قَوْمِهِۦ غَضْبَـٰنَ أَسِفًۭا...”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **সত্যের প্রতি ভালোবাসা যেমন মমতায় জ্বলে, তেমনি মিথ্যার প্রতি ক্রোধেও জ্বলে ওঠে। উভয়ই আল্লাহর জন্য হলে তা ইমানের নিদর্শন।** 🌿🤍
আয়াত ১৫১
قَالَ رَبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِأَخِى وَأَدْخِلْنَا فِى رَحْمَتِكَ وَأَنتَ أَرْحَمُ ٱلرَّـٰحِمِينَ
ক্বালা রাব্বিগফির লী ওয়া লি-আখী, ওয়াদ্‌খিলনা ফী রহমাতিকা, ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমীন।
“তিনি বললেন — হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করুন, এবং আমাদেরকে আপনার রহমতের অন্তর্ভুক্ত করুন। নিশ্চয়ই আপনি দয়াবানদের মধ্যে সর্বাধিক দয়াবান।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আগের আয়াতে আমরা দেখেছিলাম মূসা (আঃ)-এর প্রবল ক্রোধ ও কষ্ট, কিন্তু এখন সেই ক্রোধ **রহমতের দোয়ায় পরিণত হয়েছে।** এই আয়াত নবীর হৃদয়ের কোমলতা ও বিনয় প্রকাশ করে।

🌸 **“রাব্বিগফির লী ওয়া লি-আখী”** — “হে আমার রব, আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করুন।” এখানে মূসা (আঃ) নিজের ও হারুন (আঃ)-এর জন্য একত্রে ক্ষমা চান। 🌿 যদিও হারুন (আঃ) দোষী ছিলেন না, তবুও মূসা (আঃ) নিজের কঠোর আচরণের কারণে তাঁর ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাইলেন। এটি নবীর **নম্রতা ও আত্মসমালোচনার** এক অনন্য দৃষ্টান্ত 🌸

🌸 **“ওয়াদ্‌খিলনা ফী রহমাতিকা”** — “আমাদেরকে আপনার রহমতের অন্তর্ভুক্ত করুন।” অর্থাৎ, শুধু ক্ষমাই নয়, বরং আল্লাহর **স্নেহ, দয়া ও সন্তুষ্টি**-এর ছায়াতেও রাখতে চান। 🌿 মূসা (আঃ)-এর দোয়া এখানে এক গভীর শিক্ষা দেয় — শুধু নিজের জন্য নয়, ভাইয়ের জন্যও ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ সত্যিকারের নেতা কেবল নিজের মুক্তি চায় না, বরং তার সঙ্গীদেরও মুক্তি কামনা করে 🌸

🌿 **“ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমীন”** — “আপনি দয়াবানদের মধ্যে সর্বাধিক দয়াবান।” এটি এমন এক নাম, যা রাগকে গলিয়ে দেয়, ব্যথাকে শান্তিতে রূপ দেয় — আল্লাহর নামের মাধ্যমে 💫

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত প্রমাণ করে — **রাগের পর ক্ষমা, আর ক্রোধের পর দোয়া — সেটিই নবীর চরিত্র।** 🌸 মূসা (আঃ) রাগে ফলক ফেলেছিলেন, কিন্তু পরে সেই রাগ দোয়ায় রূপ নিল। তিনি শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, নিজের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। 🌿 এটি শেখায় — **যে মানুষ ক্ষমা করতে পারে, সে-ই সত্যিকারভাবে শক্তিশালী।** নবীরা রাগ করেন আল্লাহর জন্য, কিন্তু শান্ত হন রহমতের জন্য 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন মেঘ বিদ্যুৎ ছাড়ে গর্জনে, কিন্তু শেষে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে — তেমনি নবীর রাগও প্রথমে বজ্রের মতো জ্বলে, কিন্তু শেষে দয়া হয়ে নেমে আসে 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • ভুল বুঝে নরম হয়ে ক্ষমা চাওয়া নবীদের গুণ।
  • রাগ ও দোয়া — উভয়ই যদি আল্লাহর জন্য হয়, তবে তা ইমানের নিদর্শন।
  • ভাইয়ের জন্য দোয়া করা আত্মীয়তার ও ঈমানের প্রকাশ।
  • আল্লাহর রহমতই প্রকৃত প্রশান্তি ও মুক্তির স্থান।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 রাগের পর যদি কেউ নিজের ভুল বুঝে ক্ষমা চায়, আল্লাহ তার সেই বিনয়কে ভালোবাসেন। 🌸 “হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা কর” — এই বাক্যই নবীদের জীবনের সৌন্দর্য। তারা ভুল করলে লুকায় না, বরং আল্লাহর দিকে ফিরে আসে 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“رَبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِأَخِى وَأَدْخِلْنَا فِى رَحْمَتِكَ وَأَنتَ أَرْحَمُ ٱلرَّـٰحِمِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **রাগের পর দোয়া, আর ভুলের পর ক্ষমা — এই দুই মিলেই গঠিত হয় নবীসুলভ হৃদয়।** 🌿🤍
আয়াত ১৫২
إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌۭ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُفْتَرِينَ
ইন্নাল্লাযীনা ইত্তাখাযুল ইজলা, সায়ানালুহুম গাদ্বাবুম মিন রাব্বিহিম, ওয়া জিল্লাতুন ফিল হায়াতিদ দুনিয়া, ওয়া কাযালিকা নাজযিল মুফতারীন।
“নিশ্চয় যারা বাছুরকে (উপাস্য) বানিয়েছিল, তাদের ওপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ পতিত হবে, এবং দুনিয়ার জীবনে তারা লাঞ্ছিত হবে। আর এভাবেই আমরা মিথ্যা আরোপকারীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি মূসা (আঃ)-এর জাতির এক করুণ পরিণতি ঘোষণা করছে। যারা আল্লাহকে ছেড়ে বাছুরের পূজা করেছিল, তারা শুধু ঈমান হারায়নি, বরং নিজেদের মর্যাদাও হারিয়েছিল 💔 🌸 **“ইন্নাল্লাযীনা ইত্তাখাযুল ইজলা”** — অর্থাৎ, “যারা বাছুরকে উপাস্য বানিয়েছিল।” এটি কেবল একটি শারীরিক মূর্তির পূজা নয়, বরং আল্লাহর একত্বের সরাসরি অস্বীকৃতি।

🌿 **“সায়ানালুহুম গাদ্বাবুম মিন রাব্বিহিম”** — “তাদের ওপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ পতিত হবে।” অর্থাৎ, আল্লাহ তাদের ওপর এমন শাস্তি দেবেন, যা কেবল দুনিয়াতে নয়, আখিরাতেও থাকবে। 🌸 আল্লাহর “গাদ্বাব” মানে কেবল রাগ নয় — বরং আল্লাহর বিচার ও ন্যায়সংগত প্রতিক্রিয়া। যিনি শিরক করে, সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয় 🌿

🌿 **“ওয়া জিল্লাতুন ফিল হায়াতিদ দুনিয়া”** — “দুনিয়ার জীবনে তারা হবে লাঞ্ছিত।” অর্থাৎ, তাদের সমাজে সম্মান হারিয়ে যাবে, তারা হবে অপমানিত ও অধীনস্থ জাতি। 🌸 ইতিহাস সাক্ষী — বনী ইসরাঈল নিজেদের ভুলে বারবার দাসত্ব, লাঞ্ছনা ও দুঃখ ভোগ করেছে, কারণ তারা আল্লাহর হুকুম ভুলে নিজেদের কামনাকে উপাস্য বানিয়েছিল 💔 🌿 এই দুনিয়ার লাঞ্ছনা ছিল তাদের ঈমানহীনতার প্রতিফল, আর আখিরাতে তাদের জন্য থাকবে চিরস্থায়ী শাস্তি।

🌿 **“ওয়া কাযালিকা নাজযিল মুফতারীন”** — “আর এভাবেই আমরা মিথ্যা আরোপকারীদের প্রতিফল দিই।” অর্থাৎ, যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে বা তাঁর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার বানায়, তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তি অনিবার্য। 🌸 “মুফতারীন” শব্দটি এসেছে “ইফতিরা” থেকে — যার অর্থ “আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করা।” যেমন কেউ বলে, “এই মূর্তি আমাদের উপকার করবে” — অথচ এটি আল্লাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিথ্যা 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শিরক ও বিদআতের পরিণতি প্রকাশ করে। **আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর পূজা শুধু ঈমান নষ্ট করে না, বরং আত্মসম্মানও ধ্বংস করে।** 🌸 যখন মানুষ আল্লাহর দাসত্ব ছেড়ে অন্য কিছুর দাস হয়, তখন সে মানুষের কাছেও হীন হয়ে পড়ে। 🌿 আল্লাহর দাসত্বই সম্মান, আর সৃষ্টির দাসত্বই অপমান 🌿

🌸 এই আয়াত আজকের যুগেও প্রযোজ্য — অনেকেই “আধুনিক বাছুর” বানিয়েছে: অর্থ, খ্যাতি, আসন, মোহ, কিংবা নিজের অহংকার। এগুলোও মানুষকে অপমানিত করে, যেমন বাছুর করেছিল বনী ইসরাঈলকে 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ রাজাকে ছেড়ে তার দাসের সামনে মাথা নত করে, সে শুধু অপরাধী নয়, বরং অপমানিতও। তেমনি আল্লাহর দাসত্ব ছেড়ে অন্য কারো দাস হওয়া — আত্মসম্মানের বিনাশ 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • শিরক শুধু আল্লাহর অবমাননা নয়, নিজেরও অপমান।
  • আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকা মানেই আত্মিক মৃত্যু।
  • দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখিরাতের শাস্তি — শিরকের পরিণতি।
  • আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপকারীরা কখনো সফল হয় না।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 সম্মান আসে তখনই, যখন মানুষ আল্লাহর দাস হয়। অন্য কিছু বা কাউকে উপাস্য বানানো মানে, নিজের মর্যাদাকে পদদলিত করা। 🌸 তাই আল্লাহ বলেন — “যারা মিথ্যা উদ্ভাবন করে, আমি তাদের এমনই পরিণতি দিই।” এটি শুধু ঐতিহাসিক নয়, বরং চিরন্তন শিক্ষা 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌۭ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۚ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর দাসত্বই সম্মান, আর অন্য কিছুর দাসত্বই অপমান।** 🌿🤍
আয়াত ১৫২
إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌۭ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُفْتَرِينَ
ইন্নাল্লাযীনা ইত্তাখাযুল ইজলা, সায়ানালুহুম গাদ্বাবুম মিন রাব্বিহিম, ওয়া জিল্লাতুন ফিল হায়াতিদ দুনিয়া, ওয়া কাযালিকা নাজযিল মুফতারীন।
“নিশ্চয় যারা বাছুরকে (উপাস্য) বানিয়েছিল, তাদের ওপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ পতিত হবে, এবং দুনিয়ার জীবনে তারা লাঞ্ছিত হবে। আর এভাবেই আমরা মিথ্যা আরোপকারীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি মূসা (আঃ)-এর জাতির এক করুণ পরিণতি ঘোষণা করছে। যারা আল্লাহকে ছেড়ে বাছুরের পূজা করেছিল, তারা শুধু ঈমান হারায়নি, বরং নিজেদের মর্যাদাও হারিয়েছিল 💔 🌸 **“ইন্নাল্লাযীনা ইত্তাখাযুল ইজলা”** — অর্থাৎ, “যারা বাছুরকে উপাস্য বানিয়েছিল।” এটি কেবল একটি শারীরিক মূর্তির পূজা নয়, বরং আল্লাহর একত্বের সরাসরি অস্বীকৃতি।

🌿 **“সায়ানালুহুম গাদ্বাবুম মিন রাব্বিহিম”** — “তাদের ওপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ পতিত হবে।” অর্থাৎ, আল্লাহ তাদের ওপর এমন শাস্তি দেবেন, যা কেবল দুনিয়াতে নয়, আখিরাতেও থাকবে।

🌸 আল্লাহর “গাদ্বাব” মানে কেবল রাগ নয় — বরং আল্লাহর বিচার ও ন্যায়সংগত প্রতিক্রিয়া। যিনি শিরক করে, সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয় 🌿

🌿 **“ওয়া জিল্লাতুন ফিল হায়াতিদ দুনিয়া”** — “দুনিয়ার জীবনে তারা হবে লাঞ্ছিত।” অর্থাৎ, তাদের সমাজে সম্মান হারিয়ে যাবে, তারা হবে অপমানিত ও অধীনস্থ জাতি। 🌸 ইতিহাস সাক্ষী — বনী ইসরাঈল নিজেদের ভুলে বারবার দাসত্ব, লাঞ্ছনা ও দুঃখ ভোগ করেছে, কারণ তারা আল্লাহর হুকুম ভুলে নিজেদের কামনাকে উপাস্য বানিয়েছিল 💔 🌿 এই দুনিয়ার লাঞ্ছনা ছিল তাদের ঈমানহীনতার প্রতিফল, আর আখিরাতে তাদের জন্য থাকবে চিরস্থায়ী শাস্তি।

🌿 **“ওয়া কাযালিকা নাজযিল মুফতারীন”** — “আর এভাবেই আমরা মিথ্যা আরোপকারীদের প্রতিফল দিই।” অর্থাৎ, যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে বা তাঁর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার বানায়, তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তি অনিবার্য। 🌸 “মুফতারীন” শব্দটি এসেছে “ইফতিরা” থেকে — যার অর্থ “আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করা।” যেমন কেউ বলে, “এই মূর্তি আমাদের উপকার করবে” — অথচ এটি আল্লাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিথ্যা 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শিরক ও বিদআতের পরিণতি প্রকাশ করে। **আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর পূজা শুধু ঈমান নষ্ট করে না, বরং আত্মসম্মানও ধ্বংস করে।** 🌸 যখন মানুষ আল্লাহর দাসত্ব ছেড়ে অন্য কিছুর দাস হয়, তখন সে মানুষের কাছেও হীন হয়ে পড়ে। 🌿 আল্লাহর দাসত্বই সম্মান, আর সৃষ্টির দাসত্বই অপমান 🌿

🌸 এই আয়াত আজকের যুগেও প্রযোজ্য — অনেকেই “আধুনিক বাছুর” বানিয়েছে: অর্থ, খ্যাতি, আসন, মোহ, কিংবা নিজের অহংকার। এগুলোও মানুষকে অপমানিত করে, যেমন বাছুর করেছিল বনী ইসরাঈলকে 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ রাজাকে ছেড়ে তার দাসের সামনে মাথা নত করে, সে শুধু অপরাধী নয়, বরং অপমানিতও। তেমনি আল্লাহর দাসত্ব ছেড়ে অন্য কারো দাস হওয়া — আত্মসম্মানের বিনাশ 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • শিরক শুধু আল্লাহর অবমাননা নয়, নিজেরও অপমান।
  • আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকা মানেই আত্মিক মৃত্যু।
  • দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখিরাতের শাস্তি — শিরকের পরিণতি।
  • আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপকারীরা কখনো সফল হয় না।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 সম্মান আসে তখনই, যখন মানুষ আল্লাহর দাস হয়। অন্য কিছু বা কাউকে উপাস্য বানানো মানে, নিজের মর্যাদাকে পদদলিত করা। 🌸 তাই আল্লাহ বলেন — “যারা মিথ্যা উদ্ভাবন করে, আমি তাদের এমনই পরিণতি দিই।” এটি শুধু ঐতিহাসিক নয়, বরং চিরন্তন শিক্ষা 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌۭ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۚ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর দাসত্বই সম্মান, আর অন্য কিছুর দাসত্বই অপমান।** 🌿🤍
আয়াত ১৫৩
وَٱلَّذِينَ عَمِلُوا۟ ٱلسَّيِّـَٔاتِ ثُمَّ تَابُوا۟ مِنۢ بَعْدِهَا وَءَامَنُوٓا۟ إِنَّ رَبَّكَ مِنۢ بَعْدِهَا لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ
ওয়াল্লাযীনা আমিলুস্‌সাইয়িয়াতি সুম্মা তাবূ মিঙ্ক্‌ বা‘দিহা ওয়া আমানূ, ইন্না রাব্বাকা মিঙ্ক্‌ বা‘দিহা লাগাফুরুর রহীম।
“আর যারা পাপ করেছে, তারপর সেই পাপের পর তাওবা করেছে ও ঈমান এনেছে — নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সেই তাওবার পর অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত এক **রহমত ও আশার ঘোষণা।** আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিলেন — এমনকি যারা বাছুর-পূজার মতো গুরুতর গোনাহ করেছে, তারাও যদি আন্তরিকভাবে ফিরে আসে, তবে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করতে প্রস্তুত।

🌸 **“ওয়াল্লাযীনা আমিলুস্‌সাইয়িয়াতি”** — “যারা পাপ করেছে।” অর্থাৎ, আল্লাহ এখানে পাপীদের কথাই বলছেন — কারণ তাওবা কেবল তাদের জন্যই যাদের ভুল হয়েছে।

🌿 **“সুম্মা তাবূ মিঙ্ক্‌ বা‘দিহা”** — “তারপর তারা সেই পাপের পর তাওবা করেছে।” অর্থাৎ, তারা ভুল বুঝে ফিরে এসেছে আল্লাহর দিকে। তাওবা মানে শুধু মুখে “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলা নয় — বরং হৃদয় ভেঙে, পথ পরিবর্তনের সংকল্প করা 🌸 🌿 **“ওয়া আমানূ”** — “ও ঈমান এনেছে।” অর্থাৎ, তারা শুধু অনুতপ্ত নয়, বরং পুনরায় ঈমান ও সৎকর্মে ফিরে এসেছে। তাদের তাওবা **কর্মে প্রকাশ পেয়েছে।**

🌸 **“ইন্না রাব্বাকা মিঙ্ক্‌ বা‘দিহা লাগাফুরুর রহীম”** — “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সেই তাওবার পর অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু।” এখানে “লাগাফুরুর রহীম” শব্দ দুটি জোর দিয়ে এসেছে — যেন আল্লাহ নিজেই আশ্বস্ত করছেন, “হে পাপী বান্দা, ফিরে এসো — আমি তোমাকে গ্রহণ করব।” 🤍

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আল্লাহর **অসীম ক্ষমা**র পরিচয়। আল্লাহ শুধু ক্ষমা করেন না, বরং তাওবা করা বান্দার অতীত পাপকে মুছে দিয়ে তার আমলনামা নবীন করে দেন 🌸 🌿 যত বড় পাপই হোক — যদি তাওবা সত্যিকারের হয়, আল্লাহ বলেন — **“আমি তাদের গোনাহকে সৎকর্মে পরিবর্তন করে দিই।”** (সূরা ফুরকান ২৫:৭০) 🌸 তাই পাপের পর হতাশ হওয়া উচিত নয়, বরং সেই পাপই যেন তাওবার দরজা খুলে দেয় 🌿

🌿 এই আয়াত একই সঙ্গে দুইটি দিক শিক্ষা দেয় — ১️⃣ **আল্লাহর ন্যায়বিচার:** পাপ করলে শাস্তি প্রাপ্য। ২️⃣ **আল্লাহর রহমত:** কিন্তু তাওবা করলে ক্ষমা নিশ্চিত। 🌸 এটি এক ঈমানি ভারসাম্য — মানুষকে ভয় ও আশা — উভয়েই পথ দেখায় 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একটি কলমের ভুল মুছে ফেলা যায় রাবার দিয়ে, তেমনি পাপের দাগ মুছে যায় তাওবার অশ্রু দিয়ে 🌸 🌸 তাওবা হলো সেই পানি, যা হৃদয়কে ধুয়ে পরিশুদ্ধ করে ফেলে যতই কালো দাগ জমে থাকুক না কেন 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • পাপ মানুষকে ধ্বংস করে না, যদি সে তাওবার মাধ্যমে ফিরে আসে।
  • আল্লাহর রহমত থেকে কখনো হতাশ হওয়া হারামের সমান।
  • তাওবা মানে শুধু অনুতাপ নয়, বরং পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা।
  • আল্লাহ গাফুর (ক্ষমাশীল) ও রহীম (দয়ালু) — এটাই মুমিনের ভরসা।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — আল্লাহর কাছে ফিরে আসার জন্য কোনো “দরজার সময়সীমা” নেই। যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ আল্লাহর রহমতের আমন্ত্রণ খোলা 🌸 🌸 বাছুর-পূজার মতো গোনাহও ক্ষমা পেল, তাহলে আমার বা তোমার গোনাহ আল্লাহ কেন ক্ষমা করবেন না? 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“إِنَّ رَبَّكَ مِنۢ بَعْدِهَا لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে তাওবা করে, সে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় ফিরে আসে; আর যে হতাশ হয়, সে নিজেরই ক্ষতি করে।** 🌿🤍
আয়াত ১৫৪
وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى ٱلْغَضَبُ أَخَذَ ٱلْأَلْوَاحَ ۖ وَفِى نُسْخَتِهَا هُدًۭى وَرَحْمَةٌۭ لِّلَّذِينَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ
ওয়ালাম্মা সাকাতা আন মূসাল গাদ্বাবু, আখাযাল আলওয়াহা, ওয়া ফি নুসখাতিহা হুদাওঁ ওয়া রহমাতুন, লিল্লাযীনা হুম লিরাব্বিহিম ইয়াহাবূন।
“আর যখন মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলো, তখন তিনি ফলকগুলো তুলে নিলেন; আর সেগুলোর লিখিত অংশে ছিল তাদের জন্য হিদায়াত ও রহমত, যারা তাদের প্রতিপালকের ভয় রাখে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত মূসা (আঃ)-এর হৃদয়কে আবার প্রশান্ত করে দেয়। আল্লাহর প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধের ভারে তিনি ক্ষোভে ফলকগুলো ছেড়ে দিয়েছিলেন (আয়াত ১৫০ তে)। এখন যখন রাগ প্রশমিত হলো, তিনি আবার সেই ফলকগুলো তুলে নিলেন — যাতে ছিল আল্লাহর নির্দেশ, দয়া ও হিদায়াতের বাণী 🌸 🌸 **“ওয়ালাম্মা সাকাতা আন মূসাল গাদ্বাবু”** — অর্থাৎ, “যখন মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলো।” ক্রোধ প্রশমিত হওয়া মানে তাঁর অন্তর শান্ত হয়ে গেল, কারণ রাগ ছিল আল্লাহর জন্য, জাতির ভুলের জন্য। এখন সেই রাগ জায়গা করে দিল রহমত ও দোয়াকে 🌿

🌿 **“আখাযাল আলওয়াহা”** — “তিনি ফলকগুলো তুলে নিলেন।” এগুলো সেই পাথরের ফলক, যাতে আল্লাহ নিজেই তাওরাতের অংশ লিখে দিয়েছিলেন। এতে নবী মূসা (আঃ)-এর মর্যাদা ফুটে ওঠে — আল্লাহ তাঁকে সরাসরি কিতাব দিলেন 🕋

🌸 **“ওয়া ফি নুসখাতিহা হুদাওঁ ওয়া রহমাতুন”** — “আর এর লিখিত অংশে ছিল হিদায়াত ও রহমত।” অর্থাৎ, এই কিতাবে ছিল দুইটি জিনিস — 👉 হিদায়াত (সঠিক পথের নির্দেশনা) 👉 রহমত (আল্লাহর দয়া, যা মানুষকে শান্তি দেয়) 🌿 কুরআনেও একইভাবে আল্লাহ বলেন — **“এই কিতাবে রয়েছে হিদায়াত ও রহমত ঈমানদারদের জন্য।”** (সূরা আন-নাহল ১৬:৮৯) 🌸 তাই আল্লাহর বাণী শুধু আইন নয়, এটি একই সঙ্গে করুণা ও আলো 🌿

🌿 **“লিল্লাযীনা হুম লিরাব্বিহিম ইয়াহাবূন”** — “যারা তাদের প্রতিপালকের ভয় রাখে।” অর্থাৎ, যারা আল্লাহর সামনে নিজেদের দুর্বল মনে করে, যাদের হৃদয় গুনাহে কাঁপে ও তাওবায় নরম হয়, তারাই প্রকৃতভাবে এই কিতাব থেকে উপকৃত হতে পারে 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক গভীর আধ্যাত্মিক পরিবর্তনের চিত্র — **রাগ থেকে রহমতে**, **ক্রোধ থেকে শান্তিতে**, **আঘাত থেকে হিদায়াতে** পৌঁছে যাওয়া এক নবীর গল্প 🌸 🌸 মূসা (আঃ)-এর রাগ গলিয়ে দেয় দয়া; কারণ তাঁর লক্ষ্য ছিল জাতির হিদায়াত, শাস্তি নয়। তিনি যখন বুঝলেন আল্লাহর কিতাবে আছে রহমত, তখন তাঁর হৃদয় শান্ত হলো 🌿 🌿 এটি আমাদের শেখায় — যখন মানুষ আল্লাহর বাণীতে ফিরে আসে, তখন ক্রোধ ও কষ্ট সব মিলিয়ে যায়, থাকে শুধু প্রশান্তি ও রহমত 💫

উদাহরণ:
🌿 যেমন ঝড়ের পর শান্ত সমুদ্র আবার নীল হয়ে ওঠে, তেমনি রাগের পর হৃদয় শান্ত হয় আল্লাহর কিতাবের আলোয়। মূসা (আঃ)-এর ক্রোধ ছিল ঝড়ের মতো, কিন্তু আল্লাহর বাণী তাঁকে আবার প্রশান্ত করল 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর কিতাবই প্রকৃত প্রশান্তির উৎস।
  • যে হৃদয়ে আল্লাহভীতি আছে, তার জন্য কুরআন ও ওহি রহমত।
  • রাগ ও কষ্ট দূর করার উপায় — আল্লাহর বাণীতে ফিরে আসা।
  • নবীদের ক্রোধও শেষ পর্যন্ত দয়ায় রূপ নেয়, কারণ তারা আল্লাহর পথে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর কিতাব শুধুই বিধান নয়, বরং এটি মানবতার জন্য ভালোবাসা ও দয়ার বার্তা। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা এই কিতাবের মাধ্যমে দুনিয়ার অন্ধকারে আলো খুঁজে পায় 🌸 🌸 তাই, মূসা (আঃ) ফলক তুললেন — যেন সেই আলো আবার তাঁর জাতির মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَفِى نُسْخَتِهَا هُدًۭى وَرَحْمَةٌۭ لِّلَّذِينَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যারা আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাদের জন্য তাঁর কিতাবকে রহমত ও হিদায়াত বানান।** 🌿🤍
আয়াত ১৫৫
وَٱخْتَارَ مُوسَىٰ قَوْمَهُۥ سَبْعِينَ رَجُلًۭا لِّمِيقَـٰتِنَا فَلَمَّآ أَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ قَالَ رَبِّ لَوْ شِئْتَ أَهْلَكْتَهُم مِّن قَبْلُ وَإِيَّـٰىٓ ۖ أَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلسُّفَهَآءُ مِنَّآ ۖ إِنْ هِىَ إِلَّا فِتْنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَن تَشَآءُ وَتَهْدِى مَن تَشَآءُ ۖ أَنتَ وَلِيُّنَا فَٱغْفِرْ لَنَا وَٱرْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْغَـٰفِرِينَ
ওয়াখতারা মূসা কওমাহু সাব‘ইনা রজুলান লিমীকাতিনা, ফালাম্মা আখাযাতহুমুর রজফাহ, ক্বালা রাব্বি লাও শি’তা আহলাকতাহুম মিন কাবলু ওয়া ইয়া, আতুহলিকুনা বিমা ফা‘আলাস সুফাহাউ মিন্না, ইন হিয়া ইল্লা ফিতনাতুকা, তুদিল্লু বিহা মান তাশা’, ওয়াতাহদী মান তাশা’, আন্তা ওয়ালীয়্যুনা ফাগফির লানা ওয়ারহামনা, ওয়া আন্তা খাইরুল গাফিরীন।
“আর মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে সত্তর জন মানুষকে আমাদের নির্ধারিত সময়ে (সাক্ষাতের জন্য) বাছাই করলেন। কিন্তু যখন তাদেরকে ভূমিকম্পে গ্রাস করল, তখন তিনি বললেন — ‘হে আমার প্রভু! আপনি ইচ্ছা করলে এর আগে তাদেরকেও এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতেন। তবে কি আপনি আমাদের ধ্বংস করবেন, আমাদের মধ্যে যারা মূর্খতা করেছে তাদের কাজের জন্য? এটা তো আপনারই পরীক্ষা — আপনি যার ইচ্ছা তাকে বিভ্রান্ত করেন, আর যার ইচ্ছা তাকে হিদায়াত দেন। আপনি আমাদের অভিভাবক, সুতরাং আমাদের ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম ক্ষমাকারী।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি বনী ইসরাঈলের ইতিহাসের এক গভীর ও বেদনাদায়ক অধ্যায়। যখন মূসা (আঃ) তাঁর জাতির মধ্য থেকে **৭০ জন প্রতিনিধি** নির্বাচিত করলেন, যাতে তারা আল্লাহর সামনে তাওবা ও মাফ প্রার্থনা করতে পারে। 🌸 কিন্তু সেই পবিত্র মুহূর্তে, তারা এমন কিছু কথা বলল যা ছিল **অশোভন ও অবিশ্বাসে ভরা** — তারা বলেছিল, “হে মূসা, আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আল্লাহকে সরাসরি দেখে ফেলি।” (দেখুন: সূরা বাকারা ২:৫৫) 🌿 ফলে আল্লাহ তাদের ওপর **ভূমিকম্প বা বজ্রাঘাত** পাঠালেন। 🌸 এই সময়ে মূসা (আঃ) ভীত ও ব্যথিত হয়ে আল্লাহর কাছে বললেন — “হে আমার রব, যদি আপনি ইচ্ছা করতেন, আগেই আমাদের ধ্বংস করতে পারতেন। এখন কি আপনি আমাদের ধ্বংস করবেন, কিছু মূর্খদের দোষে?” 💔

🌿 **“ইন হিয়া ইল্লা ফিতনাতুকা”** — “এটা তো আপনারই পরীক্ষা।” অর্থাৎ, আপনি আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন, কে ধৈর্য ধরবে, কে জিদ করবে। 🌸 মূসা (আঃ)-এর এই দোয়ায় এক নবীর বোধ, বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নিজের জাতির অপরাধেও নিজের দায়িত্ব অনুভব করেছেন — যেন বলছেন, “হে আল্লাহ, আমরা সবাই আপনারই বান্দা, যদি আপনি না ক্ষমা করেন, আমাদের রক্ষা করার কেউ নেই।” 🌿

🌿 **“তুদিল্লু বিহা মান তাশা’, ওয়াতাহদী মান তাশা’”** — “আপনি যাকে চান, তাকে বিভ্রান্ত করেন, আর যাকে চান, হিদায়াত দেন।” অর্থাৎ, হিদায়াত শুধু জ্ঞানে নয়, বরং আল্লাহর অনুগ্রহে নির্ভর করে। আল্লাহই হৃদয়কে খুলে দেন বা বন্ধ করে দেন 🌸 🌸 **“আন্তা ওয়ালীয়্যুনা ফাগফির লানা ওয়ারহামনা”** — “আপনি আমাদের অভিভাবক, সুতরাং আমাদের ক্ষমা করুন ও দয়া করুন।” এখানে মূসা (আঃ) আল্লাহর একান্ত নৈকট্য প্রকাশ করছেন — যেন বলছেন, “আমরা একা নই, আপনি আমাদের রব, আপনি আমাদের অভিভাবক, তাই দয়া করুন।” 🌿 🌿 **“ওয়া আন্তা খাইরুল গাফিরীন”** — “আপনি সর্বোত্তম ক্ষমাকারী।” এটি নবীদের দোয়ার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য — তারা আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে দোয়া শেষ করেন, যেন বান্দা ও রবের সম্পর্ক আরও মধুর হয় 🤍

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে দেখা যায় — আল্লাহর পরীক্ষা কখনো শাস্তি নয়, বরং ঈমান যাচাইয়ের উপায়। যেমন ভূমিকম্প তাদের পরীক্ষা ছিল, তেমনি আজও বিপদ, কষ্ট ও ব্যর্থতা আমাদের অন্তরের ফিতনা। 🌸 মূসা (আঃ)-এর দোয়া শেখায় — অন্যদের ভুলেও একজন নেতা নিজের দায়িত্ব অনুভব করে। প্রকৃত দায়িত্বশীলতা হলো — নিজের জাতির জন্য কাঁদা, এমনকি তাদের ভুলেও 🌿 🌿 মূসা (আঃ) এখানে একজন রসূল, দায়িত্বশীল নেতা, ও এক প্রেমময় নবীর রূপে দেখা দেন — যিনি শুধু পথ দেখান না, বরং তাদের জন্য কেঁদেও ফেলেন 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন এক মা সন্তানের ভুলে কাঁদে, কিন্তু কখনো তাকে ছেড়ে দেয় না — তেমনি নবীগণ তাদের জাতির জন্য কেঁদেছেন, কারণ তারা আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন 🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর পরীক্ষা কখনো অন্যায় নয়; বরং তাওবার সুযোগ।
  • একজন নেতা নিজের জাতির জন্য দোয়া করে, অভিশাপ নয়।
  • হিদায়াত আল্লাহর হাতেই, জ্ঞান বা বংশের নয়।
  • ক্ষমা চাওয়া ও দয়া কামনা — মুমিনের জীবনের শ্বাস।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 “আন্তা ওয়ালীয়্যুনা ফাগফির লানা” — এই দোয়াটি যেন মুমিন জীবনের সারসংক্ষেপ। আল্লাহই আমাদের অভিভাবক, তাই তিনিই ক্ষমা ও রহমতের উৎস 🌸 🌸 বিপদের মুখে যদি আমরা এই দোয়া হৃদয় থেকে বলি, তবে আমাদের রাগ, ভয় ও দুঃখ সব মুছে যাবে, আর জেগে উঠবে শান্তি ও ঈমানের প্রশান্তি 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَنتَ وَلِيُّنَا فَٱغْفِرْ لَنَا وَٱرْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْغَـٰفِرِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **বিপদে কান্না নয়, দোয়া করো; কারণ আল্লাহই আমাদের অভিভাবক, ক্ষমাকারী ও দয়াময়।** 🌿🤍
আয়াত ১৫৬
وَٱكْتُبْ لَنَا فِى هَـٰذِهِ ٱلدُّنْيَا حَسَنَةًۭ وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ إِنَّا هُدْنَآ إِلَيْكَ ۚ قَالَ عَذَابِىٓ أُصِيبُ بِهِۦ مَنْ أَشَآءُ وَرَحْمَتِى وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍۢ ۚ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بِـَٔايَـٰتِنَا يُؤْمِنُونَ
ওয়াক্তুব লানা ফী হাযিহিদ দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আখিরাতি, ইন্না হুদনা ইলাইকা। ক্বালা আযাবী উসীবু বিহি মান আশা’, ওয়া রহমাতী ওয়াসি‘আত কুল্লা শাই’, ফাসা’আক্তুবুহা লিল্লাযীনা ইয়াত্তাকূন, ওয়া ইউ’তুনাজ্‌যাকাহ, ওয়াল্লাযীনা হুম বিআয়াতিনা ইউ’মিনূন।
“আর লিখে দিন আমাদের জন্য এই দুনিয়াতেও কল্যাণ, এবং আখিরাতেও — নিশ্চয় আমরা আপনার দিকেই ফিরে এসেছি।” আল্লাহ বললেন — “আমার শাস্তি, যাকে ইচ্ছা আমি তাতে আক্রান্ত করি; কিন্তু আমার রহমত সর্ববিষয়কে আচ্ছাদিত করে। আমি তা নির্দিষ্ট করে দেব তাদের জন্য — যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত প্রদান করে, এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহে ঈমান আনে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে মূসা (আঃ)-এর দোয়া এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যা আল্লাহর রহমতের সবচেয়ে বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরে। তিনি বললেন — “হে আল্লাহ, শুধু আমাদের ক্ষমা নয়, আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লিখে দিন।” 🌸

🌸 **“ওয়াক্তুব লানা ফী হাযিহিদ দুনিয়া হাসানাতাওঁ”** — “এই দুনিয়ায় আমাদের জন্য কল্যাণ লিখে দিন।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমাদের জীবন হোক বরকতময়, শান্তিপূর্ণ ও ঈমানভিত্তিক।

🌿 **“ওয়া ফিল আখিরাতি”** — “আর আখিরাতেও।” মূসা (আঃ) জানতেন — দুনিয়ার শান্তি তখনই পূর্ণ হয়, যখন আখিরাতেও মুক্তি থাকে 🌸 🌸 **“ইন্না হুদনা ইলাইকা”** — “নিশ্চয় আমরা আপনার দিকেই ফিরে এসেছি।” অর্থাৎ, আমরা তাওবা করেছি, পাপ থেকে ফিরে এসেছি আপনার দিকে 🌿

🌿 আল্লাহ তখন জবাব দিলেন — **“ক্বালা আযাবী উসীবু বিহি মান আশা’।”** “আমার শাস্তি, যাকে ইচ্ছা আমি তাতে আক্রান্ত করি।” অর্থাৎ, শাস্তি আমার ন্যায়বিচারের অংশ, আমি কেবল অন্যায়কারীদেরই শাস্তি দিই 🌸 🌸 কিন্তু তারপর আল্লাহর কণ্ঠে ফুটে ওঠে সবচেয়ে মধুর ঘোষণা — **“ওয়া রহমাতী ওয়াসি‘আত কুল্লা শাই’।”** “আমার রহমত সর্ববিষয়কে আচ্ছাদিত করে।” 🤍

🌿 এই ঘোষণা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম সবচেয়ে সুন্দর বাক্য। আল্লাহর রহমত কেবল মুমিনদের জন্য নয়, বরং **সকল সৃষ্টি** এর আওতায়। বাতাস, পানি, আলো — সবই তাঁর রহমতের নিদর্শন 🌸

🌸 **“ফাসা’আক্তুবুহা লিল্লাযীনা ইয়াত্তাকূন”** — “আমি তা নির্দিষ্ট করব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।” অর্থাৎ, যদিও রহমত সবার জন্য ছড়িয়ে আছে, কিন্তু **বিশেষ রহমত** তাদের জন্য, যারা আল্লাহভীরু 🌿

🌿 **“ওয়া ইউ’তুনাজ্‌যাকাহ”** — “যারা যাকাত প্রদান করে।” অর্থাৎ, যারা তাদের সম্পদ পরিশুদ্ধ করে, আল্লাহর পথে দান করে, সমাজে ভারসাম্য আনে 🌸

🌸 **“ওয়াল্লাযীনা হুম বিআয়াতিনা ইউ’মিনূন”** — “যারা আমাদের নিদর্শনসমূহে ঈমান আনে।” অর্থাৎ, তারা শুধু মুখে বিশ্বাস করে না, বরং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবন গঠন করে 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহর দুই রূপ ফুটে ওঠে — **ন্যায়বিচার ও রহমত।** তিনি বলেন — “আমার আযাব, যাকে চাই তাকে দিই,” কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করেন — “আমার রহমত সবকিছু ঘিরে রেখেছে।” 🤍 🌸 অর্থাৎ, আল্লাহর ন্যায়ের চেয়েও বিস্তৃত তাঁর দয়া। তিনি শাস্তি দেন সীমা অতিক্রমকারীদের, কিন্তু তাঁর রহমতের ছায়া কখনো সরিয়ে নেন না 🌿 🌿 মূসা (আঃ)-এর এই দোয়ায় এক বিশ্বজনীন শিক্ষা — আল্লাহর রহমত কেবল একটি জাতির জন্য নয়, বরং **যে ঈমান আনে ও তাকওয়া রাখে, সেই-ই এর প্রকৃত দাবিদার।** 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন সূর্যের আলো সবার গায়ে পড়ে, কিন্তু কেবল সেই ব্যক্তি উষ্ণতা পায়, যে আলোয় দাঁড়ায় — তেমনি আল্লাহর রহমতও সর্বব্যাপী, কিন্তু তা লাভ করে কেবল তাকওয়াধারী মানুষ 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর রহমত সীমাহীন, তবে বিশেষ রহমত তাকওয়াবানদের জন্য।
  • মূসা (আঃ)-এর দোয়া শেখায় — কল্যাণ চাও দুনিয়া ও আখিরাতে উভয়েই।
  • যাকাত দান আল্লাহর রহমতের চাবিকাঠি।
  • আল্লাহর আযাব ন্যায়ের প্রতিফল, কিন্তু রহমত তাঁর প্রকৃত পরিচয়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর এই ঘোষণা — **“আমার রহমত সর্ববিষয়কে আচ্ছাদিত করেছে”** শুধু শব্দ নয়, এটি এক সান্ত্বনা — পাপী, ভ্রষ্ট, দুর্বল— সকলের জন্য আশা 🌸 🌸 তাই যতই পথ হারাও না কেন, যদি একবার আল্লাহর দিকে ফিরে তাকাও, এই রহমত তোমাকেও ঢেকে ফেলবে 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَرَحْمَتِى وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍۢ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর দয়া সাগরের মতো, কিন্তু সেই সাগরে ভেসে থাকে কেবল তাকওয়াবান হৃদয়।** 🌿🤍
আয়াত ১৫৭
ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلْأُمِّىَّ ٱلَّذِى يَجِدُونَهُۥ مَكْتُوبًۭا عِندَهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَٱلْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَىٰهُمْ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَـٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ ٱلْخَبَـٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَٱلْأَغْلَـٰلَ ٱلَّتِى كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
আল্লাযীনা ইয়াত্তাবিঊনার রাসূলান নাবিয়্যাল উম্মিয়্যাল্লাযী ইয়াজিদূনাহু মাকতুবান ইন্দাহুম ফিত্ তাওরাতি ওয়াল ইনজীল, ইয়ামুরুহুম বিল মা‘রূফি ওয়ানহাহুম আনিল মুনকার, ওয়া ইউহিল্লু লাহুমুত তয়্যিবাতি ওয়া ইউহাররিমু আলাইহিমুল খাবায়িস, ওয়া ইয়াদ্বা‘উ আনহুম ইসরাহুম ওয়াল আগলালাল্লাতি কানাত আলাইহিম, ফাল্লাযীনা আমানু বিহি ওয়া আয্জারুহু ওয়া নাসারুহু, ওয়াত্তাবাউন্নূরাল্লাযী উনযিলা মা‘আহ, উলাইকা হুমুল মুফলিহূন।
“যারা অনুসরণ করে সেই রাসূল, উম্মী নবীকে (মুহাম্মদ ﷺ), যাঁকে তারা তাদের তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত অবস্থায় পায়— যিনি তাদেরকে ভালো কাজের নির্দেশ দেন, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেন, তাদের জন্য পবিত্র জিনিসগুলো হালাল করেন, অপবিত্র জিনিসগুলো হারাম করেন, এবং তাদের থেকে বোঝা ও শৃঙ্খল অপসারিত করেন, যা তাদের ওপর চাপানো ছিল। সুতরাং যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে, এবং তাঁর সাথে অবতীর্ণ নূর (কুরআন)-কে অনুসরণ করেছে— তারাই সফলকাম।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশাল ঘোষণা — **নবী মুহাম্মদ ﷺ** হলেন সেই প্রতিশ্রুত রাসূল, যাঁর বর্ণনা পূর্বের কিতাবসমূহেও রয়েছে।

🌸 **“আল নাবিয়াল উম্মিয়্য”** — “উম্মী নবী” অর্থাৎ যিনি পড়াশোনা করেননি, তবুও আল্লাহর ওহির মাধ্যমে তিনি পুরো মানবজাতিকে জ্ঞানে আলোকিত করেছেন 🌿

🌿 **“আল্লাযী ইয়াজিদূনাহু মাকতুবান ফিত্ তাওরাতি ওয়াল ইনজীল”** — অর্থাৎ, নবীজির আগমন তাওরাত ও ইনজিলে পূর্বেই উল্লেখিত ছিল। বনী ইসরাঈলরা জানত— এক “শেষ রাসূল” আসবেন, যিনি আল্লাহর বাণী সম্পূর্ণ করবেন 🌸

🌿 **নবীজির পাঁচটি মহান দায়িত্ব এই আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে:**
  1. **“ইয়ামুরুহুম বিল মা‘রূফ”** — ভালো কাজে উৎসাহিত করা 🌿
  2. **“ওয়ানহাহুম আনিল মুনকার”** — মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা 🌸
  3. **“ওয়া ইউহিল্লু লাহুমুত তয়্যিবাত”** — পবিত্র ও উপকারী জিনিস হালাল ঘোষণা করা 🍃
  4. **“ওয়া ইউহাররিমু আলাইহিমুল খাবায়িস”** — অপবিত্র ও ক্ষতিকর জিনিস হারাম ঘোষণা করা 🚫
  5. **“ওয়া ইয়াদ্বা‘ু আনহুম ইসরাহুম ওয়াল আগলালাল্লাতি কানাত আলাইহিম”** — পুরনো জাতিগুলোর ওপর আরোপিত কড়া শাস্তি ও বোঝা দূর করা 🌿
🌸 অর্থাৎ, নবী ﷺ এসেছেন মানুষকে মুক্ত করতে — **অজ্ঞতা, কুসংস্কার, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় শৃঙ্খল ও মানসিক দাসত্ব থেকে।**

🌿 **“ফাল্লাযীনা আমানু বিহি ওয়া আয্জারুহু ওয়া নাসারুহু”** — “যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, ও তাঁকে সাহায্য করেছে।” অর্থাৎ, সত্যিকার মুমিন তারা, যারা শুধু মুখে নয়, কর্মে ও আত্মায় নবীজিকে ভালোবাসে ও তাঁর আদর্শে জীবন পরিচালনা করে 🌸 🌸 **“ওয়াত্তাবাউন্নূরাল্লাযী উনযিলা মা‘আহ”** — “আর যারা তাঁর সাথে অবতীর্ণ নূর (কুরআন)-কে অনুসরণ করেছে।” অর্থাৎ, ঈমান ও আনুগত্য তখনই পূর্ণ হয়, যখন নবী ﷺ ও কুরআন উভয়ের অনুসরণ একসাথে করা হয় 🌿 🌿 **“উলাইকা হুমুল মুফলিহূন”** — “তারাই সফল।” এটাই আল্লাহর চূড়ান্ত ঘোষণা — **সফলতা কেবল তাদের জন্য, যারা নবীজিকে অনুসরণ করে।** 🤍

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত কেবল ইতিহাস নয়, একটি জীবন্ত আহ্বান — আজও এই পৃথিবীতে সফল হতে হলে, নবী ﷺ-এর দিকেই ফিরে যেতে হবে। 🌸 নবীজির জীবন মানেই— দয়া, ন্যায়, পরিশুদ্ধতা ও দাসত্ব থেকে মুক্তির শিক্ষা 🌿 🌿 নবী ﷺ যে দীন এনেছেন, তা কঠিন নয়, বরং সহজ ও মানবিক। তাঁর দীন থেকে দূরে যাওয়াই আজকের দুঃখের মূল।

উদাহরণ:
🌿 যেমন সূর্যের আলো সবার জন্য, কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে-ই অন্ধকারে থাকে — তেমনি নবী ﷺ-এর দীনও সবার জন্য আলো, কিন্তু তা পায় কেবল তাঁর অনুসারীরাই 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর আগমন পূর্বের কিতাবগুলোতেও বর্ণিত।
  • তাঁর দীন কঠিন নয়, বরং মানবতার মুক্তির বার্তা।
  • সত্যিকারের ভালোবাসা হলো — নবীজির আদর্শে জীবন গঠন।
  • সফলতা কেবল তাঁর ও কুরআনের অনুসারীদের জন্য।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহ এখানে মূসা (আঃ)-এর দোয়ার জবাব হিসেবে নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে পাঠিয়েছেন — যেন তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর রহমত **সীমাবদ্ধ জাতি থেকে বিশ্বজনীন হয়।** 🌸 নবী ﷺ সেই দয়া, যার মাধ্যমে আল্লাহ বললেন — “وَمَآ أَرْسَلْنَـٰكَ إِلَّا رَحْمَةًۭ لِّلْعَـٰلَمِينَ” — *“আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি।”* 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **সত্যিকারের সফলতা নবীর প্রেমে, আর মুক্তি তাঁর অনুসরণে।** 🌿🤍
আয়াত ১৫৮
قُلْ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِىِّ ٱلْأُمِّىِّ ٱلَّذِى يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَـٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
কুল ইয়াআয়্যুহান্ নাসু ইন্নী রাসূলুল্লাহি ইলাইকুম জামী‘আ, আল্লাযী লাহু মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, ইউহয়ী ওয়া ইউমীত, ফা’আমিনু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহিন নাবিয়িল উম্মিয়, আল্লাযী ইউ’মিনু বিল্লাহি ওয়া কালিমাতিহি, ওয়াত্তাবিঊহু লা‘আল্লাকুম তাহতাদূন।
“বলুন, হে মানুষ সকল! নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল, তোমাদের সকলের প্রতি প্রেরিত — যাঁরই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম মালিকানা। তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং তোমরা ঈমান আনো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি — সেই উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে বিশ্বাস রাখেন, এবং তাঁকে অনুসরণ করো, যাতে তোমরা সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারো।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে আদেশ দিচ্ছেন এক মহান ঘোষণা দিতে — “আমি পুরো মানবজাতির জন্য প্রেরিত রাসূল।” 🌍

🌸 **“কুল ইয়াআয়্যুহান্ নাসু”** — “বলুন, হে মানুষ সকল!” এটি শুধু মুসলমানদের উদ্দেশ্যে নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির প্রতি এক সার্বজনীন আহ্বান। ইসলামের বার্তা কোনো জাতি বা ভাষায় সীমাবদ্ধ নয় 🌿

🌿 **“ইন্নী রাসূলুল্লাহি ইলাইকুম জামী‘আ”** — “নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল, তোমাদের সকলের প্রতি।” এই বাক্যটি নবীজির **বিশ্বজনীন মিশন** ঘোষণা করে। তিনি কেবল আরবদের নয়, বরং পূর্ব-পশ্চিম, সাদা-কালো, ধনী-গরিব — সবার নবী 🌸

🌸 **“আল্লাযী লাহু মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ”** — “যাঁরই আকাশ ও পৃথিবীর মালিকানা।” অর্থাৎ, যেহেতু আল্লাহ সবার মালিক, তাই তাঁর রাসূলও সবার জন্য 🌿

🌿 **“লা ইলাহা ইল্লা হুয়া ইউহয়ী ওয়া ইউমীত”** — “তাঁ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনিই জীবন দেন ও মৃত্যু ঘটান।” এই অংশে নবীজির দাওয়াতের মূল বক্তব্য — **তাওহীদ** — এক আল্লাহর দাসত্বই মানবতার একমাত্র মুক্তি।

🌸 **“ফা’আমিনু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহিন নাবিয়িল উম্মিয়”** — “তোমরা ঈমান আনো আল্লাহ ও তাঁর উম্মী নবীর প্রতি।” এখানে আল্লাহ বিশেষভাবে নবীজির **উম্মী হওয়া** উল্লেখ করেছেন — যাতে কেউ মনে না করে যে তাঁর জ্ঞান ছিল মানুষের শেখানো। তাঁর জ্ঞান আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি 💫

🌿 **“আল্লাযী ইউ’মিনু বিল্লাহি ওয়া কালিমাতিহি”** — “যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে বিশ্বাস রাখেন।” নবী ﷺ নিজেও ঈমানের আদর্শ; তিনি প্রথম ঈমানদার, যিনি আল্লাহর প্রতিটি আদেশে বিশ্বাস রেখেছেন 🌸

🌸 **“ওয়াত্তাবিঊহু লা‘আল্লাকুম তাহতাদূন”** — “আর তাঁকে অনুসরণ করো, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।” এখানে আল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন — **নবী ﷺ-এর অনুসরণই হিদায়াতের একমাত্র পথ।** 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — নবী মুহাম্মদ ﷺ কেবল একটি জাতির নবী নন, বরং সমগ্র মানবতার প্রতি আল্লাহর শেষ বার্তাবাহক। 🌸 তাঁর মিশন বিশ্বজনীন: দয়া, ন্যায়, আল্লাহভীতি ও আত্মিক স্বাধীনতা। 🌿 আল্লাহর রাসূলের দাওয়াত সব যুগে, সব স্থানে প্রযোজ্য — কারণ আল্লাহর মালিকানা সীমাহীন 🌸 🌸 তাই ইসলাম কোনো অঞ্চল বা সংস্কৃতির ধর্ম নয়; এটি মানবতার দীন, যা মানুষের হৃদয়কে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয় 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন সূর্য কেবল এক জাতির জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করে — তেমনি নবী মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রহমতের সূর্য, যার আলো পৃথিবীর সব জাতি ও প্রজন্মের জন্য 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • নবী মুহাম্মদ ﷺ সমগ্র মানবজাতির নবী — তাঁর বার্তা সীমাহীন।
  • তাওহীদ (এক আল্লাহর উপাসনা) নবীজির দাওয়াতের মূল।
  • নবীজির অনুসরণই হিদায়াতের পথ ও মুক্তির চাবি।
  • আল্লাহর মালিকানা সর্বজনীন, তাই তাঁর বার্তাও বিশ্বজনীন।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত যেন প্রতিটি যুগের মানুষের প্রতি আহ্বান — “হে মানুষ, আমি আল্লাহর রাসূল, তোমাদের সকলের জন্য।” এটি এক কালজয়ী বার্তা, যা ভেদাভেদ, সীমান্ত ও জাতিভেদ মুছে দেয় 🌸 🌸 তাই মুমিনের দায়িত্ব — এই নবীজির দাওয়াতকেই বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قُلْ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **নবী মুহাম্মদ ﷺ শুধুই এক জাতির নবী নন; তিনি সমগ্র মানবতার জন্য রহমতের প্রতীক।** 🌿🤍
আয়াত ১৫৯
وَمِن قَوْمِ مُوسَىٰٓ أُمَّةٌۭ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ
ওয়া মিন কওমি মূসা উম্মাতুন ইয়াহদূনা বিল হক্কি ওয়া বিহি ইয়াদিলূন।
“আর মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যেও একটি দল ছিল, যারা সত্যের মাধ্যমে পথ দেখাতো এবং সেই সত্য অনুযায়ী ন্যায়বিচার করত।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতগুলোতে বনী ইসরাঈলের অন্যায়, অবাধ্যতা ও কুফরির কথা বলেছেন। কিন্তু এখানে তিনি **ন্যায় ও ন্যায্যতার ভারসাম্য** বজায় রেখেছেন — সবাই খারাপ ছিল না।

🌸 **“ওয়া মিন কওমি মূসা উম্মাতুন”** — “আর মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যেও একটি দল ছিল।” অর্থাৎ, আল্লাহর নবী মূসা (আঃ)-এর জাতির মধ্যেও এমন কিছু মানুষ ছিলেন, যারা কুফরি ও গোমরাহী থেকে দূরে ছিল, সত্যের প্রতি অটল ছিল 🌿

🌿 **“ইয়াহদূনা বিল হক্কি”** — “যারা সত্যের মাধ্যমে পথ দেখাতো।” অর্থাৎ, তারা নিজেরাও সৎ ছিল এবং অন্যদেরও সঠিক পথে আহ্বান করত। তাদের মানদণ্ড ছিল **আল্লাহর কিতাব ও সত্যবাদিতা।** 🌸

🌸 **“ওয়া বিহি ইয়াদিলূন”** — “এবং সেই সত্য অনুযায়ী ন্যায়বিচার করত।” অর্থাৎ, তারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিত, আবেগ, স্বার্থ বা জাতীয় পক্ষপাত ছেড়ে শুধু ন্যায়বিচারের ওপর স্থির থাকত 🌿

🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় যে— **প্রত্যেক যুগে, প্রত্যেক সমাজে, এমন কিছু মানুষ থাকে যারা সত্য ও ন্যায়ের জন্য বেঁচে থাকে।** 🌸 আল্লাহর দৃষ্টিতে “অধিকাংশ” নয়, “সৎ ও ঈমানদার সংখ্যালঘু”-ই আসল মূল্যবান।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — আল্লাহর ন্যায়বিচার এত সূক্ষ্ম যে, তিনি কখনোই কোনো জাতিকে পুরোপুরি নিন্দা করেন না যদি তাদের মধ্যে কিছু ন্যায়পরায়ণ মানুষ থাকে। 🌸 ঠিক যেমন অন্ধকার রাতেও কিছু তারা আকাশে জ্বলে থাকে, তেমনি পাপাচারী সমাজেও কিছু মানুষ আল্লাহভীতি ধরে রাখে 🌿 🌿 “ইয়াহদূনা বিল হক্কি” — এটি শুধু জ্ঞান দেওয়া নয়, বরং নিজে সত্য মেনে অন্যকে দাওয়াত দেওয়া। **সত্যকে জানা এক জিনিস, আর সত্যে জীবন যাপন করা আরেক জিনিস।** 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন অগ্নিকাণ্ডে সবাই দৌড়ে পালায়, কিন্তু কিছু মানুষ আগুনে ঝাঁপ দেয় অন্যদের বাঁচাতে — তেমনি, সমাজ যখন পথ হারায়, তখন সত্যবাদী মানুষরাই আলোর পথ দেখায় 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • প্রত্যেক জাতিতেই কিছু সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ থাকে।
  • আল্লাহ কখনো সৎ মানুষদের সাথে অবিচার করেন না।
  • সত্য জানার চেয়ে সত্যের ওপর অটল থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
  • ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ঈমানের অন্যতম চিহ্ন।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত একটি আশার বার্তা — পৃথিবী কখনো সম্পূর্ণ অন্ধকার হয় না, কারণ আল্লাহ সর্বদা কিছু হৃদয়কে জাগ্রত রাখেন 🌸 🌸 তাই একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো — এই “ন্যায়পরায়ণ দল”-এর অংশ হওয়া, যে দুনিয়ায় সত্যের আলো জ্বালিয়ে রাখে 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَمِن قَوْمِ مُوسَىٰٓ أُمَّةٌۭ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **অন্ধকারের মাঝেও আল্লাহর আলো নিভে না; সত্যবাদী মানুষরাই পৃথিবীর প্রকৃত নূর।** 🌿🤍
আয়াত ১৬০
وَقَطَّعْنَـٰهُمُ ٱثْنَتَيْ عَشْرَةَ أَسْبَاطًا أُمَمًۭا ۚ وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ إِذِ ٱسْتَسْقَىٰهُ قَوْمُهُۥٓ أَنِ ٱضْرِب بِّعَصَاكَ ٱلْحَجَرَ ۖ فَٱنۢبَجَسَتْ مِنْهُ ٱثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًۭا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍۢ مَّشْرَبَهُمْ ۚ وَظَلَّلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلْغَمَـٰمَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلْمَنَّ وَٱلسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا۟ مِن طَيِّبَـٰتِ مَا رَزَقْنَـٰكُمْ ۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
ওয়া কাত্তা‘নাহুমুথ্‌নাতাই ‘আশরাতা আসবাতান উমামা, ওয়াওহাইনা ইলা মূসা ইধিস্তা’স্‌ক্বাহু কওমুহু, আনিদরিব বিআসাকা আল-হাজারা, ফানবাজাসাত মিনহুথ্‌নাতাই ‘আশরাতা আইনান, কদ আলিমা কুল্লু উনাসিম মাশরাবাহুম, ওয়াযাল্লানা আলাইহিমুল গোমামা, ওয়াঅনযালনা আলাইহিমুল মান্না ওয়াস্‌সালওয়া, কুলূ মিন ত্বাইয়িবাতি মা রাযাকনাকুম, ওয়া মা যালামূনা, ওয়ালাকিন কানু আনফুসাহুম ইয়াযলিমূন।
“আর আমরা তাদেরকে বারোটি গোত্রে ভাগ করেছিলাম — জাতি হিসেবে। আর মূসা যখন তাঁর সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করলেন, তখন আমরা তাঁকে নির্দেশ দিলাম — ‘তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করো।’ তখন তা থেকে বারোটি ঝরনা উদ্গত হলো, প্রত্যেক দল তাদের পানির স্থান চিনে নিল। আর আমরা তাদের ওপর মেঘমালা ছায়া করেছিলাম, এবং তাদের ওপর ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ নাজিল করেছিলাম। (বলেছিলাম) — ‘তোমরা খাও সেই উত্তম বস্তুসমূহ, যা আমি তোমাদের রিযিক হিসেবে দিয়েছি।’ তারা আমাদের প্রতি অন্যায় করেনি, বরং তারা নিজেদের প্রতিই অন্যায় করেছিল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত বনী ইসরাঈলের প্রতি আল্লাহর অসীম রহমত ও অনুগ্রহের চিত্র তুলে ধরে। তারা একদিকে ভুল করেছিল, তবুও আল্লাহ তাঁদের প্রতি দয়া করেছেন।

🌸 **“ওয়া কাত্তা‘নাহুমুথ্‌নাতাই ‘আশরাতা আসবাতান উমামা”** — “আর আমরা তাদেরকে বারোটি গোত্রে ভাগ করেছিলাম।” এটি আল্লাহর প্রজ্ঞা ও সুবিন্যস্ত ন্যায়বিচারের প্রতীক। প্রত্যেক গোত্র ছিল একটি ছোট জাতির মতো — যাতে তাদের নেতৃত্ব, দায়িত্ব ও সুব্যবস্থা বজায় থাকে 🌿

🌿 **“ওয়াওহাইনা ইলা মূসা... আনিদরিব বিআসাকা আল-হাজারা”** — “আমরা মূসাকে ওহি করেছিলাম — তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করো।” এটি ছিল এক অলৌকিক নিদর্শন। তৃষ্ণায় কাতর বনী ইসরাঈলের জন্য আল্লাহ **পাথর থেকে বারোটি ঝরনা** বের করে দিলেন 🌸

🌸 প্রতিটি ঝরনা একেকটি গোত্রের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল — **“কদ আলিমা কুল্লু উনাসিম মাশরাবাহুম”** “প্রত্যেক দল তাদের পানির স্থান চিনে নিল।” যাতে বিরোধ বা বিভাজন না ঘটে 🌿

🌿 **“ওয়াযাল্লানা আলাইহিমুল গোমামা”** — “আমরা তাদের ওপর মেঘমালা ছায়া করেছিলাম।” মরুভূমির প্রখর রোদের মাঝে আল্লাহ তাদের জন্য মেঘের ছায়া পাঠিয়ে দয়া প্রকাশ করেছিলেন 🌸 🌸 **“ওয়াঅনযালনা আলাইহিমুল মান্না ওয়াস্‌সালওয়া”** — “আমরা তাদের জন্য মান্না ও সালওয়া নাজিল করেছিলাম।” এটি ছিল **আকাশ থেকে প্রেরিত খাবার** — মান্না (এক মিষ্টি রস জাতীয় খাদ্য) এবং সালওয়া (এক ধরণের পাখির মাংস)। আল্লাহ যেন বলেছিলেন — “তোমরা খাও আমার দেয়া হালাল ও উত্তম রিযিক।” 🌿

🌿 **“ওয়া মা যালামূনা ওয়ালাকিন কানু আনফুসাহুম ইয়াযলিমূন”** — “তারা আমাদের প্রতি অন্যায় করেনি, বরং নিজেদের প্রতি।” অর্থাৎ, আল্লাহর রহমত এত বেশি ছিল, তবুও তারা অকৃতজ্ঞ ছিল — ফলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হয়েছে 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহর রহমতের তিনটি মহান নিদর্শন রয়েছে:
১️ সংগঠন ও শৃঙ্খলা (১২টি গোত্রে বিভাজন)
২️ পানি ও খাদ্যের ব্যবস্থা (রিযিকের অনুগ্রহ)
৩️ প্রাকৃতিক সুরক্ষা (মেঘের ছায়া) 🌸

🌸 তবুও বনী ইসরাঈলরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে অভিযোগ ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছিল। 🌿 এই আয়াত আমাদের জন্য একটি আয়না — আল্লাহ আমাদের কত কিছু দিচ্ছেন, অথচ আমরা কত কম কৃতজ্ঞ! 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন এক বাবা সন্তানের জন্য খাবার, পানি, ছায়া ও আশ্রয় সব কিছু দেন, অথচ সন্তান কৃতজ্ঞ না হয়ে অহংকার করে — তেমনি বনী ইসরাঈল আল্লাহর দেয়া আশীর্বাদ ভুলে গিয়েছিল 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর দান কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
  • শৃঙ্খলা ও ন্যায়পরায়ণ নেতৃত্ব সমাজের আশীর্বাদ।
  • অকৃতজ্ঞতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
  • আল্লাহর রহমত সীমাহীন, কিন্তু তাঁর বিধানও সুবিচারপূর্ণ।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — আল্লাহর অনুগ্রহে জীবন পূর্ণ, কিন্তু কৃতজ্ঞতাই সেটিকে অর্থবহ করে তোলে 🌸 🌸 যত দিন মানুষ আল্লাহর দেয়া “পানি, ছায়া ও রিযিক”-এর মূল্য বুঝবে, তত দিন সে রহমতের নিচে নিরাপদ থাকবে 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহ কারো প্রতি অন্যায় করেন না; মানুষই নিজের অকৃতজ্ঞতায় নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।** 🌿🤍
আয়াত ১৬১
وَإِذْ قِيلَ لَهُمُ ٱسْكُنُوا۟ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةَ وَكُلُوا۟ مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ وَقُولُوا۟ حِطَّةٌۭ وَٱدْخُلُوا۟ ٱلْبَابَ سُجَّدًۭا نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطِيٓـَٔـٰتِكُمْ ۚ سَنَزِيدُ ٱلْمُحْسِنِينَ
ওয়াইয ক্বীলা লাহুমুস্কুনূ হাজিহিল কারইয়াতা, ওয়া কুলূ মিনহা হাইসূ শি'তুম, ওয়াকুলূ হিট্তাতুন, ওয়াদখুলুল বাবাসুজ্জাদান, নাগফির লাকুম খাতইয়াতিকুম, সানাজীদুল মুহসিনীন।
“আর যখন তাদেরকে বলা হলো — তোমরা এই নগরে বসবাস করো, এবং এখান থেকে যেখান থেকে ইচ্ছা খাও, আর বলো — ‘হিটতাতুন’ (হে আল্লাহ, আমাদের পাপ মাফ করুন), এবং দরজা দিয়ে সিজদার অবস্থায় প্রবেশ করো — আমরা তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করব, আর সৎকর্মশীলদের আমরা আরও অধিক দিব।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলকে নির্দেশ দিলেন— একটি নগরে (যেটি অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে *বাইতুল মুকাদ্দাস*) প্রবেশ করতে। এটি ছিল তাদের জন্য **রহমতের সুযোগ** — একটি পরীক্ষার মুহূর্ত, যেখানে আজ্ঞাপালনই ছিল মুক্তির পথ।

🌸 **“উস্কুনূ হাজিহিল কারইয়াহ”** — “এই নগরে বসবাস করো।” অর্থাৎ, সেখানে স্থায়ী হও এবং শান্তিতে জীবন যাপন করো।

🌿 **“ওয়া কুলূ মিনহা হাইসূ শি'তুম”** — “যেখান থেকে ইচ্ছা খাও।” এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদিত স্বাধীনতা ও বরকত— প্রচুর রিযিক, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ 🌸

🌸 **“ওয়াকুলূ হিটতাতুন”** — “বলো — ‘হিটতাতুন’, অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ, আমাদের পাপ মাফ করুন।’” এটি শুধু একটি শব্দ ছিল না, বরং **তাওবা ও বিনয়ের প্রতীক।** আল্লাহ তাদের শিখিয়ে দিয়েছিলেন — **ক্ষমা চাওয়া মানেই মর্যাদা হারানো নয়, বরং দয়া লাভ করা।** 🌿

🌿 **“ওয়াদখুলুল বাবাসুজ্জাদান”** — “দরজা দিয়ে সিজদার অবস্থায় প্রবেশ করো।” অর্থাৎ, শহরে প্রবেশের সময় **বিনয় ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করো**, অহংকার ও বিদ্রোহ নয় 🌸

🌸 **“নাগফির লাকুম খাতইয়াতিকুম”** — “আমরা তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করব।” আল্লাহ যেন বললেন— যদি তোমরা বিনয়ী ও অনুতপ্ত হও, তবে আমি অতীতের সব ভুল ক্ষমা করব 🌿

🌿 **“সানাজীদুল মুহসিনীন”** — “আর আমরা সৎকর্মশীলদের আরও অধিক দিব।” অর্থাৎ, যারা কেবল আনুগত্যই নয়, বরং শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের চেষ্টা করে, আল্লাহ তাদের জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার নির্ধারণ করেন 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায়— আল্লাহর নির্দেশের মধ্যে সবসময়ই কল্যাণ লুকিয়ে থাকে। কিন্তু যখন মানুষ অহংকার করে বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মনোভাব পোষণ করে, তখন বরকতের দরজা বন্ধ হয়ে যায় 💔 🌸 “হিটতাতুন” শব্দটি ছিল এক সরল দোয়া, কিন্তু তারা সেটিকে তুচ্ছ করে হাস্যরস বানিয়ে ফেলেছিল— ফলে আল্লাহর রহমত থেকে তারা বঞ্চিত হয়। 🌿 এই আয়াত শুধু ইতিহাস নয়, এটি আজও আমাদের জন্য এক সতর্কবার্তা — **আল্লাহর আদেশ যত ছোটই মনে হোক, তাতে অবাধ্যতা বড় অপরাধ।** 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে বলে— “ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে আবার সুযোগ দেব,” কিন্তু সে হাসতে থাকে ও কথা উল্টে দেয় — ফলাফল? সুযোগ হারানো! তেমনি বনী ইসরাঈল আল্লাহর করুণা হারিয়েছিল অহংকারের কারণে 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর নির্দেশে সবসময় কল্যাণ নিহিত থাকে।
  • ক্ষমা চাওয়া দুর্বলতা নয়, বরং বিনয়ের সৌন্দর্য।
  • অহংকার বরকতের দরজা বন্ধ করে দেয়।
  • আল্লাহ সৎ ও বিনয়ী মানুষদের ভালোবাসেন এবং পুরস্কার বৃদ্ধি করেন।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহ এখানে মানুষকে বিনয় শেখাচ্ছেন— “দরজা দিয়ে সিজদার অবস্থায় প্রবেশ করো।” অর্থাৎ, **প্রত্যেক সফলতার দরজায় মাথা নত করো, কারণ সব সাফল্যই আল্লাহর দান।** 🌸 🌸 যারা আল্লাহর সামনে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীর সামনে মর্যাদা দেন 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَقُولُوا۟ حِطَّةٌۭ وَٱدْخُلُوا۟ ٱلْبَابَ سُجَّدًۭا نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطِيٓـَٔـٰتِكُمْ ۚ سَنَزِيدُ ٱلْمُحْسِنِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে বিনয়ী, সে ক্ষমা পায়; আর যে কৃতজ্ঞ, সে পুরস্কার পায়।** 🌿🤍
আয়াত ১৬২
فَبَدَّلَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ قَوْلًۭا غَيْرَ ٱلَّذِى قِيلَ لَهُمْ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِجْزًۭا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُوا۟ يَظْلِمُونَ
ফাবাদ্দালাল্লাযীনা যালামূ কাওলান গাইরাল্লাযী ক্বীলা লাহুম, ফা-আর্সালনা আলাইহিম রিজ্জাম মিনাস্‌সামা’, বিমা কানূ ইয়াযলিমূন।
“অতঃপর যারা অন্যায় করেছিল, তারা সেই কথাকে পরিবর্তন করল যা তাদের বলা হয়েছিল। ফলে আমরা তাদের ওপর আকাশ থেকে এক ভয়াবহ শাস্তি প্রেরণ করলাম — তাদের অন্যায় কর্মের কারণে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহর দয়া তখনও তাদের ঘিরে রেখেছিল — কিন্তু তারা তাঁর স্পষ্ট আদেশের সাথে খেলা করল।

🌸 **“ফাবাদ্দালাল্লাযীনা যালামূ কাওলান গাইরাল্লাযী ক্বীলা লাহুম”** — “অতঃপর যারা অন্যায় করেছিল, তারা সেই কথাকে পরিবর্তন করল।” অর্থাৎ, তাদেরকে বলা হয়েছিল “হিটতাতুন” — (হে আল্লাহ, আমাদের পাপ ক্ষমা করুন), কিন্তু তারা বিদ্রূপ করে সেটির পরিবর্তে হাস্যরসাত্মক ও বিকৃত শব্দ ব্যবহার করেছিল।

🌿 কেউ বলেছিল “হন্তাতুন” (গম দাও), কেউ বলেছিল “হিনতাতুন” (এক প্রকার খাদ্য)। তারা ক্ষমার দোয়া বদলে **অহংকার ও ব্যঙ্গ** প্রকাশ করল 💔 🌸 এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চাইল — “আমরা তোমার আদেশের তোয়াক্কা করি না।” এটি শুধু কথার বিকৃতি নয়, বরং **আল্লাহর সাথে উপহাস** করার সমান অপরাধ 🌿

🌿 **“ফা-আর্সালনা আলাইহিম রিজ্জাম মিনাস্‌সামা’”** — “ফলে আমরা তাদের ওপর আকাশ থেকে এক শাস্তি পাঠালাম।” অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে, এটি ছিল **মহামারী ও আসমানী বিপর্যয়**, যা তাদের মধ্যে বহু মৃত্যুর কারণ হয়েছিল 🌸 🌸 **“বিমা কানূ ইয়াযলিমূন”** — “তাদের অন্যায় কর্মের কারণে।” অর্থাৎ, এটি কোনো অবিচার ছিল না; বরং তারা নিজেরাই শাস্তি ডেকে এনেছিল 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক গভীর সতর্কবার্তা — আল্লাহর নির্দেশ কখনো তুচ্ছ করা যাবে না, এমনকি যদি তা “একটি শব্দ” বা “একটি আচরণ” হয়। 🌸 **দোয়া, ইবাদত, বা আল্লাহর বাণী —** এগুলো কেবল শব্দ নয়; এগুলো আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম। 🌿 তাই এগুলো বিকৃতি বা ব্যঙ্গ করলে তা সরাসরি আল্লাহর প্রতি অসম্মান হিসেবে গণ্য হয়। 🌸 এই আয়াত প্রমাণ করে — **অবাধ্যতা ও ব্যঙ্গ একত্রে হলে, রহমতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।** 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন শিক্ষক ছাত্রকে ক্ষমা পাওয়ার একটি বাক্য শেখান, আর সে সেটি বদলে উপহাস করে — তখন ক্ষমার সুযোগ হারায়; বরং শাস্তি পায়। ঠিক তেমনি বনী ইসরাঈলও নিজেদের হাতে রহমতকে আযাবে পরিণত করেছিল 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর আদেশকে কখনো তুচ্ছ করা যাবে না।
  • একটি শব্দ বা আচরণেও থাকতে পারে আনুগত্য বা অবাধ্যতা।
  • অহংকার ও ব্যঙ্গ মিলে রহমতের বদলে আযাব আনে।
  • আল্লাহর শাস্তি সবসময় ন্যায়ভিত্তিক — “বিমা কানূ ইয়াযলিমূন।”

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর বাণী শুধু মুখে উচ্চারণের নয়, তা হৃদয়ে গ্রহণ ও কর্মে প্রকাশ করার বিষয়। 🌸 যারা ধর্মকে খেলা বা রসিকতার বস্তু বানায়, তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে। কারণ, **আল্লাহর সাথে ঠাট্টা চলে না।** 🌿 🌿 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে — পবিত্র বিষয় নিয়ে অল্প একটিও অবহেলা আল্লাহর কাছে বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَبَدَّلَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ قَوْلًۭا غَيْرَ ٱلَّذِى قِيلَ لَهُمْ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِجْزًۭا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُوا۟ يَظْلِمُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর বাণীর বিকৃতি আযাব ডেকে আনে, আর আনুগত্য ডেকে আনে রহমত।** 🌿🤍
আয়াত ১৬৩
وَسْـَٔلْهُمْ عَنِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلَّتِى كَانَتْ حَاضِرَةَ ٱلْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِى ٱلسَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَـٰنُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًۭا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ لَا تَأْتِيهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَبْلُوهُم بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ
ওয়াস্‌আলহুম আনিল কারইয়াতিল্লাতী কানাত হাজিরাতাল বাহরি, ইয ইয়াদূনা ফিস্‌সাবতি, ইয তা’তীহিম হিতানুহুম ইয়াওমা সাবতিহিম শুররাআ, ওয়াইওমা লা ইয়াসবিতূনা লা তা’তীহিম, কাজালিকা নাবলূহুম বিমা কানূ ইয়াফসুকূন।
“আর আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন সেই নগর সম্পর্কে, যা ছিল সমুদ্রতীরে — যখন তারা শনিবারের সীমা লঙ্ঘন করেছিল। শনিবারে তাদের কাছে মাছ আসত প্রচুর পরিমাণে, আর শনিবার ছাড়া অন্য দিনে মাছ তাদের কাছে আসত না। এভাবেই আমরা তাদের পরীক্ষা করেছিলাম কারণ তারা সীমালঙ্ঘনকারী ছিল।” 🌊🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে নির্দেশ দিচ্ছেন — “তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো, সেই শহরের কথা জানো?” এখানে বলা হচ্ছে **বনী ইসরাঈলের এক উপকূলীয় নগর** সম্পর্কে (অনেক তাফসীরে বলা হয়েছে — *আইলাহ* বা *এলাত*)। তারা ছিল মাছ ধরার মানুষ — এবং আল্লাহ তাদেরকে **শনিবার (সাবত)**-এর দিনে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছিলেন। কারণ শনিবার ছিল তাঁদের জন্য “ইবাদতের দিন” 🌸 🌸 কিন্তু পরীক্ষার অংশ হিসেবে, শনিবারে মাছগুলো ঠিক তাদের তীরের কাছে এসে ভেসে উঠত, আর অন্য দিনগুলোতে একটিও আসত না! 🐟

🌿 আল্লাহ বলেন — **“ইয তা’তীহিম হিতানুহুম ইয়াওমা সাবতিহিম শুররাআ”** — “শনিবারে তাদের কাছে মাছ আসত প্রচুর পরিমাণে।” এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে এক স্পষ্ট পরীক্ষা। 🌸 কিন্তু তারা আল্লাহর বিধানকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করল। তারা বলল — “শনিবারে মাছ ধরা যাবে না, ঠিক আছে। তবে আমরা শনিবারে জাল পেতে রাখব, রবিবারে গিয়ে মাছ তুলে নেব!” 😔 🌿 বাহ্যিকভাবে তারা আদেশ মানল, কিন্তু বাস্তবে তা লঙ্ঘন করল। এভাবেই তারা নিজেদের বুদ্ধিকে আল্লাহর বিধানের ওপরে স্থান দিল 💔

🌸 আল্লাহ বলেন — **“কাজালিকা নাবলূহুম বিমা কানূ ইয়াফসুকূন”** — “এভাবেই আমরা তাদের পরীক্ষা করেছিলাম, কারণ তারা সীমালঙ্ঘনকারী ছিল।” অর্থাৎ, এটি কেবল মাছ ধরার ঘটনা নয় — এটি ছিল **আল্লাহর হুকুমকে ফাঁকি দেওয়ার মানসিকতা** পরীক্ষা করার একটি মাধ্যম। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত প্রমাণ করে — আল্লাহ মানুষের হৃদয় পরীক্ষা করেন **অবাধ্যতার সূক্ষ্ম রূপে।** তারা মুখে নিষেধ মানল, কিন্তু মনে প্রতারণা লুকিয়ে রাখল। 🌸 আল্লাহ চান — আনুগত্য হোক **নিয়ত ও আত্মার স্তরে**, শুধু বাহ্যিক রূপে নয়। 🌿 অনেক সময় পাপ আসে ধর্মের পোশাকে; মানুষ বলে “আমি তো ভুল করছি না”, অথচ সে ভিতরে আল্লাহর আদেশকে উপহাস করছে। 🌸 এই আয়াত তাই শেখায় — **বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আল্লাহর আইনকে ফাঁকি দেওয়া, আসলে নিজেকে ধ্বংস করা।** 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ আইন মানছে বলেই দাবি করে, কিন্তু ফাঁকফোকর দিয়ে নিজের লাভ নিচ্ছে — বাহ্যিকভাবে নিরপরাধ, কিন্তু বাস্তবে প্রতারক। ঠিক তেমনি এই জাতি আল্লাহর আইনকে “বুদ্ধি” দিয়ে ধোঁকা দিল 🌊

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ মানুষকে প্রায়ই ছোট ছোট বিষয় দিয়ে পরীক্ষা করেন।
  • ধর্মীয় বিধান নিয়ে চাতুর্য বা কৌশল করা মারাত্মক অপরাধ।
  • আল্লাহর আদেশ মানা মানে শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, আন্তরিকভাবেও আনুগত্য করা।
  • যে আল্লাহর আইনকে ফাঁকি দেয়, সে নিজের ধ্বংস ডেকে আনে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর পরীক্ষা সবসময় সহজে বোঝা যায় না। তিনি কখনো আমাদের কাছে **হারামকে কাছে এনে দেখান**, যাতে দেখা যায় আমরা কতটা দৃঢ়ভাবে নিজেকে সংযত রাখতে পারি। 🌸 আল্লাহর আইনকে বুদ্ধি দিয়ে পরিবর্তন করা বা এড়ানো মানে — নিজের ঈমানের সাথে খেলা করা। 🌿 তাই এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর সীমা সম্মান করা মানেই প্রকৃত তাকওয়া।** 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَـٰنُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًۭا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ لَا تَأْتِيهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَبْلُوهُم بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর হুকুমকে ফাঁকি নয়, বিশ্বাস দিয়ে মানো; কারণ পরীক্ষা সবসময় আসে আনুগত্যের আড়ালে।** 🌿🤍
আয়াত ১৬৪
وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌۭ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًۭا ٱللَّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًۭا شَدِيدًۭا ۖ قَالُوا۟ مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
ওয়ইয ক্বালাত উম্মাতুম মিনহুম লিমা তা’ইযূনা কওমান আল্লাহু মুহলিকুহুম আও মুআয্জিবুহুম আযাবান শাদীদা, ক্বালূ মাআযিরাতান ইলা রাব্বিকুম ওয়া লা‘আল্লাহুম ইয়াত্তাকূন।
“আর যখন তাদের মধ্য থেকে একদল বলল — ‘তোমরা কেন এমন এক জাতিকে উপদেশ দাও, যাদের আল্লাহ ধ্বংস করবেন, অথবা কঠিন শাস্তি দিবেন?’ অন্যরা বলল — ‘আমরা এটা করছি, যাতে আমাদের প্রতিপালকের কাছে দায়মুক্ত থাকতে পারি, আর হয়তো তারা (একদিন) আল্লাহভীরু হয়ে যাবে।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা **“আসহাবে সাবত”** (শনিবারে অবাধ্য হওয়া জাতি) সম্পর্কে বিস্তারিত ঘটনাকে আরও স্পষ্ট করছেন। এখানে তিনটি দল গঠিত হয়েছিল —
  1. এক দল — যারা **আল্লাহর আদেশ ভঙ্গ করেছিল** (শনিবারে মাছ ধরেছিল)।
  2. দ্বিতীয় দল — যারা **তাদের নিষেধ করেছিল** পাপ থেকে।
  3. তৃতীয় দল — যারা **নীরব ছিল** এবং বলেছিল: “তাদের বোঝানো বৃথা।”
🌸 এই আয়াতের বক্তব্য হলো— যখন “উপদেশ প্রদানকারী দল” (নেককাররা) পাপীদের সতর্ক করছিল, তখন “নীরব দল” তাদের বলল: “কেন এমন মানুষদের বোঝাচ্ছো, যাদের আল্লাহ ধ্বংস করবেনই?”

🌿 কিন্তু সেই নেককাররা এক অসাধারণ উত্তর দিল — **“মাআযিরাতান ইলা রাব্বিকুম”** — “আমরা এটি করছি, যেন আমাদের প্রভুর কাছে দায়মুক্ত থাকতে পারি।” অর্থাৎ, যদি তারা আমাদের কথা না-ও শোনে, অন্তত আমরা আল্লাহর সামনে বলতে পারব — “হে আল্লাহ, আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করেছি।” 🌸

🌸 তারপর তারা বলল — **“ওয়া লা‘আল্লাহুম ইয়াত্তাকূন”** — “হয়তো তারা আল্লাহভীরু হয়ে যাবে।” অর্থাৎ, **আমরা হতাশ না, হয়তো আমাদের কথা কোনো হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।** 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক বিরাট শিক্ষা দেয় — অন্যায় থামানোর চেষ্টা কখনো বৃথা যায় না। কারণ উপদেশ শুধু ফলাফলের জন্য নয়, বরং এটি আমাদের দায়িত্ব ও ঈমানের সাক্ষ্য। 🌸 আল্লাহর কাছে প্রকৃত “নীরবতা” হলো **অপরাধের সহযোগিতা।** আর প্রকৃত দাওয়াত হলো — **যখন মানুষ শোনে না তবুও সত্য বলা।** 🌿 নেককার দলটি জানত, হয়তো তাদের কথা কেউ মানবে না, তবুও তারা বলেছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য 🌸 🌸 এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন — দাওয়াত ও নাসিহাত হলো **আল্লাহর সামনে নিজের মুক্তির সাক্ষ্য।** কারণ কিয়ামতের দিন যখন জিজ্ঞাসা করা হবে, “তুমি কি অন্যায় দেখেও চুপ ছিলে?” তখন উত্তর দিতে পারবে শুধু সেই মানুষ, যে বলেছিল — “আমি উপদেশ দিয়েছিলাম।” 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ আগুনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে, আর তুমি তাকে থামাও — সে যদি না শোনে, তবুও তুমি তোমার কর্তব্য করেছো। তেমনি, অন্যকে গোমরাহী থেকে ফেরানো হলো এক মুমিনের দায়িত্ব ও দয়া 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা ঈমানের অঙ্গ।
  • উপদেশ ফলাফলের জন্য নয়, বরং দায়িত্ববোধের জন্য।
  • নীরবতা অনেক সময় গুনাহে সম্মতির সমান।
  • আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দাওয়াতই মুমিনের প্রকৃত কাজ।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এখানে এক গুরুত্বপূর্ণ মনস্তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে — **পাপীরা পাপ করে, কিন্তু দুর্বল মুমিনরা নীরব থাকে।** অথচ আল্লাহর দৃষ্টিতে নীরবতা ও অবাধ্যতা দুটোই এক রকম আত্মিক ব্যর্থতা। 🌸 যারা পাপ থেকে মানুষকে সাবধান করে, তারাই আল্লাহর সামনে প্রকৃতভাবে নিরাপদ। 🌿 তাই এই আয়াত আমাদের জাগিয়ে দেয় — **“যখন অন্যায় দেখো, নীরব থেকো না; কারণ উপদেশই তোমার মুক্তির প্রমাণ।”** 🌸

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قَالُوا۟ مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **উপদেশ হলো দায়িত্ব, ফলাফল নয়; আর নীরবতা হলো দুর্বল ঈমানের চিহ্ন।** 🌿🤍
আয়াত ১৬৫
فَلَمَّا نَسُوا۟ مَا ذُكِّرُوا۟ بِهِۦٓ أَنجَيْنَا ٱلَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ ٱلسُّوٓءِ وَأَخَذْنَا ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ بِعَذَابٍۢ بَـِٔيسٍۢ بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ
ফালাম্মা নাসূ মা যুক্কিরূ বিহি, আনজাইনাল্লাযীনা ইয়ানহাউনা আনিস্‌সু’, ওয়া আখাযনাল্লাযীনা যালামূ বিআযাবিন বাই’সিন বিমা কানূ ইয়াফসুকূন।
“অতঃপর যখন তারা সেই উপদেশ ভুলে গেল, যা তাদের স্মরণ করানো হয়েছিল — তখন আমরা রক্ষা করলাম তাদের, যারা অন্যায় থেকে বিরত রাখত। আর যারা সীমালঙ্ঘন করেছিল, তাদের আমরা ধরলাম এক ভয়াবহ শাস্তি দ্বারা, কারণ তারা পাপাচারে লিপ্ত ছিল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এখানে এক স্পষ্ট ফলাফল ঘোষণা করছেন — তিন দলের মধ্যে এখন আলাদা হলো তাদের পরিণতি।

🌸 **“ফালাম্মা নাসূ মা যুক্কিরূ বিহি”** — “যখন তারা সেই উপদেশ ভুলে গেল।” অর্থাৎ, পাপীরা যখন বারবার সতর্কবার্তা শুনেও গুরুত্ব দিল না, বরং অবাধ্যতায় লিপ্ত রইল।

🌿 **“আনজাইনাল্লাযীনা ইয়ানহাউনা আনিস্‌সু’”** — “আমরা রক্ষা করলাম তাদের, যারা অন্যায় থেকে বিরত রাখত।” আল্লাহর প্রতিশ্রুতি— যারা সমাজে পাপ রোধের চেষ্টা করে, আল্লাহ তাদের বিশেষ সুরক্ষা দেন। তারা সংখ্যায় কম হলেও, আল্লাহর নিকটে তাদের মর্যাদা বিশাল 🌸

🌸 **“ওয়া আখাযনাল্লাযীনা যালামূ বিআযাবিন বাই’সিন”** — “আর যারা অন্যায় করেছিল, আমরা তাদের ধরলাম কঠিন শাস্তি দ্বারা।” এখানে *“বাই’সিন”* শব্দটি বোঝায় — এক ভয়াবহ, লাঞ্ছনাকর, ধ্বংসাত্মক শাস্তি ⚡

🌿 **“বিমা কানূ ইয়াফসুকূন”** — “তারা সীমালঙ্ঘন করেছিল বলে।” অর্থাৎ, তাদের পতন ছিল তাদেরই পাপের ফল। আল্লাহর শাস্তি কখনোই হঠাৎ আসে না — এটি আসে যখন মানুষ **বারবার উপদেশ উপেক্ষা করে।** 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় — আল্লাহর রহমত ও শাস্তি দুটোই ন্যায়ের ভিত্তিতে। তিনি কাউকে বিনা অপরাধে শাস্তি দেন না, আবার কাউকে উপদেশ দিতে গিয়ে নিঃস্বও হতে দেন না। 🌸 যারা অন্যকে পাপ থেকে বিরত করে, তারা শুধু মানুষকে বাঁচায় না — নিজেরাও আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পায় 🌿 🌸 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে — **পাপীর সাথে সহানুভূতি করা ভালো, কিন্তু তার পাপের সাথে নিরব থাকা মারাত্মক গোনাহ।** 🌿 যে সমাজে নেককাররা চুপ থাকে, সেখানে পাপীরা সাহসী হয় — আর তখন আল্লাহর আযাব নেমে আসে সবার ওপর 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ আগুন ছড়াতে দেখে কিন্তু নেভায় না, তখন আগুন কেবল অপরাধীর নয়, নীরব দর্শকের ঘরও পুড়িয়ে দেয়। তেমনি অন্যায়ের সামনে নীরবতা শেষ পর্যন্ত পুরো সমাজকে ধ্বংস করে 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ সবসময় নেককারদের রক্ষা করেন।
  • উপদেশ ব্যর্থ মনে হলেও, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে মহৎ কাজ।
  • নীরবতা ও অবাধ্যতা উভয়ই সমাজে আযাব ডেকে আনে।
  • আল্লাহর শাস্তি আসে তখনই, যখন মানুষ সত্যকে উপহাস করে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর ন্যায়বিচার এখানে স্পষ্ট — যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল, তারা শুধু নিজেরাই বেঁচে গেল না, বরং আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা সম্মানিত হলো 🌸 🌸 আর যারা “আমরা তো কিছু করিনি” বলে চুপ থেকেছিল, তাদের নীরবতাই ছিল অপরাধের অংশ। 🌿 তাই এই আয়াত আমাদের শিক্ষা দেয় — **তুমি যদি পাপ থামাতে না পারো, অন্তত তার বিরুদ্ধে কথা বলো।** কারণ, নীরব মানুষকেও আল্লাহ প্রশ্ন করবেন — “তুমি কি অন্যায় দেখনি?” 💔

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَنجَيْنَا ٱلَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ ٱلسُّوٓءِ وَأَخَذْنَا ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ بِعَذَابٍۢ بَـِٔيسٍۢ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে অন্যায় থেকে মানুষকে বিরত রাখে, আল্লাহ তাকেই রক্ষা করেন।** 🌿🤍
আয়াত ১৬৬
فَلَمَّا عَتَوْا۟ عَن مَّا نُهُوا۟ عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا۟ قِرَدَةً خَـٰسِـِٔينَ
ফালাম্মা আতাও আন্ মা নুহূ আনহু, কুলনা লাহুম কুনূ কিরাদাতান খাসিইন।
“অতঃপর যখন তারা সেই বিষয় থেকে বিরত হল না, যা তাদের নিষেধ করা হয়েছিল — তখন আমরা বললাম, ‘তোমরা হও লাঞ্ছিত বানর।’” 🐒⚡
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেই চূড়ান্ত পরিণতির কথা বর্ণনা করছেন, যা ঘটেছিল “আসহাবে সাবত” (শনিবারে পাপ করা জাতি)-এর উপর।

🌸 **“ফালাম্মা আতাও আন্ মা নুহূ আনহু”** — “যখন তারা সেই কাজ থেকে বিরত হল না, যা তাদের নিষেধ করা হয়েছিল।” অর্থাৎ, তারা বারবার সতর্কবার্তা শুনেও থামেনি। তারা উপদেশদাতাদের উপহাস করেছিল, এবং নিজেদের চাতুর্য দিয়ে আল্লাহর আদেশকে ফাঁকি দিচ্ছিল। 🌿 আল্লাহ তাদেরকে সময় দিয়েছিলেন — একদিন, দুইদিন, বছর ধরে — কিন্তু তারা মনে করেছিল, “শাস্তি তো আসছে না, তাহলে হয়তো আল্লাহ কিছু বলবেন না।”

🌸 তখন আল্লাহর আদেশ এলো — **“কুলনা লাহুম কুনূ কিরাদাতান খাসিইন”** — “আমরা বললাম, তোমরা হও লাঞ্ছিত বানর।” অর্থাৎ, এক মুহূর্তেই তাদের রূপ, মন ও মর্যাদা সবকিছু বদলে গেল 💔

🌿 **“কিরাদাতান খাসিইন”** — অর্থাৎ, “লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত বানর।” এটি শুধু শারীরিক পরিবর্তন ছিল না, বরং এক **আধ্যাত্মিক অবনতি**। তারা বাহ্যিকভাবে বানর রূপ ধারণ করেছিল, কিন্তু ভেতরে রয়ে গিয়েছিল অপরাধবোধ ও বেদনা। কিছুদিন পর তারা একে অপরকে চিনতেও পারছিল না, আর কয়েক দিনের মধ্যেই তারা বিলুপ্ত হয়ে যায় 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক চিরন্তন সতর্কবার্তা — **আল্লাহর হুকুম নিয়ে খেলো না।** কারণ, আল্লাহর আদেশে অবাধ্যতা শুধু দেহ নয়, আত্মাকেও বিকৃত করে দেয়। 🌸 “বানর বানিয়ে দেয়া” শুধু এক যুগের ঘটনা নয়, বরং প্রতীক — যখন মানুষ নিজের কামনা, লোভ ও চাতুর্যের দাস হয়, তখন সে ধীরে ধীরে মানবিক মর্যাদা হারিয়ে পশুর পর্যায়ে নেমে যায় 💔 🌿 আল্লাহ মানুষের জন্য সর্বোচ্চ মর্যাদা নির্ধারণ করেছেন, কিন্তু অবাধ্যতা সেই মর্যাদাকে নিচে নামিয়ে আনে। 🌸 তাই, যে ব্যক্তি গুনাহে ডুবে থেকে ভাবে “আমি তো এখনো ভালো আছি” — সে বুঝুক, **শাস্তি শুধু রূপ নয়, বরং আত্মার উপরও নেমে আসে।**

উদাহরণ:
🌿 যেমন এক গাছকে যদি শিকড় থেকে কেটে ফেলা হয়, সে প্রথমে সবুজই থাকে, কিন্তু ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। তেমনি পাপী মানুষও প্রথমে স্বাভাবিক মনে হয়, কিন্তু আল্লাহর ক্রোধে তার রূহ ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায় 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর আদেশ অমান্য করা কখনো ছোট অপরাধ নয়।
  • বারবার উপদেশ উপেক্ষা করা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস ডেকে আনে।
  • আল্লাহর হুকুমকে ফাঁকি দেওয়া মানেই আত্মিক বিকৃতি।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়, কিন্তু অনুপস্থিত নয়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত কেবল ইতিহাস নয়, এটি আমাদের আত্মার অবস্থা যাচাইয়ের আয়না। 🌸 আজ যদি কেউ গুনাহ করে গর্ব বোধ করে, সত্য লুকিয়ে ফায়দা তোলে, বা আল্লাহর বিধানকে ব্যঙ্গ করে — তবে সে বুঝুক, সে বানর নয়, কিন্তু **তার আত্মা ইতিমধ্যেই রূপান্তরিত হচ্ছে।** 💔 🌿 আল্লাহর শাস্তি সবসময় বাহ্যিক নয় — কখনও তা আত্মিক অপমান, বিবেকহীনতা বা হৃদয় কঠিন হয়ে যাওয়া। এটাই আজকের মানুষের সবচেয়ে বড় শাস্তি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“كُونُوا۟ قِرَدَةً خَـٰسِـِٔينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে মানুষ আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে, সে ধীরে ধীরে তার মানবিকতা হারিয়ে ফেলে।** 🌿🤍
আয়াত ১৬৭
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ مَن يَسُومُهُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ ۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ ٱلْعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ
ওয়াইয তা’আযযানা রাব্বুকা লাইয়াব‘আছান্না আলাইহিম ইলা ইয়াওমিল কিয়ামাহ মান ইয়াসূমুহুম সূআল আযাব, ইন্না রাব্বাকা লাসারী‘উল ইকাব, ওয়া ইন্নাহু লা গফূরুর রহীম।
“আর যখন তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করলেন — ‘আমি অবশ্যই কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর এমন কিছু লোক পাঠাব, যারা তাদেরকে কঠিন কষ্ট ও অপমানের শাস্তি ভোগ করাবে।’ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তিদাতা, আর নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে **বনী ইসরাঈলের ওপর এক স্থায়ী শাস্তির ঘোষণা** দিয়েছেন। এটি এমন এক শাস্তি যা শুধু একটি প্রজন্ম নয়, বরং পুরো জাতির ইতিহাসকে আচ্ছন্ন করেছে — **“ইলা ইয়াওমিল কিয়ামাহ” — কিয়ামত পর্যন্ত।**

🌸 **“ওয়ইয তা’আযযানা রাব্বুকা”** — “যখন তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করলেন।” অর্থাৎ, এটি কোনো সম্ভাবনা নয় — এটি এক **চূড়ান্ত ঈশ্বরীয় ঘোষণা**, যেখানে আল্লাহ নিজেই তাঁর আদেশের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন।

🌿 **“লাইয়াব‘আছান্না আলাইহিম মান ইয়াসূমুহুম সূআল আযাব”** — “আমি এমন কিছু লোক পাঠাব যারা তাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেবে।” ইতিহাস সাক্ষী — বনী ইসরাঈল কখনো প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। তারা এক জাতির হাতে নিপীড়িত হয়েছে — কখনো **বাবিলনীয়রা**, কখনো **রোমানরা**, কখনো **নবূখদ নাসর**, আবার কখনো **আধুনিক যুগে বিভিন্ন শক্তি** 🌍 🌸 “সূআল আযাব” মানে শুধু শারীরিক শাস্তি নয়, বরং **অপমান, দাসত্ব, ভয় ও অস্থিরতা।** তাদের মাথার উপর সর্বদা শাসনকারীর ছায়া থাকবে, এবং তারা কখনো নিরাপদ অনুভব করবে না 💔

🌿 আল্লাহ বলেন — **“ইন্না রাব্বাকা লাসারী‘উল ইকাব”** — “তোমার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তিদাতা।” অর্থাৎ, তিনি অবাধ্যদের সুযোগ দেন, কিন্তু যখন সীমা অতিক্রম হয়, তখন তাঁর শাস্তি এক মুহূর্তও বিলম্ব হয় না।

🌸 কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ বলেন — **“ওয়া ইন্নাহু লা গফূরুর রহীম”** — “আর নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” যেন আমরা বুঝি — আল্লাহর ন্যায়বিচার কঠোর হলেও, তাঁর দরজা সবসময় খোলা থাকে তাওবার জন্য 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের শেখাচ্ছেন — অবাধ্যতার শাস্তি কখনো শুধু একজনের নয়, বরং তা পুরো জাতির ইতিহাসে ছাপ রেখে যায়। 🌸 যে জাতি অন্যায়, বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণাকে নীতি বানায়, আল্লাহ সেই জাতিকে **মর্যাদাহীন দাসত্বে** পতিত করেন। 🌿 “কিয়ামত পর্যন্ত” বলা মানে — আল্লাহর ন্যায়বিচারের চক্র চলতে থাকবে; যতদিন তারা তাদের অবাধ্যতা ও অহংকারে স্থির থাকবে, ততদিন তারা শান্তি পাবে না। 🌸 তবে আল্লাহর দরজা বন্ধ নয় — যদি তারা সত্যিকারের তাওবা করে ও বিনয়ী হয়, তবে আল্লাহ আবারও তাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারেন 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন মানুষ অহংকারে নিজের গুনাহে গর্ব করে, একসময় সে শুধু বিপদে নয়, বরং **অপমানে** পড়ে যায় — কারণ আল্লাহ তাঁর সম্মান কেড়ে নেন। তেমনি বনী ইসরাঈলও তাদের জ্ঞান, সম্পদ ও বংশগৌরব থাকা সত্ত্বেও অপমান ও ভয়ের জীবনে নিপতিত হয়েছে।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর শাস্তি কখনো বিলম্বিত হয়, কিন্তু অনিবার্য।
  • এক জাতির অবাধ্যতা তার ইতিহাসে পরিণত হয়।
  • ক্ষমা ও শাস্তি—দুটিই আল্লাহর ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়বিচারের প্রকাশ।
  • আল্লাহর রহমত তখনই আসে, যখন মানুষ নিজেকে বদলায়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের সমাজের জন্যও এক সতর্কবার্তা — যদি আমরা অন্যায়, লোভ ও অহংকারে ডুবে যাই, তবে আমরাও আমাদের সম্মান হারাতে পারি। 🌸 আল্লাহর বিধান অবহেলা মানে শুধু গুনাহ নয়, বরং **নিজেকে লাঞ্ছিত জাতিতে পরিণত করা।** 🌿 তাই এই আয়াত কেবল বনী ইসরাঈলের নয়, বরং প্রতিটি মুসলিম জাতির জন্য একটি আয়না — যা মনে করিয়ে দেয়, **আল্লাহর দয়া চাইলে, আনুগত্যে ফিরে আসতে হবে।** 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ مَن يَسُومُهُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **অবাধ্য জাতির পতন শুধু ইতিহাস নয়, এটি আল্লাহর চিরন্তন আইন।** 🌿🤍
আয়াত ১৬৮
وَقَطَّعْنَـٰهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ أُمَمًۭا ۖ مِّنْهُمُ ٱلصَّـٰلِحُونَ وَمِنْهُمْ دُونَ ذَٰلِكَ ۖ وَبَلَوْنَـٰهُم بِٱلْحَسَنَـٰتِ وَٱلسَّيِّـَٔاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
ওয়াকাত্তা‘নাহুম ফিল আরদি উমামা, মিনহুমুস সালিহূনা ওয়া মিনহুম দুনা যালিক, ওয়াবালাওনাহুম বিল হাসানাতি ওয়াস্‌সাইয়িয়াত, লা‘আল্লাহুম ইয়ারজিঊন।
“আর আমরা তাদেরকে পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত করেছিলাম। তাদের মধ্যে কিছু ছিল সৎকর্মশীল, আর কিছু ছিল এর বিপরীত। আর আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম কল্যাণ ও বিপদ দ্বারা — যাতে তারা ফিরে আসে (আমাদের দিকে)।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা বলেন — **“ওয়াকাত্তা‘নাহুম ফিল আরদি উমামা”** — “আমরা তাদেরকে পৃথিবীতে জাতি-জাতিতে বিভক্ত করেছিলাম।” অর্থাৎ, বনী ইসরাঈলদের ঐক্য ও শক্তি কেড়ে নিয়ে আল্লাহ তাঁদের বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন দলে ছড়িয়ে দেন। 🌸 কেউ পূর্বদিকে, কেউ পশ্চিমে, কেউ মরুভূমিতে, কেউ সমুদ্রতীরে — তারা একক জাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারল না। 🌿 এটাই ছিল **আল্লাহর শাস্তির একটি সূক্ষ্ম রূপ** — বাহ্যিকভাবে তারা জীবিত, কিন্তু আত্মিকভাবে ছিন্নভিন্ন ও দুর্বল হয়ে পড়ে। 💔

🌸 **“মিনহুমুস সালিহূনা ওয়া মিনহুম দুনা যালিক”** — “তাদের মধ্যে কিছু সৎকর্মশীল ছিল, আর কিছু ছিল তার বিপরীত।” অর্থাৎ, সবাই একই রকম ছিল না। কিছু মানুষ তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরেছিল, আর কিছু মানুষ তাদের পুরনো অবাধ্যতা অব্যাহত রেখেছিল। 🌿 আল্লাহর এই বিভাজনের মধ্যেও ছিল তাঁর প্রজ্ঞা — যেন ভালোরা টিকে থাকে, আর মন্দরা নিজের কর্মে ধ্বংস হয়।

🌸 **“ওয়াবালাওনাহুম বিল হাসানাতি ওয়াস্‌সাইয়িয়াত”** — “আর আমরা তাদের পরীক্ষা করেছিলাম কল্যাণ ও বিপদ দ্বারা।” অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁদের কখনো সুখ-সমৃদ্ধি দিয়েছেন, আবার কখনো কষ্ট, দারিদ্র্য ও পরাজয় দিয়েছেন — যেন তারা বুঝতে পারে, **সবই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।**

🌿 **“লা‘আল্লাহুম ইয়ারজিঊন”** — “যাতে তারা ফিরে আসে।” আল্লাহ কখনো কষ্ট দেন না নিছক প্রতিশোধ নিতে, বরং দেন **স্মরণ করানোর জন্য, তাওবার আহ্বান হিসেবে।** 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক মহান শিক্ষা দেয় — **ঐক্য হারানোই আল্লাহর অন্যতম কঠিন শাস্তি।** যখন কোনো জাতি পাপ, অহংকার ও অবিচারে ডুবে যায়, তখন আল্লাহ তাদেরকে বিভক্ত করে দেন, যাতে তারা আর কোনো শক্তি হিসেবে টিকে না থাকতে পারে। 🌸 আল্লাহর প্রজ্ঞা এখানে স্পষ্ট — তিনি একদলকে অন্যের শিক্ষা বানান, আর এক জাতিকে অন্যের সতর্কতা করে দেন। 🌿 “সৎকর্মশীল” ও “অবাধ্য” — এই দুই ধরনের মানুষ সবসময় থাকবে, কিন্তু ইতিহাসে টিকে থাকবে শুধু সেই দল, যারা **তাওবা ও আনুগত্যে ফিরে আসে।** 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন একটি গাছ যদি ফল না দেয়, কৃষক সেটিকে কেটে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলে — যাতে অন্তত কোনো অংশে নতুন চারা জন্ম নিতে পারে। তেমনি আল্লাহও এক জাতিকে বিভক্ত করে দেন, যেন অন্তত কোনো অংশে ঈমান বেঁচে থাকে 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • জাতির ঐক্য ভেঙে যাওয়া আল্লাহর শাস্তির একটি রূপ।
  • আল্লাহর পরীক্ষা কখনো আশীর্বাদ, কখনো সতর্কতা।
  • সৎ মানুষ সবসময় থাকে, কিন্তু সংখ্যায় কম।
  • দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো মানুষকে তাঁর দিকে ফেরানো।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আজকের মুসলিম জাতির প্রতিচ্ছবি — আমরা সংখ্যায় কোটি কোটি, কিন্তু বিভক্ত, দুর্বল ও অস্থির। 🌸 কারণ, আমরা কিতাব মানলেও, তার শিক্ষাকে জীবনে প্রয়োগ করিনি। তাই আল্লাহ আমাদেরকেও বিভিন্ন জাতি ও দলে ভাগ করে দিয়েছেন। 🌿 তবুও আশা আছে — কারণ আল্লাহ বলেছেন, “যাতে তারা ফিরে আসে।” অর্থাৎ, **তাওবা ও ঐক্যই এই বিভক্তির একমাত্র চিকিৎসা।** 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَقَطَّعْنَـٰهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ أُمَمًۭا... لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **বিভক্তি শাস্তি, ঐক্য রহমত; আর প্রতিটি পরীক্ষা হলো ফিরে আসার আহ্বান।** 🌿🤍
আয়াত ১৬৯
فَخَلَفَ مِنۢ بَعْدِهِمْ خَلْفٌۭ وَرِثُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـٰذَا ٱلْأَدْنَىٰ وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا ۚ وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌۭ مِّثْلُهُۥ يَأْخُذُوهُ ۚ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَـٰقُ ٱلْكِتَـٰبِ أَلَّا يَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ وَدَرَسُوا۟ مَا فِيهِ ۗ وَٱلدَّارُ ٱلْـَٔاخِرَةُ خَيْرٌۭ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
ফাখালাফা মিন বা‘দিহিম খালফুন, ওয়ারিসুল কিতাব, ইয়াখুযূনা ‘আরাদাহা যাল আদনা, ওয়াকুলূনা সাইউগফারু লানা, ওয়াইয়াতিহিম ‘আরাদুম মিসলুহু ইয়াখুযূহু, আলাম ইউখায ‘আলাইহিম মীসাকুল কিতাব, আল্লা ইয়াকূলু ‘আলাল্লাহি ইল্লাল হক্ক, ওয়াদারাসূ মা ফীহি, ওয়াদ্দারুল আখিরাতু খাইরুল লিল্লাযীনা ইয়াত্তাকূন, আফালা তা‘কিলূন।
“অতঃপর তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এলো, যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হলো, কিন্তু তারা এ দুনিয়ার সামান্য লাভ গ্রহণ করত, আর বলত — ‘আমাদের তো ক্ষমা করা হবে।’ আবার তাদের কাছে অনুরূপ সুযোগ এলে তারাও সেই দুনিয়ার লোভে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অথচ তাদের থেকে তো অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল — তারা যেন আল্লাহ সম্পর্কে শুধু সত্য কথা বলে, এবং তারা কিতাবের বিষয়বস্তু পাঠও করেছিল। কিন্তু আখিরাতের আবাস তো তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহভীরু। তবুও কি তোমরা বুদ্ধি ব্যবহার করবে না?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বনী ইসরাঈলের **পরবর্তী প্রজন্মের** কথা বলছেন — যারা কিতাবের (তাওরাতের) জ্ঞান পেয়েছিল, কিন্তু তা শুধু মুখস্থ করে রেখেছিল, জীবনে তা বাস্তবায়ন করেনি 💔

🌸 **“ফাখালাফা মিন বা‘দিহিম খালফুন”** — “তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এলো।” এখানে “খালফ” শব্দটি এসেছে *অযোগ্য উত্তরসূরি* বোঝাতে। অর্থাৎ, তারা পূর্বপুরুষদের জায়গা নিলেও তাদের চরিত্র উত্তরাধিকার সূত্রে পায়নি।

🌿 **“ওয়ারিসুল কিতাব”** — “তারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হলো।” কিন্তু এই উত্তরাধিকার কেবল **জ্ঞানগত**, আমল বা ঈমানগত নয়।

🌸 **“ইয়াখুযূনা ‘আরাদাহা যাল আদনা”** — “তারা দুনিয়ার সামান্য লাভ নিত।” অর্থাৎ, তারা ধর্মকে জীবিকার উপায় বানিয়েছিল। তারা আল্লাহর বিধান বিক্রি করত পার্থিব সুবিধার বিনিময়ে — অর্থ, মর্যাদা, বা রাজকীয় সমর্থনের জন্য 💔

🌿 **“ওয়াকুলূনা সাইউগফারু লানা”** — “তারা বলত — ‘আমাদের তো ক্ষমা করা হবে।’” এটি ছিল আত্মপ্রবঞ্চনা — তারা পাপ করত জেনেশুনে, তারপর ক্ষমার আশা করত, কিন্তু তাওবা করত না। 🌸 **“ওয়াইয়াতিহিম ‘আরাদুম মিসলুহু ইয়াখুযূহু”** — “আবার একই সুযোগ এলে, তারা পুনরায় তাতে লিপ্ত হতো।” অর্থাৎ, তাদের তাওবা ছিল মুখের কথা — বাস্তবে তারা আবার সেই পাপে ফিরে যেত।

🌿 **“আলাম ইউখায ‘আলাইহিম মীসাকুল কিতাব”** — “অথচ তাদের সাথে তো কিতাবের অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল।” অর্থাৎ, তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা আল্লাহর নামে মিথ্যা বলবে না এবং তাঁর আদেশ বিকৃত করবে না।

🌸 **“ওয়াদারাসূ মা ফীহি”** — “তারা কিতাব পাঠ করেছিল।” অর্থাৎ, জ্ঞান ও শিক্ষা তাদের কাছে ছিল, কিন্তু হৃদয়ে ছিল না এর প্রভাব।

🌿 আল্লাহ শেষে বলেন — **“ওয়াদ্দারুল আখিরাতু খাইরুল লিল্লাযীনা ইয়াত্তাকূন”** — “আখিরাতের আবাস তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহভীরু।” অর্থাৎ, প্রকৃত জ্ঞান হলো সেই, যা মানুষকে আল্লাহভীরু ও বিনয়ী করে। 🌸 আর এই আয়াত শেষ হয় এক জাগ্রত প্রশ্নে — **“আফালা তা‘কিলূন?”** — “তবে কি তোমরা বুদ্ধি ব্যবহার করবে না?” এটি এমন এক প্রশ্ন, যা আজও প্রতিটি পাঠকের হৃদয়ে ধ্বনিত হয় 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহর কিতাব শুধু পাঠ করার জন্য নয়, বরং তা জীবনের নীতিতে রূপ দেওয়ার জন্য। যারা জেনে-শুনে পাপ করে এবং ভাবে “আমরা তো ক্ষমা পেয়ে যাব,” তারা আসলে নিজেদের সাথে প্রতারণা করছে। 🌸 কিতাব জানা কিন্তু তাতে আমল না করা ঠিক যেন একজন চিকিৎসক নিজের রোগ সারাতে ওষুধ না খায়। জ্ঞান তখন আর আলোক নয়, বরং গুনাহের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায় 💔 🌿 এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে — **ধর্ম কখনো ব্যবসা নয়, বরং দায়িত্ব।** আল্লাহর বাণী বিক্রি করে দুনিয়ার লাভ নেওয়া কেবল পরকাল নয়, এই দুনিয়াতেও অপমান ডেকে আনে।

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ জানে আগুনে হাত দিলে পুড়ে যাবে, তবুও সে হাত দেয় — কারণ তার কাছে সাময়িক উষ্ণতা বেশি মূল্যবান মনে হয়। তেমনি এই জাতি দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী লাভের জন্য আখিরাতের চিরস্থায়ী সুখ হারিয়ে ফেলেছিল 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • জ্ঞান ও কিতাব তখনই মূল্যবান, যখন তা আমলে রূপ নেয়।
  • আল্লাহর ক্ষমার আশা করা উচিত, কিন্তু গুনাহের পরিকল্পনা করে নয়।
  • আল্লাহর বাণী বিকৃত করা বা স্বার্থে ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ।
  • আখিরাতের চিন্তা ছাড়া দুনিয়ার জ্ঞান অন্ধকার হয়ে যায়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর কিতাব আমাদের হাতে, কিন্তু আমরা কি তা জীবন বদলানোর জন্য ব্যবহার করছি, নাকি শুধু উচ্চারণের জন্য? 🌸 কুরআন পড়া এক ইবাদত, কিন্তু কুরআন বোঝা ও তাতে জীবন চালানো — সেটিই প্রকৃত সফলতা 🌿 🌿 তাই এই আয়াত আমাদের সতর্ক করে দেয় — **জ্ঞান পেয়েও যদি তা জীবনে না আসে, তবে সেই জ্ঞানই কিয়ামতের দিন সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে।** 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا... وَٱلدَّارُ ٱلْـَٔاخِرَةُ خَيْرٌۭ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **জ্ঞান নয়, তাকওয়াই মানুষকে রক্ষা করে; কারণ কিতাব তখনই আলো, যখন তা হৃদয়ে নেমে আসে।** 🌿🤍
আয়াত ১৭০
وَٱلَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِٱلْكِتَـٰبِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُصْلِحِينَ
ওয়াল্লাযীনা ইউমাস্সিকূনাবিল কিতাবি ওয়া আকামুস সালাহ, ইন্না লা নুদীউ আজরাল মুসলিহীন।
“আর যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং নামায কায়েম করে, নিশ্চয়ই আমি সংশোধনকারীদের কর্মফল নষ্ট করি না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতে বলেছিলেন — কিছু লোক কিতাবের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ার লোভে তা বিক্রি করেছিল। কিন্তু এখানে তিনি **অন্য এক দলের প্রশংসা করছেন** — যারা সেই কিতাবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছিল, মানে **বিশ্বাস, জ্ঞান ও আমলে** একনিষ্ঠ ছিল। 🌸

🌸 **“ওয়াল্লাযীনা ইউমাস্সিকূনাবিল কিতাবি”** — অর্থাৎ, যারা আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে ধরে রাখে। এখানে “ইউমাস্সিকূনা” শব্দটি বোঝায় — শুধু পড়া নয়, বরং **অটলভাবে আঁকড়ে ধরা**। 🌿 তারা কিতাবকে তিলাওয়াত করে, বোঝে, জীবনে প্রয়োগ করে এবং অন্যদেরও তার আহ্বান দেয়। তারা কিতাবকে **দুনিয়ার স্বার্থের জন্য নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য** ধারণ করে।

🌸 **“ওয়া আকামুস সালাহ”** — “এবং নামায কায়েম করে।” অর্থাৎ, তারা শুধু কিতাব জানত না, বরং সেই জ্ঞানের বাস্তব প্রকাশ ঘটিয়েছিল ইবাদতের মাধ্যমে। 🌿 নামায হলো ঈমানের জীবন্ত প্রতীক — এটি সেই বন্ধন যা মানুষকে আল্লাহর সাথে যুক্ত রাখে। কিতাব মানুষকে শেখায়, আর সালাত তাকে শক্তি দেয় তা বাস্তবায়ন করতে 🌸

🌸 **“ইন্না লা নুদীউ আজরাল মুসলিহীন”** — “নিশ্চয়ই আমি সংশোধনকারীদের কর্মফল নষ্ট করি না।” অর্থাৎ, যারা নিজেদের জীবন ও সমাজকে কুরআনের আলোয় সাজায়, আল্লাহ তাদের একটিও সৎকর্ম বৃথা যেতে দেন না। 🌿 এখানে “মুসলিহীন” মানে — যারা শুধু নিজেরাই সৎ নয়, বরং সমাজে **ভালো পরিবর্তন আনতে কাজ করে।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহর কিতাবের প্রতি ভালোবাসা শুধু হৃদয়ের অনুভূতি নয়, বরং তা প্রকাশ পায় **আমল, সালাত ও সমাজসংশোধনে।** 🌸 যারা আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তাঁদের **সম্মান, নিরাপত্তা ও আখিরাতের সফলতা** দান করেন। 🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — কিতাবের অনুসারী মানে শুধু পাঠক নয়, বরং একজন **সংশোধনকারী (মুসলিহ)**, যে নিজের জীবন ও চারপাশে আলো ছড়ায় 🌿 🌸 আল্লাহ বলেননি — “যারা কিতাব পড়ল”, বরং বলেছেন — “যারা কিতাবকে আঁকড়ে ধরল।” কারণ, জ্ঞান যথেষ্ট নয় — **অটলতা ও কর্মই আসল।**

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ দড়ি ধরে পাহাড়ে উঠছে — যদি সে আলতোভাবে ধরে, পড়ে যাবে। কিন্তু দৃঢ়ভাবে ধরলে, নিরাপদে উঠতে পারবে। তেমনি, কিতাবকে যদি দৃঢ়ভাবে ধরা হয়, আল্লাহর পথে কখনো পতন ঘটে না 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে ধারণ করা ঈমানের মূল চিহ্ন।
  • কিতাবের জ্ঞান ও সালাত একে অপরের পরিপূরক।
  • যারা সমাজে সংস্কার আনে, আল্লাহ তাঁদের পুরস্কার সংরক্ষণ করেন।
  • আল্লাহর নিকট সফলতা জ্ঞানে নয়, বরং আন্তরিক আমলে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর কিতাব আমাদের হাতে, কিন্তু আমরা কি তা আঁকড়ে ধরেছি? নাকি কেবল তিলাওয়াতে সীমাবদ্ধ? 🌸 কিতাব ধরার মানে হলো — আল্লাহর হুকুম মানা, সালাতে স্থির থাকা, ও নিজের জীবন কুরআনের আলোয় গড়ে তোলা। 🌿 যারা তা করে, আল্লাহ তাঁদের কাজ কখনো বৃথা যেতে দেন না — এমনকি যদি দুনিয়ায় তারা অজানা থেকে যায়, আখিরাতে তারা হবে আল্লাহর নিকটে সম্মানিত 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَٱلَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِٱلْكِتَـٰبِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُصْلِحِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **কুরআন ও সালাত—এই দুই-ই হলো মুক্তির পথ; আর আল্লাহ কখনোই সৎদের পরিশ্রম বৃথা যেতে দেন না।** 🌿🤍
আয়াত ১৭১
وَإِذْ نَتَقْنَا ٱلْجَبَلَ فَوْقَهُمْ كَأَنَّهُۥ ظُلَّةٌۭ وَظَنُّوٓا۟ أَنَّهُۥ وَاقِعٌۭ بِهِمْ خُذُوا۟ مَآ ءَاتَيْنَـٰكُم بِقُوَّةٍۢ وَٱذْكُرُوا۟ مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
ওয়াইয নাতাকনাল জাবালা ফাওকাহুম কা’আন্নাহু যুল্লাহ, ওয়াযান্নূ আননাহু ওয়াকিঊন বিহিম, খুযূ মা আতার্নাকুম বিকুওয়াহ, ওয়াজকুরূ মা ফীহি লা‘আল্লাকুম তাত্তাকূন।
“আর যখন আমরা তাদের উপর পাহাড়কে তুলেছিলাম যেন তা ছায়ার মতো হয়ে গেল, আর তারা মনে করল এটি তাদের উপর পতিত হবে। তখন (আমরা বললাম), ‘তোমরা যা আমি তোমাদের দিয়েছি তা দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করো, এবং এতে যা আছে তা স্মরণ রাখো, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এক বিস্ময়কর ঘটনার কথা বলেছেন — যখন **তাওরাত** অবতীর্ণ হয়েছিল, বনী ইসরাঈলরা প্রথমে তা গ্রহণে অনীহা দেখায়। তারা বলেছিল, “এতো ভারী আদেশ! আমরা পারব না মানতে।” 💔 🌸 তখন আল্লাহ তাদের উপর পর্বত (তূর পাহাড়) উঠিয়ে ধরলেন, যেন তা তাদের মাথার ওপরে ছায়া হয়ে ঝুলছিল। 🌿 আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি এক অলৌকিক প্রদর্শন — **ভয় ও বাস্তবতার একত্র রূপ**। তারা দেখেছিল — যদি অবাধ্য হয়, এই পর্বত তাদের উপর ধসে পড়বে! ⚡

🌸 তখন আল্লাহর নির্দেশ আসে — **“খুযূ মা আতার্নাকুম বিকুওয়াহ”** — “যা আমরা তোমাদের দিয়েছি তা দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করো।” অর্থাৎ, কিতাবকে কেবল মুখে নয়, হৃদয়ে ও কর্মে গ্রহণ করো। শুধু জেনে নয়, দৃঢ় বিশ্বাসে ও দায়িত্ববোধে গ্রহণ করো 🌿

🌿 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ওয়াজকুরূ মা ফীহি”** — “এতে যা আছে তা স্মরণ রাখো।” অর্থাৎ, কিতাব শুধু হাতে রাখার নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা **স্মরণ ও বাস্তবায়ন** করার জন্য।

🌸 শেষে আল্লাহ বলেন — **“লা‘আল্লাকুম তাত্তাকূন”** — “যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।” কারণ, কিতাবের উদ্দেশ্য শুধু শিক্ষা নয়, বরং মানুষকে **তাকওয়া ও সঠিক জীবনের পথে আনা।** 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শুধু ইতিহাস নয়, এটি এক আত্মিক শিক্ষা — **যদি মানুষ বিনয় হারায়, আল্লাহ তাকে ভয় দেখান; আর যদি সে তাও হারায়, আল্লাহ তার উপর বিচার পাঠান।** 🌸 “পাহাড় তোলা” ছিল আল্লাহর এক নিদর্শন — যাতে বনী ইসরাঈল বুঝে যায় যে, আল্লাহর আদেশ হালকাভাবে নেওয়া যায় না। 🌿 কিতাব কাঁধে বহন করা সহজ, কিন্তু হৃদয়ে বহন করা কঠিন — আর আল্লাহ চান আমরা তা হৃদয়ে বহন করি। 🌸 তাই “বিকুওয়াহ” (দৃঢ়ভাবে) শব্দটি শুধু “আকড়ে ধরো” নয়, বরং “পুরো শক্তি ও আনুগত্য দিয়ে মানো।” 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন শিক্ষক ছাত্রকে বলে — “যদি তুমি এই পাঠ না শিখো, পরীক্ষা তোমাকে ফেলে দেবে।” তেমনি আল্লাহ তাআলা পাহাড় তুলে বলেছিলেন — “যদি তুমি এই কিতাব গ্রহণ না করো, তোমার উপরই এটি পতিত হবে।” ফলস্বরূপ, তারা ভয় ও শ্রদ্ধার মিশ্র অনুভূতিতে কিতাব গ্রহণ করেছিল 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর আদেশ মানা শুধু মুখের কথা নয়, কর্মের দৃঢ়তা প্রয়োজন।
  • ভয় কখনও কখনও আল্লাহর রহমতের একটি রূপ, যা মানুষকে ফিরিয়ে আনে।
  • কিতাব পড়া যথেষ্ট নয় — তাতে যা আছে তা স্মরণ ও বাস্তবায়ন করাই আসল।
  • আল্লাহর কিতাব মানুষকে তাকওয়া ও বিনয় শেখানোর জন্য।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় — আজও আমাদের মাথার উপর “পাহাড়” আছে, তবে তা পাথরের নয়, বরং **গুনাহ, দায়িত্ব ও অবহেলার বোঝা।** 🌸 যতক্ষণ আমরা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধরব না, এই বোঝা আরও ভারী হতে থাকবে। 🌿 তাই, এই আয়াত শুধু বনী ইসরাঈলের নয়, বরং আমাদের প্রত্যেকের প্রতি আল্লাহর আহ্বান — “আমার কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধরো, তবেই তোমার জীবনে সত্যিকার শান্তি ও তাকওয়া আসবে।” 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“خُذُوا۟ مَآ ءَاتَيْنَـٰكُم بِقُوَّةٍۢ وَٱذْكُرُوا۟ مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর কিতাব কাঁধে নয়, হৃদয়ে বহন করো; কারণ তাকওয়া আসে ভয়ের নয়, উপলব্ধির মাধ্যমে।** 🌿🤍
আয়াত ১৭২
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِىٓ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا۟ بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَآ ۛ أَن تَقُولُوا۟ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَـٰذَا غَـٰفِلِينَ
ওয়াইয আখাযা রাব্বুকা মিন বানী আদামা মিন যুহূরিহিম জুররিয়্যাতাহুম, ওয়া আশহাদাহুম ‘আলা আনফুসিহিম, আলাস্তু বিরাব্বিকুম? ক্বালূ বালা, শাহিদনা, আন তাকূলু ইয়াওমাল কিয়ামাহ, ইন্না কুননা আন হাযা গাফিলীন।
“আর স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পিঠ থেকে তাদের বংশধরদের বের করে তাদের নিজেদের উপর সাক্ষী করিয়েছিলেন — ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলেছিল — ‘জি হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী দিচ্ছি।’ (এটি করা হয়েছিল) যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা না বলো — ‘আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা আমাদের **অস্তিত্বের শুরুতে সংঘটিত এক মহান ঘটনার** কথা স্মরণ করাচ্ছেন — যাকে বলা হয় **“মিসাকুল আলাস্ত”** বা “আলাস্তের অঙ্গীকার”। 🌸 যখন আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁর পিঠ থেকে সমস্ত ভবিষ্যৎ মানবজাতির আত্মাকে বের করে প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করলেন — **“أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ؟” — “আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?”**

🌿 তখন প্রতিটি আত্মা উত্তর দিয়েছিল — **“بَلَىٰ” — “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।”** এভাবেই মানুষ স্বাভাবিকভাবে জানে যে, তার এক রব আছে, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, পরিচালনা করেন, ও জবাবদিহি নেবেন। 🌸 এই অঙ্গীকারটি আমাদের **ফিতরাতের (প্রাকৃতিক বিশ্বাস)** মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে — এজন্যই প্রতিটি শিশুই পৃথিবীতে জন্মায় আল্লাহকে চিনে, পরে পরিবেশ ও সমাজ তাকে বদলে ফেলে 🌿

🌿 আল্লাহ বলেন — **“ওয়া আশহাদাহুম ‘আলা আনফুসিহিম”** — “তাদের নিজেদের উপর সাক্ষী করিয়েছিলেন।” অর্থাৎ, এই অঙ্গীকারটি বাহ্যিক নয়, বরং আমাদের আত্মার গভীরে লিখিত হয়েছে। 🌸 তাই একজন নাস্তিকও বিপদের সময় অনিচ্ছায় বলে ফেলে — “হে ঈশ্বর!” — কারণ সেই রূহের স্মৃতি তার ভেতরে এখনো আছে।

🌿 **“আন তাকূলু ইয়াওমাল কিয়ামাহ ইন্না কুননা আন হাযা গাফিলীন”** — “যাতে কিয়ামতের দিন কেউ না বলতে পারে, আমরা তো এই ব্যাপারে গাফিল ছিলাম।” অর্থাৎ, আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন — “তোমাদের আত্মা তো আগেই স্বীকার করেছিল!” 🌸 তাই এই আয়াত প্রমাণ করে — মানুষ অজ্ঞ হয়ে জন্মায় না, বরং সত্য জেনে জন্মায়; কিন্তু দুনিয়ার মোহ ও গাফিলতিতে তা ভুলে যায়।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের আত্মার শিকড় স্মরণ করায় — আমরা আল্লাহর সামনে একবার দাঁড়িয়েছি, এবং “জি হ্যাঁ, আপনি আমাদের রব” বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি 🤍 🌸 সেই অঙ্গীকার আজও আমাদের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয় — যখন আমরা কুরআন শুনি, নামাজে কান্না আসে, অথবা সত্য কথা শুনে হৃদয় কেঁপে ওঠে — তখন সেই “আলাস্ত” স্মৃতি আবার জেগে ওঠে। 🌿 কিন্তু শয়তান ও দুনিয়া আমাদের তা ভুলিয়ে দেয়, যেন আমরা গাফিল হয়ে যাই। তাই আল্লাহ পাঠিয়েছেন নবী, কিতাব ও ওহি — সেই প্রাচীন চুক্তি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিতে 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ এক প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু সময়ের সাথে তা ভুলে যায় — তবুও তার হৃদয়ের গভীরে সেই প্রতিশ্রুতির ছায়া থেকে যায়। তেমনি আমরা সবাই একদিন “জি হ্যাঁ, আপনি আমাদের রব” বলেছিলাম, কিন্তু আজ তা ভুলে গেছি। 🌸 কুরআন, সালাত, ও দাওয়াত সেই হারানো স্মৃতিকে আবার জাগিয়ে তোলে 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • মানুষের অন্তরে আল্লাহকে স্বীকার করার ফিতরাত রয়েছে।
  • দুনিয়ার মোহ ও শয়তান মানুষকে সেই অঙ্গীকার ভুলিয়ে দেয়।
  • কুরআন ও নবীগণ আমাদের সেই প্রথম চুক্তি স্মরণ করিয়ে দেন।
  • কিয়ামতের দিনে কেউ অজুহাত দিতে পারবে না — “আমি জানতাম না।”

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত প্রতিটি মুমিনের আত্মাকে জাগিয়ে তোলে — “তুমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে আল্লাহর সামনে, এখন তুমি কি সেই প্রতিশ্রুতিতে অটল আছ?” 🌸 আমাদের দুনিয়ার জীবন সেই অঙ্গীকারেরই পরীক্ষা — আমরা ভুলব কিনা, নাকি স্মরণে রাখব? যারা স্মরণ রাখবে, তারাই কিয়ামতের দিন বলবে — “হে আমাদের রব! আমরা তো আগেই বলেছিলাম — আপনি-ই আমাদের প্রভু।” 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا۟ بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَآ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আমাদের আত্মা আল্লাহর সাক্ষী; তাই ঈমান মানে সেই প্রাচীন প্রতিশ্রুতিকে পুনর্জাগ্রত করা।** 🌿🤍
আয়াত ১৭৩
أَوْ تَقُولُوٓا۟ إِنَّمَآ أَشْرَكَ ءَابَآؤُنَا مِن قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةًۭ مِّنۢ بَعْدِهِمْ ۖ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلْمُبْطِلُونَ
আও তাকূলূ ইন্নামা আশরাকা আাবাউনা মিন কাবলু, ওয়া কুননা জুররিয়্যাতাম মিম্‌বা‘দিহিম, আফাতুহলিকুনা বিমা ফা‘আলাল মুবতিলূন।
“অথবা (কিয়ামতের দিন) তোমরা যেন না বলো — ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাই তো আগে শিরক করেছিল, আর আমরা ছিলাম তাদের পরবর্তী বংশধর।’ তবে কি আপনি আমাদের ধ্বংস করবেন তাদের কাজের জন্য যারা মিথ্যা পথ অবলম্বন করেছিল?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ব্যাখ্যা করছেন কেন তিনি মানুষের আত্মা থেকে “আলাস্তের অঙ্গীকার” নিয়েছিলেন। 🌸 আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল — **যাতে কিয়ামতের দিন কেউ অজুহাত দিতে না পারে, কিংবা দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে না দেয়।**

🌿 **“আও তাকূলূ ইন্নামা আশরাকা আাবাউনা”** — “তোমরা যেন না বলো, আমাদের পূর্বপুরুষরাই শিরক করেছিল।” অর্থাৎ, যেন কেউ না বলে — “আমরা তো ছোটবেলা থেকেই তাদের শেখানো পথে চলেছি, আমরাই বা কী দোষ করেছি?”

🌸 **“ওয়া কুননা জুররিয়্যাতাম মিম্‌বা‘দিহিম”** — “আমরা ছিলাম তাদের পরবর্তী বংশধর।” অর্থাৎ, তারা যেন অজ্ঞতার অজুহাত না দেয় — “আমরা তো জানতামই না কী সঠিক!” 🌿 আল্লাহ স্পষ্ট করছেন — তিনি কাউকে এমন অবস্থায় সৃষ্টি করেননি যে মানুষ সত্য জানবে না বা চিনবে না। বরং তাঁর ভেতরে রাখা হয়েছে সেই “রূহানী সাক্ষ্য”— “**আলাস্তু বিরাব্বিকুম? — আমি কি তোমার রব নই?**” 🌸

🌸 **“আফাতুহলিকুনা বিমা ফা‘আলাল মুবতিলূন”** — “তবে কি আপনি আমাদের ধ্বংস করবেন তাদের কারণে যারা ভুল পথে গিয়েছিল?” আল্লাহ বলছেন — না, আমি কাউকে অন্যের পাপের জন্য ধ্বংস করব না। 🌿 প্রত্যেক আত্মা তার নিজের আমলের জন্য জবাবদিহি করবে — কেউ বলবে না, “আমার বাবা এমন করেছিল, তাই আমিও করেছি।” কারণ, আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে **বুদ্ধি, বিবেক ও ফিতরাত** দিয়ে সৃষ্টি করেছেন 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আল্লাহর **পরিপূর্ণ ন্যায়বিচারের** প্রমাণ। কেউ যেন কিয়ামতের দিন বলতে না পারে — “আমাদের তো ভুল পথে ঠেলে দিয়েছিল অন্যরা।” 🌸 এটি বোঝায় — **উত্তরাধিকার ঈমান দেয় না, আর উত্তরাধিকার কুফরি থেকেও মুক্তির অজুহাত নয়।** 🌿 প্রত্যেকে নিজের বিবেকের আলোয় সঠিক পথ খুঁজে পেতে সক্ষম। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে সত্যের বীজ রোপণ করেছেন। তাই কেউ যদি তা উপেক্ষা করে, তবে দায় তার নিজের, পূর্বপুরুষের নয় 💔 🌸 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — **ধর্ম পরিবারে পাওয়া যায় না, তা হৃদয়ে জাগাতে হয়।** 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন মানুষ বলে — “আমার বাবা যদি অন্ধ হন, তাই বলে আমি কেন নিজের চোখ বন্ধ রাখব?” তেমনি কেউ বলতে পারে না — “আমার পূর্বপুরুষ মুশরিক ছিল, তাই আমিও।” 🌸 কারণ আল্লাহ প্রত্যেককে দিয়েছেন **বুদ্ধি ও চিন্তা করার ক্ষমতা**, যাতে সে নিজেই সত্যকে চিনে নিতে পারে 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ কাউকে অন্যের পাপের জন্য শাস্তি দেন না।
  • মানুষ তার নিজের সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী।
  • ঈমান বা কুফরি জন্মসূত্রে নয়, ব্যক্তিগত পছন্দের ফল।
  • আল্লাহর সামনে কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য হবে না।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজ অনেকেই বলে — “আমি যা দেখি তাই বিশ্বাস করি,” অথবা “আমার বাবা-দাদা যেমন ছিল, আমিও তেমন।” কিন্তু এই আয়াত বলে — **তুমি নিজে চিন্তা করার দায়িত্ব থেকে মুক্ত নও।** 🌸 আল্লাহ কিয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করবেন না — “তোমার পরিবার কী মানত?” বরং জিজ্ঞেস করবেন — “তুমি নিজে কী মানলে, কী করলে?” 🌿 🌿 তাই এই আয়াত আমাদের আত্মাকে জাগিয়ে দেয় — অজুহাত নয়, সত্যের অনুসন্ধানই হবে মুক্তির পথ। 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَوْ تَقُولُوٓا۟ إِنَّمَآ أَشْرَكَ ءَابَآؤُنَا... أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلْمُبْطِلُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **সত্যের অজুহাত নেই; আল্লাহ প্রত্যেক হৃদয়ে সত্যের আলো দিয়েছেন, এখন প্রশ্ন — তুমি কি সেটি অনুসরণ করবে?** 🌿🤍
আয়াত ১৭৪
وَكَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
ওয়া কাজালিকা নুফাসসিলুল আয়াত, ওয়া লা‘আল্লাহুম ইয়ারজিঊন।
“এভাবেই আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করি, যাতে তারা ফিরে আসে (আমার দিকে)।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতগুলোতে বলেছিলেন — তিনি মানুষের আত্মার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, যেন তারা কিয়ামতের দিন অজুহাত দিতে না পারে।

আর এই আয়াতে তিনি বলছেন — **“ওয়া কাজালিকা নুফাসসিলুল আয়াত”** — “এভাবেই আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করি।” অর্থাৎ, এই সব উদাহরণ, ঘটনা ও প্রতিশ্রুতি কেবল ইতিহাস নয়, বরং জীবন্ত শিক্ষা — যাতে মানুষ বারবার স্মরণ করে 🌸 🌸 আল্লাহ তাঁর কিতাবের মাধ্যমে, নবীদের মাধ্যমে, প্রকৃতির মাধ্যমে এবং জীবনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে মানুষকে সত্যের দিকেই ডাকছেন।

🌿 **“ওয়া লা‘আল্লাহুম ইয়ারজিঊন”** — “যাতে তারা ফিরে আসে।” এটি আল্লাহর এক **অসীম দয়া ও ভালোবাসার** প্রকাশ। শাস্তি নয়, আহ্বানই তাঁর উদ্দেশ্য। 🌸 আল্লাহ চাচ্ছেন মানুষ যেন নিজে থেকেই ফিরে আসে, তাওবা করে, অঙ্গীকার স্মরণ করে, এবং সেই প্রাকৃতিক “আলাস্ত” প্রতিশ্রুতিতে ফিরে যায় — “হ্যাঁ, আপনি-ই আমাদের রব।” 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতটি একদিকে আল্লাহর দয়া, অন্যদিকে মানুষের **অবিরাম স্মরণ ও সতর্কতার আহ্বান।** 🌸 আল্লাহ বারবার শিক্ষা দেন — কখনো কুরআনের আয়াতে, কখনো দুনিয়ার ঘটনার মাধ্যমে, কখনো কষ্ট ও পরীক্ষার আকারে — যেন মানুষ তার আসল প্রতিশ্রুতি ভুলে না যায়। 🌿 মানুষ আল্লাহর আয়াত শুনে, আকাশ দেখে, প্রকৃতি দেখে, মৃত্যু দেখে — কিন্তু যদি তারপরও ফিরে না আসে, তবে তার হৃদয়ই সবচেয়ে অন্ধ। 💔 🌸 এই আয়াত বলে — **আল্লাহর বার্তা একবার নয়, বারবার আসে; কিন্তু পরিবর্তন আসে তখনই, যখন হৃদয় শুনতে রাজি হয়।** 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন শিক্ষক ছাত্রকে অনেকভাবে বোঝান — কখনো সহজ ভাষায়, কখনো উদাহরণ দিয়ে, কখনো শাস্তি দেখিয়ে, কখনো পুরস্কার দিয়ে। তাঁর উদ্দেশ্য একটাই — ছাত্র যেন সত্য বুঝে ফিরে আসে। তেমনি আল্লাহও তাঁর বান্দাদের জন্য আয়াতগুলো বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন — **ভয়, আশা, উদাহরণ, ইতিহাস ও হৃদয়স্পর্শী উপদেশের মাধ্যমে।** 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর কিতাব ও নিদর্শনগুলো মানুষের জন্য অবিরাম সতর্কবার্তা।
  • আল্লাহর উদ্দেশ্য শাস্তি নয়, বরং মানুষের আত্মিক প্রত্যাবর্তন।
  • যারা আয়াতের ওপর চিন্তা করে, তারাই প্রকৃতভাবে “ফিরে আসে।”
  • প্রত্যেক ঘটনাই আল্লাহর দিক থেকে শিক্ষা ও স্মরণ।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহ মানুষের জন্য **আয়াতের বিশদ ব্যাখ্যা** দিয়েছেন — শুধু বোঝার জন্য নয়, **বদলে যাওয়ার জন্য।** 🌸 কিন্তু আমরা অনেকেই জ্ঞানের পেছনে ছুটি, অথচ হৃদয়ের পরিবর্তন আনতে ভুলে যাই। 🌿 এই আয়াত তাই আমাদের বলে — “তুমি শুধু জানো না, বরং ফিরে আসো।” কারণ **আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ সে, যে পথ হারিয়ে আবার ফিরে আসে।** 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَكَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْـَٔايَـٰتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর প্রতিটি নিদর্শন একটি ডাক — ফিরে এসো তোমার রবের দিকে, যে তোমার সাথে প্রথম প্রতিশ্রুতি নিয়েছিল।** 🌿🤍
আয়াত ১৭৫
وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ٱلَّذِىٓ ءَاتَيْنَـٰهُ ءَايَـٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ ٱلشَّيْطَـٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلْغَـٰوِينَ
ওয়াতলু আলাইহিম নাবা’আল্লাযী আাতাইনাহু আায়াতিনা ফানসালাখা মিনহা, ফা-আত্‌বাআহুশ শাইতানু, ফা-কানা মিনাল গাওইন।
“তাদেরকে সেই ব্যক্তির কাহিনি শুনিয়ে দাও, যাকে আমি আমার নিদর্শনসমূহ দিয়েছিলাম, কিন্তু সে তা থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল; ফলে শয়তান তাকে অনুসরণ করল, আর সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এখানে এক বিশেষ ব্যক্তির কাহিনি বর্ণনা করেছেন — যিনি আল্লাহর **আয়াত ও জ্ঞানের অধিকারী** ছিলেন। অনেক তাফসীরে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন একজন আলেম, যিনি আল্লাহর নাম ও দোয়া জানতেন। কিন্তু পরে **দুনিয়ার মোহ ও অহংকারে** তিনি সেই পথ ত্যাগ করেছিলেন। 💔

🌸 আল্লাহ বলেন — **“আাতাইনাহু আায়াতিনা”** — “আমি তাকে আমার নিদর্শন দিয়েছিলাম।” অর্থাৎ, তাকে জ্ঞান, হেদায়াত ও আল্লাহর নামসমূহের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছিল।

🌿 কিন্তু সে তা থেকে **“ফানসালাখা মিনহা”** — “সে তা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।” শব্দটি “ইনসালাখা” মানে — **চামড়া ছাড়ানো**, বা **খোলস ত্যাগ করা।** অর্থাৎ, সে কেবল ভুলে যায়নি, বরং সচেতনভাবে সেই সত্য থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

🌸 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ফা-আত্‌বাআহুশ শাইতানু”** — “ফলে শয়তান তাকে অনুসরণ করল।” অর্থাৎ, একবার সে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, শয়তান সুযোগ নিয়ে তাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়। 🌿 ফলাফল — **“ফা-কানা মিনাল গাওইন”** — “সে হয়ে গেল পথভ্রষ্টদের একজন।” অর্থাৎ, জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, সে অন্ধদের মতো অন্ধকারে পড়ে গেল, কারণ তার হৃদয় জ্ঞানের আলোকে ধারণ করতে চায়নি। 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতের ভেতর রয়েছে এক **ভয়াবহ শিক্ষা** — **জ্ঞান যদি আমলে না আসে, তবে তা শয়তানের হাতিয়ার হয়ে যায়।** 🌸 আল্লাহ বলেননি “সে অজ্ঞ ছিল”, বরং বলেন — “আমি তাকে জ্ঞান দিয়েছিলাম, কিন্তু সে তা ত্যাগ করেছিল।” 🌿 জ্ঞানের প্রকৃত মর্যাদা তখনই, যখন তা মানুষকে বিনয়ী করে, আল্লাহর কাছে ঝুঁকিয়ে দেয়। অন্যথায়, সেই জ্ঞান অহংকার ও পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 🌸 এই আয়াত সেইসব মানুষদের জন্য সতর্কবার্তা, যারা কুরআনের কথা জানে, শোনে, এমনকি শেখায়ও — কিন্তু নিজেদের জীবনে তা প্রয়োগ করে না। 🌿 কারণ, সত্য ত্যাগ করা মানে শুধু অবাধ্যতা নয়, বরং আল্লাহর নিকটে তা এক প্রকার **বেইমানি (betrayal)।**

উদাহরণ:
🌿 যেমন একটি সাপ তার পুরনো চামড়া ঝরিয়ে ফেলে, তেমনি সেই ব্যক্তি সত্যের চামড়া ঝরিয়ে নিজের প্রাণকে অন্ধকারে ঢেকে ফেলেছিল। 🌸 অথবা যেমন কেউ অমূল্য হীরা হাতে পেয়ে তা ছুঁড়ে ফেলে দেয় — কারণ তার চোখে কাদা-সোনা বেশি দামি মনে হয়। তেমনি সত্য ত্যাগকারী মানুষ, দুনিয়ার মোহে সেই চিরন্তন আলো হারিয়ে ফেলে। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর জ্ঞান একটি দায়িত্ব, তা কেবল তথ্য নয়।
  • সত্য জানার পর ত্যাগ করা সবচেয়ে বড় গোনাহ।
  • শয়তান শুধু তাদের উপর প্রভাব ফেলে, যারা নিজেরাই সত্য ত্যাগ করে।
  • জ্ঞানের প্রকৃত মর্যাদা আমলে, মুখস্থে নয়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজকের যুগেও আমরা এই আয়াতের প্রতিফলন দেখি — যারা কুরআন জানে, কিন্তু তার বিপরীতে চলে; যারা ইসলামের দাওয়াত দেয়, কিন্তু নিজের জীবন অন্ধকারে রাখে। 🌸 এই আয়াত যেন তাদের জন্য এক আয়না — “তুমি কি সেই ব্যক্তির মতো হয়ে যাচ্ছো, যাকে আমি জ্ঞান দিয়েছিলাম, কিন্তু সে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল?” 🌿 আল্লাহর নিদর্শন থেকে দূরে সরে যাওয়া মানে, শয়তানকে নিজের জীবনের লাগাম দিয়ে দেওয়া। আর তখন পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে 💔

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“ءَاتَيْنَـٰهُ ءَايَـٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ ٱلشَّيْطَـٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلْغَـٰوِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **জ্ঞানে নয়, স্থিরতায় মুক্তি; কারণ সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, শয়তানই তোমার পথপ্রদর্শক হয়ে যায়।** 🌿🤍
আয়াত ১৭৬
وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَـٰهُ بِهَا وَلَـٰكِنَّهُۥٓ أَخْلَدَ إِلَى ٱلْأَرْضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ ٱلْقَوْمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا ۚ فَٱقْصُصِ ٱلْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
ওয়ালাও শি’না লারাফা‘নাহু বিহা, ওয়ালাকিন্নাহু আখলাদা ইলাল আরদ, ওয়াত্তাবা‘আ হাওয়াহু, ফামাসালুহু কামাসালিল কালবি, ইন তাহমিল ‘আলাইহি ইয়ালহাথ, আও তাতরুকহু ইয়ালহাথ। যালিকা মাসালুল কাওমিল্লাযীনা কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা, ফাকসুসিল কাসাসা লা‘আল্লাহুম ইয়াতাফাক্কারূন।
“আর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে (সেই জ্ঞানের মাধ্যমে) উন্নত করতাম, কিন্তু সে পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে পড়েছিল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছিল। ফলে তার উদাহরণ হয়েছে কুকুরের মতো — তুমি তাকে তাড়ালেও সে হাঁপায়, আর তাকে ছেড়ে দিলেও সে হাঁপায়। এই উপমা তাদের জন্য, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে। সুতরাং তুমি এই কাহিনি বর্ণনা করো, যাতে তারা চিন্তা করে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা বলছেন — **“ওয়ালাও শি’না লারাফা‘নাহু বিহা”** — “আমি চাইলে তাকে এর দ্বারা উন্নত করতাম।” অর্থাৎ, আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া জ্ঞানের মাধ্যমে মর্যাদার উচ্চ স্থানে উন্নীত করতে পারতেন, যদি সে সেই জ্ঞানকে আঁকড়ে ধরত।

🌸 কিন্তু সে তা ত্যাগ করল — **“ওয়ালাকিন্নাহু আখলাদা ইলাল আরদ”** — “সে পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে পড়ল।” অর্থাৎ, সে আখিরাতের বদলে দুনিয়া বেছে নিল, সত্যের বদলে স্বার্থ, আল্লাহর বদলে নিজের ইচ্ছাকে অনুসরণ করল।

🌿 এরপর বলা হয়েছে — **“ওয়াত্তাবা‘আ হাওয়াহু”** — “সে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করল।” হাওয়া মানে কেবল ইচ্ছা নয়, বরং এমন কামনা, যা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। 🌸 এমন ব্যক্তি আর জ্ঞানে উপকৃত হয় না, বরং তার জ্ঞান তার অহংকারকে আরও বাড়ায় 💔

🌿 তাই আল্লাহ এক শক্তিশালী রূপক ব্যবহার করলেন — **“ফামাসালুহু কামাসালিল কালবি”** — “তার উদাহরণ কুকুরের মতো।”
কুকুর হাঁপায় সর্বদা — তুমি তাড়াও বা না তাড়াও, সে হাঁপিয়ে চলে। 🌸 তেমনি সেই মানুষ — তুমি তাকে দাও দুনিয়া, সে আরও চায়; তুমি দাও না, তবুও সে হাহাকার করে। অর্থাৎ, **লোভ, কামনা ও অসন্তোষে সে সবসময় অস্থির।**

🌿 আল্লাহ বলেন — **“যালিকা মাসালুল কাওমিল্লাযীনা কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা”** — “এটাই তাদের উপমা, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে।” অর্থাৎ, এ উদাহরণ শুধু এক ব্যক্তির নয়, বরং তাদের সবার জন্য, যারা জেনে শুনেও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

🌸 শেষে আল্লাহ বলেন — **“ফাকসুসিল কাসাসা লা‘আল্লাহুম ইয়াতাফাক্কারূন”** — “তুমি এই কাহিনি বর্ণনা করো, যাতে তারা চিন্তা করে।” অর্থাৎ, এই উদাহরণ কেবল গল্প নয়, বরং আত্মপর্যালোচনার আহ্বান। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষের **নৈতিক ও আত্মিক পতনের গভীর প্রতিচ্ছবি।** আল্লাহ মানুষকে উচ্চ স্থানে উন্নীত করার শক্তি দেন — কিন্তু যদি সে দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে যায়, সে নিজের মর্যাদাই ধূলিসাৎ করে ফেলে। 🌸 আল্লাহর জ্ঞান, কুরআন ও নির্দেশনা মানুষকে উপরে তোলে, কিন্তু প্রবৃত্তি ও কামনা তাকে নিচে নামায়। এই আয়াত সেই টানাপোড়েনের বাস্তব ছবি 🌿 🌿 “কুকুরের মতো হাঁপানো” — এটি শুধু দুনিয়ার লোভের নয়, বরং **অস্থির আত্মার প্রতীক।** যে কখনো শান্তি পায় না, কারণ সে আল্লাহ থেকে দূরে সরে গেছে।

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন মানুষ জ্ঞানের আলোয় পথ চিনে নিয়েছিল, কিন্তু সে নিজেই সেই আলো নিভিয়ে অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতে থাকে। তখন তার চোখে আলোও অন্ধকার মনে হয়। 🌸 অথবা যেমন এক কুকুর সর্বদা হাঁপায় — কারণ তার ভেতর স্থিরতা নেই। তেমনি আল্লাহ থেকে দূরে থাকা মানুষ সারাজীবন দৌড়ায়, চায়, সংগ্রহ করে — কিন্তু হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটে না। 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর জ্ঞান মানুষকে উচ্চ মর্যাদায় তুলে, যদি সে তা আঁকড়ে ধরে।
  • দুনিয়ার মোহ ও প্রবৃত্তি মানুষকে নিচে নামিয়ে দেয়।
  • জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আমল না করলে, তা পশুর স্তরে নামিয়ে দেয়।
  • আল্লাহর কাহিনিগুলো চিন্তা করার জন্য, শুধু শোনার জন্য নয়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আজকের যুগের বাস্তব চিত্র — জ্ঞানী মানুষ আছে, ধর্ম শেখানো লোকও আছে, কিন্তু তাদের অনেকেই দুনিয়ার মোহে হারিয়ে গেছে। 🌸 কুরআন পড়া, জানা বা শেখানোই যথেষ্ট নয়, বরং তা জীবনে বাস্তবায়ন করাই মুক্তি। 🌿 আল্লাহর পথে হাঁটতে গেলে হৃদয় শান্ত হয়, আর হাওয়ার পথে হাঁটলে মানুষ **অস্থির কুকুরের মতো** হয়ে যায় — চাওয়া, দৌড়, লোভ, কিন্তু কোনো তৃপ্তি নেই। 💔

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে মানুষ সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে দুনিয়াকে বেছে নেয়, তার হৃদয় কখনো শান্ত হয় না — সে চায় বা না চায়, সবসময় হাঁপিয়ে থাকে।** 🌿🤍
আয়াত ১৭৭
سَآءَ مَثَلًۭا ٱلْقَوْمُ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَأَنفُسَهُمْ كَانُوا۟ يَظْلِمُونَ
সা’আ মাসালানাল কাওমুল্লাযীনা কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা, ওয়া আনফুসাহুম কানো ইয়াজলিমূন।
“খুবই নিকৃষ্ট উদাহরণ সেই জাতির, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে; আর তারা নিজেদের উপরই জুলুম করে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতে বলেছিলেন — যে ব্যক্তি জ্ঞান পেয়েও তা ত্যাগ করে, তার উদাহরণ কুকুরের মতো; আর এখন তিনি বলছেন — সেই ধরনের মানুষদের সমষ্টিই হলো “খুবই নিকৃষ্ট জাতি”।

🌸 **“সা’আ মাসালানাল কাওমুল্লাযীনা কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা”** — “খারাপ উদাহরণ সেই জাতি, যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলেছে।” অর্থাৎ, যারা আল্লাহর নিদর্শন, শিক্ষা ও বার্তা অস্বীকার করে, তারা শুধু বিভ্রান্ত নয়, বরং **অভিশপ্ত উদাহরণে পরিণত হয়েছে।** 🌿 “মাসালান” শব্দটি এসেছে “মিথাল” থেকে — যার মানে, **একটি শিক্ষা বা দৃষ্টান্ত।** অর্থাৎ, আল্লাহ বলেন — এই জাতি এখন অন্যদের জন্য এক ভয়ঙ্কর শিক্ষা। 🌸 তারা জ্ঞান পেয়েছিল, নবী পেয়েছিল, কিতাব পেয়েছিল, কিন্তু অবহেলা, অহংকার ও কামনার কারণে সব হারিয়ে ফেলল।

🌿 আল্লাহ বলেন — **“ওয়া আনফুসাহুম কানো ইয়াজলিমূন”** — “তারা নিজেদের উপরই জুলুম করছিল।” অর্থাৎ, তারা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করেনি, বরং নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নষ্ট করেছে। 🌸 যেমন একজন মানুষ অমূল্য মুক্তা হাতে নিয়ে সেটিকে কাদায় ফেলে দেয় — মুক্তার কোনো ক্ষতি হয় না, বরং তার নিজের ক্ষতি হয়। তেমনি যারা কুরআনের আলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতের মূল বার্তা হলো — **সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানে আত্মহত্যার এক প্রকার রূপ।** কারণ, মানুষ তখন নিজের হৃদয়ের আলো নিজেই নিভিয়ে দেয়। 🌸 আল্লাহ বলেননি, “আমি তাদের উপর জুলুম করেছি,” বরং বলেন — “তারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে।” এটাই **আল্লাহর ন্যায়বিচারের মহিমা।** 🌿 কুরআনের আলো থেকে দূরে থাকা মানুষ বাহ্যিকভাবে হয়তো সুখী, কিন্তু ভেতরে তারা অস্থির, অন্ধকারে নিমজ্জিত। কারণ, হৃদয় যদি আল্লাহর আলো হারায়, তাহলে সে শান্তি খুঁজে পায় না কখনো। 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন একটি বাতি জ্বলছে, আর কেউ নিজেই সেটি নিভিয়ে ফেলে বলে, “দেখো, আমার ঘর অন্ধকার!” তেমনি আল্লাহর আয়াত আছে, কিন্তু যে মানুষ তা অস্বীকার করে, সে নিজেই নিজের অন্ধকার সৃষ্টি করে। 🌸 তাই আল্লাহ বলেন — **“খুবই নিকৃষ্ট উদাহরণ সেই জাতির”** — কারণ, তারা আলোর মাঝে থেকেও অন্ধকারে বাস করেছে। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করা আত্মিক আত্মহত্যার সমান।
  • যে জাতি সত্য জানে কিন্তু মানে না, আল্লাহ তাকে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত বানান।
  • আল্লাহ কখনো কারো প্রতি জুলুম করেন না; মানুষই নিজের উপর জুলুম করে।
  • সত্য প্রত্যাখ্যান মানুষকে নৈতিক ও মানসিক পতনের দিকে ঠেলে দেয়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আজ আমাদের জন্যও এক সতর্কবার্তা — আমরা কুরআনের আলো জানি, শুনি, এমনকি শেয়ারও করি, কিন্তু কি আমরা তা অনুসরণ করি? 🌸 যদি না করি, তাহলে আমরা যেন সেই জাতির মতো না হয়ে যাই, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বললেন — “তারা নিজেদের উপর জুলুম করেছিল।” 🌿 আজ আমাদের সমাজেও একই চিত্র — জ্ঞান আছে, কুরআন আছে, নামাজ আছে, কিন্তু অহংকার, অবহেলা ও কামনা আমাদের নিচে নামিয়ে নিচ্ছে। এই আয়াত আমাদের হৃদয়ে সেই সত্যটি জাগিয়ে দেয় 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“سَآءَ مَثَلًۭا ٱلْقَوْمُ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا وَأَنفُسَهُمْ كَانُوا۟ يَظْلِمُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে সত্য জানে কিন্তু তা মানে না, সে নিজের উপরই জুলুম করে; আর যে আল্লাহর আয়াতকে আঁকড়ে ধরে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন।** 🌿🤍
আয়াত ১৭৮
مَن يَهْدِ ٱللَّهُ فَهُوَ ٱلْمُهْتَدِ وَمَن يُضْلِلْ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ
মান ইয়াহ্‌দিল্লাহু ফাহুয়াল মূহতাদি, ওয়ামান ইউদ্লিল্‌ ফাউলায়িকা হুমুল খাসিরূন।
“যাকে আল্লাহ হিদায়াত দেন, সেও-ই সত্যিকার পথপ্রাপ্ত; আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তারাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে **হিদায়াত ও বিভ্রান্তির বাস্তব নীতি** ব্যাখ্যা করেছেন।

🌸 **“মান ইয়াহ্‌দিল্লাহু ফাহুয়াল মূহতাদি”** — “যাকে আল্লাহ হিদায়াত দেন, সে-ই পথপ্রাপ্ত।” অর্থাৎ, আল্লাহ যার অন্তরে আলো দেন, যার হৃদয়ে সত্যের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করেন, সে-ই প্রকৃতভাবে সঠিক পথে থাকে। 🌿 এটি বোঝায়, হিদায়াত কেবল **বুদ্ধি বা জ্ঞানের ফল নয়**, বরং এটি **আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি দান (তাওফিক)**। 🌸 অনেক মানুষ জ্ঞান রাখে, কুরআন জানে, কিন্তু তারা সেই জ্ঞান অনুযায়ী জীবন যাপন করে না — কারণ তাদের অন্তরে হিদায়াত নেই। আর অনেক সাধারণ মানুষ, যাদের বাহ্যিক জ্ঞান কম, কিন্তু আল্লাহ তাঁদের অন্তরে আলো দেন, তাই তারা সঠিক পথে চলে 🌿🤍

🌿 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ওয়ামান ইউদ্লিল্‌ ফাউলায়িকা হুমুল খাসিরূন”** — “আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।” অর্থাৎ, যখন মানুষ নিজেই সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন আল্লাহ তার হৃদয় বন্ধ করে দেন। এরপর যতই আলো পড়ুক, সে আর দেখে না। 🌸 সে কুরআন শুনে, কিন্তু তার হৃদয় প্রভাবিত হয় না; সে উপদেশ পায়, কিন্তু তা তার জীবনে ঢোকে না। কারণ আল্লাহর আলো তার অন্তরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছে 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **হিদায়াত কোনো মানুষের নিজের শক্তিতে আসে না।** আল্লাহ না চাইলে কেউ ঈমান আনতে পারে না। আর কেউ যদি তা চায়, আল্লাহ তাঁর পথ সহজ করে দেন।

🌸 তাই মুমিন সর্বদা বলে — **“اهدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ”** — “হে আল্লাহ! আমাদের সোজা পথে পরিচালিত করুন।” কারণ আমরা জানি, পথ দেখানোর ক্ষমতা একমাত্র তাঁর। 🌿 আল্লাহর হিদায়াতের তিনটি স্তর আছে —
১️ **জ্ঞান:** মানুষ সত্য জানতে পারে।
২️ **ইচ্ছা:** সে সেই সত্যকে গ্রহণ করতে চায়।
৩️ **তাওফিক:** আল্লাহ তাকে সেই পথে চলার শক্তি দেন।

🌸 কেউ যদি প্রথম দুই ধাপেই থেমে যায়, কিন্তু আমল না করে, তাহলে সে এখনো হিদায়াতপ্রাপ্ত নয় 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন পথচারী মানচিত্র দেখে সঠিক রাস্তা চিনল, কিন্তু সেখানে হাঁটল না — তাহলে সে কখনো গন্তব্যে পৌঁছাবে না। তেমনি, হিদায়াত শুধু জানা নয়, বরং **আল্লাহর দেয়া তাওফিক অনুযায়ী চলা।** 🌸 আর যাকে আল্লাহ সেই শক্তি দেন না, সে যত জ্ঞানই রাখুক, পথ হারায়ই। যেমন জাহাজে বাতি আছে, কিন্তু দিকনির্দেশক নেই 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • হিদায়াত আল্লাহর হাতে; মানুষ তা অর্জনের চেষ্টা করতে পারে মাত্র।
  • যে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ তার হৃদয়ে আলো দেন।
  • আল্লাহর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষকে ধীরে ধীরে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়।
  • সফলতা শুধু দুনিয়ার নয়, বরং আখিরাতের পথে টিকে থাকার নাম।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজকের যুগে অনেকেই বলে — “আমি সত্য জানি, আমি পথ দেখাতে পারি।” কিন্তু প্রশ্ন হলো — **তুমি কি সত্যিই হিদায়াতপ্রাপ্ত, নাকি কেবল জানার পর্যায়ে থেমে আছো?** 🌸 আল্লাহর হিদায়াত মানে — শুধু সঠিক মতাদর্শ নয়, বরং সঠিক দিকনির্দেশনা ও স্থিরতা। তাই আমাদের প্রতিটি নামাজে সেই দোয়া পুনরাবৃত্তি করা হয় — **“আমাদের সোজা পথে পরিচালিত কর।”** 🌿 কারণ পথ চেনা সহজ, কিন্তু সেই পথে স্থির থাকা শুধু আল্লাহর তাওফিকেই সম্ভব 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“مَن يَهْدِ ٱللَّهُ فَهُوَ ٱلْمُهْتَدِ وَمَن يُضْلِلْ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **হিদায়াত আল্লাহর উপহার, আর পথভ্রষ্টতা মানুষ নিজের পছন্দে আনে; তাই প্রতিটি মুমিনের সর্বোচ্চ দোয়া — “হে আল্লাহ! আমাদের সোজা পথে রাখুন।”** 🌿🤍
আয়াত ১৭৯
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌۭ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌۭ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ ءَاذَانٌۭ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ كَٱلْأَنْعَـٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْغَـٰفِلُونَ
ওয়ালাকাদ যারআনা লি-জাহান্নামা কাসীরাম্‌ মিনাল জিন্নি ওয়াল ইনস, লাহুম কুলুবুন্‌ লা ইয়াফকাহূনা বিহা, ওয়ালাহুম আয়ুনুন্‌ লা ইউবসিরূনা বিহা, ওয়ালাহুম আ’যানুন্‌ লা ইয়াসমাউনা বিহা। উলায়িকা কাল আন‘আম, বাল হুম আদাল্ল। উলায়িকা হুমুল গাফিলুন।
“আমি তো জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি অনেক জিন ও মানুষকে; তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে বোঝে না, তাদের চোখ আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে দেখে না, আর তাদের কান আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে শোনে না। তারা গবাদি পশুর মতো; বরং তারা আরও পথভ্রষ্ট। তারাই হলো প্রকৃত গাফিল (অসচেতন) লোক।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এখানে এক অত্যন্ত **গভীর বাস্তবতা** প্রকাশ করছেন — মানুষ ও জিনের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের আল্লাহ চোখ, কান ও হৃদয় দিয়েছেন, কিন্তু তারা এগুলো সত্যের জন্য ব্যবহার করে না।

🌸 **“ওয়ালাকাদ যারআনা লি-জাহান্নামা কাসীরাম্‌ মিনাল জিন্নি ওয়াল ইনস”** — “আমি তো জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি অনেক জিন ও মানুষ।” অর্থাৎ, তারা এমন পথে চলে, যা অবধারিতভাবে তাদের জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। 🌿 কিন্তু লক্ষ্য করো — আল্লাহ বলেননি, “আমি তাদের জাহান্নামের জন্য বানিয়েছি”, বরং “তাদের পথ ও কর্ম তাদের সেই পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।” অর্থাৎ, **তারা নিজেরাই নিজেদের গন্তব্য নির্ধারণ করে।** 🌸 এরপর আল্লাহ তাদের তিনটি অঙ্গের কথা বলেন — **হৃদয়, চোখ, কান।** এগুলো হিদায়াতের তিনটি দ্বার। কিন্তু যখন মানুষ এই তিনটি বন্ধ করে দেয়, তখন আল্লাহর আলো তাদের হৃদয়ে ঢোকে না 💔

🌿 **“লাহুম কুলুবুন লা ইয়াফকাহূনা বিহা”** — “তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু বোঝে না।” অর্থাৎ, তারা সত্য শোনে, কিন্তু উপলব্ধি করে না।

🌸 **“ওয়ালাহুম আয়ুনুন লা ইউবসিরূনা বিহা”** — “তাদের চোখ আছে, কিন্তু দেখে না।” তারা প্রকৃতির নিদর্শন দেখে, কিন্তু চিনে না আল্লাহর ক্ষমতা।

🌿 **“ওয়ালাহুম আ’যানুন লা ইয়াসমাউনা বিহা”** — “তাদের কান আছে, কিন্তু শোনে না।” তারা কুরআন শুনে, কিন্তু তা তাদের হৃদয়ে প্রবেশ করে না। 🌸 অর্থাৎ, তারা শারীরিকভাবে সচল, কিন্তু আত্মিকভাবে মৃত। 💔

🌿 **“উলায়িকা কাল আন‘আম, বাল হুম আদাল্ল”** — “তারা গবাদি পশুর মতো; বরং তারা আরও পথভ্রষ্ট।” কারণ পশু অন্তত নিজের স্বভাব অনুযায়ী চলে — ক্ষুধা পেলে খায়, ভয় পেলে পালায়। কিন্তু মানুষ জ্ঞান, বিবেক ও ঈমান থাকা সত্ত্বেও যদি সত্য থেকে দূরে থাকে, তবে সে পশুর চেয়েও নিচে নেমে যায়।

🌸 **“উলায়িকা হুমুল গাফিলুন”** — “তারাই প্রকৃত গাফিল।” অর্থাৎ, তারা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে হৃদয় ও আত্মা পুরোপুরি ঘুমিয়ে গেছে।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের আত্মাকে নাড়া দেয় — **হৃদয়, চোখ ও কান — এ তিনটি আল্লাহর দিকে যাওয়ার দরজা।** যখন এই তিনটি বন্ধ হয়ে যায়, তখন মানুষ জীবিত থেকেও মৃত হয়ে যায়। 🌸 গাফিল মানুষ পাপী নয় শুধু, বরং সে নিজের বাস্তব অস্তিত্বই ভুলে যায়। সে দুনিয়ার শব্দ শোনে, কিন্তু আল্লাহর আহ্বান শুনতে পায় না। 🌿 পশুরা অন্তত তাদের উদ্দেশ্য জানে — মানুষ জানে না সে কেন সৃষ্টি হয়েছে। এটাই তার পতনের শুরু 💔 🌸 এ আয়াত তাই শুধু অমুসলিমদের নয়, বরং **যারা ঈমান দাবি করেও কুরআনের আলোকে চলে না**, তাদের জন্যও এক ভয়াবহ সতর্কতা 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একটি বাতি আছে, কিন্তু সেটি ঢেকে রাখা হয়েছে পর্দায় — আলো আছে, কিন্তু বাইরে আসছে না। তেমনি গাফিল মানুষের ভেতরে সত্য আছে, কিন্তু সে নিজের পর্দা নিজেই টেনে রেখেছে। 🌸 অথবা যেমন একজন অন্ধ ব্যক্তি সূর্যের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও বলে, “আলো কই?” — তেমনি গাফিল মানুষ কুরআনের মাঝে থেকেও বলে, “আমার জীবনে শান্তি নেই।” 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • হৃদয়, চোখ ও কান — এই তিনটি আল্লাহর পথে যাবার মাধ্যম।
  • গাফিল মানুষ সত্য জানে, কিন্তু উপেক্ষা করে।
  • পশুরা তাদের প্রকৃতিতে সৎ থাকে, কিন্তু গাফিল মানুষ নিজের প্রকৃতি হারায়।
  • সত্য দেখা, শোনা ও বোঝা — এটি আল্লাহর দেয়া এক বিশেষ অনুগ্রহ।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজ আমাদের অনেকের চোখ খোলা, কিন্তু আমরা কুরআনের আলো দেখি না; কান খোলা, কিন্তু আল্লাহর আহ্বান শুনি না; হৃদয় চলছে, কিন্তু তাতে ঈমানের স্পন্দন নেই। 🌸 এই আয়াত আমাদের বলে — **জাহান্নামে যাওয়া শুরু হয় গাফিলতার মাধ্যমে।** আল্লাহ আমাদের যেন সেই ঘুমন্ত অবস্থার আগে জাগিয়ে দেন 🤍 🌿 সত্যের আলো বাইরে নয়, বরং হৃদয়ের ভেতরে জ্বলে — যদি আমরা তা আল্লাহর স্মরণে জাগিয়ে তুলি।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا... أُو۟لَـٰٓئِكَ كَٱلْأَنْعَـٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **মানুষ তখনই অন্ধ, যখন তার হৃদয় অন্ধ হয়; আর তাকওয়াই হলো সেই আলো, যা চোখ, কান ও হৃদয়কে জাগিয়ে রাখে।** 🌿🤍
আয়াত ১৮০
وَلِلَّهِ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ فَٱدْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا۟ ٱلَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِىٓ أَسْمَـٰٓئِهِۦ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
ওয়া লিল্লাহিল আসমাউল হুসনা, ফাদউহু বিহা, ওয়াযারুল্লাযীনা ইউলহিদূনা ফি আসমাইহি, সাইউজযাউনামা কানূ ইয়ামালূন।
“আর আল্লাহরই জন্য সমস্ত সুন্দর নাম; অতএব তোমরা তাঁকে সেই নামগুলো দ্বারা আহ্বান করো। আর যারা তাঁর নামগুলো নিয়ে বিকৃতি আনে, তাদেরকে ছেড়ে দাও — তারা যা করত, তারই প্রতিফল তারা পাবে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় দিয়েছেন — **“ওয়া লিল্লাহিল আসমাউল হুসনা”** — “আর আল্লাহরই জন্য সব সুন্দর নাম।” অর্থাৎ, এমন সব নাম যেগুলোর অর্থ **পরিপূর্ণ, পবিত্র, ও শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ।**

🌸 যেমন —
**আর-রহমান (অত্যন্ত দয়ালু)**
**আর-রহিম (অপরিসীম করুণাময়)**
**আল-হাকীম (অতীব প্রজ্ঞাময়)**
**আল-গফূর (অত্যন্ত ক্ষমাশীল)**
**আল-আহাদ (অদ্বিতীয়)**
— এগুলো সবই সেই নাম যা আল্লাহর সৌন্দর্য ও পূর্ণতার প্রতিফলন 🌿

🌿 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ফাদউহু বিহা”** — “তোমরা তাঁকে এই নামগুলো দ্বারা ডাকো।” অর্থাৎ, যখন দোয়া করবে, তখন আল্লাহর সেই নাম ব্যবহার করো যার সাথে তোমার প্রয়োজন মেলে।

🌸 যেমন — দয়া চাইলে বলো **“ইয়া রহমান”**,
ক্ষমা চাইলে বলো **“ইয়া গফুর”**,
জ্ঞান চাইলে বলো **“ইয়া আলীম”**,
রিজিক চাইলে বলো **“ইয়া রাজ্জাক”** 🌿

🌿 কারণ আল্লাহর নাম শুধু উচ্চারণ নয়, বরং তাঁর সত্তার গুণাবলির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন।

🌸 এরপর আল্লাহ সতর্ক করেন — **“ওয়াযারুল্লাযীনা ইউলহিদূনা ফি আসমাইহি”** — “আর যারা তাঁর নামসমূহে বিকৃতি আনে, তাদের ছেড়ে দাও।” অর্থাৎ, যারা আল্লাহর নামের অর্থ বিকৃত করে, ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে, বা মিথ্যা দেবতার সঙ্গে তুলনা করে — তাদের পথ অনুসরণ করো না।
🌿 আল্লাহর নামের অপব্যবহার বা বিকৃতি এক প্রকার **অবমাননা**, এবং এর পরিণতি কঠিন — **“সাইউজযাউনামা কানূ ইয়ামালূন”** — “তারা যা করত, তারই প্রতিফল তারা পাবে।”
🌸 অর্থাৎ, যারা আল্লাহর নামের মর্যাদা লঙ্ঘন করে, আল্লাহ তাদের সেই অন্যায়ের শাস্তি দান করবেন।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষকে আল্লাহর নামের মাধ্যমে তাঁকে চিনতে শেখায়। আল্লাহর প্রতিটি নাম এক একটি দরজা, যার মাধ্যমে আমরা তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারি।

🌸 “আসমাউল হুসনা” মানে শুধু নাম নয় — এটি আল্লাহর গুণ, ভালোবাসা ও করুণার পরিচয়। আল্লাহর নাম জানলে, মানুষ আল্লাহকে শুধু ভয় করে না — বরং ভালোবাসতেও শেখে 🌿🤍

🌿 “ফাদউহু বিহা” — এই বাক্যটি শুধু দোয়ার নির্দেশ নয়, বরং **একটি সম্পর্ক গড়ার আহ্বান।** যেন মানুষ আল্লাহর নামের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করে, তাঁকে অনুভব করে, তাঁর মহিমা উপলব্ধি করে।
🌸 যেমন “আর-রহমান” নামের মাধ্যমে বোঝা যায় — আল্লাহর দয়া সবার জন্য, আর “আর-রহিম” নামের মাধ্যমে বোঝা যায় — সেই দয়া বিশেষভাবে মুমিনদের জন্য 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন মানুষ কারো নাম শুনে তার চরিত্র চিনে ফেলে — তেমনি আল্লাহর নাম জানলে আমরা তাঁর সত্তার গুণাবলি অনুভব করতে পারি। 🌸 আল্লাহর নামগুলো শুধু জপ করার জন্য নয়, বরং তা অনুযায়ী **আমাদের চরিত্র গড়ে তোলার জন্য।** যেমন, আল্লাহ “আর-রহিম” — তাই আমরাও দয়ালু হব; আল্লাহ “আল-গফুর” — তাই আমরাও ক্ষমাশীল হব 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সব নামই সুন্দর, অর্থপূর্ণ ও পরিপূর্ণ।
  • দোয়ার সময় আল্লাহর নাম অনুসারে তাঁকে আহ্বান করাই উত্তম।
  • আল্লাহর নাম বিকৃত করা, ভুল অর্থে ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ।
  • আল্লাহর নাম জানলে ঈমান দৃঢ় হয় এবং ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজ অনেকেই আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, কিন্তু তাঁর গুণাবলিকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করে না। অথচ আসল হিদায়াত আসে তখনই, যখন আল্লাহর নাম শুধু মুখে নয়, হৃদয়ে বসে যায়।
🌸 “আসমাউল হুসনা” কেবল মুখস্থ করার নয় — বরং **সেগুলোর অর্থ হৃদয়ে ধারণ করা, এবং জীবনে প্রয়োগ করাই সত্যিকার ঈমান।** 🌿
🌿 তাই আল্লাহর নামগুলো শুধু পড়ে নয়, ভালোবাসা ও বিশ্বাস নিয়ে উচ্চারণ করো — কারণ সেই নামগুলোর মধ্যেই আছে শান্তি, আলো ও মুক্তি 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلِلَّهِ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ فَٱدْعُوهُ بِهَا”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর নামের মধ্যে আছে তাঁর ভালোবাসা, আর সেই নামের মাধ্যমে তাঁকে ডাকাই মুমিনের সবচেয়ে সুন্দর আমল।** 🌿🤍
আয়াত ১৮১
وَمِمَّنْ خَلَقْنَآ أُمَّةٌۭ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ
ওয়া মিম্মান খালাকনা উম্মাতুন ইয়াহদূনা বিলহাক্কি, ওয়াবিহি ইয়াদিলূন।
“আর আমি যাদের সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যেই এমন এক সম্প্রদায় আছে, যারা সত্যের দ্বারা পথ প্রদর্শন করে এবং সেই সত্যের দ্বারাই ন্যায়বিচার করে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতে বলেছিলেন — যারা তাঁর নাম নিয়ে বিকৃতি আনে, তারা পথভ্রষ্ট হবে। আর এই আয়াতে তিনি বলছেন — **সব মানুষই এমন নয়।** তাঁর বান্দাদের মধ্যেও এমন কিছু দল আছে যারা সত্যকে ধরে রাখে, শেখায় ও প্রতিষ্ঠা করে। 🌸

🌸 **“ওয়া মিম্মান খালাকনা উম্মাতুন”** — “আমি যাদের সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যেই এমন এক দল আছে।” অর্থাৎ, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যাদের আল্লাহ বিশেষভাবে বেছে নিয়েছেন সত্যের পথে দৃঢ় থাকার জন্য। 🌿 তারা শুধু নিজেদের জন্য হিদায়াতপ্রাপ্ত নয়, বরং **অন্যদেরকেও পথ দেখায়।** কারণ আয়াতে বলা হয়েছে — **“ইয়াহদূনা বিলহাক্কি”** — “তারা সত্যের দ্বারা পথপ্রদর্শন করে।”
🌸 তারা নিজেদের ইচ্ছা, মতামত বা চিন্তা নয়, বরং আল্লাহর কিতাব ও নবীর নির্দেশ অনুযায়ী মানুষকে পথ দেখায়। তাদের পথচলা কুরআনের আলোয়, তাদের বিচার আল্লাহর বিধানে।

🌿 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ওয়াবিহি ইয়াদিলূন”** — “আর সেই সত্যের দ্বারাই ন্যায়বিচার করে।” অর্থাৎ, তারা সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে, পক্ষপাতহীনভাবে সত্যের সঙ্গে থাকে, এমনকি নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধেও সত্যকে আঁকড়ে ধরে 🌿🤍

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতটি প্রমাণ করে — আল্লাহ কখনো পৃথিবীকে ন্যায়হীন হতে দেন না। সর্বদা কিছু মানুষ থাকেন যারা তাঁর দীনকে প্রতিষ্ঠা করে, মানুষের মাঝে আলো ছড়ায়।
🌸 আল্লাহর এই বিশেষ দল কোনো জাতি, বর্ণ বা যুগে সীমাবদ্ধ নয়; তারা প্রতিটি যুগে থাকে, যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের নির্দেশে মানুষের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।
🌿 তারা কখনো সংখ্যায় বেশি নয়, কিন্তু তাদের প্রভাব আল্লাহর বরকতে বিশাল। কারণ সত্য সবসময় সংখ্যায় নয়, বরং দৃঢ়তায় টিকে থাকে 🌿
🌸 এই আয়াত সেই মুমিনদের জন্যও অনুপ্রেরণা — যারা নিজেদের জীবনে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কারণ তারা জানে, আল্লাহর কাছে ন্যায়ই সর্বোচ্চ ইবাদত।

উদাহরণ:
🌿 যেমন রাত যতই অন্ধকার হোক, কিছু তারা সবসময় আকাশে জ্বলতেই থাকে — তারা পথ হারানো ভ্রমণকারীর দিক নির্দেশ করে।
🌸 তেমনি আল্লাহর এই বিশেষ বান্দারা অন্ধকার যুগে আলোর পথ দেখায়। তারা মানুষের সামনে কুরআনের আলো ছড়িয়ে দেয়, তাদের জীবনই যেন “জীবন্ত দাওয়াত” 🌿🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ প্রতিটি যুগে কিছু মানুষকে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন।
  • সত্যের পথ কেবল জানা নয়, অন্যদের পথ দেখানোও দায়িত্ব।
  • ন্যায়বিচার করা কেবল বিচারকের কাজ নয়, বরং প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য।
  • যে সত্যের ওপর স্থির থাকে, আল্লাহ তাকে পৃথিবীতে সম্মানিত করেন।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজকের দুনিয়ায় অন্যায় ও মিথ্যার ভিড়ে এই আয়াত আমাদের এক নতুন দায়িত্ব স্মরণ করায় — “সত্যকে শুধু জানা নয়, বরং তাতে অবিচল থাকা।”
🌸 যারা সত্যের সঙ্গে থাকে, আল্লাহ তাদের হিদায়াত দেন, আর যাদের অন্তর বিকৃত, তারা অন্যায়ের পক্ষে কথা বলে।
🌿 সত্যের পথে থাকা সহজ নয়, কিন্তু সেই পথই আল্লাহর প্রিয়। কারণ তিনি বলেন — **“তারা সত্যের দ্বারা পথ দেখায় এবং তাতে ন্যায়বিচার করে।”** 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَمِمَّنْ خَلَقْنَآ أُمَّةٌۭ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহ সর্বদা এমন এক দল রাখেন, যারা সত্যের পথে চলে, অন্যদের পথ দেখায়, আর দুনিয়ায় ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।** 🌿🤍
আয়াত ১৮২
وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ
ওয়াল্লাযীনা কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা সানাস্তাদরিজুহুম মিন হাইসু লা ইয়ালামূন।
“আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে, আমি তাদের ধীরে ধীরে (নাশের পথে) নিয়ে যাব — এমনভাবে, যা তারা টেরই পাবে না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বলছেন — **“ওয়াল্লাযীনা কাজ্জাবূ বিআয়াতিনা”** — “যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে।” অর্থাৎ, যারা কুরআনের সত্য, নবীদের বার্তা, ও আল্লাহর নির্দেশকে উপেক্ষা করে, তারা কেবল অবিশ্বাসী নয় — বরং নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনে।

🌸 এরপর আল্লাহ বলেন — **“সানাস্তাদরিজুহুম মিন হাইসু লা ইয়ালামূন”** — “আমি তাদের ধীরে ধীরে এমনভাবে ধ্বংসের দিকে টেনে নেব, যা তারা জানতেও পারবে না।”
🌿 এখানে ব্যবহৃত শব্দ **“ইস্তিদরাজ”** মানে — ধাপে ধাপে, নিঃশব্দে, এমনভাবে কাউকে পতনের দিকে নিয়ে যাওয়া, যেন সে ভাবে — সব ঠিক আছে।
🌸 আল্লাহ তাদের ধ্বংস করেন না সঙ্গে সঙ্গে, বরং প্রথমে তাদের দেন **দুনিয়ার সফলতা, আরাম, সম্পদ, মর্যাদা।** তারা ভাবে — “আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের পছন্দ করেছেন!” অথচ সেটাই হয় তাদের পরীক্ষা ও শাস্তির সূচনা 💔
🌿 তারা যখন পাপে লিপ্ত হয়, আর তাওবা না করে অহংকারে ডুবে যায়, তখন আল্লাহ বলেন — “আমি তাদের এমনভাবে টেনে নেব, যে তারা বুঝবে না কখন তারা ধ্বংসে পৌঁছে গেছে।” 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতের গভীরে আছে এক ভয়াবহ শিক্ষা — **প্রত্যেক দেরিতে আসা শাস্তি আল্লাহর দয়া নয়।** কখনো কখনো তা হয় “ইস্তিদরাজ” — অর্থাৎ, আল্লাহর ধৈর্যের সীমা পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। 🌸 আল্লাহ দেরি করেন, কিন্তু অবহেলা করেন না। তিনি বান্দাকে সুযোগ দেন, যেন সে ফিরে আসে — কিন্তু যখন সে অহংকারে ডুবে যায়, তখন সেই দেরিটাই হয়ে যায় তার পতনের ফাঁদ।

🌿 মানুষ ভাবে, “আমি তো ভালো আছি, পাপ করেও কিছু হলো না।” অথচ ঠিক সেই সময়েই আল্লাহ তার রুহকে ধীরে ধীরে শক্ত করে দেন — যাতে সত্য আর তার হৃদয়ে ঢোকে না। 💔

🌸 তাই আল্লাহ বলেন — “তারা জানবে না আমি কিভাবে তাদের ধরে নিচ্ছি।” কারণ শাস্তি কখনো ঝড়ের মতো নয়, বরং **নিঃশব্দ নিঃশেষতার মতো আসে।** 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একটি মাছ টোপে ধরা পড়ে — প্রথমে সে ভাবে, “আমি খাবার পেয়েছি!” কিন্তু একটু পরেই টের পায় — সেটাই ছিল তার ধ্বংসের ফাঁদ।
🌸 তেমনি অনেক মানুষ দুনিয়ার সফলতা দেখে ভাবে, “আমি নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রিয়।” অথচ তারা ভুলে যায় — **আল্লাহ কখনো কখনো সম্পদ ও সুখ দিয়েই পরীক্ষা নেন।**
🌿 তাই কেউ যদি আল্লাহ থেকে দূরে গিয়ে দুনিয়ায় সফল হয়, তবে সে যেন ভয় পায় — কারণ সেটি আল্লাহর অনুগ্রহ নয়, বরং এক **নিঃশব্দ সতর্কবার্তা।** 🌿💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ ধীরে ধীরে মানুষকে পরীক্ষা ও শাস্তির দিকে নিয়ে যান।
  • দুনিয়ার সফলতা সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টির চিহ্ন নয়।
  • পাপের পরও শান্তি থাকলে, তা হতে পারে ইস্তিদরাজ।
  • আল্লাহর ধৈর্য কখনো অবহেলার অর্থ নয় — বরং সতর্কবার্তা।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজ আমরা দেখি — কেউ পাপ করে, অন্যায় করে, তবু দুনিয়ায় স্বচ্ছল; কিন্তু সেই স্বচ্ছলতা যদি তাকে আরও গাফিল করে তোলে, তাহলে সেটি আল্লাহর দয়া নয়, বরং এক নিঃশব্দ ফাঁদ।
🌸 আল্লাহ কখনো কখনো বান্দাকে ছেড়ে দেন, যাতে সে নিজেই নিজের পতন ডেকে আনে। কিন্তু যে বান্দা সামান্য কষ্ট পেলেই তাওবা করে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন 🌿
🌿 তাই কষ্ট সবসময় শাস্তি নয় — বরং **তা প্রায়শই হিদায়াতের ডাক।** আর অতিরিক্ত স্বাচ্ছন্দ্য যদি মানুষকে গাফিল করে, তবে সেটাই আসল বিপদ। 💔

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যখন মানুষ আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার করে, তখন আল্লাহ তাকে ধীরে ধীরে পতনের পথে নিয়ে যান — এমনভাবে, যে সে ভাবে সে উন্নত হচ্ছে, অথচ সে ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে।** 🌿🤍
আয়াত ১৮৩
وَأُمْلِى لَهُمْ ۚ إِنَّ كَيْدِى مَتِينٌۭ
ওয়া উম্লী লাহুম, ইন্না কাইদী মতীন।
“আর আমি তাদের অবকাশ দিই (সময় দিই); নিশ্চয়ই আমার পরিকল্পনা অটল ও দৃঢ়।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আগের আয়াতে আল্লাহ বলেছিলেন — “আমি তাদের ধীরে ধীরে এমনভাবে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাব, যা তারা জানবে না।” এখন তিনি বলছেন — **“ওয়া উম্লী লাহুম”** — “আমি তাদেরকে অবকাশ দিই।”
🌸 অর্থাৎ, আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দেন না; বরং সময় দেন — যেন তারা বুঝে, ফিরে আসে, তাওবা করে। 🌿 কিন্তু যখন তারা সেই সুযোগেও ফিরে আসে না, তখন আল্লাহর ধৈর্যই হয়ে ওঠে **তাদের পতনের কারণ।**

🌸 আল্লাহ বলেন — **“ইন্না কাইদী মতীন”** — “নিশ্চয়ই আমার পরিকল্পনা দৃঢ়।” এখানে “কাইদ” মানে **আল্লাহর গোপন পরিকল্পনা**, যা বান্দার অজান্তে ঘটে, কিন্তু ফল আসে নিখুঁতভাবে। 🌿 মানুষ ভাবে — “আমি তো পাপ করছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না!” অথচ আল্লাহর পরিকল্পনা তখন ধীরে ধীরে কার্যকর হচ্ছে। একসময় সে নিজেই নিজের কৃত কর্মের জালে আটকে যায়। 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহর দেরি করা মানে ভুলে যাওয়া নয়। বরং তা এক ধরনের **নিরীক্ষা** — কে সত্যিকারভাবে তাওবা করে, আর কে গাফিল থেকে যায়।
🌸 আল্লাহ অনেক সময় পাপীদের সময় দেন, যেন তারা তাওবার সুযোগ পায়। কিন্তু তারা যখন সেই সুযোগকে উপহাসে পরিণত করে, তখন সেই “সুযোগ”ই হয় তাদের পতনের সিঁড়ি।

🌿 **“ইন্না কাইদী মতীন”** — আল্লাহর পরিকল্পনা শক্তিশালী, সুনির্দিষ্ট ও অব্যর্থ। কেউ তা এড়াতে পারে না, কেউ তা প্রতিহত করতে পারে না।
🌸 মানুষ অনেক পরিকল্পনা করে — কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনাই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একটি গাছ বাইরে থেকে সবল দেখায়, কিন্তু ভেতরে পচে যাচ্ছে — একদিন হঠাৎ ঝড়ে পড়ে যায়। তেমনি অন্যায়কারী মানুষও বাইরে সফল মনে হয়, কিন্তু তার আত্মিক ভিত্তি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। 💔
🌸 আবার যেমন একজন ডাক্তার রোগীকে সময় দেন, যেন সে ওষুধ খেয়ে সেরে ওঠে — কিন্তু যদি সে ওষুধ না খায়, তখন সেই দেরিই তার মৃত্যুর কারণ হয়।
🌿 তেমনি আল্লাহ দেরি দেন, যেন মানুষ ফিরে আসে — কিন্তু তারা সেই সুযোগ নষ্ট করে, আর তখন আল্লাহর “কাইদ” কার্যকর হয়ে যায়।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ অন্যায়কারীদের অবকাশ দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।
  • আল্লাহর ধৈর্য পরীক্ষা করা উচিত নয়; এটি ধ্বংসের সূচনা।
  • আল্লাহর পরিকল্পনা নীরব, কিন্তু অব্যর্থ।
  • প্রত্যেক বিলম্বই তাওবার আহ্বান, অবহেলার সুযোগ নয়।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত এক আত্মিক আয়না — আমরা কি আল্লাহর দেয়া “অবকাশ”কে দয়া মনে করছি, নাকি তাওবার সুযোগ হিসেবে নিচ্ছি?
🌸 যদি আমরা পাপের পরও সুস্থ, নিরাপদ, সুখী থাকি, তাহলে সেটি ভয়ের কারণ হওয়া উচিত, কারণ আল্লাহ হয়তো আমাদের **ইস্তিদরাজ** দিচ্ছেন।
🌿 আল্লাহর “কাইদ” (পরিকল্পনা) কখনো তাড়াহুড়ো করে না, কিন্তু যখন কার্যকর হয় — তখন কেউ তার হাত থেকে রেহাই পায় না। 💔
🌸 তাই সবচেয়ে বুদ্ধিমান সেই, যে দেরি হওয়ার আগেই ফিরে আসে, কারণ আল্লাহর পরিকল্পনা **দয়া ও প্রতিশোধ — উভয়ই পরিপূর্ণ ভারসাম্যে।** 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَأُمْلِى لَهُمْ ۚ إِنَّ كَيْدِى مَتِينٌۭ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহ দেরি দেন, কিন্তু ভুলে যান না; আর তাঁর পরিকল্পনা এত দৃঢ়, যে অন্যায়কারী যতই বুদ্ধিমান হোক, একদিন নিজের জালে নিজেই ধরা পড়ে।** 🌿🤍
আয়াত ১৮৪
أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا۟ ۗ مَا بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌۭ مُّبِينٌۭ
আওয়ালাম ইয়াতাফাক্কারূ, মা বি-সাহিবিহিম মিন জিন্নাহ, ইন হুয়া ইল্লা নাজীরুম মুবীন।
“তারা কি চিন্তা করে না? তাদের সঙ্গী (নবী মুহাম্মদ ﷺ)-এর মধ্যে তো কোনো উন্মাদনা নেই; তিনি তো কেবল এক স্পষ্ট সতর্ককারী।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এখানে এক সরল কিন্তু গভীর প্রশ্ন করেছেন — **“আওয়ালাম ইয়াতাফাক্কারূ”** — “তারা কি চিন্তা করে না?”
🌸 অর্থাৎ, যারা নবী ﷺ-কে অস্বীকার করছিল, তারা কি একবারও ভেবে দেখেনি — এই মানুষটি (মুহাম্মদ ﷺ) তাঁদের মাঝেই বড় হয়েছেন, কখনো মিথ্যা বলেননি, কখনো অন্যায় করেননি, তাহলে কীভাবে হঠাৎ তিনি উন্মাদ বা মিথ্যাবাদী হতে পারেন?

🌿 **“মা বি-সাহিবিহিম মিন জিন্নাহ”** — “তাদের সঙ্গীর মধ্যে কোনো উন্মাদনা নেই।” এখানে “সাহিব” অর্থাৎ “তাদের সঙ্গী” বলা হয়েছে — যাতে বোঝানো যায়, নবী ﷺ তাঁদের মধ্যে একজন, যাঁকে তারা শৈশব থেকে চিনে এসেছে। 🌸 মক্কার কুরাইশরা তাঁকে “আল-আমিন” (বিশ্বস্ত) নামে চিনত, তবু তারা অহংকারে অন্ধ হয়ে তাঁকে অস্বীকার করেছিল।

🌿 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ইন হুয়া ইল্লা নাজীরুম মুবীন”** — “তিনি তো কেবল একজন স্পষ্ট সতর্ককারী।” অর্থাৎ, তাঁর কাজ হলো মানুষকে সত্যের দিকে ডাকা এবং কিয়ামতের আগমনের বিষয়ে সাবধান করা। এতে কোনো উন্মাদনা নয়, বরং রহমত আছে। 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **চিন্তা করা ঈমানের একটি অংশ।** যারা সত্য নিয়ে ভাবতে জানে না, তারা সহজেই গাফিল হয়ে যায়।

🌸 আল্লাহ এখানে মানুষকে ভাবতে বলেছেন — “তুমি যার প্রতি অবিশ্বাস করছ, সে কি সত্যিই অযৌক্তিক কথা বলছে, নাকি তুমি নিজেই চিন্তা না করার কারণে অন্ধ হয়ে গেছ?”
🌿 নবী ﷺ-এর জীবন ছিল প্রকাশ্য সত্যের উদাহরণ। শত্রুরাও স্বীকার করত — তিনি মিথ্যা বলেননি, তিনি কোনো স্বার্থে কথা বলেননি।
🌸 তবু যারা চিন্তা করল না, তারা সত্য দেখতে পেল না। কারণ **চিন্তা বন্ধ হলে, হিদায়াত বন্ধ হয়ে যায়।** 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ সূর্যের আলোয় চোখ বন্ধ করে রাখে, সে বলে, “এখানে আলো নেই।” অথচ আলো আছে — শুধু তার চোখ খোলা নেই।
🌸 তেমনি যারা নবী ﷺ-এর দাওয়াত শুনেও ভাবে না, তারা নিজেরাই অন্ধ। কারণ সত্য তাঁদের সামনে স্পষ্ট, কিন্তু অহংকার তাদের পর্দা টেনে রেখেছে। 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • চিন্তা করা ও বিশ্লেষণ করা ঈমানের অপরিহার্য অংশ।
  • নবী ﷺ একজন মানুষ ছিলেন, কিন্তু আল্লাহর ওহি-প্রাপ্ত।
  • যারা অহংকারে অন্ধ, তারা স্পষ্ট সত্যকেও “উন্মাদনা” বলে।
  • আল্লাহ মানুষকে যুক্তি ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সত্যে পৌঁছাতে বলেন।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজকের যুগেও অনেকে বলে — “ধর্ম তো আবেগ, যুক্তি নয়।” অথচ আল্লাহ নিজেই বলেন — **“তারা কি চিন্তা করে না?”**
🌸 ঈমান কখনো অন্ধ আনুগত্য নয়; বরং এটি হলো **জ্ঞান, চিন্তা ও হৃদয়ের সজাগতা।** তাই সত্য বোঝার প্রথম পদক্ষেপ হলো — চিন্তা শুরু করা 🌿
🌿 নবী ﷺ আমাদের জন্য কেবল এক ধর্মীয় নেতা নন, বরং এক মানবিক দৃষ্টান্ত — যিনি চিন্তা, ন্যায় ও সত্যের প্রতীক।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا۟ ۗ مَا بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌۭ مُّبِينٌۭ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যারা চিন্তা করে, তারা সত্যে পৌঁছায়; আর যারা অন্ধ অনুসরণ করে, তারা আল্লাহর আলো থেকেও বঞ্চিত হয়।** 🌿🤍
আয়াত ১৮৫
أَوَلَمْ يَنظُرُوا۟ فِى مَلَكُوتِ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ مِن شَىْءٍۢ وَأَنْ عَسَىٰٓ أَن يَكُونَ قَدِ ٱقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ ۖ فَبِأَىِّ حَدِيثٍۭ بَعْدَهُۥ يُؤْمِنُونَ
আওয়ালাম ইয়ানযুরূ ফী মালাকূতিস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়া মা খালাকাল্লাহু মিন শাই, ওয়া আন আসা আয়্যকূনা কাদিকতারাবা আজালুহুম, ফাবি-আয়্যি হাদীসিন্‌ বা‘দাহু ইউ’মিনূন।
“তারা কি দৃষ্টিপাত করে না আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্বে, এবং যা কিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন — এবং এই চিন্তাও করে না যে, তাদের নির্ধারিত সময় (মৃত্যু) হয়তো নিকটবর্তী হয়ে গেছে? তাহলে এর পরে তারা আর কোন কথায় ঈমান আনবে?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এখানে মানুষের অচেতন মনকে জাগিয়ে তুলছেন — **“আওয়ালাম ইয়ানযুরূ”** — “তারা কি দেখছে না?” অর্থাৎ, তারা কি চোখ খুলে আকাশের বিশালতা, পৃথিবীর সৌন্দর্য ও আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনগুলো দেখছে না?

🌸 **“ফী মালাকূতিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ”** — “আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বে।” “মালাকূত” মানে এমন রাজত্ব, যা শুধুই আল্লাহর অধীনে — তাঁর মালিকানা, ক্ষমতা ও সৃষ্টিশীলতার প্রতিফলন।
🌿 এই পৃথিবীর প্রতিটি কণা, প্রতিটি নক্ষত্র, প্রতিটি সৃষ্টিই আল্লাহর এক একটি নিদর্শন। কিন্তু গাফিল মানুষ সেগুলো দেখে, তবু চিন্তা করে না। 💔
🌸 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ওয়া আন আসা আয়্যকূনা কাদিকতারাবা আজালুহুম”** — “তাদের নির্ধারিত সময় হয়তো নিকটবর্তী।” অর্থাৎ, তাদের মৃত্যু বা কিয়ামত শিগগিরই এসে যাবে, কিন্তু তারা এখনো উদাসীন। 🌿 এই আয়াত এক গভীর সতর্কতা — জীবন অনন্ত নয়। মৃত্যুর আগেই চিন্তা করতে হবে, কারণ পরে চিন্তা অর্থহীন।

🌸 শেষে আল্লাহ বলেন — **“ফাবি-আয়্যি হাদীসিন্‌ বা‘দাহু ইউ’মিনূন”** — “তাহলে এর পরে তারা আর কোন কথায় ঈমান আনবে?” অর্থাৎ, কুরআনের পর আর এমন কোন বাণী আছে যা তাদের সত্যে ফিরিয়ে আনতে পারবে? 🌿 কুরআনই আল্লাহর শেষ ও পরিপূর্ণ বাণী। যদি মানুষ এটিতেও চিন্তা না করে, তবে আর কিছুই তাকে জাগাতে পারবে না। 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষকে তিনটি ভাবনার দিকে ডাকে —
  1. আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা,
  2. নিজের জীবনের সীমাবদ্ধতা বুঝা,
  3. এবং আল্লাহর বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করা।
🌸 যারা সত্যে অন্ধ, তারা তারার আলোয়ও পথ খুঁজে পায় না। অথচ এই বিশাল আকাশ ও পৃথিবীই হিদায়াতের সবচেয়ে বড় আয়না 🌿 🌿 “তোমরা কি ভাবো না?” — এটি শুধু প্রশ্ন নয়, এটি আল্লাহর এক **হৃদয় নাড়া দেওয়া দাওয়াত।** যেন মানুষ নিজের অবস্থার দিকে ফিরে তাকায়।

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন মানুষ প্রতিদিন সূর্যোদয় দেখে, কিন্তু একবারও ভাবে না — কে এই সূর্যকে প্রতিদিন সময়মতো উঠিয়ে দেয়?
🌸 অথবা কেউ বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ পায়, কিন্তু ভাবে না — এই মেঘ, এই পানি — কে নিয়ন্ত্রণ করছে? 🌿 এভাবেই মানুষ সৃষ্টিকে দেখে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যায়। 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর সৃষ্টির দিকে তাকানো ঈমান বৃদ্ধির উপায়।
  • মৃত্যুর চিন্তা মানুষকে অহংকার থেকে মুক্ত করে।
  • কুরআনই সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ হিদায়াত; এর পর আর কিছু আসবে না।
  • চিন্তা ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া ঈমান পূর্ণ হয় না।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি একটি খোলা কুরআন — যাকে যে চোখে দেখা যায় না, সে ঈমানের আলো থেকেও বঞ্চিত হয়।
🌸 মৃত্যুর চিন্তা ঈমানের জাগরণ ঘটায়, আর মৃত্যুকে ভুলে যাওয়া — গাফিলতার সূচনা। তাই, চিন্তা করো — তোমার জীবনের সময় শেষ হওয়ার আগে তুমি আল্লাহর আয়াতগুলোর সৌন্দর্য বুঝে নিচ্ছো তো? 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَوَلَمْ يَنظُرُوا۟ فِى مَلَكُوتِ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ...”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **চোখে দেখা প্রতিটি জিনিসই আল্লাহর নিদর্শন; যদি হৃদয় চিন্তা করে, তবে প্রতিটি দৃশ্যই হিদায়াতের আয়না হয়ে ওঠে।** 🌿🤍
আয়াত ১৮৬
مَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَلَا هَادِىَ لَهُۥ ۚ وَيَذَرُهُمْ فِى طُغْيَـٰنِهِمْ يَعْمَهُونَ
মান ইউদলিলিল্লাহু ফালা হাদিয়া লাহু, ওয়া ইয়াযারুহুম ফি তুগইয়ানিহিম ইয়ামাহূন।
“যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোনো পথপ্রদর্শক নেই; আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তভাবে ঘুরে বেড়াতে দেন।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে চূড়ান্ত সত্যটি ঘোষণা করেছেন — **হিদায়াত ও গোমরাহী, দুটোই আল্লাহর হাতে।** তিনি যাকে চান, তাকে পথ দেখান; আর যাকে চান, তাকে তার অহংকারের কারণে অন্ধ করে দেন।

🌸 **“মান ইউদলিলিল্লাহু ফালা হাদিয়া লাহু”** — “যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন, তার কোনো পথপ্রদর্শক নেই।” অর্থাৎ, যদি আল্লাহর রহমত কোনো হৃদয় থেকে সরে যায়, তবে সেই হৃদয়ে আর কোনো আলো প্রবেশ করতে পারে না। 💔
🌿 তবে এটি কোনো অন্যায় নয়; কারণ আল্লাহ কাউকে অন্যায়ভাবে পথভ্রষ্ট করেন না। বরং **যে নিজেই সত্যকে অস্বীকার করে, আল্লাহ তার হৃদয়কে সেই অন্ধকারেই স্থির করে দেন।**
🌸 এটি এক ধরনের আত্মিক শাস্তি — মানুষ দেখতে পায়, শুনতে পায়, কিন্তু সত্য বুঝতে পারে না। এটাই আল্লাহর “মোহর” যা গাফিলদের হৃদয়ে পড়ে।

🌿 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ওয়া ইয়াযারুহুম ফি তুগইয়ানিহিম ইয়ামাহূন”** — “আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় ঘুরে বেড়াতে দেন।”

🌸 “তুগইয়ান” অর্থ — সীমালঙ্ঘন, অহংকার ও বিদ্রোহ। “ইয়ামাহূন” অর্থ — অন্ধভাবে ঘুরে বেড়ানো। অর্থাৎ, তারা দিকহীন, উদ্দেশ্যহীনভাবে জীবন কাটায়। 🌿 তারা ভাবে, তারা স্বাধীন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের কামনা-বাসনার দাস। আল্লাহ তাদের ছেড়ে দেন, যাতে তারা নিজেরাই নিজের ধ্বংসের পথে চলে যায়।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক অদৃশ্য শাস্তির কথা বলে — **আল্লাহ যখন কাউকে ছেড়ে দেন, সেটাই সবচেয়ে বড় শাস্তি।** 💔
🌸 কারণ বাহ্যিক শাস্তি মানুষকে তাওবার সুযোগ দেয়, কিন্তু অভ্যন্তরীণ গাফিলতা মানুষকে তাওবার চিন্তাই করতে দেয় না।
🌿 যে হৃদয়ে আল্লাহর আলো থাকে না, সে যত জ্ঞানী, যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তার পথ অন্ধকার।
🌸 আল্লাহর দয়া তখনই সরে যায়, যখন মানুষ নিজে নিজের চোখ বন্ধ করে রাখে। তাই হিদায়াতের প্রথম শর্ত হলো — **আল্লাহর কাছে নরম হৃদয়ে ফিরে আসা।** 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন অন্ধ মানুষ সূর্যের নিচে দাঁড়িয়েও আলো দেখতে পারে না — সূর্যের কোনো দোষ নেই, সমস্যা তার চোখে। 🌸 তেমনি যারা সত্য শুনেও মানে না, তাদের হৃদয় অন্ধ হয়ে যায় — আল্লাহ তাদেরকে তাদের অন্ধকারেই ঘুরতে দেন। 🌿 আবার যেমন কেউ নেশায় বুঁদ, সে ঠিক-ভুল বুঝতে পারে না; তেমনি পাপের নেশায় ডুবে থাকা মানুষও নিজের ধ্বংসকে বুঝতে পারে না। 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • হিদায়াত কেবল আল্লাহর হাতে; কেউ জোর করে তা অর্জন করতে পারে না।
  • যারা অহংকারে সত্য প্রত্যাখ্যান করে, তাদের হৃদয় অন্ধ হয়ে যায়।
  • আল্লাহ কাউকে অন্যায়ভাবে পথভ্রষ্ট করেন না; মানুষ নিজেরাই কারণ হয়।
  • সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি হলো — যখন আল্লাহ কাউকে “ছেড়ে দেন।”

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজ অনেকেই জ্ঞানী, প্রযুক্তিতে উন্নত, কিন্তু হৃদয়ে শান্তি নেই — কারণ হিদায়াত চোখ দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে দেখা যায়। 🌸 আল্লাহ যদি কাউকে তাঁর দয়া থেকে বঞ্চিত করেন, তবে সে যত কিছুই অর্জন করুক, তা কেবল বাহ্যিক সফলতা, অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা। 🌿 তাই সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো — **আল্লাহর দেয়া হিদায়াতের আলো।** আর সবচেয়ে বড় ভয় — সেই আলো হারিয়ে ফেলা। 💔

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“مَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَلَا هَادِىَ لَهُۥ ۚ وَيَذَرُهُمْ فِى طُغْيَـٰنِهِمْ يَعْمَهُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে আল্লাহর পথ ছেড়ে যায়, সে নিজের অন্ধকারে হারিয়ে যায়; আর যে আল্লাহর দয়া আঁকড়ে ধরে, তার জন্য হিদায়াতের আলো কখনো নিভে না।** 🌿🤍
আয়াত ১৮৭
يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَىٰهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّى ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَآ إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةًۭ ۗ يَسْـَٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِىٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
ইয়াস্‌আলূনাকা আনিস্‌সা‘আতি আয়্যানা মুরসাহা, কুল্‌ ইন্‌নামা ইলমুহা ‘ইন্দা রাব্বী, লা ইউজ্জাল্লীহা লি ওয়াক্তিহা ইল্লা হু, সাকুলাত্‌ ফিস্‌সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, লা তাতীকুম ইল্লা বাগ্‌তা, ইয়াস্‌আলূনাকা কা’আন্নাকা হাফিয়্যুন আনহা, কুল্‌ ইন্‌নামা ইলমুহা ‘ইন্দাল্লাহ, ওয়ালাকিন্না আক্ষারান্‌ নাসি লা ইয়ালামূন।
“তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে — কিয়ামত কখন আসবে? বলো, ‘এর জ্ঞান তো আমার রবের কাছেই আছে।’ তিনি ছাড়া কেউই তার সময় প্রকাশ করতে পারবে না। তা আকাশ ও পৃথিবীতে ভারী (অর্থাৎ এক মহা ঘটনা)। এটি তোমাদের কাছে আসবে হঠাৎই। তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে যেন তুমি সে বিষয়ে অবহিত। বলো, ‘এর জ্ঞান তো কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে।’ কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 কুরাইশরা নবী ﷺ-কে উপহাস করে জিজ্ঞেস করত — “যদি তুমি সত্যবাদী হও, বলো তো, কিয়ামত কবে আসবে?” 🌸 আল্লাহ তাআলা নবীকে নির্দেশ দিলেন — **“কুল ইন্‌নামা ইলমুহা ‘ইন্দা রাব্বী”** — “বলুন, এর জ্ঞান কেবল আমার রবের কাছেই আছে।” অর্থাৎ, কিয়ামতের সঠিক সময় কোনো নবী, ফেরেশতা বা সাধক জানে না — এটি একান্তভাবে আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

🌿 **“লা ইউজ্জাল্লীহা লি ওয়াক্তিহা ইল্লা হু”** — “তাঁর নির্ধারিত সময়ে কেবল তিনিই তা প্রকাশ করবেন।” অর্থাৎ, যখন আল্লাহ সিদ্ধান্ত নেবেন, তখনই কিয়ামত আকস্মিকভাবে সংঘটিত হবে।

🌸 **“সাকুলাত ফিস্‌সামাওয়াতি ওয়াল আরদ”** — “এটি আকাশ ও পৃথিবীর জন্য ভারী।” অর্থাৎ, সেই দিনের ভয়াবহতা এত তীব্র, যে আসমান-জমিনও যেন তা বহন করতে কাঁপবে। 🌿

🌿 **“লা তাতীকুম ইল্লা বাগ্‌তা”** — “এটি আসবে হঠাৎ।” অর্থাৎ, মানুষ জানবে না, কোনো প্রস্তুতি নিতে পারবে না। যেমন মৃত্যু হঠাৎ এসে যায়, তেমনি কিয়ামতও আসবে অপ্রত্যাশিতভাবে। 💔

🌸 **“ইয়াস্‌আলূনাকা কা’আন্নাকা হাফিয়্যুন আনহা”** — “তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে যেন তুমি এটি নিয়ে গবেষণায় আছো!” অর্থাৎ, তারা তোমাকে এমনভাবে জিজ্ঞেস করে, যেন তুমি কিয়ামতের সব খবর জানো! 🌿 আল্লাহ তাআলা পুনরায় স্পষ্ট করলেন — **“কুল ইন্‌নামা ইলমুহা ‘ইন্দাল্লাহ”** — “বলুন, এর জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই।”

🌸 এরপর শেষের বাক্যটি — **“ওয়ালাকিন্না আক্ষারান্‌ নাসি লা ইয়ালামূন”** — “কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানে না।” অর্থাৎ, তারা কিয়ামতের চিন্তা বাদ দিয়ে অপ্রয়োজনীয় কৌতূহলেই ব্যস্ত থাকে।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত আমাদের শেখায় — **আল্লাহর অজানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক নয়, বরং তার জন্য প্রস্তুতি জরুরি।** 🌸 কিয়ামতের সময় জানা জরুরি নয়, বরং জানা জরুরি — **আমি কি সেই দিনের জন্য প্রস্তুত?**
🌿 আল্লাহর “ইলম” অসীম; তিনি যা গোপন রাখেন, তা মানুষের জ্ঞানের বাইরে চিরকালই থাকবে।
🌸 নবী ﷺ নিজেও কিয়ামতের সঠিক সময় জানতেন না — তিনি শুধু বলেছিলেন, “আমি এবং কিয়ামত — এই দুই প্রায় পাশাপাশি এসে গেছে।” 🌿
🌿 তাই কিয়ামতের অপেক্ষা নয়, বরং আত্মার প্রস্তুতিই হলো প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা।

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন ছাত্র পরীক্ষার দিন জানে না, কিন্তু প্রতিদিন পড়ে প্রস্তুতি নেয় — কারণ সে জানে, হঠাৎ ডাক আসতে পারে। 🌸 তেমনি বুদ্ধিমান মানুষ কিয়ামতের দিন জানতে চায় না, বরং নিজেকে প্রস্তুত রাখে যেন সে প্রস্তুত অবস্থায় আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে পারে। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • কিয়ামতের সময় সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ জানেন।
  • অজানা বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত কৌতূহল ঈমান দুর্বল করে।
  • আল্লাহর জ্ঞানের সামনে মানুষের জ্ঞান সীমিত ও তুচ্ছ।
  • কিয়ামতের চিন্তা মানুষকে আত্মশুদ্ধি ও আমলে উদ্বুদ্ধ করে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজও মানুষ জানতে চায় — “কিয়ামত কবে?” কিন্তু খুব কম মানুষ ভাবে — “আমার কিয়ামত (মৃত্যু) কবে?” 💔 🌸 আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা নয়, বরং আত্মসমর্পণই প্রকৃত ঈমান। 🌿 কিয়ামতের রহস্য গোপন রাখা হয়েছে যেন মানুষ প্রতিটি দিনকে নিজের শেষ দিন মনে করে বাঁচে। 🌸 তাই জ্ঞান নয় — **প্রস্তুতিই পরিত্রাণ।** 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّى... لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةًۭ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **কিয়ামতের সময় গোপন, কিন্তু তার আগমন নিশ্চিত; তাই প্রশ্ন করো না — প্রস্তুত হও।** 🌿🤍
আয়াত ১৮৮
قُل لَّآ أَمْلِكُ لِنَفْسِى نَفْعًۭا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ ۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ ٱلْغَيْبَ لَٱسْتَكْثَرْتُ مِنَ ٱلْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ ۚ إِنْ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌۭ وَبَشِيرٌۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ
কুল লা আমলিকু লি নাফসী নাফআঁ ওয়ালা দাররঁ ইল্লা মা শা-আল্লাহ, ওয়ালাও কুনতু আ‘লামুল গাইবা লাস্‌তাক্সারতু মিনাল খাইর, ওয়া মা মাসসানিয়াস্‌সু’, ইন আনা ইল্লা নাজীরুম ওয়া বাশীরুল্লি কাওমিইউ’মিনূন।
“বলুন, আমি আমার নিজের জন্য কোনো উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখি না — যতটুকু আল্লাহ চান, কেবল ততটুকুই। আর যদি আমি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতাম, তবে অবশ্যই অনেক মঙ্গল অর্জন করতাম এবং কোনো অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করতে পারত না। আমি তো কেবল এক সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা — সেই জাতির জন্য যারা ঈমান আনে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী ﷺ-কে নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তিনি মানুষকে স্পষ্টভাবে জানান — নবুওয়াত মানে **দৈব ক্ষমতা নয়**, বরং **আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্ব ও বার্তা।**

🌸 **“কুল লা আমলিকু লি নাফসী নাফআঁ ওয়ালা দাররঁ”** — “বলুন, আমি আমার নিজের জন্য কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারি না।” অর্থাৎ, নবী ﷺ নিজেও আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। তিনি আল্লাহর আদেশ ছাড়া কিছুই করতে পারেন না।
🌿 এর মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছেন — যেন কেউ নবীকে বা কোনো অলিকে **আল্লাহর বিকল্প শক্তি** না মনে করে। তাঁরা সম্মানিত, কিন্তু আল্লাহর অধীন। ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। 🤍

🌸 **“ওয়ালাও কুনতু আ‘লামুল গাইবা লাস্‌তাক্সারতু মিনাল খাইর”** — “যদি আমি অদৃশ্য জানতাম, তবে অনেক মঙ্গল অর্জন করতাম।” নবী ﷺ এখানে বিনয়ের সঙ্গে বলছেন — অদৃশ্যের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে। নবীরা কেবল ততটুকু জানেন, যতটুকু আল্লাহ তাঁদের জানিয়ে দেন। 🌿

🌿 **“ওয়া মা মাসসানিয়াস্‌সু’”** — “তাহলে কোনো অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করতে পারত না।” অর্থাৎ, যদি ভবিষ্যৎ জানতাম, তবে বিপদ, কষ্ট ও বিরোধ এড়িয়ে চলতে পারতাম। কিন্তু আল্লাহ চেয়েছেন — নবীও যেন মানবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান। 💔 🌸 কারণ নবীদের জীবনই মানবতার জন্য উদাহরণ। তাঁরা কষ্টের মধ্যেও ঈমান ও ধৈর্যের মডেল। 🌿

🌿 শেষে আল্লাহ বলেন — **“ইন আনা ইল্লা নাজীরুন ওয়া বাশীর”** — “আমি তো কেবল এক সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।” অর্থাৎ, নবী ﷺ-এর কাজ হলো সতর্ক করা, পথ দেখানো, এবং ঈমানদারদের জন্য সুখবর আনা।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত নবুওয়াতের প্রকৃত মর্যাদা ব্যাখ্যা করে — নবী ﷺ আল্লাহর প্রিয়তম, কিন্তু আল্লাহর দাসত্বেই তাঁর গৌরব। 🤍
🌸 তিনি আমাদের শিখিয়েছেন — দোয়া, ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলই হলো প্রকৃত শক্তি। কারণ **সব ক্ষমতা আল্লাহর হাতে, মানুষ কেবল তাঁর ইচ্ছার বাহক।** 🌿
🌿 এই আয়াত তাওহীদের এক অনন্য ঘোষণা — আল্লাহই একমাত্র নিয়ন্তা, নবীও তাঁর বান্দা ও রাসূল মাত্র।
🌸 তাই নবীর অনুসরণ মানে তাঁকে “অধিনায়ক” ভাবা নয়, বরং তাঁর পথ ধরে আল্লাহর দিকে চলা। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন দূত রাজা থেকে বার্তা নিয়ে আসে — দূতের মর্যাদা আছে, কিন্তু আদেশ রাজারই।
🌸 তেমনি নবী ﷺ আল্লাহর বার্তাবাহক। তিনি নিজে ইচ্ছামতো কিছু করেন না, বরং আল্লাহ যা বলেন, সেটিই পৌঁছে দেন।
🌿 তাঁর বিনয়, তাঁর নির্ভরতা, তাঁর তাওয়াক্কুল — সবই আমাদের জন্য আদর্শ। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অদৃশ্যের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে, নবীর কাছেও নয়।
  • নবী ﷺ আল্লাহর প্রিয় বান্দা, কিন্তু তাঁর অধীন।
  • মানুষের প্রকৃত শক্তি হলো আল্লাহর ওপর নির্ভর করা।
  • নবীর কাজ হলো সতর্ক করা ও সুসংবাদ পৌঁছে দেওয়া।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 আজ মানুষও নিজের ভবিষ্যৎ জানতে চায় — কখন ধনী হবে, কী বিপদ আসছে ইত্যাদি... অথচ এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় — **ভবিষ্যতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর হাতে।** 🌸 বুদ্ধিমান সেই, যে ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা না করে, বরং ভবিষ্যতের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে। 🌿 🌿 নবী ﷺ-এর এই বিনয় আমাদের শেখায় — প্রকৃত মর্যাদা জ্ঞানে নয়, বরং **আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা ও আত্মসমর্পণে।** 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“قُل لَّآ أَمْلِكُ لِنَفْسِى نَفْعًۭا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **নবী ﷺ-এর সর্বোচ্চ গৌরব তাঁর বিনয়ে; আর আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নির্ভরতাই একজন মুমিনের সর্বোচ্চ শক্তি।** 🌿🤍
আয়াত ১৮৯
هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍۢ وَٰحِدَةٍۢ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ۖ فَلَمَّا تَغَشَّىٰهَا حَمَلَتْ حَمْلًۭا خَفِيفًۭا فَمَرَّتْ بِهِۦ ۖ فَلَمَّآ أَثْقَلَت دَّعَوَا ٱللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ ءَاتَيْتَنَا صَـٰلِحًۭا لَّنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّـٰكِرِينَ
হুয়াল্লাযী খালাকাকুম মিন নাফসিওঁ ওয়াহিদাহ, ওয়া জা‘আলা মিনহা জাওজাহা লিয়াসকুনা ইলাইহা, ফালাম্মা তাগাশ্শাহা হামালাত হামলান খাফিফা, ফামাররাত বিহি, ফালাম্মা আস্‌কালাত দা‘ওয়াল্লাহা রাব্বাহুমা, লা-ইন আ’তাইতানা সালিহান লানাকুনান্না মিনাশ্‌শাকিরীন।
“তিনি সেই (আল্লাহ), যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক প্রাণ থেকে, এবং তার থেকেই তাঁর সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। যখন সে তার সঙ্গে মিলিত হলো, তখন সে হালকা গর্ভধারণ করল, পরে তা ভারী হয়ে উঠলে, তারা দু’জন তাদের রবকে ডাকল — ‘হে আমাদের রব! তুমি যদি আমাদের এক সৎ (সুস্থ) সন্তান দাও, তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির সূচনা বর্ণনা করেছেন — “**হুয়াল্লাযী খালাকাকুম মিন নাফসিওঁ ওয়াহিদাহ**” — “তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক প্রাণ থেকে।” অর্থাৎ, **আদম (আঃ)** থেকে শুরু হয়েছে সমগ্র মানবজাতি।

🌸 **“ওয়া জা‘আলা মিনহা জাওজাহা লিয়াসকুনা ইলাইহা”** — “আর তাঁর থেকেই তাঁর স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তাঁর সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করে।”
🌿 এটি দাম্পত্য জীবনের এক দারুণ আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা — **‘লিয়াসকুনা ইলাইহা’** — “সে যেন তার মাধ্যমে প্রশান্তি পায়।” অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেবল দেহের নয়, বরং **মনের ও আত্মার শান্তির সম্পর্ক।** 🤍

🌸 **“ফালাম্মা তাগাশ্শাহা হামালাত হামলান খাফিফা”** — “যখন সে মিলিত হলো, তখন সে হালকা গর্ভধারণ করল।” অর্থাৎ, গর্ভাবস্থার প্রাথমিক ধাপ, যা সহজ ছিল।

🌿 **“ফালাম্মা আসকালাত দা‘ওয়াল্লাহা রাব্বাহুমা”** — “যখন তা ভারী হলো, তখন তারা দু’জন আল্লাহকে ডাকল।” অর্থাৎ, সন্তানপ্রাপ্তির আশায় দুজনেই দোয়া করল — “হে আমাদের রব! আমাদের সৎ সন্তান দাও।” 🌸 তারা প্রতিশ্রুতি দিল — “**লানাকুনান্না মিনাশ শাকিরীন**” — “আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো।” 🌿
🌿 এই দোয়ায় দুটি গুণ আছে — ১️⃣ **আশা** — আল্লাহর করুণা প্রাপ্তির প্রত্যাশা। ২️⃣ **অঙ্গীকার** — নিয়ামতের পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
কিন্তু পরের আয়াতে (১৯০) দেখা যায় — মানুষ অনেক সময় আল্লাহর দান পাওয়ার পরই তাঁকে ভুলে যায় ও শিরকের পথে চলে যায় 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতের প্রতিটি অংশ আমাদের জীবনের বাস্তব শিক্ষা দেয় —
  • আল্লাহই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন — তাই জীবন তাঁরই অমানত।
  • দাম্পত্য সম্পর্কের প্রকৃত উদ্দেশ্য শান্তি ও প্রশান্তি।
  • সন্তান হলো আল্লাহর দান, অহংকারের কারণ নয়।
  • প্রার্থনায় কৃতজ্ঞতার অঙ্গীকার করা উচিত, কিন্তু তা পালন করাই ঈমানের পরীক্ষা।
🌸 এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় — **মানুষ বিপদে আল্লাহকে ডাকে, আর সুখে তাঁকে ভুলে যায় — এটাই মানব প্রকৃতির দুর্বলতা।** 💔 🌿 তাই প্রকৃত মুমিন সেই, যে শুধু প্রয়োজনে নয়, বরং প্রাপ্তিতেও আল্লাহর সামনে বিনয়ী থাকে।

উদাহরণ:
🌿 যেমন কোনো দম্পতি দীর্ঘদিন সন্তান না পাওয়ায় দোয়া করে — “হে আল্লাহ, তুমি দিলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।” কিন্তু সন্তান পাওয়ার পর তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে, নামাজ-দোয়া ভুলে যায়। 🌸 এই আয়াত এমনই মানুষদের সতর্ক করে, যেন আল্লাহর দান তাদের **আল্লাহ থেকে দূরে না নিয়ে যায়।** 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • মানুষের সৃষ্টি এক আত্মা থেকে — এটি ঐক্য ও আত্মীয়তার শিক্ষা দেয়।
  • দাম্পত্য জীবনের মূল উদ্দেশ্য — প্রশান্তি ও পরস্পরের প্রতি দয়া।
  • সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে দান, অহংকার নয় কৃতজ্ঞতার কারণ।
  • প্রাপ্তির পর আল্লাহকে ভুলে যাওয়া শিরকের সূচনা।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 মানুষ যখন দোয়ায় চোখের পানি ফেলে, তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। কিন্তু যখন সেই দোয়া কবুল হয়, তখন সে দূরে সরে যায় — এটা কত বড় পরিহাস! 💔 🌸 আল্লাহর নিয়ামতের সঠিক ব্যবহারই হলো কৃতজ্ঞতা। কারণ **অকৃতজ্ঞতা** হলো শয়তানের প্রথম অস্ত্র। 🌿 তাই প্রতিটি দানকে আল্লাহর পথে কাজে লাগানোই প্রকৃত শোকর।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَئِنْ ءَاتَيْتَنَا صَـٰلِحًۭا لَّنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّـٰكِرِينَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে আল্লাহকে দোয়ায় স্মরণ করে, তার কর্তব্য হলো প্রাপ্তিতেও তাঁকে ভুলে না যাওয়া।** 🌿🤍
আয়াত ১৯০
فَلَمَّآ ءَاتَىٰهُمَا صَـٰلِحًۭا جَعَلَا لَهُۥ شُرَكَآءَ فِيمَآ ءَاتَىٰهُمَا ۚ فَتَعَـٰلَى ٱللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
ফালাম্মা আ’তাহুমা সালিহাঁ, জা‘আলা লাহু শুরাকাআ ফীমা আ’তাহুমা, ফা তা‘আল্লাল্লাহু আম্মা ইউশরিকূন।
“অতঃপর যখন আল্লাহ তাদের এক সৎ সন্তান দান করলেন, তারা (মানুষ) সেই দানের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করল! অথচ আল্লাহ মহান, তিনি তাদের শিরক থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আগের আয়াতে (১৮৯) দম্পতি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিল — “হে আমাদের রব! তুমি যদি আমাদের সৎ সন্তান দাও, তবে আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো।”
🌸 কিন্তু সন্তান জন্মানোর পর তারা কৃতজ্ঞতা ভুলে গেল, বরং সেই সন্তানকেই বা অন্য কাউকে **আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার করে তুলল।** 💔
🌿 **“ফালাম্মা আ’তাহুমা সালিহাঁ”** — “যখন তিনি তাদের এক সৎ সন্তান দান করলেন,” অর্থাৎ আল্লাহ তাঁদের দোয়া কবুল করলেন, এক সুন্দর ও সুস্থ সন্তান দিলেন।

🌸 **“জা‘আলা লাহু শুরাকাআ ফীমা আ’তাহুমা”** — “তারা সেই দানে আল্লাহর অংশীদার বানালো।” অর্থাৎ, তারা ভাবল — এই সন্তান আল্লাহ নয়, **অমুক দেবতার কারণে** হয়েছে, বা তারা সন্তানের নাম রাখল এমনভাবে যা ইঙ্গিত করে অন্য উপাস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
🌿 এভাবে তারা অজান্তেই **আল্লাহর দানকেও শিরকের প্রতীক বানিয়ে ফেলল!** 😔
🌸 শেষের অংশে আল্লাহ বলেন — **“ফা তা‘আল্লাল্লাহু আম্মা ইউশরিকূন”** — “আল্লাহ মহান, তিনি তাদের শিরক থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।” অর্থাৎ, আল্লাহর কোনো সঙ্গী নেই, তাঁর দানেও কারও কোনো অংশীদার নেই। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শিরকের সূক্ষ্ম এক বাস্তবতা প্রকাশ করে — মানুষ কখনো সরাসরি “আল্লাহ ছাড়া আরেকজন উপাস্য” মানে না, কিন্তু বাস্তবে **আল্লাহর দানকে অন্য কারও নামে উৎসর্গ করে।** 🌸 যেমন — কেউ বলে, “এই সন্তান তো অমুক পীর সাহেবের দোয়ায় হয়েছে,” বা “এই ব্যবসা অমুক দেবতার আশীর্বাদে চলছে।” অথচ দাতা তো একমাত্র আল্লাহ!
🌿 এই ধরনের চিন্তাই শিরকের সূক্ষ্মতম রূপ — যা মুখে না থাকলেও, মনে ও কাজে লুকিয়ে থাকে। 💔
🌸 আল্লাহ চান — তাঁর বান্দা যেন প্রতিটি দান, প্রতিটি সাফল্য কেবল তাঁরই অনুগ্রহ মনে করে।
🌿 কারণ শিরক শুধু মূর্তি পূজা নয়, বরং **আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে কারণ মনে করা**, সেটিও শিরকের দরজা খুলে দেয়। 🌸

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ দোয়ায় কাঁদে — “হে আল্লাহ, আমাকে সন্তান দাও,” কিন্তু সন্তান পেলে বলে, “এটা আমার সৌভাগ্য, আমার কষ্টের ফল।”
🌸 সে আল্লাহকে ভুলে যায়, অথচ দাতা তিনিই ছিলেন! 🌿 অথবা কেউ বিপদে আল্লাহকে ডাকে, বিপদ কেটে গেলে ভাবে — “ডাক্তার বাঁচালেন, ওষুধে কাজ হয়েছে।” অথচ সফলতা এসেছে আল্লাহর ইচ্ছায়। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহর দানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করতে হবে।
  • দাতাকে ভুলে দানকে বড় করা শিরকের সূচনা।
  • আল্লাহর দান অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কিত করা শিরক।
  • প্রত্যেক নিয়ামতের উৎস আল্লাহ — এই বিশ্বাসই ঈমানের মেরুদণ্ড।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত মনে করিয়ে দেয় — **শিরক শুধু কথায় নয়, মনেও হতে পারে।** যখন মানুষ ভাবে “আমি করেছি”, “আমার কারণে হয়েছে”, তখন সে আসলে আল্লাহর জায়গায় নিজেকেই বসায়। 💔 🌸 সত্যিকারের তাওহীদ হলো — প্রতিটি দানে, প্রতিটি সাফল্যে বলা: “**হাদ়া মিন ফাদল রাব্বি — এটি আমার প্রভুর অনুগ্রহ।**” 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَلَمَّآ ءَاتَىٰهُمَا صَـٰلِحًۭا جَعَلَا لَهُۥ شُرَكَآءَ فِيمَآ ءَاتَىٰهُمَا ۚ فَتَعَـٰلَى ٱللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর দানকে অন্য কারও নামে উৎসর্গ করা নয়, বরং সেই দানের মাধ্যমে আল্লাহকেই স্মরণ করা — এটাই প্রকৃত ঈমান ও কৃতজ্ঞতা।** 🌿🤍
আয়াত ১৯১
أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْـًۭٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ
আ-ইউশরিকূনা মা লা ইয়াখলুকু শাই’আঁ, ওয়াহুম ইউখলাকূন।
“তারা কি এমন কিছুকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, যা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না — বরং তারা নিজেরাই সৃষ্টি?” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এখানে এক **অসাধারণ যুক্তি ও প্রতিবাদমূলক প্রশ্ন** করেছেন — “**আ-ইউশরিকূন...**” — “তারা কি শিরক করছে এমন কিছুর সঙ্গে, যা নিজেই কিছু তৈরি করতে পারে না?”
🌸 এই প্রশ্ন শুধু মূর্তিপূজকদের নয়, বরং সব যুগের সেই মানুষদের উদ্দেশ্যে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের ওপর নির্ভর করে, অন্যের কাছে প্রার্থনা করে, বা সাহায্য চায়। 💔

🌿 **“মা লা ইয়াখলুকু শাই’আঁ”** — “যা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না।” অর্থাৎ, তারা যাদের উপাসনা করে — মূর্তি, পীর, ফেরেশতা, জিন, বা মানুষ — কেউই কোনো সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়।

🌸 বরং তারা নিজেরাই সৃষ্টি! “**ওয়াহুম ইউখলাকূন**” — অর্থাৎ, যাদের তারা পূজা করছে, তারা নিজের অস্তিত্বেও নির্ভরশীল আল্লাহর ওপর। 🌿

🌿 এটি এক **অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদ** — যেন আল্লাহ বলছেন: “তোমরা কি এতটাই বুদ্ধিহীন, যে সৃষ্টি করা সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে সৃষ্টি হওয়া জিনিসকে উপাস্য বানালে?” 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষকে চিন্তার দিকে ফিরিয়ে নেয় — “তুমি যাকে ডাকছো, সে কি সৃষ্টি করতে পারে?” যদি না পারে, তাহলে সে ‘ইলাহ’ নয়, বরং এক ‘মাখলুক’ (সৃষ্টি)।

🌸 প্রকৃত উপাস্য সেই, যিনি **কিছু থেকে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, যিনি কারও কাছে ঋণী নন, বরং সবাই তাঁর ওপর নির্ভরশীল।**

🌿 কিন্তু মানুষ ভুলে যায় — তার তৈরি মূর্তি, তার প্রিয় মানুষ, এমনকি সে নিজেও একদিন ধুলোয় মিশে যাবে।
🌸 অথচ সে আল্লাহর পরিবর্তে এই ক্ষণস্থায়ী জিনিসগুলোকেই শ্রদ্ধা বা প্রার্থনার আসনে বসিয়ে দেয়! 🌿 এটাই **শিরকের সবচেয়ে বড় অবিচার** — **“সৃষ্টি করা আল্লাহকে ভুলে, সৃষ্টি হওয়া বস্তুকে উপাস্য বানানো।”** 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ ঘড়ি তৈরি করে, তারপর সেই ঘড়িকেই সেজদা করতে শুরু করে — কত হাস্যকর হবে তাই না? 🌸 তেমনি মানুষও মূর্তি বানায়, তারপর সেটিকেই উপাস্য করে, অথচ জানে — সেটি তার নিজের হাতের কাজ! 🌿 আল্লাহ তাআলা এই উদাহরণের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে প্রশ্ন জাগাতে চান — **“তুমি কি সত্যিই চিন্তা করো?”** 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • শিরক হলো সবচেয়ে বড় অযৌক্তিকতা ও অবিচার।
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ কিছু সৃষ্টি করতে পারে না।
  • যে সৃষ্টি করতে অক্ষম, সে উপাস্য হতে পারে না।
  • আল্লাহই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও অধিকারী।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 মানুষ প্রায়ই আল্লাহর বদলে অন্যের কাছে আশা, ভরসা বা শ্রদ্ধা স্থাপন করে। কিন্তু এই আয়াত বলে দেয় — **যে সৃষ্টি করতে পারে না, সে রক্ষা করতেও পারে না।**
🌸 তাই মুমিনের হৃদয় কেবল এক প্রভুর কাছে নত হয় — যিনি সৃষ্টি করেন, পরিচালনা করেন, এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ঘটাবেন। 🌿🤍
🌿 এ আয়াত আসলে এক প্রশ্নবাণ — “তুমি কাকে ডাকছো — সৃষ্টিকর্তাকে, না সৃষ্টিকে?” এবং যার জবাব একটাই — “শুধু আল্লাহই ডাক পাওয়ার যোগ্য।” 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْـًۭٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে সৃষ্টি করতে পারে না, তাকে উপাস্য বানানো সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা; প্রকৃত উপাস্য কেবল সেই, যিনি সৃষ্টি করেছেন — আল্লাহ তাআলা।** 🌿🤍
আয়াত ১৯২
وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًۭا وَلَآ أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ
ওলা ইয়াস্তাতীয়ূনা লাহুম নাস্‌রাঁ, ওলা আনফুসাহুম ইয়ানসুরূন।
“তারা (যাদের উপাস্য করা হয়) তাদেরকে সাহায্য করতে পারে না, বরং নিজেদেরকেও সাহায্য করতে অক্ষম।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত শিরকের মূলে আঘাত করেছে — মানুষ যাদের উপাসনা করে, তারা নিজেরাই এত দুর্বল যে **নিজেদের রক্ষা করতেও পারে না।**

🌸 **“ওলা ইয়াস্তাতীয়ূনা লাহুম নাস্‌রাঁ”** — “তারা তাদের সাহায্য করতে পারে না।” অর্থাৎ, যাদের মানুষ আল্লাহর বিকল্প মনে করে, তারা বিপদে বা প্রয়োজনে কোনো সাহায্য দিতে সক্ষম নয়।

🌿 “**ওলা আনফুসাহুম ইয়ানসুরূন**” — “তারা নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না।” অর্থাৎ, তারা নিজেদের বিপদ থেকেও মুক্ত করতে অক্ষম, মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারে না, এমনকি অপমান থেকে বাঁচাতেও পারে না। 💔

🌸 এই আয়াত মূর্তিপূজা, অলীক দেবতা, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের ওপর নির্ভরতার বিরুদ্ধে এক অনন্য ও যৌক্তিক প্রতিবাদ।

🌿 মূল শিক্ষা হলো — **যে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না, সে অন্যকে রক্ষা করতে পারে না।**

গভীর উপলব্ধি:
🌿 আল্লাহ তাআলা মানুষকে বুঝাতে চান — “তোমরা যাদের ডাকছো, তারা নিজেরাও আমার দয়া ছাড়া টিকে থাকতে পারে না।”

🌸 এমনকি নবী, ফেরেশতা বা পীর-আওলিয়াও নিজেদের শক্তিতে কিছুই করতে পারে না; তারা যা পারেন — কেবল আল্লাহর অনুমতিতে। 🌿

🌿 এখানে আল্লাহ আমাদের এক হৃদয়স্পর্শী বাস্তবতা শিখাচ্ছেন — **দুনিয়ায় সবাই সাহায্যের প্রয়োজনীয়, একমাত্র আল্লাহই সাহায্যদাতা (النصير)।**

🌸 তাই মুমিনের উচিত — দোয়া, আশা ও নির্ভরতা কেবল তাঁর কাছেই স্থাপন করা।

উদাহরণ:
🌿 যেমন ঝড়ে একটি গাছ উপড়ে গেলে অন্য উপড়ে পড়া গাছ তাকে সাহায্য করতে পারে না,

বরং উভয়ই পড়ে থাকে। 🌸 তেমনি, মানুষও দুর্বল, সৃষ্টি জিনিসও দুর্বল — সাহায্য পাওয়া যায় কেবল সেই শক্তিশালী সত্তার কাছ থেকে যিনি কাউকে নির্ভরশীল করেন না — **আল্লাহ।** 🌿

🌿 কিংবা যেমন একটি মূর্তি — সেটি নিজেকে মাটি থেকে তুলতে পারে না, ধুলো পড়লে ঝাড়তে পারে না, অথচ মানুষ তার সামনে সেজদা করে! 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ ছাড়া কেউ কারও প্রকৃত সাহায্য করতে পারে না।
  • সৃষ্ট বস্তুর ওপর নির্ভরতা ঈমানকে দুর্বল করে।
  • যে নিজের ক্ষতি ঠেকাতে পারে না, সে উপকার দিতেও পারে না।
  • প্রকৃত সাহায্য আসে শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের হৃদয়ে প্রশ্ন তোলে — “যাকে তুমি ডেকেছো, সে কি নিজের বিপদে কিছু করতে পারে?” যদি না পারে, তবে সে কীভাবে তোমার বিপদ দূর করবে?

🌸 মানুষ প্রায়ই ভরসা রাখে — ধন, ক্ষমতা, সম্পর্ক, বা কোনো মানুষে। কিন্তু বিপদের মুহূর্তে বুঝে যায় — **সবাই অক্ষম, একমাত্র আল্লাহই সক্ষম।** 🌿

🌿 তাই আল্লাহ বলেন — **“তারা তাদের সাহায্য করতে পারে না, নিজেদেরও রক্ষা করতে পারে না।”** এটি তাওহীদের এক স্পষ্ট ও গভীর ঘোষণাঃ **সাহায্য শুধু আল্লাহর কাছেই।** 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًۭا وَلَآ أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **মানুষের সব ভরসা ব্যর্থ হতে পারে, কিন্তু আল্লাহর ভরসা কখনো ব্যর্থ হয় না।** 🌿🤍
আয়াত ১৯৩
وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى ٱلْهُدَىٰ لَا يَتَّبِعُوكُمْ ۚ سَوَآءٌ عَلَيْكُمْ أَدَعَوْتُمُوهُمْ أَمْ أَنتُمْ صَـٰمِتُونَ
ওয়া ইন তাদ‘উহুম ইলাল হুদা, লা ইয়াত্তাবি‘উকুম, সাওআউন ‘আলাইকুম, আদা‘ওতুমূহুম আম আন্তুম সামিতূন।
“আর যদি তোমরা তাদের হিদায়াতের দিকে ডাকো, তারা তোমাদের অনুসরণ করবে না। তোমরা তাদের ডাকো বা চুপ থাকো — উভয়ই তোমাদের জন্য সমান।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে শিরকের পূর্ণ অসারতা বর্ণনা করেছেন — **“ওয়া ইন তাদ‘উহুম ইলাল হুদা লা ইয়াত্তাবি‘উকুম”** — “তুমি যদি তাদের হিদায়াতের দিকে ডাকো, তারা তোমার অনুসরণ করবে না।” 🌸 অর্থাৎ, যাদের মানুষ উপাস্য বানিয়েছে — তারা মৃত, নির্বাক, অচেতন; তারা কিছু বুঝে না, সাড়া দেয় না, চলেও না।

🌿 **“সাওআউন ‘আলাইকুম আদা‘ওতুমূহুম আম আন্তুম সামিতূন”** — “তোমরা তাদের ডাকো বা চুপ থাকো, উভয়ই সমান।”

🌸 এটি এক কঠিন ও বাস্তব সত্য — মূর্তি, দেবতা, মৃত্যু মানুষ বা জিন, কেউই কিছু শুনে না, কারণ তারা জীবিত নয়, অনুভূতিশূন্য। তোমার ডাক তাদের কাছে অর্থহীন। 💔

🌿 তাই যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে চায়, তারা আসলে নিজের কণ্ঠস্বরই শুনছে, কোনো জবাব পাচ্ছে না।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতের মর্ম হলো — **তুমি কাকে ডাকছো?** এমন কাউকে, যে শুনতে পায় না? নাকি সেই সত্তাকে, যিনি তোমার মনের আওয়াজও শোনেন? 🌸

🌿 আল্লাহ তাআলা জীবিত, সাড়া দেন, আর মিথ্যা উপাস্যরা মৃত, নির্বাক, অক্ষম। এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা করাই মূর্খতার পরিচয়। 💔

🌸 এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের আত্মাকে জাগাতে চান — যেন সে চোখে দেখে, কানে শোনে, এবং উপলব্ধি করে — **শুধু আল্লাহই ডাক পাওয়ার যোগ্য।** 🌿

🌿 এই আয়াত শুধু মূর্তিপূজকদের জন্য নয়; বরং আজও প্রযোজ্য তাদের জন্য, যারা আল্লাহর বদলে অন্যের কাছ থেকে সাফল্য, শান্তি বা মুক্তি আশা করে।

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ কাচের বোতলে বন্দী মোমবাতির কাছে প্রার্থনা করে — সে জানে, আলো আছে, কিন্তু বোতল বন্ধ, সাড়া আসবে না।
🌸 তেমনি যারা মৃত বা অচেতন বস্তুকে ডাকে, তারা নিজেদের কণ্ঠই ফেরত পায় — কোনো সাড়া পায় না।
🌿 আবার যেমন মৃত মানুষকে চিঠি লিখে উত্তর আশা করা — তেমনি অর্থহীন ও আত্মবিনাশী হলো শিরক। 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ ডাক শুনতে বা সাড়া দিতে পারে না।
  • মূর্তি বা মৃতদের ডাকা একেবারেই নিষ্ফল ও অবাস্তব।
  • শিরক শুধু মূর্তি-পূজা নয়, বরং অন্যের ওপর নির্ভর করাও এক প্রকার শিরক।
  • আল্লাহর প্রতি দোয়াই একমাত্র কার্যকর মাধ্যম — কারণ তিনি সর্বশ্রোতা (السميع)।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের বলে — **ডাক কেবল তার কাছেই দাও, যিনি শুনতে পারেন, জানেন, সাড়া দেন।**

🌸 মানুষ যখন দুনিয়ার কোনো শক্তির কাছে মাথা নত করে, তখন সে নিজের মর্যাদা হারায়, কারণ প্রকৃত ক্ষমতা আল্লাহর কাছেই। 🌿

🌿 তাই, কারও সামনে নত হওয়ার আগে চিন্তা করো — সে কি শুনতে পায়? সে কি তোমার ক্ষতি বা উপকার করতে পারে?

🌸 যদি উত্তর “না” হয় — তবে তোমার সেজদা, তোমার আশা, তোমার দোয়া — সবই আল্লাহরই প্রাপ্য। 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“سَوَآءٌ عَلَيْكُمْ أَدَعَوْتُمُوهُمْ أَمْ أَنتُمْ صَـٰمِتُونَ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে শুনতে পায় না, তার কাছে দোয়া অর্থহীন; আর যে সর্বশ্রোতা আল্লাহ, তাঁর কাছে দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না।** 🌿🤍
আয়াত ১৯৪
إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ۖ فَٱدْعُوهُمْ فَلْيَسْتَجِيبُوا۟ لَكُمْ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ
ইন্নাল্লাযীনা তাদ‘উন মিন দুনিল্লাহি ইবাদুন্‌ আমসালুকুম, ফাদউহুম্‌ ফাল্‌ইয়াস্‌তাজীবূ লক্ষুম্‌ ইন্‌ কুনতুম্‌ সাদিকীন।
“তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ডাকো, তারা তো তোমাদেরই মতো বান্দা। অতএব তাদের ডাক—তারা যদি তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়—(ডেকে দেখো), যদি তোমরা সত্যবাদী হও!” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আয়াতটি শিরকের বিরুদ্ধে এক সুস্পষ্ট যুক্তি ও চ্যালেঞ্জ। **“ইবাদুন্‌ আমসালুকুম”** — তারা তোমাদেরই মতো বান্দা: জন্ম-মৃত্যুর অধীন, প্রয়োজন ও অক্ষমতার মধ্যে আবদ্ধ। সুতরাং যেহেতু তারা **নিজেরা দাস**, তারা কখনোই **উপাস্য** হতে পারে না।

🌸 এরপর আল্লাহ বলেন: **“ফাদউহুম্‌ ফাল্‌ইয়াস্‌তাজীবূ লক্ষুম্‌”** — “ডেকে দেখো, সাড়া দিতে পারলে দিক!” এটি একটি খোলা চ্যালেঞ্জ— বাস্তবে তারা কোনো ডাকে সাড়া দিতে সক্ষম নয়; না বিপদ দূর করতে পারে, না উপকার টানতে পারে।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 ঈমানের মৌলিক নীতি— **দাতা একমাত্র আল্লাহ**; যার কাছে দোয়া করলে শোনা হয়, যিনি ইচ্ছা করলেই দিয়ে দেন। বান্দার মর্যাদা আছে, কিন্তু বান্দা কখনোই রব নয়।
🌸 শিরক অনেক সময় **ভালোবাসা ও সম্মানকে ইবাদতে রূপান্তর** করার মাধ্যমে ঘটে— অথচ সম্মান করা বৈধ, ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য।

উদাহরণ:
🌿 কোনো রোগী যদি **রোগীরই** কাছে আরোগ্য চায়, উভয়েই অসহায়; আরোগ্য তো **চিকিৎসক** দেন—এখানে চিকিৎসক উপমায় আল্লাহ।
🌸 আবার যেমন মোবাইল চার্জের জন্য **চার্জারেই** লাগাতে হয়; অন্য নিষ্ক্রিয় ডিভাইসের সাথে যুক্ত করলে কখনো চার্জ হবে না। তেমনি প্রয়োজন পূরণ হয় কেবল আল্লাহর কাছে ঝুঁকলেই।

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ ছাড়া যাকে ডাকা হয়—সে নিজেই বান্দা; উপাস্য নয়।
  • ইবাদত, নযর-নিয়্যাজ, মান্নত—সব কেবল আল্লাহর জন্য।
  • সম্মান করা আর ইবাদত করা এক জিনিস নয়; সীমা লঙ্ঘনই শিরক।
  • দোয়া শুধু সেই সত্তাকেই—যিনি শুনতে পারেন ও সাড়া দেন: আল্লাহ।

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
**“ইবাদুন্‌ আমসালুকুম”—তোমাদেরই মতো বান্দা।** বান্দার মুখাপেক্ষীকে উপাস্য বানিও না; **উপাস্য কেবল সেই রব, যিনি সবকিছুর মালিক, শ্রোতা ও সাড়াদানকারী।** 🤍
আয়াত ১৯৫
أَلَهُمْ أَرْجُلٌۭ يَمْشُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ أَيْدٍۢ يَبْطِشُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ أَعْيُنٌۭ يُبْصِرُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ ءَاذَانٌۭ يَسْمَعُونَ بِهَا ۗ قُلِ ٱدْعُوا۟ شُرَكَآءَكُمْ ثُمَّ كِيدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ
আ-লাহুম্‌ আরজুলুং ইয়ামশূনা বিহা, আম্‌ লাহুম্‌ আইদিন্‌ ইয়াবতিশূনা বিহা, আম্‌ লাহুম্‌ আয়ুনুং ইউবসিরূনা বিহা, আম্‌ লাহুম্‌ আযানুং ইয়াসমাউনা বিহা, কুলিদ‘উ শুরাকাআকুম্‌ সুম্মা কীদূন ফালাতুন্‌জিরূন।
“তাদের কি এমন পা আছে, যার দ্বারা তারা চলে? বা এমন হাত, যার দ্বারা তারা ধরতে পারে? বা এমন চোখ, যার দ্বারা তারা দেখে? বা এমন কান, যার দ্বারা তারা শোনে?
বলো (হে নবী ﷺ): তোমাদের তথাকথিত শরীকদের ডাকো, তারপর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো— আমাকে অবকাশ দিও না (যদি সত্যিই পারো)!” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এখানে আল্লাহ তাআলা শিরকের অসারতা সবচেয়ে যৌক্তিকভাবে প্রকাশ করেছেন — একের পর এক **চিন্তাজাগানো প্রশ্নের** মাধ্যমে।

🌸 **“তাদের কি পা আছে?”** — অর্থাৎ, তারা নিজেরাও চলতে পারে না।
**“তাদের কি হাত আছে?”** — তারা কিছু ধরতে বা সৃষ্টি করতে পারে না।
**“তাদের কি চোখ আছে?”** — তারা কিছুই দেখতে পারে না।
**“তাদের কি কান আছে?”** — তারা কিছুই শুনতে পারে না।

🌿 এই চারটি প্রশ্ন মানুষের সাধারণ বোধের ভিত্তিতেই শিরকের ভিত্তি ভেঙে দেয় — যে বস্তু নিজেই অচল, অন্ধ, বধির ও অক্ষম — তাকে উপাস্য বলা কত বড় মূর্খতা! 💔

🌸 এরপর আল্লাহ নবী ﷺ-কে আদেশ দিচ্ছেন — **“বলো: তোমরা তোমাদের শরীকদের ডাকো, তারপর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো।”** অর্থাৎ, যদি সত্যিই তারা শক্তিশালী হয়, তবে তাদের ডেকে দেখো — তারা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারে কি না!

🌿 এভাবে আল্লাহ তাআলা কেবল শিরকের মিথ্যাই প্রকাশ করেননি, বরং **তাওহীদের শ্রেষ্ঠত্ব**ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষকে এক গভীর প্রশ্নে নিয়ে যায় — “তুমি যাকে ডাকছো, সে কি কিছু করতে পারে?” 🌸 যদি সে চলতে, ধরতে, দেখতে বা শুনতে না পারে, তবে সে কেমন ‘ইলাহ’? বরং সে তোমারই তৈরি, তোমার চেয়ে দুর্বল। 🌿 এই আয়াত প্রমাণ করে — **শিরক কেবল ধর্মীয় ভুল নয়, এটি বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মবিরোধ।** 🌸 আর তাওহীদ হলো জ্ঞানের, যুক্তির ও প্রমাণের পথে একমাত্র সত্য। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন কেউ নিজের হাতে মাটির মূর্তি বানিয়ে বলে — “এটাই আমার রক্ষক।” অথচ সে জানে, মূর্তিটি নিজেই নড়তে পারে না, পড়ে গেলে তুলতে হয় তাকেই! 🌸 তেমনি মানুষ আজও নিজের বানানো ব্যবস্থা, ক্ষমতা বা বস্তুতে ভরসা রাখে — অথচ সেগুলোও তার মতোই অক্ষম। 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • যে নিজের উপকারে অক্ষম, সে অন্যের উপকার করতে পারে না।
  • শিরক হলো যুক্তি ও প্রজ্ঞা-বিরুদ্ধ অন্ধ বিশ্বাস।
  • আল্লাহই একমাত্র শ্রোতা, দ্রষ্টা, শক্তিধর ও কর্মক্ষম সত্তা।
  • মুমিনের আত্মবিশ্বাস কেবল আল্লাহর ওপরই থাকা উচিত।

গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত কেবল মূর্তিপূজকদের জন্য নয়, বরং তাদের জন্যও, যারা আজও **বস্তু, মানুষ বা ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল।** 🌸 আল্লাহ আমাদের জিজ্ঞেস করেন — “তুমি যার ওপর ভরসা রাখছো, সে কি দেখতে, শুনতে, সাহায্য করতে পারে?” 🌿 যদি উত্তর ‘না’ হয় — তবে বুঝে নাও, তোমার ভরসা ভুল জায়গায় রাখা হয়েছে। 💔 🌸 সত্যিকারের শক্তি কেবল সেই সত্তার, যিনি সৃষ্টি করেছেন, দেখেন, শোনেন, ও সবকিছু করতে সক্ষম — **আল্লাহ তাআলা।** 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“أَلَهُمْ أَرْجُلٌۭ يَمْشُونَ بِهَآ ... أَمْ لَهُمْ ءَاذَانٌۭ يَسْمَعُونَ بِهَا ۗ”** 🤍 🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে অন্ধ, বধির ও অচল, সে উপাস্য নয়; আর যে শোনে, দেখে, পরিচালনা করে— উপাস্য কেবল সেই মহান আল্লাহ।** 🌿🤍
আয়াত ১৯৬
إِنَّ وَلِـۧىِّ ٱللَّهُ ٱلَّذِى نَزَّلَ ٱلْكِتَـٰبَ وَهُوَ يَتَوَلَّى ٱلصَّـٰلِحِينَ
ইন্না ওয়ালিয়্যিয়াল্লাহুল্লাযী নাজ্জালাল কিতাব, ওয়া হুয়া ইয়াতাওয়াল্লাস্‌সালিহীন।
“নিশ্চয়ই আমার অভিভাবক (ও রক্ষাকারী) হলেন আল্লাহ — যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, এবং তিনিই সৎকর্মশীলদের অভিভাবক ও রক্ষাকারী।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি এক মহিমান্বিত ঘোষণা, যেখানে নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে বলা হয়েছে দৃঢ়ভাবে বলতে — **“আমার অভিভাবক আল্লাহ।”**

🌸 অর্থাৎ, আমি কারও ভরসায় নই, আমার সহায়, আশ্রয় ও শক্তি — কেবল আল্লাহ।

🌿 **“ওয়ালিয়্যিয়াল্লাহুল্লাযী নাজ্জালাল কিতাব”** — “যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।”
অর্থাৎ, তিনি সেই প্রভু যিনি কুরআন নাজিল করেছেন — যা জ্ঞান, দিশা ও সান্ত্বনার উৎস।

🌸 কুরআন প্রমাণ করে, আল্লাহ শুধু স্রষ্টা নন, বরং পথপ্রদর্শকও।

🌿 **“ওয়া হুয়া ইয়াতাওয়াল্লাস্‌সালিহীন”** — “আর তিনি সৎকর্মশীলদের অভিভাবক।”
অর্থাৎ, আল্লাহ কেবল নবীদের নয়, বরং প্রতিটি সৎ বান্দারও রক্ষাকারী।

🌸 তিনি তাদের পথ দেখান, বিপদে সাহায্য করেন, ও তাদের শেষ পরিণতি সুন্দর করেন। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে “ওয়ালিয়্যি” (وليّ) শব্দের অর্থ হলো — **রক্ষাকারী, সহায়, অভিভাবক, বন্ধু ও আশ্রয়দাতা।**
এটি এমন এক সম্পর্ক, যেখানে বান্দা একান্তভাবে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে।

🌸 মানুষ অনেক সময় বন্ধুত্ব বা আশ্রয় খোঁজে মানুষে, কিন্তু আল্লাহ বললেন — “সত্যিকারের অভিভাবক আমি।”

🌿 এটি এক গভীর শান্তির ঘোষণা — কারণ যখন তুমি আল্লাহকে ওয়ালী বানাও, তখন দুনিয়ার কেউ তোমাকে ক্ষতি করতে পারে না।

🌸 যিনি কিতাব নাজিল করেছেন, তিনিই জানেন কিভাবে তাঁর বান্দাকে রক্ষা করতে হয়। তাই সৎকর্মই সেই রক্ষার ছায়া। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন একটি শিশু তার পিতার কোলে নিরাপদ বোধ করে, তেমনি একজন মুমিন তার রবের রক্ষণে শান্তি খুঁজে পায়।

🌸 যখন পুরো দুনিয়া বিপরীতে যায়, তখনও মুমিন নিশ্চিন্তে বলতে পারে — **“আমার অভিভাবক আল্লাহ।”** 🤍

🌿 এই আয়াত নবী ﷺ-কে আত্মবিশ্বাস, এবং মুমিনদেরকে অটল আস্থা শিখায় — আল্লাহ কখনো তাঁর প্রিয় বান্দাকে একা রাখেন না। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • প্রকৃত রক্ষাকারী একমাত্র আল্লাহ, মানুষ নয়।
  • আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন, তাদের রক্ষা করেন ও পথ দেখান।
  • কিতাব (কুরআন) হলো আল্লাহর সুরক্ষা ও পথনির্দেশের মাধ্যম।
  • আল্লাহর ওয়ালী হওয়ার পথ — সৎকর্ম ও ঈমান।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 অনেক সময় মানুষ ক্ষমতাবান, ধনী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির সান্নিধ্যে নিরাপত্তা খোঁজে, কিন্তু এই আয়াত মনে করিয়ে দেয় — **আল্লাহর আশ্রয়ের চেয়ে নিরাপদ স্থান আর নেই।**

🌸 যখন তুমি আল্লাহকে বন্ধু বানাও, তখন তিনিই তোমার শত্রুদের মোকাবেলা করেন।

🌿 তাই কুরআন শেখে, ঈমান বাড়াও, সৎকর্ম করো — কারণ “**وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِينَ**” — “তিনি সৎকর্মশীলদের অভিভাবক।” 🌸

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“إِنَّ وَلِـۧىِّ ٱللَّهُ ٱلَّذِى نَزَّلَ ٱلْكِتَـٰبَ وَهُوَ يَتَوَلَّى ٱلصَّـٰلِحِينَ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **তুমি যখন আল্লাহর পথে চলবে, তখন তিনি তোমার রক্ষাকারী হবেন — আর এই রক্ষা পৃথিবীর যেকোনো রক্ষার চেয়ে উত্তম।** 🌿🤍
আয়াত ১৯৭
وَٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلَآ أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ
ওয়াল্লাযীনা তাদ‘উন মিন দুনিহি, লা ইয়াস্তাতীয়ূনা নাসরাকুম, ওলা আনফুসাহুম ইয়ানসুরূন।
“আর যাদের তোমরা আল্লাহ ছাড়া ডাকো, তারা তোমাদের কোনো সাহায্য করতে পারে না, এমনকি নিজেদেরকেও সাহায্য করতে সক্ষম নয়।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এখানে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী আয়াতের ধারাবাহিকতায় বলছেন — **আল্লাহর বাইরে যাদের মানুষ ডাকে, তারা সম্পূর্ণ অক্ষম।**

🌸 তারা নিজেরাও বিপদে পড়ে মুক্তি পায় না, বরং তাদের রক্ষা করে কেবল আল্লাহ।

🌿 তাই আল্লাহ ছাড়া কারও ওপর ভরসা রাখা, বা তাদেরকে উপাস্য বানানো এক ভয়াবহ ভুল।

🌸 **“লা ইয়াস্তাতীয়ূনা নাসরাকুম”** — অর্থাৎ, তারা তোমাকে সাহায্য করতে পারবে না। তারা কোনো উপকার, আশ্রয় বা মুক্তি দিতে সক্ষম নয়।

🌿 **“ওলা আনফুসাহুম ইয়ানসুরূন”** — “তারা নিজেদেরও রক্ষা করতে পারে না।” অর্থাৎ, তারা নিজের অস্তিত্ব, ক্ষতি বা মৃত্যুর ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখে না।

🌸 তাহলে তুমি কেন তাদের ডাকবে, যারা নিজেদেরও সাহায্য করতে পারে না? 💔

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত মানুষকে গভীর চিন্তার আহ্বান জানায় — “যাকে তুমি ডাকছো, সে কি নিজেকে সাহায্য করতে পারে?”

🌸 যদি না পারে, তবে সে তোমাকে কীভাবে সাহায্য করবে?

🌿 এ আয়াতে আল্লাহ আসলে হৃদয়ের ভুল কেন্দ্রচ্যুতি দেখাচ্ছেন — মানুষ যাদের নির্ভরতার স্থল বানিয়েছে, তারা নিজেরাও সাহায্যের মুখাপেক্ষী।

🌸 যেমন — ধন, ক্ষমতা, প্রভাব বা মানুষ — এরা সবাই একদিন দুর্বল, অক্ষম হয়ে যায়। কেবল আল্লাহই স্থায়ী, শক্তিশালী ও পরম রক্ষাকারী। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন, সমুদ্রে ডুবে যাওয়া দুইজন মানুষ একে অপরকে বাঁচাতে পারে না; বরং উভয়েই আল্লাহর দয়া ছাড়া রক্ষা পায় না।

🌸 তেমনি, মূর্তি, মানুষ বা দেবতা — কেউই নিজের ক্ষতি ঠেকাতে পারে না; তাহলে অন্যকে কীভাবে বাঁচাবে? 💔

🌿 আবার যেমন ঝড়ের মধ্যে বাতি জ্বালিয়ে রাখা বৃথা — বাতি নিজেই নেভে যাবে, সে তোমাকে আলোকিত রাখতে পারবে না। তেমনি মিথ্যা উপাস্যরাও নিজে অন্ধকারে, আর আল্লাহর নূরই একমাত্র আলোক। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ ছাড়া কেউ প্রকৃত সাহায্য করতে পারে না।
  • সৃষ্ট জিনিসের ওপর নির্ভরতা সবসময় অস্থায়ী ও দুর্বল।
  • প্রকৃত সাহায্য চাওয়া উচিত কেবল আল্লাহর কাছেই।
  • আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি অন্যদের সাহায্য করেন, কিন্তু নিজে কারও সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত মুমিনকে আত্মসমালোচনায় ডাকে — “আমি কাকে ভরসা করছি? সে কি নিজেকে রক্ষা করতে পারে?”

🌸 যদি উত্তর হয় “না”, তাহলে বুঝে নিতে হবে, আল্লাহ ছাড়া কারও ওপর নির্ভরতা এক ধোঁকা।

🌿 আল্লাহই একমাত্র নাসির (সহায়), তিনি চান, বান্দা যেন সব নির্ভরতা কেটে একমাত্র তাঁর ওপর আস্থা রাখে। 🌸

🌸 আল্লাহর এই আহ্বান আজও তেমনি প্রযোজ্য — মূর্তি নয়, প্রতীক নয়, মানুষ নয় — বরং জীবন্ত প্রভু আল্লাহরই সহায়তা চাও। 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلَآ أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে নিজেকে সাহায্য করতে পারে না, সে অন্যের ভরসা হতে পারে না। প্রকৃত সহায় কেবল আল্লাহ — যিনি কারও মুখাপেক্ষী নন।** 🌿🤍
আয়াত ১৯৮
وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى ٱلْهُدَىٰ لَا يَسْمَعُوا۟ ۖ وَتَرَىٰهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ وَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ
ওয়াইন তাদ‘উহুম ইলাল হুদা, লা ইয়াসমাউ, ওয়া তারাহুম ইয়ানজুরূনা ইলাইকা, ওাহুম লা ইউবসিরূন।
“আর যদি তুমি তাদের হিদায়াতের দিকে ডাকো, তারা শুনতে পাবে না; তুমি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তারা দেখে না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি মূর্তিপূজকদের অবস্থার এক **জীবন্ত ও বেদনাদায়ক চিত্র** তুলে ধরে।

🌸 **“ওয়াইন তাদ‘উহুম ইলাল হুদা লা ইয়াসমাউ”** — “তুমি যদি তাদের হিদায়াতের দিকে ডাকো, তারা শুনতে পায় না।”
অর্থাৎ, যাদের তারা উপাস্য বানিয়েছে — তারা মৃত, বধির ও অনুভূতিশূন্য।

🌿 তারা ডাক শুনতে পারে না, কারণ তাদের কোনো প্রাণ নেই, আর তারা জবাবও দিতে পারে না, কারণ তাদের কোনো ক্ষমতা নেই।

🌸 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ওয়া তারাহুম ইয়ানজুরূনা ইলাইকা, ওাহুম লা ইউবসিরূন”** — “তুমি তাদের দেখতে পাও, তারা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে, অথচ তারা দেখে না।”

🌿 অর্থাৎ, তাদের চোখ আছে, কিন্তু দৃষ্টি নেই; দেহ আছে, কিন্তু প্রাণ নেই; তারা তোমার দিকে মুখ করে আছে, কিন্তু তোমাকে উপলব্ধি করতে পারে না। 💔

🌸 এটি শুধু মূর্তির জন্য নয়, বরং সেই সব মানুষদের উদাহরণও, যারা সত্য শুনে, দেখে, তবুও তা গ্রহণ করে না। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত এক চিরন্তন বাস্তবতা প্রকাশ করে — **আত্মিকভাবে অন্ধ ও বধির মানুষও জীবিত, কিন্তু তাদের অন্তর মৃত।**

🌸 তারা কুরআনের বাণী শুনে, কিন্তু তা হৃদয়ে প্রবেশ করে না। তারা সত্যকে দেখে, কিন্তু তা স্বীকার করতে চায় না।

🌿 এ কারণেই আল্লাহ বলেন — “তুমি তাদের ডাকো বা না ডাকো — সমান।” কারণ তারা শুনে না, দেখে না, অনুভবও করে না।

🌸 এই আয়াত শুধু মূর্তি নয়, বরং **হৃদয়-মৃত মানুষদের প্রতিও প্রযোজ্য।** তারা দুনিয়ার আলো দেখে, কিন্তু সত্যের আলো অন্ধকারে হারায়। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন মৃত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ চিৎকার করে বলছে — “ওঠো!” কিন্তু সে কখনো জেগে ওঠে না; কারণ তার কানে শোনার ক্ষমতা নেই।

🌸 তেমনি, যারা মিথ্যা উপাস্যকে ডাকে, তারা এমন সত্তাকে ডাকে, যার কানে কিছুই পৌঁছায় না, চোখে কিছুই দেখা যায় না।

🌿 কিংবা যেমন কেউ দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কথা বলে — সে নিজেই নিজের আওয়াজ ফেরত পায়, কিন্তু কোনো জবাব আসে না। 💔

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে দোয়া করা সম্পূর্ণ অর্থহীন।
  • যে শুনতে বা দেখতে পারে না, সে সাহায্যদাতা নয়, অসহায়।
  • সত্য শোনার ক্ষমতা কেবল আল্লাহ প্রদত্ত হৃদয়ের বৈশিষ্ট্য।
  • আল্লাহই একমাত্র সত্তা, যিনি দেখেন, শোনেন ও সাড়া দেন।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত কেবল মূর্তির নয়, বরং তাদের প্রতিও প্রযোজ্য, যারা আল্লাহর কথা শুনেও শোনে না, কুরআনের আলো দেখেও দেখে না।

🌸 আল্লাহ তাআলা বলছেন — “তুমি তাদের দিকে তাকাও, তারা তোমার দিকেও তাকিয়ে থাকে, অথচ তারা দেখে না।”

🌿 এর মানে, তাদের চোখ আছে কিন্তু অন্তর অন্ধ। তারা আলোয় থেকেও অন্ধকারে বাস করে। 💔

🌸 মুমিন সেই, যার অন্তর জেগে আছে; যে শুনে, উপলব্ধি করে, এবং আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেয়। 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَتَرَىٰهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ وَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে চোখে আলো আছে কিন্তু অন্তরে অন্ধকার, সে সত্যকে দেখতে পায় না। আর যে হৃদয়ে ঈমানের আলো জ্বলে, সে আল্লাহর দয়া সর্বত্র দেখতে পায়।** 🌿🤍
আয়াত ১৯৯
خُذِ ٱلْعَفْوَ وَأْمُرْ بِٱلْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ ٱلْجَـٰهِلِينَ
খুযিল্‌ আফ্‌ওয়া, ওয়ামুর্‌ বিল্‌ উর্ফি, ওয়া আ‘রিদ্‌ আনিল্‌ জাহিলীন।
“ক্ষমাকে অবলম্বন করো, সৎ ও উত্তম কাজের নির্দেশ দাও, আর মূর্খদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত নবী ﷺ-কে এমন তিনটি নীতিতে চলার নির্দেশ দেয়, যা মানব চরিত্রের পরিপূর্ণতার প্রতীক।

🌸 প্রথমত — **“খুযিল্‌ আফ্‌ওয়া”** — “ক্ষমাকে অবলম্বন করো।”
অর্থাৎ, মানুষ যত অন্যায়ই করুক, তুমি ক্ষমা ও সহনশীলতার পথ বেছে নাও।

🌿 এই নির্দেশের মাধ্যমে আল্লাহ নবী ﷺ-কে এবং আমাদের সবাইকে চরিত্রের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে শিক্ষা দেন।
রাগের জবাব রাগ দিয়ে নয়, বরং **ক্ষমা দিয়ে** দিতে হবে।

🌸 দ্বিতীয়ত — **“ওয়ামুর্‌ বিল্‌ উর্ফি”** — “সৎ ও উত্তম কাজের নির্দেশ দাও।”
এখানে “উর্ফ” শব্দটি মানে— সমাজে প্রচলিত, সুন্দর ও নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কাজসমূহ।

🌿 অর্থাৎ, মুমিন শুধু নিজের জন্য ভালো হবে না, বরং সমাজে **সততা, ন্যায় ও সৌন্দর্যের প্রচারক** হবে।

🌸 তৃতীয়ত — **“ওয়া আ‘রিদ্‌ আনিল্‌ জাহিলীন”** — “মূর্খদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।”
অর্থাৎ, যারা বিদ্বেষ, অজ্ঞতা বা ব্যঙ্গ নিয়ে সামনে আসে, তাদের সাথে বিতর্ক নয়, বরং নীরবতা অবলম্বন করো।

🌿 কারণ অজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে তর্কে জড়ালে জ্ঞানীও ছোট হয়ে যায়, আর নীরবতা প্রমাণ করে — জ্ঞানী আসলেই উঁচু স্থানে আছে। 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই তিনটি আদেশ একত্রে মুমিনের চরিত্র গঠন করে —
১️⃣ **ক্ষমা** শেখায় – অন্যদের প্রতি দয়া ও নম্রতা।
২️⃣ **সৎ কাজের আদেশ** শেখায় – সমাজের উন্নতি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা।
৩️⃣ **অজ্ঞদের থেকে মুখ ফিরানো** শেখায় – আত্মসম্মান ও ধৈর্য।

🌸 এই তিনটি গুণই নবী ﷺ-এর জীবনে পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
যেমন, তায়েফবাসীরা যখন তাঁকে পাথর ছুঁড়েছিল, তিনি তাদের জন্য অভিশাপ নয়, বরং দোয়া করেছিলেন — “হে আল্লাহ! এরা জানে না, তুমি এদেরকে হিদায়াত দাও।” 🌿

🌸 তাই বলা হয় — **এই আয়াতই নবীর চরিত্রের সারসংক্ষেপ।** 🤍

উদাহরণ:
🌿 যেমন, কেউ তোমাকে কষ্ট দিল, অথচ তুমি প্রতিশোধ না নিয়ে চুপ রইলে — সেটাই “খুযিল আফওয়া” — ক্ষমার অনুশীলন।

🌸 আবার, কেউ অন্যায় করছে দেখে তুমি ভালো পরামর্শ দিলে, সেটাই “ওয়ামুর বিল উর্ফি” — নৈতিক আহ্বান।

🌿 আর কেউ যদি গালাগালি করে বা উপহাস করে, তুমি চুপ করে থাকলে — সেটাই “ওয়া আ‘রিদ আনিল জাহিলীন” — মর্যাদার প্রকাশ। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • ক্ষমা হলো শক্তিশালী ব্যক্তির গুণ, দুর্বলতার নয়।
  • সৎ কাজ প্রচার করা ইসলামি সমাজের অন্যতম দায়িত্ব।
  • অজ্ঞ ও উদ্ধত মানুষের সঙ্গে বিতর্ক না করাই জ্ঞানীর মর্যাদা।
  • নবী ﷺ-এর চরিত্র অনুসরণ করাই কুরআনের প্রকৃত আহ্বান।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 “খুযিল আফওয়া” — এটা শুধু মুখে ক্ষমা নয়, হৃদয়ে ক্ষোভ মুছে ফেলার শিক্ষা।

🌸 “ওয়ামুর বিল উর্ফি” — শুধু কথায় নয়, কাজে সুন্দরতার প্রচার।

🌿 “ওয়া আ‘রিদ আনিল জাহিলীন” — মানে হলো, নীচ মনোভাবের সামনে উচ্চ নীরবতা বজায় রাখা।

🌸 এই আয়াত শেখায় — **তোমার আচরণ হোক এমন, যাতে শত্রুও তোমার চরিত্রে আল্লাহর আলো দেখে।** 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“خُذِ ٱلْعَفْوَ وَأْمُرْ بِٱلْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ ٱلْجَـٰهِلِينَ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **ক্ষমা করো, ভালো কাজের আহ্বান দাও, আর মূর্খদের সঙ্গে তর্কে না জড়িয়ে মর্যাদার সাথে নীরব থাকো — এটাই নববী চরিত্রের সারাংশ।** 🌿🤍
আয়াত ২০০
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ نَزْغٌۭ فَٱسْتَعِذْ بِٱللَّهِ ۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌۭ
ওয়া ইম্মা ইয়ানযাগান্নাকা মিনাশ্‌ শাইতানিন্‌ নাযগুন্‌, ফাস্তাআ’য বিল্লাহ, ইন্নাহু সামীয়ুন আলীম।
“আর যদি শয়তান তোমাকে কোনো কুমন্ত্রণা দিতে চায়, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি হলো এক **আধ্যাত্মিক আত্মরক্ষার সূত্র** — যেখানে আল্লাহ তাআলা আমাদের শেখাচ্ছেন, কীভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণাকে প্রতিহত করতে হবে।

🌸 **“ইম্মা ইয়ানযাগান্নাকা মিনাশ্‌ শাইতানিন নাযগুন”** — অর্থাৎ, যদি কখনো শয়তান তোমাকে প্ররোচিত করে, রাগ, হিংসা, অহংকার, লোভ বা পাপের দিকে টেনে নিতে চায়।

🌿 তখনই সঙ্গে সঙ্গে **“ফাস্তাআ’য বিল্লাহ”** — “আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।”
অর্থাৎ, দেরি না করে বলো — **“আ‘উযু বিল্লাহি মিনাশ্‌ শাইতানির রাজীম।”**

🌸 এতে আল্লাহর বিশেষ সুরক্ষা তোমাকে ঘিরে ফেলে, আর শয়তানের প্রভাব মুহূর্তেই দুর্বল হয়ে যায়।

🌿 এরপর আল্লাহ বলেন — **“ইন্নাহু সামীয়ুন আলীম”** — “নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
অর্থাৎ, তিনি তোমার দোয়া শুনছেন, এবং জানেন তুমি কোন অবস্থায় তাঁর সাহায্য চাচ্ছো। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 শয়তান মানুষের হৃদয়ে ফিসফিস করে, কখনও রাগের মাধ্যমে, কখনও কামনার মাধ্যমে, কখনও অহংকার বা অন্যায়ের মোড়কে।

🌸 কিন্তু মুমিনের অস্ত্র হলো — **তাৎক্ষণিক তাওয়াজ্জুহ (মনোযোগ) আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেওয়া।**

🌿 যেমন, আগুনে হাত দিলে তুমি সঙ্গে সঙ্গে টেনে নাও, তেমনি পাপের চিন্তা এলে সঙ্গে সঙ্গে “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলো।

🌸 এটা শুধু একটি শব্দ নয়, বরং আত্মাকে পুনরায় ঈমানের আলোয় ফিরিয়ে আনার এক কর্ম। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন, রাগ উঠে গেলে মুহূর্তেই পানি পান করা, স্থান পরিবর্তন করা, নীরব থাকা — এগুলোই শয়তানের কুমন্ত্রণাকে থামানোর বাস্তব উপায়।

🌸 আর এই আয়াত হলো সেই মূল নীতি — **রাগ বা পাপের মুহূর্তে দেরি না করে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।**

🌿 আল্লাহর নাম উচ্চারণ করলেই শয়তান পুড়ে যায়, দুর্বল হয়ে পালিয়ে যায়। 🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • শয়তান কখনো থামে না, তাই মুমিনকেও সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
  • আল্লাহর আশ্রয় নেওয়া মানে — আত্মিক প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা।
  • রাগ, হিংসা ও পাপের চিন্তা — সবই শয়তানের অস্ত্র।
  • “আ‘উযু বিল্লাহি মিনাশ্‌ শাইতানির রাজীম” বলা হলো এক শক্তিশালী প্রতিরোধ।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 শয়তান সবসময় হৃদয়ে **“নাযগুন”** — ফিসফিসানি পাঠায়।
কিন্তু আল্লাহ চান — তুমি যেন সঙ্গে সঙ্গে **“ইস্তিআযা”** — আশ্রয় গ্রহণ করো।

🌸 এই আয়াত এক আধ্যাত্মিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা শেখায় — মন, মুখ, ও চিন্তা যেন আল্লাহর স্মরণে নিবিষ্ট থাকে।

🌿 শয়তানের কুমন্ত্রণায় হার মানা মানে আত্মাকে নষ্ট করা, কিন্তু আল্লাহর আশ্রয় নেওয়া মানে আত্মাকে রক্ষা করা। 🤍

🌸 মুমিন যখন “আউযুবিল্লাহ” বলে, তখন সে এক অদৃশ্য ঢালের মধ্যে চলে যায়, যা শয়তান কখনো ভেদ করতে পারে না। 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَٱسْتَعِذْ بِٱللَّهِ ۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌۭ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **শয়তান যখন তোমাকে উত্তেজিত করে, তখন জবাব দিও না — বরং আল্লাহর আশ্রয় নাও। কারণ তিনি শুনছেন, জানেন, এবং রক্ষা করেন।** 🌿🤍
আয়াত ২০১
إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ إِذَا مَسَّهُمْ طَـٰٓئِفٌۭ مِّنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ تَذَكَّرُوا۟ فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ
ইন্নাল্লাযীনা ত্তাকাও, ইযা মাস্সাহুম তাইফুম মিনাশ্‌ শাইতান, তাযাক্কারু, ফাইযা হুম মুবসিরূন।
“যারা তাকওয়াবান (আল্লাহভীরু), যখন তাদেরকে শয়তানের কোনো কুমন্ত্রণার ছোঁয়া লাগে, তখন তারা (সঙ্গে সঙ্গে) আল্লাহকে স্মরণ করে — আর তখনই তারা সত্যকে স্পষ্টভাবে দেখতে পায়।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা **সত্যিকার মুমিনদের বৈশিষ্ট্য** বর্ণনা করেছেন — যারা কখনো পাপের চিন্তা বা শয়তানের প্ররোচনায় আক্রান্ত হলেও সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে এবং **আল্লাহর স্মরণে ফিরে আসে।**

🌸 **“ইন্নাল্লাযীনা ত্তাকাও”** — অর্থাৎ, যারা আল্লাহকে ভয় করে, তাঁর নির্দেশ মানে, ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচতে চায়। এরা সেই মানুষ, যাদের হৃদয় জাগ্রত।

🌿 **“ইযা মাস্সাহুম তাইফুম মিনাশ্‌ শাইতান”** — অর্থাৎ, শয়তানের কোনো “তাইফ” বা **ফিসফিসানি, কুমন্ত্রণা বা প্ররোচনা** যখন তাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

🌸 **“তাযাক্কারু”** — তখন তারা সঙ্গে সঙ্গে **স্মরণ করে** — কে তাদের সৃষ্টি করেছেন, কে দেখছেন, আর কার কাছে তারা ফিরে যাবে।

🌿 সেই স্মরণই তাদের হৃদয়ের আগুন নিভিয়ে দেয়, আর তাদের চোখ খুলে দেয় সত্যের আলোয়।

🌸 **“ফাইযা হুম মুবসিরূন”** — “তখনই তারা দেখতে পায়।” অর্থাৎ, তখন তারা বুঝে যায় — এটা শয়তানের কুমন্ত্রণা, আর সত্যের পথ আল্লাহরই নির্দেশিত পথ। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াত শেখায় — মুমিন হওয়া মানে পাপহীন হওয়া নয়, বরং **ভুল হলে দ্রুত ফিরে আসা।**

🌸 কারণ, মুমিনও মানুষ — তারও দুর্বলতা, রাগ, কামনা, ভুল হতে পারে; কিন্তু তার বিশেষত্ব হলো — সে **অবিলম্বে আল্লাহকে স্মরণ করে**, আর সেই স্মরণই তাকে বাঁচিয়ে দেয়।

🌿 তাই শয়তানের স্পর্শ মুমিনকে ধ্বংস করে না, বরং তাকে আরও সচেতন করে তোলে।

🌸 ঠিক যেমন বজ্রপাত মাটিতে পড়লে গাছ জেগে ওঠে, তেমনি শয়তানের স্পর্শ মুমিনের ঈমানকে জাগিয়ে দেয়। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন, কেউ হঠাৎ রাগে এমন কিছু বলতে চাইল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল — “আল্লাহ রাগ পছন্দ করেন না।”
সে থেমে গেল — এটাই “তাযাক্কারু” — আল্লাহকে স্মরণ করা।

🌸 বা কেউ এক মুহূর্তের জন্য পাপের দিকে টান অনুভব করল, কিন্তু সাথে সাথে মনে পড়ল — “আল্লাহ দেখছেন।” তখন সে নিজেকে সরিয়ে নিল।

🌿 এই মুহূর্তের “স্মরণ”ই তাকে রক্ষা করল — কারণ “ফাইযা হুম মুবসিরূন” — তারা স্পষ্টভাবে দেখতে পায়, কী সঠিক আর কী ভুল। 🤍

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • শয়তানের ফিসফিসানি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ — আল্লাহর স্মরণ।
  • মুমিন ভুল করলে দেরি না করে তওবা করে ও সঠিক পথে ফিরে আসে।
  • আল্লাহভীরু মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় স্থায়ী ক্ষতি হয় না।
  • আল্লাহর স্মরণ (যিকর) ঈমানকে পুনরুজ্জীবিত করে।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত একটি আধ্যাত্মিক বাস্তবতা প্রকাশ করে — **শয়তান ফিসফিস করে, কিন্তু তাকওয়া হৃদয় জেগে ওঠে।**

🌸 আল্লাহর স্মরণই সেই আলো, যা অন্ধকার চিন্তাকে মুছে দেয়।

🌿 যখন তুমি আল্লাহকে স্মরণ করো, তখন অন্তরের দরজা খুলে যায়, আর শয়তানের প্রভাব হারিয়ে যায়।

🌸 এই আয়াত মুমিনের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য শেখায় — **সে দ্রুত নিজের ভুল চিনতে পারে, কারণ তার অন্তর আল্লাহর আলোয় আলোকিত।** 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“إِذَا مَسَّهُمْ طَـٰٓئِفٌۭ مِّنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ تَذَكَّرُوا۟ فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **মুমিন ভুলে না, সে মনে রাখে; পতিত হলেও উঠে দাঁড়ায়; কারণ আল্লাহর স্মরণই তার চোখ খুলে দেয়, আর আল্লাহর নূরই তার হৃদয় আলোকিত করে।** 🌿🤍
আয়াত ২০২
وَإِخْوَـٰنُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِى ٱلْغَىِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ
ওয়া ইখওয়ানুহুম, ইয়ামুদ্দূনাহুম ফিল্‌ গয়্যি, সুম্মা লা ইউকসিরূন।
“আর তাদের (শয়তানের) ভাইয়েরা তাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে টেনে নিয়ে যায়, তারপর তারা থামে না (বা সীমা মানে না)।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াতটি আগের আয়াত (২০১)-এর বিপরীত চিত্র তুলে ধরেছে। আগের আয়াতে বলা হয়েছিল — মুমিনরা শয়তানের স্পর্শে সজাগ হয়ে যায়, কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে — **অবিশ্বাসীরা সেই স্পর্শেই গভীরভাবে ডুবে যায়।**

🌸 **“ওয়া ইখওয়ানুহুম”** — অর্থাৎ, শয়তানের ভাইয়েরা — যারা তার স্বভাব, কাজ ও পথে সঙ্গী।

🌿 তারা হলো সেইসব মানুষ, যারা পাপ, অন্যায়, অহংকার ও কামনার পথে চলে, আর শয়তানের সঙ্গকে আনন্দ মনে করে।

🌸 **“ইয়ামুদ্দূনাহুম ফিল্‌ গয়্যি”** — অর্থাৎ, তারা একে অপরকে বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতায় সাহায্য করে।
একজন পাপে লিপ্ত হয়, অন্যজন তাকে আরও উৎসাহ দেয় — যেন পাপও এখন এক ধরনের বন্ধুত্ব। 💔

🌿 **“সুম্মা লা ইউকসিরূন”** — অর্থাৎ, তারা থামে না, বরং আরও বাড়িয়ে দেয় সেই বিভ্রান্তি ও পাপ।

🌸 তারা না নিজের ভুল বোঝে, না অন্যকে বোঝার সুযোগ দেয়। এভাবেই তারা শয়তানের দলে পরিণত হয়। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এখানে “ইখওয়ান” (ভাই) শব্দের ব্যবহার খুব অর্থবহ। আল্লাহ বললেন না — “তাদের অনুসারীরা”, বরং বললেন — “তাদের ভাইয়েরা।”

🌸 অর্থাৎ, তারা শুধু অনুসারী নয়, বরং **স্বভাব ও কাজে শয়তানের আত্মীয়স্বরূপ**। তারা পাপকে ভালোবাসে, যেমন শয়তান ভালোবাসে বিভ্রান্তি ছড়াতে।

🌿 তারা একে অপরকে “সান্ত্বনা” দেয় মিথ্যা যুক্তি দিয়ে — “সবাই তো এটা করছে”, “এটা কোনো বড় বিষয় না।”

🌸 এভাবেই শয়তান ও তার ভাইয়েরা একে অপরকে গুনাহের পথে এগিয়ে দেয়, আর তাদের মনে আর অনুতাপও জাগে না। 💔

উদাহরণ:
🌿 যেমন, একজন মানুষ মিথ্যা বলল, আর তার বন্ধুরা বলল — “চমৎকার বলেছো!”
এতে সে সাহস পেল আরও বড় মিথ্যা বলতে। এভাবেই **শয়তানের ভাইয়েরা** একে অপরকে টেনে নিয়ে যায়।

🌸 আবার কেউ অন্যায় কাজ করে, বন্ধুরা তাকে প্রশংসা করে, বলছে — “তুমি খুব বুদ্ধিমান।” অথচ তারা জানে — এটি গুনাহ, কিন্তু তবুও উৎসাহ দিচ্ছে।

🌿 এটাই “ইয়ামুদ্দূনাহুম ফিল গয়্যি” — একে অপরকে গোমরাহির দিকে ঠেলে দেওয়া। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • পাপের সহযোগীও শয়তানের ভাই।
  • পাপের পথে বন্ধুত্ব আসলে অভিশাপ।
  • ভালো বন্ধু সেই, যে ভুলে সতর্ক করে দেয়।
  • শয়তানের ভাইয়েরা নিজেদের ও অন্যদের ধ্বংসের পথে টেনে নেয়।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত আমাদের বন্ধুত্ব ও সঙ্গ নিয়ে চিন্তা করায়। আমি কাদের সঙ্গে চলি? তারা কি আমাকে আল্লাহর দিকে টানে, নাকি পাপের দিকে ঠেলে দেয়?

🌸 কারণ সঙ্গ মানুষকে গঠনও করে, আবার ধ্বংসও করতে পারে।

🌿 তাই রাসূল ﷺ বলেছেন — “মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের ওপর চলে, তাই কাকে বন্ধু বানাচ্ছো, সে বিষয়ে সাবধান হও।” — *(আবু দাউদ)* 🌸

🌸 সৎ সঙ্গ আত্মাকে আল্লাহর দিকে টানে, আর অসৎ সঙ্গ শয়তানের পথে ডুবিয়ে দেয়। 🌿

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَإِخْوَـٰنُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِى ٱلْغَىِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **শয়তানের ভাইয়েরা একে অপরকে পাপে টেনে নিয়ে যায়, থামে না, থামতেও জানে না। আর তাকওয়াবানরা একে অপরকে আল্লাহর দিকে টানে।** 🌿🤍
আয়াত ২০৩
وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِم بِـَٔايَةٍۢ قَالُوا۟ لَوْلَا ٱجْتَبَيْتَهَا ۚ قُلْ إِنَّمَآ أَتَّبِعُ مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ مِن رَّبِّى ۚ هَـٰذَا بَصَآئِرُ مِن رَّبِّكُمْ وَهُدًۭى وَرَحْمَةٌۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ
ওয়া ইযা লাম্‌ তা'তিহিম্‌ বিআয়াতিন্‌ ক্বালূ লাওলা ইজতাবাইতাহা, কুল্‌ ইন্নামা আত্তাবিঊ মা ইউহা ইলাইয়া মিন্‌ রাব্বী, হাজা বাসোইরুম্‌ মির্‌ রাব্বিকুম, ওয়া হুদাওঁ ওয়া রহমাতুল্লি কওমিইউমিনূন।
“আর যখন তুমি তাদের কাছে কোনো নিদর্শন (আয়াত) আনো না, তারা বলে — ‘তুমি নিজে থেকে কেন কোনো আয়াত উদ্ভাবন করো না?’ বলো: ‘আমি তো কেবল অনুসরণ করি যা আমার প্রভুর পক্ষ থেকে আমার প্রতি ওহী করা হয়।’ এই (কুরআন) তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এসেছে দৃষ্টি (বিবেকের আলো), পথনির্দেশ ও করুণা — তাদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 কাফেররা নবী ﷺ-কে উপহাস করে বলত — “তুমি তো দাবি করো আল্লাহর বার্তা বহন করো, তাহলে যখন ইচ্ছা নতুন আয়াত এনে দেখাও না কেন?”

🌸 তাদের এই কথা নবী ﷺ-এর জন্য ছিল কষ্টদায়ক, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন — “তুমি বলো, আমি নিজের থেকে কিছু বলি না; আমি শুধু যা আমার প্রভু থেকে ওহী আসে, সেটাই বলি।” 🌿

🌿 অর্থাৎ, কুরআনের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত — নবীর নিজস্ব কোনো বক্তব্য নয়।

🌸 তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন — **“হাজা বাসোইরুম মির রাব্বিকুম”** — “এটি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এসেছে দৃষ্টির আলো হিসেবে।”
অর্থাৎ, কুরআন সেই আলো যা হৃদয়কে জাগিয়ে দেয়, অন্ধ আত্মাকে দর্শনশক্তি দেয়।

🌿 **“ওয়া হুদাওঁ ওয়া রহমাতুল্লি কওমিইউমিনূন”** — এটি শুধু পথনির্দেশ নয়, বরং এক রহমত — কিন্তু শুধু তাদের জন্য যারা বিশ্বাস রাখে ও গ্রহণ করে। 🌸

গভীর উপলব্ধি:
🌿 কুরআন কোনো মানুষের তৈরি নয়, বরং এটি আল্লাহর **জীবন্ত, চলমান ও কার্যকরী ওহী**।

🌸 কাফেররা যুক্তি চায়, অলৌকিকতা চায়, কিন্তু তারা ভুলে যায় — সর্ববৃহৎ অলৌকিকতা হলো এই কুরআন নিজেই।

🌿 নবী ﷺ কখনো কুরআন নিজে রচনা করতে পারেননি, কারণ তিনি ছিলেন শুধু **বাহক (Messenger)**, লেখক (Author) নয়।

🌸 তাই আল্লাহ বললেন — “আমি যা ওহী পাই, শুধু তাই অনুসরণ করি।” এই বাক্যই নবীর নবুয়ত ও সততার প্রমাণ। 🌿

উদাহরণ:
🌿 যেমন ডাকপিয়ন কখনো নিজে চিঠি লেখে না, বরং যা পাঠানো হয়, ঠিক তাই পৌঁছে দেয়। তেমনি নবী ﷺ আল্লাহর বাণী পরিবর্তন না করে পৌঁছে দিয়েছেন।

🌸 অথবা যেমন এক প্রদীপ নিজে আলো তৈরি করে না, বরং অন্য উৎস থেকে আলো পায় — তেমনি নবী ﷺ আল্লাহর আলোই মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত ওহী; কোনো মানুষের রচনা নয়।
  • নবী ﷺ আল্লাহর আদেশেই কথা বলতেন, নিজের ইচ্ছায় নয়।
  • কুরআন হলো আলো, দিকনির্দেশনা ও রহমত — তবে শুধুমাত্র ঈমানদারদের জন্য।
  • যারা অহংকারে কুরআনকে অস্বীকার করে, তারা নিজেদেরই অন্ধ করে ফেলে।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত শুধু কাফেরদের নয়, আজকের যুগের মানুষের জন্যও একটি জাগরণ — যারা বলে “কুরআন তো মানুষের লেখা বই”, আল্লাহ তাদের উত্তর দিচ্ছেন — “এটি আমার ওহী, আমার দৃষ্টির আলো।”

🌸 মুমিনের জন্য কুরআন শুধু পাঠের বই নয়, বরং চিন্তার, জীবনের ও হৃদয়ের দিকনির্দেশ।

🌿 যারা সত্যিকার অর্থে ঈমান রাখে, তাদের জন্য কুরআন **রহমত, প্রশান্তি ও শক্তি** হয়ে ওঠে। 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“هَـٰذَا بَصَآئِرُ مِن رَّبِّكُمْ وَهُدًۭى وَرَحْمَةٌۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **কুরআন হলো আল্লাহর নূর, যে হৃদয়কে দৃষ্টিশক্তি দেয়, পথ দেখায় ও রহমত বর্ষণ করে — কিন্তু শুধু তাদের জন্য, যারা ঈমান রাখে।** 🌿🤍
আয়াত ২০৪
وَإِذَا قُرِئَ ٱلْقُرْءَانُ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥ وَأَنصِتُوا۟ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
ওয়া ইযা কুরিআল কুরআনু, ফাস্তামিঊ লাহু ওয়া আনসিতূ, লা‘আল্লাকুম তুরহামূন।
“আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ সহকারে শোনো এবং নীরব থাকো, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 এই আয়াত আল্লাহ তাআলার কিতাবের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও মনোযোগের শিক্ষা দেয়।

🌸 যখন কুরআনের তেলাওয়াত হয় — তখন শুধু কানে শোনা নয়, বরং **হৃদয় দিয়ে শোনা, মনোযোগে ডুবে যাওয়া, এবং জিহ্বা নীরব রাখা।**

🌿 কারণ এটি কোনো সাধারণ শব্দ নয়, এটি সেই প্রভুর বাণী, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। 🌸

🌸 **“ফাস্তামিঊ লাহু”** — মানে হচ্ছে, কুরআনের প্রতি মনোযোগ দাও, মন দিয়ে শোনো, যাতে বুঝে নিতে পারো।

🌿 **“ওয়া আনসিতূ”** — অর্থাৎ, তেলাওয়াত চলাকালে কথা বলা, হাসাহাসি, কিংবা মনোযোগ বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকো।

🌸 তারপর আল্লাহ বলেন — **“লা‘আল্লাকুম তুরহামূন”** — “যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পারো।”
অর্থাৎ, কুরআনের প্রতি শ্রদ্ধা ও মনোযোগই আল্লাহর রহমত লাভের প্রথম ধাপ। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ শিখিয়েছেন — কুরআন শোনা কেবল কান দিয়ে নয়, বরং **হৃদয়, মন ও আত্মা দিয়ে শোনা উচিত।**

🌸 যেমন নামাজে মনোযোগ না থাকলে ফল পাওয়া যায় না, তেমনি কুরআন শোনার সময় মনোযোগ না দিলে হৃদয়েও আলো নামে না।

🌿 তাই কুরআন পাঠ বা তেলাওয়াতের সময় মুমিনের অবস্থান হয় **শ্রদ্ধা, নীরবতা ও মনোযোগে পূর্ণ।**

🌸 কুরআন শুনে যে নীরব থাকে, সে আসলে আল্লাহর সামনে শ্রবণশীল দাসের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। 🌿🤍

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন রাজা কথা বলছেন, আর তার প্রজারা একদম চুপ থেকে মনোযোগ দিচ্ছে — কারণ তারা জানে, তাঁর প্রতিটি কথা গুরুত্বপূর্ণ।

🌸 তেমনি কুরআন পাঠের সময় আমরা রাজাদের রাজা — আল্লাহর বাণী শুনছি; তাই নীরবতা ও মনোযোগই সর্বোচ্চ শিষ্টাচার। 🌿

🌿 অথবা যেমন একজন ডাক্তার ওষুধের নির্দেশ দিচ্ছেন — রোগী যদি মনোযোগ না দেয়, সে উপকার পায় না। তেমনি কুরআন হলো **আত্মার ওষুধ**, যা মনোযোগ সহ শুনলেই হৃদয়ে কাজ করে। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • কুরআন তেলাওয়াতের সময় সম্পূর্ণ নীরব ও মনোযোগী থাকতে হবে।
  • কুরআনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে দেয়।
  • মনোযোগহীনভাবে কুরআন শোনা হৃদয়ের ওপর প্রভাব ফেলে না।
  • কুরআন শোনার সময় হাসাহাসি, কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা অনুচিত।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 কুরআন শুধু পাঠের জন্য নয়, বরং শোনার জন্যও নাযিল হয়েছে — যাতে শোনা হৃদয় জেগে ওঠে।

🌸 আল্লাহর রহমত তাদের ওপরই বর্ষিত হয়, যারা তাঁর বাণীর প্রতি বিনম্র ও মনোযোগী।

🌿 তাই কুরআন তেলাওয়াত চলাকালে শুধু কানে নয়, আত্মায় নীরবতা আনো — তখনই রহমত নেমে আসে হৃদয়ের গভীরে। 🌿🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥ وَأَنصِتُوا۟ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **কুরআন যখন পাঠ করা হয়, তখন নীরবতা ও মনোযোগে শোনো — কারণ এটি শুধু শব্দ নয়, এটি আল্লাহর রহমতের বার্তা।** 🌿🤍
আয়াত ২০৫
وَٱذْكُر رَّبَّكَ فِى نَفْسِكَ تَضَرُّعًۭا وَخِيفَةًۭ وَدُونَ ٱلْجَهْرِ مِنَ ٱلْقَوْلِ بِٱلْغُدُوِّ وَٱلْءَاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلْغَـٰفِلِينَ
ওয়াজ্‌কুর রাব্বাকা ফি নাফসিকা তাযার্‌রু'আঁ ওয়া খীফাতাঁ, ওয়া দুনাল জাহরি মিনাল কাওল, বিল গুদুয়্যি ওয়াল আসাল, ওয়ালা তাকুন মিনাল গাফিলীন।
“তোমার প্রতিপালককে তোমার অন্তরে স্মরণ করো — বিনয় ও ভয়ে, উচ্চস্বরে নয়, নীরবে, সকাল ও সন্ধ্যাবেলায়; এবং গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” 🌿🤍
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে তাঁর প্রিয় বান্দাদের শিক্ষা দিচ্ছেন — কীভাবে তাঁকে স্মরণ করতে হবে, কীভাবে একান্তভাবে হৃদয়কে জাগিয়ে তুলতে হবে।

🌸 **“ওয়াজ্‌কুর রাব্বাকা ফি নাফসিকা”** — অর্থাৎ, আল্লাহকে স্মরণ করো তোমার অন্তরে, হৃদয়ের গভীর থেকে, শুধুমাত্র জিহ্বা নয়।

🌿 এই স্মরণ (যিকর) হলো এমন এক অবস্থান — যেখানে আল্লাহর নাম উচ্চারণে আত্মা প্রশান্ত হয়, হৃদয় কাঁপে, আর চোখে অশ্রু আসে। 🌸

🌸 **“তাযার্‌রু'আঁ ওয়া খীফাতাঁ”** — অর্থাৎ, বিনয় ও ভয়ে আল্লাহকে স্মরণ করো।
🌿 অর্থাৎ, দোয়া বা যিকর যেন অহংকারে নয়, বরং **ভালোবাসা ও ভয়ে ভেজা হৃদয়ে** হয়।

🌸 **“ওয়া দুনাল জাহরি মিনাল কাওল”** — উচ্চস্বরে নয়, নীরবে স্মরণ করো।
🌿 কারণ যিকরের আসল রূপ হলো — আত্মার অভ্যন্তরীণ কান্না, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ শোনে না। 🌸

🌿 **“বিল গুদুয়্যি ওয়াল আসাল”** — সকাল ও সন্ধ্যায় — অর্থাৎ দিন-রাতের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে নিয়মিত আল্লাহর স্মরণে থাকো।

🌸 **“ওয়ালা তাকুন মিনাল গাফিলীন”** — আর গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না — যারা আল্লাহর কথা ভুলে যায়, দুনিয়ার ব্যস্ততায় হৃদয়কে অন্ধ করে ফেলে। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা শিখিয়েছেন — আল্লাহর স্মরণ শুধু তাসবিহের সংখ্যায় নয়, বরং **আত্মার জাগরণে।**

🌸 যিকর মানে কেবল জিহ্বার উচ্চারণ নয়, বরং এমন স্মরণ যা অন্তরে বিনয় ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে।

🌿 তাই বলা হয়েছে — “উচ্চস্বরে নয়, নীরবে” — কারণ আন্তরিক কান্না ও নরম যিকরই আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে প্রিয়।

🌸 এক মুহূর্তের নীরব যিকর, যা চোখে অশ্রু আনে, তা হাজার জোরে বলা যিকরের চেয়েও মূল্যবান। 🌿🤍

উদাহরণ:
🌿 যেমন একজন প্রেমিক একান্তে প্রিয়জনের নাম মনে মনে উচ্চারণ করে, অন্য কেউ তা শোনে না, কিন্তু সেই স্মরণেই তার হৃদয় ভরে ওঠে।

🌸 তেমনি এক মুমিন যখন আল্লাহকে নীরবে স্মরণ করে, আল্লাহ তাঁর হৃদয়ে শান্তি নাজিল করেন।

🌿 এভাবেই যিকর আত্মাকে প্রশান্ত করে, এবং আল্লাহর নূর হৃদয়ে নেমে আসে। 🌸

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • যিকর শুধু মুখের নয়, হৃদয়েরও হওয়া উচিত।
  • আল্লাহর স্মরণে বিনয় ও ভয় থাকা দরকার।
  • নীরব ও একান্ত যিকরই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।
  • সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত যিকর করলে হৃদয় সবসময় সজাগ থাকে।
  • আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল থাকা মানে আত্মাকে অন্ধকারে ফেলে দেওয়া।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 গাফিলতা (অবহেলা) ঈমানের সবচেয়ে বড় শত্রু।
যখন হৃদয় আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে যায়, তখন শয়তান সুযোগ পায়।

🌸 কিন্তু যিকর হলো সেই আলো, যা শয়তানের ফিসফিসানি নিভিয়ে দেয়, আর আত্মাকে আল্লাহর নিকটে টেনে আনে।

🌿 তাই আল্লাহর স্মরণই একমাত্র উপায়, যা হৃদয়কে জীবিত রাখে এবং গাফিলতা দূর করে। 🌸🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَٱذْكُر رَّبَّكَ فِى نَفْسِكَ تَضَرُّعًۭا وَخِيفَةًۭ وَدُونَ ٱلْجَهْرِ مِنَ ٱلْقَوْلِ…”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **আল্লাহর যিকর উচ্চস্বরে নয়, অন্তরের নিস্তব্ধতায় করো; বিনয় ও ভালোবাসায় করো; তাহলেই তোমার আত্মা শান্তি পাবে, আর তুমি গাফিলদের দলে পড়বে না।** 🌿🤍
আয়াত ২০৬ 🕋 (سجدة)
إِنَّ ٱلَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِۦ وَيُسَبِّحُونَهُۥ وَلَهُۥ يَسْجُدُونَ ۩
ইন্নাল্লাযীনা ‘ইন্দা রাব্বিকা, লা ইয়াস্তাকবিরূনান ‘আন ‘ইবাদাতিহি, ওয়াইউসাব্বিহূনাহু, ওয়ালাহু ইয়াসজুদূন। 🕋
“নিশ্চয়ই যারা তোমার প্রতিপালকের নিকটে থাকে, তারা তাঁর ইবাদত করতে অহংকার করে না, বরং তাঁকে পবিত্র ঘোষণা করে, এবং কেবল তাঁরই সামনে সিজদা করে।” 🌿🤍
🕋 এই আয়াতে সিজদা তিলাওয়াতের নির্দেশ আছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর:
🌿 আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে ফেরেশতাদের এক প্রশংসনীয় গুণের কথা বলেছেন — তারা আল্লাহর নিকটে থেকেও কখনো অহংকার করে না, বরং বিনয় ও প্রশংসায় সর্বদা সিজদায় মগ্ন থাকে।

🌸 **“ইন্নাল্লাযীনা ‘ইন্দা রাব্বিকা”** — অর্থাৎ, যারা আল্লাহর বিশেষ সান্নিধ্যে রয়েছে — ফেরেশতাগণ ও অনুগত বান্দারা।

🌿 **“লা ইয়াস্তাকবিরূনান ‘আন ‘ইবাদাতিহি”** — তারা কখনো ইবাদত করতে অহংকার করে না; বরং ইবাদতকেই তারা মর্যাদা মনে করে।

🌸 **“ওয়াইউসাব্বিহূনাহু”** — তারা সর্বদা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে; তাঁকে সব ত্রুটি থেকে মুক্ত ও মহান ঘোষণা করে।

🌿 **“ওয়ালাহু ইয়াসজুদূনَ ۩”** — তারা শুধু তাঁরই সামনে সিজদা করে।
অর্থাৎ, সম্পূর্ণ আনুগত্য, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আল্লাহর সামনে মাথা নত করে।

🌸 এই সিজদা ফেরেশতাদের অবস্থান, আর এটি মানুষের জন্য শিক্ষা — যে সিজদা অহংকার ভাঙে, হৃদয়কে নম্র করে, আর আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। 🌿

গভীর উপলব্ধি:
🌿 সূরা আল-আ‘রাফ শুরু হয়েছিল শয়তানের অহংকার দিয়ে — সে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল।

🌸 আর সূরা শেষ হচ্ছে সিজদায় মগ্ন ফেরেশতাদের দিয়ে — যারা কখনো অহংকার করে না।

🌿 এভাবেই সূরাটি পূর্ণ হলো — **অহংকার থেকে সিজদায়**, **অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যে**, **অন্ধকার থেকে নূরে।** 🌸

🌿 এই আয়াত আমাদের স্মরণ করায় — আল্লাহর নিকটে পৌঁছানোর একমাত্র পথ হলো সিজদা। যত বেশি তুমি সিজদায় যাবে, তত বেশি আল্লাহ তোমাকে উত্তম মর্যাদা দিবেন। 🤍

উদাহরণ:
🌿 যেমন গাছ যখন ঝড়ে টিকে থাকতে চায়, তখন সে মাটির দিকে নত হয়ে যায় — তেমনি মানুষ যখন ঈমানকে বাঁচাতে চায়, তখন আল্লাহর সামনে নত হয়।

🌸 সিজদা শুধু দেহের নয়, এটি আত্মার বিনয় ও হৃদয়ের আত্মসমর্পণ। 🌿

শিক্ষনীয় বিষয়:
  • অহংকারই পতনের মূল, আর সিজদা মুক্তির পথ।
  • ফেরেশতারা সর্বদা সিজদায় মগ্ন — এটি মুমিনের আদর্শ।
  • আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের উপায় হলো বিনয় ও ইবাদত।
  • সিজদা মানুষকে সবচেয়ে নিকটে নিয়ে যায় আল্লাহর কাছে।


গভীর চিন্তার দিক:
🌿 এই আয়াত এক আধ্যাত্মিক বাস্তবতা প্রকাশ করে — যে অহংকার করল, সে পতিত হলো (যেমন শয়তান); আর যে সিজদা করল, সে উন্নত হলো (যেমন ফেরেশতা)।

🌸 সিজদা হলো সেই স্থান, যেখানে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে থাকে। রাসূল ﷺ বলেছেন — **“বান্দা তার প্রভুর সবচেয়ে নিকটে থাকে যখন সে সিজদায় থাকে।”** — *(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৯৭০)* 🌿

🌿 তাই যখন এই আয়াত পাঠ করা হয়, তখন অন্তর দিয়ে বলো — “আল্লাহুম্মা লাকা সজদু ওয়া বিকা আমান্তু।”
আর মাথা রাখো সিজদায় — যেমন ফেরেশতারা রাখে, অনন্ত বিনয়ে। 🤍

🌿 সংক্ষিপ্ত বার্তা:
আল্লাহ বলেন — **“وَلَهُۥ يَسْجُدُونَ ۩”** 🤍

🌸 এই আয়াত শেখায় — **যে সিজদা করে, সে আল্লাহর নিকটে; আর যে অহংকার করে, সে আল্লাহ থেকে দূরে। তাই আসো, ফেরেশতাদের মতো আমরা-ও সিজদায় ডুবে যাই — বিনয়, ভালোবাসা ও প্রশংসায়।** 🌿🤍
সিজদার দোয়া হিসেবে বলা যায় — اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ “হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য সিজদা করলাম, তোমারই প্রতি ঈমান আনলাম, এবং তোমারই প্রতি আত্মসমর্পণ করলাম।” 🌿